জাহেলিয়্যাত, ফাসেকী, ভ্রষ্টতা ও রিদ্দাত: অর্থ,প্রকারভেদ ও আহকাম লেখক:
সালেহ বিন ফাওযানআল-ফাওযান | অনুবাদক: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহীএক –
জাহেলিয়াত আল্লাহ্, তাঁর রাসূলগণ ও দ্বীনেরআইন-কানুন সম্পর্কে অজ্ঞতা, বংশ
নিয়ে গর্ব-অহংকার ও বড়াই প্রভৃতি যে সকল অবস্থার উপরআরবের লোকেরা ইসলাম
পূর্ব যুগে ব্যাপৃত ছিল,সে সকল অবস্থাকেই জাহেলিয়াত নামে অভিহিত করাহয়।
[১] জাহেলিয়াত ‘জাহল’ শব্দের প্রতি সম্পকির্ত,যার অর্থ জ্ঞানহীনতা বা
জ্ঞানের অনুসরণ না করা।শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:
যার হকেরজ্ঞান
নেই সে এক প্রকার অজ্ঞতায় নিমজ্জিত। যদিকেউ হক সম্পর্কে জেনে কিংবা না
জেনেহকের পরিপন্থী কথা বলে সেও জাহেল…।উপরের কথাগুলি স্পষ্ট হবার পর জানা
দরকার যে,রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম এর নবুওয়াত প্রাপ্তিরপূর্বে
লোকেরা এমন জাহেলিয়াতেই নিমজ্জিতছিল, যা আরিক অর্থেই ‘জাহেল’ তথা অজ্ঞতার
প্রতিসম্পর্কিত। কেননা তাদের মধ্যে যে কথা ওকাজের প্রচলন ছিল, তা ছিল জাহেল
ও অজ্ঞলোকেরই সৃষ্ট এবং অজ্ঞ লোকেরাই তা করেবেড়াত। অনুরূপভাবে বিভিন্ন
যুগে নবী রাসূলগণযে শরীয়ত নিয়ে এসেছিলেন যেমন ইহুদীধর্ম ও খৃষ্টান র্ধম,
তার বিপরীত সব কিছুইজাহেলিয়াতের অন্তর্গত। একে বলা চলে ব্যাপকও মহা
জাহেলিয়াত। তবে রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামের নবুওয়াত প্রাপ্তির পর
জাহেলিয়াতের সেইব্যাপকতা আর নেই। বরং কোথাও তা আছে,কোথাও নেই। যেমন ‘দারুল
কুফুর’ বা কাফিরদেররাষ্ট্রে তা আছে। আবার কারো মধ্যে নেই।যেমন ইসলাম
গ্রহণের পূর্বে যে কোন ব্যক্তিজাহেলিয়াতের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে, যদিও
সে‘দারুল ইসলাম’ বা ইসলামী রাষ্ট্রে অবস্থান করে।তবে মুহাম্মদ সালালাহু
আলাইহি ওয়া সালামের নবুয়াতপ্রাপ্তির পর অবাধভাবে কোন যুগকেজাহেলিয়াতে
নিমজ্জিত বলা যাবেনা। কেননা কিয়ামতপর্যন্ত প্রত্যেক যুগে উম্মাতে
মোহাম্মদীরএকদল লোক হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।অবশ্য কিছু কিছু মুসলিম দেশে
বহু মুসলিম ব্যক্তিরমধ্যেই সীমিত আকারে জাহেলিয়াত পাওয়া যেতেপারে। যেমন
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেনঃﺃﺭْﺑَﻊٌ ﻓِﻲْ ﺃﻣَّﺘِﻲْ ﻣِﻦْ ﺃﻣْﺮِ
ﺍﻟﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ‘আমার উম্মাতেরমধ্যে চারটি বস্তু জাহেলিয়ারেত অন্তর্গত।
[২]একবার তিনি আবুযর রাদি আলাহু আনহুকে বলেনঃ ﺇﻧَّﻚَﺍﻣْﺮُﺅٌ ﻓِﻴْﻚَ
ﺟَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔٌ ‘তুমি এমন এক ব্যক্তি যার মধ্যে(এখনও) জাহেলিয়াত রয়ে গেছে।’
[৩] অনুরূপআরো অনেক দলীল রয়েছে। [৪] সারকথা:জাহেলিয়াত ‘জাহল’ বা অজ্ঞ
শব্দের প্রতি সম্পর্কিত।এর অর্থ জ্ঞানহীনতা। জাহেলিয়াত দু‘ভাগে বিভক্ত:১.
