নারী-পুরুষের ফ্রি মিক্সিং !যে আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড, তবে আমারডিপার্টমেন্টের নয়। ওর কয়েকটা ছেলে বন্ধুছিল। ছেলেগুলো অবশ্য ভালোই, ফটকা ধরনেরনা। তারপরও আমার ব্যাপারটা পছন্দ হতো না। যে যতইবলুক না কেন, আমার কেন যেন বিশ্বাস হতে চাইতনা যে ছেলে-মেয়ে শুধুই ফ্রেন্ড হতেপারে।অন্য কোনো আবেগ একটুও কাজ করে না।যাইহোক, অনেকদিন ওকে মানা করেছিলাম। কিন্তু ওশোনেনি। ও আমাকে উলটো বুঝাত যে,মেয়েরা অনেক হিংসা করে, হেল্প করতে চায় না,নোট দিতে চায় না। কিন্তু ছেলেরা এমন না। ওরাঅনেক
হেল্পফুল। নোট না থাকলেও অন্যেরকাছ থেকে জোগাড় করে দেয়।আমি বলতাম,-‘তোমার হয়তো ওদের প্রতি অন্যরকমকোনো ফিলিংস নেই। কিন্তু ওদের তো থাকতেপারে।’ কিন্তু ও আমার কথা হেসেই উরিয়েদিয়েছে, বলেছে: ‘অসম্ভব! ওরা জানে যে আমিএকজনকে পছন্দ করি।’ওর কথা শুনে মনে হয়েছিল, ও মনে হয় ঠিকইবলছে। আমার মনই ছোট; খালি আজেবাজে কথাচিন্তা করি। আমার ফ্রেন্ডটা হিজাব পরিধান করতো,তবে ফেইস খোলা থাকত। একদিন দেখি সে মুখঢাকা শুরু করেছে। এমনকি ক্লাসেও নাকি সে মুখঢাকে। খুবই বিস্মিত হলাম, খুশিও হলাম। পরে অবশ্যএর কারন জানতে পেরেছিলাম। তার এক ধার্মিকফ্রেন্ড তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল, রিলেশনআছে জানার পরও ! আমি অবশ্য সেইছেলেটাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করি। কারণ সে ছাত্রঅবস্থায় বিয়ে করতে চেয়েছে, তার নিয়ত খারাপহলে সে কখনোই এমনটি করত না। কিন্তু আমার ওইফ্রেন্ডের অন্য একটা পছন্দ থাকায় সে এইকঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল।আসলে এতে আমি ছেলেটার কোনো দোষদেখি না। ছেলে-মেয়ে একসাথে থাকলে,পড়াশুনা করলে বা কর্মক্ষেত্রে কাজ করলেসমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক আর না হওয়াটা অস্বাভাবিক।আমাদের দেশের সিস্টেমটা এমন হয়েদাঁড়িয়েছে যে, একটা ছাত্র বা ছাত্রী মেধাবীহলে কলেজ লেভেল পর্যন্ত আলাদা থাকা সম্ভবহলেও ভার্সিটি লেভেলে গিয়ে তাদেরকেএকসাথে হতে বাধ্য করা হয়। অবশ্য সমস্যাটাভার্সিটিতে নয় বরং অধিকাংশের ক্ষেত্রে এরআগেই শুরু হয়—কোচিং বা স্যারের বাসায় ছেলে-মেয়ে একসাথে পড়তে গিয়ে। বিষয়টা সত্যিদুঃখজনক।এখনকার সময়ের অনেক ব্যায়বহুল ইংলিশ মিডিয়াম ওকিছু বাংলা মিডিয়াম স্কুলে ছেলে-মেয়েরা একসাথেপড়াশুনা করে। পরিবার থেকেও এরা নৈতিকতাসম্পর্কে তেমন কোনো শিক্ষা পায় না। আমিবলছি না সবাই, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসবছেলে-মেয়ে ভালো থাকে না। বয়ঃসন্ধিকালেরএই সংকটময় মুহূর্তে ফ্রি মিক্সিং যে কত ভয়াবহ রূপনিতে পারে তা চিন্তা করতেও ভয় হয়। ক্লাস এইটেপড়া আমার এক কাজিনের কাছে মাঝে মাঝে শুনতেহয়, তার অমুক ক্লাসমেটের এত নাম্বার বয়ফ্রেন্ডচলছে, অমুক-অমুক ছেলেদের সাথে একসাথেপার্টিতে নেচেছে…আরও কত কী !একটা ছেলে বা মেয়ে মাস্টার্স পাস করার আগেতাদেরকে বাচ্চা মনে করা হয়। বিয়ে দেওয়ার কথাচিন্তাই করে না। আর ওদিকে ফ্রি মিক্সিংকে ফ্যামিলিথেকে খুব পজিটিভ বিষয় হিসেবে স্বীকৃতিদেওয়া হয়। অথচ সন্তানদের রুচির বিকৃতি ও মানসিকঅবক্ষয়ের দিকে বাবা-মা কোনো নজরই দেয় না।আর ওদিকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কত মেধাবীছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনকিএদের অনেকেই ড্রাগের দিকেও ঝুঁকেপড়ছে।আর সমস্যাটা যে কেবল অবিবাহিতদের ক্ষেত্রেইহয়, তা কিন্তু নয়। অনেক বিবাহিতরাও বিশেষ করেকর্মক্ষেত্রে গিয়ে এধরনের সমস্যায় পড়ে।