পিতামাতার অবাধ্যতার কিছু বাজ্জিক রুপ ও নমুনা ঘটনাঃ পর্ব -১
পিতামাতার অবাধ্যতার বাজ্জিক রুপ সমুহ ও কিছু নমুনা ঘটনাঃ পিতামাতার অবাধ্যতা: কারণ, কিছু বাহ্যিক চিত্র ও প্রতিকারের উপায় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ভূমিকা সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আর দুরূদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথী ও যারা তাঁকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাদের প্রতি। অতঃপর, পিতামাতার অধিকারের বিষয়টি অনেক বড় ও মহান এবং দীনের মধ্যে তাদের মর্যাদা ও অবস্থান অনেক উপরে; সুতরাং তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার বিষয়টি তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের মতই গুরত্বপূর্ণ; আর তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার প্রতি কৃতজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত; আর তাদের প্রতি ইহসান করা সবচেয়ে মহান কাজের অন্তর্ভুক্ত এবং মহান আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
: ﴿۞ ﻭَﭐﻋۡﺒُﺪُﻭﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺸۡﺮِﻛُﻮﺍْ ﺑِﻪِۦ ﺷَﻴۡٔٗﺎۖ ﻭَﺑِﭑﻟۡﻮَٰﻟِﺪَﻳۡﻦِ ﺇِﺣۡﺴَٰﻨٗﺎ ﴾ [ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٣٦ ] “আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং কোনো কিছুকে তাঁর শরীক করো না; আর পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো।” [1] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: ﴿ ۡﻞُﻗ۞ ﺗَﻌَﺎﻟَﻮۡﺍْ ﺃَﺗۡﻞُ ﻣَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﺭَﺑُّﻜُﻢۡ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡۖ ﺃَﻟَّﺎ ﺗُﺸۡﺮِﻛُﻮﺍْ ﺑِﻪِۦ ﺷَﻴۡٔٗﺎۖ ﻭَﺑِﭑﻟۡﻮَٰﻟِﺪَﻳۡﻦِ ﺇِﺣۡﺴَٰﻨٗﺎۖ ﴾ [ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١٥١ ] “বলুন, ‘এসো তোমাদের রব তোমাদের উপর যা হারাম করেছেন তোমাদেরকে তা তিলাওয়াত করি, তা হচ্ছে, ‘তোমরা তাঁর সাথে কোনো শরীক করবে না, পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।”[2] আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা আরও বলেন: ﴿ ٰﻰَﻀَﻗَﻭ۞ ﺭَﺑُّﻚَ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﻌۡﺒُﺪُﻭٓﺍْ ﺇِﻟَّﺎٓ ﺇِﻳَّﺎﻩُ ﻭَﺑِﭑﻟۡﻮَٰﻟِﺪَﻳۡﻦِ ﺇِﺣۡﺴَٰﻨًﺎۚ ﺇِﻣَّﺎ ﻳَﺒۡﻠُﻐَﻦَّ ﻋِﻨﺪَﻙَ ﭐﻟۡﻜِﺒَﺮَ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻤَﺎٓ ﺃَﻭۡ ﻛِﻠَﺎﻫُﻤَﺎ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻘُﻞ ﻟَّﻬُﻤَﺎٓ ﺃُﻑّٖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻨۡﻬَﺮۡﻫُﻤَﺎ ﻭَﻗُﻞ ﻟَّﻬُﻤَﺎ ﻗَﻮۡﻟٗﺎ ﻛَﺮِﻳﻤٗﺎ ٢٣ ﻭَﭐﺧۡﻔِﺾۡ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﺟَﻨَﺎﺡَ ﭐﻟﺬُّﻝِّ ﻣِﻦَ ﭐﻟﺮَّﺣۡﻤَﺔِ ﻭَﻗُﻞ ﺭَّﺏِّ ﭐﺭۡﺣَﻤۡﻬُﻤَﺎ ﻛَﻤَﺎ ﺭَﺑَّﻴَﺎﻧِﻲ ﺻَﻐِﻴﺮٗﺍ ٢٤ ﴾ [ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٢٣، ٢٤] “আর তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ‘ইবাদত না করতে এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ্’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; আর তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো। আর মমতাবেশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করো এবং বলো, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর, যেভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।”[3] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: ﴿ ﻭَﻭَﺻَّﻴۡﻨَﺎ ﭐﻟۡﺈِﻧﺴَٰﻦَ ﺑِﻮَٰﻟِﺪَﻳۡﻪِ ﺣَﻤَﻠَﺘۡﻪُ ﺃُﻣُّﻪُۥ ﻭَﻫۡﻨًﺎ ﻋَﻠَﻰٰ ﻭَﻫۡﻦٖ ﻭَﻓِﺼَٰﻠُﻪُۥ ﻓِﻲ ﻋَﺎﻣَﻴۡﻦِ ﺃَﻥِ ﭐﺷۡﻜُﺮۡ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻮَٰﻟِﺪَﻳۡﻚَ ﺇِﻟَﻲَّ ﭐﻟۡﻤَﺼِﻴﺮُ ١٤ ﴾ [ ﻟﻘﻤﺎﻥ : ١٤ ] “আর আমরা মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে, আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে। কাজেই আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। ফিরে আসা তো আমারই কাছে।”[4] তাছাড়া এ প্রসঙ্গে বহু হাদিসও বর্ণিত আছে; তন্মধ্যে অন্যতম একটি হাদিস, আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: «ﺳَﺄَﻟْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺃَﻱُّ ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ ﺃَﺣَﺐُّ ﺇﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ؟ ﻗَﺎﻝَ : « ﺍﻟﺼَّﻼﺓُ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﻗْﺘِﻬَﺎ » . ﻗُﻠْﺖُ : ﺛُﻢَّ ﺃَﻱُّ ؟ ﻗَﺎﻝَ : « ﺑِﺮُّ ﺍﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ » , ﻗُﻠْﺖُ : ﺛُﻢَّ ﺃَﻱُّ ؟ ﻗَﺎﻝَ : « ﺍﻟْﺠِﻬَﺎﺩُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) . “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম: আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? জবাবে তিনি বললেন: সময় মত সালাত আদায় করা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম: তারপর কোনটি? তিনি বললেন: পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম: তারপর কোনটি? তিনি বললেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।”