ব্যাপক ও অবাধ জাহেলিয়াত: এ প্রকার জাহেলিয়াতদ্বারা রাসূল সালালাহু
আলাইহি ওয়া সালামের নবুওয়াতেরআগের যুগ ও অবস্থা বুঝানো হয়েছে।
নবুওয়াতপ্রাপ্তির সাথে সাথে এ প্রকার জাহেলিয়াতেরঅবসান হয়েছে। ২.
নির্দিষ্ট ও সীমিত জাহেলিয়াত:এ প্রকারের জাহেলিয়াত সব যুগেই কোন নাকোন
দেশে, কোন না কোন শহরে এবংকতেক ব্যক্তির মধ্যে বিরাজমান থাকতে পারে।একথা
দ্বারা ঐ সব লোকের ভূল স্পষ্ট হয়ে উঠেযারা বর্তমান যুগেও অবাধ ও ব্যাপক
জাহেলিয়াতেরঅস্তিত্ব আছে বলে মনে করে এবং বলে ‘এইশতাব্দীর জাহেলিয়াত’
ইত্যাদি নানা কথা। অথচ সঠিক হলএরকম বলা: ‘এই শতাব্দীর কতেক লোকদের বাএই
শতাব্দীর অধিকাংশ লোকদের জাহেলিয়াত’অতএব ব্যাপক জাহেলিয়াতের অস্তিত্ত্বের
ধারণাসঠিক নয় এবং এরকম বলাও জায়েয নয়। কেননা নবীসালালাহু আলাইহি ওয়া
সালামের নবুয়াত প্রাপ্তি দ্বারা ব্যাপকজাহেলিয়াত অবসান হয়েছে। দুই-
ফাসেকীঅভিধানে ‘ফিসক’ শব্দের অর্থ হল বের হওয়া। আরশরীয়তের পরিভাষায়
তাহলো আলাহর আনুগত্যহতে বের হয়ে যাওয়া। পুরোপুরি বের হয়ে যাওয়াও যেমন
এতে শামিল রয়েছে, এজন্য কাফিরকেওফাসিক বলা হয়। আবার আংশিকভাবে বের হওয়া ও
এরঅন্তর্ভক্ত। তাই কবীরা গুনাহে লিপ্ত ম‘ুমিনব্যক্তিকে ও ফাসিক বলা হয়।
ফিসক দু‘ভাগে বিভক্ত:১. এ প্রকারের ফিসক বান্দাকে ইসলামী মিলাতথেকে বের করে
দেয়। এধরনের ফিসক মূলত:কুূফুরী। এজন্য কাফিরকে ফাসিক নামে অভিহিত করাহয়।
আলাহ তাআলা ইবলিসের ব্যাপারে বলেন:… ﻓَﻔَﺴَﻖَ ﻋَﻦْ ﺃَﻣْﺮِ ﺭَﺑِّﻪِ অত:পর
সে স্বীয় প্রভুরনির্দেশ অমান্য করল। [৫] আয়াতে বর্ণিত ইবলিসেরএই ফিসক ছিল
মূলত: কুফুরী। আলাহ তাআলা বলেন:ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻓَﺴَﻘُﻮﺍ ﻓَﻤَﺄْﻭَﺍﻫُﻢُ
ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ‘আর যারা ফাসেকীকরে, তাদের ঠিকানা হল জাহান্নাম। [৬] এ
আয়াতেকাফিরদের অবস্থা বর্ণনাই আলাহর উদ্দেশ্য । এরদলীল হল আয়াতের পরের
অংশটুকু: ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﺃَﺭَﺍﺩُﻭﺍ ﺃَﻥْﻳَﺨْﺮُﺟُﻮﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺃُﻋِﻴﺪُﻭﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ
ﻭَﻗِﻴﻞَ ﻟَﻬُﻢْ ﺫُﻭﻗُﻮﺍ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِﺍﻟَّﺬِﻱ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺑِﻪِ
ﺗُﻜَﺬِّﺑُﻮﻥَ ‘যখনই তারা জাহান্নাম হতে বেরহতে চাইবে তখনই তাদেরকে তথায়
ফিরিয়ে দেয়াহবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরাজাহান্নামের যে আযাবকে মিথ্যা
বলতে, তার স্বাদআস্বাদান কর’ [৭] ২. গোনাহগার বান্দাদেরকে ওফাসেক বলা হয়।
তবে তার ফাসেকী তাকে ইসলামথেকে বের করে দেয়না। আলাহ তাআলা
