Sunday, December 31, 2017

মুমিন নারীদের বিশেষ বিধান ও বৈশিষ্ট্য (১ম পর্ব)

মুমিন নারীদের বিশেষ বিধান ও বৈশিষ্ট্য (প্রথম পর্ব)


মুমিন নারীদের বিশেষ বিধান (১ম পর্ব)
Download as PDF
১ম পর্ব | ২য় পর্ব
সূচীপত্র
১ ভূমিকা
২ প্রথম পরিচ্ছেদ: সাধারণ বিধান
৩ ইসলাম পূর্ব নারীর মর্যাদা
৪ ইসলামে নারীর মর্যাদা
৫ ইসলামের শত্রু ও তার দোসররা নারীর ইজ্জত হরণ করে
কী চায়?
৬ কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে ঘরের বাইরে নারীর কাজ করা বৈধ
৭ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: নারীর শারীরিক সৌন্দর্য গ্রহণ
করার বিধান

৮ নারীরা তাদের শরীর ও নারীত্বের সাথে মুনাসিব সৌন্দর্য
গ্রহণ করবে
৯ নারীর মাথার চুল, চোখের ভ্রু, খেজাব ও রঙ ব্যবহার
করার বিধান
১০ তৃতীয় পরিচ্ছেদ: হায়েয, ইস্তেহাযাহ ও নিফাস সংক্রান্ত
বিধান
১১ হায়েযের সংজ্ঞা
১২ হায়েযের বয়স
১৩ হায়েযের বিধান
১৪ হায়েয শেষে ঋতুমতী নারীর করণীয়
১৫ দ্বিতীয়ত: ইস্তেহাযাহ
১৬ ইস্তেহাযার হুকুম
১৭ মুস্তাহাযাহ নারীর পবিত্র অবস্থায় করণীয়
১৮ তৃতীয়ত: নিফাস
১৯ নিফাসের সংজ্ঞা ও সময়
২০ নিফাস সংক্রান্ত বিধান
২১ চল্লিশ দিনের পূর্বে যখন নিফাসের রক্ত বন্ধ হয়
২২ নিফাসের রক্তের উপলক্ষ সন্তান প্রসব, ইস্তেহাযার
রক্ত রোগের ন্যায় সাময়িক, আর হায়েযের রক্ত নারীর
স্বভাবজাত রক্ত
২৩ চতুর্থ পরিচ্ছেদ: পোশাক ও পর্দা সংক্রান্ত বিধান
২৪ প্রথমত: মুসলিম নারীর শর‘ঈ পোশাক
২৫ দ্বিতীয়ত: পর্দার অর্থ, দলীল ও উপকারিতা
২৬ পঞ্চম পরিচ্ছেদ: নারীদের সালাত সংক্রান্ত বিশেষ
হুকুম
২৭ নারীদের সালাতে আযান ও ইকামত নেই
২৮ সালাতের সময় নারীর চেহারা ব্যতীত পূর্ণ শরীর সতর
২৯ রুকু ও সাজদায় নারী শরীর গুটিয়ে রাখবে
৩০ নারীদের জামা‘আত তাদের কারো ইমামতিতে দ্বিমত
রয়েছে
৩১ নারীদের মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য ঘর থেকে
বের হওয়া বৈধ
৩২ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: জানাযা সংক্রান্ত নারীদের বিশেষ বিধান
৩৩ মৃত নারীকে গোসল দেওয়ার দায়িত্ব নারীর গ্রহণ করা
ওয়াজিব
৩৪ পাঁচটি কাপড়ে নারীদের কাফন দেওয়া মুস্তাহাব
৩৫ মৃত নারীর চুলের ব্যাপারে করণীয়
৩৬ নারীদের জানাযার পশ্চাতে চলার বিধান
৩৭ নারীদের কবর যিয়ারত করা হারাম
৩৮ মাতম করা হারাম
৩৯ সপ্তম পরিচ্ছেদ: সিয়াম সংক্রান্ত নারীদের বিধান
৪০ কার ওপর রমযান ওয়াজিব?
৪১ বিশেষ কিছু অপারগতার কারণে রমযানে নারীর পানাহার করা
বৈধ
৪২ কয়েকটি জ্ঞাতব্য
৪৩ অষ্টম পরিচ্ছেদ: হজ ও উমরায় নারীর বিশেষ বিধান
৪৪ হজ সংক্রান্ত নারীর বিশেষ বিধান
৪৫ মুহরিম
৪৬ স্ত্রীর হজ যদি নফল হয় স্বামীর অনুমতি প্রয়োজন
৪৭ নারীর পক্ষে কারো প্রতিনিধি হয়ে হজ ও উমরা করা
দুরস্ত
৪৮ হজের সফরে নারীর ঋতু বা নিফাস হলে সফর অব্যাহত
রাখবে
৪৯ ইহরামের সময় নারীর করণীয়
৫০ ইহরামের নিয়ত করার সময় বোরকা ও নেকাব খুলে
ফেলবে
৫১ ইহরাম অবস্থায় নারীর পোশাক
৫২ নারীর ইহরামের পর নিজেকে শুনিয়ে তালবিয়া পড়া সুন্নত
৫৩ তাওয়াফের সময় নারীর পরিপূর্ণ পর্দা করা ওয়াজিব
৫৪ নারীর তাওয়াফ ও সাঈ পুরোটাই হাঁটা
৫৫ ঋতুমতী নারীর পবিত্র হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত করণীয় ও
বর্জনীয়
৫৬ জ্ঞাতব্য
৫৭ নারীদের দুর্বলদের সাথে মুযদালিফা ত্যাগ করা বৈধ চাঁদ
অদৃশ্য হলে
৫৮ নারী হজ ও উমরায় আঙ্গুলের অগ্রভাগ পরিমাণ মাথার চুল
ছোট করবে
৫৯ ঋতুমতী নারী জামরাহ আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে
মাথার চুল ছোট করলে ইহরাম থেকে হালাল হবে
৬০ তাওয়াফে ইফাদার পর ঋতুমতী হলে বিদায়ী তাওয়াফ রহিত
হয়
৬১ নারীর জন্য মসজিদে নাওয়াওয়ী যিয়ারত করা মুস্তাহাব
৬২ নবম পরিচ্ছেদ: বিয়ে ও তালাক সংক্রান্ত
৬৩ বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর অনুমতি গ্রহণ করা
৬৪ নারীর বিয়েতে অভিভাবক শর্ত ও তার হিকমত
৬৫ বিয়ের ঘোষণার জন্য নারীদের দফ বাজানোর হুকুম
নারীর স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব, অবাধ্য হওয়া হারাম
৬৬ প্রশ্ন: যদি নারী স্বামীর মধ্যে তার প্রতি আগ্রহ না
দেখে; কিন্তু সে তার সাথে থাকতে চায়, তাহলে কী
করবে?
৬৭ প্রশ্ন: নারী যদি স্বামীকে অপছন্দ করে ও তার সংসার
করতে না চায় কী করবে?
৬৮ প্রশ্ন: কোনো কারণ ছাড়া তালাক তলবকারী নারীর শাস্তি
কী?
৬৯ দাম্পত্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলে নারীর করণীয়
৭০ ইদ্দত চার প্রকার
৭১ প্রথম প্রকার: গর্ভবতীর ইদ্দত
৭২ দ্বিতীয় প্রকার: ঋতু হয় তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত
৭৩ তৃতীয় প্রকার: ঋতু হয় না তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত
৭৪ চতুর্থ প্রকার: স্বামী-মৃত বা বিধবা নারীর ইদ্দত
৭৫ ইদ্দত পালনকারী নারীর জন্য যা হারাম
৭৬ ইদ্দত পালনকারী নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার হুকুম
৭৭ অপরের ইদ্দত পালনকারী নারীকে বিয়ে করা হারাম
৭৮ দু’টি জ্ঞাতব্য
৭৯ বিধবা নারীর ইদ্দতে পাঁচটি বস্তু হারাম, যার আরবি নাম হিদাদ
৮০ দশম পরিচ্ছেদ: নারীর সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষাকারী
বিধান
৮১ লজ্জাস্থান হিফাযত ও চোখ অবনত রাখার ক্ষেত্রে
নারীও পুরুষের ন্যায় আদিষ্ট
৮২ লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ:
গান-বাদ্য না শোনা
৮৩ লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ:
মাহরাম ব্যতীত নারীর সফর না করা
৮৪ লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ:
নারী এমন পুরুষের সাথে নির্জন সাক্ষাত করবে না, যে
তার মাহরাম নয়
৮৫ পরিসমাপ্তি: নারীর পর-পুরুষের সাথে সাক্ষাত করা হারাম
৮৬ সর্বশেষ
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি পরিকল্পনা
করেন ও সঠিক পথের হিদায়াত দেন এবং মাতৃগর্ভে নিক্ষিপ্ত
শুক্র বিন্দু থেকে নারী-পুরুষ যুগল সৃষ্টি করেন। আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব
ইলাহ নেই, তার কোনো শরীক নেই। সূচনা ও সমাপ্তিতে
তার জন্যই সকল প্রশংসা। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ
আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তাকে যখন আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়
তিনি স্বীয় রবের বড় বড় অনেক নিদর্শন প্রত্যক্ষ করেন।
সালাত ও সালাম প্রেরিত হোক বিশেষ গুণ ও বৈশিষ্ট্যের ধারক
তার পরিবার ও সাহাবীগণের ওপর।
অতঃপর… নারীদের প্রকৃত মর্যাদা প্রদানকারী দীন
একমাত্র ইসলাম। ইসলাম তাদের অনেক বিষয়কে বিশেষ
গুরুত্বসহ গ্রহণ করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কখনো কখনো শুধু নারীদের উদ্দেশ্য করেই উপদেশ
প্রদান করতেন। ‘আরাফার ময়দানে তিনি নারীদের ওপর
পুরুষদের হিতাকাঙ্ক্ষী হতে বলেন, যা প্রমাণ করে নারীরা
বিশেষ যত্নের দাবিদার। বিশেষভাবে বর্তমানে যখন মুসলিম
নারীদের সম্মান হরণ ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান থেকে বিচ্যুত
করার নিমিত্তে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অতএব, তাদের সচেতন করা ও তাদের সামনে মুক্তির
নির্দেশনা স্পষ্ট করার বিকল্প নেই।
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থ মুসলিম নারীদের সামনে সে নির্দেশনা
স্পষ্ট করবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। গ্রন্থখানা ক্ষুদ্র প্রয়াস ও
দুর্বল ব্যক্তির পক্ষ থেকে সামান্য প্রচেষ্টা মাত্র, আল্লাহ
স্বীয় কুদরত মোতাবেক তার দ্বারা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ
সাধন করবেন একান্ত আশা। এ ময়দানে এটিই প্রথম পদক্ষেপ,
আশা করা যায় পরবর্তীতে আরো ব্যাপক ও বৃহৎ পদক্ষেপ
করা হবে, যা হবে আরো সুন্দর ও আরো পরিপূর্ণ। আমি
এখানে যা পেশ করছি তার পরিচ্ছেদসমূহ নিম্নরূপ:
১. প্রথম পরিচ্ছেদ: সাধারণ বিধান।
২. দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: নারীর শারীরিক সাজ-সজ্জা
সংক্রান্ত বিধান।
৩. তৃতীয় পরিচ্ছেদ: হায়েয, ইস্তেহাযাহ ও নিফাস
সংক্রান্ত বিধান।
৪. চতুর্থ পরিচ্ছেদ: পোশাক ও পর্দা সংক্রান্ত বিধান।
৫. পঞ্চম পরিচ্ছেদ: নারীর সালাত সংক্রান্ত বিধান।
৬. ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: নারীর জানাযাহ সংক্রান্ত বিধান।
৭. সপ্তম পরিচ্ছেদ: নারীর সিয়াম সংক্রান্ত বিধান।
৮. অষ্টম পরিচ্ছেদ: নারীর হজ ও উমরাহ সংক্রান্ত বিধান।
৯. নবম পরিচ্ছেদ: দাম্পত্য জীবন ও বিচ্ছেদ সংক্রান্ত
বিধান।
১০. দশম পরিচ্ছেদ: নারীর সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষা
সংক্রান্ত বিধান।
লেখক
প্রথম পরিচ্ছেদ
সাধারণ বিধান
১. ইসলাম-পূর্ব নারীর মর্যাদা:
ইসলাম-পূর্ব যুগ দ্বারা উদ্দেশ্য জাহেলী যুগ, যা
বিশেষভাবে আরববাসী এবং সাধারণভাবে পুরো জগতবাসী
যাপন করছিল, কারণ সেটা ছিল রাসূলদের বিরতি ও পূর্বের হিদায়াত
বিস্মৃতির যুগ। হাদীসের ভাষা মতে “আল্লাহ তাদের দিকে
দৃষ্টি দিলেন এবং আরব ও অনারব সবার ওপর তিনি গোস্বা
করলেন, তবে অবশিষ্ট কতক আহলে কিতাব ব্যতীত”। [1] এ
সময় নারীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ও সাধারণভাবে খুব কঠিন
অবস্থার সম্মুখীন ছিল। বিশেষত আরব সমাজে। আরবরা কন্যা
সন্তানের জন্মকে অপছন্দ করত। তাদের কেউ
মেয়েকে জ্যান্ত দাফন করত যেন মাটির নিচে তার মৃত্যু
ঘটে। আবার কেউ অসম্মান ও লাঞ্ছনার জীবন-যাপনে
মেয়েকে বাধ্য করত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺑُﺸِّﺮَ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻢ ﺑِﭑﻟۡﺄُﻧﺜَﻰٰ ﻇَﻞَّ ﻭَﺟۡﻬُﻪُۥ ﻣُﺴۡﻮَﺩّٗﺍ ﻭَﻫُﻮَ ﻛَﻈِﻴﻢٞ ٥٨ ﻳَﺘَﻮَٰﺭَﻯٰ
ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻘَﻮۡﻡِ ﻣِﻦ ﺳُﻮٓﺀِ ﻣَﺎ ﺑُﺸِّﺮَ ﺑِﻪِۦٓۚ ﺃَﻳُﻤۡﺴِﻜُﻪُۥ ﻋَﻠَﻰٰ ﻫُﻮﻥٍ ﺃَﻡۡ ﻳَﺪُﺳُّﻪُۥ ﻓِﻲ
ﭐﻟﺘُّﺮَﺍﺏِۗ ﺃَﻟَﺎ ﺳَﺎٓﺀَ ﻣَﺎ ﻳَﺤۡﻜُﻤُﻮﻥَ ٥٩﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺤﻞ : ٥٨، ٥٩‏]
“আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হত,
তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়, আর সে থাকে দুঃখ
ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়েছে সে দুঃখে সে
কওম থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি
একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে?