[5] বস্তুত পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার বিষয়টি এমন একটি বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, যা সুস্থস্বভাব ও বিশুদ্ধ প্রকৃতি কর্তৃক স্বীকৃত, যার ব্যাপারে আসমানী শরী‘য়ত একাট্টা; আর তা হল নবীদের চরিত্র এবং সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণের স্বভাব। যেমনিভাবে তা ঈমানের সত্যতা, ব্যক্তির মহত্ব ও সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালনের উপর উৎকৃষ্ট দলীল ও প্রমাণ। আর পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার বিষয়টি ইসলামী শরী‘য়তের মহান সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত; এটা হল অনুগ্রহের স্বীকৃতি, মর্যাদা সংরক্ষণ, শরী‘য়তের পরিপূর্ণতার উপর প্রমাণ এবং তা অন্তর্ভুক্ত করে সকল প্রকার অধিকারকে। বস্তুবাদী পৃথিবীর মানব রচিত আইনকানুন তার বিপরীত, যা পিতামাতার জন্য কোনো বিশেষ মর্যাদা নির্ধারণ করে নি এবং তাদের জন্য কোনো অধিকার সংরক্ষণ করে নি; বরং তা তাদেরকে অবজ্ঞা করেছে এবং হেয় প্রতিপন্ন করেছে। আর প্রযুক্তিতে অগ্রগামী পশ্চিমা বিশ্বই হলো এর জ্বলন্ত সাক্ষী; কারণ, ঐ শাসন ব্যবস্থায় মা হলেন এমন এক যন্ত্রের মত, যখন তার কার্যকারিতার সময়কাল শেষ হয়ে যায়, তখন তাকে মাটিতে ছুড়ে ফেলা হয়। আর তাদের চিন্তা- চেতনা থেকে পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহারের অতি সীমিত এক পন্থার উদ্ভব হয়েছে যে, তারা একটি বার্ষিক দিবস চালু করেছে, যার নাম দিয়েছে ‘মা দিবস’। সে দিন ছেলে ও মেয়েরা ভালবাসা ও সদ্ব্যবহারের প্রতীক হিসেবে তাদের মাকে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল উপহার হিসেবে প্রদান করে। এটাই হলো তাদের পক্ষ থেকে পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার চূড়ান্ত নমুনা; বছরে একদিন, অন্য কোনো দিন নয়! তাহলে সেবা-যত্ন কোথায়? অথবা সহানুভূতি কোথায়? আর দায়িত্ব পালনের বিষয়টি বা কোথায়? এসব মার্জিত মর্যাদাপূর্ণ অর্থবোধক শব্দের কোনো জ্ঞান তাদের নেই এবং তাদের নিকট এর কোনো অংশের বাস্তবতা নেই। অপরদিকে ইসলামে মাতাপিতার অধিকারের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা হয়েছে এবং এটাই শুধু নয়, বরং ইসলাম পিতামাতার অবাধ্য হতে নিষেধ করেছে এবং তার ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করেছে; কারণ, তা কবীরাগুনাহসমূহের মধ্যে অন্যতম এবং শিরকের সমমানের অপরাধ। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার বাণীই যথেষ্ট, তিনি বলেন: ﴿ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻘُﻞ ﻟَّﻬُﻤَﺎٓ ﺃُﻑّٖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻨۡﻬَﺮۡﻫُﻤَﺎ ﴾ [ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٢٣] “তাদেরকে ‘উফ্’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না।”[6] আর এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস বর্ণিত আছে; তন্মধ্যে অন্যতম একটি হাদিস, আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: « ﺍﻟﻜﺒﺎﺋﺮُ : ﺍﻹﺷﺮﺍﻙُ ﺑﺎﻟﻠﻪ ، ﻭﻋُﻘﻮﻕُ ﺍﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ، ﻭﻗﺘْﻞُ ﺍﻟﻨﻔﺲ ، ﻭﺍﻟﻴﻤﻴﻦُ ﺍﻟﻐﻤﻮﺱُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ) . “অন্যতম কবীরা গুনাহসমূহ হল: আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা।”[7] পিতামাতার জন্য এই মর্যাদা, বিশেষ করে তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার ব্যাপারে জোরালো নির্দেশ এবং তাদের অবাধ্য হতে নিষেধ করে কঠোর ধমক আসা সত্ত্বেও একদল মানুষ তাদেরকে দেওয়া উপদেশের একটা বিরাট অংশকে ভুলে গেছে; ফলে তারা পিতামাতার অধিকারকে সংরক্ষণ করে না এবং পিতামাতার অবাধ্য হওয়ার বিষয়টিকে পরোয়া করে না। পৃষ্ঠাসমূহের ধারাবাহিকতায় অচিরেই নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা হবে: – অবাধ্যতার সংজ্ঞা – পিতামাতার অবাধ্যতার বাহ্যিক রূপ-প্রকৃতি – অবাধ্যতার নমুনা কাহিনী – অবাধ্যতার কারণ – প্রতিকারের উপায় – পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহারের পরিচয় – পিতামাতার সাথে আচার- আচরণের লক্ষণীয় দিক – সদ্ব্যবহারে সহায়ক বিষয় বা কর্মকাণ্ডসমূহ – স্ত্রী ও পিতামাতার মাঝে সমন্বয় – সদ্ব্যবহারের কিছু নমুনা কাহিনী। পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর সুন্দর নামসমূহ ও তাঁর মহান গুনাবলীর দোহাই দিয়ে তাঁর কাছে আবেদন করছি যে, তিনি যেন আমাদেরকে আল্লাহভীরু পুণ্যবান ব্যক্তি ও যুগশ্রেষ্ঠ খাঁটি বন্ধুগণের অন্তর্ভুক্ত করেন; তিনি হলেন এর অভিভাবক ও এই বিষয়ে ক্ষমতাবান। আর আল্লাহই সকল বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। ﻭ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭ ﺻﺤﺒﻪ . (আর আল্লাহ তা‘আলা সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সঙ্গী-সাথীর উপর)। * * * অবাধ্যতার সংজ্ঞা অবাধ্যতাকে আরবীতে ﺍﻟﻌﻘﻮﻕ বলা হয়। অর্থাৎ অবাধ্য হওয়া, অমান্য করা। শব্দটি ” ﺍﻟﺒﺮ ” (তথা সদ্ব্যবহার) শব্দের বিপরীত অর্থবোধক শব্দ; ইবনু মানযূর রহ. বলেন: এর অর্থ হচ্ছে, সে তার পিতার আনুগত্যের লাঠি ভেঙ্গে ফেলল; আর সে তার পিতামাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল এবং সে তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করেনি। [8] তিনি আরও বলেন: হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতাগণের অবাধ্য হতে নিষেধ করেছেন; আর ﺍﻟﻌﻘﻮﻕ (অবাধ্য হওয়া) শব্দটি ” ﺍﻟﺒﺮ ” (সদ্ব্যবহার) শব্দের বিপরীত অর্থবোধক শব্দ; যা মূলত ” ﺍﻟﻌﻖ ” শব্দ থেকে এসেছে; অর্থ: ভেঙ্গে ফেলা; কর্তন করা বা ছিন্ন করা। [9] * * * পিতামাতার অবাধ্যতার বাহ্যিক রূপ- প্রকৃতি পিতামাতার অবাধ্যতার অনকেগুলো বাহ্যিক রূপ ও আকার- প্রকৃতি রয়েছে; সেগুলো নিম্নরূপ [10] : ১. পিতামাতাকে কাঁদানো ও দুঃখ দেওয়া: চাই তা কথার দ্বারা হউক অথবা কাজের দ্বারা, অথবা অন্য কোনো পন্থায়। ২. তাদেরকে ধমক ও হুমকি দেওয়া: আর এটা হতে পারে উচ্চস্বরে কথা বলার দ্বারা; অথবা তাদেরকে কঠোর ভাষায় শক্ত কথা বলা; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: ﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻨۡﻬَﺮۡﻫُﻤَﺎ ﻭَﻗُﻞ ﻟَّﻬُﻤَﺎ ﻗَﻮۡﻟٗﺎ ﻛَﺮِﻳﻤٗﺎ ٢٣ ﴾ [ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٢٣ ] “তাদেরকে ধমক দিও না; আর তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো।”[11] ৩. পিতামাতার আদেশ-নির্দেশের কারণে ত্যক্ত ও বিরক্ত হওয়া: আর এটা এমন এক চরিত্র, যা বর্জন করাটাকে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আদব ও শিষ্টাচার বলে শিক্ষা দিয়েছেন; কারণ, এমন অনেক মানুষ আছে, যাকে তার পিতামাতা যখন আদেশ করে, তখন সে ‘উফ্’ বলে তার বিরক্তিসূচক কথা প্রকাশ করে, যদিও সে অচিরেই তাদের আনুগত্য করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻘُﻞ ﻟَّﻬُﻤَﺎٓ ﺃُﻑّٖ ﴾ [ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٢٣ ] “তাদেরকে ‘উফ্’ বলো না।”[12] ৪. পিতামাতার সামনে ভ্রুকুটি করা এবং কপাল ভাঁজ করে ক্রোধ প্রকাশ করা: আপনি কোনো কোন মানুষকে বিভিন্ন মাজলিস ও আসরে দেখতে পাবেন হাস্যোজ্জ্বল, মুচকি হাসিসম্পন্ন, উত্তম চরিত্রবান, উত্তম কথার কারিগর ও মিষ্টিভাষী; অতঃপর যখনই সে বাসায় প্রবেশ করবে এবং পিতামাতার সামনে গিয়ে বসবে, তখন সে প্রভাবশালী সিংহে রূপান্তরিত হয়ে যায়, কোনো কিছুই পরোয়া করে না; ফলে তার অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায়, নম্রতা-ভদ্রতা চলে যায়, উদারতা লোপ পায় এবং তার মাঝে কঠোরতা, রূঢ়তা, হীনতা ও অশ্লীলতার আগমন ঘটে। এটাকে সত্যে পরিণত করে কথকের কথা: ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨّﺎﺱِ ﻣَﻦْ ﻳﺼﻞُ ﺍﻷﺑﻌﺪﻳﻦَ ﻭﻳﺸﻘَﻰ ﺑﻪِ ﺍﻷﻗﺮﺏُ ﺍﻷﻗﺮﺏُ (মানুষের মাঝে কেউ কেউ আছে অনেক দূরতমদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, আর তার কাছে নিকটমতম থেকে নিকটতম ব্যক্তিরা হতভাগ্য হয়ে যায়)। ৫. পিতামাতার দিকে বাঁকা চোখে তাকানো: আর এটা হলো ক্ষুব্ধ ও বিরক্তির চোখে তাদের দিকে তাকানো এবং তাদের দিকে অবজ্ঞা ও ঘৃণার চোখে দৃষ্টি দেওয়া। মুয়াবিয়া ইবন ইসহাক র. ‘উরওয়া ইবন যুবায়ের রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: ” ﻣﺎ ﺑَﺮَّ ﻭﺍﻟﺪَﻩ ﻣَﻦْ ﺷَﺪَّ ﺍﻟﻄّﺮﻑَ ﺇﻟﻴﻪ ” . “যে ব্যক্তি তার পিতার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকালো সে তার পিতার সাথে ভাল ব্যবহার করল না।”[13] ৬. পিতামাতার প্রতি নির্দেশ জারি করা: ঐ ব্যক্তির মত, যে তারা মাতাকে বাড়ি- ঘর ঝাড়ু দেওয়ার জন্য, অথবা কাপড় ধোয়ার জন্য, অথবা খাবার তৈরি করার জন্য নির্দেশ করে; অথচ এই কাজটি তার জন্য মানানসই নয়, বিশেষ করে মা যখন অক্ষম, বা বয়স্ক, বা অসুস্থ হন। তবে মা যখন স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কাজগুলো করেন এবং তিনি অক্ষমও নন, এমতাবস্থায় এই ধরনের কাজে কোনো দোষ নেই, তবে এ ক্ষেত্রে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিকটি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং তাঁর জন্য দো‘আ করবে। ৭. মাতা কর্তৃক তৈরি করা খাবারের সমালোচনা করা: আর এই কাজটির মধ্যে দু’টি নিষিদ্ধ বিষয় রয়েছে; একটি হচ্ছে: খাদ্যের দোষ- ত্রুটি বর্ণনা করা, আর এটি করা বৈধ নয়; কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কোনো খাদ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করেন নি; ভাল মনে হলে খেয়েছেন, নতুবা বর্জন করেছেন। আর দ্বিতীয় অবৈধ বিষয়টি হল: তাতে মায়ের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ ব্যবহারের কমতি হয় এবং তাকে বিরক্ত করা হয়। ৮. পারিবারিক কাজে পিতামাতাকে সহযোগিতা না করা: চাই তা ঘর সাজানো ও গোছগাছ করার ক্ষেত্রে হউক, অথবা খাবার প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে হউক, অথবা পারিবারিক অন্য যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই হউক। বরং ছেলেদের কেউ কেউ (আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করুন) এটাকে তার অধিকার ক্ষুন্ন ও ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয় বলে মনে করে। আর মেয়েদের কেউ কেউ (আল্লাহ তাদেরকেও হেদায়েত করুন) মনে করে, তার মাতাই ঘরের অভ্যন্তরীণ কাজ-কর্ম সম্পাদন করবে, সে তার মাকে সহযোগিতা করতে পারবে না। এমনকি তাদের কেউ কেউ তার মাকে কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় রেখে তার বান্ধবীদের সাথে টেলিফোনে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে। ৯. পিতামাতা যখন কথা বলেন, তখন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া: আর এর মানে হল তাদের কথায় কর্ণপাত না করা, অথবা তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা, অথবা তাদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা, অথবা তাদের সাথে তর্ক করা এবং তাদের সাথে কঠোরভাবে ঝগড়া-বিবাদ করা। পিতামাতার ব্যাপারে এ ধরনের কাজে কতই না অপমানজনক এবং