বলেন:ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺮْﻣُﻮﻥَ ﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕِ ﺛُﻢَّ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﺗُﻮﺍ
ﺑِﺄَﺭْﺑَﻌَﺔِ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀَﻓَﺎﺟْﻠِﺪُﻭﻫُﻢْ ﺛَﻤَﺎﻧِﻴﻦَ ﺟَﻠْﺪَﺓً ﻭَﻟَﺎ
ﺗَﻘْﺒَﻠُﻮﺍ ﻟَﻬُﻢْ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓً ﺃَﺑَﺪًﺍﻭَﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ ‘যারা
সতী- সাধ্বী নারীর প্রতিঅপবাদ আরোপ করে। অত:পর স্বপে চারজনপুরুষ সাী
উপস্থিত করেনা, তারেদকে আশিটিবেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের স্যা
কবুলকরবেনা। এরাই ফাসিক (নাফরমান ও অবাধ্য) [৮] আলাহআরো বলেন: ﺍﻟْﺤَﺞُّ
ﺃَﺷْﻬُﺮٌ ﻣَﻌْﻠُﻮﻣَﺎﺕٌ ﻓَﻤَﻦْ ﻓَﺮَﺽَﻓِﻴﻬِﻦَّ ﺍﻟْﺤَﺞَّ ﻓَﻠَﺎ ﺭَﻓَﺚَ ﻭَﻟَﺎ
ﻓُﺴُﻮﻕَ ﻭَﻟَﺎ ﺟِﺪَﺍﻝَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﺞِّ‘অত:পর যে কেউ হজ্বের এই মাস গুলিতে
হজ্বকরার নিয়্যাত করবে, তার জন্য হজ্জের সময়স্ত্রী সম্ভোগ, ফাসেকী ও
কলহ-বিবাদ বিধেয়নয়’ [৯] আয়াতে ফাসেকী শব্দের ব্যাখ্যায়উলামাগণ বলেন: এর
অর্থ পাপাচার তথা গোনাহেরকাজ। [১০] তিন – দালাল ( ভ্রষ্টতা)
আরবীতেভ্রষ্টতার প্রতিশব্দ হল ﺍﻟﻀﻼﻝ যার অর্থ সরল পথথেকে বিচ্যুত হওয়া।
এটি হেদায়াতের বিপরীতশব্দ। আলাহ তায়ালা বলেন: ﻣَﻦِ ﺍﻫْﺘَﺪَﻯ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ
ﻳَﻬْﺘَﺪِﻱﻟِﻨَﻔْﺴِﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﺿَﻞَّ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻀِﻞُّ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ‘যারা
সৎপথে চলে,তারা নিজেদের মঙ্গলের জন্যই সৎপথে চলে।আর যারা পথভ্রষ্ট হয়,
তারা নিজেদের অমঙ্গলেরজন্যই পথভ্রষ্ট হয়’ [১১] ভ্রষ্টতার অনেকগুলোঅর্থ
রয়েছে: ১. কখনো তা কুফুরীর অর্থেব্যবহৃত হয়। আলাহ তাআলা বলেন: ﻭَﻣَﻦْ
ﻳَﻜْﻔُﺮْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِﻭَﻣَﻠَﺎﺋِﻜَﺘِﻪِ ﻭَﻛُﺘُﺒِﻪِ ﻭَﺭُﺳُﻠِﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ
ﺍﻟْﺂَﺧِﺮِ ﻓَﻘَﺪْ ﺿَﻞَّ ﺿَﻠَﺎﻟًﺎﺑَﻌِﻴﺪًﺍ ‘যে ব্যক্তি আলাহ, তাঁর
ফেরেস্তাগণ, তাঁরকিতাবসমূহ এবং রাসূলগণ ও আখিরাত দিবসকেঅস্বীকার করবে, সে
ভীষণ ভাবে পথভ্রষ্টহয়ে পড়বে’ [১২] ২. কখনো তা শিরকের অর্থেব্যবহৃত হয়।
আলাহ তাআলা বলেন: ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِﻓَﻘَﺪْ ﺿَﻞَّ ﺿَﻠَﺎﻟًﺎ ﺑَﻌِﻴﺪًﺍ
‘যে আলাহর সাথে শরীককরে , সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়’ [১৩] ৩.কখনো তা
কুফুরী নয়, এমন পর্যায়ের বিরোধিতারঅর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন বলা হয়
ভ্রষ্ট ফির্কাসমূহঅর্থাৎ হক-বিরোধী ফির্কাসমূহ। ৪. কখনো তা ভুল-ত্রুটি করার
অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন মূসা আলাইহিসসালামের কথা কুরআনের ভাষায় এভাবে
