নাপাক দূর করার জন্য কি পানি জরুরী? না পানি ব্যতীত অন্য কোন তরল পদার্থ দ্বারা নাপাকী দূর করা জায়েয আছে?
এ মাসআলার ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন, এর মধ্যে প্রসিদ্ধ দু’টি মতামত হলো:
১ম মতামত:
নাপাকী দূর হওয়ার জন্য পানি শর্ত। সঠিক দলীল প্রমাণাদী ছাড়া পানি ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা নাপাক দূর করা বিশুদ্ধ নয়।
আর এটা ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদ
(রাহিমাহুল্লাহ) এর প্রসিদ্ধ দু’টি মাযহাব এবং ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)
এর নতুন মতামত। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং তার অনুসারীগণ এ মতামত
গ্রহণ করেছেন।[1] তাদের দলীল হলো:
(১) আল্লাহ্ বলেন:﴾ ﴿ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً لِيُطَهِّرَكُمْ بِهِ আকাশ হতে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর যাতে এর মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করেন (সূরা আনফাল -১১)। এছাড়াও অন্যান্য দলীল রয়েছে, যা প্রমাণ করে পানি পবিত্রকারী উপাদান।
(২) মহানাবী (ﷺ) জনৈক বেদুঈনের পেশাবে পানি ঢালার নির্দেশ দিয়েছিলেন ।[2] তারা বলেন এখানে أمر বা আদেশটা وجوب বা আবশ্যকতার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং পানি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা নাপাক দূর করা যথেষ্ট হবে না।
(৩) আবূ সা‘লাবার হাদীসে রয়েছে মহানাবী (ﷺ) আহলে কিতাবদের পাত্র পানি দ্বারা ধৌত করার আদেশ দিয়েছিলেন।[3]
(৪) ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
নাজাসাত থেকে পবিত্রতা অর্জনের মূল হাতিয়ার হচ্ছে পানি। কেননা শরীয়াত
প্রবর্তক তাকে প্রবিত্র বলে আখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং শরীয়াতের পক্ষ থেকে কোন
দলীল প্রমাণ ব্যতীত পানি ছাড়া অন্য কিছুকে পবিত্রকারী হিসেবে গণ্য করা যাবে
না। আর যদি দলীল সাব্যাস্ত থাকে তাহলে হবে। কেননা এ ক্ষেত্রে পানি যে
পবিত্রকারী এটা জানা বিষয় থেকে অজানা বিষয়ের দিকে প্রত্যাবর্তন করা অবশ্যক
হচ্ছে, যা শরীয়াতের দাবীর পরিপন্থি।
২য় অভিমত:
যে সমস্ত জিনিস দ্বারা নাপাকী দূর করা সম্ভব তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন বৈধ। এর জন্য পানি হওয়া শর্ত নয়।
এটা ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) এর
অভিমত। ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) অপর একটি
বর্ণনা মতে এ অভিমত পোষণ করেছেন। ইমাম শাফেঈ ও ইবনে হাযম (রাহিমাহুল্লাহ)
এর পূর্বের অভিমত এটিই। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) ও
আল্লামা ইবনে উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) এ অভিমতটিকে পছন্দ করেছেন।[4] আর এ
অভিমতটিই প্রাধান্য প্রাপ্ত। এর কারণ নিম্নরূপ:
(১) পানি নিজে পবিত্র ও অন্যকে
পবিত্রকারী। তাই এটা অন্য কোন বস্ত্তকে পবিত্রকারী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা
দেয় না। কেননা নিয়ম হল, কোন নির্দিষ্ট কারণ (সাবাব) না হওয়াটা কোন
নির্দিষ্ট বিষয় (মুসাব্বাবকে) না-বোধক করতে চায় না। চাই তার দলীল থাক বা না
থাক। কেননা কার্যকরণ (মুয়াস্সার) কখনও অন্য বস্ত্তও হতে পারে। আর এটা
নাজাসাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।[5]
আমার বক্তব্য: কতিপয়
পানীয় দ্রব্য, যেমনঃ শির্কা এবং শিল্পজাত পবিত্রকারী জিনিস পানির মতই
নাজাসাত দূর করতে পারে। বরং পানির চেয়ে এগুলোতে বেশি পরিষ্কার হয়।
(২) ইসলামী শরীয়াত নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট
অনুযায়ী পানি দ্বারা নাপাকী দূর করার নির্দেশ দিয়েছে। সার্বজনীন ভাবে এ
নির্দেশ দেয়া হয় নি যে, পানি দ্বারাই নাপাকী দূর করতে হবে।
(৩) ইসলামী শরীয়াত কতিপয় নাপাকী পানি
ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা করার অনুমতি দিয়েছে। যেমন: পাথর দ্বারা ইসতিনজা
করা, জুতা সেন্ডেল মাটিতে মর্দন করে পবিত্র করা, কাপড়ের নীচের অংশ ভূমিতে
স্পর্শ করার ফলে পবিত্র করণ ইত্যাদি। এ সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলোচনা করা
হয়েছে।
(৪) নাজাসাত দূর করাটা নির্দেশিত বিষয়ের
অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং এটা নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে হবে এমন বিষয়ের
অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে কোন উপায়ে তা অর্জিত হলেই হুকুম সাব্যাস্ত হবে। এ
কারণে নাপাকী দূর করার জন্য নিয়ত শর্ত নয়। কিন্তু যদি তা বান্দার কর্ম ও
নিয়তের মাধ্যমে দূর করা হয়, তাহলে তা বেশি উত্তম হবে। আর যদি কর্ম ও নিয়ত
ছাড়া হয়, তাহলে শুধু ক্ষতিকর জিনিসের বিধান দূর হবে মাত্র। এতে কোন সাওয়াব
হবে না এবং শাস্তিও হবে না।
এর সমর্থনে আরও বলা যায় যে, মুসলমানদের
ঐকমত্যে যারা মদকে নাজাসাত বলেন, তাদের নিকট মদকে যদি শির্কা বানানো হয়,
তাহলে তা নিজে পবিত্র।
আমার বক্তব্য: বিশুদ্ধ
মতামত হচ্ছে এটাই যে, কোন বস্ত্ত দ্বারা নাপাকী দূর হলেই তার (অপবিত্রতার)
হুকুম দূরিভুত হবে এবং তা পবিত্র হিসেবে গণ্য হবে।
প্রয়োজনীয় কথা:
(১) কারও কাপড় অথবা শরীরে নাপাক বস্ত্ত
লাগলে পানি ব্যতীত অন্য কোন পরিষ্কারকারী বস্ত্ত ব্যবহার করে নাপাকী দূর
করা বৈধ হবে, এর জন্য পানি ব্যবহার করা আবশ্যক নয়।
(২) প্রয়োজন ছাড়া খাদ্য বা পান করার বস্ত্ত নাপাকী দূর করার জন্য ব্যবহার করা উচিৎ নয়। উপরন্তু এর দ্বারা সম্পদ নষ্ট বা অপচয় হয়।[6]
(৩) পানি ব্যতীত অন্যকোন তরল পদার্থ
দ্বারা নাপাকী অর্জন করা নাজাসাতে হাকীকী (প্রকৃত নাপাক) এর ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য, যে নাপাক শরীরে, কাপড়ে বা স্থানে লাগে। আর ত্বহারাতে হুকমী তথা
বিধানগত পবিত্রতা যেমন: ওযূ, গোসল ইত্যাদির ক্ষেত্রে পানি ব্যতীত অন্য কিছু
দ্বারা বৈধ হবে না।
No comments:
Post a Comment