জেনে রাখ, তারা যা ফয়সালা করে তা কতই না মন্দ”! [সূরা আন-
নাহল, আয়াত: (৫৮-৫৯]
অন্যত্র তিনি বলেন:
﴿ﻭَﺇِﺫَﺍ ﭐﻟۡﻤَﻮۡﺀُۥﺩَﺓُ ﺳُﺌِﻠَﺖۡ ٨ ﺑِﺄَﻱِّ ﺫَﻧۢﺐٖ ﻗُﺘِﻠَﺖۡ ٩﴾ ‏[ﺍﻟﺘﻜﻮﻳﺮ : ٨، ٩‏]
“আর যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে,
কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে”? [সূরা আত-
তাকওয়ীর, আয়াত: ৮-৯]
‘মাওউদাতু’ সে মেয়েকে বলা হয়, যাকে জীবিত দাফন করা
হয় যেন মাটির নীচে মারা যায়। কোনো কন্যা যদিও জ্যান্ত
দাফন থেকে নিষ্কৃতি পেত, কিন্তু লাঞ্ছনার জীবন থেকে
মুক্তি পেত না। নারীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সম্পদ যদিও
প্রচুর হত, কিন্তু তার মৃত্যুর পর নারী কখনো মিরাসের
অধিকারী হত না, যদিও সে হত অভাবী ও খুব সংকটাপন্ন! কারণ
তাদের নিকট পুরুষদের জন্য মিরাস খাস ছিল, নারীদের তাতে
কোনো অংশ ছিল না, বরং নারীরা মৃত স্বামীর সম্পদের ন্যায়
মিরাসে পরিণত হত। ফলশ্রুতিতে এক পুরুষের অধীন
অনেক নারী আবদ্ধ হত, যার নির্ধারিত কোনো সংখ্যা ছিল না।
একাধিক সপত্নী বা সতীন থাকার কারণে নারীরা যে
সংকীর্ণতা, যুলম ও কোণঠাসা অবস্থার সম্মুখীন হত -সেটাও
তাদের অনেকের নিকট বিবেচ্য ছিল না।
২. ইসলামে নারীর মর্যাদা:
ইসলাম এসে নারীর ওপর থেকে এসব যুলম দূরীভূত
করেছে, তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে পুরুষদের ন্যায় মনুষ্য
অধিকার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻧَّﺎ ﺧَﻠَﻘۡﻨَٰﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺫَﻛَﺮٖ ﻭَﺃُﻧﺜَﻰٰ﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺠﺮﺍﺕ : ١٣‏]
“হে মানব জাতি, নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি
পুরুষ ও নারী থেকে”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৩]
এখানে আল্লাহ বলেছেন যে, মানব সৃষ্টির শুরু থেকে
নারী পুরুষের সঙ্গী, যেমন সে পুরুষের সঙ্গী নেকি
প্রাপ্তি ও শাস্তির ক্ষেত্রে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻣَﻦۡ ﻋَﻤِﻞَ ﺻَٰﻠِﺤٗﺎ ﻣِّﻦ ﺫَﻛَﺮٍ ﺃَﻭۡ ﺃُﻧﺜَﻰٰ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺆۡﻣِﻦٞ ﻓَﻠَﻨُﺤۡﻴِﻴَﻨَّﻪُۥ ﺣَﻴَﻮٰﺓٗ ﻃَﻴِّﺒَﺔٗۖ
ﻭَﻟَﻨَﺠۡﺰِﻳَﻨَّﻬُﻢۡ ﺃَﺟۡﺮَﻫُﻢ ﺑِﺄَﺣۡﺴَﻦِ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻳَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ٩٧﴾ ‏[ﺍﻟﻨﺤﻞ : ٩٧‏]
“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা
নারী, আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত
তার তুলনায় অবশ্যই আমরা তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব”।
[সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৯৭]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿ﻟِّﻴُﻌَﺬِّﺏَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﭐﻟۡﻤُﻨَٰﻔِﻘِﻴﻦَ ﻭَﭐﻟۡﻤُﻨَٰﻔِﻘَٰﺖِ ﻭَﭐﻟۡﻤُﺸۡﺮِﻛِﻴﻦَ ﻭَﭐﻟۡﻤُﺸۡﺮِﻛَٰﺖِ
﴾ ‏[ ﺍﻻﺣﺰﺍﺏ : ٧٣‏]
“যাতে আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও
মুশরিক নারীদের ‘আযাব দেন। আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন
নারীদের ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৭৩]
আল্লাহ তা‘আলা মৃত ব্যক্তির সম্পদের ন্যায় নারীকে
পরিত্যক্ত মিরাস গণ্য করা হারাম করেন। যেমন তিনি বলেন:
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻟَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟَﻜُﻢۡ ﺃَﻥ ﺗَﺮِﺛُﻮﺍْ ﭐﻟﻨِّﺴَﺎٓﺀَ ﻛَﺮۡﻫٗﺎۖ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ :
١٩‏]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা
জোর করে নারীদের ওয়ারিশ হবে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত:
১৯]
এভাবে ইসলাম নারীর ব্যক্তি স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে
তাকে ওয়ারিশ ঘোষণা দেয়। কারণ, সে পরিত্যক্ত সম্পদ নয়।
মৃত নিকট আত্মীয়ের পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে মিরাসের
হক প্রদান করে তাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻟِّﻠﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻧَﺼِﻴﺐٞ ﻣِّﻤَّﺎ ﺗَﺮَﻙَ ﭐﻟۡﻮَٰﻟِﺪَﺍﻥِ ﻭَﭐﻟۡﺄَﻗۡﺮَﺑُﻮﻥَ ﻭَﻟِﻠﻨِّﺴَﺎٓﺀِ ﻧَﺼِﻴﺐٞ ﻣِّﻤَّﺎ
ﺗَﺮَﻙَ ﭐﻟۡﻮَٰﻟِﺪَﺍﻥِ ﻭَﭐﻟۡﺄَﻗۡﺮَﺑُﻮﻥَ ﻣِﻤَّﺎ ﻗَﻞَّ ﻣِﻨۡﻪُ ﺃَﻭۡ ﻛَﺜُﺮَۚ ﻧَﺼِﻴﺒٗﺎ ﻣَّﻔۡﺮُﻭﺿٗﺎ
٧﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٧‏]
“পুরুষদের জন্য মাতা পিতা ও নিকট আত্মীয়রা যা রেখে
গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের
জন্য রয়েছে মাতা পিতা ও নিকট আত্মীয়রা যা রেখে
গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ, তা কম হোক বা বেশি
হোক, নির্ধারিত হারে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿ﻳُﻮﺻِﻴﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲٓ ﺃَﻭۡﻟَٰﺪِﻛُﻢۡۖ ﻟِﻠﺬَّﻛَﺮِ ﻣِﺜۡﻞُ ﺣَﻆِّ ﭐﻟۡﺄُﻧﺜَﻴَﻴۡﻦِۚ ﻓَﺈِﻥ ﻛُﻦَّ ﻧِﺴَﺎٓﺀٗ
ﻓَﻮۡﻕَ ﭐﺛۡﻨَﺘَﻴۡﻦِ ﻓَﻠَﻬُﻦَّ ﺛُﻠُﺜَﺎ ﻣَﺎ ﺗَﺮَﻙَۖ ﻭَﺇِﻥ ﻛَﺎﻧَﺖۡ ﻭَٰﺣِﺪَﺓٗ ﻓَﻠَﻬَﺎ ﭐﻟﻨِّﺼۡﻒُۚ
﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ١١‏]
“আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদেরকে
ক্ষেত্রে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই
মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক
মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে
গছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ, আর যদি একজন মেয়ে হয়
তখন তার জন্য অর্ধেক …”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১]
এভাবে আল্লাহ একজন নারীকে মা, মেয়ে, বোন ও
স্ত্রী হিসেবে মিরাস দান করেন।
আর বিবাহের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখার
অনুমতি প্রদান করেন, শর্ত হচ্ছে নারীদের মাঝে ইনসাফ
প্রতিষ্ঠা ও তাদের সাথে প্রচলিত রেওয়াজ মোতাবেক
আচরণ করতে হবে। তিনি বলেন:
﴿ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﭑﻟۡﻤَﻌۡﺮُﻭﻑِۚ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ١٩‏]
“আর তাদের সাথে সদ্ভাবে আচরণ কর”। [সূরা আন-নিসা,
আয়াত: ১৯]
অধিকন্তু নারীর জন্য পুরুষের ওপর দেন-মোহর অবধারিত
করে তাকে তা পরিপূর্ণ প্রদান করার নির্দেশ দেন, তবে
নারী যদি স্বেচ্ছায় ও পূর্ণ সন্তুষ্টিতে কিছু হক ত্যাগ করে
সেটা পুরুষের জন্য বৈধ। তিনি বলেন:
﴿ﻭَﺀَﺍﺗُﻮﺍْ ﭐﻟﻨِّﺴَﺎٓﺀَ ﺻَﺪُﻗَٰﺘِﻬِﻦَّ ﻧِﺤۡﻠَﺔٗۚ ﻓَﺈِﻥ ﻃِﺒۡﻦَ ﻟَﻜُﻢۡ ﻋَﻦ ﺷَﻲۡﺀٖ ﻣِّﻨۡﻪُ ﻧَﻔۡﺴٗﺎ
ﻓَﻜُﻠُﻮﻩُ ﻫَﻨِﻴٓٔٗﺎ ﻣَّﺮِﻳٓٔٗﺎ ٤ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٤‏]
“আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর
দিয়ে দাও, অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি
হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহ
খাও”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪]
ইসলাম নারীকে তার স্বামীর ঘরে আদেশ ও নিষেধকারী
জিম্মাদার এবং স্বীয় সন্তানের ওপর কর্তৃত্বকারী অভিভাবক
বানিয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‏« ﻭَﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺭَﺍﻋِﻴَﺔٌ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﺖِ ﺯَﻭْﺟِﻬَﺎ ﻭَﻣَﺴْﺌُﻮﻟَﺔٌ ﻋَﻦْ ﺭَﻋِﻴَّﺘِﻬَﺎ ‏»
“নারী তার স্বামীর ঘরে জিম্মাদার এবং তার জিম্মাদারি সম্পর্কে
তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে”। [2]
রেওয়াজ মোতাবেক নারীর খরচ ও পোশাক-পরিচ্ছদ
প্রদান করা স্বামীর ওপর ওয়াজিব করেছেন।
৩. ইসলামের শত্রু ও তার দোসররা নারীর ইজ্জত-সম্মান
হরণ করে কী চায়?
সন্দেহ নেই, ইসলামের শত্রু বরং মানব জাতির শত্রু কাফির,
মুনাফিক ও যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, ইসলাম কর্তৃক
প্রদত্ত নারীর ইজ্জত, সম্মান ও নিরাপত্তা তাদেরকে
ক্ষেপিয়ে তুলেছে। কারণ এসব কাফির ও মুনাফিকরা চায়
নারীরা দুর্বল ঈমান ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের শিকার করা বস্তু
ও ধ্বংসের হাতিয়ার হোক। আর তাদের সমাজের নারীদের
থেকে তারা নিজেরা প্রবৃত্তি পূর্ণ করে নিয়েছে সন্দেহ
নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻭَﻳُﺮِﻳﺪُ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺘَّﺒِﻌُﻮﻥَ ﭐﻟﺸَّﻬَﻮَٰﺕِ ﺃَﻥ ﺗَﻤِﻴﻠُﻮﺍْ ﻣَﻴۡﻠًﺎ ﻋَﻈِﻴﻤٗﺎ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ :
٢٧‏]
“আর যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা
প্রবলভাবে (সত্য থেকে) বিচ্যুত হও”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত:
২৭]
বস্তুত যেসব মুসলিমদের অন্তরে রোগ ও ব্যাধি রয়েছে,
তারা চায় নারীরা তাদের প্রবৃত্তি পূরণ ও শয়তানি কর্ম-কাণ্ডে
সস্তাপণ্য হোক। তাদের সামনে উন্মুক্ত পণ্য হয়ে থাক,
যেন তার সৌন্দর্য দেখে তারা মুগ্ধ হয় অথবা তার থেকে
আরো ঘৃণিত উদ্দেশ্য হাসিল করতে সক্ষম হয়। এ জন্য তারা
প্রলুব্ধ করে যেন কাজের জন্য নারী ঘর থেকে বের
হয় ও তাদের পাশা-পাশি কাজ করে অথবা নার্স সেজে
পুরুষদের সেবা দেয় অথবা বিমান বালা হয় অথবা সহশিক্ষায়
ছাত্রী কিংবা শিক্ষিকা হয়। অথবা সিনেমায় অভিনেত্রী ও গায়িকা
হয় অথবা বিভিন্ন মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে মডেল হয়। উন্মুক্ত
ঘোরাফেরা এবং কণ্ঠ ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ফেতনার
জন্ম দেয়। ম্যাগাজিনগুলো অধিক প্রচার ও বাজার হাসিল করার
উদ্দেশ্যে উলঙ্গ-আবেদনময়ী নারীদের অস্ত্র
হিসেবে ব্যবহার করে। কতক অসাধু ব্যবসায়ী তাদের পণ্য
প্রচারের জন্য এসব ছবিকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে,
তাদের উৎপাদিত পণ্য ও শো-রোমসমূহে এসব ছবি তারা
সাঁটিয়ে দেয়। এ জাতীয় পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডের কারণে
অধিকাংশ নারী তাদের ঘরের প্রকৃত দায়িত্ব ত্যাগ করেছে,
যে কারণে তাদের স্বামীরা ঘর গুছানো ও সন্তান লালন-পালন
করার জন্য বাধ্য হয়ে বাহির থেকে খাদ্দামাহ ও সেবিকা ভাড়া
করছে, যা অনেক ফিতনা ও অনিষ্টের জন্ম দিচ্ছে দিন দিন।
৪. কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে ঘরের বাইরে নারীর কাজ করা
বৈধ:
১. নারী যদি কাজের মুখাপেক্ষী হয় অথবা সমাজ তার
সেবার প্রয়োজন বোধ করে এবং তার সেবা দানকারী
বিকল্প কোনো পুরুষ না পাওয়া যায়।
২. নারীর মূল দায়িত্ব বাড়ির কাজ শেষে অন্য কাজ করা।
৩. নারীদের পরিবেশে কাজ করা, যেমন পুরুষ
থেকে পৃথক পরিবেশে নারীদের শিক্ষা দান করা অথবা
নারীদের সেবা ও চিকিৎসা প্রদান করা। এ তিনটি শর্তে নারীর
পক্ষে ঘরের বাইরে কাজ করা বৈধ।
৪. অনুরূপ নারীর পক্ষে দীনি ইলম শিখা ও শিখানো
দোষ নয় বরং জরুরি, তবে নারীদের পরিবেশে হতে
হবে। অনুরূপ মসজিদ ও মসজিদের মতো পরিবেশে
ধর্মীয় মজলিসে অংশ গ্রহণ করা তার পক্ষে দোষণীয়
নয়। অবশ্যই পুরুষ থেকে পৃথক ও পর্দানশীন থাকা জরুরি,
যেভাবে ইসলামের শুরু যুগে নারীরা কাজ আঞ্জাম দিত,
দীন শিক্ষা করত ও মসজিদে হাজির হত।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
নারীর শারীরিক সৌন্দর্য গ্রহণ করার বিধান
১. নারীরা তাদের শরীর ও নারীত্বের সাথে
উপযোগী সৌন্দর্য গ্রহণ করবে:
যেমন, নখ কাটা বরং নিয়মিত নখ কাটা সকল আহলে ইলমের
ঐকমত্যে বিশুদ্ধ সুন্নত এবং হাদীসে বর্ণিত মনুষ্য
স্বভাবের দাবি এটিই। অধিকন্তু নখ কাটা সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা এবং
নখ না-কাটা বিকৃতি ও হিংস্র প্রাণীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনেক সময় লম্বা নখের অভ্যন্তরে ময়লা জমে তাই
সেখানে পানি পৌঁছায় না। কতক মুসলিম নারী কাফেরদের
অনুকরণ ও সুন্নত না-জানার কারণে নখ লম্বা রাখার অভ্যাস গড়ে
তুলেছে যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
নারীর বগল ও নাভির নিচের পশম দূর করা সুন্নত। কারণ,
হাদীসে তার নির্দেশ রয়েছে, এতেই তাদের সৌন্দর্য।
তবে উত্তম হচ্ছে প্রতি সপ্তাহ পরিচ্ছন্ন হওয়া, অন্যথায়
চল্লিশ দিনের ভেতর অবশ্যই পরিচ্ছন্ন হওয়া।
২. নারীর মাথার চুল, চোখের ভ্রু, খেযাব ও রঙ ব্যবহার
করার বিধান:
ক. মুসলিম নারীর মাথার চুল বড় করা ইসলামের দাবি, বিনা
প্রয়োজনে মাথা মুণ্ডন করা হারাম।
সৌদি আরবের মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম রহ. বলেন:
“নারীর চুল কাটা বৈধ নয়। কারণ, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে ইমাম নাসাঈ স্বীয় সুনান গ্রন্থে, উসমান রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে ইমাম বাযযার স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে এবং ইকরিমাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইবন জারির তাবারি স্বীয় তাফসীর
গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে মাথা মুণ্ডন
করতে নিষেধ করেছেন”। [3]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিষেধাজ্ঞার অর্থ
হারাম, যদি তার বিপরীত দলীল না থাকে।
মোল্লা আলী ক্বারী মিশকাতের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরকাত’-এ
বলেন: “নারীর মাথা মুণ্ডনের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণ:
পুরুষের পুরুষত্ব ও সৌন্দর্যের জন্য দাঁড়ি যেরূপ নারীর
নারীত্ব ও সৌন্দর্যের জন্য চুল/মাথার বেণী সেরূপ”। [4]
মাথার চুল কাঁটা যদি সৌন্দর্য ছাড়া কোনো প্রয়োজনে হয়,
যেমন চুল বহন করা কঠিন ঠেকে অথবা বেশি বড় হওয়ার
কারণে পরিচর্যা করা কষ্টকর হয়, তাহলে প্রয়োজন
মোতাবেক কাটা সমস্যা নয়। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তার কতক স্ত্রী চুল ছোট
করতেন। কারণ, তার মৃত্যুর পর তারা সৌন্দর্য পরিহার করতেন, তাই
চুল বড় রাখা তাদের প্রয়োজন ছিল না।
নারীর চুল কাটার উদ্দেশ্য যদি হয় কাফির ও ফাসিক নারী বা
পুরুষদের সাথে সামঞ্জস্য গ্রহণ করা, তাহলে নিঃসন্দেহে তা
হারাম। কারণ, কাফিরদের সামঞ্জস্য গ্রহণ না করাই ইসলামের
সাধারণ নির্দেশ। অনুরূপ নারীদের জন্য পুরুষদের
সামঞ্জস্য গ্রহণ করা হারাম, যদি সৌন্দর্যের উদ্দেশ্য গ্রহণ
করা হয় তবুও হারাম।
আমাদের শাইখ মুহাম্মাদ আমীন শানকিতি রহ. ‘আদওয়াউল বায়ান’
গ্রন্থে বলেন: “অনেক দেশে নারীরা মাথার কাছ থেকে
চুল কাঁটার যে অভ্যাস গড়ে নিয়েছে -তা পশ্চিমা ও
ইউরোপীয় রীতি। এ স্বভাব ইসলাম ও ইসলাম পূর্ব যুগে
আরবদের নারীদের ছিল না। উম্মতের মাঝে ধর্মীয়,
চারিত্রিক ও বৈশিষ্ট্যে সেসব বিকৃতি ও পদস্খলন মহামারির আকার
ধারণ করেছে এটা তারই অংশ। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত হাদীস
সম্পর্কে বলেন:
» ﺃﻥ ﺃﺯﻭﺍﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺄﺧﺬﻥ ﻣﻦ ﺭﺅﻭﺳﻬﻦ ﺣﻨﻰ
ﺗﻜﻮﻥ ﻛﺎﻟﻮﻓﺮﺓ «
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ কানের
লতি পর্যন্ত তাদের মাথার চুল কর্তন করতেন”। [5]
এরূপ করেছেন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
মৃত্যুর পর, তার জীবিতাবস্থায় তারা সৌন্দর্য গ্রহণ করতেন, যার
অন্যতম অংশ ছিল চুল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তাদের জন্য বিশেষ
বিধান হয়, যে বিধানে পৃথিবীর কোনো নারী তাদের
শরীক নয়। সেটা হচ্ছে বিবাহের আশা তাদের একেবারেই
ত্যাগ করা। এমনভাবে ত্যাগ করা যে, কোনো অবস্থায় বিবাহ
সম্ভব নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর
তারা আমৃত্যু ইদ্দত পালনকারী নারীর মত ছিলেন। ইদ্দত
পালনকারী নারীর মতো তাদের পক্ষে বিবাহ করা বৈধ ছিল না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻜُﻢۡ ﺃَﻥ ﺗُﺆۡﺫُﻭﺍْ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎٓ ﺃَﻥ ﺗَﻨﻜِﺤُﻮٓﺍْ ﺃَﺯۡﻭَٰﺟَﻪُۥ ﻣِﻦۢ
ﺑَﻌۡﺪِﻩِۦٓ ﺃَﺑَﺪًﺍۚ ﺇِﻥَّ ﺫَٰﻟِﻜُﻢۡ ﻛَﺎﻥَ ﻋِﻨﺪَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ﴾ ‏[ ﺍﻻﺣﺰﺍﺏ : ٥٣ ‏]
“আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া এবং তার মৃত্যুর পর তার
স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য
সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ”। [সূরা আল-
আহযাব, আয়াত: ৫৩]
অতএব, একেবারে পুরুষদের সঙ্ঘ থেকে নিরাশ হওয়ার
ফলে সৌন্দর্য গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাদের কিছুটা ছাড়
রয়েছে, যেভাবে নিরাশ হওয়া অন্যান্য নারীদের জন্য বৈধ
নয়। [6]
তাই নারীর ওপর কর্তব্য হচ্ছে, মাথার চুল সংরক্ষণ করা,
চুলের যত্ন নেওয়া ও লম্বা বেণী বানিয়ে রাখা, মাথার ওপর বা
ঘাড়ে জমা করে রাখা নিষেধ।
শাইখুল শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন: “কতক অসৎ নারী
দুই কাঁধের মাঝে চুলের একটি খোঁপা বা বেণী বানিয়ে
ঝুলিয়ে রাখে”। [7]
সৌদি আরবের মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম রহ. বলেন:
“এ যুগে কতক মুসলিম নারী, মাথার চুলকে যেভাবে
একপাশে নিয়ে ঘাড়ের নিকট খোপা বানিয়ে রাখে অথবা মাথার
ওপর স্তূপ করে রাখে, যেরূপ পশ্চিমা ও ইউরোপীয়
নারীরা করে তা বৈধ নয়। কারণ, এতে কাফিরদের নারীদের
সাথে সামঞ্জস্য হয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত একটি লম্বা হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
» ﺻِﻨْﻔَﺎﻥِ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻟَﻢْ ﺃَﺭَﻫُﻤَﺎ ﻗَﻮْﻡٌ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﺳِﻴَﺎﻁٌ ﻛَﺄَﺫْﻧَﺎﺏِ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮِ
ﻳَﻀْﺮِﺑُﻮﻥَ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ، ﻭَﻧِﺴَﺎﺀٌ ﻛَﺎﺳِﻴَﺎﺕٌ ﻋَﺎﺭِﻳَﺎﺕٌ ﻣُﻤِﻴﻠَﺎﺕٌ ﻣَﺎﺋِﻠَﺎﺕٌ،
ﺭُﺀُﻭﺳُﻬُﻦَّ ﻛَﺄَﺳْﻨِﻤَﺔِ ﺍﻟْﺒُﺨْﺖِ ﺍﻟْﻤَﺎﺋِﻠَﺔِ، ﻟَﺎ ﻳَﺪْﺧُﻠْﻦَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺠِﺪْﻥَ ﺭِﻳﺤَﻬَﺎ،
ﻭَﺇِﻥَّ ﺭِﻳﺤَﻬَﺎ ﻟَﻴُﻮﺟَﺪُ ﻣِﻦْ ﻣَﺴِﻴﺮَﺓِ ﻛَﺬَﺍ ﻭَﻛَﺬَﺍ «
“দু’প্রকার জাহান্নামী লোক যাদের আমি এখনো দেখি নি:
এক প্রকার লোকের সাথে গরুর লেজের ন্যায় লাঠি
থাকবে, তা দিয়ে তারা মানুষদের পেটাবে। আর পোশাক
পরিহিত বিবস্ত্র নারী, তারা নিজেরা ধাবিত হয় ও অপরকে ধাবিত
করে। তাদের মাথা উটের ঝুঁকে পড়া কুজের ন্যায়। তারা
জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার গন্ধও পাবে না, যদিও তার
গন্ধ এত এত দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়”। [8]
“ধাবিত হয় ও ধাবিত করে” কথার ব্যাখ্যায় কতক আলেম বলেন:
“তারা নিজেরা এমনভাবে চিরুনি করে যা আবেদনময়ী ও
অপরকে আকৃষ্টকারী এবং অপরকেও তারা সেভাবে চিরুনি
করে দেয়, যা নষ্ট নারীদের চিরুনি করার রীতি। পশ্চিমা
নারী এবং তাদের অনুসারী বিপথগামী মুসলিম নারীদের চিরুনি
করার এটিই রীতি। [9]
যেরূপ নিষেধ বিনা প্রয়োজনে মুসলিম নারীর মাথার চুল
কর্তন অথবা ছোট করা, সেরূপ নিষেধ তার চুলের সাথে
অপরের চুল যুক্ত করা ও অপরের চুল দ্বারা তার চুল বর্ধিত
করা। কারণ, সহীহ বুখারী বুখারী ও মুসলিমে এসেছে:
» ﻟﻌﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﻮﺍﺻﻠﺔ ﻭﺍﻟﻤﺴﺘﻮﺻﻠﺔ «
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াসিলাহ ও
মুসতাওসিলাহকে অভিসম্পাত করেছেন”। [10]
‘ওয়াসিলাহ’ সে নারীকে বলা হয়, যে নিজের চুলের সাথে
অপরের চুল যোগ করে, আর যে নারী চুল যোগ করার
কাজ করে তাকে বলা হয় মুসতাওসিলাহ। এ কাজ ও পেশায় মিথ্যার
আশ্রয় গ্রহণ করা হয় তাই হারাম। চুল যোগ করার পর্যায়ে
পড়ে বারুকা তথা ‘পরচুলা’ পরিধান করা। বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য
মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেন: মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মদিনায়
এসে খুৎবা প্রদান করেন, তখন তিনি চুলের একটি খোঁপা
অথবা চুলের কিছু অংশ বের করেন এবং বলেন: তোমাদের
নারীদের কী হলো, তারা তাদের মাথা এরূপ করে? আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
»ﻣَﺎ ﻣِﻦِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﺗَﺠْﻌَﻞُ ﻓِﻲ ﺭَﺃْﺳِﻬَﺎ ﺷَﻌْﺮًﺍ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺮِ ﻏَﻴْﺮِﻫَﺎ، ﺇِﻻ ﻛَﺎﻥَ
ﺯُﻭﺭًﺍ «
“যে কোনো নারী নিজের মাথায় অপরের চুল রাখবে
সে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণকারী”।
‘বারুকা’ বা ‘পরচুলা’ একপ্রকার কৃত্রিম চুল, যা দেখতে মাথার
চুলের ন্যায়। এগুলো পরিধান করাও মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করার
শামিল।
খ. চেঁছে অথবা ছেঁটে অথবা লোম নাশক দ্রব্য
ব্যবহার করে ভ্রুর পশম সম্পূর্ণ বা আংশিক দূর করা মুসলিম
নারীর জন্য হারাম।
কারণ, এটাকে আরবিতে ‘নামস’ বলে, যা থেকে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারণ করেছেন। ইমাম নাসাঈ বর্ণনা
করেন:
» ﻟﻌﻦ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﻨﺎﻣﺼﺔ ﻭﺍﻟﻤﺘﻨﻤﺼﺔ «
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামিসাহ ও মুতানাম্মিসাহকে
লা‘নত করেছেন”। [11]
‘নামিসাহ’ সে নারীকে বলা হয়, যে নিজের ধারণায় সৌন্দর্য
চর্চা করতে গিয়ে পূর্ণ ভ্রু বা আংশিক ভ্রু ফেলে দেয়।
আর যে এ কাজ করে তাকে ‘মুতানাম্মিসাহ’ বলা হয়। এ জাতীয়
কাজ আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন আনার শামিল, যা থেকে
ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে, আর শয়তান বনী
আদমকে দিয়ে এ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করার প্রতিজ্ঞা করে
এসেছে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻭَﻟَﺄٓﻣُﺮَﻧَّﻬُﻢۡ ﻓَﻠَﻴُﻐَﻴِّﺮُﻥَّ ﺧَﻠۡﻖَ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ١١٩‏]
“আমরা অবশ্যই তাদেরকে নির্দেশ করব, যেন তারা আল্লাহর
সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৯]
অনুরূপ সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
» ﻟﻌﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻮﺍﺷﻤﺎﺕ ﻭﺍﻟﻤﺴﺘﻮﺷﻤﺎﺕ ﻭﺍﻟﻨﺎﻣﺼﺎﺕ ﻭﺍﻟﻤﺘﻨﻤﺼﺎﺕ
ﻭﺍﻟﻤﺘﻔﻠﺠﺎﺕ ﻟﻠﺤﺴﻦ، ﺍﻟﻤﻐﻴﺮﺍﺕ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ «
“আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন উল্কি গ্রহণকারী ও উল্কি
অঙ্কনকারী। কৃত্রিম চুল সংযোগকারী ও কৃত্রিম চুল
সংযোজন পেশায় নিয়োজিত নারীকে এবং যারা সৌন্দর্যের
জন্য দাঁত ফাঁক করে, আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করে”। [12]
অতঃপর ইবন মা‘সউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদেরকে লা‘নত করেছেন
আমি কি তাদেরকে লা‘নত করব না অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার নির্দেশ আল্লাহর কিতাবে
রয়েছে?! আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻭَﻣَﺎٓ ﺀَﺍﺗَﻯٰﻜُﻢُ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻓَﺨُﺬُﻭﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﻧَﻬَﻯٰﻜُﻢۡ ﻋَﻨۡﻪُ ﻓَﭑﻧﺘَﻬُﻮﺍْ﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺸﺮ :
٧ ‏]
“আর রাসূল যা তোমাদেরকে দিয়েছে তা গ্রহণ কর এবং যা
থেকে তিনি তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন, তোমরা
(তা থেকে) বিরত থাক”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭]
ইবন কাসির রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে এ আলোচনা
করেছেন।[13]
বর্তমান যুগে বিপদজনক এ কবিরাহ গুনাহতে অনেক নারীই
লিপ্ত, কৃত্রিম চুল সংযোজন করা তাদের নিত্যদিনের সাজ-
সজ্জার অন্তর্ভুক্ত। অথচ এ জাতীয় কর্মের নির্দেশ যদি
স্বামী করে, তবুও তার অনুসরণ করা বৈধ নয়। কারণ, এটা পাপ।
গ. সৌন্দর্যের জন্য মুসলিম নারীর দাঁত ফাঁক করা হারাম।
যেমন, সুন্দর করার উদ্দেশ্যে রেত দিয়ে ঘষা, যাতে দাঁত
সামান্য ফাঁক হয়। হ্যাঁ, দাঁত যদি বক্র হয় ও তাতে বিকৃতি থাকে,
তবে অপারেশন দ্বারা ঠিক করা বৈধ। অথবা দাঁতে পোকা হলে
দূর করা দুরস্ত আছে। কারণ, এটা চিকিৎসা ও বিকৃতি দূর করার শামিল,
যা দন্ত চিকিৎসকের কাজ।
ঘ. শরীরে উল্কি আঁকা নারীর জন্য হারাম।
কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্কি গ্রহণকারী ও
উল্কি অঙ্কনকারী উভয়কে লা‘নত করেছেন। হাদীসে
অভিশপ্ত ﺍﻟﻮﺍﺷﻤﺔ ‘ওয়াশিমা’ ঐ নারীকে বলা হয়, যে সুঁই দ্বারা
হাত অথবা চেহারা ছিদ্র করে, অতঃপর তা সুরমা বা কালি দিয়ে ভরাট
বা ফিলিং করে দেয়, আর অভিশপ্ত ﺍﻟﻤﺴﺘﻮﺷﻤﺔ ঐ নারীকে
বলা হয়, যার সাথে এসব করা হয়। এ জাতীয় কাজ হারাম ও কবিরা
গুনাহ। এসব গ্রহণকারী ও সম্পাদনকারী উভয়কে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন, আর কবিরা গুনাহ
ব্যতীত কোনো গুনাহর জন্য লা‘নত করা হয় না।
ঙ. নারীদের চুল রঙিন করা এবং স্বর্ণ ও খেজাব ব্যবহার
করার বিধান:
১. খেযাব বা মেহেদির ব্যবহার:
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. বলেন: “বিবাহিত নারীর দুই হাত ও দুই পা
মেহেদী দ্বারা খেযাব করা মুস্তাহাব। কারণ, এ মর্মে
অনেক প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে”। [14] প্রসিদ্ধ হাদীস দ্বারা
তিনি আবু দাউদে বর্ণিত হাদীসের দিকে ইঙ্গিত করেছেন:
» ﺃﻥ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﺳﺄﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻋﻦ ﺧﻀﺎﺏ ﺍﻟﺤﻨﺎﺀ،
ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ، ﻭﻟﻜﻨﻲ ﺃﻛﺮﻫﻪ، ﻛﺎﻥ ﺣﺒﻴﺒﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻜﺮﻩ ﺭﻳﺤﻪ «
