Tuesday, January 2, 2018

মুসলিম নারীর পর্দা ও চেহারা ঢাকার অপরিহার্যতা -২

মুসলিম নারীর পর্দা ও চেহারা ঢাকার অপরিহার্যতা মূল : মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন অনুবাদ : আব্দুর রহীম বিন আবুল কাসেম* [শেষ কিস্তি] ১১ নং দলীল : বিশুদ্ধ দৃষ্টিকোণ ও প্রচলিত যুক্তি, এই পূর্ণাঙ্গ শরী‘আত যাকে নিয়ে এসেছে। আর সেটা হ’ল কল্যাণময় কর্মসমূহ ও তার মাধ্যমগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তার প্রতি উৎসাহিত করা। অপরদিকে ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি ও তার মাধ্যমগুলোকে অস্বীকার করা এবং পরিহার করা। সুতরাং ফিৎনার বিপরীতে যা কল্যাণকর ও প্রাধান্যপ্রাপ্ত তা প্রতিপালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তাই ওয়াজিব বা মুস্তাহাব। আর কল্যাণের বিপরীতে যা অধিক অনিষ্টকর তা নিষিদ্ধ ও বাস্তবায়ন করা হারাম। যখন আমরা নারীর পর্দাহীনতা ও পরপুরুষদের সামনে চেহারা খুলে রাখার বিষয়টি চিন্তা করব, তাতে আমরা ব্যাপক বিপর্যয় দেখতে পাবো। যদিও তাতে কিছু কল্যাণ ভাবা হয়, তবে বিপর্যয়ের তুলনায় তা অতি সামান্য। বিপর্যয়গুলো হ’ল :
(১) ফিতনা : কেননা নারী চেহারা সুন্দর হয় এমন কার্যাবলী সম্পাদন করার মাধ্যমে নিজেকে ফিতনায় ফেলে এবং সম্মোহনকারী হাবভাব বা মুখাবয়বের মাধ্যমে তা প্রদর্শন করে। আর এটা অনিষ্ট ও ফিৎনার প্রতি অন্যতম বড় আহবানকারী। (২) নারীর লজ্জাশীলতা লোপ পাওয়া : লজ্জাশীলতা ঈমানের অংশ এবং স্বভাবগত দাবী। আর শালীনতার ক্ষেত্রে নারীরা আদর্শ। এজন্য বলা হয়, কুমারীরা তাদের অন্তপুরেও অধিক লজ্জাশীল। নারীর লজ্জাহীনতা হচ্ছে তার ঈমানের স্বল্পতা। আর যে ফিতরাত দিয়ে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা থেকে বের হয়ে যাওয়ার শামিল। (৩) নারীর মাধ্যমে পুরুষের ফেতনায় পড়া : বিশেষত যখন নারী সুন্দরী হয় এবং তার সাথে হাসি-তামাসা ও রসিকতায় লিপ্ত হয়, যেমন অধিকাংশ পর্দাহীন মেয়েদের ক্ষেত্রে ঘটে। বলা হয়ে থাকে, ﻧﻈﺮﺓ … ﻓﺴﻼﻡ، ﻓﻜﻼﻡ ﻓﻤﻮﻋﺪ ﻓﻠﻘﺎﺀ – ‘দর্শন, তারপর সালাম, এরপর বাক্যালাপ, অতঃপর ডেটিং, তারপর সাক্ষাৎ’। আর শয়তান তো মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলে। সুতরাং অনেক বাক্যালাপ, হাসি-তামাসা, আনন্দ-উল্লাস পুরুষের হৃদয়কে নারীর প্রতি আকৃষ্ট করে। অনুরূপ নারীর অন্তরকেও পুরুষের প্রতি আকর্ষিত করে। এর মাধ্যমে এমন কিছু অনিষ্টতা ঘটে যা অপ্রতিরোধ্য। (এ থেকে) আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাই। (৪) নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ : কেননা নারী যখন চেহারা খুলে রাখা ও পর্দাহীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে নিজেকে পুরুষের সমকক্ষ ভাববে, তখন সে লজ্জাশীলা থাকবে না এবং পুরুষের ভীড়েও লাজনম্র হবে না। আর এর মধ্যেই রয়েছে বড় ফিতনা এবং সীমাহীন বিপর্যয়। একদিন রাসূল (ছাঃ) মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখলেন যে, মহিলারা পুরুষদের সাথে মিলে মিশে পথ চলছে, তখন রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে বলেলেন, ﺍﺳْﺘَﺄْﺧِﺮْﻥَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻜُﻦَّ ﺃَﻥْ ﺗَﺤْﻘُﻘْﻦَ ﺍﻟﻄَّﺮِﻳْﻖَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻦَّ ﺑِﺤَﺎﻓَّﺎﺕِ ﺍﻟﻄَّﺮِﻳْﻖِ ﻓَﻜَﺎﻧَﺖِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺗَﻠْﺘَﺼِﻖُ ﺑِﺎﻟْﺠِﺪَﺍﺭِ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﻥَّ ﺛَﻮْﺑَﻬَﺎ ﻟَﻴَﺘَﻌَﻠَّﻖُ ﺑِﺎﻟْﺠِﺪَﺍﺭِ ﻣِﻦْ ﻟُﺼُﻮْﻗِﻬَﺎ ﺑِﻪِ – ‘আমি তোমাদের দূরত্ব কামনা করছি। কেননা তোমাদের উচিত হবে না রাস্তাকে অাঁকড়ে ধরা। রাস্তার এক পাশে চলা তোমাদের জন্য আবশ্যক’। এরপর মহিলারা রাস্তার প্রাচীর ঘেঁষে চলতেন, এমনকি তাদের কারো কাপড় প্রাচীরে আটকে যেত।