গুরত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর পর্ব
প্রশ্ন-উত্তর
বিসলিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সম্মানিত পিতা শাইখ মুহাম্মদ সালিহ আল-‘উসাইমীনকে তাঁর মহামূল্যবান আলোচনার জন্য আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন। আল্লাহ তার ও তার ইলমের দ্বারা ইসলাম ও মুসলিমকে উপকৃত করুন।
বাস্তবে আমাদের কাছে অনেক প্রশ্ন এসেছে। শাইখের সময় অনুপাতে আমরা কিছু প্রশ্নের উত্তর তার কাছে আশা করব। বাকী প্রশ্ন সম্মানিত পিতা অন্য কোনো আলোচনায় সময় পেলে হয়ত উত্তর দিবেন।
বিসলিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সম্মানিত পিতা শাইখ মুহাম্মদ সালিহ আল-‘উসাইমীনকে তাঁর মহামূল্যবান আলোচনার জন্য আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন। আল্লাহ তার ও তার ইলমের দ্বারা ইসলাম ও মুসলিমকে উপকৃত করুন।
বাস্তবে আমাদের কাছে অনেক প্রশ্ন এসেছে। শাইখের সময় অনুপাতে আমরা কিছু প্রশ্নের উত্তর তার কাছে আশা করব। বাকী প্রশ্ন সম্মানিত পিতা অন্য কোনো আলোচনায় সময় পেলে হয়ত উত্তর দিবেন।
প্রথম প্রশ্ন: হে সম্মানিত শাইখ! আমি এক মসজিদের ইমাম; কিন্তু
আমি সে মসজিদে নামায পড়ি না। আমার অপারগতা হলো: আমার দায়িত্ব খুবই কষ্টকর, আর মসজিদটি আমার বাড়ি থেকে অনেক দূরে। সুতরাং আমি যে বেতন নেই তার হুকুম কি? প্রকাশ থাকে যে, আমাদের এখানে অনেকেই আছে যারা আমার মত এ কাজ করে থাকে। আমার ও আমার মত অন্যান্যদের জন্য আপনার উপদেশ কি?জবাব: আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করুন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। কিছু মানুষ মসজিদে সরকারী ইমাম বা মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব নেয়, কিন্তু ঠিক মত সে দায়িত্ব পালন করে না, অথচ নিয়মিত বেতন ভোগ করেন। অন্য কাউকে অর্ধেক বা এর চেয়ে কম বেতন দিয়ে এ কাজ চালিয়ে যান।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. “আল ইখতিয়ারাত” এ “ওয়াকফ” অধ্যয়ে উল্লেখ করেছেন, এ ধরণের কাজ অন্যায়ভাবে সম্পদ ভক্ষণ। সে নিজে একই কাজে অধিক বেতন ভোগ করেন, অথচ অন্যকে তার চেয়ে কম দিয়ে এ কাজ চালিয়ে যান। শাইখ রহ. সঠিক কথাই বলেছেন।
আর যদি জামাত তরক করে এবং তার পক্ষ্য থেকে অন্য কেউ জামাত কায়েম না করে তবে তা আরো জঘন্য কাজ। সে নামায না পড়ালে তার জন্য উক্ত মসজিদের ইমাম হওয়া জায়েয নেই। অন্য কেউ ইমামতির দায়িত্ব নিবে।
এ প্রসঙ্গে আরো বলছি: যে সব চাকুরীজিবিরা কর্মস্থলে আসতে বিলম্ব করে বা অনুপস্থিত থাকে, অথচ হাজিরা খাতায় সঠিক সময় উল্লেখ করে, বা সময় শেষ হওয়ার আগে অফিস থেকে বের হয়ে যায়, তাদের এ ধরণের কাজ করা হারাম, এটা আমানতের পরিপন্থী।
আমরা যদি ধরি যে, সাপ্তাহিক উপস্থিতির পরিমাণ হলো ৩৫ ঘণ্টা, কিন্তু সে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে বিলম্ব করল, ফলে ৩৫ ঘণ্টা থেকে ৫ ঘণ্টা কমে গেল। তাহলে কিভাবে তার পূর্ণ বেতন নেয়া জায়েয হবে? ঠিক একই ব্যক্তিকে যদি তার নির্ধারিত ১০০ টাকা বেতন থেকে কিছু টাকা কর্তন করে রাখলে সে কি তা চাইবে না? তাহলে কেন তার কাছ থেকে ওয়াদাপূরণ ও নিয়মানুবর্তিতা চাওয়া হবে না? একথা সকলেই জানে যে, কেউ সময়মত উপস্থিত ও প্রস্থানের অভ্যাস গড়ে তুললে এটা তার জন্য কঠিন নয়। কিন্তু নিজেকে অলস হিসেবে গড়ে তুললে তার জন্য অর্পিত দায়িত্ব পালন করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে পড়বে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ، خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ، وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ، وَاسْتَعِنْ بِاللهِ وَلَا تَعْجَزْ، وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ، فَلَا تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا، وَلَكِنْ قُلْ قَدَرُ اللهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ»
“মজবুত ঈমানদান আল্লাহর নিকট দুর্বল ঈমানদার অপেক্ষা উত্তম ও প্রিয়। অবশ্য প্রত্যেকের মধ্যেই ভালো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তোমার পক্ষে যা উপকারী ও কল্যাণকর, সে ব্যাপারে আগ্রহী হও। আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করো। হিম্মতহারা হয়ো না, কোনো বিপদে পড়লে এরূপ বলো না, যদি এটা করতাম তাহলে এরূপ হতো (বা হতো না)। বরং এ কথা বলো: আল্লাহর তাকদীরে এটাই ছিল। তিনি যা চেয়েছেন তাই হয়েছে। কারণ “যদি” শব্দ শয়তানের কাজ উন্মুক্ত করে দেয়”।[17]
আল-কুরআনে এসেছে:
﴿ إِنَّ خَيۡرَ مَنِ ٱسۡتَٔۡجَرۡتَ ٱلۡقَوِيُّ ٱلۡأَمِينُ ٢٦ ﴾ [القصص: ٢٦]
“নিশ্চয় আপনি যাদেরকে মজুর নিযুক্ত করবেন তাদের মধ্যে সে উত্তম, যে শক্তিশালী বিশ্বস্ত।” [সূরা আল-কাসাস: ২৬]
যে ব্যক্তি কাজে না গিয়ে বিছানায় এক বা দু’ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকে তাহলে তার আমানতদারিতা কোথায়? প্রত্যেক মানুষের জন্য ওয়াজিব হলো, সে নিজের হিসেব নিজে নিবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: তাওয়াফকারী যদি তাওয়াফ অবস্থায় অপবিত্র হয় এবং সে তার উমরার তাওয়াফ চালিয়ে যায়, তাহলে তার উমরা কি সহীহ হবে?
জবাব: আলেমদের কেউ কেউ পবিত্রতাকে তাওয়াফ সহীহ হওয়ার শর্ত বলেছেন। তাদের মতে উক্ত ব্যক্তির উমরা সহীহ হয়নি। তাই তবে সে ইহরাম অবস্থাতেই থাকবে। সুতরাং (যেহেতু প্রকৃতপক্ষে ইহরাম অবস্থায় আছে তাই যদি সে অপবিত্র অবস্থায় উমরা করে ইহরামের কাপড় খুলে সাধারণ পোষাক পরেছে এবং মক্কার বাইরে চলে এসেছে, তাই) তার উচিত হবে পরিধানের কাপড় খুলে ফেলবে এবং ইহরামের কাপড় পড়বে। আবার মক্কা যাবে, অতঃপর তাওয়াফ, সায়ী’, চুল হলক বা কসর করবে।
আবার আলেমগণের কেউ কেউ বলেছেন, পবিত্রতা তাওয়াফের জন্য শর্ত নয়। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. এ মতকে গ্রহণ করেছেন। এ মতের ভিত্তিতে উক্ত ব্যক্তির উমরা সহীহ হবে; কেননা তার তাওয়াফ সহীহ হয়েছে, আর যার তাওয়াফ সহীহ তার উমরা পূর্ণ হয়ে গেছে।
জবাব: আলেমদের কেউ কেউ পবিত্রতাকে তাওয়াফ সহীহ হওয়ার শর্ত বলেছেন। তাদের মতে উক্ত ব্যক্তির উমরা সহীহ হয়নি। তাই তবে সে ইহরাম অবস্থাতেই থাকবে। সুতরাং (যেহেতু প্রকৃতপক্ষে ইহরাম অবস্থায় আছে তাই যদি সে অপবিত্র অবস্থায় উমরা করে ইহরামের কাপড় খুলে সাধারণ পোষাক পরেছে এবং মক্কার বাইরে চলে এসেছে, তাই) তার উচিত হবে পরিধানের কাপড় খুলে ফেলবে এবং ইহরামের কাপড় পড়বে। আবার মক্কা যাবে, অতঃপর তাওয়াফ, সায়ী’, চুল হলক বা কসর করবে।
আবার আলেমগণের কেউ কেউ বলেছেন, পবিত্রতা তাওয়াফের জন্য শর্ত নয়। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. এ মতকে গ্রহণ করেছেন। এ মতের ভিত্তিতে উক্ত ব্যক্তির উমরা সহীহ হবে; কেননা তার তাওয়াফ সহীহ হয়েছে, আর যার তাওয়াফ সহীহ তার উমরা পূর্ণ হয়ে গেছে।
তৃতীয় প্রশ্ন: কোনো কোনো মুসলিম দেশে প্রচলন আছে যে, আশাপূরণ যেমন: পদোন্নতি লাভ, চাকরী পাওয়া ইত্যাদি উদ্দেশ্যে সম্মিলিতভাবে কুরআন খতম করা হয়। এর হুকুম কি? অনুগ্রহপূর্বক আমাকে এ সম্পর্কে বলুন। আল্লাহ আপনাদেরকে বরকত দিন।
জবাব: প্রকাশ থাকে যে, আল-কুরআন হল মহান আল্লাহর কালাম। যে ব্যক্তি তা তিলাওয়াত করবে তার প্রতি হরফে দশ নেকী বা ততোধিক সাওয়াব হবে। আর যে জিনিস দ্বারা আখেরাতের সাওয়াবের প্রত্যাশা করা হয়, তা দ্বারা দুনিয়ার প্রতিদান আশা করা যায় না। অতঃপর যারা বলেন যে, কুরআন তিলাওয়াত চাকুরী লাভ বা ব্যবসায় উন্নতি ইত্যাদির অসীলা?! কুরআন সব রোগের ঔষধ, অন্তরের রোগের ঔষধ। শারীরিক রোগেরও ঔষধ। কিন্তু কুরআন তিলাওয়াত রিজিকের অসীলা এ ব্যাপারে কোনো দলিল আছে? রিজিকের অসীলা হলো তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি। যেমন: আল্লাহ তা‘আলা বলেছনে,
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ٣ ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]
“যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না”। [সূরা আত-তালাক: ২-৩]
অতএব আমরা বলব, যারা কুরআন তিলাওয়াতকে দলিল ছাড়াই রিজিকের অসীলা বানিয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করব: আপনাদের দলিল কোথায়? আল্লাহ ভীতি রিজিকের অসীলা, এটা সত্য। কেননা আল্লাহ বলেছেন:
