#ছবি_ও_মূর্তি_ঘরে_রাখার_বিধান_কি?
▂▂▂▂▂▂▂▂﷽▂▂▂▂▂▂▂▂
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় ও অসীম সত্তার অধিকারী। আর মানুষ হ’ল তাঁর সর্বাধিক প্রিয় সৃষ্টি। তিনি মানুষকে শয়তান হ’তে সাবধান থাকার পুনঃ পুনঃ নির্দেশ প্রদান করেছেন। কুরআন আল্লাহর গ্রন্থ। এ গ্রন্থে আল্লাহ ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক-সাবধান করেছেন।
পবিত্র কুরআনের বাণী সমূহের প্রতি আস্থাশীল ও অকৃত্রিম বিশ্বাসী থাকারআহ্বান জানান হয়েছে। এতদসত্ত্বেও কেউ কল্পনাপ্রসূতভাবে নিত্যনতুন কর্মকান্ডে প্রবৃত্ত হ’লে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। এখানে এই ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্কবাণীর অবতারণা করা হ’ল। মহান আল্লাহ রাসূল ﴾ﷺ﴿-কে সতর্ককারীরূপে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাঁর মাধ্যমেই মানুষকে হুঁশিয়ার করেছেন। আল্লাহ বলেন,
‘আপনি তো কেবল একজন সতর্ককারী। আমি আপনাকে সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছি সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাতে সতর্ককারী আসেনি।’
✔
📖 (ফাতির ২৩-২৪)।


عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ سَمِعْتٌ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَاباً عِنْدَ اللهِ الْمُصَوِّرُوْنَ، متفق عليه-
১. অনুবাদ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক আযাব প্রাপ্ত লোক হবে ছবি প্রস্ত্ততকারীগণ।
১. অনুবাদ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক আযাব প্রাপ্ত লোক হবে ছবি প্রস্ত্ততকারীগণ।



২. ব্যাখ্যাঃ হাদীছে تَصَاوِيْرُ، تَمَاثِيْلُ، تَصَالِيْبُ তিনটি বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যেগুলির একবচনের অর্থ হ’লঃ যথাক্রমে ছবি, মূর্তি ও ক্রুশযুক্ত ছবি। তবে ‘ছবি’ বলতে সবগুলিকেই বুঝায়। ‘মূর্তি’ বলতে মাটি, পাথর বা অন্য কিছু দিয়ে তৈরী মূর্তি, প্রতিকৃতি, তৈলচিত্র ও কাপড়ে বুনা চিত্র কিংবা নকশাকে বুঝায়। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, সাধারণ ছবির চাইতে ক্রুশযুক্ত ছবি অধিকতর নিষিদ্ধ। কেননা ক্রুশ ঐসকল বস্ত্তর অন্তর্ভুক্ত, যাকে পূজা করা হয় আল্লাহকে বাদ দিয়ে। পক্ষান্তরে সকল ছবি পূজা করা হয় না।
✔
📚
📔[বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৫৯৫২-এর ভাষ্য, ১০/৩৯৮-৯৯ ও ৪০১ পৃঃ]।



তিনি বলেন, যেসব বস্ত্ত পূজিত হয়, সে সবের ছবি প্রস্ত্ততকারীগণ ক্বিয়ামতের দিন সর্বাধিক আযাব প্রাপ্ত হবে। এগুলি ব্যতীত অন্যগুলির ছবি প্রস্ত্ততকারীও গোনাহগার হবে। তবে তাদের শাস্তি তুলনামূলকভাবে কম হবে। কুরতুবী বলেন, জাহেলী আরবের লোকেরা সবকিছুর মূর্তি তৈরী করত। এমনকি তাদের কেউ কেউ মূল্যবান ‘আজওয়া’ খেজুর দিয়ে মূর্তি বানাতো। তারপর ক্ষুধার্ত হ’লে তা খেয়ে নিত’।
✔
📚[বুখারী, ফাৎহুল বারী ‘পোষাক’ অধ্যায় ৭৭, অনুচ্ছেদ ৮৯, ১০/৩৯৮]।


এ যুগে যারা বিভিন্ন প্রাণী ও ফল-ফুলের আকারে কেক বা মিষ্টান্ন তৈরী করে ভক্ষণ করেন, তারা উক্ত জাহেলী রীতির বিষয়টি অনুধাবন করুন। অমনিভাবে যারা খৃষ্টানদের পূজ্য ক্রুশ-এর অনুকরণে গলায় টাই ঝুলাতে ভালবাসেন, আশূরার দিন হোসায়েন (রাঃ)-এর নামে কেক-পাউরুটি বানিয়ে তাকে বরকত মনে করে ভক্ষণ করেন কিংবা খৃষ্টানদের অনুকরণে কেক কেটে নিজেদের জন্মদিন ও বিভিন্ন শুভ কাজের উদ্বোধন করেন, তারাও বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
ছাহেবে মিরক্বাত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেন যে, হাদীছে ছবি অংকন বলতে প্রাণীর ছবির কথা বলা হয়েছে যা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং যা দেওয়ালে বা পর্দার কাপড়ে থাকে।
✔
📔 [মোল্লা আলী ক্বারী, মিরক্বাত শরহে মিশকাত (ঢাকাঃ রশীদিয়া লাইব্রেরী, তাবি) ৮/৩২৫ পৃঃ]।


তিনি বলেন, আমাদের (হানাফী) মাযহাবের বিদ্বানগণ ছাড়াও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন যে, প্রাণীর ছবি অংকন করা কঠিনতম হারাম ও কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। চাই সেটা কাপড়ে হৌক, বিছানায় হৌক, টাকা-পয়সা বা অন্য কিছুতে হৌক। তবে যদি তা বালিশে, বিছানায় বা অনুরূপ হীনকর কোন বস্ত্ততে হয়, তবে তা হারাম নয় এবং ঐ অবস্থায় ঐ ঘরে ফেরেশতা আসতে বাধা নেই। অনুরূপভাবে শিকারী কুকুর, ফসল ও বাড়ী পাহারাদার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর থাকলে সে বাড়ীতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। যারা ঐ বাড়ীর উপরে আল্লাহর রহমত বর্ষণ করে এবং বাড়ীওয়ালার জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে। অবশ্য এরা ঐসকল ফেরেশতা নয়, যারা সর্বাবস্থায় বান্দার সাথে থাকে তার হেফাযতকারী হিসাবে’।
☝[ঐ, ৮/৩২৬]।

ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, ছবি-মূর্তি ওয়ালা ঘরে কেবল ফেরেশতাই প্রবেশ করে না। বরং নবীগণ ও তাঁদের সনিষ্ট অনুসারী আল্লাহর নেক বান্দাগণও প্রবেশ করেন না।
☝[ঐ, পৃঃ ৩২৯]।

ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, প্রাণীর হৌক বা বস্ত্তর হৌক, ছবি অংকন বিষয়টিই মকরূহ বা শরী‘আতে অপসন্দনীয় বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এগুলি মানুষকে অনর্থক কাজে ব্যস্ত রাখে। উপরন্তু ছবি-মূর্তির শাস্তি কঠিন হওয়ার প্রধানতম কারণ হ’ল এই যে, এতে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের উপাসনা করা হয়’। মোল্লা আলী ক্বারী বলেন,... আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে উপাসনা করার বিষয়টি যদি প্রাণী ছাড়াও সূর্য-চন্দ্র বা অন্য কোন জড় বস্ত্ত হয়, তাহ’লে সেই সব ছবি-মূর্তিও হারাম হবে’।
☝[ঐ, পৃঃ ৩৩১]।

উল্লেখ্য যে, আমাদের আলোচনায় ছবি ও মূর্তিকে একই শিরোনামে বর্ণনা করার কারণ এই যে, দু’টির হুকুম একই এবং দু’টির ব্যবহারিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া একই। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে মূর্তির চাইতে ছবি, চিত্র, তৈলচিত্র, ছায়াচিত্র ও চলচ্চিত্রের প্রতিক্রিয়া আরও বেশী মারাত্মক হয়। সম্প্রতি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপযেলার বাড়াইশ গ্রামের জনৈকা ৭ মাসের অন্তঃসত্তা গৃহবধু বাংলাদেশ টেলিভিশনে পরিবেশিত একটি প্রেমমূলক নাটক দেখার পরদিনই ব্যর্থ প্রেমিকার অনুকরণে নিজের দেহে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেছে বলে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে।
✔
📰 [ঢাকাঃ দৈনিক ইনকিলাব ১৬ এপ্রিল ২০০২, পৃঃ ১২]।


পিতা ও মাতা উভয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় একমাত্র পুত্রকে ঘরে রেখে যান টিভি চালু করে দিয়ে। ফিরে এসে ডাকাডাকি করেও ছেলের সাড়া না পাওয়ায় অবশেষে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে দেখা গেল কিশোর ছেলেটির লাশ মায়ের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ফ্যানের নীচে ঝুলছে। সামনে টিভিতে তখন ভারতীয় ছবি চলছে। সেখানে দেখানো ফাঁসির দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান হারিয়ে গেল চিরদিনের মত। ঢাকা মহানগরীর এই ঘটনাটি ২০০৮ সালের। ছবির নীল দংশনে এরূপ মর্মান্তিক ঘটনা শহরে-গ্রামে সর্বত্র হরহামেশা ঘটছে, যার কোন হিসাব নেই।
আমেরিকায় টিভির ব্যবহার ও প্রভাব বিষয়ক সেদেশের একটি রিপোর্টে জানা যায় যে, সেদেশের ৯৬% পরিবারে অন্তত একটি টিভি সেট রয়েছে। সেদেশের ৩ থেকে ৫ বছরের শিশুরা সপ্তাহে গড়ে ৫০ ঘণ্টা টিভি দেখে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত ছাত্ররা টিভির সামনে বসে পার করে দেয় ২২০০০ ঘণ্টারও বেশী সময়। অথচ স্কুলে সময় কাটায় মাত্র ১১০০০ ঘণ্টা। টিভিতে অধিকহারে সন্ত্রাস দেখানোর ফলে তারাও সন্ত্রাসী ও বিধ্বংসী হয়ে ওঠে’।
✓
📄 [আব্দুল্লাহ, English for today for H.S.C. students নভেম্বর ২০০১ পৃঃ ৩৭৪-৭৫[।
✓