[1] আল্লামা ইবনে কাছীর তাঁর তাফসীর গ্রন্থে আল্লাহর এ বাণী উল্লেখ করেন, ﻭَﻗُﻞْ ﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﻳَﻐْﻀُﻀْﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻦَّ ‘হে নবী! আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন চক্ষু অবনমিত রাখে’ (নূর ৩১)। আল্লামা ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) তাঁর মাজমূ‘ ফাতওয়া গ্রন্থের শেষ সংস্করণে নারীর পরপুরুষ থেকে পর্দা আবশ্যক হওয়া সম্পর্কে লিখেছেন, আল্লাহ তা‘আলা নারীর শোভাকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য শোভা। স্বামী ব্যতীতও মাহরাম ব্যক্তির সামনে প্রকাশ্য শোভা প্রদর্শন করা বৈধ। পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে মহিলাগণ বড় চাদর পরিধান না করে বাইরে বের হ’তেন। পুরুষেরা তাদের চেহারা ও হাত দেখতে পেতো। আর এসময় তাদের জন্য চেহারা ও হাত প্রকাশ করা বৈধ ছিল। ফলে তখন তাদের প্রতি তাকানোও বৈধ ছিল। কেননা তাদের জন্য সেগুলো প্রকাশ করা জায়েয ছিল। অতঃপর যখন আল্লাহ পর্দার এ আয়াত নাযিল করলেন, ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞْ ﻟِﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴْﻦَ ﻳُﺪْﻧِﻴْﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴْﺒِﻬِﻦَّ ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের চাদর দিয়ে আবৃত করে’ (আহযাব ৩৩/৫৯) । তখন নারীরা পরপুরুষদের থেকে পর্দা করতে শুরু করল। অতঃপর ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ﺟﻠﺒﺎﺏ হ’ল ﺍﻟﻤﻼﺀﺓ(বড় চাদর)। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) ও অন্যান্যরা যার নাম দিয়েছেন ﺍﻟﺮﺩﺍﺀ (চাদর)। আর জনসাধারণ যার নাম দিয়েছিল ﺍﻹﺯﺍﺭ (লুঙ্গি)। সেটা এমন বড় লুঙ্গি, যা নারীর মাথা ও পুরো দেহ আবৃত করে ফেলে। অতঃপর তিনি বলেন, যখন তাদেরকে বড় চাদর পরিধানের আদেশ দেওয়া হ’ল যাতে তাদেরকে চেনা না যায়, আর সেটা হ’ল চেহারা ঢাকা বা নিকাব দিয়ে মুখমন্ডল আবৃত করা। সুতরাং চেহারা ও হস্তদ্বয় এমন শোভা, যা পরপুরুষের সামনে প্রকাশ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতএব এখন পরপুরুষদের জন্য নারীর প্রকাশ্য পোশাক দেখার বৈধতা ছাড়া আর কি বাকী থাকল? ইবনে মাসঊদ দু’টি কর্মের শেষটি এবং ইবনে আববাস দু’টি কর্মের প্রথমটি উল্লেখ করেছেন। সুতরাং নারীর চেহারা ও হস্ত-পদদ্বয় পরপুরুষদের সামনে প্রকাশ করা যাবে না। এটাই দু’টি মতের মধ্যে বিশুদ্ধ মত। কেবল নারীর পোশাকের বাহ্যিক দিক প্রকাশ হ’তে পারে।[2] তিনি আরো উল্লেখ করেন, নারীর চেহারা ও হস্ত-পদদ্বয় পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে নারী ও মাহরাম ব্যক্তির সামনে তা প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়নি।[3] একই গ্রন্থে তিনি আরো উল্লেখ করেন, মূলতঃ জানা উচিত যে, এখানে শরী‘আত প্রণেতার দু’টি উদ্দেশ্য রয়েছে। (১) নারী-পুরুষদের মাঝে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা। (২) নারীর পর্দা।