জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ 1-19
আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল /
জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১–১০
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রিয় বন্ধুগণ, আমরা জানি, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি হাদীস এক একটি
আইন, একটি সংবিধান ও একটি নীতি। যার সূত্র ধরে
যুগে যুগে মানব জাতি তাদের করণীয় ও বর্জনীয়
নির্ধারণ করবে। এর মাধ্যমে মানবতা তাদের জীবন
চলার দিক নির্দেশনা খুঁজে নিবে। তাই যে কোন
হাদীস গ্রহণ করার আগে তা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত
হওয়া অপরিহার্য। যার কারণে যুগে যুগে
মুহাদ্দেসীনগণ হাদীসের বিশুদ্ধতা অনুসন্ধানের
নিমিত্তে হাদীসের বর্ণনাকারী, বর্ণনা সূত্র এবং
আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল /
জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১–১০
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রিয় বন্ধুগণ, আমরা জানি, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি হাদীস এক একটি
আইন, একটি সংবিধান ও একটি নীতি। যার সূত্র ধরে
যুগে যুগে মানব জাতি তাদের করণীয় ও বর্জনীয়
নির্ধারণ করবে। এর মাধ্যমে মানবতা তাদের জীবন
চলার দিক নির্দেশনা খুঁজে নিবে। তাই যে কোন
হাদীস গ্রহণ করার আগে তা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত
হওয়া অপরিহার্য। যার কারণে যুগে যুগে
মুহাদ্দেসীনগণ হাদীসের বিশুদ্ধতা অনুসন্ধানের
নিমিত্তে হাদীসের বর্ণনাকারী, বর্ণনা সূত্র এবং
হাদীসের মূল বক্তব্যের মাঝে কোন রূপ সংযোজন-
বিয়োজন কিম্বা পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে কি না তা
অতি সূক্ষ্ম ভাবে চুল চেরা বিশ্লেষণ করে হাদীসটির
প্রতি সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন যে, এটি আদৌ
হাদীস কি না অথবা তা সহীহ না জঈফ। এটি অত্যন্ত
জটির একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু আল্লাহর সাহায্যে
তারা এ কাজটি অভূতপূর্ব সাফল্যের সাথে সম্পন্ন
করে গেছেন। সুতরাং কেউ ইচ্ছা করলেই কোন কথাকে
হাদীস বলে চালিয়ে দিতে পারবে না।
আমরা দেখব, আমাদের সমাজে অনেক কথা হাদীস
হিসেবে প্রচলিত কিন্তু বাস্তবে সেগুলো হাদীস নয়
অন্য কথায় সেগুলো জাল হাদীস। এ সম্পর্কে মুসলমান
ভাইদেরকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে এখানে কতিপয়
জাল ও জঈফ হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
আসুন, আমরা সেগুলো দেখি এবং জানার চেষ্টা করি।
১) “দ্বীন (ধর্ম) হচ্ছে বিবেক, যার দ্বীন নেই তার
কোন বিবেক নেই।”
হাদীসটি বাতিল
সূত্রঃ “ আল-কুনা ” এবং “ আল-কুনা ওয়াল আসমা ”
গ্রন্থে আবূ মালেক বিশর ইবনু গালিব সূত্রে যুহরী হতে
বর্ণিত।
বাতিল বলেছেনঃ ইমাম নাসাঈ (রহঃ) , হাফিয ইবনু
হাজার (রহঃ) ও আল্লামা আলবানী (রহঃ) ।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেনঃ “বিবেক
সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদীস মিথ্যা।” ( আল-মানার;
পৃঃ ২৫ )
২) “পুরুষদের ইচ্ছা ( মনোবল ) পর্বতমালাকে
স্থানচ্যূত করতে পারে।”
এটি হাদীস নয়।
বাতিল বলেছেনঃ ইসমাঈল আজলুনী (রহঃ) এর
মন্তব্য–“এটি যে হাদীস তা সম্পর্কে অবহিত হতে
পারি নি।” (কাশফুল খাফা)। আল্লামা আলবানী
(রহঃ) ও হাদীসটিকে বাতিল বলে আখ্যায়িত
করেছেন ।
৩) “মসজিদের মধ্যে কথোপকথন পূণ্যগুলোকে খেয়ে
ফেলে যেমনভাবে চতুষ্পদ জন্তুগুলো ঘাস খেয়ে
ফেলে।”
হাদীসটি ভিত্তিহীন।
সূত্রঃ “ ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন” (১/১৩৬)
বাতিল বলেছেনঃ হাফিয ইরাকী (রহঃ) , হাফিয ইবনু
হাজার (রহঃ), আব্দুল ওয়াহাব সুবকী (রহঃ) , আল্লামা
আলবানী (রহঃ)
৪) “দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।”
হাদীসটি জাল।
জাল বলেছেনঃ ইমাম সাগানী (রহঃ) ও অন্যান্য
ইমামগণ ।
৫) “যে ব্যক্তি নিজেকে চিনেছে , সে তার প্রভুকে
চিনতে সক্ষম হয়েছে।”
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
বাতিল বলেছেনঃ ইমাম নববী (রহঃ), ইমাম ইবনে
তাইমিয়্যাহ (রহঃ) হাফিয সাখাবী (রহঃ), ইমাম
সূয়ুতী (রহঃ), শাইখ আল-কারী (রহঃ)।
ফিরোযাবাদী (রহঃ) বলেনঃ যদিও অধিকাংশ লোক
এটিকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
হাদীস বলে চালাচ্ছেন, তবুও এটি নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয়।
এর ভিত্তিই সহীহ নয়। এটি ইসরাইলীদের বর্ণনায়
বর্ণিত ।
৬) “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ জুম’আর
দিবসে পাগড়ী ধারীদের প্রতি দয়া করেন।“
হাদীসটি জাল
সূত্রঃ “আল-মু’জামাল কাবীর” এবং “আল-
হিলইয়াহ” (৫/১৮৯-১৯০) গ্রন্থে আলা ইবনু আমর হানাফী
সূত্রে আইউব ইবনু মুদরেক হতে বর্ণিত।
