Monday, March 19, 2018

সরাসরি কিংবা টেলিভিশনে খেলা দেখা : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

সরাসরি কিংবা টেলিভিশনে খেলা দেখা : ইসলামী দৃষ্টিকোণ
----------------------------------------------------
খেলাধুলা ইসলামে বৈধ বিষয়সমূহের একটি । রাসূলুল্লাহ (স:) নিজেও তার স্ত্রী আয়িশা (রা:)এর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ্রহণ করেছেন।রাসূল( স:) প্রিয় স্ত্রী আয়িশা (রা:) কে নিজের পেছনে দাঁড় করিয়ে ঈদের দিনে কৃষ্ণকায় সৈনিকদের রণকৌশল প্রদর্শনী দেখিয়েছিলেন । রাসূলের কাঁধে মাথা রেখে মা আয়িশা (রাঃ) সৈনিকদের প্রদর্শনী উপভোগ করেছেন ।
ইসলাম প্রতিটি কাজ নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্যকে পূজি করে আঞ্জাম দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছে। সেই উদ্দ্যেশ্যের ভিত্তিতেই কর্মের ফলাফল নির্ধারণ হবে। প্রিয় সাহাবী মুয়ায ইবনু জাবাল বলতেন,

(أما أنا فأنام وأقوم فأحتسب نومتي كما أحتسب قومتي)
আমি রাতে ঘুমাতেও যাই আবার দাঁড়িয়ে সলাতও আদায় করি,আমি আমার দাঁড়িয়ে সলাত আদায়ের ব্যাপারে যেরূপ সওয়াবের আশা করি, আমার ঘুমের সময়টাতেও সওয়াবের আশা রাখি। (বুখারি-৪০৮৮)
তাই মুমিন ব্যক্তি তার যাবতীয় কর্মকাণ্ডে সওয়াবের প্রত্যাশী হবে এটাই ঈমানের দাবী। কুরআন-সুন্নাহর পাতায় পাতায় এই ব্যাপারে গুরুত্বারুপ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে সাহাবায়ে কিরাম শরীর চর্চা করতেন, খেলা-ধুলায় অংশগ্রহণ করতেন। নানান সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতাও হতো তাদের মাঝে। তবে এ সকল অনুশীলনের একটা নিগুঢ় উদ্দেশ্য ছিল। ইসলামের শত্রুদের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টিভঙ্গি রেখে সামার্থানুযায়ী তাদের মোকাবিলার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতির অংশ ছিল তাদের খেলা-ধুলা, শরীর চর্চা ও যাবতীয় অনুশীলন।
বর্তমান এই সভ্য যুগের মানুষেরা শরীর চর্চার মত বিষয়টিকে বানিজ্যিক পণ্যে পরিণত করেছে। এই অনুশীলন হারিয়েছে তার মৌলিকত্ব। স্বভাবতই কোন জিনিস তার স্বকীয়তা হারালে হাজারো আগাছা-পরগাছা সেই স্থানে নিজেদের অস্তিত্ব খোঁজে ফিরে। খেলাধুলার বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম নয়। যখন প্রকৃত উদ্দেশ্য গায়েব হলো তখন খেলোয়ার হয়ে গেল পণ্য, খেলার মাঠ হয়ে গেল ফিতনার আখড়া, মানুষেরা এই খেলাকে পুজি করে জুয়ার আসর বসাল।
উদ্দেশ্যগত দিক থেকে শরীর চর্চায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অনুমোদন বা বৈধতা দেয়ার বিষয়টি বর্তমান সময়ের এই বানিজ্যিক খেলাধুলাতেও প্রযোজ্য কিনা সেটা দেখার বিষয়। প্রথমত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবায়ে কিরামের যুগে শরীর চর্চার যেই উদ্দেশ্য ছিল তা অধুনা এই বানিজ্যিক খেলাধুলায় পুরোপুরি অনুপস্থিত। দ্বিতীয়ত, হারাম দুই ভাবে নির্ণীত হয়ে থাকে। একটি হলো যা মৌলিক ভাবেই হারাম । কোন প্রক্রিয়াতেই আর সেটার বৈধতার সুযোগ নাই। ধরুন, শোকরের গোশত খাওয়ার বিষয়টি মৌলিকভাবেই নিষিদ্ধে। যতই প্রক্রিয়াজাত করা হোক না কেন, সেটা কখনোই আর হালাল হবার নয় । পক্ষান্তরে গরুর গোশত খাওয়া হালাল। কিন্তু কেউ যদি চুরি করে গরু এনে যবেহ করে তবে তার জন্য এই গোশত হারাম। মৌলিকভাবে গরুর গোশত হালাল হলেও চুরির মত এই জঘন্য পাপ এটাকে তার জন্য হারাম করেছে। অর্থাৎ, এটাকে আমরা অর্জিত হারাম বলতে পারি।
স্বাভাবিকভাবে শরীর সুস্থ রাখা, শারীরিক সক্ষমতা বাড়িয়ে নিজেকে একজন যোগ্য সত্য পথের সৈনিক হিসেবে প্রস্তুত করার নিমিত্ত শরীর চর্যা মৌলিকভাবে বৈধ। কিন্তু বর্তমান যুগে বানিজ্যিক খেলার আসরে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, অশ্লীলতার ছড়াছড়ি, কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপনের বাহার,জুয়ার আসর , সময়ের অপচয়, ইবাদাতে অমনোযোগিতাসহ অগণিত হারামকে পুজি করে যা প্রদর্শিত হচ্ছে তা অর্জিত হারামে রুপ নিয়েছে।
আফসোসের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে চরম মাত্রার সচেতন ব্যক্তিও আজ এই অমূলক কাজকে নিজের আত্মার খোরাক বানিয়ে নিয়েছে। অথচ মনে রাখা উচিত, মানব জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত লিপিবদ্ধ করার জন্য সম্মানিত ফিরিস্তাগণ দায়িত্বরত আছেন। দুই-তিন ঘন্টা সময় যা খেলা দেখায় ব্যয় হচ্ছে তা হিসেবের আওতার বাইরে নয়। অবশ্যই সবটুকু সময়ই লেখা হচ্ছে। হয় সেটা ডান দিকের জন্য তথা জান্নাত লাভের উসিলা হিসেবে লেখা হচ্ছে, নয়তো বাম দিকে জাহান্নামে প্রবেশের উসিলা হিসেবে লেখা হচ্ছে। শত চিন্তা-ফিকির করে এই গুরুত্বপূর্ণ সময় ডান দিকেই লেখা হচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলার কি কোন উপায় আছে? বরং বহু কারণ উপস্থাপন করে বলে দেয়া যাবে তা নিশ্চিতভাবে বাম দিকেই লেখা হচ্ছে। তবে কি আমরা আমাদের আখিরাত বিনির্মানে মূর্খের পরিচয় দিচ্ছি?
সালাহউদ্দীন আহমাদ
উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়,
মাক্কা আল মুকাররমাহ, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