Thursday, October 26, 2017

যেসব কাজ করলে বা যাতে ওযু নষ্ট বা ভঙ্গ হয়।

যাতে ওযু নষ্ট হয় না


১। নারীদেহ্‌ স্পর্শ করলে ওযু ভাঙ্গে না। কারণ, মহানবী (সাঃ) রাত্রে নামায পড়তেন, আর মা আয়েশা (রাঃ) তাঁর সম্মুখে পা মেলে শুয়ে থাকতেন। যখন তিনি সিজদায় যেতেন, তখন তাঁর পায়ে স্পর্শ করে পা সরিয়ে নিতে বলতেন। এতে তিনি নিজের পা দু’টিকে গুটিয়ে নিতেন। (বুখারী ৫১৩মুসলিম, সহীহ৫১২নং)
তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ)কে চুম্বন দিতেন। তারপর ওযু না করে নামায পড়তে বেরিয়ে যেতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ১৭৮-১৭৯ নংআহমাদ, মুসনাদ/২১০দি৮৬নাসাঈ, সুনান ১৭০ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৫০২নংদারাক্বুত্বনী, সুনান /১৩৮বায়হাকী /১২৫)
অবশ্য স্পর্শ বা চুম্বনে মযী বের হলে
তা ধুয়ে ওযু জরুরী। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন১/২৮৫-২৮৬)
২। হো-হো করে হাসলে; এ প্রসঙ্গের হাদীসটি দলীলের যোগ্য নয়। তাই হাসলে ওযু ভাঙ্গে না। (ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু /৫০-৫১বুখারীফাতহুল বারী, ইবনে হাজার /৩৩৬)
৩। বমি করলে; একদা নবী (সাঃ) বমি করলে রোযা ভেঙ্গে ফেললেন। তারপর তিনি ওযু করলেন (আহমাদ, মুসনাদ /৪৪৯তিরমিযী, সুনান) এই হাদীসে তাঁর কর্মের পরস্পর অবস্থা বর্ণিত হয়েছে।  বমি করলেন বলে ওযু ভেঙ্গে গিয়েছিল, তাই তিনি ওযু করেছিলেন -তা প্রমাণ হয় না। (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী /১৪৮আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন /২২৪-২২৫)
৪। গাঁটের নিচে কাপড় ঝুলালে; গাঁটের নিচে কাপড় ঝুলানো কাবীরা গুনাহ। কিয়ামতে আল্লাহ সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়েও দেখবেন না, যে ব্যক্তি তার পরনের কাপড় পায়ের গাঁটের নিচে পর্যন্ত ঝুলিয়ে পরে। (বুখারী ৫৭৮৪মুসলিম, সহীহ ২০৮৫নং) কিন্তু এর ফলে ওযু ভাঙ্গে না। এক ব্যক্তি ঐরুপ কাপড় ঝুলিয়ে নামায পড়লে মহানবী (সাঃ) তাকে পুনরায় ওযু করে নামায পড়তে হুকুম দিয়েছিলেন বলে যে হাদীস আবূ দাঊদে বর্ণিত হয়েছে, তা যয়ীফ এবং দলীলের যোগ্য নয়। (যয়ীফ আবূদাঊদ, সুনান ১২৪৮৮৪নং)
৫। নাক থেকে রক্ত পড়লে; এতে ওযু নষ্ট হয় বলে হাদীস ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে, তা যয়ীফ। (যয়ীফ ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ২৫২যয়ীফ জামে৫৪২৬নং)
৬। দেহের কোন অঙ্গ কেটে রক্ত পড়লে, দাঁত থেকে রক্ত ঝরলে, তীরবিদ্ধ হয়ে রক্ত পড়লে; যা-তুর রিকা’ যুদ্ধে নবী (সাঃ) উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এক ব্যক্তি তীরবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত হলেও সে রুকু সিজদা করে নামায সম্পন্ন করেছিল। হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন, মুসলিমরা এ যাবৎ তাদের রক্তাক্ত ক্ষত নিয়েই নামায পড়ে আসছে। হযরত ইবনে উমার (রাঃ) একটি ফুসকুরি গেলে দিলে তা থেকে রক্ত বের হল। কিন্তু তিনি ওযু করলেন না। ইবনে আবী আওফা রক্তমাখা থুথু ফেললেন। অতঃপর তিনি তাঁর নামায সম্পন্ন করলেন। ইবনে উমার ওহাসান বলেন, কেউ শৃঙ্গ লাগিয়ে বদ-রক্ত বের করলে কেবল ঐ জায়গাটা ধুয়ে নেবে। এ ছাড়া ওযু-গোসল নেই। (বুখারী ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার /৩৩৬)
