Thursday, October 26, 2017

খুবই গুরুত্বপূর্ণ ওযুর আনুষঙ্গিক মাসায়েল এবং ওযুর ফজিলত।

ওযুর আনুষঙ্গিক মাসায়েল


ওযুর অঙ্গগুলোকে কমপক্ষে ১ বার করে ধোয়া জরুরী। ২ বার করে ধুলেও চলে। তবে ৩ বার করে ধোয়াই উত্তম। এরই উপরে আল্লাহর রসূল (সাঃ) তথা সাহাবায়ে কেরামের আমল বেশী। কিন্তু তিনবারের অধিক ধোয়া অতিরঞ্জন, বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন করা। (আবূদাঊদসুনাননাসাঈসুনানইবনে মাজাহ্‌সুনানমিশকাত ৪১৭-৪১৮ নং)
ওযুর কোন অঙ্গ ২ বার এবং কোন অঙ্গ ৩ বার ধোয়া দূষণীয় নয়। (সহীহ, আবূদাঊদ, সুনান ১০৯সহীহ, তিরমিযী, সুনান ৪৩নং)
জোড়া অঙ্গগুলির ডান অঙ্গকে আগে ধোয়া রসূল (সাঃ) এর নির্দেশ। (আহমাদ, মুসনাদআবূ দাঊদ, সুনানইবনে মাজাহ্‌, সুনানমিশকাত ৪০১নং) তিনি
ওযু, গোসল, মাথা আঁচড়ানো, জুতো পরা প্রভৃতি সকল কাজের সময় ডান থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। (বুখারীমুসলিম মিশকাত ৪০০নং)
ওযুর অঙ্গগুলো -বিশেষ করে হাত ও পা- রগড়ে ধোয়া উত্তম। রসূল (সাঃ) এর এরুপই আমল ছিল। (নাসাঈ, সুনান ৭২মিশকাত ৪০৭নং)
অঙ্গসমূহ এমনভাবে ধুতে হবে যাতে কোন সামান্য জায়গাও শুকনো থেকে না যায়। ওযুর অঙ্গে কোন প্রকার পানিরোধক বস্তু (যেমন পেন্ট, চুন, কুমকুম, অলঙ্কার, ঘড়ি, টিপ ইত্যাদি) থাকলে তা অবশ্যই দূর করে নিতে হবে। যেহেতু আল্লাহর নবী (সাঃ) একদা কতক লোকের শুষ্ক গোড়ালি দেখে বলেছিলেন, “গোড়ালিগুলোর জন্য দোযখে ধ্বংস ও সর্বনাশ রয়েছে! তোমরা ভালরুপে (সকল অঙ্গকে সম্পূর্ণরুপে) ধুয়ে ওযু কর।” (মুসলিম মিশকাত ৩৯৮নং)
এক ব্যক্তি ওযু করার পর মহানবী (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলে দেখলেন, তার দুই পায়ে নখ পরিমাণ জায়গা শুষ্ক রয়েছে। তিনি তাকে বললেন, “তুমি ফিরে গিয়ে ভালরুপে ওযু করে এস।” (আবূদাঊদ, সুনান ১৫৮নং)
এক ব্যক্তিকে তিনি দেখলেন নামায পড়ছে, আর তার এক পায়ের পিঠে এক দিরহাম বরাবর স্থান শুষ্ক রয়েছে, যাতে সে পানিই পৌঁছায়নি। তিনি তাকে পুনরায় ওযু করে নতুনভাবে নামায পড়তে আদেশ দিলেন। (আবূদাঊদ, সুনান ১৬১ নং)
ওযু করার সময় নিরবচ্ছিন্নভাবে একটানা অঙ্গগুলোকে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ধুতে হবে। মাঝে বিরতি দেওয়া বৈধ নয়। সুতরাং কেউ মাথা বা কান মাসাহ্‌ না করে ভুলে পা ধুয়ে ফেললে এবং সত্বর মনে পড়লে, সে মাসাহ্‌ করে পুনরায় পা ধোবে। বহু পরে মনে পড়লে পুনরায় নতুন করে ওযু করবে।