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ٣ ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না”। [সূরা আত-তালাক: ২-৩]
জবাব: প্রকাশ থাকে যে, আল-কুরআন হল মহান আল্লাহর কালাম। যে ব্যক্তি তা তিলাওয়াত করবে তার প্রতি হরফে দশ নেকী বা ততোধিক সাওয়াব হবে। আর যে জিনিস দ্বারা আখেরাতের সাওয়াবের প্রত্যাশা করা হয়, তা দ্বারা দুনিয়ার প্রতিদান আশা করা যায় না। অতঃপর যারা বলেন যে, কুরআন তিলাওয়াত চাকুরী লাভ বা ব্যবসায় উন্নতি ইত্যাদির অসীলা?! কুরআন সব রোগের ঔষধ, অন্তরের রোগের ঔষধ। শারীরিক রোগেরও ঔষধ। কিন্তু কুরআন তিলাওয়াত রিজিকের অসীলা এ ব্যাপারে কোনো দলিল আছে? রিজিকের অসীলা হলো তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি। যেমন: আল্লাহ তা‘আলা বলেছনে,
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ٣ ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]
“যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না”। [সূরা আত-তালাক: ২-৩]
অতএব আমরা বলব, যারা কুরআন তিলাওয়াতকে দলিল ছাড়াই রিজিকের অসীলা বানিয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করব: আপনাদের দলিল কোথায়? আল্লাহ ভীতি রিজিকের অসীলা, এটা সত্য। কেননা আল্লাহ বলেছেন:
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ٣ ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না”। [সূরা আত-তালাক: ২-৩]
চতুর্থ প্রশ্ন: কিছু লোক বলেন যে, অধিকাংশ মানুষের আমল সে কাজটি সহীহ হওয়ার দলিল। তারা নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলিল পেশ করেন: “عَلَيْكُمْ بِالسَّوَادِ الْأَعْظَمِ” “তোমরা অধিকাংশ মানুষের জামাতের অনুসরণ করো।” এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
জবাব: তাদের এ দলিল সহীহ নয়; কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ ٥٩ ﴾ [النساء: ٥٩]
“অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও” [সূরা নিসা: ৫৯] এখানে বিরোধ দেখা দিলে কার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে বলেছে? আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে। কুরআনে একথা বলা হয়নি যে, “অধিকাংশ লোকের দিকে প্রত্যার্পণ করাও”। এখানে সংসদে ভোট বা এরূপ কোনো বিষয়ের ব্যাপার নয়; বরং আমাদের দলিল হলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ। আমাদের জন্য ফরয হলো, আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নহের দলিল দ্বারা যা সাব্যস্ত হয় সেদিকে প্রত্যার্পণ করা, যদিও সে মতের উপর একজন মাত্র লোক পাওয়া যায়।
“عَلَيْكُمْ بِالسَّوَادِ الْأَعْظَمِ”
আর উক্তিটি যদি প্রমাণিত হাদীস হয়, তবে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, “সত্য অনুসারী অধিকাংশ মুসলিমের জামাত” কেননা الأعظم দ্বারা শুধু অধিকাংশ বুঝায় না; বরং মর্যাদার বিচারে বড় বুঝায়। আর মর্যাদার বিচারে বড় তো তারাই যাদের কথা ও কাজ কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক হয়। এ ব্যাখায় তখনই হবে যখন উক্ত উক্তিটি সহীহ হাদীস হবে। আমার ধারণা এটা ইবন মাস‘উদ বা অন্য কারো বাণী।[18]
জবাব: তাদের এ দলিল সহীহ নয়; কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ ٥٩ ﴾ [النساء: ٥٩]
“অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও” [সূরা নিসা: ৫৯] এখানে বিরোধ দেখা দিলে কার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে বলেছে? আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে। কুরআনে একথা বলা হয়নি যে, “অধিকাংশ লোকের দিকে প্রত্যার্পণ করাও”। এখানে সংসদে ভোট বা এরূপ কোনো বিষয়ের ব্যাপার নয়; বরং আমাদের দলিল হলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ। আমাদের জন্য ফরয হলো, আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নহের দলিল দ্বারা যা সাব্যস্ত হয় সেদিকে প্রত্যার্পণ করা, যদিও সে মতের উপর একজন মাত্র লোক পাওয়া যায়।
“عَلَيْكُمْ بِالسَّوَادِ الْأَعْظَمِ”
আর উক্তিটি যদি প্রমাণিত হাদীস হয়, তবে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, “সত্য অনুসারী অধিকাংশ মুসলিমের জামাত” কেননা الأعظم দ্বারা শুধু অধিকাংশ বুঝায় না; বরং মর্যাদার বিচারে বড় বুঝায়। আর মর্যাদার বিচারে বড় তো তারাই যাদের কথা ও কাজ কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক হয়। এ ব্যাখায় তখনই হবে যখন উক্ত উক্তিটি সহীহ হাদীস হবে। আমার ধারণা এটা ইবন মাস‘উদ বা অন্য কারো বাণী।[18]
পঞ্চম প্রশ্ন: ব্যাংকে ইদা‘ (জমাকরণ) রাখার হুকুম কি?
জবাব: প্রয়োজনে ব্যাংকে ইদা‘ (আমানত জমা) রাখতে কোনো অসুবিধে নেই। কেননা কিছু মানুষ দলিল দেয় যে, ঘরে নিজের কাছে অর্থ রাখাটা বিপদজনক। ফলে নিরাপত্তার জন্য তারা ব্যাংকে জমা রাখে।
ব্যাংক যদি শুধু সুদ ভিত্তিকই লেনদেন করে তবে আমরা বলব, এ ধরণের ব্যাংকে কখনও অর্থ জমা রাখবেন না। কিন্তু সুদ ছাড়া অন্য কোনো খাতে জমা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে তার জমাকৃত অর্থ হালাল ও হারামের সাথে মিলিত হয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে এ ধরণের ক্ষেত্রে জমা রাখা জায়েয। কিন্তু এমতাবস্থায় বলব, যে সব ব্যাংক তুলনামূলক কম সুদের লেনদেন করে সে ব্যাংকে জমা রাখা উচিত।
এখানে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সতর্ক করব: ব্যাংকে অর্থ জমা রাখাকে মানুষ ইদা‘ বা ‘আমানত’ বলে, কিন্তু এটা সঠিক নয়। কেননা আলেমদের মতে, আল-ওয়াদিয়া হলো: “একজন অন্য কাউকে তার সম্পদ আমানত রাখতে দেয়া, সে উক্ত সম্পদ খরচ করবেনা”, পক্ষান্তরে ব্যাংকে সম্পদ রাখা হলো: “ব্যাংকের লকারে সম্পদ জমা রাখা এবং ব্যাংক বেচাকেনার কাজে উক্ত সম্পদ খরচ করবে”। এটাকে উলামা কিরাম করজ বা ঋণ বলে। এজন্যই ফিকহের কিতাবে এভাবে নস এসেছে, কেউ যদি অন্য কারো কাছে তার সম্পদ জমা রাখে, অতঃপর সে উক্ত মাল খরচের অনুমতি দেয় তবে তা অদীয়া‘ থেকে কর্জে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। অদীয়া‘ আর কর্জের মধ্যে পার্থক্য হলো, আমানতকারীর অবহেলা ব্যতীত অদীয়া‘ নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। কিন্তু কর্জের ক্ষেত্রে সব অবস্থাতেই ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
জবাব: প্রয়োজনে ব্যাংকে ইদা‘ (আমানত জমা) রাখতে কোনো অসুবিধে নেই। কেননা কিছু মানুষ দলিল দেয় যে, ঘরে নিজের কাছে অর্থ রাখাটা বিপদজনক। ফলে নিরাপত্তার জন্য তারা ব্যাংকে জমা রাখে।
ব্যাংক যদি শুধু সুদ ভিত্তিকই লেনদেন করে তবে আমরা বলব, এ ধরণের ব্যাংকে কখনও অর্থ জমা রাখবেন না। কিন্তু সুদ ছাড়া অন্য কোনো খাতে জমা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে তার জমাকৃত অর্থ হালাল ও হারামের সাথে মিলিত হয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে এ ধরণের ক্ষেত্রে জমা রাখা জায়েয। কিন্তু এমতাবস্থায় বলব, যে সব ব্যাংক তুলনামূলক কম সুদের লেনদেন করে সে ব্যাংকে জমা রাখা উচিত।
এখানে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সতর্ক করব: ব্যাংকে অর্থ জমা রাখাকে মানুষ ইদা‘ বা ‘আমানত’ বলে, কিন্তু এটা সঠিক নয়। কেননা আলেমদের মতে, আল-ওয়াদিয়া হলো: “একজন অন্য কাউকে তার সম্পদ আমানত রাখতে দেয়া, সে উক্ত সম্পদ খরচ করবেনা”, পক্ষান্তরে ব্যাংকে সম্পদ রাখা হলো: “ব্যাংকের লকারে সম্পদ জমা রাখা এবং ব্যাংক বেচাকেনার কাজে উক্ত সম্পদ খরচ করবে”। এটাকে উলামা কিরাম করজ বা ঋণ বলে। এজন্যই ফিকহের কিতাবে এভাবে নস এসেছে, কেউ যদি অন্য কারো কাছে তার সম্পদ জমা রাখে, অতঃপর সে উক্ত মাল খরচের অনুমতি দেয় তবে তা অদীয়া‘ থেকে কর্জে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। অদীয়া‘ আর কর্জের মধ্যে পার্থক্য হলো, আমানতকারীর অবহেলা ব্যতীত অদীয়া‘ নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। কিন্তু কর্জের ক্ষেত্রে সব অবস্থাতেই ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
ষষ্ঠ প্রশ্ন: আমরা প্রায়ই একটি কায়েদা শুনে থাকি যে, “আমরা যে বিষয়ে একমত সে বিষয়গুলোতে ঐক্য থাকব”, আর “যে ব্যাপারে মতানৈক্য করব সে ব্যাপারে একে অপরের কাছে ওজর পেশ করব”। এ কথাটি কতটুকু সঠিক?
