সঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ বকর আবু যায়েদ'র বক্তব্য
তিনি
বায়‘আত সম্পর্কে বলেন, ‘আহলুল হাল্ ওয়াল আক্বদ’([1]) কর্তৃক মনোনীত মুসলিম
সরকারের বায়‘আত ছাড়া ইসলামে দ্বিতীয় কোনো বায়‘আত নেই। আজ বিভিন্ন
ধর্মভিত্তিক দলে যেসব বায়‘আত দেখা যাচ্ছে, সেগুলোর শর‘ঈ কোনো ভিত্তি নেই।
কুরআন ও হাদীছে এগুলির ভিত্তি থাকা তো দূরের কথা, এমনকি কোনো ছাহাবী বা
তাবে‘ঈর আমল থেকেও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ মিলে না। সুতরাং এগুলির সবই
বিদ‘আতী বায়‘আত আর প্রত্যেকটি বিদ‘আতই পথভ্রষ্ট।
যেসব বায়‘আতের শর‘ঈ কোনো ভিত্তি নেই,
সেগুলো ভঙ্গ করলে কোনো দোষ নেই; বরং
সেসব বায়‘আত সম্পন্ন হলেই পাপ হবে।
কেননা এসব বায়‘আতের একদিকে যেমন শর‘ঈ কোনো ভিত্তি নেই, অন্যদিকে তেমনি
সেগুলোর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যে বিভক্তি ও দলাদলির সৃষ্টি হয় এবং
তাদের মধ্যে ফেৎনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ে। উপরন্তু একজনকে আরেক জনের উপর ক্ষেপিয়ে
তোলা হয়। অতএব, বায়‘আত, শপথ, চুক্তি বা অন্য যে নামই দেওয়া হোক না কেন এসব
বায়‘আত শরী‘আতের গণ্ডির বাইরে।([2])
তিনি অন্যত্র বলেন, দল বাড়তে বাড়তে এমন
অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, একই দেশে অনেকগুলি দল পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলির
অন্তরালে রয়েছে অসংখ্য বায়‘আত, চুক্তি আর শপথ। প্রত্যেকটি দল অন্যদের
তোয়াক্কা না করে তার নিজস্ব মতবাদের দিকে আহ্বান করছে। সে কারণে তাদের
মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষিত মুসলিম জামা‘আতের শাশ্বত
মূলনীতি ‘আমি এবং আমার ছাহাবীরা যে পথে আছে’ বিনষ্ট হচ্ছে। এভাবে মুসলিম
উম্মাহ আজ বিভিন্ন বায়‘আতের খপ্পরে পড়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
যুবকেরা আজ গোলক-ধাঁধায় পড়ে যাচ্ছে যে, কোন্ দলে তারা যোগ দিবে, কোন্
সংগঠন প্রধানের হাতেইবা বায়‘আত করবে?! কারণ বায়‘আত এমন শপথ ও অঙ্গীকার, যা
‘অলা ও বারা’ অর্থাৎ শত্রুতা ও মিত্রতা পোষণ অবধারিত করে।([3])
তিনি অন্যত্র বলেন, ইসলামে কোনো প্রকার
যোজন বা বিয়োজন ঘটিয়ে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো নামে বা রসম-রেওয়াজে
মৈত্রীচুক্তি সম্পাদন করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে নির্দিষ্ট কোনো দলের অধীনে
থেকে অন্যদেরকে বাদ দিয়ে কিছু সংখ্যক মানুষের সাথে মিত্রতা গড়ে তোলাও বৈধ
নয়। সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো পদ্ধতিতে
‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’([4])-এর সাথে থাকতে হবে। অতএব, আল্লাহ্র কিছু
নির্দেশনা বাদ দিয়ে কিছু নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কোনো দল
প্রতিষ্ঠিত হলে, অন্যদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিজ দলের সমর্থকদের সাথে
মিত্রতা পোষণের মূলনীতির উপর ভিত্তি করে কোনো দল প্রতিষ্ঠিত হলে, কোনো
দেশের অধিবাসীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মূলনীতি তথা
আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় তাদের
সম্পূর্ণ বা আংশিক বিরোধিতায় ভিন্ন কোনো নামে কোনো দল গড়ে উঠলে এগুলি হারাম
বলে বিবেচিত হবে।([5])
আল্লামা বকর আবু যায়েদ দলাদলির অনেকগুলি লক্ষণ এবং ক্ষতির দিক উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর কয়েকটি নীচে তুলে ধরা হলোঃ
- বিভিন্ন ইসলামী দলকে বাহ্যতঃ দা‘ওয়াতী সুসংগঠিত মাধ্যম মনে হলেও বেশীর ক্ষেত্রে সেগুলো মুসলিম উম্মাহ্র দেহে অদ্ভূত এক আকৃতিতে পরিণত হয়েছে। তাদের সবার ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে, রয়েছে দ্বীনী কার্যক্রমের নির্দিষ্ট কেন্দ্র, যেসব কেন্দ্র অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফৎওয়া জারী করছে। অন্যদিকে এসব দল কখনো কখনো ব্যক্তিগত ক্ষমতা জোরদারেরও চেষ্টা করছে। এছাড়া সম্পদ সংগ্রহ এবং বিভিন্ন ক্ষমতার মসনদ দখলের বিষয়টিতো রয়েছেই।
- দলাদলি করলে ইসলামকে নির্দিষ্ট একটি পরিমণ্ডলে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে দলের লোকজন শুধুমাত্র দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতেই ইসলামকে দেখে। আর যে কোনো দল নির্দিষ্ট ব্যক্তি, নির্দিষ্ট নেতৃত্ব এবং নির্দিষ্ট মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেকারণে যে কোনো দল সাধারণত নবুঅতী আলোর খুব সামান্য পরিমাণই ধারণ করে থাকে।
- যে কোনো দল নিজেকে নির্দিষ্ট কোড, সংকীর্ণ নাম ও উপনামের মধ্যে বন্দী করে ফেলে। ফলে সে নির্দিষ্ট প্রতীক নিয়ে সবার চেয়ে ব্যতিক্রম থাকতে চায়। সেকারণে সে নীচের আয়াতে কারীমায় বর্ণিত ব্যাপক অর্থ বোধক নাম থেকে বঞ্চিত হয় ﴿ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِين﴾ [الحج: ٧٨] ‘তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম’ (আল-হাজ্জ ৭৮)।
- দলাদলি দলের অভিমতের প্রতি আত্মসমর্পণের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উক্ত অভিমত প্রচার-প্রসারে ব্রতী হয়। পাশাপাশি দলাদলি দলের সমালোচনার পথ বন্ধ করে দেয়। এই কঠিন বাস্তবতা ইসলামী দা‘ওয়াতের পরিপন্থী।
- দলাদলিতে নেতৃত্ব দলীয় চিন্তা-চেতনা, কর্মপদ্ধতি এবং মূলনীতির উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। ফলে দলাদলি দলীয় লোকজনকে মূল লক্ষ্য দা‘ওয়াতী কার্যক্রমের সৈনিক না বানিয়ে নেতৃত্বের সৈনিক বানায়। সেকারণে দলাদলি ব্যক্তির সেবা করে, দা‘ওয়াতের নয়।
- বিভিন্ন দল আল্লাহ্র রাস্তায় দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বেড়ী পরে ফেলে। সেকারণে দ্বীনের দা‘ওয়াত দিতে গিয়ে দা‘ঈকে দলীয় কার্ড বহন করতে হয়। দলীয় কার্ড না থাকলে অন্ততঃ তাকে দলের সদস্য হতে হয়। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতি অনুযায়ী আল্লাহ্র পথের দা‘ঈ হওয়ার জন্য ইসলাম দা‘ঈকে দুই কালিমার সাক্ষ্য প্রদান এবং ইসলাম প্রচারকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। দলাদলির গণ্ডিতে প্রবেশের কোনো শর্তই ইসলাম আরোপ করেনি; বরং সকল দলাদলির ঊর্ধ্বে থাকতে বলা হয়েছে।
- দলাদলি মুসলিম উম্মাহ্র যুবকদের অন্তরে দলীয় চিন্তাধারা এবং আল্লাহ্র পথে দা‘ওয়াতের মধ্যকার সুদৃঢ় সম্পর্কের অবান্তর চিন্তার বীজ বপন করেছে। অর্থাৎ দল ছাড়া দা‘ওয়াতী কার্যক্রম সম্ভব নয় মর্মে একটি বিশ্বাস তাদের অন্তরে সৃষ্টি করেছে।
এক্ষণে একটি প্রশ্ন