কেউ যদি ওযু শুরু করার পর কাপড়ে নাপাকী দেখে এবং তা সাফ করতে করতে পূর্বেকার ধৌত অঙ্গ শুকিয়ে যায়, তাহলে তাকে পুনঃ ওযু করতে হবে। পক্ষান্তরে যদি ওযু সম্পর্কিত কোন বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে নিরবচ্ছিন্নতা কেটে যায়, তবে তাতে কোন ক্ষতি হয় না। যেমন ওযু করতে করতে হাতে বা ওযুর কোন অঙ্গে পেন্ট বা নখণ্ডপালিশ বা চুন ছাড়াতে অথবা পানি শেষ হয়ে গেলে পুনরায় কুঁয়ো বা কল থেকে পানি তুলতে কিংবা ট্যাঙ্কের পাইপ খুলতে প্রভৃতি কারণে ওযুতে সামান্য বিরতি এসে পূর্বেকার ধোয়া অঙ্গ শুকিয়ে যায়, তাহলে পুনরায় নতুনভাবে শুরু করে ওযু করতে হবে না। যে অঙ্গ ধোয়া হয়েছিল তার পর থেকেই বাকী অঙ্গসমূহ ধুয়ে ওযু শেষ করা যাবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন /১৫৭)
ওযু করার সময় বাঁধানো দাঁত খোলা বা খেলাল করে দাঁতের ফাঁক থেকে লেগে থাকা খাদ্যাংশ বের করা জরুরী নয়। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন /২৮৩ফম/২১০)
একই পাত্র হতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে এক সাথে অথবা স্ত্রী আগে ও স্বামী পরে অথবা তার বিপরীতভাবে ওযু-গোসল করায় কোন ক্ষতি বা বাধা নেই। আল্লাহর রসূল (সাঃ) তথা সাহাবাগণ এরুপ আমল করেছেন। (বুখারীফতহুল বারী /৩৫৭-৩৫৮মুসলিম মিশকাত ৪৪০নং)
ঠান্ডার কারণে গরম পানিতে ওযু-গোসল করায় কোন বাধা নেই। হযরত উমার (রাঃ) এরুপ করতেন। (বুখারীফাতহুল বারী, ইবনে হাজার /৩৫৭-৩৫৮)
ওযু-গোসলের জন্য পরিমিত পানি ব্যবহার করা কর্তব্য। অধিক পানি খরচ করা অতিরঞ্জনের পর্যায়ভুক্ত; আর তা বৈধ নয়। (আহমাদ, মুসনাদ আবূদাঊদ, সুনানইবনে মাজাহ্‌, সুনানমিশকাত ৪১৮নং) মহানবী (সাঃ) ১ মুদ্দ্ (কম-বেশী ৬২৫ গ্রাম) পানিতে ওযু এবং ১ সা’ থেকে ৫ মুদ্দ্ (কম-বেশী ২৫০০ থেকে ৩১২৫ গ্রাম) পানিতে গোসল করতেন। (বুখারীমুসলিম মিশকাত ৪৩৯নং) সুতরাং যাঁরা ট্যাঙ্কের পানিতে ওযু-গোসল করেন, তাঁদেরকে সতর্ক হওয়া উচিৎ।
ওযুর ফরয অঙ্গ সম্পূর্ণ কাটা থাকলে তার বাকী অঙ্গ ধুতে বা মাসাহ্‌ করতে হয় না। যেমন একটি হাত গোটা বা কনুই পর্যন্ত অথবা একটি পা গোটা বা গাঁট পর্যন্ত কাটা থাকলে বাকী একটি হাত বা পা-ই ওযুর জন্য ধুতে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি /৩৯০)
ওযুর শেষে পাত্রের অবশিষ্ট পানি থেকে এক আঁজলা দাঁড়িয়ে পান করার কথা হাদীসে রয়েছে। (বুখারী ৫৬১৬তিরমিযী, সুনান ৪৪-৪৫নাসাঈ, সুনান৯৩নং)
ওযুর শেষে ওযুর পানি অঙ্গ থেকে কাপড় দিয়ে মুছে ফেলা দূষণীয় নয়। মহানবী (সাঃ) ওযুর পর নিজের জুব্বায় নিজের চেহারা মুছেছেন। (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৩৭৯নং) ওযূর পর পানি মুছার জন্য তাঁর একটি বস্ত্র খন্ড ছিল। (তিরমিযী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাকজামে ৪৮৩০নং)