জবাব: আপনার প্রশ্নের প্রথম অংশটি সহীহ, তা হলো “আমরা যে বিষয়ে একমত সে বিষয়গুলোতে ঐক্য থাকব”। আর দ্বিতীয় অংশের বিস্তারিত ব্যাখ্যা হলো:
আমরা যে বিষয়ে মতানৈক্য করব সেটি যদি এমন হয় যে, একপক্ষের নিকট সহীহ দলিল আছে, (অপর পক্ষের কাছে কোনো দলিল নাই) এবং এ মতানৈক্যটি ইজতিহাদি কোনো বিষয় নয়, সে ক্ষেত্রে বলব: যাদের কাছে দলিল নাই তাদেরকে ভুল না বলে বিরত থাকব না। যেমন: কেউ যদি আক্বীদাগত বিষয়ে মতানৈক্য করে তবে আমরা চুপ থাকব না। কেননা, -আলহামদুলিল্লাহ- আক্বিদার মূলনীতিসমূহ জ্ঞাত, সালাফে সালেহীন এর মূলনীতির ব্যাপারে ঐক্যমত, অতএব, যারা এর বিরোধী হবে তাদের বিরোধিতা আমরা করব।
অপরদিকে, ইজতিহাদভিত্তিক ফিকহি মাস’আলাসমূহে উক্ত কথাটি ঠিক আছে। ইজতিহাদভিত্তিক মাসআলায় আমরা কারো বিরোধিতা করব না। কেননা বিরোধীকে প্রত্যাখ্যান করা মানেই হলো তুমি যা বলেছ তাই সঠিক এবং তোমার বিরোধী লোকের মতটি ভুল। অথচ তুমি যেটা বলেছ তাতে যেমন ভুলের সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি অপরপক্ষেরও ভুলের সম্ভাবনা রয়েছে।
অতঃপর, মানুষ যদি তার মতের উপরই অন্যকে চলতে বলে এবং অন্যের মতকে ভ্রান্ত বলে তবে সে নিজেকে রিসালাতের আসনে সমাসীন করল। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই শুধু নিষ্পাপ। আর তোমার বা অন্যের ইজতিহাদ ভুল ও সঠিক দুয়ের সম্ভাবনা থাকে।
কিন্তু সমস্যা হলো, কিছু লোক এ গ্রহণযোগ্য মতানৈক্য উপর তাদের সম্পর্কস্থাপন ও সম্পর্কচ্যুতি স্থাপন করে এবং মানুষের কাছে এটাকে নিন্দনীয় করে তোলে। অথচ মাসআলাটি এমন যে তাতে ইজতিহাদ তথা মত প্রকাশের অবকাশ রয়েছে। (যারা এ মতপার্থক্যের উপর নির্ভর করে সম্পর্কচ্যুতি ও সম্পর্কস্থাপন করে থাকে) তাদের একাজটি ভুল। এটি সাহাবায়ে কিরামদের পন্থা নয়। সাহাবায়ে কিরাম –রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম- অনেক বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন। এতদসত্বেও তারা কেউ কারো ব্যাপারে খারাপ (সমালোচনামূলক) কথা বলেননি, কাউকে পথভ্রষ্টও বলেন নি। উপস্থিত অধিকাংশের নিকটই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাবের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় সাহাবাদের মতানৈক্যের ঘটনাটি অজানা নয়। বনী কুরাইযার ইয়াহূদীরা আহযাবে অংশগ্রহণকারীদের একদল, কিন্তু তারা অঙ্গিকার ভঙ্গ করেছিল। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিবরীল এসে তাঁকে বনী কুরাইযা গোত্রের অভিমুখে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ দেন। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে বনী কুরাইযা গোত্রের অভিমুখে যাত্রা করার নির্দেশ দেন, এবং তিনি তাদেরকে বললেন:
«لاَ يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ العَصْرَ إِلَّا فِي بَنِي قُرَيْظَةَ»
“তোমাদের কেউ যেন বনী কুরাইযায় না গিয়ে আসরের নামায আদায় না করে”।[19] ফলে তারা সকলে বের হলো এবং পথে আসরের নামাযের ওয়াক্ত হলো। তাদের একদল বলল: আমরা নামায আদায় করে নিবো, যাতে ওয়াক্ত শেষ হয়ে না যায়। আরেকদল বলল: আমরা এখন নামায পড়বো না, কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاَ يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ العَصْرَ إِلَّا فِي بَنِي قُرَيْظَةَ»
“তোমাদের কেউ যেন বনী কুরাইযায় না গিয়ে আসরের নামায আদায় না করে”। ফলে একদল নামায পড়লো এবং অন্যদল বিলম্ব করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাউকেই প্রত্যাখ্যান করেননি এবং তিরস্কার করেননি। তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য করেননি এবং অন্যকে কেউ পথভ্রষ্টও বলেননি।
অতএব, ইজতিহাদভিত্তিক মতবিরোধপূর্ণ মাসআলার ক্ষেত্রে মানুষ অন্যকে তার মতের উপর চালানো জায়েয নয়। সে এ কাজ করা মানে নিজেকে রাসূল দাবী করা। তবে ইজতিহাদ নির্ভর নয় –বিশেষ করে আক্বিদাগত- এমন মাস’আলার ক্ষেত্রে অন্যের ভুল মেনে নেওয়া জায়েয নয়।
জবাব: আপনার প্রশ্নের প্রথম অংশটি সহীহ, তা হলো “আমরা যে বিষয়ে একমত সে বিষয়গুলোতে ঐক্য থাকব”। আর দ্বিতীয় অংশের বিস্তারিত ব্যাখ্যা হলো:
আমরা যে বিষয়ে মতানৈক্য করব সেটি যদি এমন হয় যে, একপক্ষের নিকট সহীহ দলিল আছে, (অপর পক্ষের কাছে কোনো দলিল নাই) এবং এ মতানৈক্যটি ইজতিহাদি কোনো বিষয় নয়, সে ক্ষেত্রে বলব: যাদের কাছে দলিল নাই তাদেরকে ভুল না বলে বিরত থাকব না। যেমন: কেউ যদি আক্বীদাগত বিষয়ে মতানৈক্য করে তবে আমরা চুপ থাকব না। কেননা, -আলহামদুলিল্লাহ- আক্বিদার মূলনীতিসমূহ জ্ঞাত, সালাফে সালেহীন এর মূলনীতির ব্যাপারে ঐক্যমত, অতএব, যারা এর বিরোধী হবে তাদের বিরোধিতা আমরা করব।
অপরদিকে, ইজতিহাদভিত্তিক ফিকহি মাস’আলাসমূহে উক্ত কথাটি ঠিক আছে। ইজতিহাদভিত্তিক মাসআলায় আমরা কারো বিরোধিতা করব না। কেননা বিরোধীকে প্রত্যাখ্যান করা মানেই হলো তুমি যা বলেছ তাই সঠিক এবং তোমার বিরোধী লোকের মতটি ভুল। অথচ তুমি যেটা বলেছ তাতে যেমন ভুলের সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি অপরপক্ষেরও ভুলের সম্ভাবনা রয়েছে।
অতঃপর, মানুষ যদি তার মতের উপরই অন্যকে চলতে বলে এবং অন্যের মতকে ভ্রান্ত বলে তবে সে নিজেকে রিসালাতের আসনে সমাসীন করল। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই শুধু নিষ্পাপ। আর তোমার বা অন্যের ইজতিহাদ ভুল ও সঠিক দুয়ের সম্ভাবনা থাকে।
কিন্তু সমস্যা হলো, কিছু লোক এ গ্রহণযোগ্য মতানৈক্য উপর তাদের সম্পর্কস্থাপন ও সম্পর্কচ্যুতি স্থাপন করে এবং মানুষের কাছে এটাকে নিন্দনীয় করে তোলে। অথচ মাসআলাটি এমন যে তাতে ইজতিহাদ তথা মত প্রকাশের অবকাশ রয়েছে। (যারা এ মতপার্থক্যের উপর নির্ভর করে সম্পর্কচ্যুতি ও সম্পর্কস্থাপন করে থাকে) তাদের একাজটি ভুল। এটি সাহাবায়ে কিরামদের পন্থা নয়। সাহাবায়ে কিরাম –রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম- অনেক বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন। এতদসত্বেও তারা কেউ কারো ব্যাপারে খারাপ (সমালোচনামূলক) কথা বলেননি, কাউকে পথভ্রষ্টও বলেন নি। উপস্থিত অধিকাংশের নিকটই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাবের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় সাহাবাদের মতানৈক্যের ঘটনাটি অজানা নয়। বনী কুরাইযার ইয়াহূদীরা আহযাবে অংশগ্রহণকারীদের একদল, কিন্তু তারা অঙ্গিকার ভঙ্গ করেছিল। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিবরীল এসে তাঁকে বনী কুরাইযা গোত্রের অভিমুখে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ দেন। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে বনী কুরাইযা গোত্রের অভিমুখে যাত্রা করার নির্দেশ দেন, এবং তিনি তাদেরকে বললেন:
«لاَ يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ العَصْرَ إِلَّا فِي بَنِي قُرَيْظَةَ»
“তোমাদের কেউ যেন বনী কুরাইযায় না গিয়ে আসরের নামায আদায় না করে”।[19] ফলে তারা সকলে বের হলো এবং পথে আসরের নামাযের ওয়াক্ত হলো। তাদের একদল বলল: আমরা নামায আদায় করে নিবো, যাতে ওয়াক্ত শেষ হয়ে না যায়। আরেকদল বলল: আমরা এখন নামায পড়বো না, কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاَ يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ العَصْرَ إِلَّا فِي بَنِي قُرَيْظَةَ»
“তোমাদের কেউ যেন বনী কুরাইযায় না গিয়ে আসরের নামায আদায় না করে”। ফলে একদল নামায পড়লো এবং অন্যদল বিলম্ব করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাউকেই প্রত্যাখ্যান করেননি এবং তিরস্কার করেননি। তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য করেননি এবং অন্যকে কেউ পথভ্রষ্টও বলেননি।
অতএব, ইজতিহাদভিত্তিক মতবিরোধপূর্ণ মাসআলার ক্ষেত্রে মানুষ অন্যকে তার মতের উপর চালানো জায়েয নয়। সে এ কাজ করা মানে নিজেকে রাসূল দাবী করা। তবে ইজতিহাদ নির্ভর নয় –বিশেষ করে আক্বিদাগত- এমন মাস’আলার ক্ষেত্রে অন্যের ভুল মেনে নেওয়া জায়েয নয়।
সপ্তম প্রশ্ন: আল্লাহর নাম “الشكور” আশ-শাকুর কে الغفور”” আল-গাফুর দিয়ে তাফসির করা কি জায়েয? এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য কি? এবং الرحمةআর-রহমাহ কে إرادة الإحسانইহসানের ইরাদা করা দ্বারা তাফসির করা জায়েয?
