Tuesday, March 27, 2018

প্রশ্ন: ভাই কোন কোন স্থানে রাসূল (সা:) দুই হাত তুলে মোনাজাত (দুআ) করেছেন?

#প্রশ্ন: ভাই কোন কোন স্থানে রাসূল (সা:) দুই হাত তুলে মোনাজাত (দুআ) করেছেন?
#উত্তর: রাসূল (সা:) মোট চৌদ্দটি (14) টি স্থানে দুই হাত তুলে মোনাজাত (দুআ) করেছেন ৷ তার মধ্যে কেবল মাত্র একটি স্থানে সম্মিলিত ভাবে মোনাজাত করেছেন ৷ বাকি সব স্থানে একাকী মোনাজাত (দুআ) করেছেন ৷ কেবল মাত্র বৃষ্টির জন্য সম্মিলিত ভাবে দুআ করেছেন ৷ তাই বৃষ্টির জন্য ছাড়া সর্ব ক্ষেত্রে সম্মিলিত ভাবে দুই হাত তুলে দুআ করা নিষিদ্ধ ৷
#নিম্নে যে যে স্থানে রাসূল (সা:) দুই হাত তুলে মোনাজাত (দুআ) করেছেন তা বর্ননা করা হল:::::::::::::::::::::::::
-
[1] #বৃষ্টি প্রার্থনার জন্যঃ ----

-
☞⇤আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী কারীম ﷺ-এর যামানায় এক বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সে সময় একদিন নাবী ﷺ খুৎবা প্রদানকালে জনৈক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহর রসূল ﷺ! বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, পরিবার পরিজন অনাহারে মরছে। আপনি আমাদের জন্য দু‘আ করুন। অতঃপর রসূল ﷺ স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক দু‘আ করলেন। সে সময় আকাশে কোন মেঘ ছিল না। #রাবী বলেন: আল্লাহর কসম করে বলছি, তিনি হাত না নামাতেই পাহাড়ের মত মেঘের খন্ড এসে একত্র হয়ে গেল এবং তাঁর মিম্বর থেকে নামার সাথে সাথেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল। এভাবে দিনের পর দিন ক্রমাগত পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত হ’তে থাকল। অতঃপর পরবর্তী জুম‘আর দিনে সে বেদুঈন অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লহর রসূল ﷺ অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে, ফসল ডুবে যাচ্ছে। অতএব আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দু‘আ করুন। তখন তিনি দু’হাত তুললেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টি দাও, আমাদের এখানে নয়। এ সময় তিনি স্বীয় অঙ্গুলি দ্বারা মেঘের দিকে ইশারা করেছিলেন। ফলে সেখান থেকে মেঘ কেটে যাচ্ছিল।
▼( বুখারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ১২৭, হা/৯৩৩ জুম‘আর ছালাত’ অধ্যায়)
-
☞ #আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জুম‘আর দিন জনৈক বেদুঈন রসূল ﷺ-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল ﷺ! বৃষ্টির অভাবে গৃহপালিত পশুগুলো মারা যাচ্ছে। মানুষ খতম হয়ে যাচ্ছে। তখন রসূল ﷺ দু‘আর জন্য দু’ হাত উঠালেন। আর লোকেরাও রসূল ﷺ-এর সাথে হাত উঠাল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বেই বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল। এমনকি পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত বৃষ্টি বর্ষিত হ’তে থাকল। তখন একটি লোক রসূল ﷺ-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লহর রসূল ﷺ! রাস্তা-ঘাট অচল হয়ে গেল’।
▼( বুখারী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪০, হা/১০২৯ ‘ইস্তিস্কা’ অধ্যায়)
-
☞ আনাস ( রা: ) বলেন, কোন এক জুম‘আয় কোন এক ব্যক্তি দারুল কোযার দিক হ’তে মসজিদে প্রবেশ করল এমতাবস্থায় যে, রসূল ﷺ তখন খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি রসূলুল্লাহ ﷺ-এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল ﷺ! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন, আল্লাহ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করবেন। আনাস ( রা) বলেন, তখন রসূলুল্লাহﷺ স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন করতঃ প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন! হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন!