রয়ে যায়, যার কোনো জবাব নেই; প্রশ্নটি হচ্ছে, একজন মুসলিম কোন্ দলে যোগ
দিবে? এখানে আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রদর্শিত তরীকায় এবং ইসলামের ব্যাপক অর্থ বোধক পদ্ধতিতে আল্লাহ্র পথে
দা‘ওয়াত দেওয়া কি বেশী ভাল নাকি দলীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ থেকে দলের বিশেষ
দৃষ্টিভঙ্গিতে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করা বেশী উত্তম?([6])
ফুটনোটঃশায়খের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ শায়খ বকর আবু যায়েদ
১৩৬৫ হিজরীতে নাজদ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। রিয়াদ, মক্কা ও মদীনায় তিনি
শিক্ষা অর্জন করেন। তাঁর শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে শায়খ ইবনে বায, শায়খ
মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীতী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি মদীনার
উচ্চ বিচারালয়ের বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং মসজিদে নববীর শিক্ষক, ইমাম ও
খত্বীবের দায়িত্ব পান। ১৪১২ হিজরীতে সঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদ এবং ফৎওয়া
বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন মুহাদ্দিছ ও ফক্বীহ,
অন্যদিকে আরবী ভাষা ও সাহিত্যে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি ষাটেরও অধিক
অতিমূল্যবান গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ১.
ফিক্বহুল ক্বযাইয়া আল-মু‘আছেরাহ, ২. ফাতওয়াস্-সায়েল আন মুহিম্মাতিল
মাসায়েল, ৩. আত-তা‘ছীল লিউছূলিত-তাখরীজি ওয়া ক্বওয়া‘ইদিল জারহি
ওয়াত-তা‘দীল, ৪. হুকমুল ইনতিমা ইলাল ফিরাক্ব ওয়াল আহযাব ওয়াল জামা‘আত
আল-ইসলামিইয়াহ, ৫. আর-রুদূদ ইত্যাদি।
============================
([1]) ‘আহলুল হাল্ ওয়াল আক্বদ’ পরিভাষাটি তিন শ্রেণীর মানুষকে শামিল করেঃ
উলামায়ে কেরাম, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং সমাজের গণ্যমান্য ও বিশিষ্ট
ব্যক্তিবর্গ (আব্দুল্লাহ ইবরাহীম, আহলুল হাল্লি ওয়াল-আক্বদ: ছিফাতুহুম ওয়া
ওয়াযায়েফুহুম, পৃ: ১৬৪)।
([2]) আব্দুল্লাহ আত-তামীমী, মুহাযযাবু হুকমিল ইনতিমা ইলাল ফিরাক্ব ওয়াল
আহযাব ওয়াল জামা‘আত আল-ইসলামিইয়াহ, পৃ: ৯৭ (মূল গ্রন্থটি শায়খ বকর আবূ
যায়েদের)।
([3]) প্রাগুক্ত, পৃ: ৯৬।
([4]) এখানে ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ বলতে ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ নামধারী
ভুঁইফোড় সংকীর্ণ কোন সংগঠনের কথা বুঝানো হয়নি। বরং ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন
এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদের পথের যথাযথ অনুসারীদেরকে বুঝানো হয়েছে
(ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ,
১/২৭৮)।
([5]) প্রাগুক্ত, পৃ: ৪০-৪১।
([6]) প্রাগুক্ত, পৃ: ৮০-৮৭।
তিনি
বায়‘আত সম্পর্কে বলেন, ‘আহলুল হাল্ ওয়াল আক্বদ’([1]) কর্তৃক মনোনীত মুসলিম
সরকারের বায়‘আত ছাড়া ইসলামে দ্বিতীয় কোনো বায়‘আত নেই। আজ বিভিন্ন
ধর্মভিত্তিক দলে যেসব বায়‘আত দেখা যাচ্ছে, সেগুলোর শর‘ঈ কোনো ভিত্তি নেই।
কুরআন ও হাদীছে এগুলির ভিত্তি থাকা তো দূরের কথা, এমনকি কোনো ছাহাবী বা