জবাব: এটি জায়েয নেই। আল্লাহর নাম “الشكور” আশ-শাকুর কে الغفور”” আল-গাফুর দিয়ে তাফসির করা জায়েয নেই। কেননা “الشكور” আশ-শাকুর অর্থ হলো যিনি প্রশংসিত কাজের বিনিময়ে কাউকে প্রতিদান দান করেন। আর الغفور”” আল-গাফুর অর্থ হলো বান্দার গুনাহ গোপনকারী। দুয়ের মাঝে পার্থক্য হলো, যে তার অনুগত্য করে তিনি তাকে বিনিময় দান করেন। আর গফুর হলো যে তার অবাধ্য তিনি তাকেও ক্ষমা করেন। অতএব, একটিকে অন্যটি দ্বারা ব্যাখ্যা করা জায়েয নয়। কেননা দুয়ের মাঝে স্পষ্ট পার্থক্য বিরাজমান।
আর প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশ الرحمة আর-রহমাহ কে إرادة الإحسان ‘ইহসানের ইরাদা বা ইচ্ছা করা’ দ্বারা তাফসির করা জায়েয? বস্তুত: الرحمة আর-রাহমাহ অর্থের সাথে আশ-শাকুর ও الغفور”” আল-গাফুর এর মাসআলার কোনো সম্পর্কে নেই। কেননা الرحمة আর-রহমাহ অর্থ: আল্লাহ তা‘আলা বান্দার জন্য নিয়ামত বয়ে আনা ও তাদের থেকে অকল্যাণ দূরে রাখার মাধ্যমে দয়া করেন।
الرحمة আর-রহমাহ এর তাফসির إرادة الإحسان ইহসানের ইচ্ছা পোষণ করা, এটা ভুল ব্যাখ্যা। কেননা ইহসানের ইচ্ছা করা রহমতের আবশ্যক বিষয়, কিন্তু এটা স্বয়ং রহমত নয়। আর-রহমাহ আল্লাহর যাতী বা সত্ত্বাগত গুণ। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দয়া করেন। তাঁর রহমতের প্রতিক্রিয়া ও ফল হলো: সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের ইচ্ছা পোষণ করা।
তাই الرحمة আর-রহমাহ (দয়া) এর তাফসির إرادة الإحسان (ইহসানের ইচ্ছা পোষণ করা) দ্বারা করা জায়েয নেই। এমনকি ইহসান দ্বারাও রহমতের ব্যাখ্যা করা জায়েয নেই। কেননা এগুলো রহমতকে আবশ্যককারী বিষয়, স্বয়ং রহমত নয়।
জবাব: এটি জায়েয নেই। আল্লাহর নাম “الشكور” আশ-শাকুর কে الغفور”” আল-গাফুর দিয়ে তাফসির করা জায়েয নেই। কেননা “الشكور” আশ-শাকুর অর্থ হলো যিনি প্রশংসিত কাজের বিনিময়ে কাউকে প্রতিদান দান করেন। আর الغفور”” আল-গাফুর অর্থ হলো বান্দার গুনাহ গোপনকারী। দুয়ের মাঝে পার্থক্য হলো, যে তার অনুগত্য করে তিনি তাকে বিনিময় দান করেন। আর গফুর হলো যে তার অবাধ্য তিনি তাকেও ক্ষমা করেন। অতএব, একটিকে অন্যটি দ্বারা ব্যাখ্যা করা জায়েয নয়। কেননা দুয়ের মাঝে স্পষ্ট পার্থক্য বিরাজমান।
আর প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশ الرحمة আর-রহমাহ কে إرادة الإحسان ‘ইহসানের ইরাদা বা ইচ্ছা করা’ দ্বারা তাফসির করা জায়েয? বস্তুত: الرحمة আর-রাহমাহ অর্থের সাথে আশ-শাকুর ও الغفور”” আল-গাফুর এর মাসআলার কোনো সম্পর্কে নেই। কেননা الرحمة আর-রহমাহ অর্থ: আল্লাহ তা‘আলা বান্দার জন্য নিয়ামত বয়ে আনা ও তাদের থেকে অকল্যাণ দূরে রাখার মাধ্যমে দয়া করেন।
الرحمة আর-রহমাহ এর তাফসির إرادة الإحسان ইহসানের ইচ্ছা পোষণ করা, এটা ভুল ব্যাখ্যা। কেননা ইহসানের ইচ্ছা করা রহমতের আবশ্যক বিষয়, কিন্তু এটা স্বয়ং রহমত নয়। আর-রহমাহ আল্লাহর যাতী বা সত্ত্বাগত গুণ। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দয়া করেন। তাঁর রহমতের প্রতিক্রিয়া ও ফল হলো: সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের ইচ্ছা পোষণ করা।
তাই الرحمة আর-রহমাহ (দয়া) এর তাফসির إرادة الإحسان (ইহসানের ইচ্ছা পোষণ করা) দ্বারা করা জায়েয নেই। এমনকি ইহসান দ্বারাও রহমতের ব্যাখ্যা করা জায়েয নেই। কেননা এগুলো রহমতকে আবশ্যককারী বিষয়, স্বয়ং রহমত নয়।
অষ্টম প্রশ্ন: পুরুষ জীব জন্তুর বীর্য ক্রয় করে স্ত্রী জন্তুর মাঝে প্রবেশ করিয়ে জন্ম দেয়ানো জায়েয আছে?
জবাব: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَسْبِ الفَحْلِ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশুকে পাল দেওয়া বাবদ বিনিময় নিতে নিষেধ করেছেন।”[20]
উপরিউক্ত কাজটি একই ধরণের, বরং নিষেধের ক্ষেত্রে এর চেয়েও জঘন্য। কেননা পশুকে পাল দিলে মর্দার ক্ষতি হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতি হয়না। যারা মুসলিম নয় তাদের এ ধরণের কাজ কোনো ধর্তব্য নয়। কেননা তাদের এ সব কাজে কোনো কিছু আসে যায় না। পশু পালের মত এ ধরণের কাজও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
এর চেয়েও মারাত্মক হলো: যাদের ভ্রুণ থেকে সন্তান জন্ম নেয় না তাদের জন্য অন্য পুরুষ থেকে বীর্য নিয়ে নারীর গর্ভে দিয়ে সন্তান নেয়া আরো মারাত্মক গুনাহ। আল্লাহর কাছে আমরা এ কাজ থেকে পানাহ চাই।
জবাব: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَسْبِ الفَحْلِ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশুকে পাল দেওয়া বাবদ বিনিময় নিতে নিষেধ করেছেন।”[20]
উপরিউক্ত কাজটি একই ধরণের, বরং নিষেধের ক্ষেত্রে এর চেয়েও জঘন্য। কেননা পশুকে পাল দিলে মর্দার ক্ষতি হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতি হয়না। যারা মুসলিম নয় তাদের এ ধরণের কাজ কোনো ধর্তব্য নয়। কেননা তাদের এ সব কাজে কোনো কিছু আসে যায় না। পশু পালের মত এ ধরণের কাজও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
এর চেয়েও মারাত্মক হলো: যাদের ভ্রুণ থেকে সন্তান জন্ম নেয় না তাদের জন্য অন্য পুরুষ থেকে বীর্য নিয়ে নারীর গর্ভে দিয়ে সন্তান নেয়া আরো মারাত্মক গুনাহ। আল্লাহর কাছে আমরা এ কাজ থেকে পানাহ চাই।
নবম প্রশ্ন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী “إن اللَّهَ خَلَقَ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ” এর সালফে সালেহীনদের সঠিক ব্যাখ্যা কি? দয়া করে জানাবেন, আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।
জবাব: প্রশ্নটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নটির জন্য নয়, বরং আমাদের জন্য ফরয হলো: আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে যেভাবে এসেছে সেভাবেই ঈমান আনা। আমরা একথা জিজ্ঞেস করব না: কিভাবে? কেন? কেননা এ সব গায়েবী বিষয়ে প্রশ্ন করা ও গভীরে প্রবেশ করা কখনো কখনো মানুষকে ধ্বংস করে, ফলে সে এ সবকে অস্বীকার করে বা একটা রূপ দিতে চেষ্টা করে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী “إن اللَّهَ خَلَقَ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ” “আল্লাহ আদম আলাইহি সালামকে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন” অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে: «إن الله خلق آدم على صورة الرحمن» “আল্লাহ আদম আলাইহিস সালামকে রহমানের আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন”[21] এ শব্দ বুখারীতে এসেছে। সাহাবা কিরামগণ কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এর অর্থ জিজ্ঞেস করেছেন নাকি তারা এগুলোকে গ্রহণ করেছেন ও আত্মসমর্পণ করেছেন? জবাবে বলব, তারা নিশ্চয় দ্বিতীয়টি করেছেন অর্থাৎ তারা এগুলোকে কবুল করেছেন। আমরা একথা জানি না যে, কোনো সাহাবা বলেছে: “হে আল্লাহর রাসূল সুরত দ্বারা উদ্দেশ্য কি”? বরং তারা কোনো প্রশ্ন না করে কবুল করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা একটি মূলনীতি বানিয়ে নিয়েছেন, সেটা হলো: আল্লাহকে কোনো কিছুর মত মনে না করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورى: ١١]
“তাঁর (আল্লাহর) মত কিছু নেই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা: ১১]
এমনকি যদিও আমরা কোনো সূরত বা রূপের কথা বলি তবুও একথা দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে, তিনি মাখলুকের রূপের সাথে সামঞ্জস্য রাখেন না। আর আদম আলাইহিস সালাত ওয়াসসালামের আকৃতি আল্লাহর আকৃতির সদৃশ নয়।
তোমরা লক্ষ্য করেছ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«أَوَّلُ زُمْرَةٍ تَدْخُلُ الجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ»
“প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় হবে”[22]
এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরিউক্ত বাণী দ্বারা কি সদৃশ অত্যাবশ্যক করে? আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তবে নিম্নোক্ত আয়াতে হাকীমের দ্বারা প্রমাণিত যে তা কোনো সদৃশ ছাড়া:
﴿ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورى: ١١]
“তাঁর (আল্লাহর) মত কিছু নেই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা: ১১]
কিছু সালাফ উলামায়ে কিরাম বলেছেন: এখানে আকৃতি বলতে বুঝানো হয়েছে: আল্লাহ তা‘আলা এ সূরত বা রূপটি সর্বোত্তম অবয়বে পছন্দ করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে আকৃতি দান করেছেন এবং পুনর্বিন্যাস করেছেন। অতএব আল্লাহ যে আকৃতিকে নিজে যথাযথ তত্ত্বাবধান করেছেন তাকে অসুন্দর গালি দেওয়া বা তাকে আঘাত করা সমীচিন নয়।
তবে প্রথম মতটিই বেশী নিরাপদ। কেননা দ্বিতীয় মতে তা’বীল বা অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। অতএব আমরা একথা গ্রহণ করব যে, আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তবে কোনো সদৃশ ব্যতীত।