জাল বলেছেনঃ ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ), হাফিয
ইবনে হাজার (রহঃ), ইমাম উকাইলী (রহঃ) , ইমাম ইবনু
আদী (রহঃ), ইমাম আল-আলবানী (রহঃ) ।
৭) “আমি আরবী ভাষী, কুরআন আরবী ভাষায় এবং
জান্নাতীদের ভাষা আরবী।”
হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ “ আল- মু’জামুল আওসাত”। (২/২৮৫,১/ ৯৩০১ )।
হাদীসের রাবীর (আব্দুল আযীয) সমালোচনা
করেছেনঃ ইমাম বুখারী (রহঃ), ইমাম হায়সামী (রহঃ),
ইমাম সূয়ুতী (রহঃ), হাফিয ইরাকী (রহঃ), ইমাম ইবনু
মাঈন (রহঃ), ইমাম ইবনু আররাক (রহঃ) , ইমাম ইবনু আদী
(রহঃ), আল্লামা আল-আলবানী (রহঃ) ।
৮) “পাগড়ীসহ সালাত পড়া দশ হাজার ভাল কর্মের
সমতুল্য।”
হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ “যায়লুল আহাদীসিল মাওযূ’ আহ” (পৃঃ ১১১ )
গ্রন্থে আবান নামক এক ব্যক্তি হতে বর্ণিত।
জাল বলেছেনঃ ইমাম সাখাবী (রহঃ), হাফিয ইবনু
হাজার (রহঃ), ইমাম মানূফী (রহঃ), শাইখ আল- কারী
(রহঃ) ।
ইমাম সুয়ূতী (রহঃ ) বর্ণনাকারী আবান সম্পর্কে
বলেনঃ আবান মিথ্যার দোষে দোষী। ইমাম ইবনুল
আররাক (রহঃ) “তানযীহুশ শরীয়াহ” (২/২৫৭) গ্রন্থেও
একই মন্তব্য করেছেন।
৯) “মুমিনের উচ্ছিষ্টে রয়েছে আরোগ্য।”
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
ভিত্তি নেই বলেছেনঃ শাইখ আহমাদ আল গাযাযী
(রহঃ), শাইখ আজলূনী (রহঃ) ।
শাইখ আহমাদ আল গাযাযী (রহঃ) বলেনঃ এটি কোন
হাদীস নয়। (আল-যাদ্দুল হাসীস )
১০) “যে ব্যক্তি তর্জনী অংগুলি দু’টির ভিতরের
অংশ দ্বারা মুয়ায্যিন কর্তৃক আশ্-হাদু আন্না
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলার সময় দু’চোখ মাসেহ
করবে; তার জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর সুপারিশ অপরিহার্য হয়ে
যাবে।”
হাদীসটি সহীহ নয়।
সুত্রঃ এটি “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে রয়েছে ।
সহীহ নয় বলেছেনঃ ইমাম ইবনু তাহির (রহঃ) (আত-
তাযকীরাহ), ইমাম শওকানী (রহঃ) (আহাদিসুল
মাওযূ’আহ), ইমাম সাখাবী (রহঃ) (মাকাসিদুল
হাসানা) ।
১১) “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকে’য়াহ
পাঠ করবে, তাকে কখনও অভাব (ক্ষুধা) গ্রাস করবে
না।”
হাদীসটি দুর্বল।
সূত্রঃ হাদীসটি হারিস ইবনু আবী উসামা তার
“মুসনাদ” গ্রন্থে (১৭৮), ইবনুস সুন্নী “আমালুল ইয়াউম
ওয়াল লাইলাহ” গ্রন্থে (৬৭৪), ইবনু লাল তার “হাদীস”
গ্রন্থে (১/১১৬), ইবনু বিশরান “আল- আমালী” গ্রন্থে
(২০/৩৮/১) বর্ণনা করেছেন আবূ শুযা’ সূত্রে আবূ
তায়বাহ হতে।
দুর্বল বলেছেনঃ ইমাম আহমাদ (রহঃ), আবূ হাতিম
(রহঃ), ইবনু আবী হাতিম (রহঃ), দারা কুতুনী (রহঃ),
ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ)।
ইমাম মানাবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসটি মুনকার। (আত্-
তায়সীর)
হাদীসটির রাবীদের সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহঃ)
বলেনঃ আবূ শুযাকে চেনা যায় না এবং আবূ তায়বাহ
মাজহূল।
ইমাম যায়লাঈ ( রহঃ ) হাদীসটি দোষণীয় হওয়ার
কারণ উল্লেখ করেছেনঃ-
1. এটির সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে ।
2. হাদীসটির মতনে (ভাষায়) দুর্বোধ্যতা রয়েছে।
3. হাদীসটির বর্ণনাকারীগণ দুর্বল।
4. এছাড়া ইযতিরাব রয়েছে।
১২) “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকেয়াহ
পাঠ করবে; তাকে কখনও অভাব গ্রাস করবে না।
যে ব্যক্তি প্রতি রাতে লা-উকসিমু বি-ইয়াওমিল
ক্বিয়ামাহ পাঠ করবে; সে কিয়ামত দিবসে
আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় মিলিত হবে যে, তার
চেহারা পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল
থাকবে।”
হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ এটি দায়লামী, আহমাদ ইবনু উমার ইয়ামানী
সূত্রে নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) “যায়লুল আহাদীসুল
মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (১৭৭) উল্লেখ করে বলেছেনঃ
বর্ণনাকারী আহমাদ ইয়ামানী মিথ্যুক।
১৩) “আমি সে সময়েও নবী ছিলাম যখন আদম পানি
এবং মাটির মাঝে ছিলেন।”
নিম্নের হাদীসটিও এটির ন্যায়ঃ– “ যখন আদম
ছিলেন না, পানি ও মাটি ছিল না তখনও আমি নবী
ছিলাম।”
হাদীস দু’ টি জাল।
জাল বলেছেনঃ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ
(রহঃ) এবং ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) সহ আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামায়াতের সকল মুহাদ্দীস।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) “বাকরীর
প্রতিবাদ” গ্রন্থের মধ্যে (পৃষ্ঠাঃ ৯) বলেছেনঃ
“কুর’আন ও হাদীসের মধ্যে এমন কি সুস্থ বিবেকেও
এটির কোন ভিত্তি নেই। কোন মুহাদ্দিসই এটি উল্লেখ
করেননি। এটির অর্থও বাতিল। কারণ আদম ( আলাইহিস
সালাম ) কখনও পানি এবং মাটির মাঝে ছিলেন না
বরং তিনি ছিলেন দেহ এবং রূহ এর মাঝে।”