[4] একথাগুলো ছিল শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ)-এর। আর ইমাম আহমাদের অন্যান্য ফক্বীহ সাথীদের মধ্যে পরবর্তীদের অভিমত, যা আমি এখন উল্লেখ করব। যেমন মানছূর আল-ভূতী ﺍﻟﻤﻨﺘﻬﻰ গ্রন্থে বলেন, খোজা, পুরুষত্বহীন ও লিংগকর্তনকৃতের জন্য বেগানা নারীর প্রতি তাকানো হারাম। মূসা আল-হাজ্জাবী ﺍﻻﻗﻨﺎﻉ গ্রন্থে বলেন, সাধারণ পুরুষের ন্যায় লিঙ্গকর্তনকৃত ব্যক্তি ও খোজাদের জন্য বেগানা নারীর প্রতি তাকানো হারাম। ﺍﻻﻗﻨﺎﻉ গ্রন্থে অন্যত্র তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে স্বাধীন বেগানা নারীর প্রতি তাকানো অবৈধ এবং তার চুল দেখা হারাম। তিনি ﻣﺘﻦ ﺍﻟﺪﻟﻴﻞ গ্রন্থে বলেন যে, তাকানো আট প্রকার। যথা- (১) প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য অপ্রয়োজনে কোন প্রাপ্তবয়স্কা স্বাধীন বেগানা নারীর প্রতি তাকানো অবৈধ, যদিও সে স্ত্রী মিলনে অক্ষম হয়। এমনকি তার মাথার চুলের দিকে তাকানোও বৈধ নয়। আর শাফেঈদের বক্তব্য হ’ল, যদি তাকানোর মাঝে কামনা থাকে বা ফিতনার আশংকা থাকে, তাহ’লে কোন মতপার্থক্য ছাড়াই অকাট্যভাবে হারাম। আর যদি তাকানোর মাঝে কামনা বা ফিতনার আশংকা না থাকে, তাহ’লে এ ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে, যা ﺍﻻﻗﻨﺎﻉগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, বিশুদ্ধ কথা হ’ল তাকানো হারাম, যেমন ﺍﻟﻤﻨﻬﺎﺝগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। মুসলমানদের ঐক্যমত হ’ল মুখমন্ডল খোলা রেখে নারীদের বাইরে বের হওয়া হারাম। কারণ তার প্রতি তাকানো ফিতনার ধারক ও কামনার উদ্দিপক। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﻗُﻞْ ﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴْﻦَ ﻳَﻐُﻀُّﻮْﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻢْ ‘হে নবী! আপনি মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন চক্ষু অবনমিত রাখে’ (নূর ২৪/৩০) । আর শরী‘আতের উপযুক্ত উপকারিতা হ’ল এ সকল ফিতনার দরজা বন্ধ করা এবং এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থেকে বিরত থাকা। আল্লামা শাওকানী তার ‘নায়লুল আওত্বার’ গ্রন্থে বলেন, চেহারা খুলে নারীদের বাইরে বের হওয়া মুসলমানদের ঐক্যমতে নিষিদ্ধ, বিশেষ করে পাপাচারীদের সামনে। আর যারা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে বেগানা নারীর চেহারা ও হাতের প্রতি তাকানোকে বৈধ করেছেন, নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ব্যতীত তাদের আর কোন দলীল আমার জানা নেই। ১নং দলীল : আল্লাহর বাণী, ﻭَﻻَ ﻳُﺒْﺪِﻳْﻦَ ﺯِﻳْﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ‘আর তারা সাধারণত যা প্রকাশ পেয়ে যায় তা ব্যতীত তাদের শোভা প্রকাশ করবে না’ (নূর ২৪/৩১) । ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, ‘আর সেটা হ’ল নারীর চেহারা, তালুদ্বয় ও আংটি। এটি আ‘মাশ সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকে বর্ণনা করেন। আর ছাহাবায়ে কেরামের তাফসীর শরী‘আতের দলীল, যেমন পূর্বে আলোচিত হয়েছে। ২নং দলীল : ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﺃَﻥَّ ﺃَﺳْﻤَﺎﺀَ ﺑِﻨْﺖَ ﺃَﺑِﻰْ ﺑَﻜْﺮٍ ﺩَﺧَﻠَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﺛِﻴَﺎﺏٌ ﺭِﻗَﺎﻕٌ ﻓَﺄَﻋْﺮَﺽَ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺃَﺳْﻤَﺎﺀُ ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓَ ﺇِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐَﺖِ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴْﺾَ ﻟَﻢْ ﺗَﺼْﻠُﺢْ ﺃَﻥْ ﻳُﺮَﻯ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺇِﻻَّ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﻫَﺬَﺍ . ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺇِﻟَﻰ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ﻭَﻛَﻔَّﻴْﻪِ – আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আসমা বিনতে আবী বকর (রাঃ) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলেন। রাসূল (ছাঃ) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন, হে আসমা! নারী যখন যৌবনে পদার্পণ করে তখন তার এটা ওটা ব্যতীত প্রকাশ করা বৈধ নয়। তিনি চেহারা ও দু’কব্জির দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন।[5] ৩য় দলীল : ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞُ ﺭَﺩِﻳْﻒَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﺠَﺎﺀَﺕِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻣِﻦْ ﺧَﺜْﻌَﻢَ، ﻓَﺠَﻌَﻞَ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞُ ﻳَﻨْﻈُﺮُ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ، ﻭَﺗَﻨْﻈُﺮُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻓَﺠَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﺼْﺮِﻑُ ﻭَﺟْﻪَ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺸِّﻖِّ ﺍﻵﺧَﺮِ – আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, (বিদায় হজ্জের দিন তার ভাই) ফযল রাসূল (ছাঃ)- এর পিছনে সওয়ারীতে বসে ছিল। অতঃপর খাছ‘আম গোত্রের একটা মহিলা আসল। ফযল তার দিকে তাকাতে শুরু করল এবং মহিলাটিও ফযলের দিকে তাকাচ্ছিল। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) ফযলের মুখমন্ডল অন্যদিকে ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন।[6] এ হাদীছ প্রমাণ বহন করে যে, মহিলাটির মুখ খোলা ছিল। ৪নং দলীল : ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺷَﻬِﺪْﺕُ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻌِﻴْﺪِ ﻓَﺒَﺪَﺃَ ﺑِﺎﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟْﺨُﻄْﺒَﺔِ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺃَﺫَﺍﻥٍ ﻭَﻻَ ﺇِﻗَﺎﻣَﺔٍ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻡَ ﻣُﺘَﻮَﻛِّﺌًﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺑِﻼَﻝٍ ﻓَﺄَﻣَﺮَ ﺑِﺘَﻘْﻮَﻯ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺣَﺚَّ ﻋَﻠَﻰ ﻃَﺎﻋَﺘِﻪِ ﻭَﻭَﻋَﻆَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻭَﺫَﻛَّﺮَﻫُﻢْ ﺛُﻢَّ ﻣَﻀَﻰ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﻓَﻮَﻋَﻈَﻬُﻦَّ ﻭَﺫَﻛَّﺮَﻫُﻦَّ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺗَﺼَﺪَّﻗْﻦَ ﻓَﺈِﻥَّ ﺃَﻛْﺜَﺮَﻛُﻦَّ ﺣَﻄَﺐُ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ . ﻓَﻘَﺎﻣَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻣِﻦْ ﺳِﻄَﺔِ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﺳَﻔْﻌَﺎﺀُ ﺍﻟْﺨَﺪَّﻳْﻦِ – জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঈদের দিনে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছালাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুৎবার পূর্বে আযান, ইক্বামত ব্যতীত ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর লোকদেরকে উপদেশ, নছীহত করলেন। অতঃপর মহিলাদের নিকট এসে ওয়ায-নছীহত করে বললেন, হে মহিলারা! তোমরা ছাদাক্বা কর, কেননা তোমাদের অধিকাংশই জাহান্নামের জ্বালানী হবে। দু’গাল লালচে কালো দাগ মিশ্রিত একজন মহিলা নারীদের মধ্যে হ’তে দাঁড়িয়ে বলল, কেন হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)?