জবাব: প্রশ্নটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নটির জন্য নয়, বরং আমাদের জন্য ফরয হলো: আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে যেভাবে এসেছে সেভাবেই ঈমান আনা। আমরা একথা জিজ্ঞেস করব না: কিভাবে? কেন? কেননা এ সব গায়েবী বিষয়ে প্রশ্ন করা ও গভীরে প্রবেশ করা কখনো কখনো মানুষকে ধ্বংস করে, ফলে সে এ সবকে অস্বীকার করে বা একটা রূপ দিতে চেষ্টা করে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী “إن اللَّهَ خَلَقَ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ” “আল্লাহ আদম আলাইহি সালামকে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন” অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে: «إن الله خلق آدم على صورة الرحمن» “আল্লাহ আদম আলাইহিস সালামকে রহমানের আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন”[21] এ শব্দ বুখারীতে এসেছে। সাহাবা কিরামগণ কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এর অর্থ জিজ্ঞেস করেছেন নাকি তারা এগুলোকে গ্রহণ করেছেন ও আত্মসমর্পণ করেছেন? জবাবে বলব, তারা নিশ্চয় দ্বিতীয়টি করেছেন অর্থাৎ তারা এগুলোকে কবুল করেছেন। আমরা একথা জানি না যে, কোনো সাহাবা বলেছে: “হে আল্লাহর রাসূল সুরত দ্বারা উদ্দেশ্য কি”? বরং তারা কোনো প্রশ্ন না করে কবুল করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা একটি মূলনীতি বানিয়ে নিয়েছেন, সেটা হলো: আল্লাহকে কোনো কিছুর মত মনে না করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورى: ١١]
“তাঁর (আল্লাহর) মত কিছু নেই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা: ১১]
এমনকি যদিও আমরা কোনো সূরত বা রূপের কথা বলি তবুও একথা দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে, তিনি মাখলুকের রূপের সাথে সামঞ্জস্য রাখেন না। আর আদম আলাইহিস সালাত ওয়াসসালামের আকৃতি আল্লাহর আকৃতির সদৃশ নয়।
তোমরা লক্ষ্য করেছ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«أَوَّلُ زُمْرَةٍ تَدْخُلُ الجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ»
“প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় হবে”[22]
এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরিউক্ত বাণী দ্বারা কি সদৃশ অত্যাবশ্যক করে? আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তবে নিম্নোক্ত আয়াতে হাকীমের দ্বারা প্রমাণিত যে তা কোনো সদৃশ ছাড়া:
﴿ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورى: ١١]
“তাঁর (আল্লাহর) মত কিছু নেই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা: ১১]
কিছু সালাফ উলামায়ে কিরাম বলেছেন: এখানে আকৃতি বলতে বুঝানো হয়েছে: আল্লাহ তা‘আলা এ সূরত বা রূপটি সর্বোত্তম অবয়বে পছন্দ করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে আকৃতি দান করেছেন এবং পুনর্বিন্যাস করেছেন। অতএব আল্লাহ যে আকৃতিকে নিজে যথাযথ তত্ত্বাবধান করেছেন তাকে অসুন্দর গালি দেওয়া বা তাকে আঘাত করা সমীচিন নয়।
তবে প্রথম মতটিই বেশী নিরাপদ। কেননা দ্বিতীয় মতে তা’বীল বা অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। অতএব আমরা একথা গ্রহণ করব যে, আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তবে কোনো সদৃশ ব্যতীত।
দশম প্রশ্ন: কতিপয় বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম বলেন যে, কুরআনের মাজায না থাকার সবচেয়ে বড় দলিল হলো: মাজাযের নফী করা জায়েয। কিন্তু কুরআনে এমন কিছু নাই যা নফী করা যায়।
আমার কাছে আর একটি বিষয় খটকা লাগে যে, কুরআনে অনেক খবর বা সংবাদ আছে, আর খবর বলা হয় যার বাহককে সত্যবাদি বা মিথ্যাবাদি বলা যায়। অথচ কুরআনে এমন কিছু নেই যা মিথ্যা প্রতিপন্ন করা যায়। দয়া করে জানাবেন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
জবাব: খবরের ব্যাখ্যায় উলামা কিরামদের কথার অর্থ হলো: সংবাদদাতাকে একথা বলা যাবে যে, সে সত্যবাদি বা মিথ্যাবাদি, তাদের কথার উদ্দেশ্য হলো, খবরদাতার দিকে না তাকিয়ে স্বয়ং খবরটা। অর্থাৎ সংবাদদাতার দিকে বিবেচনা না করে শুধু সংবাদকে বিবেচনা করেই তা বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ খবরপ্রদানকারীর ব্যাপারে এটা বলা যাবে না যে, সে সত্যবাদি কিংবা মিথ্যাবাদি। সংবাদের দিক থেকে; এর সংবাদদাতার হিসেবে নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত খবরের ক্ষেত্রে এ কথা বলা যাবে না যে, এতে মিথ্যার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে মুসাইলামাতুল কাযযাব, যে নিজেকে নবী দাবী করেছিল তাঁর কথাকে বলা যাবে না যে, এতে সত্যের সম্ভাবনা রয়েছে।
আর কুরআনে বা অন্য ক্ষেত্রে মাজাযের ব্যাপারে বলব: এটা আলেমগণের মতানৈক্যের স্থান। এ ব্যাপারে তাদের অনেক মতবিরোধ আছে। তবে আমাদের একথা জানা উচিত যে, শব্দের নানা অর্থ আছে। সিয়াক্ব তথা কথার পূর্বাপর ধরণই অর্থ নির্ধারণ করে। একটি শব্দ এক স্থানে এক অর্থ প্রদান করে, কিন্তু সেটি আবার পূর্বাপর ধরণের কারণে অন্যত্র আরেক অর্থ প্রদান করে।
যখন আমরা বলব: এটা শব্দের হাক্বিকত তথা মূল অর্থ, তখন আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কেননা কুরআনে বর্ণিত ٱلۡقَرۡيَةِۖ আল-ক্বারইয়া শব্দটি গ্রামের অধিবাসী ও জনপদ দু অর্থেই ব্যবহৃত হয়। অতএব, আল্লাহর বাণী:
﴿ إِنَّا مُهۡلِكُوٓاْ أَهۡلِ هَٰذِهِ ٱلۡقَرۡيَةِۖ ٣١ ﴾ [العنكبوت: ٣١]
“নিশ্চয় আমরা এ জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব”, [সূরা ‘আনকাবূত: ৩১] এখানে ٱلۡقَرۡيَةِۖ দ্বারা জনপদকে বুঝানো হয়েছে। আবার কুরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে:
﴿ وَسَۡٔلِ ٱلۡقَرۡيَةَ ٱلَّتِي كُنَّا فِيهَا ٨٢ ﴾ [يوسف: ٨٢]
‘আর যে জনপদে আমরা ছিলাম তাকে জিজ্ঞাসা করুন” [সূরা ইউসূফ: ৮২] এখানে ٱلۡقَرۡيَةِۖ দ্বারা জনপদের অধিবাসীকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং দেখুন একই শব্দ এক স্থানে অর্থ হলো জনপদ, আর অন্য স্থানে অর্থ হলো অধিবাসী।
কোনো বিবেকবানের পক্ষে একথা বলা সমীচীন হবে না যে, ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সন্তানেরা তাদের পিতার সাথে কথা:
﴿ وَسَۡٔلِ ٱلۡقَرۡيَةَ ٱلَّتِي كُنَّا فِيهَا ٨٢ ﴾ [يوسف: ٨٢]
“আর যে জনপদে আমরা ছিলাম তাকে জিজ্ঞাসা করুন” [সূরা ইউসূফ: ৮২] এখানে ٱلۡقَرۡيَةِۖ দ্বারা একথা বুঝানো সম্ভব নয় যে, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম জনপদে গিয়ে সেখানকার দেয়ালের কাছে জিজ্ঞেস করবে, এটা কখনও উদ্দেশ্য হতে পারে না।
ইবন তাইমিয়া রহ. এর মত হচ্ছে যে, আরবি ভাষা ও কুরআনে মাজায নেই। কেননা শব্দের অর্থ তার সিয়াক্ব তথা পূর্বাপর ধরণ বুঝে অর্থ নির্ধারিত হয়। যখন পূর্বাপর ধরণ (সিয়াক্ব) দ্বারা অর্থ নির্ধারিত হবে তখন হাক্বিকতই উদ্দেশ্য হবে, ফলে আর কোনো দ্বিধা থাকে না।
যারা বলেন যে, কুরআনে মাজায আছে তারা নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী দ্বারা দলিল দেন,
﴿ فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارٗا يُرِيدُ أَن يَنقَضَّ ٧٧ ﴾ [الكهف: ٧٧]
“অতঃপর তারা সেখানে একটি প্রাচীর দেখতে পেল, যা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।” [সূরা আল-কাহফ: ৭৭]
তারা বলেন, ইরাদা শুধু যাদের অনুভূতি আছে তাদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়। দেয়ালের কোনো অনুভূতি নেই। এটা তাদের মত।
কিন্তু আমরা বলব: দেয়ালের ইরাদা আছে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ পাহাড়কে বলেছেন:
«هَذَا جُبَيْلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ»
“এ পাহাড়টি আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসি।”[23] মুহাব্বত ইরাদার চেয়েও খাস বা বেশি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। সুতরাং কে বলবে দেয়ালের ইচ্ছাশক্তি নাই, অথচ আল্লাহ বলেছেন,
﴿ يُرِيدُ أَن يَنقَضَّ ٧٧ ﴾ [الكهف: ٧٧]
“সেটি পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।” [সূরা আল-কাহফ: ৭৭], হ্যাঁ কিছু লোক শুধু তাদের নিজেদের বুঝ অনুযায়ী সেটা বলতে পারেন। তারা বলেন, ইরাদা শুধু যাদের অনুভূতি আছে তাদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়। অথচ হাদীসে এসেছে,
«هَذَا جُبَيْلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ»
“এ পাহাড়টি আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসি।” এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, পাহাড়ের ভালবাসা আছে।
কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন: কিভাবে বুঝব যে, দেয়ালের পড়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল, তবে আমরা বলব: সেটি হেলে যাওয়া বা ফেটে যাওয়ার দ্বারা বুঝা যাবে যে দেয়ালের ইচ্ছা শক্তি আছে।
আমার কাছে আর একটি বিষয় খটকা লাগে যে, কুরআনে অনেক খবর বা সংবাদ আছে, আর খবর বলা হয় যার বাহককে সত্যবাদি বা মিথ্যাবাদি বলা যায়। অথচ কুরআনে এমন কিছু নেই যা মিথ্যা প্রতিপন্ন করা যায়। দয়া করে জানাবেন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