তাতে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কমতি বা ঘাটতির বিষয়টি তাদেরকে কত ভাবেই না জানিয়ে দেওয়া হয়! ১০. পিতামাতার মতামত বিবেচনায় কমতি করা: কোনো কোনো মানুষ তার কোনো বিষয় বা কাজেই তার পিতামাতার পরামর্শ ও অনুমতি গ্রহণ করে না, চাই তার বিয়ের ক্ষেত্রে হউক, অথবা তালাক প্রদান করার ক্ষেত্রে হউক, চাই ঘর থেকে তার বের হওয়ার ক্ষেত্রে হউক, অথবা ঘরের বাইরে অবস্থান করার ক্ষেত্রে হউক, চাই তার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কোনো সুনির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার ব্যাপারে হউক, অথবা এ ধরনের অন্য কোনো বিষয়ে হউক। ১১. পিতামাতার নিকট প্রবেশের সময় অনুমতি না নেওয়া: এটা পিতামাতার সাথে শিষ্টাচার পরিপন্থী আচরণ; কেননা, কখনও কখনও তারা উভয়ে অথবা তাদের কোনো একজন এমন অবস্থায় থাকেন, তারা পছন্দ করেন না যে, এই অবস্থাটি কেউ প্রত্যক্ষ করুক। ১২. পিতামাতার সামনে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরা: চাই সেই সমস্যা ভাইদের সাথে সংশ্লিষ্ট হউক, অথবা স্ত্রী’র সাথে সংশ্লিষ্ট হউক, অথবা সন্তানদের সাথে সংশ্লিষ্ট হউক, অথবা অন্য কারও সাথে সংশ্লিষ্ট হউক। কেননা, কোনো কোন মানুষ পরিবারের কেউ কোনো ভুল করলে তাকে তার পিতামাতার সামনেই তিরস্কার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে; অথচ, কোনো সন্দেহ নেই যে, এই কাজটি এমন কার্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত, যা তাদেরকে অস্থির করে তুলে এবং তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। ১৩. জনগণের নিকট পিতামাতার নিন্দা ও দুর্নাম করা এবং তাদের দোষ- ত্রুটি আলোচনা করা: কোনো কোনো মানুষ যখন কোনো কাজে ব্যর্থ হয়— যেমন সে তার পড়ালেখায় ব্যর্থ হল, তখন সে তার পিতামাতার উপর সকল দোষ ও দায়ভার চাপিয়ে দেয় এবং সে তার নিজের ব্যর্থতা ও অপারগতাকে বৈধতা দিতে থাকে এভাবে যে, তার পিতামাতা তাকে অযত্ন করেছে, তাকে যথাযথভাবে লালন-পালন করে নি, তারা তার জীবনটাকে নষ্ট করে দিয়েছে, তার ভবিষ্যৎটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি ধরনের রংবেরংয়ের নানা অপবাদ ও দোষারোপ করতে থাকে। ১৪. পিতামাতাকে গালি ও অভিশাপ দেওয়া: তাদেরকে সরাসরি গালি দেওয়া, অথবা গালি দেওয়ার উপলক্ষ তৈরি করা; যেমন— ছেলে কোনো ব্যক্তির পিতা বা মাতাকে গালি দিল, তারপর ঐ ব্যক্তিও পাল্টা তার পিতামাতাকে গালি দিল। কারণ, আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে হাদিস বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « ﻣِﻦَ ﺍﻟﻜَﺒَﺎﺋِﺮ ﺷَﺘْﻢُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞ ﻭَﺍﻟِﺪَﻳﻪِ ! ، ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭَﻫَﻞْ ﻳَﺸْﺘُﻢُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻭَﺍﻟِﺪَﻳْﻪِ ؟ ! ﻗَﺎﻝَ : ﻧَﻌَﻢْ ، ﻳَﺴُﺐُّ ﺃَﺑَﺎ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ، ﻓَﻴَﺴُﺐُّ ﺃﺑَﺎﻩ ، ﻭَﻳَﺴُﺐُّ ﺃُﻣَّﻪُ ، ﻓَﻴَﺴُﺐُّ ﺃُﻣَّﻪُ » . (ﻣُﺘَّﻔَﻖٌ ﻋَﻠَﻴﻪِ ) . “কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতামাতাকে গালি দেওয়া কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত! সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোনো মানুষ কি তার পিতামাতাকে গালি দিতে পারে?! জবাবে তিনি বললেন: হ্যাঁ, সে অন্য কোনো মানুষের পিতাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্য ব্যক্তির মাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার মাকে গালি দেয়।”[14] ১৫. ঘরের মধ্যে খারাপ কিছু নিয়ে আসা: যেমন খেল-তামাশার সরঞ্জামাদি ও ঘরের মধ্যে গোলযোগ সৃষ্টির যন্ত্রপাতির অনুপ্রবেশ ঘটানো, যা স্বয়ং ব্যক্তির চারিত্রিক বিকৃতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়; আবার কখনও কখনও এগুলো তার ভাই-বোন ও পরিবারের সকলের মধ্যে গোলযোগ সৃষ্টির দিকে ধাবিত করে; ফলে সন্তানের অন্যায়-অপকর্ম ও পরিবারের অধঃপতনের কারণে পিতামাতা দুঃখ-কষ্ট অনুভব করেন। ১৬. পিতামাতার সামনে বদ অভ্যাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো: যেমন পিতামাতার সামনে ধূমপান করা, অথবা তাদের উপস্থিতিতে খেল- তামাশার উপকরণ উপভোগ করা, অথবা ফরয সালাত বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা এবং তার জন্য তাকে জাগিয়ে দিলে জাগানোর বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করা; আর অনুরপভাবে খারাপ সঙ্গী- সাথীদেরকে বাসায় নিয়ে আসা। আর এই সবগুলোই হল পিতা-মাতার সাথে বেহায়াপনার চূড়ান্ত দলীলস্বরূপ। ১৭. পিতামাতার সুনাম ও সুখ্যাতি নষ্ট করা: আর তা হয় এমন মন্দ ও নিকৃষ্ট কাজ করার মাধ্যমে, যা সম্মানহানি করে এবং ব্যক্তিত্ব নষ্ট করে; আবার কখনও কখনও তা কারাগারের দিকে নিয়ে যায় এবং লজ্জজনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং কোনো সন্দেহ নেই যে, এসব কর্মকাণ্ড পিতামাতার অবাধ্যতার অন্তর্ভুক্ত; কেননা, তা পিতামাতার জন্য দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট, অসম্মান ও অপমান বয়ে আনে। ১৮. পিতামাতাকে বিপদে বা জটিলতায় ফেলে দেওয়া: যেমন— সন্তান কারও নিকট থেকে অর্থ- সম্পদ ঋণ নেওয়ার পর তা পরিশোধ করে না, অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেয়াদবী করে , তারপর সন্তানের পলাতক অবস্থায় অথবা তার বেয়াদবীর কারণে কর্তৃপক্ষ পিতাকে হাজির হওয়ার জন্য বাধ্য করে। আবার কখনও কখনও পিতাকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়, যে পর্যন্ত না সন্তান তার ঋণ পরিশোধ করে, অথবা সে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ না করে। ১৯. ঘরের বাইরে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করা: আর এটা পিতামাতাকে তার সন্তানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ও অস্থির করে তোলে; তাছাড়া অনেক সময় তাদের সেবা-যত্নের প্রয়োজন হয়; সুতরাং সন্তান যখন ঘরের বাইরে থাকে, তখন তারা তাদের সেবা-যত্ন করার মত কাউকে পায় না। ২০. বেশি বেশি দাবি-দাওয়া ও বায়না ধরে পিতামাতার উপর চাপ সৃষ্টি করা: কোনো কোন মানুষ বেশি বেশি দাবি- দাওয়া ও বায়না ধরে তার পিতামাতার উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, অথচ অনেক সময় পিতামাতা’র উপার্জনের ক্ষমতা কম হয়ে থাকে, এই সত্ত্বেও দেখা যায় সন্তান তাদেরকে গাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য বাধ্য করে, তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয় এবং তাকে নতুন বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার জন্য বলে, অথবা সে তাদের নিকট বেশি বেশি অর্থ-সম্পদ দাবি করে যাতে বন্ধু-বান্ধব ও সমবয়সীদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে। ২১. পিতামাতার উপর স্ত্রীকে প্রাধান্য দেওয়া: কোনো কোনো মানুষ তার পিতামাতার আনুগত্য করার চেয়ে তার স্ত্রী’র আনুগত্য করাটাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে এবং স্ত্রীকে পিতামাতার উপর প্রাধান্য দেয়; এমনকি স্ত্রী যদি তার নিকট তার পিতামাতাকে তাড়িয়ে দিতে আবদার করে, তাহলে সে তাদেরকে তাড়িয়ে দিবে, যদিও তাদের কোনো আবাসিক ঠিকানা নেই। আর আপনি কোনো কোনো ছেলে- সন্তানকে দেখবেন যে, সে তার পিতামাতার সামনে স্ত্রী’র জন্য মাত্রাতিরিক্ত ভালবাসা প্রকাশ করে এবং একই সময় তাকে দেখবেন যে, সে তার পিতামাতার প্রতি রূঢ় আচরণ করে, অথচ সে তাদের অধিকারের প্রতি কোনো লক্ষ্য রাখে না। অচিরেই এই প্রসঙ্গে সামনের পৃষ্ঠাগুলোতে বিস্তারিত বিবরণ আসবে। ২২. পিতামাতার প্রয়োজনের সময় অথবা বৃদ্ধ বয়সে তাদেরকে পরিত্যাগ করা: কেননা, পিতামাতা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় এবং তাদের টাকা-পয়সা লাগে এমন কোনো কাজ দেখা দেয়, তখন কোনো কোনো সন্তান তাদের থেকে সরে যায় এবং নিজেকে নিয়ে বিশেষভাবে ব্যস্ত হয়ে যায়। ২৩. পিতামাতার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত থাকা এবং তাদের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করা: আর এটা হল পিতামাতার অবাধ্যতার জঘন্য রূপ; কারণ, কোনো কোনো সন্তানকে দেখা যায়, সে যখন সামাজিকভাবে উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন স্থানে উন্নিত হয় অথবা বড় রকমের চাকুরি পেয়ে যায়, তখন সে তার পিতামাতাকে স্বীকার করতে চায় না এবং তাদের দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত থাকতে চায়; আর সে তার ঘরের মধ্যে পুরাতন পোষাক-পরিচ্ছদে তাদের অবস্থান করাটাকে রীতিমত অপমানবোধ করে। আবার কখনও কখনও তাদের ব্যাপারে তার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয়, তখন সে বলে দেয়: ওরা আমাদের চাকর-বাকর। আবার কোনো কোনো সন্তান বিয়ে- সাদী ও সাধারণ অনুষ্ঠানসমূহে লজ্জায় তার পিতার নাম উচ্চারণ করার বিষয়টি এড়িয়ে চলে! আর এই ধরনের কাজ নিঃসন্দেহে নিকৃষ্ট মন-মানসিকতা, দুর্বল বুদ্ধি, মর্যাদাহীনতা ও চরম অধৈর্যের প্রমাণ বহন করে। তবে পিতামাতাকে ভালোবাসে প্রেমিক ভদ্র মানুষ তার উৎসস্থল, প্রজন্ম ও মূলকে নিয়ে গৌরব বর্ণনা করে; আর ভদ্রজনেরা সুন্দরকে ভুলে যায় না। কবির ভাষায়: ” ﺇﻥ ﺍﻟﻜﺮﺍﻡ ﺇﺫﺍ ﻣﺎ ﺃﻳﺴﺮﻭﺍ ﺫﻛﺮﻭﺍ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺄﻟﻔﻬﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻨﺰﻝ ﺍﻟﺨﺸﻦ .” (ভদ্রলোকেরা যখন স্বচ্ছল হয়ে যায়, তখন আলোচনা করে তারা সেই জনদের, জীর্ণ কুঠিরে তাদেরকে আদর-সোহাগ করেছেন যারা)। ২৪. পিতামাতাকে প্রহার করা: বড় নিষ্ঠুর ও পাষাণ্ড হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া এই কাজ করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়; এমন কাজ তারাই করতে পারে, যাদের হৃদয়ে মায়া-মমতা ও লজ্জা-শরমের ভালাই নেই এবং যাদের জীবনে ন্যূনতম ব্যক্তিত্ব, গৌরব ও আত্মমর্যাদাবোধ নেই। ২৫. বার্ধক্য ও দেখাশুনা করার প্রয়োজনের সময় পিতামাতাকে ছেড়ে যাওয়া: আর এই কাজটি সীমাহীন নোংরামি এবং চরম ঘৃণিত ও মন্দ কাজ; যার ভয়াবহতা বা আতঙ্কে শরীর শিউরে উঠে এবং যার কথা শুনলে মাথার চুল দাঁড়িয়ে যায়; আর যে ব্যক্তি এই কাজ করবে, তার জীবনে কখনও ভাল কিছু হবে না। ২৬. পিতামাতা যখন কোনো অন্যায় কাজ করে ফেলে, তখন তারেকে পরিত্যাগ করা এবং তাদের সাথে সদ্ব্যবহার না করা ও তাদের তাদের কল্যাণ কামনা না করা: আর এটা এক ধরনের ত্রুটি ও মূর্খতা; কারণ, পিতামাতা কাফির হলেও যেখানে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা ওয়াজিব (আবশ্যক), সেখানে তারা মুসলিম হওয়ার পরেও তাদের সাথে কিভাবে এরূপ ব্যবহার করা বৈধ হবে, না হয় তাদের কিছু ত্রুটি- বিচ্যূতি হয়েই গেল? ! ২৭. পিতামাতার ব্যাপারে কার্পণ্য করা: সুতরাং কোনো কোন মানুষ এমন প্রকৃতির, যে তার পিতামাতার জন্য ব্যয় করার ক্ষেত্রে কার্পণ্য ও কমতি করে। আবার কখনও কখনও পিতামাতার সম্পদের খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ে, এতদসত্ত্বেও