“জনৈকা নারী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে মেহেদীর
খেজাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি বলেন: এতে সমস্যা
নেই, তবে আমি তা পছন্দ করি না। কারণ আমার হাবীব
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পছন্দ করতেন না”। [15]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ‘আনহা থেকে আরো বর্ণিত, তিনি
বলেন:
»ﺃﻭﻣﺄﺕ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻣﻦ ﻭﺭﺍﺀ ﺳﺘﺮ – ﺑﻴﺪﻫﺎ ﻛﺘﺎﺏ – ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺒﺾ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺪﻩ ﻭﻗﺎﻝ : ﻣﺎ
ﺃﺩﺭﻱ ﺃﻳﺪ ﺭﺟﻞ ﺃﻡ ﻳﺪ ﺍﻣﺮﺃﺓ ؟ ﻗﺎﻟﺖ : ﺑﻞ ﻳﺪ ﺍﻣﺮﺃﺓ : ﻗﺎﻝ : ﻟﻮ ﻛﻨﺖ
ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻟﻐﻴﺮﺕ ﺃﻇﻔﺎﺭﻙ – ﻳﻌﻨﻲ : ﺑﺎﻟﺤﻨﺎﺀ «
“জনৈকা নারী হাতে কিতাব নিয়ে পর্দার আড়াল থেকে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে ইশারা করেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের হাত গুটিয়ে
নিয়ে বলেন: আমি জানি না এটা পুরুষের হাত না নারীর হাত? সে
বলল: বরং নারীর হাত। তিনি বলেন: তুমি নারী হলে অবশ্যই
তোমার নখ পরিবর্তন করতে- অর্থাৎ মেহেদী দিয়ে”।
[16]
তবে এমন বস্তু দিয়ে রঙ করবে না, যা জমে যায় ও পবিত্রতা
অর্জনে বাঁধা হয়।[17]
২. নারীর চুল রঙ্গিন করার বিধান:
নারী যদি বৃদ্ধা হয়, তাহলে কালো ব্যতীত যে কোনো
রঙ্গ দ্বারা তার চুল রঙ্গিন করা বৈধ। কারণ, কালো রঙ ব্যবহার করা
থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপক
নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘রিয়াদুস সালিহীন’ গ্রন্থে একটি অধ্যায়
রচনা করেছেন, যার শিরোনাম: “নারী ও পুরুষের চুলে
কালো খেযাব ব্যবহার করা নিষেধ”। [18]
তিনি আল-মাজমু‘ গ্রন্থে বলেন: “নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য
কালো খেযাব ব্যবহার করা নিষেধ, এতে কোনো পার্থক্য
নেই। এটিই আমাদের মাযহাব”। [19]
যুবতী নারীর কালো চুল অন্য রঙ দ্বারা রঙ্গিন করা আমার
দৃষ্টিতে বৈধ নয়, তার কোনো প্রয়োজনও নেই। কারণ,
চুলের ক্ষেত্রে কালোই সৌন্দর্য। চুলের কালো রঙ
বিকৃতি নয় যে, পরিবর্তন করতে হবে। দ্বিতীয়ত এতে
কাফির নারীদের সাথে সামঞ্জস্য হয়।
৩. স্বর্ণ ও রূপার ব্যবহার:
সমাজে প্রচলিত রীতি মোতাবেক স্বর্ণ ও রূপা দ্বারা নারীর
সৌন্দর্য গ্রহণ করা বৈধ। এটা আলেমদের ঐকমত্যে। তবে
পর-পুরুষের জন্য তার অলঙ্কার প্রকাশ করা বৈধ নয়, তাদের
থেকে আড়ালে রাখবে, বিশেষভাবে যখন সে ঘর
থেকে বের হয় ও পুরুষদের দৃষ্টির নাগালে থাকে। কারণ,
এতে ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য নারীর পায়ের
নিচে কাপড়ের আড়ালে থাকা অলঙ্কারের আওয়াজও পুরুষকে
শুনাতে নিষেধ করা হয়েছে।[20] অতএব, প্রকাশ্য
অলঙ্কারের হুকুম সহজে অনুমেয়?
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
হায়েয, ইস্তেহাযাহ ও নিফাস সংক্রান্ত বিধান
১. হায়েযের সংজ্ঞা:
হায়েযের আভিধানিক অর্থ প্রবাহিত হওয়া। শরী‘আতের
পরিভাষায় নির্দিষ্ট সময় নারীর রেহেমের গভীর থেকে
কোনো অসুখ ও আঘাত ব্যতীত যে রক্ত প্রবাহিত হয় তা-ই
হায়েয। হায়েয মনুষ্য স্বভাব ও প্রকৃতি, যার ওপর আল্লাহ
আদমের মেয়েদের সৃষ্টি করেছেন। তাদের গর্ভাশয়ে
আল্লাহ এ রক্ত সৃষ্টি করেন যেন গর্ভে থাকা বাচ্চা তা খাবার
হিসেবে গ্রহণ করে। প্রসবের পর এ রক্তই দুধ হিসেবে
রূপান্তর হয়। নারী গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারীনী না হলে
গর্ভাশয়ে সৃষ্ট রক্ত ব্যবহৃত হওয়ার কোনো স্থান থাকে না,
তাই তা নির্দিষ্ট সময় জরায়ু দিয়ে নির্গত হয়, যার নাম ঋতু,
রজঃস্রাব, মাসিক ও পিরিয়ড ইত্যাদি।
২. হায়েযের বয়স:
নারীরা ন্যূনতম নয় বছরে ঋতুমতী হয়, পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত
তা অব্যাহত থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻭَﭐﻟَّٰٓـِٔﻲ ﻳَﺌِﺴۡﻦَ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻤَﺤِﻴﺾِ ﻣِﻦ ﻧِّﺴَﺎٓﺋِﻜُﻢۡ ﺇِﻥِ ﭐﺭۡﺗَﺒۡﺘُﻢۡ ﻓَﻌِﺪَّﺗُﻬُﻦَّ ﺛَﻠَٰﺜَﺔُ
ﺃَﺷۡﻬُﺮٖ ﻭَﭐﻟَّٰٓـِٔﻲ ﻟَﻢۡ ﻳَﺤِﻀۡﻦَۚ﴾ ‏[ ﺍﻟﻄﻼﻕ : ٤‏]
“তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুমতী হওয়ার
ফলে কাল অতিক্রম করে গেছে, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে
তোমরা যদি সংশয়ে থাক এবং যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি
তাদের ইদ্দত কালও হবে তিন মাস”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত:৪]
এখানে ঋতুমতীর ইদ্দতকাল অতিক্রম করার অর্থ পঞ্চাশ
বছরে উপনীত হওয়া। আর ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি অর্থ যে
মেয়েরা এখনো ছোট, নয় বছরও হয় নি যাদের।
৩. হায়েযের বিধান:
ক. হায়েয অবস্থায় সামনের রাস্তা দিয়ে স্ত্রীগমন করা
হারাম:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻭَﻳَﺴَۡٔﻠُﻮﻧَﻚَ ﻋَﻦِ ﭐﻟۡﻤَﺤِﻴﺾِۖ ﻗُﻞۡ ﻫُﻮَ ﺃَﺫٗﻯ ﻓَﭑﻋۡﺘَﺰِﻟُﻮﺍْ ﭐﻟﻨِّﺴَﺎٓﺀَ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﻤَﺤِﻴﺾِ
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺮَﺑُﻮﻫُﻦَّ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﻄۡﻬُﺮۡﻥَۖ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺗَﻄَﻬَّﺮۡﻥَ ﻓَﺄۡﺗُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦۡ ﺣَﻴۡﺚُ ﺃَﻣَﺮَﻛُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُۚ
ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﭐﻟﺘَّﻮَّٰﺑِﻴﻦَ ﻭَﻳُﺤِﺐُّ ﭐﻟۡﻤُﺘَﻄَﻬِّﺮِﻳﻦَ ٢٢٢ ﴾ ‏[ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٢٢‏]
“আর তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তা
অপরিচ্ছন্নতা। সুতরাং তোমরা হায়েয কালে স্ত্রীদের
থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের
নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন
তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে
নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের
ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা
অর্জনকারীদের”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২]
নারীর রক্ত বন্ধ হওয়া ও তার গোসল করার আগ পর্যন্ত
স্ত্রীগমনের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। কারণ, আল্লাহ
বলেছেন:
﴿ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘۡﺮَﺑُﻮﻫُﻦَّ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﻄۡﻬُﺮۡﻥَۖ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺗَﻄَﻬَّﺮۡﻥَ ﻓَﺄۡﺗُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦۡ ﺣَﻴۡﺚُ ﺃَﻣَﺮَﻛُﻢُ
ﭐﻟﻠَّﻪُۚ ﴾ ‏[ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٢٢‏]
“তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না।
অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আস,
যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন”।
[সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২]
ঋতুমতীর স্বামী সামনের রাস্তা ব্যতীত যেভাবে ইচ্ছা তার
থেকে উপকৃত হবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»ﺍﺻﻨﻌﻮﺍ ﻛﻞ ﺷﻲﺀ ﺇﻻ ﺍﻟﻨﻜﺎﺡ «
“স্ত্রীগমন ব্যতীত সব কিছু কর”। [21]
খ. ঋতুমতী ঋতুকালীন সময় সালাত ও সিয়াম ত্যাগ করবে:
ঋতুমতীর পক্ষে সালাত পড়া ও সিয়াম রাখা হারাম, তাদের সালাত ও
সিয়াম শুদ্ধ নয়। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
»ﺃﻟﻴﺲ ﺇﺫﺍ ﺣﺎﺿﺖ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻟﻢ ﺗﺼﻞ ﻭﻟﻢ ﺗﺼﻢ؟ «
“এমন কি নয় যে, ঋতুকালীন সময়ে নারী সালাত পড়ে না ও
সিয়াম রাখে না”? [22]
ঋতুমতী নারী পাক হলে শুধু সিয়াম কাযা করবে, সালাত কাযা
করবে না। কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
» ﻛﻨﺎ ﻧﺤﻴﺾ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻜﻨﺎ ﻧﺆﻣﺮ
ﺑﻘﻀﺎﺀ ﺍﻟﺼﻮﻡ، ﻭﻻ ﻧﺆﻣﺮ ﺑﻘﻀﺎﺀ ﺍﻟﺼﻼﺓ «
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ঋতুমতী
হতাম, আমাদেরকে তখন সিয়াম কাযা করার নির্দেশ প্রদান করা
হত; কিন্তু সালাত কাযা করার নির্দেশ প্রদান করা হত না”। [23]
কী কারণে সিয়াম কাযা করবে, সালাত কাযা করবে না -তা আল্লাহ
ভালো জানেন, তবে আমাদের মনে হয় সালাত কাযা করা
নারীর জন্য কষ্টকর। কারণ, প্রতিদিন তা বারবার আসে, যে
কষ্ট সিয়ামে নেই, তাই সিয়াম কাযা করার নির্দেশ প্রদান করা
হয়েছে, সালাত কাযা করার নির্দেশ প্রদান করা হয় নি।
গ. ঋতুমতী নারীর পক্ষে পর্দা ব্যতীত মুসহাফ/কুরআন
স্পর্শ করা হারাম:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻟَّﺎﻳَﻤَﺴُّﻪُۥٓﺇِﻟَّﺎﭐﻟۡﻤُﻄَﻬَّﺮُﻭﻥَ٧٩﴾ ‏[ﺍﻟﻮﺍﻗﻌﺔ : ٧٩‏]
“পবিত্রগণ ব্যতীত কেউ তা স্পর্শ করবে না”। [সূরা আল-
ওয়াকি‘আহ, আয়াত: ৭৯]
দ্বিতীয়ত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবন
হাযমকে যে পত্র লিখেছেন, তাতে ছিল:
»ﻻ ﻳﻤﺲ ﺍﻟﻤﺼﺤﻒ ﺇﻻ ﻃﺎﻫﺮ «
“পবিত্র ব্যতীত কেউ মুসহাফ স্পর্শ করবে না”। [24] হাদীসটি
মুতাওয়াতির মর্তবার, কারণ সবাই তা মেনে নিয়েছে। শাইখুল
ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: চার ইমামের মাযহাব হচ্ছে
পবিত্রতা অর্জন করা ব্যতীত কেউ মুসহাফ স্পর্শ করবে না।
ঋতুমতী নারী কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করবে কি-না
আহলে ইলমদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। প্রয়োজন
ব্যতীত তিলাওয়াত না করাই সতর্কতা। যেমন, ভুলে যাওয়ার
আশঙ্কা একটি প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন।
ঘ. ঋতুমতী নারীর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা হারাম:
কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা যখন ঋতুমতী হন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন:
» ﺍﻓﻌﻠﻲ ﻣﺎ ﻳﻔﻌﻞ ﺍﻟﺤﺎﺝ، ﻏﻴﺮ ﺃﻻ ﺗﻄﻮﻓﻲ ﺑﺎﻟﺒﻴﺖ ﺣﺘﻰ ﺗﻄﻬﺮﻱ «
“হাজীগণ যা করে তুমি তাই কর, তবে পবিত্র হওয়ার পূর্ব
পর্যন্ত বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করো না”। [25]
ঙ. ঋতুমতী নারীর মসজিদে অবস্থান করা হারাম:
ঋতুমতীর মসজিদে অবস্থান করা হারাম, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»ﺇﻧﻲ ﻻ ﺃﺣﻞ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻟﺤﺎﺋﺾ ﻭﻻ ﻟﺠﻨﺐ «
“আমি ঋতুমতী নারী ও জুনুব তথা গোসল ফরয হওয়া ব্যক্তির
জন্য মসজিদ হালাল করি না”। [26]
অপর বর্ণনায় তিনি বলেন:
» ﺇﻥ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻻ ﻳﺤﻞ ﻟﺤﺎﺋﺾ ﻭﻻ ﺟﻨﺐ «
“ঋতুমতী ও জুনুবি ব্যক্তির জন্য মসজিদ হালাল নয়”। [27]
তবে অবস্থান করা ব্যতীত মসজিদ দিয়ে অতিক্রম করা
ঋতুমতীর জন্য বৈধ। কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, মসজিদ থেকে আমাকে বিছানাটি দাও, আমি বললাম:
আমি ঋতুমতী, তিনি বললেন: তোমার হাতে তোমার ঋতু
নয়”। [28]
ঋতুমতী নারী শর‘ঈ যিকিরগুলো সম্পাদন করবে। যেমন,
লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ ও অন্যান্য
দো‘আ। অনুরূপ সকাল-সন্ধ্যা এবং ঘুমানো ও ঘুম থেকে
উঠার মাসনুন দো‘আগুলো পড়া কোনো সমস্যা নয়। অনুরূপ
তাফসীর, হাদীস ও ফিকহের কিতাব পড়াতে দোষ নেই।
হলুদ ও মেটে বর্ণের রক্তের হুকুম:
‘সুফরাহ’ বা হলুদ বর্ণ: সুফরাহ হচ্ছে নারীর রেহেম থেকে
নির্গত পুঁজের ন্যায় তরল পদার্থ, যার উপর হলুদ বর্ণ অধিক
প্রতিভাত হয়। আর ‘কুদরাহ’ হচ্ছে নারীর রেহেম থেকে
নির্গত মেটে বর্ণের ন্যায় তরল পদার্থ। ঋতুকালীন সময়
নারীর রেহেম থেকে সুফরাহ অথবা কুদরাহ বের হলে
হায়েয গণ্য হবে এবং তার জন্য হায়েযের হুকুম প্রযোজ্য
হবে। এ জাতীয় পদার্থ ঋতুকালীন সময় ব্যতীত অন্য সময়
বের হলে হায়েয গণ্য হবে না, বরং তখন নারী নিজেকে
পবিত্র জ্ঞান করবে। কারণ, উম্মে ‘আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
বলেন: “আমরা পবিত্র হওয়ার পর ‘সুফরাহ’ ও ‘কুদরাহ’কে কিছুই
গণ্য করতাম না”। হাদীসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। ইমাম
বুখারীও বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি (পবিত্র হওয়ার পর)
বাক্যটি বর্ণনা করেন নি। এ জাতীয় হাদীসকে মারফু‘ হাদীস
বলা হয়। কারণ, এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সমর্থন বুঝা যায়। উম্মে ‘আতিয়্যার কথার অর্থ হায়েয অবস্থায়
বা হায়েযের নির্দিষ্ট সময় যদি সুফরাহ বা কুদরাহ নির্গত হয়
হায়েয হিসেবে গণ্য হবে এবং তার বিধানও হবে হায়েযের
বিধান।
প্রশ্ন: নারী কীভাবে জানবে তার হায়েয শেষ?