বর্ণিতহয়েছে: ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻌَﻠْﺘُﻬَﺎ ﺇِﺫًﺍ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ
‘মূসাবললেন: আমি তো সে অপরাধ করেছিলাম তখন,যখন ছিলাম অনবধান’ [১৪] ৫. কখনো
তা বিস্মৃত হওয়াও ভুলে যাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন আলাহবলেন: ﺃَﻥْ
ﺗَﻀِﻞَّ ﺇِﺣْﺪَﺍﻫُﻤَﺎ ﻓَﺘُﺬَﻛِّﺮَ ﺇِﺣْﺪَﺍﻫُﻤَﺎ ﺍﻟْﺄُﺧْﺮَﻯ. ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ
‘যাতে মহিলাদের একজন যদি ভুলে যায়,তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে
দেবে।[১৫] ৬. কখনো ﺿﻼﻝ (ভ্রষ্টতা) শব্দটি অগোচরহওয়া ও হারিয়ে যাওয়ার
অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমনআরবগণ বলে ﺿﺎﻟﺔ ﺍﻹﺑﻞ অর্থাৎ হারানো উট [১৬]চার –
রিদ্দাত(মুরতাদ হওয়া) এর প্রকারভেদ ও বিধানঅভিধানে রিদ্দাত শব্দটির অর্থ
ফিরে যাওয়া। আলাহতাআলা বলেন: ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺮْﺗَﺪُّﻭﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺩْﺑَﺎﺭِﻛُﻢْ
ﻓَﺘَﻨْﻘَﻠِﺒُﻮﺍﺧَﺎﺳِﺮِﻳﻦَ ‘আর পেছনে দিকে ফিরে যেও না’ [১৭]আর ফিকহের
পরিভাষায় ইসলাম গ্রহণের পরকুফুরীর দিকে ফিরে যাওয়াকে রিদ্দাত বলা
হয়।আলাহ তাআলা বলেন: ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺮْﺗَﺪِﺩْ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻋَﻦْ ﺩِﻳﻨِﻪِﻓَﻴَﻤُﺖْ
ﻭَﻫُﻮَ ﻛَﺎﻓِﺮٌ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺣَﺒِﻄَﺖْ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟُﻬُﻢْ ﻓِﻲ
ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎﻭَﺍﻟْﺂَﺧِﺮَﺓِ ﻭَﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻫُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ
ﺧَﺎﻟِﺪُﻭﻥَ ‘এবংতোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের দ্বীনথেকে ফিরে যাবে এবং কাফির
অবস্থায় মৃত্যুমুখেপতিত হবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের যাবতীয়আমল বিনষ্ট
হয়ে যাবে। আর তারাই হলদোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে। [১৮]রিদ্দাতের
প্রকারভেদ: ইসলাম বিনষ্টকারী কোনকাজ করলে ব্যক্তির মধ্যে রিদ্দাত পাওয়া
যায় অর্থাৎসে মুরতাদ হিসাবে গণ্য হয়। আর ইসলাম বিনষ্টকারীবস্তু অনেকগুলো,
যাকে মূলত: চারভাগে ভাগ করাযায়: ১. কথার রিদ্দত: যেমন আলাহ তাআলাকে, বা
তাঁররাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়া সালামকে কিংবা তারফিরিস্তাগণকে অথবা
পূর্ববর্তী কোন নবী-রাসূলকে গালি-গালাজ করা। অথবা গায়েব জানার দাবীকরা,
কিংবা নবুওয়াতের দাবী করা, কিংবা নবুওয়াতেরদাবীদারকে সত্যবাদী বলে মেনে
নেয়া, অথবাগায়রুলার কাছে দোয়া করা, কিংবা যে বিষয়ে আলাহব্যতীত আর কেউ