ওযুর পর দুই রাকআত নামাযের বড় ফযীলত রয়েছে। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “যে কোন ব্যক্তি যখনই সুন্দরভাবে ওযু করে সবিনয়ে একাগ্রতার সাথে (কায়মনোবাক্যে) দুই রাকআত নামায পড়ে তক্ষণই তার জন্য জান্নাত অবধার্য হয়ে যায়।” (মুসলিম ২৩৪নংআবু দাঊদনাসাঈইবনে মাজাহ্‌)
তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করে, কোন ভুল না করে ( একাগ্রচিত্তে) দুই রাকআত নামায পড়ে সেই ব্যক্তির পূর্বেকার সমূদয় গুনাহ মাফ হয়ে যায়।” (আবু দাঊদসহীহ তারগীব ২২১নং)
ওযুর পরে নামায পড়ার ফলেই নবী (সাঃ) বেহেশ্তে তাঁর আগে আগে হযরত বিলালের জুতোর শব্দ শুনেছিলেন। (বুখারীমুসলিম সহিহ তারগিব ২১৯নং)
প্রিয় নবী (সাঃ) প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযু করতেন। তবে সাহাবাগণ না ভাঙ্গা পর্যন্ত একই ওযুতে কয়েক ওয়াক্তের নামায পড়তেন। (আহমাদ, মুসনাদবুখারী ২১৪ নংআবূদাঊদ, সুনানতিরমিযী, সুনাননাসাঈ, সুনানদারেমী, সুনানমিশকাত ৪২৫নং)
অবশ্য মক্কা বিজয়ের দিন নবী (সাঃ) এক ওযুতেই পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়েছিলেন। (মুসলিম, সহীহ ২৭৭আবূদাঊদ, সুনান ১৭২ইবনে মাজাহ্‌, সুনান৫১০নং)
সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা এবং ওযু ভাঙ্গলে সাথে সাথে ওযু করে নেওয়ার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমরা (প্রত্যেক বিষয়ে) কর্তব্যনিষ্ঠ রহ্‌; আর তাতে কখনই  সক্ষম হবে না। জেনে রেখো, তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল নামায। আর মুমিন ব্যতীত কেউই ওযুর হিফাযত করবে না।” (ইবনে মাজাহ্‌,হাকেমসহীহ তারগীব ১৯০নং)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদাহ্‌  তাঁর পিতার নিকট হতে বর্ণনা করে বলেন, একদা প্রভাতকালে আল্লাহর রসূল (সাঃ) হযরত বিলালকে ডেকে বললেন, “হে বিলাল! কি এমন কাজ করে তুমি জান্নাতে আমার আগে চলে গেলে? আমি গত রাত্রে (স্বপ্নে) জান্নাতে প্রবেশ করলে তোমার (জুতার) শব্দ আমার সামনে থেকে শুনতে পেলাম!” বিলাল বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি যখনই আযান দিয়েছি তখনই দুই রাকআত নামায পড়েছি। আর যখনই আমি অপবিত্র হয়েছি তখনই আমি সাথে সাথে ওযু করে নিয়েছি।’ এ শুনে আল্লাহর রসূল (সাঃ) বললেন, “এই কাজের জন্যই। (জান্নাতে আমার আগে আগে তোমার শব্দ শুনলাম।)” (ইবনে খুযাইমাহ্‌সহীহ তারগীব ১৯৪নং)

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