জাহেলী যুগের শিরকের সাথে বর্তমান বাংলাদেশের সামন্জস্য!!
আমাদের দেশের অসংখ্য মুসলিমদের বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের মাঝে প্রচলিত যে সবশির্কী কর্মকাণ্ডের কথা আলোচিত হয়েছে, আশা করি এর দ্বারা চিন্তাশীল পাঠক মহলেরনিকট এর সাথে জাহেলী যুগের মানুষের বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের কী পরিমাণ মিল বা অমিলরয়েছে, তা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এর পরেও বিষয়টি যাতে সর্ব সাধারণের নিকটসম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে যায় সে জন্যে নিম্নে উভয় সময়ের শির্কী কর্মকাণ্ডেরএকটি তুলনামূলক বর্ণনা ছক আকারে প্রদান করা হলো :জাহেলী যুগের বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসবাংলাদেশেরঅধিকাংশমুসলিমদেরবিশ্বাস, কর্মওঅভ্যাস১ গণক ও কাহিনদের ভবিষ্যদ্বাণীতে বিশ্বাস১ গণক, টিয়া পাখি ও বানরের মাধ্যমে ভাগ্য জানার চেষ্টা করা২ আররাফদের গায়েব সম্পর্কীয় কথায় বিশ্বাস২ জিন সাধকদের গায়েব সম্পর্কীয় কথায় বিশ্বাস৩ জ্যোতিষদের ভাগ্য সম্পর্কীয় কথায় বিশ্বাস৩ প্রফেসর হাওলাদার ও অন্যান্য জ্যোতিষদের ভাগ্য সম্পর্কীয় কথায় বিশ্বাসআমাদের নাবী ও ওলিগণ গায়েব জানেন
৪ পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের মঙ্গল ও অমঙ্গল জানার চেষ্টা করা৪ টিয়া পাখি ও বানরের সাহায্যে ভাগ্য জানার চেষ্টা করা৫ ওয়াদ, সুআ‘, য়াগুছ ইত্যাদি ওলিদের নামে নির্মিত মূর্তিসমূহ প্রয়োজন পূরণ করতে পারেবলে বিশ্বাস করা৫ আউলিয়াগণ বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন বলে বিশ্বাস করাখতমে নাবী পড়ার মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম নিলেই তাঁর নামেরবদৌলতে যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে যায় বলে বিশ্বাস করা৬ খ্রিস্টান ও হিন্দুদের ন্যায় অবতারবাদে বিশ্বাস করা৬ আল্লাহ নিজেই রাসূল হয়ে আগমন করেছিলেন বলে বিশ্বাস করাআহমদ আর আহাদ এর মধ্যে কেবল ‘মীম’ অক্ষরের পাথ্যর্ক বলে বিশ্বাস করাআরশে যিনি আল্লাহ ছিলেন মদীনায় তিনিই রাসূল হয়ে আগমন করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা৭ দেবতারা ইহকালীন কল্যাণার্জন ও অকল্যাণ দূর করতে পারে বলে বিশ্বাস করা৭ ওলীদের মধ্যকার গাউছ ও কুতুবগণ দুনিয়া পরিচালনা করেন এবং মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণকরতে পারেন বলে বিশ্বাস করা৮ ওলি ও ফেরেশ্তাদের নামে নির্মিত মূর্তি ও দেবতাসমূহ আল্লাহর কাছে মানুষের জন্যশাফা‘আত করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা৮ আউলিয়াগণ নিজস্ব মর্যাদা বলে আল্লাহর কোনো পূর্বানুমতি ব্যতীত তাঁদের ভক্তদেরজন্য শাফা‘আত করে তাদেরকে মুক্তি দিতে পারবেন বলে বিশ্বাস করা৯ ফেরেশ্তা ও ওলিদের নামে নির্মিত দেবতাদেরকে সাধারণ মানুষদের জন্য আল্লাহরনিকটবর্তী করেদেয়ার মাধ্যম হিসেবে মনে করা৯ মৃত ওলীদেরকে আল্লাহর নিকটতম করে দেয়ার মাধ্যম হিসেবে মনে করামৃত ওলিগণ ভক্তদের সমস্যা সমাধানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন বলে বিশ্বাস করাওলিগণ সাগরকে তার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বারণ করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা১০ উয্যা ও যাতে আনওয়াত নামের গাছ সর্বস্ব দেবতা যুদ্ধে বরকত ও বিজয় এনে দিতোবলে বিশ্বাস করা১০ ওলীদের কবরের উপর অথবা পার্শবর্তী স্থানে উৎপন্ন বা লাগানো গাছের শিকড়,ফল ও পাতার মাধ্যমে বরকত ও বিবিধ কল্যাণ লাভ করা যায় বলে মনে করাকবরের পুকুর ও কূপের পানি পান ক’রে এবং মাছ, কচ্ছপ ও কুমীরকে খাবার দিয়ে রোগমুক্তি