(৫৬২) হজ্জের জন্য মীক্বাতের স্থান সমূহ কি কি?
হজ্জের জন্য মীক্বাতের স্থান সমূহ হচ্ছে পাঁচটিঃ ১) যুল হুলায়ফা ২) জুহ্ফা ৩) ইয়ালামলাম ৪) কারণে মানাযেল ৫) যাতু ঈরক্ব।
১) যুল হুলায়ফাঃ যাকে
বর্তমানে আবা’রে আলী বলা হয়। ইহা মদ্বীনার নিকটবর্তী। মক্কা থেকে এর
অবস্থান ১০ মারহালা দূরে (বর্তমান হিসেবে প্রায় ৪০০ কিঃ মিঃ)। মক্কা থেকে
এটি সবচেয়ে দূরে অবসি'ত। এটি মদ্বীনাবাসী এবং সেপথ দিয়ে গমণকারী
অন্যান্যদের মীক্বাত।
২) জুহ্ফাঃ
শাম তথা
সিরিয়াবাসীদের মক্কা গমণের পথে পুরাতন একটি গ্রামের নাম জুহ্ফা। সেখান
থেকে মক্কার দূরত্ব ৩ মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১৮৬ কিঃ মিঃ)। এটা এখন আর
গ্রাম নেই। বর্তমানে লোকেরা এর বদলে পার্শবর্তী স্থান রাবেগ থেকে ইহরাম
বাঁধে।
৩) ইয়ালামলামঃ ইয়ামানের
লোকদের মক্কা আগমণের পথে একটি পাহাড় বা একটি স্থানের নাম ইয়ালামলাম।
বর্তমানে এস্থানকে সা’দিয়া বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায়
দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ৯২ কিঃ মিঃ।)
৪) কারণে মানাযেলঃ নজদ
তথা পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের মক্কা গমণের পথে তায়েফের কাছে একটি পাহাড়ের
নাম। বর্তমানে একে সায়লুল কাবীর বলা হয়। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায়
দু’মারহালা (বর্তমানে প্রায় ৭৮ কিঃ মিঃ।)
৫) যাতু ইরক্বঃ ইরাকের অধিবাসীদের মক্কা আগমণের পথে একটি স্থানের নাম। এখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় দু’মারহালা। (বর্তমানে প্রায় ১০০ কিঃ মিঃ।)
প্রথম চারটি মীক্বাত রাসূল (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারিত। শেষেরটিও আয়েশা (রাঃ)এর বর্ণনা
অনুযায়ী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারণকৃত
মীক্বাত। যেমনটি নাসাঈ ও আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু যাতু ইরক্বের
ব্যাপারে ছহীহ্ সূত্রে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি উহা কূফা ও
বস্রার অধিবাসীদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তারা এসে অভিযোগ করল, হে আমীরুল
মু‘মেনীন! নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নজদবাসীদের জন্য কারণে
মানাযেলকে (তায়েফ) মীক্বাত নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু আমাদেরকে অনেকটা পথ
ঘুরে সেখানে যেতে হয় এবং আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তখন ওমর (রাঃ) বললেন,
তোমাদের পথে ঐ মীক্বাতের বরাবর কোন স্থান তোমরা অনুসন্ধান কর। তখন যাতু
ইরক্ব মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
মোটকথা, যদি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) থেকে ছহীহ্ সূত্রে প্রমাণিত হয় তবে তো কোন প্রশ্ন নেই। যদি
প্রমাণিত না হয়, তবে উহা ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এর সুন্নাত থেকে প্রমাণিত
হয়েছে। তিনি চার খলীফার মধ্যে অন্যতম। যারা ছিলেন সুপথপ্রাপ্ত এবং তাঁদের
অনুসরণ করার নির্দেশ আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ওমরের সমর্থনে আল্লাহ
পবিত্র কুরআনে কয়েকটি বিধান নাযিল করেছেন। আয়েশা বর্ণিত হাদীছটি যদি ছহীহ্
হয়, তবে এটাও তাঁর প্রতি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সমর্থন।
তাছাড়া ওমরের নির্দেশ যুক্তি সংগত। কেননা কোন মানুষ যদি মীক্বাত থেকে
ভিতরে যেতে চায় তবে সেখান থেকেই তাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। কিন্তু এ স্থানের
বরাবর কোন পথ দিয়ে ভিতরে যেতে চাইলে মীক্বাত অতিক্রমকারী হিসেবে উক্ত স্থান
থেকেই ইহরাম বাঁধবে।
ওমর (রাঃ)এর এই হাদীছে বর্তমান যুগে
আমাদের জন্য বিরাট ধরণের উপকার বিদ্যমান। আর তা হচ্ছে, কোন মানুষ যদি
বর্তমান যুগে এরোপ্লেনযোগে হজ্জ বা ওমরা করতে আসতে চায়, তবে তার জন্য
আবশ্যক হচ্ছে, যে মীকাতের উপর দিয়ে যাবে তার বরাবর হলেই তাকে ইহরাম বাঁধতে
হবে। বিলম্ব করা বৈধ হবে না এবং জেদ্দায় গিয়ে ইহরাম বাঁধা জায়েয হবে না-
যেমনটি অনেক লোক করে থাকে। কেননা স্থল পথে হোক, বা আকাশ পথে হোক বা সমুদ্র
পথে হোক কোন পার্থক্য নেই- মীকাতের বরাবর হলেই ইহরাম বাঁধতে হবে। এজন্য
হজ্জ যাত্রী যে দেশেরই হোক সমুদ্র পথে মক্কা আসতে চাইলে ইয়ালামলাম বা
রাবেগের বরাবর হলে তাদেরকে ইহরাম বাঁধতে হবে।
No comments:
Post a Comment