সংক্ষেপে বিয়ের রুকন, শর্ত ও ওলি বা অভিভাবক এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তসমূহ
প্রশ্ন: বিয়ের রুকন ও শর্ত কি কি?
উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য।
• ইসলামে বিয়ের রুকন বা খুঁটি তিনটি:
এক:
বিয়ে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সমূহ
প্রতিবন্ধকতা হতে বর-কনে উভয়ে মুক্ত
হওয়া: যেমন- বর-কনে পরস্পর মোহরেম
হওয়া; ঔরশগত কারণে হোক
অথবা দুগ্ধপানের কারণে হোক। বর
কাফের কিন্তু কনে মুসলিম হওয়া, ইত্যাদি।
দুই:
ইজাব বা প্রস্তাবনা: এটি মেয়ের
অভিভাবক বা তার প্রতিনিধির পক্ষ
থেকে পেশকৃত প্রস্তাবনামূলক বাক্য।
যেমন- বরকে লক্ষ্য
করে বলা যেতে পারে
“আমি অমুককে তোমার
কাছে বিয়ে দিলাম” অথবা এ ধরনের অন্য
কোন কথা।
তিন:
কবুল বা গ্রহণ: এটি বর বা বরের প্রতিনিধির
পক্ষ থেকে সম্মতিসূচক বাক্য। যেমন- বর
বলতে পারেন “আমি গ্রহণ করলাম”
অথবা এ ধরনের অন্য কোন কথা।
• বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্তগুলো নিম্নরূপ:
(১) ইশারা করে দেখিয়ে দেয়া কিংবা
নামোল্লেখ করে সনাক্ত
করা অথবা গুণাবলী উল্লেখ অথবা অন্য
কোন মাধ্যমে বর-কনে উভয়কে সুনির্দিষ্ট
করে নেয়া।
(২) বর-কনে প্রত্যেকে একে অপরের
প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া।
এর দলীল হচ্ছে-নবী (সাঃ) বাণী
“স্বামীহারা নারী (বিধবা অথবা
তালাকপ্রাপ্তা) কে তার সিদ্ধান্ত
জানা ছাড়া (অর্থাৎ সিদ্ধান্ত তার কাছ
থেকে চাওয়া হবে এবং তাকে
পরিষ্কারভাবে বলতে হবে)
বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী
মেয়েকে তার সম্মতি ছাড়া (কথার
মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে)
বিয়ে দেয়া যাবে না।
লোকেরা জিজ্ঞেস করল,ইয়া রাসুলুল্লাহ
(সাঃ)! কেমন করে তার সম্মতি জানব
(যেহেতু সে লজ্জা করবে)।
তিনি বললেন,চুপ করে থাকাটাই তার
সম্মতি।”[সহীহ বুখারী, (৪৭৪১)]
(৩) বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব
মেয়ের অভিভাবককে পালন করতে হবে।
যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার
জন্য অভিভাবকদের
প্রতি নির্দেশনা জারী করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর তোমরা তোমাদের
মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ
দাও।”[সূরা নুর, ২৪:৩২]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন:
“যে নারী তার অভিভাবকের
অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ
বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ
বাতিল।”[হাদিসটি তিরমিযি (১০২১) ও
অন্যান্য গ্রন্থকার কর্তৃক সংকলিত
এবং হাদিসটি সহীহ]
(৪) বিয়ের আকদের সময়
সাক্ষী রাখতে হবে।
দলীল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন
বিবাহ নেই।” [তাবারানী কর্তৃক সংকলিত,
সহীহ জামে (৭৫৫৮)]।
বিয়ের প্রচারণা নিশ্চিত করতে হবে।
দলীল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী-
“তোমরা বিয়ের
বিষয়টি ঘোষণা কর।”[মুসনাদে আহমাদ
এবং সহীহ
জামে গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’
বলা হয়েছে (১০৭২)]
• বিয়ের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্তঃ
১. সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হওয়া।
২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
৩. দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্ত হওয়া।
৪. অভিভাবককে কনের ধর্মের
অনুসারী হওয়া।
সুতরাং কোন অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-
নারীর অভিভাবক হতে পারবে না।
অনুরূপভাবে কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম
নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না।
তবে অমুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম নারীর
অভিভাবক হতে পারবে, যদিও তাদের
উভয়ের ধর্ম ভিন্ন হোক না কেন। কিন্তু