জবাব: খবরের ব্যাখ্যায় উলামা কিরামদের কথার অর্থ হলো: সংবাদদাতাকে একথা বলা যাবে যে, সে সত্যবাদি বা মিথ্যাবাদি, তাদের কথার উদ্দেশ্য হলো, খবরদাতার দিকে না তাকিয়ে স্বয়ং খবরটা। অর্থাৎ সংবাদদাতার দিকে বিবেচনা না করে শুধু সংবাদকে বিবেচনা করেই তা বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ খবরপ্রদানকারীর ব্যাপারে এটা বলা যাবে না যে, সে সত্যবাদি কিংবা মিথ্যাবাদি। সংবাদের দিক থেকে; এর সংবাদদাতার হিসেবে নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত খবরের ক্ষেত্রে এ কথা বলা যাবে না যে, এতে মিথ্যার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে মুসাইলামাতুল কাযযাব, যে নিজেকে নবী দাবী করেছিল তাঁর কথাকে বলা যাবে না যে, এতে সত্যের সম্ভাবনা রয়েছে।
আর কুরআনে বা অন্য ক্ষেত্রে মাজাযের ব্যাপারে বলব: এটা আলেমগণের মতানৈক্যের স্থান। এ ব্যাপারে তাদের অনেক মতবিরোধ আছে। তবে আমাদের একথা জানা উচিত যে, শব্দের নানা অর্থ আছে। সিয়াক্ব তথা কথার পূর্বাপর ধরণই অর্থ নির্ধারণ করে। একটি শব্দ এক স্থানে এক অর্থ প্রদান করে, কিন্তু সেটি আবার পূর্বাপর ধরণের কারণে অন্যত্র আরেক অর্থ প্রদান করে।
যখন আমরা বলব: এটা শব্দের হাক্বিকত তথা মূল অর্থ, তখন আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কেননা কুরআনে বর্ণিত ٱلۡقَرۡيَةِۖ আল-ক্বারইয়া শব্দটি গ্রামের অধিবাসী ও জনপদ দু অর্থেই ব্যবহৃত হয়। অতএব, আল্লাহর বাণী:
﴿ إِنَّا مُهۡلِكُوٓاْ أَهۡلِ هَٰذِهِ ٱلۡقَرۡيَةِۖ ٣١ ﴾ [العنكبوت: ٣١]
“নিশ্চয় আমরা এ জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব”, [সূরা ‘আনকাবূত: ৩১] এখানে ٱلۡقَرۡيَةِۖ দ্বারা জনপদকে বুঝানো হয়েছে। আবার কুরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে:
﴿ وَسَۡٔلِ ٱلۡقَرۡيَةَ ٱلَّتِي كُنَّا فِيهَا ٨٢ ﴾ [يوسف: ٨٢]
‘আর যে জনপদে আমরা ছিলাম তাকে জিজ্ঞাসা করুন” [সূরা ইউসূফ: ৮২] এখানে ٱلۡقَرۡيَةِۖ দ্বারা জনপদের অধিবাসীকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং দেখুন একই শব্দ এক স্থানে অর্থ হলো জনপদ, আর অন্য স্থানে অর্থ হলো অধিবাসী।
কোনো বিবেকবানের পক্ষে একথা বলা সমীচীন হবে না যে, ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সন্তানেরা তাদের পিতার সাথে কথা:
﴿ وَسَۡٔلِ ٱلۡقَرۡيَةَ ٱلَّتِي كُنَّا فِيهَا ٨٢ ﴾ [يوسف: ٨٢]
“আর যে জনপদে আমরা ছিলাম তাকে জিজ্ঞাসা করুন” [সূরা ইউসূফ: ৮২] এখানে ٱلۡقَرۡيَةِۖ দ্বারা একথা বুঝানো সম্ভব নয় যে, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম জনপদে গিয়ে সেখানকার দেয়ালের কাছে জিজ্ঞেস করবে, এটা কখনও উদ্দেশ্য হতে পারে না।
ইবন তাইমিয়া রহ. এর মত হচ্ছে যে, আরবি ভাষা ও কুরআনে মাজায নেই। কেননা শব্দের অর্থ তার সিয়াক্ব তথা পূর্বাপর ধরণ বুঝে অর্থ নির্ধারিত হয়। যখন পূর্বাপর ধরণ (সিয়াক্ব) দ্বারা অর্থ নির্ধারিত হবে তখন হাক্বিকতই উদ্দেশ্য হবে, ফলে আর কোনো দ্বিধা থাকে না।
যারা বলেন যে, কুরআনে মাজায আছে তারা নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী দ্বারা দলিল দেন,
﴿ فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارٗا يُرِيدُ أَن يَنقَضَّ ٧٧ ﴾ [الكهف: ٧٧]
“অতঃপর তারা সেখানে একটি প্রাচীর দেখতে পেল, যা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।” [সূরা আল-কাহফ: ৭৭]
তারা বলেন, ইরাদা শুধু যাদের অনুভূতি আছে তাদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়। দেয়ালের কোনো অনুভূতি নেই। এটা তাদের মত।
কিন্তু আমরা বলব: দেয়ালের ইরাদা আছে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ পাহাড়কে বলেছেন:
«هَذَا جُبَيْلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ»
“এ পাহাড়টি আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসি।”[23] মুহাব্বত ইরাদার চেয়েও খাস বা বেশি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। সুতরাং কে বলবে দেয়ালের ইচ্ছাশক্তি নাই, অথচ আল্লাহ বলেছেন,
﴿ يُرِيدُ أَن يَنقَضَّ ٧٧ ﴾ [الكهف: ٧٧]
“সেটি পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।” [সূরা আল-কাহফ: ৭৭], হ্যাঁ কিছু লোক শুধু তাদের নিজেদের বুঝ অনুযায়ী সেটা বলতে পারেন। তারা বলেন, ইরাদা শুধু যাদের অনুভূতি আছে তাদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়। অথচ হাদীসে এসেছে,
«هَذَا جُبَيْلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ»
“এ পাহাড়টি আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসি।” এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, পাহাড়ের ভালবাসা আছে।
কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন: কিভাবে বুঝব যে, দেয়ালের পড়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল, তবে আমরা বলব: সেটি হেলে যাওয়া বা ফেটে যাওয়ার দ্বারা বুঝা যাবে যে দেয়ালের ইচ্ছা শক্তি আছে।
একাদশ প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাবগত ও অভ্যাসগত কাজ এবং যে সব কাজ আমাদেরকে অনুসরণ করতে অত্যাবশ্যক করেছেন এর মধ্যে পার্থক্য আছে? জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
জবাব: প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলহামদুলিল্লাহ, উসূলে ফিকহবিদগণ এ প্রশ্নের উত্তর পরিপূর্ণ উত্তর দিয়েছেন।
সে সব কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাবজাত যা শারীরিক চাহিদার কারণে করেছিলেন, যেমন: রাসূলের ঘুম, এটা কি জন্মগত বা স্বভাবজাত নাকি ইবাদতগত নাকি অভ্যাসগত? উত্তরে বলব, এ ধরণের কাজ স্বভাবজাত। তাঁর পিপাসা, পিপাসা পেলে পানি পান করা, ক্ষুধায় খাবার গ্রহণ করা ইত্যাদি কাজ তাঁর স্বভাবগত চাহিদা।
তাঁর কাপড়, চাদর ও পাগড়ি পরিধান হলো অভ্যাসগত কাজ। মাথায় চুল রাখা কি অভ্যাসগত নাকি ইবাদত সে ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। তবে অধিক বিশুদ্ধ কথা হলো এটা তাঁর অভ্যাসগত কাজ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সব কাজ ইবাদতের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছিল সেগুলো ইবাদতগত। এটা জানা যাবে যখন এ কাজগুলো মানুষের স্বভাব বা অভ্যাস করতে চায় না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজের মূল হলো তা‘য়াব্বুদী বা ইবাদতগত হওয়া।
জবাব: প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলহামদুলিল্লাহ, উসূলে ফিকহবিদগণ এ প্রশ্নের উত্তর পরিপূর্ণ উত্তর দিয়েছেন।
সে সব কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাবজাত যা শারীরিক চাহিদার কারণে করেছিলেন, যেমন: রাসূলের ঘুম, এটা কি জন্মগত বা স্বভাবজাত নাকি ইবাদতগত নাকি অভ্যাসগত? উত্তরে বলব, এ ধরণের কাজ স্বভাবজাত। তাঁর পিপাসা, পিপাসা পেলে পানি পান করা, ক্ষুধায় খাবার গ্রহণ করা ইত্যাদি কাজ তাঁর স্বভাবগত চাহিদা।
তাঁর কাপড়, চাদর ও পাগড়ি পরিধান হলো অভ্যাসগত কাজ। মাথায় চুল রাখা কি অভ্যাসগত নাকি ইবাদত সে ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। তবে অধিক বিশুদ্ধ কথা হলো এটা তাঁর অভ্যাসগত কাজ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সব কাজ ইবাদতের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছিল সেগুলো ইবাদতগত। এটা জানা যাবে যখন এ কাজগুলো মানুষের স্বভাব বা অভ্যাস করতে চায় না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজের মূল হলো তা‘য়াব্বুদী বা ইবাদতগত হওয়া।
দ্বাদশ প্রশ্ন: সালফে সালেহীনদের মানহাজ তথা পথ দ্বারা কি বুঝায়? এ পথের অনুসারীদের আলামত কি? এ পথেই চলতে হবে?
জবাব: সালফে সালেহীনদের মানহাজ তথা পথ দ্বারা বুঝায় আক্বিদা, ইবাদত, লেনদেন ইত্যাদি কাজে তাদের পথে চলা। এটা অনেক ব্যাপক অর্থের বাক্য।
সব মাসআলায় আমরা একথা বলতে পারি যে, এটা সালফে সালেহীনদের মানহাজ তথা পথ বা তাদের বিরোধীদের পথ। কিন্তু সালফে সালেহীনদের মানহাজ তথা পথ হলো: আক্বিদা, ইবাদত, লেনদেন ইত্যাদি কাজে তাদের পন্থা অনুসরণ করা।
এ পথের অনুসারীদের আলামত হলো: তারা দুনিয়া ও আখেরাতের সব কাজে সালাফে সালেহীনের মত আখলাক বা চরিত্র অবলম্বন করবে আর তাদের পথের অনুসরণ করবে। যারা নিরাপদ থাকতে চায় তাদের উচিত সালাফের এ সুন্দর পথে চলা।
জবাব: সালফে সালেহীনদের মানহাজ তথা পথ দ্বারা বুঝায় আক্বিদা, ইবাদত, লেনদেন ইত্যাদি কাজে তাদের পথে চলা। এটা অনেক ব্যাপক অর্থের বাক্য।
সব মাসআলায় আমরা একথা বলতে পারি যে, এটা সালফে সালেহীনদের মানহাজ তথা পথ বা তাদের বিরোধীদের পথ। কিন্তু সালফে সালেহীনদের মানহাজ তথা পথ হলো: আক্বিদা, ইবাদত, লেনদেন ইত্যাদি কাজে তাদের পন্থা অনুসরণ করা।
এ পথের অনুসারীদের আলামত হলো: তারা দুনিয়া ও আখেরাতের সব কাজে সালাফে সালেহীনের মত আখলাক বা চরিত্র অবলম্বন করবে আর তাদের পথের অনুসরণ করবে। যারা নিরাপদ থাকতে চায় তাদের উচিত সালাফের এ সুন্দর পথে চলা।
ত্রয়োদশ প্রশ্ন: সুন্নাহকে সঠিকভাবে বুঝা ও সহিহভাবে সুন্নাহের উপর আমল করার পদ্ধতি কি?