বিগত যুগে মানুষ নিজ হাতে মৃত সৎ লোকের মূর্তি বানিয়ে তার উপাসনা করত। বর্তমান বৈজ্ঞানিক উন্নতির যুগে ঐসব মানুষের ছবি, চিত্র বা তৈলচিত্রকে একই রূপ সম্মান দেখানো হচ্ছে। বিগত যুগে কাঠ, মাটি বা পাথরের তৈরী মূর্তির সম্মুখে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হ’ত। আজকের যুগেও তার সম্মানে একইভাবে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হচ্ছে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ছবি ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে। আল্লাহর অমূল্য নে‘মত তরতাজা ফুলগুলিকে ছিঁড়ে এনে মালা বানিয়ে তা ছবিতে পরানো হচ্ছে। তার চিত্রে বা কবরে এমনকি কবরবিহীনভাবে নিজেদের বানানো শহীদ মিনারে, স্মৃতিসৌধে ও স্তম্ভে ‘শিখা অনির্বাণ’ ও ‘শিখা চিরন্তন’ নামীয় অগ্নিশিখার পাদদেশে অগ্নিপূজকদের ন্যায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হচ্ছে। এমনকি পীর-ফকীর ও অলি-আউলিয়া উপাধিধারী লোকদের কবরে ও তাদের ছবি ও তৈলচিত্রে রীতিমত সিজদা ও তার কাছে প্রার্থনা নিবেদন করা হচ্ছে। শী‘আ নামধারী কিছু বিভ্রান্ত মুসলমান ‘তা‘যিয়ার’ নামে হুসায়েন (রাঃ)-এর ভূয়া কবর বানিয়ে পূজা করছে। আলেম নামধারী একদল দুষ্টমতি লোক পীর-আউলিয়াদের নামে উদ্ভট গল্প সমূহ রচনা করে বই লিখছে ও প্রবন্ধ রচনা করে পত্রিকায় ছাপছে। রেডিও-টিভিতে ও বিভিন্ন ধর্মীয় জালসায় ওয়াযের নামে ভিত্তিহীন গাল-গল্প বলছে। যাতে এইসব শিরকের আড্ডাখানা গুলিতে লোক সমাগম বৃদ্ধি পায় ও নযর-নেয়াযের নামে সেখানে অর্থের পাহাড় গড়ে ওঠে।
কবর ও স্থান পূজা সম্পর্কে হুঁশিয়ারী
(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا وُضِعَ السَّيْفُ فِىْ أُمَّتِىْ لَمْ يُرْفَعْ عَنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَلاَتَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ اُمَّتِىْ بَالْمُشْرِكِيْنَ وَحَتَّى تَعْبُدَ قَبَائِلُ مِنْ اُمَّتِى الْأَوْثَانَ وَأَنَّهُ سَيَكُوْنُ فِىْ أُمَّتِىْ كَذَّابُوْنَ ثَلثُوْنَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِىُّ اللهِ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ لاَنَبِىَّ بَعْدِىْ وَلاَتَزَالُ طَائِفَةٌ مِّنْ اُمَّتِىْ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِيْنَ لاَيَضُرُّ هُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَاْتِىَ أَمْرُ اللهِ، رواه ابوداؤد والترمذى-
‘আমার উম্মতের মধ্যে যখন একবার তরবারী চালিত হবে, তখন আর তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আর ক্বিয়ামত সেই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে না, যতদিন না আমার উম্মতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সাথে মিশে যাবে এবং যতদিন না আমার উম্মতের কিছু গোত্র মূর্তি বা স্থানপূজা করবে। অদূর ভবিষ্যতে আমার উম্মতের মাঝে ত্রিশ জন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব ঘটবে, যাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর নবী হওয়ার দাবী করবে। অথচ বাস্তব কথা এই যে, ‘আমিই শেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী নেই’। আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল সত্যের উপরে অবিচল থাকবে। বিরোধিতাকারীগণ তাদের কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে’।
✔
📚[আবূ দাঊদ, তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৫৪০৬ ‘ফিৎনা সমূহ’ অধ্যায়; এম, আফলাতুন কায়সার, বঙ্গানুবাদ মেশকাত হা/৫১৭৩ (ঢাকাঃ এমদাদিয়া লাইব্রেরী ৩য় মুদ্রণ-১, ১৯৯৮) ১০/১৬ পৃঃ।]।


(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃত্যুর মাত্র পাঁচদিন পূর্বে অন্তিম শয়নে স্বীয় উম্মতকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন,
أَلاَ وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوْا يَتَّخِذُوْنَ قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيْهِمْ مَسَاجِدَ، أَلاَ فَلاَ تَتَّخِذُوا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ، إِنِّىْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَالِكَ، رواه مسلم-
‘জেনে রাখ! তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবর সমূহকে সিজদা বা উপাসনার স্থল হিসাবে গ্রহণ করেছিল। সাবধান! তোমরা যেন কবর সমূহকে সিজদার স্থান হিসাবে গ্রহণ করো না। আমি তোমাদেরকে এ বিষয়ে নিষেধ করে যাচ্ছি’।
✔
📚 [মুসলিম, মিশকাত হা/৭১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘মসজিদ সমূহ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ; নূর মোহাম্মদ আ‘জমী, বঙ্গানুবাদ মেশকাত শরীফ হা/৬৬০, ২/২৯০ পৃঃ; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, সনদ ছহীহ, আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ (কুয়েতঃ জমঈয়াতু এহইয়াইত তুরাছিল ইসলামী, তাবি), পৃঃ ১৪-১৫]।


(৩) তিনি বলেন,
لا تَجْعَلُوْا قَبْرِىْ وَثَناً يُّعْبَدُ... رواه فى المؤطا و احمد
‘তোমরা আমার কবরকে মূর্তিতে (وَثَناً ) পরিণত করো না, যাকে পূজা করা হয়’।
✔
📚 [মুওয়াত্ত্বা, আহমাদ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৭৫০ ‘মসজিদ সমূহ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৬৯৪ ২/৩১০ পৃঃ]।
لا تَجْعَلُوْا قَبْرِىْ وَثَناً يُّعْبَدُ... رواه فى المؤطا و احمد
‘তোমরা আমার কবরকে মূর্তিতে (وَثَناً ) পরিণত করো না, যাকে পূজা করা হয়’।


(৪) অন্য বর্ণনায় এসেছে,
وَلاَتَجْعَلُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا... رواه النسائى وابوداؤد
‘তোমরা আমার কবরকে তীর্থ কেন্দ্রে (عِيْدًا ) পরিণত করো না’।
✔
📚 [নাসাঈ, মিশকাত হা/৯২৬ ‘নবীর উপরে দরূদ ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৭৯৬]।
وَلاَتَجْعَلُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا... رواه النسائى وابوداؤد
‘তোমরা আমার কবরকে তীর্থ কেন্দ্রে (عِيْدًا ) পরিণত করো না’।


(৫) জাবের (রাঃ) বলেন,
نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صّلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُّقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُّبْنَى عَلَيْهِ، رواه مسلم
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন কবর পাকা করতে, সেখানে বসতে ও তার উপরে সৌধ নির্মাণ করতে’।
✔
📚 [মুসলিম, হা/৯৭০ ‘জানায়েয’ অধ্যায় ১১, অনুচ্ছেদ ৩২, হা/৯৪]।
نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صّلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُّقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُّبْنَى عَلَيْهِ، رواه مسلم
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন কবর পাকা করতে, সেখানে বসতে ও তার উপরে সৌধ নির্মাণ করতে’।


(৬) তিনি সাবধান করে বলেন,
لَأَنْ يَّجْلِسَ أَحَدُكُمْ عَلَى جَمْرَةٍ فَتُحْرِقَ ثِيَابَهُ، فَتَخْلُصَ إِلَى جِلْدِهِ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَّجْلِسَ عَلَى قَبْرٍ، رواه مسلم
‘তোমাদের কেউ জ্বলন্ত অঙ্গারের উপরে বসুক ও তার কাপড় পুড়ে গায়ের চামড়া ঝলসে যাক, সেটাও তার জন্য উত্তম হ’ল কবরে বসার চাইতে’।
✔
📚 [মুসলিম, হা/৯৭১ ‘জানায়েয’ অধ্যায় ১১, অনুচ্ছেদ ৩৩, হা/৯৬]।
لَأَنْ يَّجْلِسَ أَحَدُكُمْ عَلَى جَمْرَةٍ فَتُحْرِقَ ثِيَابَهُ، فَتَخْلُصَ إِلَى جِلْدِهِ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَّجْلِسَ عَلَى قَبْرٍ، رواه مسلم
‘তোমাদের কেউ জ্বলন্ত অঙ্গারের উপরে বসুক ও তার কাপড় পুড়ে গায়ের চামড়া ঝলসে যাক, সেটাও তার জন্য উত্তম হ’ল কবরে বসার চাইতে’।