সম নয় সে বিষয়ে গায়রুলাহসাহায্য চাওয়া আশ্রয় প্রার্থনা করা। ২. কাজের
রিদ্দত:যেমন মূর্তি, গাছ-পালা, পাথর এবং কবরেরউদ্দেশ্যে সিজদা করা ও
কুরবানী করা, নিকৃষ্টস্থানে কুরআন মাজীদ রাখা, যাদু করা এবং তা শিখা
ওঅন্যকে শিখানো, হালাল ও জায়েয মনে করেআলাহর অবতারিত শরীয়তের পরিবর্তে
অন্য আইন-কানুন দ্বারা ফায়সালা করা। ৩. আক্বীদার রিদ্দাত: যেমনএরূপ
আক্বীদা পোষণ করা যে, আলাহর শরীকআছে কিংবা যিনা, মদ ও সূদ হালাল অথবা রুটি
হারাম, অথবানামায পড়া ওয়াজিব নয় প্রভৃতি এ ধরনের আরোযেসব বিষয়ের হালাল
বা হারাম হওয়া কিংবা ওয়াজিব হওয়ারউপর উম্মাতের অকাট্য ইজমা সাধিত হয়েছে
এবংএরূপ লোকের তা অজানা থাকার কথা নয়। ৪.উপরোক্ত কোন বিষয়ে সন্দেহ
পোষণরিদ্দাত: যেমন শিরক হারাম হওয়ার ব্যাপারে কিংবা যিনা ওমদ হারাম হওয়ার
ব্যাপারে অথবা রুটি হালাল হওয়ারব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা, নবী সালালাহু
আলাইহিওয়া সালাম কিংবা অন্য কোন নবীর রিসালাতে বাসত্যতায় সন্দেহ রাখা,
অথবা ইসলামের ব্যাপারে কিংবাবর্তমানে যুগে ইসলামের উপযোগিতার
ব্যাপারেসন্দেহ পোষণ করা। রিদ্দাত সাব্যস্ত হওয়ার পর এরহুকুম: ১. মুরতাদ
ব্যক্তিকে তাওবা করার আহবানজানানো হবে। যদি সে তিন দিনের মধ্যে তাওবাকরে
ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তবেতার তওবা কবুল করা হবে এবং তাকে ছেড়ে
দেয়াহবে। ২. যদি সে তাওবা করেত অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকরে, তবে তাকে হত্যা করা
ওয়াজিব (ইসলামীসরকারের জন্য)। কেননা রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম
বলেছেন: ﻣَﻦْ ﺑَﺪَّﻝَ ﺩِﻳْﻨَﻪُ ﻓَﺎﻗْﺘُﻠُﻮْﻩُ ‘যে ব্যক্তিতার দ্বীনকে
পরিবর্তন করে তাকে হত্যাকর’ [১৯] ৩. তাওবার দিকে আহবানকালীন সময়েতাকে তার
সম্পদে হস্তপে করা থেকে বিরত রাখাহবে। যদি সে পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে,
তবেসে সম্পদ তারই থাকবে। অন্যথায় রিদ্দাতের উপরতার মৃত্যু হলে কিংবা তাকে
হত্যা করা হলে , তখনথেকে সে সম্পত্তি মুসলমানদের বায়তুল মালে‘ফাই’ হিসাবে
অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। কারোকারো মতে মুরতাদ হওয়ার সাথে সাথেই তার
ধন-সম্পদ মুসলমানদের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করাহবে। ৪. মুরতাদ ব্যক্তির
উত্তরাধিকার স্বত্ব বাতিলহয়ে যাবে। অর্থাৎ সে তার আত্মীয় স্বজনেরওয়ারিস
হবে না। এবং তার কোন আত্মীয়ও তারওয়ারিস হবে না। ৫. যদি সে মুরতাদ
অবস্থায় মারা যায়কিংবা নিহত হয়, তবে তাকে গোসল দেয়া হবে না,তার উপর
জানাযার নামায পড়া হবে না এবং তাকেমুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না।
বরংতাকে কাফিরদের সমাথিস্থলে দাফন করা হবে কিংবামুসলমানদের কবরস্থান ছাড়া