তাদের প্রতি তার কোনো দায়িত্ব আছে বলে মনে করে না এবং তাদের প্রতি কোনো মনোযোগ দেয় না। ২৮. পিতামাতার প্রতি অবদানের খোটা দেওয়া ও বার বার গণনা করা: সুতরাং কোনো কোন মানুষ এমন, যে তার পিতামাতার সাথে ভাল ব্যবহার করে, কিন্তু সে খোটা ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে এটাকে নষ্ট করে ফেলে; আর এই ভালটাকে আরও নষ্ট করে ফেলে তাদের প্রতি তার অবদানের বিষয়টি বার বার গণনা করার দ্বারা এবং কারণে অকারণে এই সদ্ব্যবহারের কথা আলোচনা করার মাধ্যমে। ২৯. পিতামাতার সম্পদ চুরি করা: আর এই কাজটি দু’টি হারাম কাজকে একত্রিত করে: চুরি ও অবাধ্যতা; সুতরাং মানুষের মধ্য থেকে এমন মানুষও দেখতে পাবেন, যার অর্থের প্রয়োজন হয় এবং এ প্রয়োজনিয়তা তাকে তার পিতামাতার সম্পদ চুরির দিকে নিয়ে যায় — হয় তাদের বার্ধক্যের কারণে, অথবা তাদের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে চুরির কাজটি সম্পন্ন হয়। এ ধরনের চুরির অন্যতম একটি নমুনা হল— কেউ তার পিতামাতার সাথে প্রতারণার উদ্দেশ্যে তার নিকট আবেদন করল যে, তিনি যাতে তাকে এই এই পরিমাণ সম্পদ অথবা জমি অথবা এ জাতীয় কিছু দেওয়ার ব্যাপারে স্বাক্ষর করে দেন। আবার কখনও কখনও সে তাদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে এবং তার পাকাপোক্ত নিয়ত হল সে তা পরিশোধ করবে না। ৩০. পিতামাতার সামনে বিলাপ করা ও দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করা: আর এই কাজটি হল নিকৃষ্ট মানের অবাধ্যতার নমুনা; আর এটা এ জন্য যে, পিতামাতা — বিশেষ করে মা সন্তানের বিপদ-মুসিবতের কারণে অস্থির হয়ে পড়েন; তারা তার ব্যথায় ব্যথিত হন; এমনকি কখনও কখনও তারা তার চেয়ে বেশি ব্যথা অনুভব করেন। ৩১. বিনা প্রয়োজনে পিতামাতার অনুমতি ছাড়া দূরে কোথাও প্রবাসজীবনে চলে যাওয়া: কোনো কোনো সন্তান তার পিতামাতা থেকে দূরে চলে যাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উপলব্ধি করতে পারে না; ফলে আপনি তাকে দেখতে পাবেন যে, সে তার পিতামাতার অনুমতি ছাড়াই তাদের থেকে দূরে প্রবাসজীবনে চলে যাওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবীর করে, অথচ তার প্রবাসজীবনের কোনো প্রয়োজন নেই; আবার কখনও কখনও তার পিতামাতা যে শহরে বসবাস করেন কোনো কারণ ছাড়াই সে তা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়; আবার কখনও কখনও সে পড়ালেখার উদ্দেশ্যে নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে চলে যায়, অথচ এ ধরনের পড়ালেখা ঐ শহরেই সম্ভব, যেখানে তার পিতামাতা বসবাস করে; এগুলো ছাড়াও আরও অনেক কারণে সে প্রবাসে চলে যায়, যেসব কারণ তার এই প্রবাসজীবনকে বৈধ বলে অনুমোদন করে না। আর সে জানে না যে, তার পিতামাতাকে ছেড়ে তার বিদেশে চলে যাওয়াটা তাদের পরিতাপ ও মনের অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়; আবার সে এটাও জানে না যে, কখনও কখনও তার পিতামাতা উভয়ে অথবা তাদের কোনো একজন মারা যেতে পারে এমন অবস্থায় যে, সে তাদের থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে অবস্থান করছে; সুতরাং এ কারণে তাদের প্রতি আনুগত্য, সদ্ব্যবহার ও দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ব্যাঘাত ঘটবে। তবে ছেলের যখন প্রবাসজীবনে যাওয়ার প্রয়োজন হবে এবং তার পিতামাতা থেকে সে ব্যাপারে অনুমতি নেয়, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। ৩২. পিতামাতার মৃত্যু কামনা করা: কোনো কোনো সন্তান তার পিতামাতার মৃত্যু কামনা করে, যাতে সে তাদের সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারে, যদি তারা সম্পদশালী হন, অথবা যাতে তাদের থেকে মুক্তি পেতে পারে, যদি তারা অসুস্থ হন বা দরিদ্র হন অথবা সে যাতে মুক্তি পেতে পারে তাদের সেবা-যত্ন করা থেকে এবং তাদের মুখোমুখি অবস্থান করা থেকে— যাতে সে তার ভ্রষ্টতা ও মূর্খতার মধ্যে মনের সুখে দিনকাল অতিবাহিত করতে পারে। ৩৩. পিতামাতাকে হত্যা করা এবং তাদের থেকে মুক্তি পাওয়া: কখনও কখনও এমন হতভাগ্য ছেলে-সন্তানও পাওয়া যায়, যে তার পিতামাতার কোনো একজনকে হত্যার জন্য অগ্রসর হয়; হয় প্রচণ্ড মূর্খতার কারণে, অথবা ক্রোধের উত্তেজনার কারণে, অথবা মাতাল অবস্থায় থাকার কারণে, অথবা সম্পদের উত্তরাধিকারী হওয়ার আশায়, অথবা এগুলো ভিন্ন অন্য কোনো কারণে। হে দুর্ভাগা! হে কালো মুখওয়ালা! হে মন্দ পরিনাম ও পরিণতির অধিকারী! যদি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রহমত দ্বারা তাকে সংশোধন না করেন, (তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ)। এ হল পিতামাতার অবাধ্যতার কিছু বাহ্যিক চিত্র ও রূপ-প্রকৃতি; এটা ঘৃণ্য কাজ ও দূষিত কর্মপন্থা, যা জ্ঞানীদের জন্য মানানসই নয় এবং যা তাকওয়া, সততা ও সঠিক পথের অধিকারী ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে সংঘটিত হতে পারে না। সুতরাং পিতামাতার অবাধ্য সন্তান থেকে কল্যাণ বহু দূরে, শাস্তি তার অতি নিকটে এবং অকল্যাণ তার দিকে দ্রুত ধাবমান। আর এই বিষয়টি চাক্ষুষ অনুভবযোগ্য, অনেক মানুষ তা জানে এবং তারা তাদের নিজ চোখে তা প্রত্যক্ষ করে; আর তারা একের পর এক ঐসব মানুষের কাহিনী শুনে, যারা তাদের পিতামাতার সাথে অবাধ্য আচরণের কারণে লাঞ্ছিত, অপদস্থ ও সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। * * * অবাধ্যতার নমুনা কাহিনী ১. আসমা‘য়ী বলেন: “আমাকে আরবের কেউ কেউ সংবাদ দিয়েছেন যে, আবদুল মালেক ইবন মারওয়ান-এর যামানায় এক ব্যক্তি