রোগী দেখতে গিয়ে কি বলবেন?
রোগী
দেখতে গিয়ে তার সামনে এমন কথা বলবেন না, যা শুনে সে আতঙ্কিত হয়, ঘাবড়ে
যায়, তার রোগ বৃদ্ধি পায় অথবা তার মৃত্যু অনিবার্য মনে করে এবং মরণ আসার
পূর্বেই সে জীবনের হাল ছেড়ে বসে। বরং এমন কথা বলবেন, যাতে সে পীড়িত মনে
সান্ত্বনা পায়। শেষ অবস্থায় হলে মনের ভিতর যেন কোন প্রকার নিরাশা না আসে।
তাকে বলুন, ‘আপনি ভালো হয়ে যাবেন ইন শাআল্লাহ। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। এ রোগের জন্য চিন্তার কোন কারণ নেই। ---’ ইত্যাদি।
আর খবরদার তার নিকট বলবেন না, ‘এ রোগের
কোন ওষুধ নেই। এ রোগে মানুষ বাঁচে না। এ রোগ কঠিন রোগ। আপনি আর বাঁচবেন না।
আপনি আপনার বিষয়-সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে যান। ভালো-মন্দ যা খাবার খেয়ে
নিন।---’ ইত্যাদি।
আপনি ডাক্তার হয়ে যদি কোন উপসর্গ দেখে বুঝতে পারেন যে, সে আর বাঁচবে না,
তবুও তা গায়বী খবর। সে খবর কাউকে বলবেন না। সুনিশ্চিত হলে অনর্থক খরচের
হাত থেকে রোগীর আত্মীয়কে বাঁচাবার উদ্দেশ্যে সে খবর রোগীকে না বলে তার
আত্মীয়কেই বলুন, রোগীকে বলবেন না।রোগ তো হতেই পারে। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) খোদ কত রোগ ভুগেছেন। কিন্তু রোগে মুমিনের গোনাহ ঝরে, মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। এসব কথা তাকে স্মরণ করিয়ে দিন।
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘কোন
মু’মিনকে যখনই কোন রোগ অথবা অন্য কিছুর মাধ্যমে কষ্ট পৌঁছে, তখনই আল্লাহ
তার বিনিময়ে তার পাপরাশিকে ঝরিয়ে দেন; যেমন বৃক্ষ তার পত্রাবলীকে ঝরিয়ে
থাকে।’’[1]
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘সকল মানুষ অপেক্ষা
নবীগণই অধিকতর কঠিন বিপদের সম্মুখীন হন। অতঃপর তাঁদের চেয়ে নিম্নমানের
ব্যক্তি এবং তারপর তাদের চেয়ে নিম্নমানের ব্যক্তিগণ অপেক্ষাকৃত হাল্কা
বিপদে আক্রান্ত হন। মানুষকে তার দ্বীনের (পরিপূর্ণতার) পরিমাণ অনুযায়ী
বিপদগ্রস্ত করা হয়; সুতরাং তার দ্বীনে যদি মজবুতি থাকে তবে (যে পরিমাণ
মজবুতি আছে) ঠিক সেই পরিমাণ তার বিপদও কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি তার দ্বীনে
দুর্বলতা থাকে তবে তার দ্বীন অনুযায়ী তার বিপদও (হাল্কা) হয়। পরন্তু বিপদ
এসে এসে বান্দার শেষে এই অবস্থা হয় যে, সে জমীনে চলা ফেরা করে অথচ তার কোন
পাপ অবশিষ্ট থাকে না।’’[2]
রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘‘আল্লাহর পক্ষ থেকে
যখন বান্দার জন্য কোন মর্যাদা নির্ধারিত থাকে, কিন্তু সে তার নিজ আমল
দ্বারা তাতে পৌঁছতে অক্ষম হয়, তখন আল্লাহ তার দেহ, সম্পদ বা
সন্তান-সন্ততিতে বালা-মসীবত দিয়ে তাকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর তাকে এতে
ধৈর্য ধারণ করারও প্রেরণা দান করেন। (এইভাবে সে ততক্ষণ পর্যন্ত বিপদগ্রস্ত
থাকে) যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আল্লাহ আয্যা অজাল্লার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ঐ
মর্যাদায় উন্নীত হয়ে যায়!’’[3]
রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘‘আল্লাহ যখন কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন (তাদের মঙ্গল চান), তখন তাদেরকে বিপন্ন করেন।’’[4]
তিনি আরো বলেন, ‘‘মু’মিনের ব্যাপারটাই
বিস্ময়কর! তার সর্ববিষয়ই কল্যাণময়। আর এ বৈশিষ্ট্য মু’মিন ছাড়া আর কারোর
জন্য নয়; যদি সে সুখকর কোন বিষয় লাভ করে তবে সে কৃতজ্ঞ হয়; সুতরাং এটা তার
জন্য মঙ্গলময়। আবার যদি তার উপর কোন বিপদ-আপদ আসে তবে সে ধৈর্যধারণ করে,
সুতরাং এটাও তার জন্য মঙ্গলময়।’’[5]
সেই সাথে এ কথাও বলুন, لاَ بَأْسَ طَهُوْرٌ إِنْ شَاءَ اللهُউচ্চারণঃ লা বা’সা ত্বাহূরুন ইনশা-আল্লাহ।[6]
অর্থঃ কোন কষ্ট মনে করো না। (গোনাহ থেকে) পবিত্র হবে, যদি আল্লাহ চান।
এর অর্থ রোগীকে শুনিয়ে সান্তনা দিন। রোগী মনে সান্তনা পাবে। পীড়ার কষ্টকে হাল্কা মনে করবে।
রোগীর সাথে কথা বলতে দাওয়াতের সুযোগ নিন।
কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা সংশোধন করে নেওয়ার অসিয়ত করুন। তাকে
আল্লাহভীতি প্রদর্শন করুন। এই সময় তার মন ভয়ে ভীত থাকে, কষ্টে আযাবের ভয়
থাকে। এই জন্য এই সময় সে আপনার নসীহত গ্রহণ করতে পারে। তাকে বুঝিয়ে দিন যে,
রোগদাতা ও রোগের মুক্তিদাতা আল্লাহই। তাঁর কাছে দু‘আ করলে তিনি আরোগ্য দান
করবেন। কিন্তু তার সাথে তাঁর আনুগত্য ও ইবাদত তো করতে হবে। আল্লাহর প্রতি
সুধারণা রাখতে হবে।
তাকে সান্ত্বনা দিন, তার মনকে শক্ত করুন।
ধৈর্য ধরতে উপদেশ দিন। কষ্টে যেন অধৈর্য না হয় এবং অসমীচীন মন্তব্য না করে,
আল্লাহ ও তার তকদীরের বিরুদ্ধে কোন বিরূপ অভিযোগ না করে বসে।
তার কি প্রয়োজন, কি কষ্ট, কি আশা ও আকাঙক্ষা তা জিজ্ঞাসা করুন। তার রোগ
ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করুন। তার অবস্থা দর্শন করে আপনি নিজে উপদেশ গ্রহণ
করুন।
আর খবরদার তাকে দেখা করতে গিয়ে তার সামনে
অট্টহাসি হাসবেন না, অপরের সাথে হাসাহাসি, মজাক-ঠাট্টা ও বাজে কথা বলাবলি
করবেন না। কারণ পীড়িত মনে সে কষ্ট পেতে পারে। অন্যথা যদি সে আপনার হাসি ও
মজাকে আনন্দ পায়, তাহলে সে কথা ভিন্ন।
No comments:
Post a Comment