Tuesday, February 13, 2018

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা: সারা বছর রোযার ছোয়াব পাওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ:

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা: সারা বছর রোযার ছোয়াব পাওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ: শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা
রাখার মর্যাদা:রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর
সাহাবীদের শাওয়াল মাসের এই ছয় রোযা রাখার প্রতি
উৎসাহ দিতেন। তিনি বলেছেনঃﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺛُﻢَّ ﺃَﺗْﺒَﻌَﻪُ ﺳِﺘًّﺎ ﻣِﻦْﺷَﻮَّﺍﻝٍ ﻛَﺎﻥَ ﻛَﺼِﻴَﺎﻡِ ﺍﻟﺪَّﻫْﺮِ
“যে ব্যক্তি রামাযান মাসের রোযা রাখলো অতঃপর

রোযা রাখতেন। ওহাইব ইব্নু ওরদ (রাহ:) এর এই কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ:ওহাইব ইব্নু ওরদকে কোন ভাল আমলের ছোয়াব সম্পর্কে

শাওয়াল মাসের ছয় রোযাও রাখল ঐ ব্যক্তি যেন সারা বছরই রোযা রাখল। (মুসলিম) এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রঃ) বলেন, আলেম সম্প্রদায় বলেন, “এই ছয় রোযাকে পূরো এক বছরের
রোযার ছোয়াবের পর্যায়ভূক্ত করা হয়েছে এই জন্য যে,বান্দার প্রতিটি ভাল আমলকে আল্লাহ তায়ালা দশগুন ছোয়াব দান করেন। এ
হিসেবে রামাযান মাসের রোযা দশ মাসের ছোয়াব এবং এই ছয় রোযা দুমাসের ছোয়াবের অন্তর্ভূক্ত মনে করা হয়।
হাফেয ইব্নু রজব(রঃ) ইব্নু মোবারক থেকে বর্ণনা করেন,
তিনি বলেন: “শাওয়াল মাসের ছয় রোযা রামাযান মাসের
রোযার ছো্য়াবের সমতুল্য। এ হিসেবে যে কেউ এ ছয়
রোযা রাখবে সে ফরয রোযার ছোয়াব পাবে ।”
শাওয়াল মাসের রোযা রামাযান মাসে রোযা
রাখতে পারার জন্য কৃতজ্ঞতার বর্হি:প্রকাশ:
শাওয়াল মাসের ছয় রোযা রাখা হলো, আল্লাহ তাআলা
রামাযান মাসের রোযা রাখার তাওফীক দান
করেছেন সে জন্য শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখার
মাধ্যমে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এমনিভাবে সৎ
আমলের উপর প্রতিষ্ঠিত ও অবিচল থাকারও প্রমাণ স্বরূপ।
হাফেয ইবনু রজব (রঃ) বলেন, “ রামাযান মাসের
রোযা রাখার তাওফীক পাওয়ার পর আবার গুনাহে
লিপ্ত হওয়ার উদাহরণ হলো নেআমতের এমন কুফরী করা
যেমন ঈমান আনার পর মুরতাদ হয়ে যাওয়া।”
প্রিয় ভাই, ইবাদতের জন্যে কোন সময় নির্ধারিত নেই যে,
কেবল ঐসময়েই ইবাদত করবে আর সময় শেষ হয়ে গেলে
আবার গুনাহের কাজে লিপ্ত হবে। বরং মানুষ দুনিয়াতে যত
দিন বেঁচে থাকবে ততদিন তাকে ইবাদত করতে হবে।
এমনকি এ ইবাদত মৃত্যুর পূর্ব মূহূর্ত পর্যন্ত চালু থাকবে।
আল্লাহ বলেন:
ﻭَﺍﻋْﺒُﺪْ ﺭَﺑَّﻚَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺄْﺗِﻴَﻚَ ﺍﻟْﻴَﻘِﻴﻦُ
“এবং তুমি তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত
তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর। (সূরা হিজ্র: ৯৯)
বাসীর আল হাফী (রঃ) কে বলা হলো, কিছু লোক শুধু
রামাযান মাসেই ইবাদত করে।একথা শুনে তিনি বললেন:
“তারাই নিকৃষ্ট লোক যারা শুধু রামাযান মাস এলে
আল্লাহকে ডাকে। প্রকৃত সৎ লোক তো তারাই যারা সারা
বছর ধরে আল্লাহকে ডাকে।”শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা
রাখার উপকারীতা:সুপ্রিয় দ্বীনি ভাই, রামাযান
মাস চলে যাওয়ার পর রোযা চালু রাখার মধ্যেই রয়েছে
বহুবিধ উপকারিতা। এই উপকারিতা তারাই লাভ
করবে যারা শাওয়াল মাসের রোযা রাখবে। নিম্নে উহার
কতিপয় উপকারিতা উল্লেখ করা হলঃ
১) যে ব্যক্তি রামাযান মাসের রোযা পূর্ণ করবে এবং
শাওয়াল মাসের ছয় রোযা রাখবে সে পূর্ণ এক বছরের