১৪) “চীন দেশে গিয়ে হলেও তোমরা জ্ঞান
অন্বেষণ কর।”
হাদীসটি বাতিল।
সূত্রঃ এটি যেসব গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছেঃ “আখবারূ
আসহাবান” (২/১০৬); “ আল-ফাওয়াইদ” (২/২৪১) ; “আল-
আরবা’য়ীন” (২/১৫১) ; “আত্-তারিখ” (৯/৩৬৪) ; “কিতাবুল
রেহালা” (১/২); “আল-মাদখাল” (২৪১/৩২৪) ; “আল-
মুনতাকা” (১/২৮)। উপরের প্রত্যেকটি গ্রন্থে জাল
হাদীসটি হাসান ইবনু আতিয়া সূত্রে “আবূ আতিকা”
হতে বর্ণিত হয়েছে।
হাদীসটির বর্ণনাকারী “আবূ আতিকা” সম্পর্কে
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ তিনি মুনকারূল হাদীস।
ইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।
ইমাম উকায়লী (রহঃ) বলেনঃ তিনি নিতান্তই দুর্বল।
ইমাম আবূ হাতিম (রহঃ) বলেনঃ তিনি যাহেবুল
হাদীস।
ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ) ও ইমাম ইবনু হিব্বান
( রহঃ ) বলেনঃ হাদীসটি বাতিল।
ইমাম সুলায়মানী (রহঃ) “আবূ আতিকাকে” হাদীস
জালকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ইমাম সাখাবী (রহঃ) তার “মাকাসীদুল হাসানা”
গ্রন্থে উপরোক্ত মত সমর্থন করেন।
ইমাম আহমাদ (রহঃ) এ হাদীসটিকে কঠোর ভাষায়
ইনকার করেছেন।
ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) “আল-লায়ালী ” (১/১৯৩ ) গ্রন্থে
বলেনঃ
হাদীসটির আরো দু’টি সূত্র রয়েছেঃ—
১) একটির সনদে রয়েছেন ইয়াকূব ইবনু ইসহাক ইবনু
ইবরাহীম আসকালনী।
এ ইয়াকূব সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেনঃ সে
মিথ্যুক।
২) দ্বিতীয়টির সনদে রয়েছেন আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ
যুওয়াইবারী।
যুওয়াইবারী হাদীস জালকারী।
১৫) “যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কথা বলার পূর্বেই
ছয় রাকায়াত সালাত আদায় করবে; তা দ্বারা তার
৫০ বছরের গুণাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
সূত্রঃ এটি ইবনু নাসর “কিয়ামুল্লাহ” গ্রন্থে (পৃঃ ৩৩)
মুহাম্মদ ইবনু গাযওয়ান দামেস্কীর সূত্রে বর্ণনা
করেছেন।
হাদীসটি ইমাম ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) তার “আল-
ইলাল” গ্রন্থে এ সূত্রেই (১/১৭৮) উল্লেখ করেছেন,
অতঃপর বলেছেনঃ—
ইমাম আবূ যুর’য়াহ (রহঃ) বলেনঃ তোমরা এ
হাদীসটিকে পরিহার কর। কারণ এটি বানোয়াট
হাদীসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মুহাম্মদ ইবনু গাযওয়ান
দামেস্কী মুনকারুল হাদীস।
চলবে ইনশাআল্লাহ….।
জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১৬-১৯
১৬) “আমার উম্মতের মধ্যে মতভেদ রহমত স্বরূপ।”
–হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
মুহাদ্দিসগণ হাদীসটির সনদ বের করার চেষ্টা করে
ব্যর্থ হয়েছেন। শেষে আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) জামেউস
সাগীর গ্রন্থে বলেছেনঃ “সম্ভবত কোন হুফ্ফায-এর
গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু তা
আমাদের নিকট পৌঁছেনি।”
আমার (আলবানী) নিকট এটি অসম্ভবমূলক কথা, কারণ
এ কথা এটাই সাব্যস্ত করে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কিছু হাদীস উম্মতের মধ্য
হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোন মুসলিমের এরূপ বিশ্বাস
রাখা যুক্তিসংগত নয়।
মানাবী (রহঃ) সুবকীর উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ
“হাদীসটি মুহাদ্দিসদের নিকট পরিচিত নয়। এটির
কোন সহীহ, দুর্বল এমনকি জাল সনদ সম্পর্কেও অবহিত
হতে পারি নি। ”
শাইখ জাকারিয়া আল- আনসারী ‘তাফসীর বায়যাবী’
গ্রন্থের টিকায় (কাফ ২/৯২) মানাবীর (রহঃ) কথাটি
সমর্থন করেছেন।
এছাড়া হাদীসটির অর্থও বিচক্ষণ আলেমদের নিকট
অপছন্দনীয়। ইমাম ইবনু হাযম (রহঃ) “আল-ইহকাম ফি
উসূলিল আহকাম ” গ্রন্থে (৫/৬৪) এটি কোন হাদীস নয়
এ ইশারা দেয়ার পর বলেনঃ “এটি অত্যন্ত নিকৃষ্ট
কথা। কারণ যদি মতভেদ রহমত স্বরূপ হত, তাহলে
মতৈক্য অপছন্দনীয় হত। এটি এমন একটি কথা যা কোন
মুসলিম ব্যক্তি বলেন না। ”
তিনি অন্য এক স্থানে বলেনঃ “এটি বাতিল,
মিথ্যারোপ। ”
এ বানোয়াট হাদীসের কুপ্রভাবে বহু মুসলমান চার
মাযহাবের কঠিন মতভেদগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে
থাকেন। কখনো কিতাবুল্লাহ ও সহীহ হাদীসের দিকে
প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করেন না। অথচ সে দিকে
তাদের ইমামগণ প্রত্যাবর্তন করার জন্য নির্দেশ
দিয়েছেন। বরং তাদের নিকট এ চার মাযহাব যেন
একাধিক শরীয়তের ন্যায়।
আল্লাহ বলেনঃ “যদি (এ কুর’আন) আল্লাহ ছাড়া অন্য
কারো নিকট হতে আসত, তাহলে তারা তাতে বহু
মতভেদ পেত।” (সূরা নিসাঃ ৮২)
আয়াতটি স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছে যে, মতভেদ আল্লাহ
তায়ালার নিকট হতে নয়। অতএব কীভাবে এ মতভেদকে
অনুসরণীয় শরীয়ত বানিয়ে নেয়া সঠিক হয় ? আর
কীভাবেই তা নাযিলকৃত রহমত হতে পারে ?