জবাব: একথা জেনে রাখা দরকার যে, বুঝ বা জ্ঞান হলো মহান আল্লাহ তা‘আলার এক মহা নিয়ামত। মানুষ স্বীয় প্রচেষ্টায় এটা লাভ করতে পারেনা। এটা আল্লাহর দান। এজন্যই আবু জুহাইফা যখন আলী ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করছিলেন:
سَأَلْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ هَلْ عِنْدَكُمْ شَيْءٌ مِمَّا لَيْسَ فِي القُرْآنِ؟، وَقَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ مَرَّةً: مَا لَيْسَ عِنْدَ النَّاسِ؟ فَقَالَ: «وَالَّذِي فَلَقَ الحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ مَا عِنْدَنَا إِلَّا مَا فِي القُرْآنِ إِلَّا فَهْمًا يُعْطَى رَجُلٌ فِي كِتَابِهِ، وَمَا فِي الصَّحِيفَةِ» قُلْتُ: وَمَا فِي الصَّحِيفَةِ؟ قَالَ: «العَقْلُ، وَفِكَاكُ الأَسِيرِ، وَأَنْ لاَ يُقْتَلَ مُسْلِمٌ بِكَافِرٍ»
তিনি বলেন, আমি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কুরআনে যা কিছু আছে তা ছাড়া আপনাদের নিকট কোনো কিছু আছে কি? (অর্থাৎ খিলাফতের কোনো অসিয়ত কি এসেছে, যার কথা তখন খুব প্রসার করে বলা হচ্ছিল) তিনি বললেন: না, সে আল্লাহর কসম! যিনি শস্যদানাকে বিদীর্ণ করেন এবং প্রাণী সৃষ্টি করেন। আল্লাহ কুরআন সম্পর্কে মানুষকে যে জ্ঞান দান করেছেন এবং সহীফার মধ্যে যা রয়েছে, এ ছাড়া আমি আর কিছু জানি না। আমি বললাম: এ সহীফাতে কি আছে? তিনি বললেন, ‘দীয়াতের বিধান’ এ ছাড়া দাস মুক্তকরণ এবং কোনো মুসলিমকে যেন কোনো কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয় (এ সম্পর্কিত বিধান)।”[24]
মানুষ জ্ঞানের বিচারে নানা রকম হয়ে থাকে। এজন্যই দেখবে উপরিউক্ত হাদীস থেকে কিছু আলেম দশটি হুকুম বের করেছেন, আবার কেউ এর চেয়েও অনেক বেশি বিধান ইজতিহাদ করে বের করেছেন। আবার কাউকে দেখবে সে কিছুই বের করতে পারেনি।
এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ করব, এক লোক ইমাম আহমদ রহ. এর মাযহাবের কিতাব ‘আল-ফুরু‘’ কিতাব হিফয করেছে। এটি অনেক বড় একটি কিতাব। কিন্তু সে কোনো মাস’আলারই হুকুম জানে না। তার সে জ্ঞান নেই। তার সঙ্গী সাথীরা তাকে উক্ত কিতাবের একটি কপি মনে করে সঙ্গে নিয়ে বের হতো, যখনই তাদের কাছে সন্দেহ হতো তখন তারা তাকে বলত, তুমি অমুক অধ্যায় বা পরিচ্ছেদ পড়। সে পড়লে তারা সেখান থেকে হুকুম রেব করত। সুতরাং এ সব আল্লাহর দান, তিনি যাকে খুশী তাকে দান করেন।
কিন্তু জ্ঞানের কিছু আসবাব তথা অর্জনের উপায় আছে, তা হলো: কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক জীবনকে গড়া, এতে গভীরভাবে চিন্তা গবেষণা করা, পূর্ববর্তী উলামাদের কিতাব বার বার পড়া।
জবাব: একথা জেনে রাখা দরকার যে, বুঝ বা জ্ঞান হলো মহান আল্লাহ তা‘আলার এক মহা নিয়ামত। মানুষ স্বীয় প্রচেষ্টায় এটা লাভ করতে পারেনা। এটা আল্লাহর দান। এজন্যই আবু জুহাইফা যখন আলী ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করছিলেন:
سَأَلْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ هَلْ عِنْدَكُمْ شَيْءٌ مِمَّا لَيْسَ فِي القُرْآنِ؟، وَقَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ مَرَّةً: مَا لَيْسَ عِنْدَ النَّاسِ؟ فَقَالَ: «وَالَّذِي فَلَقَ الحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ مَا عِنْدَنَا إِلَّا مَا فِي القُرْآنِ إِلَّا فَهْمًا يُعْطَى رَجُلٌ فِي كِتَابِهِ، وَمَا فِي الصَّحِيفَةِ» قُلْتُ: وَمَا فِي الصَّحِيفَةِ؟ قَالَ: «العَقْلُ، وَفِكَاكُ الأَسِيرِ، وَأَنْ لاَ يُقْتَلَ مُسْلِمٌ بِكَافِرٍ»
তিনি বলেন, আমি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কুরআনে যা কিছু আছে তা ছাড়া আপনাদের নিকট কোনো কিছু আছে কি? (অর্থাৎ খিলাফতের কোনো অসিয়ত কি এসেছে, যার কথা তখন খুব প্রসার করে বলা হচ্ছিল) তিনি বললেন: না, সে আল্লাহর কসম! যিনি শস্যদানাকে বিদীর্ণ করেন এবং প্রাণী সৃষ্টি করেন। আল্লাহ কুরআন সম্পর্কে মানুষকে যে জ্ঞান দান করেছেন এবং সহীফার মধ্যে যা রয়েছে, এ ছাড়া আমি আর কিছু জানি না। আমি বললাম: এ সহীফাতে কি আছে? তিনি বললেন, ‘দীয়াতের বিধান’ এ ছাড়া দাস মুক্তকরণ এবং কোনো মুসলিমকে যেন কোনো কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয় (এ সম্পর্কিত বিধান)।”[24]
মানুষ জ্ঞানের বিচারে নানা রকম হয়ে থাকে। এজন্যই দেখবে উপরিউক্ত হাদীস থেকে কিছু আলেম দশটি হুকুম বের করেছেন, আবার কেউ এর চেয়েও অনেক বেশি বিধান ইজতিহাদ করে বের করেছেন। আবার কাউকে দেখবে সে কিছুই বের করতে পারেনি।
এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ করব, এক লোক ইমাম আহমদ রহ. এর মাযহাবের কিতাব ‘আল-ফুরু‘’ কিতাব হিফয করেছে। এটি অনেক বড় একটি কিতাব। কিন্তু সে কোনো মাস’আলারই হুকুম জানে না। তার সে জ্ঞান নেই। তার সঙ্গী সাথীরা তাকে উক্ত কিতাবের একটি কপি মনে করে সঙ্গে নিয়ে বের হতো, যখনই তাদের কাছে সন্দেহ হতো তখন তারা তাকে বলত, তুমি অমুক অধ্যায় বা পরিচ্ছেদ পড়। সে পড়লে তারা সেখান থেকে হুকুম রেব করত। সুতরাং এ সব আল্লাহর দান, তিনি যাকে খুশী তাকে দান করেন।
কিন্তু জ্ঞানের কিছু আসবাব তথা অর্জনের উপায় আছে, তা হলো: কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক জীবনকে গড়া, এতে গভীরভাবে চিন্তা গবেষণা করা, পূর্ববর্তী উলামাদের কিতাব বার বার পড়া।
চতুর্দশ প্রশ্ন: আছার তথা প্রাচীন নিদর্শন সম্পর্কে এক লোক জিজ্ঞেস করেছে। এর গুরুত্ব কি? এগুলো পরিদর্শন করার হুকুম কি? আল্লাহ আপনাদের সকলকে হিফাযত করুন।
জবাব: আমরা জানি যে, প্রাচীন নিদর্শন যদি উপকারী হয় তবে এতে কোনো অসুবিধে নেই। কিন্তু এগুলোর পরিদর্শনকে যদি ইবাদতের অসীলা বানানো হয় এবং সে যদি বিশ্বাস করে যে, এর প্রভাব আছে, তবে এগুলো সরিয়ে ফেলা উচিত, বরং কখনও কখনও তা নিঃশেষ করে দেওয়া ওয়াজিব হয়ে পড়ে। কেননা আমিরুল মু’মিনিন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে যখন খবর এলো যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে গাছের তলায় ‘বাই‘আতে রিদওয়ান’ করেছেন সে গাছটির উদ্দেশ্যে একদল লোক বের হতো। ফলে ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উক্ত গাছটি কেটে ফেলার নির্দেশ দেন। আলহামদুলিল্লাহ গাছটি খলিফার নির্দেশে কর্তিত হয়। বর্তমান যুগে যদি গাছটি বিদ্যমান থাকত তাহলে কি ঘটত?! মানুষ ক্বাবায় হজ্ব না করে সে গাছটিকে হজ্ব করত। কেননা বাতিলের প্রতি মানুষের ঝোঁক খুব বেশী।
ঐতিহাসিক নিদর্শন দু’ধরণের:
প্রথম হলো: যে সব প্রাচীন নিদর্শনের কোনো ভিত্তি নেই সেগুলো ভেঙ্গে ফেলাই ভালো।
দ্বিতীয়: যে সব প্রাচীন নিদর্শনের ভিত্তি আছে, তখন দেখতে হবে শরিয়ত কি এগুলো যিয়ারত করতে নির্দেশ দিয়েছে? যদি নির্দেশ দেয় তবে ভালো, নতুবা উত্তম হলো নিঃশেষ করে দেয়া। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: হেরা পর্বত, সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অহী নাযিল হয়েছিল। কিন্তু এটি কি আরোহণ করে সম্মান প্রদর্শনের স্থান? উত্তরে বলব, না। কখনো না। যদি এটি সম্মান প্রদর্শনের জায়গা হতো তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সর্বপ্রথম এ কাজটি করতেন। এভাবে সাওর পর্বতের ব্যাপারেও বলা যায়।
জবাব: আমরা জানি যে, প্রাচীন নিদর্শন যদি উপকারী হয় তবে এতে কোনো অসুবিধে নেই। কিন্তু এগুলোর পরিদর্শনকে যদি ইবাদতের অসীলা বানানো হয় এবং সে যদি বিশ্বাস করে যে, এর প্রভাব আছে, তবে এগুলো সরিয়ে ফেলা উচিত, বরং কখনও কখনও তা নিঃশেষ করে দেওয়া ওয়াজিব হয়ে পড়ে। কেননা আমিরুল মু’মিনিন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে যখন খবর এলো যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে গাছের তলায় ‘বাই‘আতে রিদওয়ান’ করেছেন সে গাছটির উদ্দেশ্যে একদল লোক বের হতো। ফলে ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উক্ত গাছটি কেটে ফেলার নির্দেশ দেন। আলহামদুলিল্লাহ গাছটি খলিফার নির্দেশে কর্তিত হয়। বর্তমান যুগে যদি গাছটি বিদ্যমান থাকত তাহলে কি ঘটত?! মানুষ ক্বাবায় হজ্ব না করে সে গাছটিকে হজ্ব করত। কেননা বাতিলের প্রতি মানুষের ঝোঁক খুব বেশী।
ঐতিহাসিক নিদর্শন দু’ধরণের:
প্রথম হলো: যে সব প্রাচীন নিদর্শনের কোনো ভিত্তি নেই সেগুলো ভেঙ্গে ফেলাই ভালো।
দ্বিতীয়: যে সব প্রাচীন নিদর্শনের ভিত্তি আছে, তখন দেখতে হবে শরিয়ত কি এগুলো যিয়ারত করতে নির্দেশ দিয়েছে? যদি নির্দেশ দেয় তবে ভালো, নতুবা উত্তম হলো নিঃশেষ করে দেয়া। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: হেরা পর্বত, সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অহী নাযিল হয়েছিল। কিন্তু এটি কি আরোহণ করে সম্মান প্রদর্শনের স্থান? উত্তরে বলব, না। কখনো না। যদি এটি সম্মান প্রদর্শনের জায়গা হতো তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সর্বপ্রথম এ কাজটি করতেন। এভাবে সাওর পর্বতের ব্যাপারেও বলা যায়।
পঞ্চদশ প্রশ্ন: একজন জিজ্ঞেস করেছে, কাফির দেশে দাওয়াত দেওয়া কি মক্কা বা মদিনায় অবস্থান করার চেয়েও উত্তম?