(৭) তিনি বলেন,
لاَتُصَلُّوْا إِلَى الْقُبُوْرِ وَلاَتَجْلِسُوْا عَلَيْهَا، رواه مسلم-
‘তোমরা কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করো না ও তার উপরে বসো না’।
✔
📚 [মুসলিম, হা/৯৭২ ‘জানায়েয’ অধ্যায় ১১, অনুচ্ছেদ ৩৩, হা/৯৮]।
لاَتُصَلُّوْا إِلَى الْقُبُوْرِ وَلاَتَجْلِسُوْا عَلَيْهَا، رواه مسلم-
‘তোমরা কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করো না ও তার উপরে বসো না’।


(৮) হজ্জ থেকে ফেরার পথে একটি মসজিদে মুছললীদের ভিড় দেখে ওমর (রাঃ) কারণ জিজ্ঞেস করলে জানতে পারেন যে, এখানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একবার ছালাত আদায় করেছিলেন। তখন ওমর ফারূক বললেন, এভাবে ইহুদী-নাছারারা ধ্বংস হয়েছে। তারা তাদের নবীদের স্মৃতি চিহ্ন সমূহকে তীর্থস্থানে পরিণত করেছে। অতএব ছালাতের সময় না হ’লে তোমরা এখানে কোনরূপ ছালাত আদায় করবে না।
✔
📚 [মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, সনদ ছহীহ, আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ, পৃঃ ৯৩]।


(৯) ওমর (রাঃ)-এর নিকটে খবর পৌঁছলো যে, (হোদায়বিয়ার) যে বৃক্ষের নীচে দাঁড়িয়ে ছাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর নবীর হাতে হাত রেখে মৃত্যুর বায়‘আত করেছিলেন, যা ‘বায়‘আতুর রেযওয়ান’ নামে খ্যাত, লোকেরা ঐ বৃক্ষের নিকটে যাচ্ছে (বরকত মনে করে), তখন ওমর (রাঃ) ওটাকে কেটে ফেলার নির্দেশ দেন’।
✔
🔖 [প্রাগুক্ত]।


(১০) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ، متفق عليه-
‘ইয়াহূদ-নাছারাদের উপরে আল্লাহ অভিসম্পাত করুন, তারা তাদের নবীদের কবরগুককে উপাসনার কেন্দ্রে পরিণত করেছে’।
✔
📚[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭১২; নূর মোহাম্মদ আ‘জমী, বঙ্গানুবাদ মেশকাত শরীফ হা/৬৫৯, ২/২৯০ পৃঃ]।
لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ، متفق عليه-
‘ইয়াহূদ-নাছারাদের উপরে আল্লাহ অভিসম্পাত করুন, তারা তাদের নবীদের কবরগুককে উপাসনার কেন্দ্রে পরিণত করেছে’।


(১১) আয়েশা (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্তিম অসুখে আক্রান্ত হ’লেন, তখন একদিন তাঁর জনৈকা স্ত্রী হাবশার মারিয়াহ গীর্জার কথা আলোচনা করছিলেন। এছাড়া উম্মে সালামা ও উম্মে হাবীবাহ যাঁরা ইতিপূর্বে হাবশা গিয়েছিলেন, তাঁরাও সেখানকার ঐ গীর্জার সৌন্দর্য ও সেখানে রক্ষিত ছবি ও চিত্র সমূহের কথা বর্ণনা করলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাথা উঠিয়ে বললেন, ওরা এমন একটি সম্প্রদায় যখন ওদের মধ্যকার কোন সৎ লোক মারা যেত, তারা তার কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ করত। তারপর সেখানে ঐ সবের ছবি বা চিত্র অংকন করত। ক্বিয়ামতের দিন এরা হ’ল আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি (اولئك شرار خلق الله) ’।
[বুখারী ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘গীর্জায় ছালাত আদায়’ অনুচ্ছেদ হা/৪২৭, ৪৩৪; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৫০৮ ‘পোষাক’ অধ্যায় ‘ছবি সমূহ’ অনুচ্ছেদ; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪৩০৯, ৮/২৬০ পৃঃ]।
[বুখারী ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘গীর্জায় ছালাত আদায়’ অনুচ্ছেদ হা/৪২৭, ৪৩৪; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৫০৮ ‘পোষাক’ অধ্যায় ‘ছবি সমূহ’ অনুচ্ছেদ; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪৩০৯, ৮/২৬০ পৃঃ]।
বর্তমান যুগেও তাই করা হচ্ছে। ব্যক্তির ছবি বা তৈলচিত্র এখন ভক্তদের ঘরে ঘরে সুন্দরভাবে ও সসম্মানে শোভা পাচ্ছে। তাদের কবরে মসজিদ ও সৌধ নির্মাণ করা হচ্ছে ও সেখানে বৎসরান্তে কিংবা বিশেষ বিশেষ সময়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে। এমনকি ঘর হ’তে বের হবার সময় ঐ ব্যক্তির কিংবা তার মাযারের টাঙানো ছবির দিকে তাকিয়ে তার সাহায্য চাওয়া হচ্ছে ও তার অসীলায় বিপদ মুক্তি কামনা করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য যে, কবর পূজা, মূর্তি পূজা, স্থান পূজা ও ছবিপূজার মধ্যে বিশ্বাসগত দিক দিয়ে কোন পার্থক্য নেই। মূর্তি কিংবা ছবি মানব মনের উপরে অতি দ্রুত ও গভীরভাবে রেখাপাত করে বিধায় ইসলাম এ বিষয়ে কঠোর বিধান প্রদান করেছে। এক্ষণে ছবি ও মূর্তি বিষয়ে শারঈ বিধান সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোকপাত করার চেষ্টা পাব ইনশাআল্লাহ।
ছবি ও মূর্তি সম্পর্কে শারঈ বিধান
১. (ক) আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قَالَ اللهُ تَعَالى وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِىْ فَلْيَخْلُقُوْا ذَرَّةً أَوِلْيَخْلُقُوْا حَبَّةً أَوْشَعِيْرَةً، متفق عليه-
‘আমার সৃষ্টির মত করে যে ব্যক্তি (কোন প্রাণী) সৃষ্টি করতে যায়, তার চাইতে বড় যালেম আর কে আছে? পারলে তারা একটি পিঁপড়া বা শস্যদানা বা একটি যব সৃষ্টি করুক তো দেখি?
✔
📚 [মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৯৬ ‘পোষাক’ অধ্যায়, ‘ছবিসমূহ’ অনুচ্ছেদ; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯৭, ৮/২৫৬ পৃঃ]।