উত্তর: রক্ত বন্ধ হলেই বুঝবে হায়েয শেষ। এর দু’টি
আলামত:
প্রথম আলামত: হায়েযের পর সাদা পানি বের হওয়া, যা সাধারণত
হায়েযের পরই বের হয়, অনেকটা চুনের পানির মত।
কখনো তার রঙ হয় না, আবার নারীদের স্বভাব অনুসারে তার
রঙ বিভিন্ন হয়।
দ্বিতীয় আলামত: শুষ্ক পদ্ধতি, অর্থাৎ নারী তার যোনি পথে
কাপড়ের টুকরো অথবা তুলা দাখিল করবে, অতঃপর বের
করলে যদি শুষ্ক বের হয়, তার উপর রক্ত, কুদরাহ ও সুফরার
আলামত না থাকে, বুঝবে হায়েয শেষ।
৪. হায়েয শেষে ঋতুমতী নারীর করণীয়:
ঋতুমতী নারীর ঋতু শেষে গোসল করা জরুরি, অর্থাৎ
পবিত্র হওয়ার নিয়তে সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা। কারণ,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»ﻓﺈﺫﺍ ﺃﻗﺒﻠﺖ ﺣﻴﻀﺘﻚ ﻓﺪﻋﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻭﺇﺫﺍ ﺃﺩﺑﺮﺕ ﻓﺎﻏﺘﺴﻠﻲ
ﻭﺻﻠﻲ «
“যখন তোমার রজঃস্রাব শুরু হয় তখন সালাত ত্যাগ কর, আর যখন
বিদায় নেয় গোসল কর ও সালাত পড়”। [29]
ফরয গোসল করার নিয়ম: নাপাক দূর করা অথবা সালাত বা এ
জাতীয় ইবাদতের নিয়ত করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে সমস্ত
শরীরে পানি পৌঁছানো। বিশেষভাবে মাথার চুলের গোঁড়ায়
পানি পৌঁছানো, চুলে খোঁপা বাঁধা থাকলে খোলা জরুরি নয়,
তবে চুলের গোঁড়ায় অবশ্যই পানি পৌঁছানো জরুরি, যদি বড়ই
অথবা পরিচ্ছন্নকারী কোনো বস্তু যেমন, সাবান ইত্যাদি
ব্যবহার করা হয় খুব ভালো। গোসলের পর সুগন্ধি জাতীয়
তুলা অথবা কোনো সুগন্ধি বস্তু যোনীতে ব্যবহার করা
মুস্তাহাব। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে অনুরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন।
[মুসলিম]
সাবধানতা: ঋতু বা নিফাস থেকে সূর্যাস্তের পূর্বে পবিত্র
হলে করণীয়:
নারী যদি সূর্যাস্তের পূর্বে ঋতু থেকে পবিত্র হয়, তার
ওপর যোহর ও আসর সালাত পড়া জরুরি, আর যে সুবহে
সাদিকের পূর্বে পবিত্র হবে তার ওপর মাগরিব ও এশার সালাত
পড়া জরুরি। কারণ, অপারগতার সময় পরবর্তী সালাতের সময়কে
পূর্ববর্তী সালাতের সময় গণ্য করা হয়। অর্থাৎ আসরের
সময়কে যোহরের সময় ও এশার সময়কে মাগরিবের সময়
গণ্য করা হয়।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: “এ জন্যই জমহুর
আলেম যেমন মালিক,শাফে‘ঈ শাফে‘ঈ ও আহমদ রহ.
বলেন, ঋতুমতী নারী যদি দিনের শেষে পবিত্র হয় তখন
যোহর ও আসর উভয় সালাত পড়বে, আর যদি রাতের শেষে
পবিত্র তাহলে হয় মাগরিব ও এশা উভয় সালাত পড়বে। আব্দুর
রহমান ইবন ‘আউফ, আবু হুরায়রা ও ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম
থেকে এরূপ বর্ণিত। কারণ, অপারগতার সময় আসর
যোহরের ওয়াক্তকে এবং এশা মাগরিবের ওয়াক্তকে শামিল
করে। অতএব, যদি দিনের শেষে সূর্যাস্তের পূর্বে পাক
হয় তাহলে যোহরের সময় বাকি আছে, সুতরাং আসরের
পূর্বে তা পড়ে নিবে। আর যদি রাতের শেষে পাক হয়,
তাহলে মাগরিবের সময় বাকি আছে, সুতরাং এশার পূর্বে তা
পড়ে নিবে। কারণ, এটা অপারগতার মুহূর্ত”। [30]
আর যদি নারীর সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে কিন্তু এখনো
সে সালাত আদায় করে নি এমতাবস্থায় যদি তার ঋতু বা নিফাস
আরম্ভ হয় তাহলে বিশুদ্ধ মতে উক্ত সালাত তার কাযা করতে
হবে না।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: “আবু হানিফা ও মালিকের
মাযহাব হচ্ছে এ জাতীয় নারীর তাদের সালাত কাযা করতে
হবে না, দলীলের বিবেচনায় এটিই মজবুত। কারণ, কাযা ওয়াজিব
হয় নতুনভাবে ওয়াজিব হওয়ার কারণ পাওয়া গেলে, এখানে সে
কারণ নেই। দ্বিতীয়ত ঋতুমতী যদিও কিছু সময় বিলম্ব
করেছে তবে সেটা ছিল তার বৈধ সময়ের মধ্যে তাই সে
সীমালঙ্ঘনকারী নয়। অনুরূপ ঘুমন্ত ও বিস্মৃত ব্যক্তি
সীমালঙ্ঘনকারী নয়, তবে তাদের সালাত কাযা হিসেবে নয়
আদায় হিসেবে ধর্তব্য হবে, কারণ তারা যখন জাগ্রত হয় ও
যখন তাদের স্মরণ হয় তখন তাদের সালাতের ওয়াক্ত হয়”। [31]
সমাপ্ত।
দ্বিতীয়ত: ইস্তেহাযাহ:
১. ইস্তেহাযার হুকুম:
ইস্তেহাযার সংজ্ঞা: মাসিক আসার নির্দিষ্ট সময় ছাড়া ‘আযেল’
নামক কোনো রগ থেকে যে রক্তক্ষরণ হয় তাই
ইস্তেহাযাহ। ইস্তেহাযার বিষয়টি জটিল, কারণ হায়েযের
রক্তের সাথে তার রক্ত সাদৃশ্যপূর্ণ।
যদি নারীর লাগাতার অথবা অধিকাংশ সময় রক্ত প্রবাহিত হয় তাহলে
কতটুকু হায়েয হিসেবে ধরা হবে আর কতটুকু ইস্তেহাযা
হিসেবে ধরা হবে যার সাথে সিয়াম ও সালাত আদায় করা ছাড়া
যাবে না, তা জানা জরুরি। কারণ, মুস্তাহাযাহ নারী স্বাভাবিক নারীর
মতো পবিত্র।
মুস্তাহাযাহ নারীর তিনটি অবস্থা:
প্রথম অবস্থা: ইস্তেহাযায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে তার
নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকবে, যেমন ইস্তেহাযার পূর্বে মাসের
শুরুতে অথবা মাঝখানে পাঁচ দিন অথবা আট দিন রীতিমত হায়েয
আসা। এ জাতীয় নারী ইস্তেহাযায় আক্রান্ত হলে তাদের
ঋতুস্রাবের দিন-সংখ্যা ও সময় জানা সহজ, সে তার পূর্বের
অভ্যাস মোতাবেক হায়েযের দিনগুলোতে বিরতি নিবে ও
সালাত, সিয়াম ত্যাগ করবে। এ সময়টা তার হায়েয। হায়েয
শেষে গোসল করে সালাত আদায় করবে এবং অবশিষ্ট
রক্তকে ইস্তেহাযার রক্ত গণনা করবে। কারণ, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হাবিবাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে
বলেন:
» ﺍﻣﻜﺜﻲ ﻗﺪﺭ ﻣﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺤﺒﺴﻚ ﺣﻴﻀﺘﻚ، ﺛﻢ ﺍﻏﺘﺴﻠﻲ ﻭﺻﻠﻲ «
“পূর্বে তোমার হায়েয যত দিন তোমাকে বিরত রাখত সে
পরিমাণ তুমি বিরতি নাও, অতঃপর গোসল কর ও সালাত পড়”। [32]
অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা বিনতে
আবী হুবাইশকে বলেন:
» ﺇﻧﻤﺎ ﺫﻟﻚ ﻋﺮﻕ، ﻭﻟﻴﺲ ﺑﺤﻴﺾ، ﻓﺈﺫﺍ ﺃﻗﺒﻠﺖ ﺣﻴﻀﺘﻚ ﻓﺪﻋﻲ
ﺍﻟﺼﻼﺓ «
“সেটি রক্তক্ষরণ, হায়েয নয়, যখন তোমার হায়েয আসে
সালাত ত্যাগ কর”। [33]
দ্বিতীয় অবস্থা: ঋতুমতী নারীর নির্দিষ্ট অভ্যাস নেই
তবে তার হায়েযের রক্ত বুঝা ও চেনা যায়। যেমন,
ঋতুমতীর কিছু রক্ত হায়েযের রক্তের ন্যায় কালো অথবা
ঘন অথবা বিশেষ গন্ধযুক্ত, যা ঋতু বা হায়েয হিসেবে সহজে
চিহ্নিত করা যায়, কিন্তু তার অবশিষ্ট রক্ত এরূপ নয়, উদাহরণত লাল
কোনো গন্ধ নেই, ঘনও নয়। এ অবস্থায় যে ক’দিন তার
হায়েযের মতো রক্ত আসে সে ক’দিন সে বিরতি নিবে
এবং সালাত ও সিয়াম ত্যাগ করবে, অবশিষ্ট রক্তকে ইস্তেহাযাহ
গণনা করবে। হায়েযের আলামত যুক্ত রক্ত বন্ধ হলে
গোসল করে সালাত ও সিয়াম আদায় করবে। এখন সে পবিত্র।
কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা বিনতে আবী
হুবাইশকে বলেন:
»ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺤﻴﺾ ﻓﺈﻧﻪ ﺃﺳﻮﺩ ﻳﻌﺮﻑ، ﻓﺄﻣﺴﻜﻲ ﻋﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻓﺈﺫﺍ ﻛﺎﻥ
ﺍﻵﺧﺮ ﻓﺘﻮﺿﺌﻲ ﻭﺻﻠﻲ «
“যদি হায়েয হয় অবশ্যই কালো হবে যা চিনা যায়। অতএব, সালাত
থেকে বিরত থাক। অতঃপর যখন অন্য রক্ত শুরু হয় অযু কর ও
সালাত আদায় কর”। [34]
এ থেকে জানা যায় যে, মুস্তাহাযা নারী রক্তের নির্দিষ্ট
অবস্থাকে আলামত হিসেবে গণ্য করবে এবং তার ভিত্তিতে
হায়েয ও ইস্তেহাযাহ চিহ্নিত করবে।
তৃতীয় অবস্থা: মুস্তাহাযাহ নারীর যদি নির্দিষ্ট অভ্যাস এবং
হায়েযকে ইস্তেহাযা থেকে পৃথক করার বিশেষ আলামত না
থাকে, তাহলে সে প্রতি মাস হায়েযের সাধারণ সংখ্যা ছয় অথবা
সাত দিন বিরতি নিবে। কারণ, এটিই নারীদের ঋতুস্রাবের সাধারণ
নিয়ম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামনাহ বিনতে
জাহাশকে বলেন:
» ﺇﻧﻤﺎ ﻫﻲ ﺭﻛﻀﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ، ﻓﺘﺤﻴﻀﻲ ﺳﺘﺔ ﺃﻳﺎﻡ ﺃﻭ ﺳﺒﻌﺔ ﺃﻳﺎﻡ،
ﺛﻢ ﺍﻏﺘﺴﻠﻲ، ﻓﺈﺫﺍ ﺍﺳﺘﻨﻘﺄﺕ ﻓﺼﻠﻲ ﺃﺭﺑﻌﺔ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺃﻭ ﺛﻼﺛﺔ
ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ، ﻭﺻﻮﻣﻲ ﻭﺻﻠﻲ، ﻓﺈﻥ ﺫﻟﻚ ﻳﺠﺰﺋﻚ، ﻭﻛﺬﻟﻚ ﻓﺎﻓﻌﻠﻲ ﻛﻤﺎ
ﺗﺤﻴﺾ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ «
“এটা শয়তানের আঘাত, তুমি ছয় অথবা সাত দিন হায়েয গণনা কর,
অতঃপর গোসল কর, যখন তুমি পাক হবে চব্বিশ অথবা তেইশ
দিন সালাত পড়, সিয়াম রাখ ও সালাত পড়। কারণ, তোমার জন্য এটিই
যথেষ্ট। সাধারণ নারীরা যেরূপ ঋতুমতী হয় তুমি সেরূপ
কর”। [35]
পূর্বের আলোচনার সারাংশ: যে মুস্তাহাযা নারীর অভ্যাস
আছে সে তার অভ্যাস মোতাবেক হায়েয গণনা করবে।
আর যার অভ্যাস নেই, কিন্তু তার হায়েযের রক্তের নির্দিষ্ট
আলামত রয়েছে সে আলামত মোতাবেক হায়েয গণনা
করবে। আর যার দু’টি থেকে কোনো আলামত নেই সে
প্রতি মাসে ছয় অথবা সাত দিন হায়েয গণনা করবে। এ ব্যাখ্যা
মোতাবেক মুস্তাহাযা নারীর জন্য বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিনটি হাদীসের মাঝে সমন্বয় হয়।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: মুস্তাহাযাহ নারীর ছয়টি
আলামত বলা হয়:
১. অভ্যাস: এটিই শক্ত ও মজবুত আলামত। কারণ, তার সুস্থাবস্থায়
এ সময়টায় হায়েয আসত, তাই এগুলো তার হায়েযের নির্ধারিত
দিনক্ষণ ব্যতীত কিছু নয়।
২. রক্তের নির্দিষ্ট আলামত: কারণ হায়েযের রক্ত কালো,
ঘন ও দুর্গন্ধযুক্ত বেশি হয়, সাধারণত লাল হয় না।
৩. স্বাভাবিক নারীদের সাধারণ অভ্যাস: কারণ মুস্তাহাযাহ নারীর
ব্যতিক্রম অভ্যাসকে অপরাপর নারীর সাধারণ অভ্যাসের সাথে
তুলনা করাই যুক্তিযুক্ত। মুস্তাহাযাহ নারীর হায়েয চিহ্নিত করার এ
তিনটি আলামত সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত। অতঃপর তিনি অন্যান্য আলামত
উল্লেখ করেন। শেষে বলেন সঠিক মত হচ্ছে
হাদীসের আলামত গ্রহণ করা ও অন্যান্য আলামত ত্যাগ করা”।
২. মুস্তাহাযাহ নারীর পবিত্র অবস্থায় করণীয়:
ক. পূর্বের বর্ণনা মোতাবেক মুস্তাহাযাহ নারীর হায়েয
শেষে গোসল করা ওয়াজিব।
খ. প্রত্যেক সালাতের সময় যোনিপথ থেকে নির্গত ময়লা
দূরীভূত করার জন্য লজ্জাস্থান ধৌত করা। নির্গত রক্ত যেন
বাহিরে প্রবাহিত না হয় বা গড়িয়ে না পড়ে সে জন্য যোনি
পথের বহির্মুখে তুলা বা অনুরূপ বস্তু ব্যবহার করবে এবং তা
বেঁধে দিবে যেন খসে না পড়ে। অতঃপর প্রত্যেক
সালাতের সময় ওযু করবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মুস্তাহাযা নারীর ক্ষেত্রে বলেন:
»ﺗﺪﻉ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺃﻳﺎﻡ ﺃﻗﺮﺍﺋﻬﺎ، ﺛﻢ ﺗﻐﺘﺴﻞ ﻭﺗﺘﻮﺿﺄ ﻋﻨﺪ ﻛﻞ ﺻﻼﺓ «
“মুস্তাহাযাহ নারী তার হায়েযের দিনগুলোয় সালাত ত্যাগ
করবে, অতঃপর গোসল করবে ও প্রত্যেক সালাতের জন্য
ওযু করবে”। [36]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