মোটকথা শরীয়তের মধ্যে মতভেদ নিন্দনীয়। ওয়াজিব
হচ্ছে যতদূর সম্ভব তা থেকে মুক্ত হওয়া। কারণ এটি
হচ্ছে উম্মতের দুর্বলতার কারণসমূহের একটি।
যেমনিভাবে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ “এবং তোমরা
আপোসে বিবাদ করো না , কারণ তোমরা দুর্বল হয়ে
পড়বে আর তোমাদের শক্তি বিনষ্ট হয়ে যাবে।
( আনফালঃ ৪৬ )
অতএব মতভেদে সন্তুষ্ট থাকা এবং রহমত হিসেবে তার
নামকরণ করা সম্পূর্ণ কুর’আন বিরোধী কথা , যার অর্থ
খুবই স্পষ্ট। অপরপক্ষে মতভেদের সমর্থনে সনদবিহীন এ
জাল হাদীস ছাড়া আর কোন প্রমাণ নেই।
এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে , সাহাবীগণ
মতভেদ করেছেন , অথচ তারা লোকদের মধ্যে
সর্বোত্তম। তাদেরকে কি উল্লেখিত এ নিন্দা সম্পৃক্ত
করে না ?
ইবনু হাযম (রহঃ) বলেনঃ কক্ষণও নয়। তাদেরকে এ
নিন্দা সম্পৃক্ত করবে না। কারণ তাদের প্রত্যেকেই
আল্লাহর পথ এবং হকের পক্ষকে গ্রহণ করার জন্য
সচেষ্ট ছিলেন। তাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি ভুল
করেছেন তিনি তাতেও সওয়াবের অধিকারী এবং
একটি সওয়াব পাবেন। সুন্দর নিয়্যাত এবং উত্তম ইচ্ছা
থাকার কারণে। তাদের উপর হতে তাদের ভুলের গুণাহ
উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে তা
করেননি; আর তারা সত্যকে জানার গবেষণার
ক্ষেত্রে অলসতাও করেন নি। ফলে তাদের মধ্যে
যিনি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন,
তিনি দু’টি সওয়াবের অধিকারী। এমন ধারা প্রত্যেক
মুসলিম ব্যক্তির জন্য কিয়ামত দিবস পর্যন্ত অব্যাহত
থাকবে ধর্মীয় ঐ সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে যেগুলোর
সমাধান লুকায়িত, যা আমাদের নিকট এখন
পৌঁছায়নি।
উল্লেখিত নিন্দা ও ভীতি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য
যে কুর’আনকে এবং নবীর হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করে,
তার নিকট স্পষ্টভাবে দলীল প্রতীয়মান হওয়ার
পরেও। বরং কুর’আন ও হাদীসকে পরিত্যাগ করার
মানসে অন্য ব্যক্তির সাথে সে সম্পর্ক স্থাপন করেছে
ইচ্ছাকৃতভাবে মতভেদের অন্ধ অনুসরণ করে, গোঁড়ামী
ও অজ্ঞতার দিকে আহবানকারী হিসেবে। সে এমন
এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তার দাবীর সমর্থনে
কুর’আন ও হাদীসের যে কথাটি মিলে সেটি গ্রহণ করে
আর যেটি তার বিপরীতে যায় সেটি পরিত্যাগ করে।
এরাই হচ্ছে নিন্দনীয় মতভেদকারী।
১৭) “যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সূরা
ইয়াসিন পাঠ করবে সেদিন তাদের থেকে
শাস্তিকে লাঘব করা হবে এবং সে (প্রবেশকারী)
ব্যক্তির জন্য গোরস্থানের মৃত ব্যক্তির সংখ্যায়
সাওয়াব (লিপিবদ্ধ করা) হবে।”
—হাদীসটি বানোয়াট।
সূত্রঃ হাদীসটি সা’লাবী তার তাফসীর গ্রন্থে
(৩/১৬১/২) মুহাম্মদ ইবনু আহমাদ রাবাহী সূত্রে তার
পিতা হতে, তিনি আইয়ূব ইবনু মুদরিক হতে, তিনি আবূ
ওবায়দাহ হতে, তিনি হাসান হতে, তিনি আনাস ইবনু
মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফূ’ হিসেবে
বর্ণনা করেছেন।
আমি (আল্লামা আলবানী) বলছিঃ এ সূত্রটি
অন্ধকারাচ্ছন্ন, ধ্বংসপ্রাপ্ত, ধারাবাহিকভাবে
সমস্যা জর্জরিতঃ
১) আবূ ওবায়দাহ সম্পর্কে ইবনু মাঈন রাহিমাহুল্লাহ
বলেনঃ তিনি মাজহূল।
২) আইয়ূব ইবনু মুদরিক সকলের ঐক্যমতে দূর্বল এবং
মাতরূক (প্রত্যাখ্যাত)। বরং তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন
রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। তিনি তার
সম্পর্কে অন্য বর্ণনায় বলেনঃ তিনি মিথ্যা কথা
বলতেন। ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি
মাকহূলের উদ্ধৃতিতে একটি বানোয়াট পান্ডুলিপি
বর্ণনা করেছেন যেটিকে মাকহূল দেখেন নি।
আমি (আল্লামা আলবানী) বলছিঃ তিনিই হাদীসটির
বিপদ।
৩) মুহাম্মদের পিতা আহমাদ আর-রিয়াহী হচ্ছেন
আহমাদ ইবনু ইয়াযীদ ইবনে দীনার আবুল আওয়াম। তার
সম্পর্কে ইমাম বায়হাকী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি
মাজহূল (অপরিচিত) যেমনটি “আল-লিসান” গ্রন্থে
এসেছে। আর তার ছেলে মুহাম্মদ হচ্ছেন সাদূক
সত্যবাদী। “তারিখু বাগদাদ” গ্রন্থে (১/৩৭২) তার
জীবনী আলোচিত হয়েছে। হাফিয সাখাবী
রাহিমাহুল্লাহ “আল-ফাতাওয়াল হাদীসাহ” গ্রন্থে
(ক্বাফ ১/১৯) বলেনঃ আমার ধারণা হাদীসটি সহীহ
নয়। হাদীসটিকে অন্য ভাষায় মৃত্যু শয্যায় শায়িত
রোগীর নিকট পাঠ করা মর্মে বর্ণনা করা হয়েছে।
কিন্তু সেটিও বানোয়াট।
১৮) “পূর্ব-পশ্চিমের মাঝে (যে কোন প্রান্তে)
জুম’আর দিবসের যে কোন সময়ের মধ্যে যদি
(নিম্নের) এ দু’আর দ্বারা কিছু চাওয়া হয় তাহলে