নারী বা পুরুষ কলিগের সাথে একত্রে কাজ করতেগিয়ে অন্য ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।কিছুদিন আগে একটা আর্টিকেলে এই কমনসমস্যাটাকে একটা ঘটনার মাধ্যমে তুলে ধরেমনোবিশেষজ্ঞের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল।সেখানে বলা হয়েছে, আজকাল অনেক বিবাহিতপুরুষদেরই কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন নারীকলিগদের সাথে কাজ করতে হয়। দেখা যায়ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ভালোলাগা শুরুহতে থাকে এবং সম্পর্ক গভীর হতে থাকে।প্রথমে শুধু চ্যাট, এরপর স্কাইপে কথাবার্তা এবংসবশেষে গভীর রাতে বাড়ি ফেরা। আর ওদিকেস্ত্রী বেচারি স্বামীর পথপানে চেয়ে নাখেয়ে বসে থাকে। স্বামীরও স্ত্রীর জন্যখারাপ লাগে, তবে তার কেবলই মনে হয় তারস্ত্রী অনেক ব্যাকডেটেড, তার সাথে স্ত্রীরমিলে না। আর অন্যদিকে তার কলিগ কত স্মার্ট, কতআধুনিক, তার জন্য সেই আপ্রোপ্রিয়েট। আরএভাবেই পরকীয়া প্রেম চলতে থাকে। কেউকেউ হয়তো স্ত্রীকে তালাক দিয়ে কলিগকেবিয়ে করে আর কেউ কেউ এভাবেই কাঁটিয়েদেয় বাকি জীবন।পরিণতিতে পরিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শুরুহয় পারিবারিক অশান্তি। আমি বলছি না, সবার ক্ষেত্রেএমনটাই ঘটবে। তবে এই চিত্রটা সত্যি খুব কমন হয়েউঠছে। আপনারা একটু খেয়াল করলেই লক্ষ্যকরবেন যে গত বিশ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশেডিভোর্সের হার কত আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধিপেয়েছে। আর এর অন্যতম একটি কারণ শিক্ষাঙ্গনও কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অবাধমেলামেশা।ইসলামে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা সম্পূর্ণনিষিদ্ধ।-ইসলাম জানে যে নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশারপরিণতি কোথায় গিয়ে গড়াতে পারে, তাইগোড়াতেই একে দমন করেছে। আল্লাহ তায়ালাপবিত্র কুরআনে নারী-পুরুষ উভয়ের দৃষ্টি সংযতরাখতে বলেছেন। কুরআনে এসেছে,‘মুমিনদেরকে বলুন , তারা যেন তাদের দৃষ্টি নতরাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে । এতেতাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে । নিশ্চয় তারা যাকরে আল্লাহ তা অবহিত আছেন । ঈমানদারনারীদেরকে বলুন, “তারা যেন তাদের দৃষ্টিকেনত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযতকরে।” [আন নূর, আয়াত: ৩০-৩১]রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আমি পুরুষের জন্যনারীর চেয়ে বড় কোন ফিতনা রেখেযাইনি।” [বুখারী ও মুসলিম]সত্যি বলতে নারী যেমন পুরুষদের জন্য ফিতনা,তেমনি পুরুষেরাও নারীদের জন্য ফিতনা। শাইখুলইসলাম ইবনে তাইমিয়্যিয়াহ বলেছেন, ‘নারীপুরুষের মেলামেশা হচ্ছে দাহ্য কাঠের সাথেআগুনের সম্পর্কের মত।’ [আল-ইসতিক্বামাহ, ১/৩৬১]শুধু ইসলামেই নয় অনেক বিশিষ্ট জনও একথারস্বীকার করেছেন যে নারী-পুরুষের মধ্যে‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ সম্ভব নয়। আইরিশ কবি Oscar Wildeবলেছেন, ‘নারী এবং পুরুষের মাঝে কেবলইবন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকা অসম্ভব। যা থাকতে পারেতা হল আকাংখা, দুর্বলতা, ঘৃণা কিংবা ভালবাসা; কোনভাবেইবন্ধুত্ব না।’নারী-পুরুষের মধ্যে স্বাভাবিক মেলামেশা, ভালোজানা, ভালো লাগা, ভালোবাসা…এরূপ বিভিন্ন মাত্রারসম্পর্ক যে আরও কতদূর যেতে পারে তাআমাদের ভালোভাবেই জানা হয়ে গেছে। আরঅদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের সাথে তাল রাখতে গিয়েআমাদের আর কত দূর যেতে হবে তা চিন্তাকরতেও দুঃখ লাগে।