»ﺃﻧﻌﺖ ﻟﻚ ﺍﻟﻜﺮﺳﻒ ﺗﺤﺸﻴﻦ ﺑﻪ ﺍﻟﻤﻜﺎﻥ «
“তুমি নিজের জন্য কুরসুফ (সুতি কাপড়) বানিয়ে নাও এবং তার দ্বারা
স্থানটি ঢেকে নাও”। [37]
ডাক্তারি গবেষণায় তৈরি ন্যাপকিন ব্যবহার করাও বৈধ।
তৃতীয়ত: নিফাস:
১. নিফাসের সংজ্ঞা ও সময়:
বাচ্চা প্রসবের সময় ও তার পরবর্তীতে রেহেম থেকে
যে রক্ত বের হয় তাই নিফাস। এগুলো মূলত গর্ভকালীন
সময় গর্ভাশয়ে স্তূপ হওয়া রক্ত, বাচ্চা প্রসব হলে অল্পঅল্প
তা বের হয়। প্রসবের আলামত শুরু হওয়ার পর যে রক্ত বের
হয় তাও নিফাস, যদিও প্রসব বিলম্বে হয়। ফকিহগণ বলেন,
প্রসবের দুই দিন বা তিন দিন পূর্বে হলে নিফাস অন্যথায় নিফাস
নয়। নিফাসের রক্ত সাধারণত প্রসবের সাথে আরম্ভ হয়।
প্রসবের জন্য পরিপূর্ণ বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়া জরুরি, তার পরবর্তী
রক্ত নিফাস হিসেবে গণ্য হবে। মায়ের পেটে সর্বনিম্ন
একাশি দিন সম্পন্ন হলে বাচ্চার শরীরের গঠন আকৃতি পূর্ণ
হয়, যদি তার পূর্বে রেহেম থেকে জমাট বাঁধা কিছু বের হয়
এবং সাথে রক্তও আসে, তাহলে তা নিফাস হিসেবে গণ্য
হবে না, সালাত ও সিয়াম যথারীতি আদায় করবে, কারণ তা দূষিত
রক্ত ও রক্তক্ষরণ হিসেবে নির্গত, তার বিধান মুস্তাহাযা নারীর
বিধান।
নিফাসের সর্বাধিক সময় চল্লিশ দিন, যার সূচনা হয় প্রসব থেকে
অথবা তার দুই বা তিনদিন পূর্ব থেকে, যা পূর্বে বর্ণিত
হয়েছে। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীসে
এসেছে:
»ﻛﺎﻧﺖ ﺍﻟﻨﻔﺴﺎﺀ ﺗﺠﻠﺲ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
ﺃﺭﺑﻌﻴﻦ ﻳﻮﻣﺎ «
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নিফাসের নারীরা
চল্লিশ দিন বিরতি নিত”। [38]
নিফাসের সর্বোচ্চ মেয়াদ চল্লিশ দিন। এ বিষয়ে সকল
আহলে ইলম একমত। ইমাম তিরমিযী প্রমুখগণ আলেমদের
এরূপ ঐকমত্য নকল করেছেন। আর যে চল্লিশ দিনের
পূর্বে পবিত্র হলো, যেমন তার রক্ত বন্ধ হলো, সে
গোসল করবে ও সালাত আদায় করবে। নিফাসের সর্বনিম্ন
কোনো মেয়াদ নেই। কারণ তার নির্দিষ্ট মেয়াদ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয় নি। যদি চল্লিশ
দিন পূর্ণ হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ না হয়, তাহলে সেটা যদি
হায়েযের সময় হয় হায়েয গণ্য হবে, যদি হায়েযের সময়
না হয় ইস্তেহাযাহ গণ্য হবে, তাই চল্লিশ দিন পার হলে ইবাদত
ত্যাগ করবে না। যদি রক্ত আসার সময়কাল চল্লিশ দিনের বেশি
হয়, কিন্তু বিরতি দিয়ে দিয়ে রক্ত আসে, যার সাথে
হায়েযের অভ্যাসের মিল নেই, এটিই ইখতিলাফের বিষয়।
খ. নিফাস সংক্রান্ত বিধান:
নিম্নের অবস্থায় নিফাসের বিধান হায়েযের বিধানের মত:
১. নিফাসের নারীদের সাথে সঙ্গম করা হারাম। যেমন
হায়েযের নারীদের সাথে সঙ্গম করা হারাম, তবে সঙ্গম
ব্যতীত অন্যান্য পদ্ধতিতে ভোগ করা বৈধ।
২. হায়েযা নারীর ন্যায় নিফাসের নারীদের জন্যও সিয়াম রাখা,
সালাত পড়া ও বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করা হারাম।
৩. নিফাসের নারীদের জন্য কুরআন তিলাওয়াত ও স্পর্শ করা
হারাম, তবে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে বৈধ। যেমন, হায়েযা
নারী।
৪. হায়েযা নারীর মতো নিফাসের নারীর ছুটে যাওয়া সিয়াম
কাযা করা ওয়াজিব।
৫ হায়েযা নারীর মতো নিফাসের নারীর নিফাস শেষে
গোসল করা ওয়াজিব। দলীল:
১. উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»ﻛﺎﻧﺖ ﺍﻟﻨﻔﺴﺎﺀ ﺗﺠﻠﺲ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
ﺃﺭﺑﻌﻴﻦ ﻳﻮﻣﺎ «
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নিফাসের নারীরা
চল্লিশ দিন বিরতি নিত”। [39]
‘মুনতাকা’ গ্রন্থে মাজদ ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন:
“হাদীসের অর্থ হচ্ছে তাদেরকে চল্লিশ দিন বিরতি
নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হতো। এটিই চূড়ান্ত অর্থ,
তাদের সবার নিফাস চল্লিশ দিন পর্যন্ত বিলম্ব হত এ অর্থ
কখনো নয়; বরং এ অর্থ করলে বাস্তবতার ক্ষেত্রে
হাদীসটি মিথ্যা প্রমাণিত হবে, যেহেতু কোনো যুগে
হায়েয বা নিফাসের সময়সীমা সব নারীদের এক হওয়া সম্ভব
নয়”। [40]
২. উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»ﻛﺎﻧﺖ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻣﻦ ﻧﺴﺎﺀ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺗﻘﻌﺪ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﻔﺎﺱ ﺃﺭﺑﻌﻴﻦ ﻟﻴﻠﺔ ﻻ
ﻳﺄﻣﺮﻫﺎ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺑﻘﻀﺎﺀ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻨﻔﺎﺱ «
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক স্ত্রী নিফাস
হলে চল্লিশ দিন বিরতি নিতেন, তিনি তাকে নিফাসের সালাত কাযা
করার নির্দেশ দিতেন না”। [41]
চল্লিশ দিনের পূর্বে যদি নিফাসের রক্ত বন্ধ হয়:
জ্ঞাতব্য-১: যদি নিফাসের নারীর চল্লিশ দিন পূর্বে রক্ত
বন্ধ হয় এবং সে গোসল শেষে সালাত আদায় করে ও সিয়াম
রাখে, অতঃপর চল্লিশ দিন শেষ না হতে পুনরায় রক্ত আসা শুরু
হয়, তাহলে বিশুদ্ধ মতে এ সময়কেও নিফাস গণ্য করবে ও
বিরতি নিবে। মধ্যবর্তী ইবাদত শুদ্ধ হয়েছে কাযা করার
প্রয়োজন নেই।[42]
নিফাসের রক্তের উপলক্ষ সন্তান প্রসব, ইস্তেহাযার
রক্ত রোগের ন্যায় সাময়িক, আর হায়েযের রক্ত
নারীর স্বভাবজাত রক্ত:
জ্ঞাতব্য-২: শাইখ আব্দুর রহমান ইবন সাদি বলেন: পূর্বের
আলোচনা থেকে স্পষ্ট হলো যে, সন্তান প্রসবের
কারণে নিফাসের রক্ত প্রবাহিত হয়। আর ইস্তেহাযার রক্ত
অসুখ-বিসুখ জনিত হয় যা সাময়িক। হায়েযের রক্ত নারীর
নারীত্বের স্বভাবজত প্রকৃত রক্ত। আল্লাহ ভালো জানেন।
[43]
বড়ি ব্যবহার করা: শারীরিক ক্ষতি না হলে হায়েয বন্ধকারী
বড়ি ব্যবহার করা দোষণীয় নয়। বড়ি ব্যবহারের ফলে রক্ত
বন্ধ হলে সিয়াম রাখবে, সালাত পড়বে ও তাওয়াফ করবে। এ
সময় তার সকল ইবাদত দুরস্ত, যেমন অন্যান্য পবিত্র
নারীদের ইবাদত দুরস্ত।
গর্ভপাত করার হুকুম: হে মুমিন নারী, আল্লাহ তোমার
রেহেমে যা সৃষ্টি করেন তার ব্যাপারে তুমি আমানতদার।
অতএব, তুমি আমানত গোপন করো না। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন:
﴿ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟَﻬُﻦَّ ﺃَﻥ ﻳَﻜۡﺘُﻤۡﻦَ ﻣَﺎ ﺧَﻠَﻖَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲٓ ﺃَﺭۡﺣَﺎﻣِﻬِﻦَّ ﺇِﻥ ﻛُﻦَّ ﻳُﺆۡﻣِﻦَّ
ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻭَﭐﻟۡﻴَﻮۡﻡِ ﭐﻟۡﺄٓﺧِﺮِۚ﴾ ‏[ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٢٨‏]
“এবং তাদের জন্য হালাল হবে না যে, আল্লাহ তাদের গর্ভে
যা সৃষ্টি করেছেন, তা তারা গোপন করবে, যদি তারা আল্লাহ ও
শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত:
২২৮]
গর্ভপাত ঘটানো বা যেভাবে হোক তার থেকে নিষ্কৃতি
পেতে বাহানা করো না। কারণ, আল্লাহ তোমার জন্য
রমযানের পানাহার বৈধ করেছেন যদি সিয়াম তোমার জন্য
ক্ষতিকর হয়। যদি গর্ভের বাচ্চায় রূহ সঞ্চার করা হয় এবং
গর্ভপাত ঘটানোর ফলে মারা যায়, তাহলে এটা অন্যায় হত্যার
শামিল, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। গর্ভের বাচ্চা
হত্যাকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, যদিও তার পরিমাণ ব্যাখ্যা
সাপেক্ষ। কতক আহলে ইলম বলেন, কাফফারা দেওয়া
ওয়াজিব। অর্থাৎ মুমিন দাসী মুক্ত করা, যদি মুমিন দাসী পাওয়া না
যায় লাগাতার দু’মাস সিয়াম রাখবে। কতক আহলে ইলম গর্ভের
বাচ্চা হত্যাকে এক প্রকার জ্যান্ত দাফন গণ্য করেছেন। শাইখ
মুহাম্মাদ ইবরাহীম রহ. বলেন: “গর্ভে থাকা বাচ্চা ফেলে
দেওয়া হালাল নয়, যদি তার মৃত্যু নিশ্চিত না হয়, মৃত্যু নিশ্চিত হলে
ফেলে দিবে”। [44]
‘বড় আলেমদের সংস্থা’র সভায় [45] গর্ভপাত ঘটানোর
ব্যাপারে নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়:
১. শর‘ঈ দু একটি কারণ ব্যতীত গর্ভের কোনো পর্যায়ে
বাচ্চা ফেলা বৈধ নয়।
২. গর্ভ যদি প্রথম পর্যায়ে থাকে, যার বয়স চল্লিশ দিন, আর
গর্ভপাত করার কারণ যদি হয় সন্তান লালন-পালন করার কষ্ট অথবা
তাদের ভরণ-পোষণ করার দুশ্চিন্তা অথবা ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তা
অথবা যে সন্তান আছে তাদেরকে যথেষ্ট জ্ঞান করা,
তাহলে বৈধ নয়।
৩. জমাট বাঁধা রক্ত অথবা গোশতের টুকরা থাকা অবস্থায় গর্ভপাত
ঘটানো বৈধ নয়, হ্যাঁ যদি নির্ভরযোগ্য ডাক্তারি টিম বলে যে,
গর্ভ থাকলে মায়ের জীবনের আশঙ্কা আছে তাহলে বৈধ,
তবে এটা অবশ্যই গর্ভধারী মাকে শঙ্কামুক্ত করার সকল
প্রচেষ্টা প্রয়োগ শেষে হতে হবে।
৪. গর্ভ যদি তৃতীয় স্তর পার করে ও তার চার মাস পূর্ণ হয়,
তাহলে গর্ভপাত করা বৈধ নয়, তবে একদল বিশেষজ্ঞ
নির্ভরযোগ্য ডাক্তার যদি বলে যে, পেটে বাচ্চা থাকলে
মায়ের মৃত্যুর সমূহ আশঙ্কা রয়েছে তাহলে বৈধ। আর
অবশ্যই এটা হতে হবে বাচ্চার জীবন রক্ষা করার সকল
প্রচেষ্টা ব্যয় শেষে। এ সুযোগ প্রদান করা হয়েছে দু’টি
ক্ষতি থেকে ছোট ক্ষতি দূর করা ও দু’টি কল্যাণ থেকে বড়
কল্যাণ অর্জন করার স্বার্থে।
আলেমগণ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ শেষে আল্লাহর তাকওয়া ও
বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার উপদেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ একমাত্র তাওফিক দাতা। আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তার
পরিবার ও সাথীদের ওপর আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রেরণ
করুন।
‘নারীদের স্বাভাবিক ঋতু সংক্রান্ত পুস্তিকায়’: (পৃ. ৬০) শাইখ
মুহাম্মাদ উসাইমীন রহ. বলেন: “যদি গর্ভের বাচ্চায় রূহ আসার
পর গর্ভপাত করে সন্তান নষ্ট করা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে
হারাম। কারণ এটা অন্যায়ভাবে প্রাণ হত্যার শামিল, নির্দোষ
প্রাণকে হত্যা করা কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ঐকমত্যে
হারাম”।
ইবনুল জাওযী রহ. “আহকামুন নিসা”: (পৃ. ১০৮ ও ১০৯) গ্রন্থে
বলেন: “বিবাহের উদ্দেশ্য যখন সন্তান হাসিল করা, আর এটাও
সত্য যে সকল বীর্য থেকে সন্তান হয় না, অতএব
স্ত্রীর পেটে সন্তান আসলে বিবাহের উদ্দেশ্য হাসিল
হলো, তারপর গর্ভপাত ঘটানো বিবাহের হিকমত পরিপন্থী।
গর্ভপাত যদি গর্ভের বাচ্চায় রূহ সঞ্চার করার পূর্বে হয় বড়
পাপ, আর যদি রূহ সঞ্চার করার পর গর্ভপাত করা হয় সেটা হবে
মুমিন নফসকে হত্যা করার মতো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻭَﺇِﺫَﺍ ﭐﻟۡﻤَﻮۡﺀُۥﺩَﺓُ ﺳُﺌِﻠَﺖۡ ٨ ﺑِﺄَﻱِّ ﺫَﻧۢﺐٖ ﻗُﺘِﻠَﺖۡ ٩﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﻜﻮﻳﺮ : ٨، ٩‏]