…।[7] যদি মহিলার চেহারা খোলা না থাকতো, তবে তিনি জানতে পারতেন না যে, তার মুখে লালচে কালো দাগ রয়েছে। আমার জানা মতে, এ সকল দলীল দ্বারা পরপুরুষের সামনে নারীর চেহারা প্রকাশ করার ব্যাপারে দলীল পেশ করা যায়। তবে এগুলো পূর্বোক্ত চেহারা ঢাকা ওয়াজিব হওয়ার দলীলগুলোর বিরোধী নয়, দু’টি কারণে- (১) চেহারা আবৃত করা ওয়াজিব হওয়ার দলীলগুলো মূল থেকে গৃহীত। আর চেহারা খুলে রাখা বৈধতার দলীলগুলো মূলের উপরেই বিদ্যমান। আর মূল থেকে গৃহীত দলীল প্রাধান্য পাবে। যা উছূলবিদদের নিকট প্রসিদ্ধ। কারণ ﺍﻻﺻﻞ(মূল) হ’ল কোন জিনিস তার পূর্বের অবস্থার উপরে বিদ্যমান থাকা। সুতরাং যখন মূল থেকে গৃহীত দলীল পাওয়া যাবে তখন তা মূলের উপরে আপতিত হবে এবং তা পরিবর্তিত হবে। এজন্য আমরা বলি, নকল করায় অতিরিক্ত জ্ঞান অর্জিত হয়। আর সেটা হ’ল মূল বিধানের পরিবর্তন সাব্যস্ত হওয়া। হ্যঁা বোধক, না বোধকের উপর প্রাধান্য পাবে। এই সংক্ষিপ্ত রূপটি সাব্যস্ত হবে এবং প্রায়োগিক ও অর্থগত দলীলের মাঝে সমন্বয় সাধন করবে। (২) যখন আমরা চেহারা খুলে রাখা বৈধতার দলীলগুলো পর্যালোচনা করে দেখব, তখন দেখা যাবে যে, এ দলীলগুলো কোনভাবেই নিষিদ্ধের দলীলগুলোর সমকক্ষ নয়। প্রত্যেক দলীলের জবাব দিলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে। * ইবনে আববাসের ব্যাখ্যার তিনটি দিক রয়েছে- (ক) সম্ভবত দু’টি কর্মের প্রথমটি উদ্দেশ্য। অর্থাৎ পর্দার আয়াত নাযিলের পূর্বের ঘটনা। যেমন ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) আলোচনা করেছেন, যা আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। (খ) সম্ভবত এর দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ সকল সৌন্দর্য, যা প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে, যেমন ইবনে কাছীর (রহঃ) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আর এ দু’টি সম্ভবনাকে শক্তিশালী করে সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা। আল্লাহর বাণী, ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞْ ﻟِﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴْﻦَ ﻳُﺪْﻧِﻴْﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺟَﻼَﺑِﻴْﺒِﻬِﻦَّ – ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের বড় চাদরের কিয়দংশ নিজের উপর টেনে দেয়’ (আহযাব ৩৩/৫৯) । যেমন কুরআন থেকে গৃহীত ৩য় দলীলে পূর্বে আলোচিত হয়েছে। (গ) আমরা যদি এ দু’টি সম্ভাবনার একটিকেও গ্রহণ না করি, তাহ’লে তা দলীল হিসাবে গ্রহণীয় হবে না। আর ছাহাবীর তাফসীর গ্রহণ করা তখনই আবশ্যক হবে, যখন কোন ছাহাবী তার বিরোধিতা না করবে। আর যদি অন্য কোন ছাহাবী বিরোধিতা করেন তাহ’লে ৩য় দলীল দ্বারা যেটা শক্তিশালী হবে সেটা গ্রহণ করতে হবে। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) ইবনু আববাসের বিপরীত তাফসীর করেছেন। আর সেটা হ’ল, ﺇﻻ ﻣﺎ ﻇﻬﺮ ﺑﺎﻟﺮﺩﺍﺀ ﻭﺍﻟﺜﻴﺎﺏ অর্থাৎ চাদর ও কাপড়ের যে অংশ প্রকাশ পায়, তাতে কোন দোষ নেই। কারণ এটা প্রকাশ পাবেই। ফলে দুই ছাহাবীর ব্যাখ্যার মধ্যে কথা ও কাজে ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর ব্যাখ্যা প্রাধান্য পাবে। (২) আসমা বিনতে আবি বকর সম্বন্ধে আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছটি দুই কারণে দুর্বল বা যঈফ- (ক) ﺍﻧﻘﻄﺎﻉ তথা আয়েশা (রাঃ)-এর সাথে খালিদ বিন দুরাইকের সাক্ষাৎ না হওয়া। যেমন আবূদাঊদ ও আবূ হাতিম আর-রাযী বলেন, ﺧﺎﻟﺪ ﺑﻦ ﺩﺭﻳﻚ ﻟﻢ ﻳﺴﻤﻊ ﻣﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ অর্থাৎ খালিদ বিন দুরাইক আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট থেকে এ হাদীছ শুনেনি। (খ) এর সনদে সাঈদ ইবনে বুশাইর আন-নাছরী নামক এক রাবী আছে, সে দামেস্কের লোক। ইবনে মাহদী তাকে মাতরূক বলেছেন। তাছাড়া ইমাম আহমাদ, ইবনে মঈন, ইবনুল মাদিনী ও ইমাম নাসাঈ তাকে দুর্বল রাবী বলেছেন। অতএব একটা দুর্বল হাদীছ পূর্বে বর্ণিত পর্দা আবশ্যক হওয়ার উপর বিশুদ্ধ হাদীছের সমকক্ষ হ’তে পারে না এবং তার উপর আমল করাও যাবে না। তাছাড়া হিজরতের সময় আসমা (রাঃ)-এর বয়স ছিল ২৭ বছর, তখন তিনি পূর্ণ যুবতী। কী করে চেহারা ও কব্জি ছাড়া গোটা দেহে পাতলা কাপড় পরে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে প্রবেশ করতে পারেন? এছাড়া এটা বিশুদ্ধ ধরা হ’লে এটা পর্দার আয়াত নাযিলের পূর্বের ঘটনার উপর প্রমাণ বহন করে। আর মূল থেকে বর্ণিত দলীল আসল অবস্থার উপর প্রাধান্য পাবে। (৩) ইবনে আববাসের বর্ণিত হাদীছ দ্বারা পরপুরুষের বেগানা নারীর প্রতি তাকানোর বৈধতা প্রমাণ করে না। কেননা নবী করীম (ছাঃ) ফযল (রাঃ)-এর তাকানোকে সমর্থন করেননি। বরং তার চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন। আর এজন্য ইমাম নববী ছহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, এ হাদীছের অন্যতম উপকারিতা হ’ল বেগানা নারীর প্রতি তাকানো হারাম। হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বলেন, এ হাদীছের ফায়েদা হ’ল, বেগানা নারীর প্রতি তাকানো নিষিদ্ধ ও চক্ষু অবনমিত রাখা আবশ্যক। কাযী আয়ায বলেন, কারো কারো মতে ফিতনার আশংকা না থাকলে চেহারা ঢাকা আবশ্যক নয়। তিনি বলেন, আমার নিকট রাসূল (ছাঃ)-এর কর্ম ফাযলের চেহারা ফিরিয়ে দেওয়া, এ সকল মত থেকে অধিক যুক্তিযুক্ত চেহারার ঢাকা আবশ্যক হওয়ার জন্য। আর তার কথা ﻏﻄﻰ ﻭﺟﻪ ﺍﻟﻔﻀﻞ অর্থাৎ তিনি ফযলের চেহারা ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন যেমন বর্ণনায় এসেছে। কেউ যদি বলে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মহিলাটিকে চেহারা ঢাকার নির্দেশ দেননি তো? এর উত্তর হ’ল, এটা স্পষ্ট যে সে মহিলা ছিল ইহরাম অবস্থায়। আর তখন চেহারা খুলে রাখাই শরী‘আত সম্মত, যতক্ষণ তার দিকে কোন পর পুরুষ তাকাবে না। অথবা বলা যায় যে, সম্ভবত পরে রাসূল (ছাঃ) তাকে চেহারা ঢাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা নির্দেশের বর্ণনা না থাকাটা নির্দেশ দেননি এর প্রমাণ বহন করে না।… ইমাম মুসলিম ও আবূদাঊদ জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ আল-বাজিলী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ﺳَﺄَﻟْﺖُ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦْ ﻧَﻈْﺮَﺓِ ﺍﻟْﻔَﺠْﺄَﺓِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﺻْﺮِﻑْ ﺑَﺼَﺮَﻙَ ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻗﺎﻝ ﻓَﺄَﻣَﺮَﻧِﻰْ ﺃَﻥْ ﺃَﺻْﺮِﻑَ ﺑَﺼَﺮِﻯْ ‘আমি রাসূল (ছাঃ)-কে হঠাৎ দৃষ্টি পড়া সম্বন্ধে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেন, তোমার চক্ষু ফিরিয়ে নিবে।[8] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমাকে তিনি নির্দেশ দিলেন আমার চক্ষু ফিরিয়ে নিতে।