অবশ্যই তার দু’আ কবুল করা হবেঃ লা-ইলাহা ইল্লা
আনতা, ইয়া হান্নানু, ইয়া মান্নানু! ইয়া বাদী’ঊস
সামা ওয়াতি ওয়াল আরদি! ইয়া যালজালালি
ওয়াল ইকরাম।”
—-হাদীসটি বানোয়াট।
সূত্রঃ হাদীসটি খাতীব বাগদাদী ‘আত-তারিখ’
গ্রন্থে (৪/১১৬) খালেদ ইবনু ইয়াযীদ উমারী আবুল
ওয়ালীদ হতে, তিনি ইবনু আবী যিইব হতে, তিনি
মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির হতে, তিনি জাবির ইবনু
আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফূ’ হিসেবে
বর্ণনা করেছেন।
যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম নাসিরুদ্দীন
আল-আলবানী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এটি বানোয়াট।
এ খালেদ ছাড়া সকল বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।
ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ ‘আয-যু’য়াফা ওয়াল
মাতরুকীন’ গ্রন্থে (১/২৮৪-২৮৫) বলেনঃ তিনি এক শাইখ
রায়পন্থীদের মত অবলম্বন করতেন। তিনি খুবই মুনকারুল
হাদীস। তার থেকে রায়পন্থীরা বেশী বেশী বর্ণনা
করেছেন। তাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়া ঠিক নয়। কারণ
তিনি নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতিতে বানোয়াট হাদীস
বর্ণনা করতেন।
ওকায়লী রাহিমাহুল্লাহ ‘আয-যু’য়াফা’ গ্রন্থে (২/১৮)
বলেনঃ তিনি ভুল হাদীস বর্ণনা করেন এবং
নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে ভিত্তিহীন কিছু বর্ণনা
করতেন। ইবনু আদী রাহিমাহুল্লাহ ‘আল-কামিল’ গ্রন্থে
(৩/৮৯০) বলেনঃ তার অধিকাংশ হাদীসগুলো মুনকার।
আল্লামা হাফিয যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
তাকে আবূ হাতিম এবং ইয়াহইয়া মিথ্যুক আখ্যা
দিয়েছেন।
১৯) “নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে পুনরায় ঊযু
করতে হবে।”
—হাদীসটি জাল (বানোয়াট)
সূত্রঃ হাদীসটি ইবনু আদী ‘আল-কামেল’ গ্রন্থে (কাফ
২/৪২৭) ইয়াগনাম ইবনু সালেম হতে, তিনি আনাস ইবনু
মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণনা
করেছেন।
অতঃপর ইবনু আদী বলেছেনঃ ইয়াগনাম আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মুনকার হাদীস বর্ণনাকারী
আর তার অধিকাংশ হাদীস নিরাপদ নয়।
ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি আনাস ইবনু
মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর উদ্ধৃতিতে
হাদীস জাল করতেন।
ইবনু ইউনুস রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি আনাস
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে হাদীস বর্ণনা
করেছেন, মিথ্যা বর্ণনা করেছেন।
আবদুল হক ইশবীলী রাহিমাহুল্লাহ ‘আল-আহকাম’
গ্রন্থে (নং-২৪৪) বলেনঃ ইয়াগনাম মুনকারুল হাদীস,
হাদীসের ক্ষেত্রে তিনি দুর্বল।
(আল ইসলাম বাংলা ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম থেকে
সংকলিত)
আরও পড়ুন:
জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১–১০
জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১১–১৫
পাঠ করবে, তাকে কখনও অভাব (ক্ষুধা) গ্রাস করবে
না।”
হাদীসটি দুর্বল।
সূত্রঃ হাদীসটি হারিস ইবনু আবী উসামা তার
“মুসনাদ” গ্রন্থে (১৭৮), ইবনুস সুন্নী “আমালুল ইয়াউম
ওয়াল লাইলাহ” গ্রন্থে (৬৭৪), ইবনু লাল তার “হাদীস”
গ্রন্থে (১/১১৬), ইবনু বিশরান “আল- আমালী” গ্রন্থে
(২০/৩৮/১) বর্ণনা করেছেন আবূ শুযা’ সূত্রে আবূ
তায়বাহ হতে।
দুর্বল বলেছেনঃ ইমাম আহমাদ (রহঃ), আবূ হাতিম
(রহঃ), ইবনু আবী হাতিম (রহঃ), দারা কুতুনী (রহঃ),
ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ)।
ইমাম মানাবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসটি মুনকার। (আত্-
তায়সীর)
হাদীসটির রাবীদের সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহঃ)
বলেনঃ আবূ শুযাকে চেনা যায় না এবং আবূ তায়বাহ
মাজহূল।
ইমাম যায়লাঈ ( রহঃ ) হাদীসটি দোষণীয় হওয়ার
কারণ উল্লেখ করেছেনঃ-
1. এটির সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে ।
2. হাদীসটির মতনে (ভাষায়) দুর্বোধ্যতা রয়েছে।
3. হাদীসটির বর্ণনাকারীগণ দুর্বল।
4. এছাড়া ইযতিরাব রয়েছে।
১২) “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকেয়াহ
পাঠ করবে; তাকে কখনও অভাব গ্রাস করবে না।
যে ব্যক্তি প্রতি রাতে লা-উকসিমু বি-ইয়াওমিল
ক্বিয়ামাহ পাঠ করবে; সে কিয়ামত দিবসে
আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় মিলিত হবে যে, তার
চেহারা পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল
থাকবে।”
হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ এটি দায়লামী, আহমাদ ইবনু উমার ইয়ামানী
সূত্রে নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) “যায়লুল আহাদীসুল
মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (১৭৭) উল্লেখ করে বলেছেনঃ
বর্ণনাকারী আহমাদ ইয়ামানী মিথ্যুক।
১৩) “আমি সে সময়েও নবী ছিলাম যখন আদম পানি
এবং মাটির মাঝে ছিলেন।”
নিম্নের হাদীসটিও এটির ন্যায়ঃ– “ যখন আদম
ছিলেন না, পানি ও মাটি ছিল না তখনও আমি নবী
ছিলাম।”
হাদীস দু’ টি জাল।
জাল বলেছেনঃ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ
(রহঃ) এবং ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) সহ আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামায়াতের সকল মুহাদ্দীস।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) “বাকরীর
প্রতিবাদ” গ্রন্থের মধ্যে (পৃষ্ঠাঃ ৯) বলেছেনঃ
“কুর’আন ও হাদীসের মধ্যে এমন কি সুস্থ বিবেকেও
এটির কোন ভিত্তি নেই। কোন মুহাদ্দিসই এটি উল্লেখ
করেননি। এটির অর্থও বাতিল। কারণ আদম ( আলাইহিস
সালাম ) কখনও পানি এবং মাটির মাঝে ছিলেন না
বরং তিনি ছিলেন দেহ এবং রূহ এর মাঝে।”
১৪) “চীন দেশে গিয়ে হলেও তোমরা জ্ঞান
অন্বেষণ কর।”
হাদীসটি বাতিল।
সূত্রঃ এটি যেসব গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছেঃ “আখবারূ
আসহাবান” (২/১০৬); “ আল-ফাওয়াইদ” (২/২৪১) ; “আল-
আরবা’য়ীন” (২/১৫১) ; “আত্-তারিখ” (৯/৩৬৪) ; “কিতাবুল
রেহালা” (১/২); “আল-মাদখাল” (২৪১/৩২৪) ; “আল-
মুনতাকা” (১/২৮)। উপরের প্রত্যেকটি গ্রন্থে জাল
হাদীসটি হাসান ইবনু আতিয়া সূত্রে “আবূ আতিকা”
হতে বর্ণিত হয়েছে।
হাদীসটির বর্ণনাকারী “আবূ আতিকা” সম্পর্কে
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ তিনি মুনকারূল হাদীস।
ইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।
ইমাম উকায়লী (রহঃ) বলেনঃ তিনি নিতান্তই দুর্বল।
ইমাম আবূ হাতিম (রহঃ) বলেনঃ তিনি যাহেবুল
হাদীস।
ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ) ও ইমাম ইবনু হিব্বান
( রহঃ ) বলেনঃ হাদীসটি বাতিল।
ইমাম সুলায়মানী (রহঃ) “আবূ আতিকাকে” হাদীস
জালকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ইমাম সাখাবী (রহঃ) তার “মাকাসীদুল হাসানা”
গ্রন্থে উপরোক্ত মত সমর্থন করেন।
ইমাম আহমাদ (রহঃ) এ হাদীসটিকে কঠোর ভাষায়
ইনকার করেছেন।
ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) “আল-লায়ালী ” (১/১৯৩ ) গ্রন্থে
বলেনঃ
হাদীসটির আরো দু’টি সূত্র রয়েছেঃ—
১) একটির সনদে রয়েছেন ইয়াকূব ইবনু ইসহাক ইবনু
ইবরাহীম আসকালনী।
এ ইয়াকূব সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেনঃ সে
মিথ্যুক।
২) দ্বিতীয়টির সনদে রয়েছেন আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ
যুওয়াইবারী।
যুওয়াইবারী হাদীস জালকারী।
১৫) “যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কথা বলার পূর্বেই
ছয় রাকায়াত সালাত আদায় করবে; তা দ্বারা তার
৫০ বছরের গুণাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
সূত্রঃ এটি ইবনু নাসর “কিয়ামুল্লাহ” গ্রন্থে (পৃঃ ৩৩)
মুহাম্মদ ইবনু গাযওয়ান দামেস্কীর সূত্রে বর্ণনা
করেছেন।
হাদীসটি ইমাম ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) তার “আল-
ইলাল” গ্রন্থে এ সূত্রেই (১/১৭৮) উল্লেখ করেছেন,
অতঃপর বলেছেনঃ—
ইমাম আবূ যুর’য়াহ (রহঃ) বলেনঃ তোমরা এ
হাদীসটিকে পরিহার কর। কারণ এটি বানোয়াট
হাদীসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মুহাম্মদ ইবনু গাযওয়ান
দামেস্কী মুনকারুল হাদীস।
চলবে ইনশাআল্লাহ….।
জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১৬-১৯
১৬) “আমার উম্মতের মধ্যে মতভেদ রহমত স্বরূপ।”
–হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
মুহাদ্দিসগণ হাদীসটির সনদ বের করার চেষ্টা করে
ব্যর্থ হয়েছেন। শেষে আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) জামেউস
সাগীর গ্রন্থে বলেছেনঃ “সম্ভবত কোন হুফ্ফায-এর
গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু তা
আমাদের নিকট পৌঁছেনি।”
আমার (আলবানী) নিকট এটি অসম্ভবমূলক কথা, কারণ
এ কথা এটাই সাব্যস্ত করে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কিছু হাদীস উম্মতের মধ্য
হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোন মুসলিমের এরূপ বিশ্বাস
রাখা যুক্তিসংগত নয়।
মানাবী (রহঃ) সুবকীর উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ
“হাদীসটি মুহাদ্দিসদের নিকট পরিচিত নয়। এটির
কোন সহীহ, দুর্বল এমনকি জাল সনদ সম্পর্কেও অবহিত
হতে পারি নি। ”
শাইখ জাকারিয়া আল- আনসারী ‘তাফসীর বায়যাবী’
গ্রন্থের টিকায় (কাফ ২/৯২) মানাবীর (রহঃ) কথাটি
সমর্থন করেছেন।
এছাড়া হাদীসটির অর্থও বিচক্ষণ আলেমদের নিকট
অপছন্দনীয়। ইমাম ইবনু হাযম (রহঃ) “আল-ইহকাম ফি
উসূলিল আহকাম ” গ্রন্থে (৫/৬৪) এটি কোন হাদীস নয়
এ ইশারা দেয়ার পর বলেনঃ “এটি অত্যন্ত নিকৃষ্ট
কথা। কারণ যদি মতভেদ রহমত স্বরূপ হত, তাহলে
মতৈক্য অপছন্দনীয় হত। এটি এমন একটি কথা যা কোন
মুসলিম ব্যক্তি বলেন না। ”
তিনি অন্য এক স্থানে বলেনঃ “এটি বাতিল,
মিথ্যারোপ। ”
এ বানোয়াট হাদীসের কুপ্রভাবে বহু মুসলমান চার
মাযহাবের কঠিন মতভেদগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে
থাকেন। কখনো কিতাবুল্লাহ ও সহীহ হাদীসের দিকে
প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করেন না। অথচ সে দিকে
তাদের ইমামগণ প্রত্যাবর্তন করার জন্য নির্দেশ
দিয়েছেন। বরং তাদের নিকট এ চার মাযহাব যেন
একাধিক শরীয়তের ন্যায়।
আল্লাহ বলেনঃ “যদি (এ কুর’আন) আল্লাহ ছাড়া অন্য
কারো নিকট হতে আসত, তাহলে তারা তাতে বহু
মতভেদ পেত।” (সূরা নিসাঃ ৮২)
আয়াতটি স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছে যে, মতভেদ আল্লাহ
তায়ালার নিকট হতে নয়। অতএব কীভাবে এ মতভেদকে
অনুসরণীয় শরীয়ত বানিয়ে নেয়া সঠিক হয় ? আর
কীভাবেই তা নাযিলকৃত রহমত হতে পারে ?
মোটকথা শরীয়তের মধ্যে মতভেদ নিন্দনীয়। ওয়াজিব
হচ্ছে যতদূর সম্ভব তা থেকে মুক্ত হওয়া। কারণ এটি
হচ্ছে উম্মতের দুর্বলতার কারণসমূহের একটি।
যেমনিভাবে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ “এবং তোমরা
আপোসে বিবাদ করো না , কারণ তোমরা দুর্বল হয়ে
পড়বে আর তোমাদের শক্তি বিনষ্ট হয়ে যাবে।
( আনফালঃ ৪৬ )
অতএব মতভেদে সন্তুষ্ট থাকা এবং রহমত হিসেবে তার
নামকরণ করা সম্পূর্ণ কুর’আন বিরোধী কথা , যার অর্থ
খুবই স্পষ্ট। অপরপক্ষে মতভেদের সমর্থনে সনদবিহীন এ
জাল হাদীস ছাড়া আর কোন প্রমাণ নেই।
এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে , সাহাবীগণ
মতভেদ করেছেন , অথচ তারা লোকদের মধ্যে
সর্বোত্তম। তাদেরকে কি উল্লেখিত এ নিন্দা সম্পৃক্ত
করে না ?
ইবনু হাযম (রহঃ) বলেনঃ কক্ষণও নয়। তাদেরকে এ
নিন্দা সম্পৃক্ত করবে না। কারণ তাদের প্রত্যেকেই
আল্লাহর পথ এবং হকের পক্ষকে গ্রহণ করার জন্য
সচেষ্ট ছিলেন। তাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি ভুল
করেছেন তিনি তাতেও সওয়াবের অধিকারী এবং
একটি সওয়াব পাবেন। সুন্দর নিয়্যাত এবং উত্তম ইচ্ছা
থাকার কারণে। তাদের উপর হতে তাদের ভুলের গুণাহ
উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে তা
করেননি; আর তারা সত্যকে জানার গবেষণার
ক্ষেত্রে অলসতাও করেন নি। ফলে তাদের মধ্যে
যিনি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন,
তিনি দু’টি সওয়াবের অধিকারী। এমন ধারা প্রত্যেক
মুসলিম ব্যক্তির জন্য কিয়ামত দিবস পর্যন্ত অব্যাহত
থাকবে ধর্মীয় ঐ সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে যেগুলোর
সমাধান লুকায়িত, যা আমাদের নিকট এখন
পৌঁছায়নি।
উল্লেখিত নিন্দা ও ভীতি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য
যে কুর’আনকে এবং নবীর হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করে,
তার নিকট স্পষ্টভাবে দলীল প্রতীয়মান হওয়ার
পরেও। বরং কুর’আন ও হাদীসকে পরিত্যাগ করার
মানসে অন্য ব্যক্তির সাথে সে সম্পর্ক স্থাপন করেছে
ইচ্ছাকৃতভাবে মতভেদের অন্ধ অনুসরণ করে, গোঁড়ামী
ও অজ্ঞতার দিকে আহবানকারী হিসেবে। সে এমন
এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তার দাবীর সমর্থনে
কুর’আন ও হাদীসের যে কথাটি মিলে সেটি গ্রহণ করে
আর যেটি তার বিপরীতে যায় সেটি পরিত্যাগ করে।
এরাই হচ্ছে নিন্দনীয় মতভেদকারী।
১৭) “যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সূরা
ইয়াসিন পাঠ করবে সেদিন তাদের থেকে
শাস্তিকে লাঘব করা হবে এবং সে (প্রবেশকারী)
ব্যক্তির জন্য গোরস্থানের মৃত ব্যক্তির সংখ্যায়
সাওয়াব (লিপিবদ্ধ করা) হবে।”
—হাদীসটি বানোয়াট।
সূত্রঃ হাদীসটি সা’লাবী তার তাফসীর গ্রন্থে
(৩/১৬১/২) মুহাম্মদ ইবনু আহমাদ রাবাহী সূত্রে তার
পিতা হতে, তিনি আইয়ূব ইবনু মুদরিক হতে, তিনি আবূ
ওবায়দাহ হতে, তিনি হাসান হতে, তিনি আনাস ইবনু
মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফূ’ হিসেবে
বর্ণনা করেছেন।
আমি (আল্লামা আলবানী) বলছিঃ এ সূত্রটি