(খ) আবু যুর‘আ বলেন, আমি একদা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে মদীনার (উমাইয়া গবর্ণর মারওয়ান ইবনুল হিকাম-এর) একটি বাড়ীতে গেলাম। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন যে, বাড়ীর উপরিভাগে জনৈক শিল্পী ছবি অংকন করছে। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালেম আর কে আছে যে আমার সৃষ্টির ন্যায় সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে। তাহ’লে সৃষ্টি করুক একটি শস্যদানা বা একটি পিপীলিকা...।
✔
📔 [ফাৎহুল বারী ‘পোষাক’ অধ্যায় ৭৭, ‘ছবি বিনষ্ট করা’ অনুচ্ছেদ ৯০, ১০/৩৯৮ পৃঃ]।


(২) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ، متفق عليه-
‘যে সমস্ত লোক এইসব ছবি তৈরী করে, তারা ক্বিয়ামতের দিন আযাব প্রাপ্ত হবে। তাদেরকে বলা হবে ‘তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে, তা জীবিত কর’।
✔
📚 [বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৪৯২; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯৩, ৮/২৫৪ পৃঃ]।
إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ، متفق عليه-
‘যে সমস্ত লোক এইসব ছবি তৈরী করে, তারা ক্বিয়ামতের দিন আযাব প্রাপ্ত হবে। তাদেরকে বলা হবে ‘তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে, তা জীবিত কর’।


(৩) আবু জুহায়ফা (রাঃ) বলেন,
أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ وَثَمَنِ الْكَلْبِ وَكَسْبِ الْبَغِىِّ وَلَعَنَ آكِلَ الرِّبَوا وَمُوْكِلَهُ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ وَالْمُصَوِّرَ، رواه البخارىُّ-
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন রক্ত বিক্রয় করে তার মূল্য নিতে, কুকুর বিক্রয়ের মূল্য নিতে, যৌন উপার্জন নিতে এবং তিনি লা‘নত করেছেন সূদ গ্রহীতা, সূদ দাতা, (হাতে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে) উল্কিকারিনী ও উল্কি প্রার্থিনী মহিলা এবং ছবি অংকন বা প্রস্ত্ততকারী ব্যক্তির উপরে’।
✔
📚 [বুখারী, মিশকাত হা/২৭৬৫ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/২৬৪৫, ৬/৬ পৃঃ]।
أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ وَثَمَنِ الْكَلْبِ وَكَسْبِ الْبَغِىِّ وَلَعَنَ آكِلَ الرِّبَوا وَمُوْكِلَهُ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ وَالْمُصَوِّرَ، رواه البخارىُّ-
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন রক্ত বিক্রয় করে তার মূল্য নিতে, কুকুর বিক্রয়ের মূল্য নিতে, যৌন উপার্জন নিতে এবং তিনি লা‘নত করেছেন সূদ গ্রহীতা, সূদ দাতা, (হাতে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে) উল্কিকারিনী ও উল্কি প্রার্থিনী মহিলা এবং ছবি অংকন বা প্রস্ত্ততকারী ব্যক্তির উপরে’।


(৪) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,
سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: ... وَمَنْ صَوَّرَ صُوْرَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ أَنْ يَّنْفُخَ فِيْهَا وَلَيْسَ بِنَافِخٍ، رواه البخارىُّ-
‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ...যে ব্যক্তি দুনিয়াতে একটি ছবি তৈরী করবে, তাকে আযাব দেওয়া হবে এবং তাকে চাপ দেওয়া হবে তাতে রূহ প্রদানের জন্য। অথচ সে তা পারবে না’।
✔
📚 [বুখারী, মিশকাত হা/৪৪৯৯; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৪৩০০, ৮/২৫৬]।
سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: ... وَمَنْ صَوَّرَ صُوْرَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ أَنْ يَّنْفُخَ فِيْهَا وَلَيْسَ بِنَافِخٍ، رواه البخارىُّ-
‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ...যে ব্যক্তি দুনিয়াতে একটি ছবি তৈরী করবে, তাকে আযাব দেওয়া হবে এবং তাকে চাপ দেওয়া হবে তাতে রূহ প্রদানের জন্য। অথচ সে তা পারবে না’।


(৫) সাঈদ বিন আবুল হাসান বলেন, জনৈক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ)-এর নিকটে এসে বলল, আমার পেশা হ’ল ছবি তৈরী করা। এখন এ বিষয়ে আপনি আমাকে ফৎওয়া দিন। তখন ইবনু আববাস তাকে কাছে টেনে নিয়ে তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি তোমাকে ঐটুকু অবহিত করতে পারি, যা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট হ’তে শ্রবণ করেছি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি,
سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُوْرَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَيُعَذِّبُهُ فِىْ جَهَنَّمَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَإِنْ كُنْتَ لاَبُدَّ فَاعِلاً فَاصْنَعِ الشَّجَرَ وَمَا لاَ رُوْحَ فِيْهِ، متفق عليه-
‘প্রত্যেক ছবি প্রস্ত্ততকারী জাহান্নামী। তার প্রস্ত্ততকৃত প্রতিটি ছবিতে (ক্বিয়ামতের দিন) রূহ প্রদান করা হবে এবং জাহান্নামে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে’। অতঃপর ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যদি তুমি একান্তই ছবি তৈরী করতে চাও, তাহ’লে বৃক্ষ-লতা বা এমন বস্ত্তর ছবি তৈরী কর, যার মধ্যে প্রাণ নেই।
✔
📚 [মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৪৪৯৮, ৪৫০৭; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯৯, ৪৩০৮]।
سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُوْرَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَيُعَذِّبُهُ فِىْ جَهَنَّمَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَإِنْ كُنْتَ لاَبُدَّ فَاعِلاً فَاصْنَعِ الشَّجَرَ وَمَا لاَ رُوْحَ فِيْهِ، متفق عليه-
‘প্রত্যেক ছবি প্রস্ত্ততকারী জাহান্নামী। তার প্রস্ত্ততকৃত প্রতিটি ছবিতে (ক্বিয়ামতের দিন) রূহ প্রদান করা হবে এবং জাহান্নামে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে’। অতঃপর ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যদি তুমি একান্তই ছবি তৈরী করতে চাও, তাহ’লে বৃক্ষ-লতা বা এমন বস্ত্তর ছবি তৈরী কর, যার মধ্যে প্রাণ নেই।