রোযার ছোয়াব পাবে।২) শাওয়াল মাসের ছয় রোযা
এবং শাবানের রোযা রাখা হলো ফরয নামাযের আগে ও
পরে সুন্নাত নামাযের মত।ফরয ইবাদতে যে সমস্ত ত্রুটি-
বিচ্যুতি হয়ে যায় তা নফলের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে।
অনুরূপ ভাবে রামাযানের রোযা পালন করতে গিয়ে ভুল-
ত্রুটি হলে শাওয়ালের এছয়টি রোযা পালনের মাধ্যমে
তাকে পূর্ণতা দেয়া হয় .কেননা অধিকাংশ মানুষকেই
লক্ষ্য করা যায় তাদের রোযাতে ভুল-ত্রুটি রয়েছে
এবং কিয়ামতে যখন ফরয দ্বারা তার হিসাব পূর্ণ হবে
না তখন নফল দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে।
৩) রামাযান মাসের পর শাওয়াল মাসের রোযা রাখা
হলো রামাযান মাসের রোযা কবুল হওয়ার আলামত। কেননা
আল্লাহ যখন কোন ভাল আমল কবুল করেন তখন পরবর্তীতে
তাকে আরো ভাল আমল করার তাওফীক দান করেন।
৪) ঈমানের সাথে এবং ছওয়াবের আশায় রামাযান
মাসের রোযা পালন করলেিশ্চিত ভাবে বান্দার
গুনাহসমূহ বিদূরিত হয়।রামাযান মাসে রোযাদার
ব্যক্তি বছরের অন্যান্য দিনসমূহের ছোয়াব লাভ
করবে। আর সেই দিনগুলি হলোঃ রোযা ভাংগার বৈধ
দিনসমূহ। সুতরাং ঐদিনগুলির পর পূনরায় রোযা রাখা হলো
আল্লাহ তাআলা নেআমাতের শুকরিয়া করা। গুনাহ মাফ
হওয়ার নেআমাতের চেয়ে আর
বড় নেআমাত কিছু নেই। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম রাত্রিতে দাঁড়িয়ে এমন ভাবে নামায
পড়তেন যে তাঁর পা ফুলে যেতো। তাঁকে বলা হলো, হে
আল্লাহর রাসূল! আপনি এত নামায পড়েন যে আপনার পা
ফুলে যায় অথচ আল্লাহ পাক আপনার পূর্বের এবং পরের
সকল প্রকার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? রাসূল
সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
ﺃَﻓَﻠَﺎ ﺃَﻛُﻮﻥُ ﻋَﺒْﺪًﺍ ﺷَﻜُﻮﺭًﺍ
“আমি কি আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী বান্দাদের
অন্তর্ভূক্ত হব না?“ (বুখারী)আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় তাঁর
বান্দাদের রামাযান মাসের রোযার শুকরিয়া আদায় করার
আদেশ করেছেন। তিনি বলেনঃ
ﻭَﻟِﺘُﻜْﻤِﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﻌِﺪَّﺓَ ﻭَﻟِﺘُﻜَﺒِّﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ
ﻫَﺪَﺍﻛُﻢْ ﻭَﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺸْﻜُﺮُﻭﻥَ
এবং যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করে নিতে পার
এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তজ্জন্যে
তোমরা আল্লাহ্র বড়ত্ব বর্ণনা কর আর যেন তোমরা
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা বাক্বারা ১৮৫) সুতরাং
আল্লাহ তাঁর বান্দাকে রামাযান মাসের রোযা
রাখার শক্তিদান করেছেন এবং তার গুনাহ সমূহ ক্ষমা
করেছেন। তাই রামাযান মাসের শেষে পূনরায় রোযা
রাখা অর্থ হলো, তাঁর শুকরিয়া আদায় করা। সালফে
সালেহীনদের মধ্যে কেউ যদি রাত্রি জাগরণ করার
তাওফীক লাভ করতেন তাহলে শুকরিয়া স্বরূপ দিনের বেলায়
জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন যে, “ছোয়াব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিও না বরং বল
এই ভাল কাজের শক্তি পাওয়ার দরুন সে শুকরিয়া করার কি শক্তি পেয়েছে।
দ্বীন ও দুনিয়ার প্রত্যেক নেক কাজের জন্য শুকরিয়া করা আবশ্যক। অতঃপর
শুকরিয়া করার শক্তি পাওয়া
ইহা আর একটি নেআমত, এই
নেআমতের জন্য প্রয়োজন
আবার শুকরিয়া করা। আবার
এই নেআমতের শক্তি পাওয়ার
জন্য প্রয়োজন পুনরায়
শুকরিয়া করা। এমনি ভাবে
প্রত্যেকটি কাজের বিনিময়
আল্লাহর শুকরিয়া করা
আবশ্যক। যে সমস্ত আমল
দ্বারা মানুষ রামাযান মাসে
আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে
থাকে তা রামাযান মাস শেষ
হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত নয় বরং
মানুষ দুনিয়াতে যত দিন বেঁচে
থাকবে সেই আমলও ততদিন
অবশিষ্ট থাকবে। নবী (সাঃ)
এর আমল ছিলো স্থায়ী।
আয়েশা (রাঃ)কে
জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে,
নবী (সাঃ) কি ইবাদতের জন্য
কোন দিনকে খাছ করতেন?
তিনি বলেছেন না! বরং তিনি
সর্বদা আল্লাহর ইবাদত
করতেন। আয়েশা (রাঃ) আরও
বলেছেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
রামাযান এবং রামাযান
ছাড়া অন্য মাসে
১১রাকাতের বেশী রাত্রির
নামায পড়তেন না। রামাযান
মাসের কোন কাজ যদি ছুটে
যেতো তাহলে তিনি তা
শাওয়াল মাসে আদায় করে
নিতেন। এক বছর তিনি
ইতিকাফ করতে না পারলে
উহা শাওয়াল মাসের প্রথম
দশকে পূর্ণ করেছেন। শাওয়াল মাসের ছয় রোযা
সম্পর্কে বিশিষ্ট আলেমদের
কিছু ফতোয়াঃ
রামাযানের কাযা রোযা
পূরণের পর শাওয়ালের
রোযা:
সৌদী আরবের গ্রান্ড মুফতী
আল্লামা আবদুল আজীজ বিন
আবদুল্লাহ বিন বায(রঃ) কে
জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে,
রামাযানের কাযা বাদ দিয়ে
শাওয়াল মাসের ছয় রোযা
রাখা যাবে কিনা? তিনি
বলেছেন, এই বিষয় সঠিক কথা
হচ্ছে, রামাযান মাসের
কাযা রোযাকে শাওয়ালের
রোযা এবং অন্যান্য নফল
রোযার উপর প্রাধান্য দিবে।
কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ
ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺛُﻢَّ ﺃَﺗْﺒَﻌَﻪُ ﺳِﺘًّﺎ ﻣِﻦْ
ﺷَﻮَّﺍﻝٍ ﻛَﺎﻥَ ﻛَﺼِﻴَﺎﻡِ ﺍﻟﺪَّﻫْﺮِ
“যে ব্যক্তি রামাযান মাসের
রোযা রাখবে অতঃপর
শাওয়াল মাসের ছয় রোযা
রাখবে সে যেন সারা বছরই
রোযা রাখলো।” (মুসলিম)
সুতরাং যে ব্যক্তি
রামাযানের কাযা রোযা
আদায়ের পূর্বে শাওয়ালের
রোযা প্রাধান্য দিবে সে এ
হাদীসের অন্তর্ভূক্ত নয়।
কেননা হাদীসের ভাষ্য হল,
যে ব্যক্তি রামাযানের
রোযা রাখলো অতঃপর
শাওয়ালের রোযা রাখল।
রামাযান মাসের রোযা হল
ফরয আর শাওয়ালের ছয়
রোযা হল নফল, সুতরাং ফরয
এর গুরুত্ব অপরিসীম। (মাজমু
ফতোয়া বিন বায ৫/ ২৭৩)
শাওয়ালের রোযা কি
রামাযান শেষ হওয়ার সাথে
সাথে শুরু করতে হবে?
সউদী আরবের ফতোয়া
বোর্ডকে জিজ্ঞাসা করা
হয়েছে যে, শাওয়ালের ছয়
রোযা কি রামাযান মাসের
পর পরই রাখতে হবে নাকি
কিছু দিন পর রাখলেও তাতে
কোন সমস্যা নেই ? উত্তরে
বলা হয়েছে: রামাযান মাস
শেষ হওয়ার একদিন, দু দিন বা
কয়েক দিন পর শুরু করাতে
কোন প্রকার অসুবিধা নেই।
ধারাবাহিকভাবে রাখতে
পারবে বা বিছিন্ন ভাবে
রাখতে পারবে। তবে শাওয়াল
মাসের মধ্যেই রাখতে
হবে।” (ফতোয়া লাজনা
দায়েমা ১০/৩৯১পৃঃ)
পরিশেষে বলব: প্রাণ প্রিয়
ভাই, প্রত্যেক মুসলমানের
অধিকরূপে ভাল আমল করার
মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও
সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা
উচিৎ। প্রত্যেক মুসলমান দ্বীন
ও দুনিয়ার কল্যাণ মূলক
কাজের চেষ্টা ও সাধনা
করবে। ভাল কাজের উক্ত
সময়টি দ্রুত চলে যাচ্ছে, তাই
এই সময়গুলোকে মূল্যবান মনে
করে অধিক ছোয়াব ও সেই
সাথে ভাল কাজের জন্য
আল্লাহর কাছে বেশী বেশী
প্রার্থনা করা করা সকলের
কর্তব্য। আল্লাহর কাছে
কামনা করি তিনি যেন
আমাদের উত্তম কর্ম
সম্পাদনের শক্তি দেন এবং
তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার
পূর্ণ তাওফীক দান করেন।
আমীন।
লেখক: শাইখ জাহিদুল ইসলাম
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড
গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী
আরব

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