অন্ধকারাচ্ছন্ন, ধ্বংসপ্রাপ্ত, ধারাবাহিকভাবে
সমস্যা জর্জরিতঃ
১) আবূ ওবায়দাহ সম্পর্কে ইবনু মাঈন রাহিমাহুল্লাহ
বলেনঃ তিনি মাজহূল।
২) আইয়ূব ইবনু মুদরিক সকলের ঐক্যমতে দূর্বল এবং
মাতরূক (প্রত্যাখ্যাত)। বরং তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন
রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। তিনি তার
সম্পর্কে অন্য বর্ণনায় বলেনঃ তিনি মিথ্যা কথা
বলতেন। ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি
মাকহূলের উদ্ধৃতিতে একটি বানোয়াট পান্ডুলিপি
বর্ণনা করেছেন যেটিকে মাকহূল দেখেন নি।
আমি (আল্লামা আলবানী) বলছিঃ তিনিই হাদীসটির
বিপদ।
৩) মুহাম্মদের পিতা আহমাদ আর-রিয়াহী হচ্ছেন
আহমাদ ইবনু ইয়াযীদ ইবনে দীনার আবুল আওয়াম। তার
সম্পর্কে ইমাম বায়হাকী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি
মাজহূল (অপরিচিত) যেমনটি “আল-লিসান” গ্রন্থে
এসেছে। আর তার ছেলে মুহাম্মদ হচ্ছেন সাদূক
সত্যবাদী। “তারিখু বাগদাদ” গ্রন্থে (১/৩৭২) তার
জীবনী আলোচিত হয়েছে। হাফিয সাখাবী
রাহিমাহুল্লাহ “আল-ফাতাওয়াল হাদীসাহ” গ্রন্থে
(ক্বাফ ১/১৯) বলেনঃ আমার ধারণা হাদীসটি সহীহ
নয়। হাদীসটিকে অন্য ভাষায় মৃত্যু শয্যায় শায়িত
রোগীর নিকট পাঠ করা মর্মে বর্ণনা করা হয়েছে।
কিন্তু সেটিও বানোয়াট।
১৮) “পূর্ব-পশ্চিমের মাঝে (যে কোন প্রান্তে)
জুম’আর দিবসের যে কোন সময়ের মধ্যে যদি
(নিম্নের) এ দু’আর দ্বারা কিছু চাওয়া হয় তাহলে
অবশ্যই তার দু’আ কবুল করা হবেঃ লা-ইলাহা ইল্লা
আনতা, ইয়া হান্নানু, ইয়া মান্নানু! ইয়া বাদী’ঊস
সামা ওয়াতি ওয়াল আরদি! ইয়া যালজালালি
ওয়াল ইকরাম।”
—-হাদীসটি বানোয়াট।
সূত্রঃ হাদীসটি খাতীব বাগদাদী ‘আত-তারিখ’
গ্রন্থে (৪/১১৬) খালেদ ইবনু ইয়াযীদ উমারী আবুল
ওয়ালীদ হতে, তিনি ইবনু আবী যিইব হতে, তিনি
মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির হতে, তিনি জাবির ইবনু
আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফূ’ হিসেবে
বর্ণনা করেছেন।
যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম নাসিরুদ্দীন
আল-আলবানী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এটি বানোয়াট।
এ খালেদ ছাড়া সকল বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।
ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ ‘আয-যু’য়াফা ওয়াল
মাতরুকীন’ গ্রন্থে (১/২৮৪-২৮৫) বলেনঃ তিনি এক শাইখ
রায়পন্থীদের মত অবলম্বন করতেন। তিনি খুবই মুনকারুল
হাদীস। তার থেকে রায়পন্থীরা বেশী বেশী বর্ণনা
করেছেন। তাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়া ঠিক নয়। কারণ
তিনি নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতিতে বানোয়াট হাদীস
বর্ণনা করতেন।
ওকায়লী রাহিমাহুল্লাহ ‘আয-যু’য়াফা’ গ্রন্থে (২/১৮)
বলেনঃ তিনি ভুল হাদীস বর্ণনা করেন এবং
নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে ভিত্তিহীন কিছু বর্ণনা
করতেন। ইবনু আদী রাহিমাহুল্লাহ ‘আল-কামিল’ গ্রন্থে
(৩/৮৯০) বলেনঃ তার অধিকাংশ হাদীসগুলো মুনকার।
আল্লামা হাফিয যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
তাকে আবূ হাতিম এবং ইয়াহইয়া মিথ্যুক আখ্যা
দিয়েছেন।
১৯) “নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে পুনরায় ঊযু
করতে হবে।”
—হাদীসটি জাল (বানোয়াট)
সূত্রঃ হাদীসটি ইবনু আদী ‘আল-কামেল’ গ্রন্থে (কাফ
২/৪২৭) ইয়াগনাম ইবনু সালেম হতে, তিনি আনাস ইবনু
মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণনা
করেছেন।
অতঃপর ইবনু আদী বলেছেনঃ ইয়াগনাম আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মুনকার হাদীস বর্ণনাকারী
আর তার অধিকাংশ হাদীস নিরাপদ নয়।
ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি আনাস ইবনু
মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর উদ্ধৃতিতে
হাদীস জাল করতেন।
ইবনু ইউনুস রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি আনাস
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে হাদীস বর্ণনা
করেছেন, মিথ্যা বর্ণনা করেছেন।
আবদুল হক ইশবীলী রাহিমাহুল্লাহ ‘আল-আহকাম’
গ্রন্থে (নং-২৪৪) বলেনঃ ইয়াগনাম মুনকারুল হাদীস,
হাদীসের ক্ষেত্রে তিনি দুর্বল।
(আল ইসলাম বাংলা ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম থেকে
সংকলিত)
আরও পড়ুন:
জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১–১০
জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১১–১৫
No comments:
Post a Comment