তাবে‘ঈর আমল থেকেও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ মিলে না। সুতরাং এগুলির সবই
বিদ‘আতী বায়‘আত আর প্রত্যেকটি বিদ‘আতই পথভ্রষ্ট।
যেসব বায়‘আতের শর‘ঈ কোনো ভিত্তি নেই,
সেগুলো ভঙ্গ করলে কোনো দোষ নেই; বরং সেসব বায়‘আত সম্পন্ন হলেই পাপ হবে।
কেননা এসব বায়‘আতের একদিকে যেমন শর‘ঈ কোনো ভিত্তি নেই, অন্যদিকে তেমনি
সেগুলোর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যে বিভক্তি ও দলাদলির সৃষ্টি হয় এবং
তাদের মধ্যে ফেৎনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ে। উপরন্তু একজনকে আরেক জনের উপর ক্ষেপিয়ে
তোলা হয়। অতএব, বায়‘আত, শপথ, চুক্তি বা অন্য যে নামই দেওয়া হোক না কেন এসব
বায়‘আত শরী‘আতের গণ্ডির বাইরে।([2])
তিনি অন্যত্র বলেন, দল বাড়তে বাড়তে এমন
অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, একই দেশে অনেকগুলি দল পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলির
অন্তরালে রয়েছে অসংখ্য বায়‘আত, চুক্তি আর শপথ। প্রত্যেকটি দল অন্যদের
তোয়াক্কা না করে তার নিজস্ব মতবাদের দিকে আহ্বান করছে। সে কারণে তাদের
মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষিত মুসলিম জামা‘আতের শাশ্বত
মূলনীতি ‘আমি এবং আমার ছাহাবীরা যে পথে আছে’ বিনষ্ট হচ্ছে। এভাবে মুসলিম
উম্মাহ আজ বিভিন্ন বায়‘আতের খপ্পরে পড়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
যুবকেরা আজ গোলক-ধাঁধায় পড়ে যাচ্ছে যে, কোন্ দলে তারা যোগ দিবে, কোন্
সংগঠন প্রধানের হাতেইবা বায়‘আত করবে?! কারণ বায়‘আত এমন শপথ ও অঙ্গীকার, যা
‘অলা ও বারা’ অর্থাৎ শত্রুতা ও মিত্রতা পোষণ অবধারিত করে।([3])
তিনি অন্যত্র বলেন, ইসলামে কোনো প্রকার
যোজন বা বিয়োজন ঘটিয়ে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো নামে বা রসম-রেওয়াজে
মৈত্রীচুক্তি সম্পাদন করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে নির্দিষ্ট কোনো দলের অধীনে
থেকে অন্যদেরকে বাদ দিয়ে কিছু সংখ্যক মানুষের সাথে মিত্রতা গড়ে তোলাও বৈধ
নয়। সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো পদ্ধতিতে
‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’([4])-এর সাথে থাকতে হবে। অতএব, আল্লাহ্র কিছু
নির্দেশনা বাদ দিয়ে কিছু নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কোনো দল
প্রতিষ্ঠিত হলে, অন্যদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিজ দলের সমর্থকদের সাথে
মিত্রতা পোষণের মূলনীতির উপর ভিত্তি করে কোনো দল প্রতিষ্ঠিত হলে, কোনো
দেশের অধিবাসীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মূলনীতি তথা
আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় তাদের
সম্পূর্ণ বা আংশিক বিরোধিতায় ভিন্ন কোনো নামে কোনো দল গড়ে উঠলে এগুলি হারাম
বলে বিবেচিত হবে।([5])
আল্লামা বকর আবু যায়েদ দলাদলির অনেকগুলি লক্ষণ এবং ক্ষতির দিক উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর কয়েকটি নীচে তুলে ধরা হলোঃ
