পদার্থ নাকি স্রষ্টা?
যা মানুষের জীবনের সবচেয়ে মৌলিক প্রশ্ন। একজন চিন্তাশীল মানুষ স্বাভাবিক ভাবে এই প্রশ্নের সমাধান চায়। সে মানবজাতি, জীবন ও মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা করে এবং একটি সঠিক সমাধানে পৌছাত যুগ যুগ ধরে এই বিষয়গুলো উত্তর দিতে গিয়ে অনেক দর্শনের জন্ম হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি মতবাদ কার্ল মার্ক্সের দ্বান্ধিক বস্তুবাদ (dialectical materialism)। এই দর্শন আমাদের কাছে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে,তা হল- “ মহাবিশ্বের চরম উৎস কোনট ,পদার্থ নাকি স্রষ্টা?”
এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ের পূর্বে আমাদের অবশ্যই পদার্থ সম্পর্কে জানতে হবে। আধুনিক বিজ্ঞান পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। যথা- মৌলিক পদার্থ (simple matter) ও যৌগিক পদার্থ (complex matter)। মৌলিক পদার্থ হল পদার্থের সাধারন রূপ। যথা-অক্সিজেন (O2),হাইড্রোজেন (H2) ইত্যাদি। যৌগিক পদার্থ হল দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থের সম্মিলিত রূপ। যথা-পানি (H2O), লবণ (NaCl) ইত্যাদি। পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম উপাদান হল পরমাণু (Atom)। সকল পরমানু তিনটি মৌলিক কণিকার সমন্বয়ে গঠিত। যথা-ইলেক্ট্রন,প্রোটন ও নিউট্রন। একটি পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস। এর চারপাশে কক্ষপথে যে পরিমা্ণ ইলেক্ট্রন থাকে তার কেন্দ্রেও সে পরিমাণ প্রোটন মৌলের নিঊক্লিয়াসে যে পরিমাণ প্রোটন থাকে তাকে পারমাণবিক সংখ্যা বলে। পদার্থ সকল কিছুর উৎস এই ধারণাটি গড়ে উঠেছে কার্ল মার্ক্সের দ্বান্ধিক বস্তুবাদ (dialecti materialism ) দর্শন হতে। এই দর্শন মতে প্রত্যেক বস্তুর মধ্যে দ্বন্ধ (contradiction) বিদ্যমান ও দ্বন্ধ বস্তুর মধ্যকার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রত্যেক বিষয় হচ্ছে বস্তুর মধ্যকার এই দ্বন্ধের ফলাফল। এর মধ্য দিয়ে বস্তু এক রূপ হতে অন্য রূপে রূপান্তরিত হচ্ছে। এই দর্শনের ভিত্তিতে মার্ক্স সমাজ,বিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নিম্নে দ্বান্ধিক বস্তুবাদের আলোকে পদার্থ সর্ম্পকে তার চিন্তাকে তুলে ধরা হল- প্রকৃতিতে বিভিন্ন মৌলিক উপাদান বিদ্যমান যাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা পারমা প্রত্যেক পদার্থের সাধারণ উপাদানটি একই,তা হল পরমাণু। পর্যায় সরনীর(periodic table) প্রথম মৌলিক পদার্থ হল হাইড্রোজেন ও সর্বশেষ হল ইউরেনিয়াম। এছাড়াও কৃত্রিমভাবেও কিছু পদার্থ সংশ্লেষিত করা হয়েছে। পদার্থ এক স্তর হতে অন্য স্তরে তাদের অন্তর্নিহিত দ্বন্ধের কারণে উন্নীত হয়। এই উন্নয়নের প্রাথমিক বিন্দু হল হাইড্রোজেন যার মধ্যে ধনাত্মক ও ঋনাত্মক চার্জ। স্বাভাবিকভাবেই,এদের মধ্যে দ্বন্ধ তৈরী হয়। ফলে দ্বন্ধিক উন্নয়নের (dialectical development) মধ্য দিয়ে তা উচ্চতর পারমাণবিক সংখ্যা বিশিষ্ট্য পরমাণুতে পরিণত হয়। যা হল হিলিয়াম এবং যার মধ্যেও অন্তর্নিহিত দ্বন্ধের (internal contradiction) ধারা বিদ্যমান থাকে। এভাবে পদার্থের বিবর্তন অব্যাহত থাকে। এ দর্শনের মাধ্যমে যা প্রমানের চেষ্টা করা হয়েছে তা হল সকল কিছুর উৎস হল পদার্থ এবং দ্বান্দিক বস্তুবাদীদের এসকল ধারণা সম্পুর্ন ভ্রান্ত। এর কারণ হচ্ছে যেহেতু,অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ হচ্ছে পদার্থের অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য সেহেতু যেমন – হাইড্রোজেন আভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের কারণে হিলিয়ামে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কিছু হাইড্রোজেন রূপান্তরিত হল আর কিছু কিছু অবিকৃত রয়ে গেলো কে প্রকৃতপক্ষে মানুষ,জীবন ও মহাবিশ্বের কোন কিছুই বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নাই। বরং,এদের প্রকৃতি যা অপরিহার্য করে দিয়েছে তা হল এদের সৃষ্টিকর্তা রয়েছে। প্রতিটি জিনিসের পেছনে একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন এ সিদ্ধান্তে পৌছানোর কারণ হ মানুষ,জীবন ও মহাবিশ্ব ইত্যাদি সীমাবদ্ধ,দুর্বল,অসম্পূর্ণ ও তাদের অস্তিতের জন্য অপরের উপ মানুষ সীমাবদ্ধ কারণ সকল ক্ষেত্রেই সে একটি নির্দিষ্ট সীমার মাঝে বেড়ে ওঠে এবং কখনই জীবন সীমাবদ্ধ,কারণ তা একটি স্বতন্ত্র প্রাণী সত্তার মাঝেই প্রকাশিত হয় এবং তার মাঝ মহাবিশ্ব সীমাবদ্ধ কারণ তা কিছু সীমাবদ্ধ মহাজাগতিক বস্তুর সমষ্টি মাত্র এবং দৃশ্যতই অনে আমরা যখন সীমাবদ্ধ বস্তুগুলো নিয়ে চিন্তা করি,তখন দেখতে পাই এগুলো কোনটি চিরন্ত আর এ কারণেই এদের একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে যিনি সকল কিছূর স্রষ্টা। এখন এই সৃষ্টিকর্তাকে হয় কেঊ সৃষ্টি করেছে, অথবা তিনি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছ অন্তহীন এবং যার অস্তিত্ব অপরিহার্য। তাকে কেউ সৃষ্টি করেছেন,এ ধারণাটি মিথ্যা কারণ তাহলে তিনি সীমাবদ্ধ হয়ে যান। এক্ষেত্রে তিনি আর স্রষ্টা থাকেন না বরং তাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই স্রষ্টা। অন্যদিকে,তিনি নিজে নিজেকে সৃষ্টি করেছেন এটিও সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। আসল কারণ স্বাভাবিক যুক্তির বিচারে ইহা অসম্ভব। এর অর্থ হচ্ছে তিনি সৃষ্টি হবার সময় নিজেকে সৃষ্টি করেছেন। কাজেই সৃষ্টিকর্তা এমন যাকে কেউ সৃষ্টি করে নাই। বরং,তা স্বয়ংসম্পূর্ণরূপে অনন্তকাল থেকে ছিলো,আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আর তিনি হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। “নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে , দিবা-রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল ব্যাক্তিদের জন্য” সূরা আল ইমরানঃ ১৯০
No comments:
Post a Comment