▼( বুখারী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৭; মুসলিম ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯৩-২৯৪)
-
☞ আনাস ( রা:) বলেন, আমি রসূল ﷺ-কে হস্তদ্বয়ের পিঠ আকাশের দিকে করে পানি চাইতে দেখেছি। মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৯৮ ‘ইসতিস্কা’ অনুচ্ছেদ)
-
☞ আনাস ( রা:) বলেন, নাবী কারীম ﷺ বৃষ্টির জন্য ছাড়া অর্থাৎ বৃষ্টির জন্য দু‘আ ছাড়া জামাতবদ্ধভাবে অন্য কোথাও হাত তুলতেন না। আর হাত এত পরিমাণ উঠাতেন যে, তার বগলের শুভ্র অংশ দেখা যেত।
( বুখারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪০, হা/১০৩১; মিশকাত হা/১৪৯৯)
-
(2) বৃষ্টি বন্ধের জন্যঃ———
-
☞ আনাস ( রা:) বলেন, পরবর্তী জুম‘আয় ঐ দরজা দিয়েই এক ব্যক্তি প্রবেশ করল রসূল ﷺ-এর দাঁড়িয়ে খুৎবা দান রত অবস্থায়। অতঃপর লোকটি রসূল ﷺ-এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল ﷺ! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন, আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দিবেন।
রাবী আনাস( রা:) বলেন, তখন রসূল ﷺ স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক বললেন, হে আল্লহ! আমাদের নিকট থেকে বৃষ্টি সরিয়ে দিন, আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন না। হে আল্লাহ! অনাবাদী জমিতে, উঁচু জমিতে উপত্যকায় এবং ঘন বৃক্ষের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন।
( বুখারী, ১ম খন্ড, ১৩৭ পৃঃ; মুসলিম, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯৩-২৯৪)
-
(3) চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময়ঃ--
-
☞ আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ
( রা:) বলেন, আমি রসূল ﷺ-এর জীবদ্দশায় এক সময় তীর নিক্ষেপ করছিলাম। হঠাৎ দেখি সূর্যগ্রহণ লেগেছে। আমি তীরগুলো নিক্ষেপ করলাম এবং বললাম, আজ সূর্যগ্রহণে রসূল ﷺ-এর অবস্থান লক্ষ্য করব। অতঃপর আমি তাঁর নিকট পৌছলাম। তিনি তখন দু’হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করছিলেন এবং তিনি ‘আল্লাহু আকবার’, ‘আল হামদুলিল্লাহ’, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলছিলেন। শেষ পর্যন্ত সূর্য প্রকাশ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি দু’টি সূরা পড়লেন এবং দু’রাক‘আত সলা-ত আদায় করলেন’।
( মুসলিম ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯৯ হা/৯১৩, ‘চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের ছালাত’ অধ্যায়)
-
(4) উম্মাতের জন্য রসূল ﷺ-এর দু‘আঃ
-
☞ আবদুল্লা-হ ইবনু আমর ইবনু ‘আস
( রা:) বলেন, একদা রসূল (সা:) সূরা ইবরাহীমের ৩৫ নং আয়াত পাঠ করে দু’হাত উঠিয়ে বলেন, আমার উম্মাত, আমার উম্মাত এবং কাঁদতে থাকেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের নিকট যাও এবং জিজ্ঞেস কর, কেন তিনি কাঁদেন। অতঃপর জিবরীল তাঁর নিকটে আগমন করে কাঁদার কারণ জানতে চাইলেন। তখন রসূল ﷺ তাঁকে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তা অবগত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জিবরীলকে বললেন, যাও, মুহাম্মাদকে বল যে, আমি তার উপর এবং তার উম্মতের উপর সন্তুষ্ট আছি। আমি তার অকল্যাণ করব না’।
▼( মুসলিম, ১ম খন্ড, পৃঃ ১১৩, হা/ ৩৪৬ ‘ ঈমান’ অধ্যায়)
-
(5) কবর যিয়ারতের সময়ঃ---
-
☞ আয়েশা( রা:) বলেন, একদা রাতে রসূল (সা) আমার নিকটে ছিলেন। শোয়ার সময় চাদর রাখলেন এবং জুতা খুলে পায়ের নিচে রেখে শুয়ে পড়লেন। তিনি অল্প সময় এ খেয়ালে থাকলেন যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। অতঃপর ধীরে চাদর ও জুতা নিলেন এবং ধীরে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেন এবং দরজা বন্ধ করে দিলেন। তখন আমিও কাপড় পরে চাদর মাথায় দিয়ে তাঁর পিছনে চললাম। তিনি ‘‘বাক্বীউল গারক্বাদে’’ জান্নাতুল বাক্বী) পৌঁছলেন এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তিন তিন বার হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করলেন৷
▼( মুসলিম ১ম খন্ড, পৃঃ ৩১৩, হা/৯৭৪ ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৫)
☞ ‘আয়েশা( রা:) বলেন, কোন এক রাতে রসূল (সা:) বের হ’লেন, আমি বারিরা( রা:) কে পাঠালাম, তাঁকে দেখার জন্য যে, তিনি কোথায় যান। তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে গেলেন এবং পার্শ্বে দাঁড়ালেন। অতঃপর হাত তুলে দু‘আ করলেন। তারপর ফিরে আসলেন। বারিরাও ফিরে আসলো এবং আমাকে খবর দিল। আমি সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি গত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন? তিনি বললেন, জান্নাতুল বাক্বীতে গিয়েছিলাম কবরবাসীর জন্য দু‘আ করতে।
▼[ইমাম বুখারী, রাফ‘উল ইয়াদায়েন, পৃঃ ১৭, হাদীস ছহীহ; মুসলিম হা/ ৯৭৪ মর্মার্থ)]
-
(6) কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার লক্ষ্যে হাত তুলে দু‘আঃ---
-
☞ আউতাসের যুদ্ধে আবু আমের (রা:) এর তীর লাগলে আবূ আমের স্বীয় ভাতিজা আবূ মূসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে, আপনি আমার পক্ষ থেকে রসূল ﷺ-কে সালাম পৌঁছে দিবেন এবং ক্ষমা চাইতে বলবেন। আবূ মূসা আশ‘আরী রাযিঃ) রসূলুল্লাহ -এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন এবং ওযূ করলেন। অতঃপর হাত তুলে প্রার্থনা করলেন ‘হে আল্লাহ! উবাইদ ও আবূ আমেরকে ক্ষমা করে দাও। রাবী বলেন) এ সময়ে আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন তুমি তাকে তোমার সৃষ্টি মানুষের অনেকের ঊর্ধ্বে করে দিও’।
( বুখারী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৪৪, হা/৪৩২৩ ও ৬৩৮৩ ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়)
(7) হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময়ঃ----
-
☞ আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর( রা:) তিনটি জামারায় সাতটি পাথর খন্ড নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। প্রথম দু’ জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর ক্বিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে দু‘আ করতেন। তবে তৃতীয় জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর দাঁড়াতেন না। শেষে বলতেন, আমি রসূল ﷺ-কে এগুলো এভাবেই পালন করতে দেখেছি’।
▼( বুখারী ১ম খন্ড পৃঃ ২৩৬, হা/১৭৫১ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)
-
(8) যুদ্ধক্ষেত্রেঃ----
-