পূর্বোক্ত তীরবিদ্ধ লোকটি ছিল একজন আনসারী। তার সঙ্গী এক মুহাজেরী তার রক্তাক্ত অবস্থা দেখে বলল, ‘সুবহানাল্লাহ্‌! (তিন তিনটে তীর মেরেছে?!) প্রথম তীর মারলে তুমি আমাকে জাগিয়ে দাওনি কেন?’ আনসারী বলল, ‘আমি এমন একটি সূরা পাঠ করছিলাম, যা সম্পূর্ণ না করে ছেড়ে দিতে পছন্দ করিনি!’ (আবূদাঊদ, সুনান ১৯৮নং)
৭। মুর্দা গোসল দিলে; মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি মুর্দা কে গোসল দেবে, সে যেন নিজে গোসল করে নেয়। আর যে ব্যক্তি জানাযা বহন করবে, সে যেন ওযু করে নেয়।” (আবূদাঊদ, সুনানতিরমিযী, সুনানআহমাদ, মুসনাদ /২৮০ প্রভৃতি) কিন্তু এই নির্দেশটি মুস্তাহাব। অর্থাৎ না করলেও চলে। তবে করা উত্তম। কারণ, গোসলদাতার দেহে নাপাকী লেগে যাওয়ার সন্দেহ্‌ থাকে তাই। তাই তো অন্য এক বর্ণনায় আছে; তিনি বলেন, “মুর্দাকে গোসল দিলে তোমাদের জন্য গোসল করা জরুরী নয়। কারণ তোমাদের মুর্দা তো আর নাপাক নয়। অতএব তোমাদের হাত ধুয়ে নেওয়াই যথেষ্ট।” (হাকেম, মুস্তাদরাক/৩৮৬বায়হাকী /৩৯৮)
হযরত উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমরা মাইয়্যেতকে গোসল দিতাম। তাতে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ গোসল করে নিত। আবার অনেকে করত না।’ (দারাক্বুত্বনী, সুনান ১৯১নং)
অবশ্য মাইয়্যেতকে গোসল দেওয়ার সময় তার শরমগাহে হাত লেগে থাকলে ওযু অবশ্যই নষ্ট হবে। আর জানাযা বহন করাতে ওযু নষ্ট হয় না। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ২৬/৯৬)
৮। মৃতদেহের পোষ্টমর্টেম করাতেও ওযু ভাঙ্গে না। ( ২৭/৪০)
৯। ওযু করে মায়েরা যদি তাদের শিশুর পেশাব বা পায়খানা সাফ করে, তবে তা হাতে লাগলেও ওযু ভাঙ্গে না। অবশ্য পায়খানাদ্বার বা পেশাবদ্বার ধোয়ার সময় কোন দ্বারে হাত লাগলে ওযু নষ্ট হয়ে যায় ( ২২/৬২)
১০। কোনও নাপাক বস্তু (মানুষ বা পশুর পেশাব, পায়খানা, রক্ত প্রভৃতি)তে হাত বা পা দিলে ওযু ভাঙ্গে না ( ৩৫/৯৬)
১১। ওযু করার পর ধূমপান করলে ওযু নষ্ট হয় না। তবে ধূমপান করা অবশ্যই হারাম। ( ১৮/৯২-৯৩)
১২। কোলন, কোহল বা স্পিরিট-মিশ্রিত আতর বা সেন্টব্যবহার করলে ওযুর কোন ক্ষতি হয় না। তবে তা ব্যবহার বৈধ নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি /২০৩)
১৩। চুল, নখ ইত্যাদি সাফ করলে ওযু ভাঙ্গে না। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন /২৯২বুখারী /৩৩৬) তদনুরুপ অশ্লীল কথা বললে, হাঁটুর উপর কাপড় উঠে এলে, মহিলার মাথা খোলা গেলে, কাউকে বা নিজেকে উলঙ্গ দেখলে ওযু নষ্ট হয় না।
দুধ পান করলে নামাযের পূর্বে কুল্লি করা মুস্তাহাব। (বুখারী ২১১মুসলিম, সহীহ ৩৫৮নং)

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