ও বরকত কামনা করা১১ ‘মানাত’ নামের পাথর সর্বস্ব দেবতার নিকট প্রয়োজন পূরণের জন্য কামনা করা১১ আজানগাছী পীরের দরবারে রক্ষিত কথিত আবু জেহেলের হাতের পাথর দিয়েরোগ মুক্তি কামনা করানারায়ণগঞ্জের কদমরসূল দরবারে রক্ষিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথিত কদমমুবারকের ছাপ বিশিষ্ট পাথর দ্বারা রোগ মুক্তি ও কল্যাণ কামনা করা১২ উপত্যকার জিন সরদারের নিকট আশ্রয় কামনা করা১২ কাঠ ও মধু সংগ্রহকারীদের দ্বারা জঙ্গলের জিন ও হিংস্র প্রাণীর অনিষ্ট থেকে রক্ষারজন্য জঙ্গলের জিন সরদারিনীর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করাবিল ও জলাশয়ের মাছ ধরার জন্য পানি সেচের পূর্বে ‘কাল’ নামক জিনকে শিরনী দিয়েসন্তুষ্ট করা১৩ পৃথিবীর ঘটনা প্রবাহের উপর তারকা ও নক্ষত্রের প্রভাবে বিশ্বাস করা১৩ মানুষের ভাগ্যের উপর গ্রহ ও তারকার প্রভাবে বিশ্বাস করাতারকার সুদৃষ্টিতে জমিতে স্বর্ণ জন্মে বলে বিশ্বাস করা১৪ গোত্রীয়নেতাদেরপ্রবৃত্তিঅনুযায়ী গোত্র শাসন করা১৪ মানবরচিতবিধানেরআলোকে দেশ শাসন করাআল্লাহর পরিবর্তে দেশের জনগণকেক্ষমতায়বসানোরসর্বময়ক্ষমতারমালিক মনে করা১৫ দাদ ও প্লেগ রোগকে নিজ থেকে সংক্রামক রোগ বলে বিশ্বাস করা১৫ কলেরা, বসন্ত, দাদ, এজিমা, যক্ষ্ণা, প্লেগ ও এইড’স রোগকে নিজ থেকে সংক্রামকরোগ বলে মনে করা১৬ দেবতাদের দিকে মুখ করে দো‘আ করা১৬ দো‘আ গৃহীত হওয়ার জন্য মুরশিদ, পীর ও ওলিদের কবরের দিকে মুখ করেদো‘আ করা১৭ দেবতারা ছোট ছোট ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাদেরনিকট তা কামনা করা১৭ মৃত ওলিগণ সাহায্য করতে পারেন, এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাঁদের নিকট সাহায্য চাওয়াঝড়-তুফানের সময় আল্লাহর বদলে পাঁচ পীর, খওয়াজ খিজির ও বদর পীরকে সাহায্যেরজন্য আহ্বান করা১৮ ওলিদের মূর্তির সামনে বিনয়ের সাথে দাঁড়ানো১৮ ওলিদের কবর ও পীরের সামনে বিনয়ের সাথে দাঁড়ানো১৯ ভাল-মন্দ সর্বাবস্থায় মূর্তির নিকট সাহায্য চাওয়া১৯ ওলীদের নিকট সাহায্য কামনা করা২০ ওয়াদ, সুয়া‘ ইত্যাদি অলিগণের প্রথমত কবর এবং পরে তাঁদের মূর্তির সামনে অবস্থান গ্রহণকরে আল্লাহর উপাসনায় মনোযোগ ও তাঁর নিকটবর্তী হতে চাওয়া২০ ওলীদের কবরে অবস্থান গ্রহণ করে তাঁদের বাতেনী ফয়েয হাসিল করা এবং তাঁদেরমাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে চাওয়া২১ চাঁদ ও সূর্যকে সেজদা করা২১ ওলীদের কবরে সেজদা করা২২ বিপদাপদ দূর করার জন্য দেবতাদের উদ্দেশ্যে নযর-নিয়াজ ও মানত করা২২ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ওলীদের কবরের মানত করা।২৩ দেবতাদেরকে আল্লাহর চেয়ে অধিক ভালবাসা২৩ আল্লাহর হুকুমের উপরে পীরের হুকুমকে প্রাধান্য দেয়া২৪ দেবতারা মানুষের ক্ষতি সাধন করতে পারে বলে মনে করা২৪ ওলীদের কবরকে ভয় করা২৫ দেবতাদের নিকট প্রয়োজন পেশ করা২৫ ওলীদের নিকট প্রয়োজন পূর্ণ করে দেয়ার জন্য আবেদন করা২৬ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দেবতাদের উপর ভরসা করা২৬ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ওলিদের উপর ভরসা করা২৭ প্রয়োজন নিয়ে দেবতাদের শরণাপন্ন হওয়া২৭ প্রয়োজন নিয়ে ওলিদের স্মরণাপন্ন হওয়া এবং তাঁদের নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করা২৮ ধর্ম যাজকদেরকে হারাম ও হালাল নির্ধারণকারী বানিয়ে নেওয়া২৮ শরী‘আত পালনের ক্ষেত্রে সহীহ হাদীসের উপর পীর ও মাযহাবের মতামতকেপ্রাধান্য দেওয়ারাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা পীরের নাম জপ করা২৯ দেবতাদের সাথে সম্পর্কিত কথিত বরকতপূর্ণ স্থান সমূহ যিয়ারত করতে যাওয়া২৯ ওলীদের কবর ও তাঁদের সাথে সম্পর্কিত