৬. (ক) আয়েশা (রাঃ) বলেন,
أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَتْرُكُ فِىْ بَيْتِهِ شَيْئاً فِيْهِ تَصَالِيْبُ إِلاَّ نَقَضَهُ، رواه البخارىُّ-
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় গৃহে (প্রাণীর) ছবিযুক্ত কোন জিনিষই রাখতেন না। দেখলেই ভেঙ্গে চূর্ণ করে দিতেন’।
✔
📚 [বুখারী, মিশকাত হা/৪৪৯১; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯২]।
أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَتْرُكُ فِىْ بَيْتِهِ شَيْئاً فِيْهِ تَصَالِيْبُ إِلاَّ نَقَضَهُ، رواه البخارىُّ-
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় গৃহে (প্রাণীর) ছবিযুক্ত কোন জিনিষই রাখতেন না। দেখলেই ভেঙ্গে চূর্ণ করে দিতেন’।


(খ) আয়েশা (রাঃ) বলেন, একবার তিনি গদি বা আসন খরিদ করলেন, যাতে প্রাণীর ছবি ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গৃহে প্রবেশের সময় দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন। ঘরে প্রবেশ করলেন না। আমি তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টি লক্ষ্য করলাম। তখন আমি বললাম, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকটে তওবা করছি। হে রাসূল! আমি কি গুনাহ করেছি? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এই গদিটি কেন? আমি বললাম, আপনার বসার জন্য ও বিছানা হিসাবে ব্যবহার করার জন্য আমি ওটি খরিদ করেছি। তখন তিনি বললেন, এই সমস্ত ছবি যারা তৈরী করেছে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের আযাব দেওয়া হবে ও তাদেরকে বলা হবে, যা তোমরা বানিয়েছ, তাতে জীবন দাও। অতঃপর তিনি বললেন, ফেরেশতাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করেন না, যে ঘরে (প্রাণীর) ছবি থাকে’।
✔
📚 [মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৯২; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯৩]।


ছহীহ মুসলিমে বর্ধিত বর্ণনায় এসেছে আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি ঐটি নিলাম ও তাকে দু’টুকরা করে ছোট বালিশ বানালাম ও ঘরের ব্যবহার্য অন্য কাজে লাগালাম’।
✔
📚 [মুসলিম হা/২১০৭ ‘পোষাক ও সৌন্দর্য’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ নং ২৬ হা/৯৬]।


(গ) আয়েশা (রাঃ) থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে যে, একবার তিনি ঘরের জানালায় একটি পর্দা ঝুলিয়েছিলেন, যাতে প্রাণীর ছবি ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পর্দাটিকে ছিঁড়ে ফেললেন। তখন আয়েশা (রাঃ) সেই কাপড়ের টুকরা দিয়ে বালিশ তৈরী করেন, যা ঘরেই থাকত এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাতে হেলান দিয়ে বসতেন’।
✔
📚 [মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৯৩; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯৪]।


(ঘ) আয়েশা (রাঃ) থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা এক সফর থেকে ঘরে ফেরেন। ঐ সময় আমি দরজায় একটি ঝালরওয়ালা পশমী কাপড়ের পর্দা টাঙিয়েছিলাম। যাতে ডানাওয়ালা ঘোড়ার ছবি ছিল। অতঃপর তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন ও আমি পর্দাটিকে হটিয়ে দিলাম’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উক্ত পর্দাটিকে টেনে ছিঁড়ে ফেলেন এবং বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এই নির্দেশ দেননি যে, আমরা পাথর, মাটি বা ইটকে কাপড় পরিধান করাই। আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা ওটা কেটে দু’টি বালিশ বানাই ও তাতে ঝালর লাগাই। এতে তিনি আমাকে দোষারোপ করেননি’।
✔
📚 [মুসলিম হা/২১০৭ পোষাক ও সৌন্দর্য’ অধ্যায় ৩৭, অনুচ্ছেদ ২৬, হা/৮৭; ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৪৯৯]।


যারা কবরে গেলাফ লাগান ও তাকে অতি পবিত্র মনে করেন। এমনকি ঐ গেলাফ বা তার টুকরা এনে ঘরে বা অন্য কোন স্থানে রাখেন ও বরকত মনে করে তার সামনে শ্রদ্ধায় দাঁড়িয়ে থাকেন, কিছু কামনা করেন এবং সেখানে ধূপ-ধুনা-আগরবাতি ও নযর-নেয়ায দেন, তারা হাদীছটি লক্ষ্য করুন।
(ঙ) আয়েশা (রাঃ) বলেন, তাঁর ছবিযুক্ত একটি কাপড় ছিল, যা তাঁর কক্ষের জানালায় ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঐদিকে ফিরে ছালাত আদায় করার সময় বললেন, কাপড়টি সরিয়ে দাও। তখন আমি কাপড়টিকে ছিঁড়ে কয়েকটি বালিশ বানাই’।
✔
📚 [মুসলিম, ‘পোষাক ও সৌন্দর্য’ অধ্যায় ৩৭, অনুচ্ছেদ ২৬, হা/৯৩; ছহীহ নাসাঈ হা/৪৯৪৭]।