“আর যখন জ্যান্ত দাফনকৃত কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে,
কোন অপরাধে হত্যা করা হয়েছে”। [সূরা আত-তাকওয়ীর,
আয়াত: ৮-৯] সমাপ্ত
অতএব, হে মুসলিম নারী আল্লাহকে ভয় কর, যে
কোনো উদ্দেশ্যই হোক এ জাতীয় অপরাধে অগ্রসর
হয়ো না। পথভ্রষ্টদের প্রচারণা ও পাপাচারীদের অনুসরণ
করে ধোঁকায় পতিত হয়ো না, তাদের কর্মের সাথে
বিবেক ও দীনের কোনো সম্পর্ক নেই।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
পোশাক ও পর্দা সংক্রান্ত বিধান
প্রথমত: মুসলিম নারীর শর‘ঈ পোশাক:
১. মুসলিম নারীর পোশাক ব্যাপক প্রশস্ত হওয়া জরুরি, যেন
তার সমস্ত শরীর পর-পুরুষ থেকে আচ্ছাদিত থাকে, যারা তার
মাহরাম নয়। মাহরামের সামনে সে পরিমানই খুলবে যতটুকু
খোলা রাখার রীতি রয়েছে, যেমন তার চেহারা, দুই হাতের
কব্জি ও দুই পা।
২. পোশাক তার চারপাশ আচ্ছাদনকারী হওয়া চাই। এরূপ স্পষ্ট
নয় যা তার চামড়ার রঙ প্রকাশ করে দেয়।
৩. এত সংকীর্ণ নয় যা তার অঙ্গের পরিমাণ স্পষ্ট করে
দেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
» ﺻﻨﻔﺎﻥ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻟﻢ ﺃﺭﻫﻤﺎ : ﻗﻮﻡ ﻣﻌﻬﻢ ﺳﻴﺎﻁ ﻛﺄﺫﻧﺎﺏ ﺍﻟﺒﻘﺮ
ﻳﻀﺮﺑﻮﻥ ﺑﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﻭﻧﺴﺎﺀ ﻛﺎﺳﻴﺎﺕ ﻋﺎﺭﻳﺎﺕ، ﻣﺎﺋﻼﺕ ﻣﻤﻴﻼﺕ،
ﺭﺅﻭﺳﻬﻦ ﻛﺄﺳﻨﻤﺔ ﺍﻟﺒﺨﺖ ﺍﻟﻤﺎﺋﻠﺔ، ﻻ ﻳﺪﺧﻠﻦ ﺍﻟﺠﻨﺔ، ﻭﻻ ﻳﺠﺪﻥ ﺭﻳﺤﻬﺎ،
ﻭﺇﻥ ﺭﻳﺤﻬﺎ ﻟﻴﻮﺟﺪ ﻣﻦ ﻣﺴﻴﺮﺓ ﻛﺬﺍ ﻭﻛﺬﺍ «
“জাহান্নামের দু’প্রকার লোক রয়েছে যাদের আমি এখনো
দেখি নি: এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে গুরুর লেজের মত
চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা মানুষদের আঘাত করবে। আর
বস্ত্র পরিহীত উলঙ্গ নারী, নিজেরা ধাবিত হয় ও অপরকে
ধাবিত করে। উটের ঝুঁকে পড়া কুজের ন্যায় তাদের মাথা। তারা
জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার ঘ্রাণও পাবে না, যদিও তার
ঘ্রাণ এতো এতো দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়”। [46]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন: “বস্ত্র পরিহিত উলঙ্গ
নারী”র ব্যাখ্যায় বলা হয়, সে এমন পোশাক পড়বে যা তার
শরীর ঢাকবে না। সে বস্ত্র পরিহিত হলেও প্রকৃতপক্ষে
উলঙ্গ। যেমন, পাতলা কাপড় পরিধানকারী, যা তার শরীরের
চামড়া প্রকাশ করে দেয় অথবা খুব সংকীর্ণ, যা তার
শরীরের ভাঁজ প্রকাশ করে দেয়, যেমন নিতম্ব ও হাতের
বাহুর ভাঁজ ইত্যাদি। নারীর পোশাক হবে প্রশস্ত ও মোটা, যা
তাকে ঢেকে নেয় এবং তার শরীরের কোনো অংশ ও
আকৃতি প্রকাশ করে না”। [47] সমাপ্ত
৪. পোশাকের ক্ষেত্রে পুরুষের সামঞ্জস্য গ্রহণ না করা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের সামঞ্জস্য
গ্রহণকারী নারীর ওপর লা‘নত করেছেন। অনুরূপ লা‘নত
করেছেন পুরুষের অঙ্গ-ভঙ্গী গ্রহণকারী নারীদের
ওপর। পুরুষের সাথে নারীর সামঞ্জস্য গ্রহণ করার অর্থ
প্রত্যেক সমাজে যেসব পোশাক পুরুষদের সাথে
সেগুলো নারীদের পরিধান করা।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: “পুরুষ ও নারীর
পোশাকে ব্যবধান সৃষ্টিকারী বস্তু তা-ই যা তাদের
প্রত্যেকের সাথে যথাযথ ও সামঞ্জস্য। পুরুষের জন্য
শোভনীয় পোশাক পুরুষরা পরিধান করবে এবং নারীদের
জন্য শোভনীয় পোশাক নারীরা পরিধান করবে এটিই
শরী‘আতের নির্দেশ। নারীদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে
তারা ঢেকে থাকবে ও পর্দা করবে, প্রকাশ্যে আশা ও
সৌন্দর্য প্রকাশ করা তাদের পক্ষে বৈধ নয়। এ জন্য আযান,
তালবিয়া, সাফা ও মারওয়ায় উঠার সময় তাদের প্রতি আওয়াজ বুলন্দ
করার নির্দেশ নেই। ইহরামে তারা সেরূপ কাপড় খুলবে না
যেরূপ পুরুষরা খুলে। কারণ পুরুষদের নির্দেশ করা হয়েছে
মাথা খোলা রাখতে, সাধারণ কাপড় পরিধান না করতে, সাধারণ কাপড়
বলতে শরীরের মাপে তৈরি পোশাককে বুঝায়, যেমন
জামা, পায়জামা, কোর্ট ও মোজা… নারীদেরকে কোনো
পোশাক থেকে নিষেধ করা হয় নি। কারণ সে আদিষ্ট
ঢেকে থাকা ও পর্দার, তার খিলাফ করা তার পক্ষে বৈধ নয়। কিন্তু
তাকে নেকাব ও হাত মোজা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
কারণ, এগুলো শরীরের মাপ মতো তৈরি করা, যা তার
প্রয়োজন নেই… অতঃপর তিনি বলেন: নারী এগুলো ছাড়াই
স্বীয় চেহারা পুরুষদের আড়াল করবে… অতঃপর তিনি বলেন:
‘নিহায়াহ’ গ্রন্থে রয়েছে: পুরুষ ও নারীর পোশাকে
পার্থক্য থাকা জরুরি, যার দ্বারা পুরুষরা নারীদের থেকে
পৃথকভাবে চিহ্নিত হয়। নারীদের পোশাকে যদি আড়াল করা
ও পর্দার বিষয়টি গুরুত্ব পায় তাহলে পর্দার আসল উদ্দেশ্য
হাসিল হবে। পোশাক যদি পুরুষদের সাধারণ পোশাক হয়,
তাহলে সেটা থেকে নারীদের নিষেধ করা হবে…
অতঃপর তিনি বলেন: যদি পোশাকে পর্দা কম হয় ও পুরুষের
সাথে সামঞ্জস্য থাকে, তাহলে দু’টি বিবেচনায় তার থেকে
নারীদের নিষেধ করা হবে”। [48] সমাপ্ত।
৫. নারী ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দৃষ্টি আকর্ষণকারী
সৌন্দর্য গ্রহণ করবে না, তাহলে (নিষিদ্ধ) সৌন্দর্য প্রকাশকারী
নারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
দ্বিতীয়ত: পর্দার অর্থ, দলীল ও উপকারিতা:
পর্দার অর্থ নারী স্বীয় শরীরকে পর-পুরুষ থেকে
ঢেকে রাখা, যারা তার মাহরাম নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺒۡﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨۡﻬَﺎۖ ﻭَﻟۡﻴَﻀۡﺮِﺑۡﻦَ ﺑِﺨُﻤُﺮِﻫِﻦَّ ﻋَﻠَﻰٰ
ﺟُﻴُﻮﺑِﻬِﻦَّۖ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺒۡﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﺒُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺃَﻭۡ ﺀَﺍﺑَﺎٓﺋِﻬِﻦَّ ﺃَﻭۡ ﺀَﺍﺑَﺎٓﺀِ
ﺑُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺃَﻭۡ ﺃَﺑۡﻨَﺎٓﺋِﻬِﻦَّ ﺃَﻭۡ ﺃَﺑۡﻨَﺎٓﺀِ ﺑُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺃَﻭۡ ﺇِﺧۡﻮَٰﻧِﻬِﻦَّ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﻮﺭ : ٣١‏]
“আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ
করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত
করে রাখে। আর তারা তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের
ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই ব্যতীত সৌন্দর্য প্রকাশ
করবে না”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
অন্যত্র তিনি বলেন:
﴿ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟۡﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﻣَﺘَٰﻌٗﺎ ﻓَﺴَۡٔﻠُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦ ﻭَﺭَﺍٓﺀِ ﺣِﺠَﺎﺏٖۚ﴾ ‏[ ﺍﻻﺣﺰﺍﺏ : ٥٣‏]
“আর যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু প্রার্থনা কর, তবে পর্দার
আড়াল থেকে তাদের কাছে চাও”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত:
৫৩]
এখানে পর্দার উদ্দেশ্য নারীকে আড়ালকারী দেয়াল অথবা
দরজা অথবা পোশাক। আয়াতটি যদিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে নাযিল হয়েছে;
কিন্তু তাতে সকল মুমিন নারীই প্রবেশ করবে; যেহেতু
এখানে আল্লাহ তার কারণ বলেছেন:
﴿ﺫَٰﻟِﻜُﻢۡ ﺃَﻃۡﻬَﺮُ ﻟِﻘُﻠُﻮﺑِﻜُﻢۡ ﻭَﻗُﻠُﻮﺑِﻬِﻦَّۚ﴾ ‏[ ﺍﻻﺣﺰﺍﺏ : ٥٣‏]
“এটিই তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিক পবিত্রতা”।
[সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩] আর অন্তরের পবিত্রতা সবার
প্রয়োজন, তাই এ হুকুম সবার জন্য ব্যাপক। আল্লাহ তা‘আলা
আরো বলেন:
﴿ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞ ﻟِّﺄَﺯۡﻭَٰﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎٓﺀِ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳُﺪۡﻧِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻴۡﻬِﻦَّ
ﻣِﻦ ﺟَﻠَٰﺒِﻴﺒِﻬِﻦَّۚ﴾ ‏[ ﺍﻻﺣﺰﺍﺏ : ٥٩‏]
“হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন
নারীদেরকে বলে দিন, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু
অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়”। [সূরা আল-আহযাব,
আয়াত: ৫৯]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: “জিলবাব অর্থ হচ্ছে
অবগুণ্ঠন ও বোরকা। ইবন মাস‘উদ এটিকেই চাদর বলেছেন।
আর সাধারণরা এটাকে বলে: ইযার। বড় ইযার মাথা ও সারা শরীর
ঢেকে নেয়। আবু উবায়দাহ প্রমুখ বলেন: ইযার মাথার উপর
থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে
চোখ ব্যতীত কিছু দেখা যায় না। ঘোমটা ইযার বা চাদর
থেকেই হয়। সমাপ্ত [49] ।
মাহরাম ব্যতীত পরপুরুষ থেকে নারীদের চেহারা ঢাকার
হাদীস। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
» ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺮﻛﺒﺎﻥ ﻳﻤﺮﻭﻥ ﺑﻨﺎ ﻭﻧﺤﻦ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
ﻣﺤﺮﻣﺎﺕ، ﻓﺈﺫﺍ ﺣﺎﺫﻭﺍ ﺑﻨﺎ ﺳﺪﻟﺖ ﺇﺣﺪﺍﻧﺎ ﺟﻠﺒﺎﺑﻬﺎ ﻣﻦ ﺭﺃﺳﻬﺎ ﻋﻠﻰ
ﻭﺟﻬﻬﺎ، ﻓﺈﺫﺍ ﺟﺎﻭﺯﻧﺎ ﻛﺸﻔﻨﺎﻩ «
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মুহরিম
ছিলাম, আরোহীগণ আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত।
যখন তারা আমাদের বরাবর হত, আমরা প্রত্যেকে জিলবাব মাথার
উপর থেকে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম, যখন তারা
আমাদের ছাড়িয়ে যেত আমরা তা খুলে ফেলতাম”। [50]
মাহরাম ব্যতীত অন্যান্য পুরুষদের থেকে নারীদের
চেহারা ঢাকার দলীল কুরআন ও সুন্নায় অনেক রয়েছে, এ
জন্য মুসলিম বোন হিসেবে আমি তোমাকে কয়েকটি কিতাব
অধ্যয়ণের নির্দেশ দিচ্ছি: শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রচিত
ﺣﺠﺎﺏ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻭﻟﺒﺎﺳﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ শাইখ আব্দুল আযীয ইবন
আব্দুল্লাহ ইবন বায রচিত ﺣﻜﻢ ﺍﻟﺴﻔﻮﺭ ﻭﺍﻟﺤﺠﺎﺏ হামুদ ইবন
আব্দুল্লাহ তুওয়াইজুরি রচিত ﺍﻟﺼﺎﺭﻡ ﺍﻟﻤﺸﻬﻮﺭ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻔﺘﻮﻧﻴﻦ
ﺑﺎﻟﺴﻔﻮﺭ এবং শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমিন রচিত ﺭﺳﺎﻟﺔ
ﺍﻟﺤﺠﺎﺏ কিতাবগুলো পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ কিতাবসমূহে যা
রয়েছে তাই যথেষ্ট।
হে মুসলিম বোন, যেসব আলেম বলেন তোমার চেহারা
খোলা বৈধ, যদিও তাদের কথা দুর্বল, তবুও তারা নিরাপত্তার
শর্তারোপ করেছেন। আর ফেতনার কোনো নিরাপত্তা