[9] (৪) জাবির (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছের সময়কাল উল্লেখ নেই। হতে পারে মেয়েটি ছিল অতি বৃদ্ধা যে বিবাহের আশা করে না। ফলে তার জন্য চেহারা খোলা রাখা বৈধ। যা অন্যান্য নারীর উপর পর্দা আবশ্যক হওয়াকে নিষিদ্ধ করে না। অথবা এ ঘটনা ছিল পর্দার আয়াত নাযিলের পূর্বের। কারণ সূরা আহযাবের পর্দা সংক্রান্ত আয়াতটি নাযিল হয় পঞ্চম বা ৬ষ্ঠ হিজরীতে আর ঈদের ছালাত শরী‘আতে প্রবর্তিত হয় দ্বিতীয় হিজরী সালে। তাই এমন ঘটনা হ’তে পারে। বৃহত্তম সমাজের মানুষের এই মাসআলা সম্বন্ধে জানার প্রয়োজনে আমরা এ বিষয়ে আলোকপাত করলাম। কারণ অনেক মানুষ সফর করে কিন্তু এর ব্যাপারে চিন্তা- ভাবনা করে তার হক্ব আদায় করে না। যদিও গবেষকদের উপর আবশ্যক হ’ল ন্যায় ইনছাফ অন্বেষণ করা এবং ভালোভাবে না জেনে কথা না বলা। আর মতবিরোধপূর্ণ মাসআলায় বিচারকের আসনে বসবে এবং ন্যায়ের দৃষ্টিতে বিবেচনা করে জ্ঞানের আলোকে ফায়ছালা করবে অতঃপর দু’টির একটিকে প্রাধান্য দিবে না; বরং সকল দিক থেকে দলীলগুলোর প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করবে এবং আধিক্যের উপর ভিত্তি করে একটা মতকে বিশ্বাস করবে এবং দলীল সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবে আর মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা হওয়ায় গুরুত্বহীন মনে করবে এটা সমীচীন নয়। এজন্য বিদ্বানগণ বলেছেন বিশ্বাসের পূর্বে দলীল গ্রহণ করা উচিত হবে, যাতে তার বিশ্বাস দলীলের অনুসারী হয়। কেননা যে দলীল গ্রহণের পূর্বে বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিবে, তার বিশ্বাসই অনেক সময় দলীলকে প্রত্যাখ্যান করবে স্বীয় মতের বিপরীত হওয়ায়। অথচ আমরা এবং অন্যরা দলীলকে বিশ্বাসের অনুসরণ করতে বলার ক্ষতিকর দিক লক্ষ্য করেছি যে, এর ধারক বাহকরা দুর্বল (যঈফ) হাদীছকে ছহীহ বলতে উদ্বুদ্ধ করে এবং কোন বিশুদ্ধ দলীল দ্বারা এমন কথা সাব্যস্ত করে যার সাথে ঐ হাদীছের ন্যূনতম সম্পর্ক নাই। আমি পর্দা আবশ্যক না হওয়ার উপর এক লিখকের একটা প্রবন্ধ পড়েছি, যাতে আবূদাঊদে আয়েশা বর্ণিত হাদীছটিকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে যে, আসমা বিনতে আবী বকর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে প্রবেশ করলেন। আর রাসূল (ছাঃ) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓَ ﺇِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐَﺖْ ﺍﻟْﻤَﺤِﻴْﺾَ ﻟَﻢْ ﺗَﺼْﻠُﺢْ ﺃَﻥْ ﻳُﺮَﻯ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺷﻲﺀ ﺇِﻻَّ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﻫَﺬَﺍ ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺇِﻟَﻰ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ﻭَﻛَﻔَّﻴْﻪِ – ‘যখন কোন নারী যৌবনে পদার্পণ করে তখন তার জন্য এটা ওটা ছাড়া অন্য কিছু প্রকাশ করা বৈধ হবে না এবং চেহারা ও দু’কব্জির দিকে ইঙ্গিত করলেন।[10] আর এই লেখক উল্লেখ করেছেন যে, সবার মতে হাদীছটি ছহীহ। লক্ষ্য করুন! লেখক কি করে একটা দুর্বল হাদীছকে ছহীহ হওয়ার হুকুম লাগালেন, অথচ ইমাম আবূদাঊদ নিজেই হাদীছটিকে মুরসাল এবং মুনকাতী বলেছেন। অত্র হাদীছে সাঈদ ইবনে বুছহির আন-নাছরী নামক রাবী আছে। যে নিতান্ত যঈফ। আরো লক্ষ্য করুন, কি করে হাদীছটিকে ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ বলা যায়, অথচ হাদীছটি এমন নয়। কারণ এর দ্বারা যদি প্রসিদ্ধ পরিভাষা, তথা হাদীছটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন উদ্দেশ্য হয়, তাহ’লে তা ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ এ হাদীছ বুখারী ও মুসলিমে নেই। আর যদি এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয় যে, ওলামায়ে কেরাম এ হাদীছের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে একমত, তাহ’লেও এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ স্বয়ং ইমাম আবূদাঊদ হাদীছটিকে মুরসাল ও মুনকাতী বলেছেন এবং ইমাম আহমাদ সহ হাদীছের অন্যান্য ইমামগণ একে যঈফ বলেছেন। আসলে স্বজনপ্রীতি ও অজ্ঞতা তাকে এ বিপদ ও ধ্বংসের উপর উদ্বুদ্ধ করেছে। আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, তুমি দু’টি পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকবে, যে এ দু’টি পরবে সে লাঞ্ছনা ও অবমাননা দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। একটা হ’ল চরম মূর্খতার পোশাক আর দ্বিতীয়টি পক্ষপাতিত্বের পোশাক। এ দু’টো কতইনা নিকৃষ্ট পোশাক! বরং ন্যায়নীতির মাধ্যমে মর্যাদার অলংকার পরিধান করবে, যার দ্বারা কাঁধ ও তার আশপাশ সুশোভিত হয়। অতএব লেখকগণ যেন দলীল অন্বেষণ ও তা বিশুদ্ধকরণের ক্ষেত্রে সতর্ক হয় এবং জ্ঞানহীন কথাকে শরী‘আত সাব্যস্ত না করে। যার ফলে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ﻓَﻤَﻦْ ﺃَﻇْﻠَﻢُ ﻣِﻤَّﻦِ ﺍﻓْﺘَﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﻛَﺬِﺑﺎً ﻟِﻴُﻀِﻞَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻋِﻠْﻢٍ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻻَ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡَ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴْﻦَ ‘সুতরাং যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হ’তে পারে, আল্লাহ তো যালিম সম্প্রদায়কে সৎ পথে পরিচালিত করেন না’ (আন‘আম ১৪৪) । আর তারা যেন কোন বিষয়ে দলীল অন্বেষণের ক্ষেত্রে সংকীর্ণতা ও মিথ্যার মাঝে সমন্বয় না ঘটায়, যে বিষয়ে দলীল প্রতিষ্ঠিত আছে। এর ফলে অনিষ্টতার উপর অনিষ্টতা এসে পড়বে এবং আল্লাহ তা‘আলার ঐ কথার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে, যেমন তিনি বলেন, ﻓَﻤَﻦْ ﺃَﻇْﻠَﻢُ ﻣِﻤَّﻦ ﻛَﺬَﺏَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻛَﺬَّﺏَ ﺑِﺎﻟﺼِّﺪْﻕِ ﺇِﺫْ ﺟَﺎﺀﻩُ ﺃَﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻲ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻣَﺜْﻮًﻯ ﻟِّﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ – ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা বলে এবং সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে তার অপেক্ষা অধিক যালিম আর কে? কাফিরদের আবাসস্থল কী জাহান্নাম নয়’? (যুমার ৩২) । অবশেষে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি, তিনি আমাদের সত্যকে সঠিক রূপে দেখার এবং তার অনুসরণ করার তাওফীক দিন। আর মিথ্যাকে ভ্রান্ত রূপে দেখার এবং তা থেকে নিরাপদে থাকার তাওফীক দিন। আর আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।- আমীন!! [ঈষৎ সংক্ষেপায়িত ও পরিমার্জিত] [1]. আবূদাঊদ হা/৫২৭৪; মিশকাত হা/৪৭২৭ । [2]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/১১০পৃঃ, ফৎওয়া নং ৬৬। [3]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/১১৭-১১৮ পৃঃ। [4]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/১৫২পৃঃ । [5] . আবু দাঊদ হা/৪১০৬; মিশকাত হা/৪৩৭২, সনদ ছহীহ। [6] . বুখারী হা/১৫১৩; মুসলিম হা/১৩৩৪, আবুদাঊদ হা/১৮১১; নাসাঈ হা/২৬১৩। [7] . মুসলিম হা/৮৮৫। [8] . বুখারী হা/২; আবু দাউদ হা/২১৫০। [9] . মুসলিম হা/২১৫৯। [10] . ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৪৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২১৫।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