সত্যি বলতে, এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যঅন্যতম যে পদক্ষেপটি নেওয়া যেতে পারে তাহলো নারী-পুরুষ কম্বাইন্ড এডুকেশন ও ওয়ার্কিংসিস্টেমকে বন্ধ করা।কথাটা হয়তো আপনাদের কাছে খুবই সেকেলেএবং অবাস্তব সম্মত মনে হবে। তবে আমি সত্যিবলছি, যারা কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষাঙ্গনে আবেগ তাড়িতসম্পর্কে জড়ায় অথবা যারা যুদ্ধ করে এর থেকেমুক্ত থাকে, তারা উভয়ই একধরনের টর্চারের মধ্যদিয়ে যায়, যা তাদের কর্মদক্ষতা, প্রতিভার বিকাশেঅনেক সময়ই একটা বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।কর্মক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের সেপারেশনটাএমন হওয়া উচিত যেন কাউকে ব্যক্তিগতভাবে জানা,চেনা বা ভালোলাগার কোনো সুযোগ তৈরি না হয়।আপনার যদি ইসলামি বিধান সম্পর্কে ধারণা থাকে তবেআপনি অবশ্যই আমার সাথে একমত হবেন ।আমি এমন অনেক ভাইকে চিনি যারা শুধুমাত্র ফ্রি মিক্সিংথেকে বাঁচার জন্য লাখ টাকার চাকরি ছেড়েছাপোষা জীবন যাপন করছে।আমাদের উচিত আমাদের নিজেদের এবং আমাদেরভবিষ্যৎ জেনারেশনের জন্য ফিতনা মুক্ত এমনএকটি পরিবেশ গড়ে তোলা যেখানে তাদেরপরিপূর্ণ মেধার বিকাশ ঘটা সম্ভব।নিয়মিত আমাদের প্রকাশনা পেতে, আমাদের সাথেফেসবুকে জইন্ট করতে পারেন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সাম্প্রতিক পোষ্ট
"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?
"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...
জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ
-
যৌন উত্তেজনার সময় পানির মতো আঠালো যে তরল পদার্থ বের হয়, তা কি নাপাক? একে “মাযী” বলে। আর তা নাপাক। তা বের হলে উযূ নষ্ট হয়ে যায়। শরমগাহ...
-
গুপ্ত অভ্যাস (হস্তমৈথুন) ব্যবহার করা বৈধ কি? গুপ্ত অভ্যাস (হাত বা অন্য কিছুর মাধ্যমে বীর্যপাত, স্বমৈথুন বা হস্ত মৈথুন) করা কিতাব, সুন...
-
মনোমালিন্য ‘‘সংসার সাগরে দুঃখ-তরঙ্গের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা।’’ কিন্তু সেই ভেলা ডুবে গেলে আর কার কি সাধ্য? স্বামী যদি স্...
-
*সূরা বাকারা ও সূরা আলে-ইমরানের ফজিলত গুলি কি কি? এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের অর্থঃ ✔1-রাতে ঘুমানোর আগে সুরা বাক্বারার শেষ ...
-
আপন মামাত, খালাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোন, চাচী, মামি, স্ত্রীর বোন বা ভাবীর সাথে মুসাফাহাহ বৈধ কি? যার সাথে পু...
-
কেউ কেউ মনে করেন, আমার মন খুবই পরিস্কার। তাকে আমি মা, খালা, অথবা বোনের মতোই মনে করি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে তাঁর সাথে মেলা-মেশা করতে অসুবিধা ...
-
কথা বলার ব্যপারে "ইসলামে"র শিক্ষা কি? ====== ১। কথা বলার পূর্বে সালাম দেয়া। সূরা নূরঃ ৬১ ২। সতর্কতার সাথে কথা বলা। (কে...
-
জাহান্নাম থেকে মুক্তির ১৫টি অসাধারন হাদিস- *১-গীবত থেকে দূরে থাকা- আসমা বিনতে ইয়াযীদ হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যাক্তি তার (মুসলি...
-
# দোয়া_কবুল_না_হওয়ার_কারণগুলো_কি_কি ? ---------------------------------------------------------------------- কিছু পাপ আছে যা বান্দার মা...
-
প্রশ্ন:নাটক, সিনেমা দেখা , গল্পের বই পড়া কি জায়েজ ? =============================== উত্তর : যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালা...
No comments:
Post a Comment