নেই, বিশেষ করে এ যুগে, যখন নারী ও পুরুষের মাঝে
দীন সুরক্ষার প্রেরণা কমে গেছে, কমে গেছে
লজ্জা। পক্ষান্তরে ফিতনার দিকে আহ্বানকারীর সংখ্যা
বেড়ে গেছে। আর নারীরা চেহারায় বিভিন্নভাবে সৌন্দর্য
গ্রহণ করে, যা মূলত ফিতনার দিকেই আহ্বান করছে।
হে মুসলিম বোন, তুমি তা থেকে বিরত থাক, ফিতনা থেকে
সুরক্ষাদানকারী হিজাব ব্যবহার কর। পূর্বাপর কোনো আলেম
বর্তমান যুগে নারীরা যে ফিতনায় পতিত হয়েছে তার বৈধতা
দেন নি। আর মুসলিম নারীরা লোক দেখানো যে পর্দা
পরিধান করে তারও কেউ অনুমোদন দেন নি। পর্দার সমাজে
থাকলে পর্দা করে পর্দাহীন পরিবেশে গেলে পর্দা
ত্যাগ করে। আর কতক নারী পাবলিক স্থানে পর্দা করে;
কিন্তু যখন মার্কেটে অথবা হাসপাতালে যায় অথবা কোনো
স্বর্ণকারের সাথে কথা বলে অথবা কোনো দর্জির সাথে
কথা বলে, তখন সে চেহারা ও বাহু খুলে ফেলে যেন
স্বামী অথবা কোনো মাহরামের সাথেই কথা বলছে। এ
জাতীয় কর্মে লিপ্ত নারীরা আল্লাহকে ভয় কর। বাহির
থেকে আগত আমরা কতক নারীকে দেখি প্লেন যখন
দেশের মাটিতে ল্যান্ড করে তখন তারা হিজাব পরে, যেন
হিজাব পরা একটি দেশীয় কালচার, শর‘ঈ কোনো বিষয় নয়।
হে মুসলিম নারী, ব্যাধিতে আক্রান্ত অন্তর ও কুকুর
শ্রেণীর মানুষ থেকে পর্দা তোমাকে সুরক্ষা দিবে। তারা
তোমার থেকে নিরাশ হবে। অতএব, তুমি পর্দাকে জরুরি কর
ও তাকে আকড়ে ধর। তুমি অপ্রচারের শিকার হয়ো না, যারা
পর্দার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে অথবা নারীকে তার
মর্যাদার আসন থেকে বিচ্যুত করছে, কারণ তারা তোমার
অনিষ্ট চায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ﻭَﻳُﺮِﻳﺪُ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺘَّﺒِﻌُﻮﻥَ ﭐﻟﺸَّﻬَﻮَٰﺕِ ﺃَﻥ ﺗَﻤِﻴﻠُﻮﺍْ ﻣَﻴۡﻠًﺎ ﻋَﻈِﻴﻤٗﺎ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٢٧ ‏]
“আর যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা
প্রবলভাবে (সত্য থেকে) বিচ্যুত হও”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত:
২৭]
লেখক: ড. সালেহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান
—™অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ মহিলাদের স্রাব ও প্রসূতি অবস্থার বিধিবিধান সংক্রান্ত
৬০টি প্রশ্ন
আরও পড়ুনঃ নারীর প্রাকৃতিক রক্তস্রাব
আরও পড়ুনঃ মহিলা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া
আরও পড়ুনঃ জান্নাতী রমণীর জন্য কতিপয়
গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া
আরও পড়ুনঃ জান্নাতী রমণী (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ জান্নাতী রমণী (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ পবিত্রতা সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ
৬২টি প্রশ্নোত্তর
আরও পড়ুনঃ শরঈ পর্দা বলতে কী বুঝায়?
আরও পড়ুনঃ নারীদের হাই-হিল পরার হুকুম কি?
আরও পড়ুনঃ নারী-পুরুষ সংমিশ্রণের বিধান
আরও পড়ুনঃ নারীর হজ ও উমরা
আরও পড়ুনঃ নারীর জান্নাত যে পথে
আরও পড়ুনঃ জান্নাতে নারীদের অবস্থা
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ দ্বীনী প্রশ্নোত্তর –
ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বই – ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম (ফ্রি
ডাউনলোড)
“ইসলাম ও নারী” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক
[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৬৭/৫১১৩
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ১৮২৯; তিরমিযী, হাদীস নং ১৭০৫, আবু
দাউদ, হাদীস নং ২৯২৮, আহমদ: (২/১২১)
[3]তিরমিযি: (৯১৪), নাসাঈ, হাদীস নং৫০৪৯)
[4] মাজমুউল ফতোয়া শাইখ ইবরাহীম ইবন মুহাম্মাদ:
(২/৪৯)
[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২০
[6] আদওয়াউল বায়ান: (৫/৫৯৮-৬০১) স্বামী যদি চুল
কাঁটার নির্দেশ দেয় তবুও তার পক্ষে চুল কাঁটা বৈধ
নয়, কারণ স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোনো অনুকরণ
নেই।
[7] মাজমুউল ফতোয়া: (২২/১৪৫)
[8] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১২৮; আহমদ (২/৪৪০); ইমাম
মালিক, হাদীস নং ১৬৯৪
[9] মাজমুউল ফতোয়া: (২/৪২), আরো দেখুন: ঈদাহ ও আত-
তাবঈন: (পৃ. ৮৫) লি শাইখ হামুদ তুওয়াইজিরি।
[10] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ২১২৪; তিরমিযী, হাদীস নং ১৭৫৯, নাসাঈ, হাদীস
নং ৫০৯৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৬৮; ইবন মাজাহ,
হাদীস নং ১৯৮৭; আহমদ (২/২১)
[11] নাসাঈ, হাদীস নং ৫১০১
[12] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৮৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ২১২৫; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৮২; নাসাঈ হাদীস
নং ৫০৯৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৬৯; ইবন মাজাহ,
হাদীস নং ১৯৮৯; আহমদ (১/৪৩৪), দারেমী, হাদীস নং
২৬৪৭
[13] (২/৩৫৯), দারুল উন্দুলুস প্রকাশিত।
[14] আল-মাজমু: (১/৩২৪)
[15] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৬৪, নাসাঈ, হাদীস নং
৫০৯০; আহমদ: (৬/১১৭)
[16] নাসাঈ, হাদীস নং ৫০৮৯; আবু দাউদ, হাদীস নং
৪১৬৬; আহমদ (৬/২৬২)
[17] উদাহরণত, সেসব রঙ যার দ্বারা রঙ করলে নখের উপর
প্রলেপ পড়ে যায় এবং তার অভ্যন্তরে পানি পৌঁছে
না। যেমন লখ পালিশ।
[18] সিয়াদুস সালিহীন: (৬২৬)
[19] আল-মাযমু: (১/৩২৪)
[20] আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর তারা যেন নিজেদের
গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা
না করে”। সূরা নূর: (৩১)
[21] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০২; তিরমিযী, হাদীস নং
২৯৭৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৩৬৯; আবু দাউদ, হাদীস নং
২১৬৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৪৪; আহমদ: (৩/১৩৩);
দারেমী, হাদীস নং ১০৫৩
[22] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ৮০
[23] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ৩৩৫; তিরমিযী, হাদীস নং ১৩০); নাসাঈ, হাদীস
নং ২৩১৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৬২; ইবন
মাজাহ, হাদীস নং ৬৩১; আহমদ: (৬/২৩২);
দারেমী, হাদীস নং ৯৮৬
[24] ইমাম মালিক, হাদীস নং ৪৬৮
[25] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ১২১১; নাসাঈ, হাদীস নং ২৭৬৩; আবু দাউদ, হাদীস
নং ১৭৭৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩০০০; আহমদ: (৬/২৭৩)
; মালিক, হাদীস নং ৯৪১; দারেমী, হাদীস নং ১৮৪৬
[26] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩২
[27] ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৬৪৫
[28] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮; তিরমিযী, হাদীস নং
১৩৪, নাসাঈ, হাদীস নং ৩৮৪; আবু দাউদ, হাদীস নং
৩৬১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৩২; আহমদ: (৬/১০৬);
দারেমী, হাদীস নং ১০৬৫
[29] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ৩৩৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১২৫, নাসাঈ, হাদীস
নং ৩৬৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮২; ইবন মাজাহ, ৬২৪,
আহমদ: (৬/২০৪), মালিক, হাদীস নং ১৩৭;
দারেমী, হাদীস নং ৭৭৪
[30] মাজমুউল ফতোয়া: (২২/৪৩৪)
[31] মাজমুউল ফতোয়া: (২৩/৩৩৫)
[32] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৪; নাসাঈ, হাদীস নং
২০৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৭৯; আহমদ: (৬/২২২)
[33] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ৩৩৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১২৫; নাসাঈ, হাদীস
নং ৩৬৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮২; ইবন মাজাহ,
হাদীস নং ৬২৪; আহমদ: (৬/২০৪); মালিক, হাদীস নং
১৩৭; দারেমী, হাদীস নং ৭৭৪
[34] নাসাঈ, হাদীস নং ২১৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮০;
ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬২০; আহমদ: (৬/৪৬৪), হাকিম ও
ইবন হিব্বান হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[35] তিরমিযি, হাদীস নং ১২৮; আবু দাউদ, হাদীস নং
২৮৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬২৭; আহমদ: (৬/৪৩৯)
[36] তিরমিযি, হাদীস নং ১২৬; আবু দাউদ, হাদীস নং
২৯৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬২৫; দারেমী, হাদীস নং
৭৯৩
[37] তিরমিযি, হাদীস নং ১২৮; আবু দাউদ, হাদীস নং
২৮৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬২২; আহমদ: (৬/৪৩৯)
[38] তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৯; আবু দাউদ, হাদীস নং
৩১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৪৮; আহমদ: (৬/৩০০),
দারেমী, হাদীস নং ৯৫৫
[39] তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৯; আবু দাউদ, হাদীস নং
৩১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৪৮; আহমদ: (৬/৩০০);
দারেমী, হাদীস নং ৯৫৫
[40] আল-মুনতাকা: (১/১৮৪)
[41] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১২
[42] দেখুন: (১) শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীমের ফতোয়া
সমগ্র (এখানে তিনি আরেকটি কথা বলেছেন, যার
থেকে বুঝে আসে পুনরায় রক্ত আসার পর যে সিয়াম
ত্যাগ করেছে সেগুলো কাযা করবে।) : (২/১০২)। (২)
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-
এর ফতোয়া ‘মাজাল্লালুত দাওয়াহ: (১/৪৪)
প্রকাশিত। (৩) ‘যাদ’ গ্রন্থের ব্যাখ্যার: (১/৪০৫) ওপর
ইবন কাসিমের টিকা। (৪) ইবন উসাইমিন কর্তৃক
রচিত ‘নারীদের স্বাভাবিক ঋতু সংক্রান্ত
পুস্তিকা’: (পৃ. ৫৫ ও ৫৬) ও (৫) ফতোয়া সাদিয়াহ: (পৃ.
১৩৭)
[43] ইরশাদু উলিল আবসার ও উলিল আল-বাব: (পৃ. ২৪)
[44] ফতোয়া সমগ্রে: (১১/১৫১)
[45] সভা নং: (১৪০), তারিখ ২০/৬/১৪০৭ হিজরী
[46] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১২৮; আহমদ (২/৪৪০);
মালিক, হাদীস নং ১৬৯৪
[47] মাজমুউল ফতোয়া: (২২/১৪৬)
[48] মাজমুউল ফতোয়া: (২২/১৪৮-১৪৯/১৫৫)
[49] মাজমুউল ফতোয়া: (২২/১১০-১১১)
[50] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৮৩৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং
২৯৩৫; আহমদ (৬/৩০)

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