☞ ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রা:) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূল ﷺবদরের যুদ্ধে মুশরিকদের দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন, তাদের সংখ্যা এক হাজার। আর তাঁর সাথীদের সংখ্যা মাত্র তিনশত ঊনিশ জন। তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু‘আ করতে লাগলেন। এ সময় তিনি বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করেছ। হে আল্লাহ! তুমি যদি এই জামা‘আতকে আজ ধ্বংস করে দাও, তাহ’লে এই যমীনে তোমাকে ডাকার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। এভাবে তিনি উভয় হাত তুলে ক্বিবলামুখী হয়ে প্রার্থনা করতে থাকলেন। এ সময় তাঁর কাঁধ হ’তে চাদরখানা পড়ে গেল। আবূ বকর তখন চাদরখানা কাঁধে তুলে দিয়ে রসূলﷺ-কে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতিপালক প্রার্থনা কবুলে যথেষ্ট। নিশ্চয়ই তিনি আপনার সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করবেন।
▼( মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৩, হা/১৭৬৩, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৮)
(9) কোন গোত্রের জন্য দু‘আ করাঃ
-
☞ আবূ হুরায়রা (রা:) বলেন, একদা আবূ তুফাইল (রা:) রসূল ﷺ এর কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল ! দাঊস গোত্রও অবাধ্য ও অবশীভূত হয়ে গেছে, আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ দু‘আ করুন। তখন রসূল ﷺ ক্বিবলামুখী হ’লেন এবং দু’হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি দাঊস গোত্রকে হেদায়াত দান কর এবং তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আস’।
▼( বুখারী, মুসলিম, ছহীহ আল আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ২০৯, হা/৬১১ সনদ ছহীহ)
-
(10) সাফা-মারওয়া সায়ী করার সময়ঃ
-
☞ আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রসূল ﷺ মাক্কায় প্রবেশ করলেন এবং পাথরের নিকট এসে পাথর চুম্বন করলেন, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং ছাফা পাহাড়ে এসে তার উপর উঠলেন। অতঃপর তিনি বায়তুল্লাহর দিকে লক্ষ্য করে দু’হাত উত্তোলনপূর্বক আল্লাহ্কে ইচ্ছামত স্মরণ করতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন।
( ছহীহ আবূ দাঊদ, হা/১৮৭২ সনদ ছহীহ মিশকাত হা/২৫৭৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)
-
(11) কুনূতে নাযেলার সময়ঃ
-
☞ আবূ ওসামা হতে বর্ণিত, রসূল ﷺ কুনূতে নাযেলায় হাত তুলে দু‘আ করেছিলেন।
( বুখারী, রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন অধ্যায়, সনদ ছহীহ)
-
(12) অপসন্দ কর্মের কারণে হাত তুলে দু‘আঃ--
-
☞ সালেম (রা:) এর পিতা হ’তে বর্ণিত, নাবী কারীম ﷺ খালেদ ইবনু ওয়ালীদকে বনী জাযীমার বিরুদ্ধে এক অভিযানে পাঠালেন। খালেদ তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করে নিল। কিন্তু ‘ইসলাম গ্রহণ করেছি’ না বলে তারা বলতে লাগল, ‘আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি’ ‘আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি। তখন খালেদ তাদেরকে কতল ও বন্দী করতে লাগলেন এবং বন্দীদেরকে আমাদের প্রত্যেকের হাতে সমর্পণ করতে থাকলেন। একদিন খালেদ আমাদের প্রত্যেককে স্ব স্ব বন্দী হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি নিজের বন্দীকে হত্যা করব না এবং আমার সাথীদের কেউই তার বন্দীকে হত্যা করবে না। অবশেষে আমরা নাবী কারীম-এর খেদমতে হাযির হ’লাম তাঁর কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলাম। তখন নাবী কারীম ﷺ স্বীয় হস্ত উত্তোলন পূর্বক প্রার্থনা করলেন, ‘হে আল্লাহ! খালেদ যা করেছে তার দায় থেকে আমি মুক্ত। এ কথা তিনি দু’বার বললেন।
▼( বুখারী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৬২২, হা/৪৩৩৯ ‘মাগাযী’ অধ্যায়)
-
(13) সদাক্বাহ আদায়কারীর ভুল মন্তব্য শুনে হাত তুলে দু‘আঃ————
-
☞ আবূ হুমায়েদ সায়েদী(রা:) বলেন, একবার নাবী ﷺ ইবনু লুত্ববিইয়াহ নামক ‘আসাদ’ গোত্রের এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করলেন। তখন সে যাকাত নিয়ে মাদীনায় ফিরে এসে বলল, এ অংশ আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এ অংশ আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে নাবী ﷺ ভাষণ দানের জন্য দাঁড়ালেন এবং প্রথমে আল্লাহর গুণগান বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, আমি তোমাদের কোন ব্যক্তিকে সে সকল কাজের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করি, যে সকল কাজের দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর সমর্পণ করেছেন। অতঃপর তোমাদের সে ব্যক্তি এসে বলে যে, এটা আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এটা আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতা-মাতার ঘরে বসে থাকল না? দেখা যেত কে তাকে হাদিয়া দিয়ে যায়। আল্লাহর কসম, যে ব্যক্তি এর কোন কিছু গ্রহণ করবে, যে নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তা আপন ঘাড়ে বহন করে হাযির হবে। যদি আত্মসাৎকৃত বস্তু উট হয়, উটের ন্যায় ‘চি চি’ করবে, যদি গরু হয় তবে ‘হাম্বা হাম্বা’ করবে। আর যদি ছাগল-ভেড়া হয়, তবে ‘ম্যা ম্যা’ করবে। অতঃপর রসূল ﷺ স্বীয় হস্তদ্বয় উঠালেন, তাতে আমরা তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই তোমার নির্দেশ পৌঁছে দিলাম। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি পৌঁছে দিলাম’।
▼( বুখারী পৃঃ ৯৮২,হা/৬৬৩৬ ‘কসম ও মানত’ অধ্যায়)
-
(14) মুমিনকে কষ্ট বা গালি দেয়ার প্রতিকারে হাত তুলে দু‘আঃ----
-
☞ আয়েশা (রা:) রসূল ﷺ-কে হাত তুলে দু‘আ করতে দেখেন। তিনি দু‘আয় বলছিলেন, নিশ্চয়ই আমি মানুষ। কোন মুমিনকে গালি বা কষ্ট দিয়ে থাকলে তুমি আমাকে শাস্তি প্রদান কর না’।
▼( ছহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৬১০, পৃঃ ২০৯; সিলসিলা ছহীহা, হা/৮২-৮৩ সনদ ছহীহ)
-
★ সম্মানিত পাঠকগণ! আলোচ্য অধ্যায়ে হাত তুলে দু‘আ করার প্রমাণে অনেকগুলো হাদীস পেশ করা হল, যদ্দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাত তুলে দু‘আ করার বিধান শরী‘আতে রয়েছে।
-
★ উক্ত হাদীসগুলোতে এককভাবে হাত তুলে দু‘আ করার কথা এসেছে। শুধু প্রথম হাদীসটিতে সম্মিলিতভাবে হাত তুলার কথা এসেছে যা ইসতিস্ক্বা বা পানি চাওয়া সংক্রান্ত। ইসতিসক্বা বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত যাতে সম্মিলিতভাবে দু‘আ করার কথা আছে। তাই এ দু‘আ করতে গিয়ে রসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিয়ম-পদ্ধতির এক চুলও ব্যতিক্রম করা যাবে না যে ক্ষেত্রে যেভাবে দু‘আ করার কথা সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে সেভাবেই দু‘আ করতে হবে। কেননা দু‘আও ইবাদতেরই অংশ বিশেষ। অতএব এর ব্যতিক্রম ঘটলে তা বিদ‘আতে পরিণত হবে।
▼( বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭ ‘ঈমান’ অধ্যায়)

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