মুরতাদ ব্যক্তি কারো অভিভাবক
হতে পারবে না।
৫. আদেল বা ন্যায়বান হওয়া।
অর্থাৎ ফাসেক না হওয়া। কিছু কিছু আলেম
এ শর্তটি আরোপ করেছেন।
অন্যেরা বাহ্যিক
আদালতকে (দ্বীনদারিকে) যথেষ্ট
ধরেছেন। আবার কারো কারো মতে,
যাকে তিনি বিয়ে দিচ্ছেন তার কল্যাণ
বিবেচনা করার মত
যোগ্যতা থাকলে চলবে।
৬. পুরুষ হওয়া।
দলীল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী-
“এক মহিলা আরেক
মহিলাকে বিয়ে দিতে পারবে না।
অথবা মহিলা নিজে নিজেকে বিয়ে
দিতে পারবে না।
ব্যভিচারিনী নিজে নিজেকে বিয়ে
দেয়।”[ইবনে মাজাহ (১৭৮২) ও সহীহ
জামে (৭২৯৮)।
৭. বুদ্ধিমত্তার পরিপক্কতা থাকা।
এটি হচ্ছে বিয়ের ক্ষেত্রে সমতা (কুফু) ও
অন্যান্য কল্যাণের দিক
বিবেচনা করতে পারার যোগ্যতা।
ইসলামী আইনবিদগণ অভিভাবকদের
একটি ক্রমধারা নির্ধারণ করেছেন।
সুতরাং নিকটবর্তী অভিভাবক
থাকতে দূরবর্তী অভিভাবকের
অভিভাবকত্ব গ্রহণযোগ্য নয়।
নিকটবর্তী অভিভাবক
না থাকলে অথবা তার মধ্যে শর্তের
ঘাটতি থাকলে দূরবর্তী অভিভাবক
গ্রহণযোগ্য হবে। নারীর অভিভাবক হচ্ছে-
তাঁর পিতা। এরপর পিতা যাকে দায়িত্ব
দিয়ে যান সে ব্যক্তি। এরপর পিতামহ, যতই
উর্দ্ধগামী হোক। এরপর তাঁর সন্তান। এরপর
তাঁর সন্তানের সন্তানেরা, যতই অধস্তন
হোক। এরপর তাঁর সহোদর ভাই। এরপর তাঁর
বৈমাত্রেয় ভাই। এরপর এ দুইশ্রেণীর
ভাইয়ের সন্তানেরা। এরপর তাঁর সহোদর
শ্রেণীর চাচা। এরপর বৈমাত্রেয়
শ্রেণীর চাচা। এরপর এ দুইশ্রেণীর চাচার
সন্তানেরা। এরপর মীরাছের
ক্ষেত্রে যারা ‘আসাবা’ হয় সে শ্রেণীর
আত্মীয়গণ। এরপর নিকটাত্মীয়
থেকে ক্রমান্বয়ে দূরের আত্মীয়। যার
কোন অভিভাবক নেই মুসলিম শাসক
অথবা শাসকের প্রতিনিধি (যেমন
বিচারক) তার অভিভাবক।
মুফতী: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-
মুনাজ্জিদ
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সাম্প্রতিক পোষ্ট
"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?
"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...
জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ
-
যৌন উত্তেজনার সময় পানির মতো আঠালো যে তরল পদার্থ বের হয়, তা কি নাপাক? একে “মাযী” বলে। আর তা নাপাক। তা বের হলে উযূ নষ্ট হয়ে যায়। শরমগাহ...
-
গুপ্ত অভ্যাস (হস্তমৈথুন) ব্যবহার করা বৈধ কি? গুপ্ত অভ্যাস (হাত বা অন্য কিছুর মাধ্যমে বীর্যপাত, স্বমৈথুন বা হস্ত মৈথুন) করা কিতাব, সুন...
-
মনোমালিন্য ‘‘সংসার সাগরে দুঃখ-তরঙ্গের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা।’’ কিন্তু সেই ভেলা ডুবে গেলে আর কার কি সাধ্য? স্বামী যদি স্...
-
*সূরা বাকারা ও সূরা আলে-ইমরানের ফজিলত গুলি কি কি? এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের অর্থঃ ✔1-রাতে ঘুমানোর আগে সুরা বাক্বারার শেষ ...
-
আপন মামাত, খালাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোন, চাচী, মামি, স্ত্রীর বোন বা ভাবীর সাথে মুসাফাহাহ বৈধ কি? যার সাথে পু...
-
কেউ কেউ মনে করেন, আমার মন খুবই পরিস্কার। তাকে আমি মা, খালা, অথবা বোনের মতোই মনে করি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে তাঁর সাথে মেলা-মেশা করতে অসুবিধা ...
-
কথা বলার ব্যপারে "ইসলামে"র শিক্ষা কি? ====== ১। কথা বলার পূর্বে সালাম দেয়া। সূরা নূরঃ ৬১ ২। সতর্কতার সাথে কথা বলা। (কে...
-
জাহান্নাম থেকে মুক্তির ১৫টি অসাধারন হাদিস- *১-গীবত থেকে দূরে থাকা- আসমা বিনতে ইয়াযীদ হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যাক্তি তার (মুসলি...
-
# দোয়া_কবুল_না_হওয়ার_কারণগুলো_কি_কি ? ---------------------------------------------------------------------- কিছু পাপ আছে যা বান্দার মা...
-
প্রশ্ন:নাটক, সিনেমা দেখা , গল্পের বই পড়া কি জায়েজ ? =============================== উত্তর : যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালা...
No comments:
Post a Comment