জবাব: আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া হলো মানুষের সর্বোত্তম কাজ। কাফির দেশে দাওয়াত দেওয়াতে যদি ফলাফল ও প্রভাব পাওয়া যায় তবে মক্কা বা মদিনা অবস্থান না করে সেখানে দাওয়াতি কাজ করা উত্তম। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াত দিতে মক্কা থেকে তায়েফে গিয়েছেন। সাহাবা কিরামগণ নানা দেশ বিজয় হলে মক্কা মদিনা ছেড়ে সেসব দেশে দাওয়াতি কাজে গিয়েছেন।
কিন্তু কাফির দেশে তার দাওয়াত দেওয়াতে যদি কোনো ফায়েদা না হয়, তবে সম্মানিত জায়গায় বসবাস করা উত্তম। এজন্যই উলামা কিরাম মতানৈক্য করেছেন, মক্কা নাকি মদিনায় বসবাস করা উত্তম? তাদের প্রত্যেকেরই দলিল আছে। শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. এর মতে, “যেখানে বাস করলে তার ঈমান ও তাক্বওয়া বাড়বে সেখানে বাস করা উত্তম।”
এভাবেই আমরা আজকের আলোচনা সভা সমাপ্ত করলাম। আশা করি আমাদের এ মজলিস বরকময় হবে। আল্লাহ আমাকে ও আপনাদেরকে উপকারী ইলম ও আমলে সালেহ দান করুন। নিশ্চয় তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে সত্য পথের দা‘ঈ ও সাহায্যকারী বানান। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর।
জবাব: আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া হলো মানুষের সর্বোত্তম কাজ। কাফির দেশে দাওয়াত দেওয়াতে যদি ফলাফল ও প্রভাব পাওয়া যায় তবে মক্কা বা মদিনা অবস্থান না করে সেখানে দাওয়াতি কাজ করা উত্তম। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াত দিতে মক্কা থেকে তায়েফে গিয়েছেন। সাহাবা কিরামগণ নানা দেশ বিজয় হলে মক্কা মদিনা ছেড়ে সেসব দেশে দাওয়াতি কাজে গিয়েছেন।
কিন্তু কাফির দেশে তার দাওয়াত দেওয়াতে যদি কোনো ফায়েদা না হয়, তবে সম্মানিত জায়গায় বসবাস করা উত্তম। এজন্যই উলামা কিরাম মতানৈক্য করেছেন, মক্কা নাকি মদিনায় বসবাস করা উত্তম? তাদের প্রত্যেকেরই দলিল আছে। শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. এর মতে, “যেখানে বাস করলে তার ঈমান ও তাক্বওয়া বাড়বে সেখানে বাস করা উত্তম।”
এভাবেই আমরা আজকের আলোচনা সভা সমাপ্ত করলাম। আশা করি আমাদের এ মজলিস বরকময় হবে। আল্লাহ আমাকে ও আপনাদেরকে উপকারী ইলম ও আমলে সালেহ দান করুন। নিশ্চয় তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে সত্য পথের দা‘ঈ ও সাহায্যকারী বানান। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর।
সূচীপত্র
আলোচ্য বিষয়
পৃষ্টা
উপস্থাপকের কথা
পৃষ্টা
উপস্থাপকের কথা
প্রারম্ভিকা
হাদীস দ্বারা দলিল
সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা বলতে সালাফে সালেহীনদের উদ্দেশ্য
নসসমূহের অর্থ ও এ সম্পর্কে উদাহরণ
সুন্নতের অনুসরণে ভালো প্রভাব
সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা মানে বিদ‘আতকে ঘৃণা করা
রজব মাসে করনীয়
আলোচনায় প্রদত্ত প্রশ্নসমূহ
মসজিদে নামায না পড়িয়ে বেতন নেয়ার হুকুম কি? কেননা মসজিদটি তার বাড়ি থেকে দূরে।
তাওয়াফকারী যদি তাওয়াফ অবস্থায় অপবিত্র হয় এবং সে তার উমরার তাওয়াফ চালিয়ে যায়, তাহলে তার উমরা কি সহীহ হবে?
দুনিয়াবি হাজত পূরণের উদ্দেশ্যে সমষ্টিগতভাবে কুরআন তিলাওয়াতের হুকুম কি?
কিছু লোক বলেন যে, অধিকাংশ মানুষের আমল সে কাজটি সহীহ হওয়ার দলিল। কথাটি কতকুটু সহীহ?
ব্যাংকে ইদা‘ (জমাকরণ) রাখার হুকুম কি?
“আমরা যে বিষয়ে একমত সে বিষয়গুলোতে ঐক্যবদ্ধ থাকব”, আর “যে ব্যাপারে মতানৈক্য করব সে ব্যাপারে একে অপরের কাছে ওজর পেশ করব” । এ কথাটি কতটুকু সঠিক?
আল্লাহর নাম “الشكور” আশ-শাকুর কে الغفور”” আল-গাফুর দিয়ে তাফসির করা কি জায়েয?
পুরুষ জীব জন্তুর বীর্য ক্রয় করে স্ত্রী জন্তুর মাঝে প্রবেশ করিয়ে জন্ম দেয়ানো জায়েয আছে?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী “إن اللَّهَ خَلَقَ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ” এর সালফে সালেহীনদের সঠিক ব্যাখ্যা কি?
কুরআনের মাজায না থাকার দলিল
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাবগত ও অভ্যাসগত কাজ এবং যে সব কাজ আমাদেরকে অনুসরণ করতে অত্যাবশ্যক করেছেন সেগুলোর মধ্যে পার্থক্য
সালফে সালেহীনদের মানহাজ তথা পথ দ্বারা কি বুঝায়?
সুন্নাহকে সঠিকভাবে বুঝা ও সহিহভাবে সুন্নহের উপর আমল করার পদ্ধতি কি?
প্রাচীন নিদর্শন ভ্রমণ ও এর গুরুত্ব কি?
কাফির দেশে দাওয়াত দেয়া উত্তম নাকি মক্কা বা মদিনায় অবস্থান করা?
সূচীপত্র
[1] মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।
[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৭।
[3] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৪ ও ৪৬০৫।
[4] বুখারী, কিতাবুল আযান, বাব রফউল ইয়াদাইন ফি তাকবিরাতুল উলা মা‘আল ইফতিতাহ, হাদীস নং ৭৩৫।
[5] বুখারী, হাদীস নং ১৬০।
[6] ইবন মাযাহ, হাদীস নং ৪৫।
[7] তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬৮২।
[8] বুখারী, হাদীস নং ৬০২৫।
[9] মুসলিম, হাদীস নং ২০৯০।
[10] বুখারী, হাদীস নং ২১৫০।
[11] ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়া: ২৫/২৯০।
[12] শরহে মুহাযযাব: ৩/৫৪৮
[13] মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।
[14] বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭।
[15] মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।
[16] নাসাঈ, কিতাবু সালাতিল ঈদাইন, বাবু কাইফাল খুৎবা, হাদীস নং (১৫৭৮); ইবন মাজাহ, আল-মুকাদ্দামাহ, বাবু ইজতিনাবিল বিদা‘ ওয়াল জাদাল, নং (৪৬)।
[17] মুসলিম, হাদীস নং ২৬৬৪।
[18] মুসনাদে আহমদ: ৪/২৭৮।
[19] বুখারী, হাদীস নং ৯৪৬।
[20] বুখারী, ২২৮৪, মুসলিম, হাদীস নং ১৫৬৫।
[21] বুখারী, হাদীস নং ৬২২৭।
[22] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪৫, মুসলিম, হাদীস নং ২৮৩৪।
[23] বুখারী, হাদীস নং ১৪৪১।
[24] বুখারী, হাদীস নং ৩০৪৭।
_________________________________________________________________________________
[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৭।
[3] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৪ ও ৪৬০৫।
[4] বুখারী, কিতাবুল আযান, বাব রফউল ইয়াদাইন ফি তাকবিরাতুল উলা মা‘আল ইফতিতাহ, হাদীস নং ৭৩৫।
[5] বুখারী, হাদীস নং ১৬০।
[6] ইবন মাযাহ, হাদীস নং ৪৫।
[7] তিরমিযী, হাদীস নং ৪৬৮২।
[8] বুখারী, হাদীস নং ৬০২৫।
[9] মুসলিম, হাদীস নং ২০৯০।
[10] বুখারী, হাদীস নং ২১৫০।
[11] ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়া: ২৫/২৯০।
[12] শরহে মুহাযযাব: ৩/৫৪৮
[13] মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।
[14] বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭।
[15] মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।
[16] নাসাঈ, কিতাবু সালাতিল ঈদাইন, বাবু কাইফাল খুৎবা, হাদীস নং (১৫৭৮); ইবন মাজাহ, আল-মুকাদ্দামাহ, বাবু ইজতিনাবিল বিদা‘ ওয়াল জাদাল, নং (৪৬)।
[17] মুসলিম, হাদীস নং ২৬৬৪।
[18] মুসনাদে আহমদ: ৪/২৭৮।
[19] বুখারী, হাদীস নং ৯৪৬।
[20] বুখারী, ২২৮৪, মুসলিম, হাদীস নং ১৫৬৫।
[21] বুখারী, হাদীস নং ৬২২৭।
[22] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪৫, মুসলিম, হাদীস নং ২৮৩৪।
[23] বুখারী, হাদীস নং ১৪৪১।
[24] বুখারী, হাদীস নং ৩০৪৭।
_________________________________________________________________________________
সংকলন: শাইখ মুহাম্মদ সালিহ আল-‘উসাইমীন রহ.
অনুবাদক: আব্দুল্লাহ আল মামুন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
অনুবাদক: আব্দুল্লাহ আল মামুন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
No comments:
Post a Comment