স্থানসমূহ দূর-দূরান্ত থেকে যিয়ারত করতেযাওয়ামৃত্যুর পর ওলিগণ রূহানী শক্তি বলে অনেক কিছু করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা৩০ দেবতাদের গায়ে হাত বুলিয়ে বরকত হাসিল করা৩০ ওলীদের কবর, কবরের দেয়াল, গিলাফ ও তাঁদের স্মৃতিসমূহ স্পর্শ করে বরকত হাসিলকরা৩১ দেবতা ও বাপ-দাদার নামে শপথ গ্রহণ করা৩১ আগুন, পানি ও মাটি ইত্যাদির নামে শপথ করা৩২ দেবতাদের নামের সাথে মিলিয়ে সন্তানাদির নাম রাখা, বিশেষ করে তাদের দাস- আবদ,গোলাম ইত্যাদি বলা৩২ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কোনো ওলীরনামের সাথে মিলিয়ে সন্তানাদিরনাম রাখা, বিশেষ করে তাদের দাস- আবদ, গোলাম ইত্যাদি বলা৩৩ বরকত হাসিলের জন্য সন্তানদেরকে দেবতাদের কাছে নিয়ে যাওয়া৩৩ ওলীদের কবর থেকে বরকত লাভ ও রোগ মুক্তির জন্য সন্তানদেরকে সেখানেনিয়ে যাওয়া এবং তাদের গায়ে কবরের কূপের পানি ছিটানো ও পান করানো৩৪ শির্কী পন্থায় অসুখ নিবারণের জন্য চেষ্টা করা৩৪ বিভিন্ন তন্ত্র-মন্ত্রের মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করা৩৫ চোখের কুদৃষ্টি থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য গলায় ঝিনুক থেকে আহরিত মুক্তার মালাপরানো।৩৫ কারো চোখ লাগা থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য তাদের গলায় মাছের হাড়, শামুক ইত্যাদিঝুলিয়ে রাখা।উপর্যুক্ত তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে এ কথা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে,আমাদের দেশের অনেক মুসলিমদের বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের সাথে জাহেলী যুগেরমুশরিকদের বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের যথেষ্ট মিল রয়েছে। তাদের মধ্যে এমনও অনেকশির্কী কর্ম রয়েছে যা জাহেলী যুগের মুশরিকদের মধ্যে ছিল না। বিশেষ করে নৌকাযোগে কোথাও যাওয়ার বিষয়টির কথা বলা যায়। জাহেলী যুগের লোকেরা কখনও নৌকাযোগে কোথাও যাওয়ার প্রাক্কালে ঝড় ও তুফানের কবলে পতিত হলে তারা বিপদ থেকেমুক্তির জন্য একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকেই স্মরণ করে তাঁকে আহ্বান করতো বলে কুরআনুলকারীমে বর্ণিত হয়েছে।[1] অথচ দেখা যায়, অনেক মুসলিমরা অনুরূপ বিপদে পতিত হলেসাহায্যের জন্য একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলাকে আহ্বান না করে ওলিদেরকে সাহায্যেরজন্য আহ্বান করে থাবেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, জাহেলী যুগের মানুষেরা যতটুকুশয়তানের শিকারে পরিণত হয়েছিল আমাদের দেশের অনেক মুসলিমরা এর চেয়েও অধিকশিকারে পরিণত হয়েছে।সংকলন: মুহাম্মদ মুয্যাম্মিল আলীসম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়াপ্রকাশনায়: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ[1]. এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : ‘‘তিনিই তোমাদের স্থলে ও সমুদ্রে ভ্রমণকরান। এমনকি যখন তোমরা নৌকাসমূহে আরোহণ করো এবং অনূকুল হাওয়ায় তা তাদেরকেবয়ে নিয়ে চলে, এতে তারা আনন্দিত হয়, ঠিক এমন সময় নৌকাগুলোর উপর তীব্র বাতাসএসে আঘাত হানে, আর সর্বদিক থেকে সেগুলোর উপর ঢেউ আসতে লাগে, তারাবুঝতে পারে যে, তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, তখন তারা আল্লাহকে একনিষ্ঠভাবে আহবানকরতে লাগে এই বলে যে, যদি তুমি আমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার কর, তাহলেনিঃসন্দেহে আমরা কৃতজ্ঞ থকবো।’’ দেখুন : আলকুরআন, সূরা ইউনুস : ২২। এ সম্পর্কেআরো দেখা যেতে পারে সূরা আন‘আম : ৬৩; সূরা : আনকাবূত : ৬৫, সূরা ইসরা : ৬৭।
No comments:
Post a Comment