- বিভিন্ন ইসলামী দলকে বাহ্যতঃ দা‘ওয়াতী সুসংগঠিত মাধ্যম মনে হলেও বেশীর ক্ষেত্রে সেগুলো মুসলিম উম্মাহ্র দেহে অদ্ভূত এক আকৃতিতে পরিণত হয়েছে। তাদের সবার ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে, রয়েছে দ্বীনী কার্যক্রমের নির্দিষ্ট কেন্দ্র, যেসব কেন্দ্র অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফৎওয়া জারী করছে। অন্যদিকে এসব দল কখনো কখনো ব্যক্তিগত ক্ষমতা জোরদারেরও চেষ্টা করছে। এছাড়া সম্পদ সংগ্রহ এবং বিভিন্ন ক্ষমতার মসনদ দখলের বিষয়টিতো রয়েছেই।
- দলাদলি করলে ইসলামকে নির্দিষ্ট একটি পরিমণ্ডলে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে দলের লোকজন শুধুমাত্র দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতেই ইসলামকে দেখে। আর যে কোনো দল নির্দিষ্ট ব্যক্তি, নির্দিষ্ট নেতৃত্ব এবং নির্দিষ্ট মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেকারণে যে কোনো দল সাধারণত নবুঅতী আলোর খুব সামান্য পরিমাণই ধারণ করে থাকে।
- যে কোনো দল নিজেকে নির্দিষ্ট কোড, সংকীর্ণ নাম ও উপনামের মধ্যে বন্দী করে ফেলে। ফলে সে নির্দিষ্ট প্রতীক নিয়ে সবার চেয়ে ব্যতিক্রম থাকতে চায়। সেকারণে সে নীচের আয়াতে কারীমায় বর্ণিত ব্যাপক অর্থ বোধক নাম থেকে বঞ্চিত হয় ﴿ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِين﴾ [الحج: ٧٨] ‘তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম’ (আল-হাজ্জ ৭৮)।
- দলাদলি দলের অভিমতের প্রতি আত্মসমর্পণের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উক্ত অভিমত প্রচার-প্রসারে ব্রতী হয়। পাশাপাশি দলাদলি দলের সমালোচনার পথ বন্ধ করে দেয়। এই কঠিন বাস্তবতা ইসলামী দা‘ওয়াতের পরিপন্থী।
- দলাদলিতে নেতৃত্ব দলীয় চিন্তা-চেতনা, কর্মপদ্ধতি এবং মূলনীতির উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। ফলে দলাদলি দলীয় লোকজনকে মূল লক্ষ্য দা‘ওয়াতী কার্যক্রমের সৈনিক না বানিয়ে নেতৃত্বের সৈনিক বানায়। সেকারণে দলাদলি ব্যক্তির সেবা করে, দা‘ওয়াতের নয়।
- বিভিন্ন দল আল্লাহ্র রাস্তায় দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বেড়ী পরে ফেলে। সেকারণে দ্বীনের দা‘ওয়াত দিতে গিয়ে দা‘ঈকে দলীয় কার্ড বহন করতে হয়। দলীয় কার্ড না থাকলে অন্ততঃ তাকে দলের সদস্য হতে হয়। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতি অনুযায়ী আল্লাহ্র পথের দা‘ঈ হওয়ার জন্য ইসলাম দা‘ঈকে দুই কালিমার সাক্ষ্য প্রদান এবং ইসলাম প্রচারকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। দলাদলির গণ্ডিতে প্রবেশের কোনো শর্তই ইসলাম আরোপ করেনি; বরং সকল দলাদলির ঊর্ধ্বে থাকতে বলা হয়েছে।
- দলাদলি মুসলিম উম্মাহ্র যুবকদের অন্তরে দলীয় চিন্তাধারা এবং আল্লাহ্র পথে দা‘ওয়াতের মধ্যকার সুদৃঢ় সম্পর্কের অবান্তর চিন্তার বীজ বপন করেছে। অর্থাৎ দল ছাড়া দা‘ওয়াতী কার্যক্রম সম্ভব নয় মর্মে একটি বিশ্বাস তাদের অন্তরে সৃষ্টি করেছে।
এক্ষণে একটি প্রশ্ন
রয়ে যায়, যার কোনো জবাব নেই; প্রশ্নটি হচ্ছে, একজন মুসলিম কোন্ দলে যোগ
দিবে? এখানে আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রদর্শিত তরীকায় এবং ইসলামের ব্যাপক অর্থ বোধক পদ্ধতিতে আল্লাহ্র পথে
দা‘ওয়াত দেওয়া কি বেশী ভাল নাকি দলীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ থেকে দলের বিশেষ
দৃষ্টিভঙ্গিতে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করা বেশী উত্তম?([6])
No comments:
Post a Comment