অন্য কোথাও মাটিরনীচে তাকে সমধিস্থ করা হবে। সমাপ্ত [১] আন-নিহায়াঃ ইবনুল
আসীর ১ম খন্ড পৃঃ ৩২৩। [২] মুসলিম। [৩]বুখারী, মুসলিম। [৪]
ইকতিদাউসসিরাতুল মুসতাকীম, ১মখন্ড পৃ: [৫] সূরা কাহফ, ৫০। [৬] সূরা সিজদা,
২০। [৭] সূরাসিজদা, ২০। [৮] সূরা আন-নূর, ০৪। [৯] সূরা বাকারা, ১৯৭।[১০]
কিতাবুল ঈমান: শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ২৭৮।[১১] সূরা ইসরা, ১৫। [১২]
সূরা: নিসা, ১৩৬। [১৩] সূরা নিসা,১১৬। [১৪] সূরা আশ-শুআ‘রা: ২০। [১৫] সূরা
বাকারা, ২৮২।[১৬] আল মুফরাদাত, রাগিব ইস্পাহানী, ২৯৭-২৯৮। [১৭]সূরা
মায়েদা, ২১। [১৮] সূরা বাকারা, ২১৭। [১৯] বুখারী,আবুদাউদ। উৎসঃ ইসলাম হাউজ
ডট কম
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সাম্প্রতিক পোষ্ট
"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?
"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...
জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ
-
যৌন উত্তেজনার সময় পানির মতো আঠালো যে তরল পদার্থ বের হয়, তা কি নাপাক? একে “মাযী” বলে। আর তা নাপাক। তা বের হলে উযূ নষ্ট হয়ে যায়। শরমগাহ...
-
গুপ্ত অভ্যাস (হস্তমৈথুন) ব্যবহার করা বৈধ কি? গুপ্ত অভ্যাস (হাত বা অন্য কিছুর মাধ্যমে বীর্যপাত, স্বমৈথুন বা হস্ত মৈথুন) করা কিতাব, সুন...
-
মনোমালিন্য ‘‘সংসার সাগরে দুঃখ-তরঙ্গের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা।’’ কিন্তু সেই ভেলা ডুবে গেলে আর কার কি সাধ্য? স্বামী যদি স্...
-
*সূরা বাকারা ও সূরা আলে-ইমরানের ফজিলত গুলি কি কি? এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের অর্থঃ ✔1-রাতে ঘুমানোর আগে সুরা বাক্বারার শেষ ...
-
আপন মামাত, খালাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোন, চাচী, মামি, স্ত্রীর বোন বা ভাবীর সাথে মুসাফাহাহ বৈধ কি? যার সাথে পু...
-
কেউ কেউ মনে করেন, আমার মন খুবই পরিস্কার। তাকে আমি মা, খালা, অথবা বোনের মতোই মনে করি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে তাঁর সাথে মেলা-মেশা করতে অসুবিধা ...
-
কথা বলার ব্যপারে "ইসলামে"র শিক্ষা কি? ====== ১। কথা বলার পূর্বে সালাম দেয়া। সূরা নূরঃ ৬১ ২। সতর্কতার সাথে কথা বলা। (কে...
-
জাহান্নাম থেকে মুক্তির ১৫টি অসাধারন হাদিস- *১-গীবত থেকে দূরে থাকা- আসমা বিনতে ইয়াযীদ হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যাক্তি তার (মুসলি...
-
# দোয়া_কবুল_না_হওয়ার_কারণগুলো_কি_কি ? ---------------------------------------------------------------------- কিছু পাপ আছে যা বান্দার মা...
-
প্রশ্ন:নাটক, সিনেমা দেখা , গল্পের বই পড়া কি জায়েজ ? =============================== উত্তর : যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালা...
No comments:
Post a Comment