(চ) আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমাদের ঘরের সম্মুখে পাখির ছবিযুক্ত পর্দা ঝুলানো ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আয়েশা! ওটিকে সরিয়ে ফেল। কেননা ঘরে প্রবেশকালে ওটা দেখলে আমার দুনিয়ার কথা স্মরণ হয়’। আয়েশা বলেন, আমাদের একটি কাপড় ছিল, যাতে নকশা ছিল। সেটি পরিধান করতাম। কিন্তু তা কর্তন করিনি।
✔
📚 [ছহীহ নাসাঈ হা/৪৯৪৬]।


৭. (ক) আবু ত্বালহা আনছারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
لاَتَدْخُلُ الْمَلآئِكَتُ بَيْتاً فِيْهِ كَلْبٌ وَّ لاَتَصَاوِيْرُ، متفق عليه-
‘ঐ ঘরে ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না, যে ঘরে কুকুর থাকে বা (প্রাণীর) ছবি থাকে’।
✔
📚 [মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৮৯; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯০]।
لاَتَدْخُلُ الْمَلآئِكَتُ بَيْتاً فِيْهِ كَلْبٌ وَّ لاَتَصَاوِيْرُ، متفق عليه-
‘ঐ ঘরে ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না, যে ঘরে কুকুর থাকে বা (প্রাণীর) ছবি থাকে’।


অবশ্য এর মধ্যে ঐসব ফেরেশতা অন্তর্ভুক্ত নন, যারা মানুষের দৈনন্দিন আমলের হিসাব লিপিবদ্ধ করেন কিংবা মানুষের হেফাযতে নিয়োজিত থাকেন অথবা বান্দার রূহ কবয করার জন্য আসেন। অনুরূপভাবে কুকুর বলতে স্রেফ খেলা ও বিলাসিতার জন্য যেগুলি রাখা হয়। নইলে শিকারী কুকুর, ফসল ও বাড়ী পাহারা দেওয়ার কুকুর, যুদ্ধ বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত কুকুর উক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। উক্ত মর্মে পৃথকভাবে হাদীছ সমূহ বর্ণিত হয়েছে।
✔
📚 [দ্র মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪০৯৮-৪১০১, ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৩৯২০-২৩]।


(খ) বুখারী ও মুসলিম বুস্র বিন সাঈদ হ’তে, তিনি যায়েদ বিন খালেদ আল-জুহানী হ’তে, তিনি ছাহাবী আবু ত্বালহা আনছারী (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই ফেরেশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে ছবি থাকে’। বুস্র বলেন, অতঃপর যায়েদ পীড়িত হ’লে আমরা তাঁকে সেবা করার জন্য গেলাম। তখন তাঁর ঘরের দরজায় ছবিযুক্ত পর্দা দেখলাম। আমি রাসূলের স্ত্রী মায়মূনা (রাঃ)-এর পূর্ব স্বামীর পুত্র ওবায়দুল্লাহ আল-খাওলানীকে জিজ্ঞেস করলাম, যায়েদ কি ইতিপূর্বে আমাদেরকে ছবির নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে খবর দেননি? জবাবে ওবায়দুল্লাহ বললেন, আপনি কি তাঁকে একথা বলতে শোনেননি যে, ‘কাপড়ে অংকিত ছবি ব্যতীত’ (إلاَّ رَقْمًا فِىْ ثَوْبٍ) আমি বললাম, না। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি একথা বলেছেন’।
✔
📚 [মুসলিম, হা/২১০৬ ‘পোষাক ও সৌন্দর্য’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ২৬, হা/৮৫-৮৬]।


(গ) ওবায়দুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ একদা অসুস্থ আবু ত্বালহা আনছারীকে দেখতে তাঁর বাড়ীতে যান। সেখানে তিনি সাহ্ল বিন হুনাইফকে পান। তখন আবু ত্বালহা জনৈক ব্যক্তিকে বিছানার চাদরটি হটিয়ে দিতে বললেন। সাহ্ল বললেন, আপনি কেন এটি সরিয়ে দিচ্ছেন? আবু ত্বালহা বললেন, ওতে ছবি রয়েছে এবং এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা বলেছেন, তা আপনি জানেন। সাহ্ল বললেন, কিন্তু তিনি কি বলেননি যে, ‘কাপড়ে অংকিত ছবি ব্যতীত’। আবু ত্বালহা বললেন, হ্যাঁ, বলেছেন। কিন্তু এটি আমার হৃদয়ের অধিকতর প্রশান্তির জন্য ( وَلَكِنَّهُ أَطْيَبُ لِنَفْسِىْ ) ’।
✔
📚 [ছহীহ নাসাঈ হা/৪৯৪২ ‘ছবি সমূহ’ অনুচ্ছেদ নং ১১১]।


৮. আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, একদিন জিব্রীল (আঃ) আমার নিকটে এসে বলেন, আমি গতরাতে আপনার কাছে এসেছিলাম। কিন্তু ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে আমাকে যে জিনিষ বিরত রেখেছিল, তা হ’ল আপনার গৃহদ্বারের ছবিগুলি। কেননা ঘরের দরজায় একটি পাতলা পর্দা ঝুলানো ছিল, যাতে প্রাণীর অনেকগুলি ছবি ছিল। তাছাড়া ঘরে একটি কুকুর ছিল। অতএব আপনি ঐ ছবিগুলির মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দিন, যা ঘরের দরজার পর্দায় ঝুলানো রয়েছে। ফলে তা গাছ-গাছড়ার আকৃতি হয়ে যাবে। আর পর্দাটি সম্বন্ধে নির্দেশ দিন, যেন সেটি কেটে ফেলে দু’টি বালিশ বা বিছানা বানিয়ে নেওয়া হয়, যা পড়ে থাকবে ও পায়ে দলিত হবে। আর কুকুর সম্বন্ধে নির্দেশ দিন, যেন তা বের করে দেওয়া হয়। হাসান অথবা হোসায়েন কুকুরের বাচ্চাটি খেলার জন্য মাল-সামানের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল। নির্দেশ পেয়ে তা বের করে দেয়’।
✔
📚 [তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৫০১; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৪৩০২; আবুদাঊদ হা/৪১৫৮; ছহীহ নাসাঈ হা/৪৯৫৮; তিরমিযী হা/২৯৭০]।