ছিল এবং তার ছিল এক বৃদ্ধ পিতা; আর যুবকটি ছিল তার পিতার অবাধ্য এবং ঐ যুবকটিকে বলা হত ‘মানাযিল’। অতঃপর এক পর্যায়ে বৃদ্ধ পিতা বলেন: ﺟَﺰَﺕْ ﺭﺣﻢٌ ﺑﻴﻨﻲ ﻭﺑﻴﻦَ ﻣﻨﺎﺯﻝٍ * ﺟﺰﺍﺀً ﻛﻤﺎ ﻳﺴﺘﻨﺠﺰُ ﺍﻟﺪَّﻳﻦَ ﻃﺎﻟﺒُﻪ (আমার ও মানাযিলের মাঝে সম্পর্ক এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, তার পরিণাম হচ্ছে যেমনিভাবে ঋণের দাবিদার ঋণ পূর্ণ করতে চায়)। ﺗَﺮَﺑَّﺖ ﺣﺘﻰ ﺻﺎﺭ ﺟﻌﺪًﺍ ﺷﻤﺮﺩﻟًﺎ * ﺇﺫﺍ ﻗﺎﻡ ﺳﺎﻭﻯ ﻏﺎﺭﺏَ ﺍﻟﻔﺤﻞِ ﻏﺎﺭﺑُﻪ (সে বেড়ে উঠেছে এমনকি সে লম্বা শক্তিশালী যুবকে পরিণত হয়েছে, যখন সে দাঁড়ায়, তখন তার কাঁধ শক্তিশালী পুরুষের কাঁধ সমান হয়ে যায়)। ﺗﻈﻠَّﻤﻨﻲ ﻣﺎﻟﻲ ﻛﺬﺍ ﻭﻟﻮﻯ ﻳﺪﻱ * ﻟﻮﻯ ﻳﺪَﻩ ﺍﻟﻠﻪُ ﺍﻟﺬﻱ ﻻ ﻳﻐﺎﻟﺒُﻪ (সে আমাকে আমার এ রকম সম্পদ ছাড়া করেছে এবং আমার হাত বাঁকা করে দিয়েছে, ঐ আল্লাহ তার হাত বাঁকা করে দিবেন, যাঁকে সে পরাজিত করতে পারবে না)। ﻭﺇﻧﻲ ﻟﺪﺍﻉٍ ﺩﻋﻮﺓً ﻟﻮ ﺩﻋﻮﺗُﻬﺎ * ﻋﻠﻰ ﺟﺒﻞ ﺍﻟﺮﻳﺎﻥ ﻻﻧْﻬَﺪَّ ﺟﺎﻧِﺒُﻪ (আর আমি (তার জন্য) এমন বদদো‘আ করব, যদি সেই বদদো‘আ আমি করি রাইয়ান পর্বতের জন্য, তাহলে তার পার্শ্ব ধ্বসে পড়ে যেত)। এ সংবাদ তাদের বাদশা’র নিকটে পৌঁছে; তারপর তিনি যুবককে ধরে নিয়ে আসার জন্য দূত প্রেরণ করলেন; অতঃপর তাকে তার বৃদ্ধ পিতা বলল: তুমি ঘরের পিছনের দিক দিয়ে বের হয়ে চলে যাও; ফলে সে বাদশা’র দূতের আগে আগে চলে গেল এবং বাদশার পাকড়াও থেকে বেঁচে গেল। কিন্তু এ মানাযিল যুবকটি তার শেষ জীবনে তার এক অবাধ্য ছেলের দ্বারা কষ্টকর পরিস্থিতির শিকার হল; ছেলেটির নাম ‘খালিজ’। অতঃপর সে (মানাযিল) বলল: ﺗﻈﻠﻤﻨﻲ ﻣﺎﻟﻲ ﺧﻠﻴﺞٌ ﻭﻋﻘﻨﻲ * ﻋﻠﻰ ﺣﻴﻦ ﻛﺎﻧﺖ ﻛﺎﻟﺤَﻨﻲِّ ﻋﻈﺎﻣﻲ (খালিজ আমাকে আমার সম্পদ ছাড়া করেছে এবং সে আমার অবাধ্য হয়েছে এমন এক সময়, যখন আমার হাড্ডি ধনুকের মত বাঁকা হয়ে গেছে)। ﺗﺨﻴَّﺮﺗُﻪ ﻭﺍﺯﺩﺩﺗﻪ ﻟﻴﺰﻳﺪﻧﻲ * ﻭﻣﺎ ﺑﻌﺾُ ﻣﺎ ﻳﺰﺩﺍﺩُ ﻏﻴﺮُ ﻋﺮﺍﻡِ (আমি তাকে পছন্দ করেছি এবং তাকে বেশি বেশি দিয়েছি, যাতে সে আমার প্রতি বেশি যত্নবান হয়, অথচ কিছু অসুবিধা ও দুঃখ-কষ্ট ছাড়া আর তেমন কিছু বাড়েনি)। ﻟﻌﻤﺮﻱ ﻟﻘﺪ ﺭﺑَّﻴﺘﻪ ﻓﺮﺣًﺎ ﺑﻪ * ﻓﻼ ﻳﻔﺮﺣﻦْ ﺑﻌﺪﻱ ﺍﻣﺮﺅٌ ﺑﻐﻼﻡِ (আমার জীবনের কসম! আমি তার প্রতি খুশি হয়েই তাকে লালন-পালন করেছি, সুতরাং আমার পরে কোনো ব্যক্তিই যেন ছেলেকে নিয়ে এত খুশি না হয়)। অতঃপর শাসনকর্তা তাকে (ছেলেটিকে) মারতে চাইল; তখন ছেলেটি শাসনকর্তাকে বলল: আমাকে মারার ব্যাপারে এত তাড়াহুড়ো করবেন না; এই হলেন (আমার পিতা) মানাযিল ইবন ফার‘আন, যার ব্যাপারে তার পিতা বলেছিলেন: ﺟَﺰَﺕْ ﺭﺣﻢٌ ﺑﻴﻨﻲ ﻭﺑﻴﻦَ ﻣﻨﺎﺯﻝٍ * ﺟﺰﺍﺀً ﻛﻤﺎ ﻳﺴﺘﻨﺠﺰُ ﺍﻟﺪَّﻳﻦَ ﻃﺎﻟﺒُﻪ (আমার ও মানাযিলের মাঝে সম্পর্ক এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, তার পরিণাম হচ্ছে যেমনিভাবে ঋণের দাবিদার ঋণ পূর্ণ করতে চায়)। অতঃপর শাসনকর্তা বলল: হে এই তুমি! তুমি তোমার পিতার সাথে অবাধ্য আচরণ করেছ; আর তাই আজ তোমার সাথেও অবাধ্য আচরণ করা হয়েছে।” [15] ২. আরেক ব্যক্তি তার চরম দুঃখ ও কষ্টের অভিযোগ করে এবং তার অবাধ্য সন্তানকে তিরস্কার করে বলেন: ﻏَﺬَﻭْﺗُﻚ ﻣَﻮْﻟُﻮﺩًﺍ ﻭَﻣُﻨْﺘُﻚَ ﻳَﺎﻓِﻌًﺎ * ﺗَﻌُﻞُّ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﺟْﻨِﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚ ﻭَﺗَﻨْﻬَﻞُ (আমি তোমাকে শিশু অবস্থায় খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি এবং প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় তোমার ব্যয়ভার বহন করেছি, আমি তোমার জন্য যা উপার্জন করেছি, তা আমাকে দুর্বল ও ক্লান্ত করে দিয়েছে)। ﺇﺫَﺍ ﻟَﻴْﻠَﺔٌ ﻧﺎﻟﺘْﻚ ﺑﺎﻟﺸﻜﻮِ ﻟَﻢْ ﺃَﺑَﺖْ * ﻟِﺸﻜﻮﺍﻙ ﺇﻟَّﺎ ﺳَﺎﻫِﺮًﺍ ﺃَﺗَﻤَﻠْﻤَﻞُ (যখন কোনো রাত্রে তুমি অসুস্থ হয়ে যেতে, তখন আমি রাত্রি যাপন করেছি তোমার অসুস্থতার কারণে বিনিদ্র অবস্থায় বিছনায় গড়াগড়ি দিয়ে)। ﻛَﺄَﻧِّﻲ ﺃَﻧَﺎ ﺍﻟْﻤَﻄْﺮُﻭﻕُ ﺩُﻭﻧَﻚ ﺑِﺎَﻟَّﺬِﻱ * ﻃَﺮَﻗْﺖ ﺑِﻪِ ﺩُﻭﻧِﻲ ﻓَﻌَﻴْﻨِﻲ ﺗُﻬْﻤِﻞُ (সে কাঁটা যেন তোমাকে নয় আমাকেই আঘাত করেছে, ফলে আমার চোখ অশ্রু বর্ষণ করেছে)। ﺗَﺨَﺎﻑُ ﺍﻟﺮَّﺩَﻯ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚ ﻭَﺇِﻧَّﻬَﺎ * ﻟَﺘَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻥَّ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕَ ﻭﻗﺖٌ ﻣُﺆﺟﻞُ (আমার মন তোমার ব্যাপারে ধ্বংসের আশঙ্কা করেছিল, যদিও সে জানত যে, মৃত্যু নির্দিষ্ট সময়েই হবে)। ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺑَﻠَﻐْﺖ ﺍﻟﺴِّﻦَّ ﻭَﺍﻟْﻐَﺎﻳَﺔَ ﺍﻟَّﺘِﻲ * ﺇﻟَﻴْﻬﺎ ﻣﺪﻯ ﻣﺎ ﻛُﻨْﺖ ﻓِﻴﻚ ﺃُﺅَﻣِّﻞُ (অতঃপর তুমি যখন এমন বয়স ও গন্তব্যে পৌঁছে গেছ, যে পর্যন্ত যেখানে পৌঁছার আশা আমি তোমার জন্য করেছি) ﺟَﻌَﻠْﺖ ﺟَﺰَﺍﺋِﻲ ﻏِﻠْﻈَﺔً ﻭَﻓَﻈَﺎﻇَﺔً* ﻛَﺄَﻧَّﻚ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟْﻤُﻨْﻌِﻢُ ﺍﻟْﻤُﺘَﻔَﻀِّﻞُ (তুমি আমার পুরস্কার নির্ধারণ করেছ কঠোরতা ও অভদ্রতা, মনে হয় যেন তুমি অনুগ্রহশীল ও দানশীল)। ﻓَﻠَﻴْﺘُﻚ ﺇﻥ ﻟَﻢْ ﺗَﺮْﻉَ ﺣَﻖَّ ﺃُﺑُﻮَّﺗِﻲ * ﻓَﻌَﻠْﺖ ﻛَﻤَﺎ ﺍﻟْﺠَﺎﺭُ ﺍﻟْﻤُﺠَﺎﻭِﺭُ ﻳَﻔْﻌَﻞُ (হায়রে তুমি! যদি তুমি পিতামাতার অধিকার সংরক্ষণ নাই করতে পার, তাহলে তুমি এমন আচরণ করতে, যেমন আচরণ প্রতিবেশী তার প্রতিবেশী’র সাথে করে)। ﻓَﺄَﻭْﻟَﻴْﺘَﻨِﻲ ﺣَﻖَّ ﺍﻟْﺠِﻮَﺍﺭِ ﻭَﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ * ﻋَﻠَﻲَّ ﺑِﻤَﺎﻟﻲ ﺩُﻭﻥَ ﻣَﺎﻟِﻚ ﺗَﺒْﺨَﻞُ (সুতরাং তুমি আমাকে প্রতিবেশিত্বের অধিকার প্রদান করেছে, অথচ তুমি তোমার সম্পদ ছাড়া শুধু আমার সম্পদ দ্বারাই আমার উপর কৃপণতা করছ)। ﺗﺮﺍﻩ ﻣُﻌِﺪًﺍ ﻟﻠﺨﻼﻑ ﻛﺄﻧﻪ* ﺑﺮﺩٍّ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺼﻮﺍﺏ ﻣﻮﻛَّﻞُ . (তুমি তাকে দেখতে পাবে— সে যেন বিরোধিতার জন্যই তৈরী হয়েছে; মনে হয় যেন তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সত্যপন্থীদের প্রত্যাখ্যান করার জন্য)। [16] ৩. ডক্টর মুহাম্মদ আস-সাব্বাগ বলেন: “আমি শুনেছি যে, অধঃপতিত পথভ্রষ্ট এক ছেলে তার পিতাকে বৃদ্ধাশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গেছে, যাতে সে তাকে কষ্ট দিতে না পারে অথবা তার স্ত্রীকে বিরক্ত করতে না পারে।” [17] ৪. অধ্যাপক আবদুর রউফ আল-হানাভী র. বলেন: “আমার এক নিকটাত্মীয় ছিল, তার জন্য তার পিতা অনেক নগদ স্বর্ণ, উপকারী মালামাল ও বহু জমি রেখে গিয়েছিলেন; আর সে ছিল ব্যবসায়ী দলের অন্যতম একজন; কোনো একদিন তার উপর তার মাতা ক্ষুব্ধ হলেন এবং তার জন্য তিনি কঠিনভাবে একবার বদদো‘আ করলেন; আর যখন তার বদদো‘আর কারণে তার ক্ষতি অবধারিত হয়ে গেল, তখন সে ফকীর অবস্থায় মারা গেল; অথচ সে কখনও অশ্লীল ও হারাম পথে চলেনি। আর আমার পিতা (আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন) তাকে দান-সাদকা করতেন এবং আমাদের বাড়ি থেকে আমাকে খাবার নিয়ে তার নিকট এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিকট পাঠাতেন।”[18] [1] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬ [2] সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫১ [3] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩ – ২৪ [4] সূরা লোকমান, আয়াত: ১৪ [5] বুখারী, হাদিস নং- ৫০৪ ও ৬৫২৫; মুসলিম, হাদিস নং- ২৬৪ [6] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩ [7] বুখারী, হাদিস নং- ৬২৯৮ [8] লিসানুল আরব: ১০/২৫৬ [9] লিসানুল আরব: ১০/২৫৭ [10] দেখুন: ড. মুস্তফা আস-সাবা‘য়ী, ‘আখলাকুনা আল-ইজতিমা‘য়ীয়্যাহ’ ( ﺃﺧﻼﻗﻨﺎ ﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻋﻴﺔ), পৃ. ১৬৬; আবদুর রউফ আল-হানাবী, ‘বির্রুল ওয়ালিদাইন’ ( ﺑﺮ ﺍﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ), পৃ. ১৪৩; হাসান আইয়ূব, ‘আস-সুলুকুল ইজতিমা‘য়ী’ ( ﺍﻟﺴﻠﻮﻙ ﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻋﻲ ), পৃ. ২৫৮ – ২৫৯; উম্মু আবদিল কারীম, ‘কুর্রাতুল ‘আইনাইন ফী ফাদায়েলি বির্রিল ওয়ালিদাইন’ ( ﻗﺮﺓ ﺍﻟﻌﻴﻨﻴﻦ ﻓﻲ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺑﺮ ﺍﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ); সা‘আদ বিনতে মুহাম্মাদ ফারাজ, ‘বিল ওয়ালিদাইনে ইহসানা’ ( ﺑﺎﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ﺇﺣﺴﺎﻧﺎ ), পৃ. ৪৪ – ৪৮; নিযাম সাকাজিহা, ‘বির্রুল ওয়ালিদাইনে ফিল কুরআনিল কারীমে ওয়াস সুন্নাহ আস-সহীহা’ ( ﺑﺮ ﺍﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ), পৃ. ৩৫ – ৪১ ও ৬৩ – ৬৫; ড. আবদুল্লাহ আত-ত্বাইয়ার, ‘ফয়দুর রাহীম আর-রাহমান’ ( ﻓﻴﺾ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ), পৃ. ৯৬; আহমাদ ‘ঈসা ‘আশুরা, ‘বির্রুল ওয়ালিদাইনে ওয়া হুকুকুল আবায়ে ওয়াল আবনায়ে ওয়াল আরহাম’ ( ﺑﺮ ﺍﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭ ﺣﻘﻮﻕ ﺍﻵﺑﺎﺀ ﻭ ﺍﻷﺑﻨﺎﺀ ﻭ ﺍﻷﺭﺣﺎﻡ ), পৃ. ৩৩ – ৪৫; ইবরাহীম আল-হাযেমী, ‘আল-ই‘লাম বেবির্রিল ওয়ালিদাইনে ওয়া সিলাতিল আরহাম’ ( ﺍﻹﻋﻼﻡ ﺑﺒﺮ ﺍﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭ ﺻﻠﺔ ﺍﻷﺭﺣﺎﻡ ), পৃ. ৩৫ – ৪১; ড. মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ আস-সালেহ, ‘আত-তাকাফুলুল ইজতিমা‘য়ী ফিশ শারী‘য়াতিল ইসলামিয়্যা’ ( ﺍﻟﺘﻜﺎﻓﻞ ﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻋﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﺍﻹﺳﻼﻣﻴﺔ ), পৃ. ৯৮ – ১০৫ [11] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩ [12] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩ [13] যাহাবী, ‘সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা’ ( ﺳﻴﺮ ﺃﻋﻼﻡ ﺍﻟﻨﺒﻼﺀ ): ৪/৪৩৩ [14] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬২৮; মুসলিম, হাদিস নং- ২৭৩; হাদিসের শব্দগুলো ইমাম মুসলিম রহ. এর। [15] ইবনু কুতাইবা, ‘উয়ূনুল আখবার’ ( ﻋﻴﻮﻥ ﺍﻷﺧﺒﺎﺭ ): ৩/৮৬ – ৮৭; ‘কিতাবুল ইখওয়ান’ ( ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻹﺧﻮﺍﻥ); আরও দেখুন: আল-হানাভী, ‘বির্রুল ওয়ালিদাইন’ ( ﺑﺮ ﺍﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ), পৃ. ১৩৮ – ১৩৯ [16] এই পংক্তিগুলো ইয়াহইয়া ইবন সা‘ঈদ, ইবনু আবদুল আ‘লা ও আবূল ‘আব্বাস আল- আ‘মা-এর বলে উল্লেখ করা হয়; তাছাড়া উমাইয়া ইবন আবি সালত-এর সাথেও এই পংক্তিগুলো সম্বন্ধযুক্ত করা হয়। দেখুন: ইবনু কুতাইবা, ‘উয়ূনুল আখবার’ ( ﻋﻴﻮﻥ ﺍﻷﺧﺒﺎﺭ ): ৩/৮৭; আল-‘আজলুওনী, ‘কাশফুল খাফা’ ( ﻛﺸﻒ ﺍﻟﺨﻔﺎﺀ ): ১/২০৭ – ২০৮; ইমাম তারতূশী, ‘বির্রুল ওয়ালিদাইন’ ( ﺑﺮ ﺍﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ), পৃ. ১০৮ – ১০৯ [17] ড. মুহাম্মাদ ইবন লুতফী আস-সাব্বাগ, ‘নাযরাত ফিল উসরাতিল মুসলিমা’ ( ﻧﻈﺮﺍﺕ ﻓﻲ ﺍﻷﺳﺮﺓ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﺔ ), পৃ. ৪৯ [18] আল-হানাভী, ‘বির্রুল ওয়ালিদাইন’ ( ﺑﺮ ﺍﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ), পৃ. ১৩৫ সংকলন: শাইখ মুহাম্মদ ইবন ইবরাহীম আল- হামাদ অনুবাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সূত্র: ইসলামহাউজ
No comments:
Post a Comment