৯. (ক) আবু হাইয়াজ আল-আসাদী বলেন, আমাকে একদিন আলী (রাঃ) বললেন,
ألاَ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِىْ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَن لاَّ تَدَعْ تِمْثَالاً إِلاَّطَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُّشَرَّفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ، رواه مسلم-
‘আমি কি তোমাকে এমন একটি কাজে পাঠাবো না, যে কাজে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে পাঠিয়েছিলেন? সেটি এই যে, তুমি এমন কোন ছবি ছাড়বে না, যাকে নিশ্চিহ্ন না করবে এবং এমন কোন উঁচু কবর দেখবে না, যাকে সমান না করে দেবে’।
✔
📚 [আবুদাঊদ, সনদ ছহীহ, মিশকাত তাহক্বীক্ব আলবানী, হা/১৬৯৬ ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘মৃতের দাফন’ অনুচ্ছেদ নং ৬; ঐ, বঙ্গানুবাদ: নূর মোহাম্মদ আ‘জমী হা/১৬০৫, (এমদাদিয়া লাইব্রেরী: ৩য় মুদ্রণ ১৯৮৬), ৪/৯২ পৃঃ]।
ألاَ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِىْ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَن لاَّ تَدَعْ تِمْثَالاً إِلاَّطَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُّشَرَّفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ، رواه مسلم-
‘আমি কি তোমাকে এমন একটি কাজে পাঠাবো না, যে কাজে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে পাঠিয়েছিলেন? সেটি এই যে, তুমি এমন কোন ছবি ছাড়বে না, যাকে নিশ্চিহ্ন না করবে এবং এমন কোন উঁচু কবর দেখবে না, যাকে সমান না করে দেবে’।


আবু হাইয়াজ খলীফা আলী (রাঃ)-এর পুলিশ প্রধান ছিলেন। আলবানী বলেন যে, এই আদেশ কেবল আলী নয় খলীফা ওছমানের আমলেও জারি ছিল।
✔
📔 [তাহযীরুস সাজেদ পৃঃ ৯২]।


(খ) আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি খাদ্য প্রস্ত্তত করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দাওয়াত দিলাম। তিনি আসলেন ও গৃহে প্রবেশ করলেন। অতঃপর একটি পর্দা দেখলেন, যা ছবিযুক্ত ছিল। তখন তিনি বেরিয়ে গেলেন এবং বললেন,
إنَّ الملائكتَ لاتدخلُ بيتاً فيه تصاويرُ رواه النسائيُّ
‘নিশ্চয়ই ঐ বাড়ীতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না, যে বাড়ীতে ছবি থাকে’।
✔
📚 [ছহীহ নাসাঈ হা/৪৯৪৪]।
إنَّ الملائكتَ لاتدخلُ بيتاً فيه تصاويرُ رواه النسائيُّ
‘নিশ্চয়ই ঐ বাড়ীতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না, যে বাড়ীতে ছবি থাকে’।


১০. (ক) জাবের (রাঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের সময় যখন আমরা নিকটবর্তী ‘বাত্বহা’ উপত্যকায় ছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে নির্দেশ দেন যেন কা‘বা গৃহের সকল ছবি (মূর্তি) নিশ্চিহ্ন করে দেন। অতঃপর উক্ত ছবি সমূহ নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কা‘বা গৃহে প্রবেশ করলেন না’।
✔
📚 [ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৫০২ ‘ছবিসমূহ’ অনুচ্ছেদ।


(খ) উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে কা‘বা গৃহে প্রবেশ করলাম। তিনি সেখানে ছবি সমূহ দেখে বালতিতে পানি আনার জন্য বললেন। আমি পানি নিয়ে এলে তিনি তা দিয়ে কাপড় ভিজিয়ে ঐগুলি মুছতে থাকলেন ও বললেন,
قَاتَلَ اللهُ قَوْمًا يُصَوِّرُوْنَ مَالاَ يَخْلُقُوْنَ-
‘আল্লাহ ঐ জাতিকে ধ্বংস করুন, যারা ছবি তৈরী করে। অথচ সেগুলিকে তারা সৃষ্টি করতে পারে না’।
✔
📚 [মুসনাদে আবূদাঊদ ত্বায়ালেসী, হাফেয ইবনু হাজার বলেন, বর্ণনাটির সনদ ‘জাইয়িদ’ বা উত্তম; আব্দুল আযীয বিন আব্দুল আব্দুল্লাহ বিন বায, ফী হুক্মিত তাছভীর (রিয়াদ: ৪র্থ সংষ্করণ ১৪০১/১৯৮১) পৃঃ ৮]।
قَاتَلَ اللهُ قَوْمًا يُصَوِّرُوْنَ مَالاَ يَخْلُقُوْنَ-
‘আল্লাহ ঐ জাতিকে ধ্বংস করুন, যারা ছবি তৈরী করে। অথচ সেগুলিকে তারা সৃষ্টি করতে পারে না’।


রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ হাতের ধনুক দ্বারা প্রথমে কা‘বা গৃহের বাইরে রক্ষিত ৩৬০টি মূর্তিকে আঘাত করে ফেলে দেন। অতঃপর কা‘বা গৃহে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের প্রতিকৃতি দেখতে পান। যাদের হাতে ভাগ্য গণনার তীর ছিল। এটা দেখে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, قاتَلَهُمُ اللهُ ، واللهِِ ما اسْتَقْسَما بها قَطُّ ‘আল্লাহ ওদের ধ্বংস করুন! আল্লাহর কসম! এই নবীদ্বয় কখনোই তীর দ্বারা ভাগ্য গণনা করতেন না’। অতঃপর তিনি সেখানে একটি কবুতরীর কাঠের প্রতিকৃতি দেখেন এবং নিজ হাতে তা ভেঙ্গে ফেলেন। অতঃপর হুকুম দেন সকল ছবি-মূর্তি নিশ্চিহ্ন করার জন্য’।
✔
📔 [ছফিউর রহমান মুবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম পৃঃ ৪০৪]।


আলোচনা:
ছবি ও মূর্তি সম্পর্কে উপরে বর্ণিত হাদীছ সমূহ ছাড়াও বহু হাদীছ রয়েছে, যেগুলিতে শাব্দিক পার্থক্য ব্যতীত প্রায় সমস্ত বর্ণনার সারমর্ম এই যে, সকল ধরনের
No comments:
Post a Comment