Tuesday, January 16, 2018

ফিরকায়ে নাযিয়া এর পরিচয়

ফিরকায়ে নাযিয়া এর পরিচয়

অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন যে, নিশ্চয়ই আমার উম্মতের উপরে তেমন অবস্থা আসবে, যেমন এসেছিল বনু ইস্রাঈলের উপরে এক জোড়া জুতার পরস্পরের সমান হওয়ার ন্যায়। এমনকি তাদের মধ্যে যদি এমন কেউ থাকে, যে তার মায়ের সাথে প্রকাশ্যে যেনা করেছে, তাহ’লে আমার উম্মতের মধ্যে তেমন লোকও পাওয়া যাবে যে এমন কাজ করবে। আর বনু ইস্রাঈল ৭২ ফের্কায় বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ ফের্কায় বিভক্ত হবে। সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি দল ব্যতীত। তারা বললেন, সেটি কোন দল হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, যারা আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি, তার উপরে টিকে থাকবে’। – অতঃপর
আহমাদ ও আবুদাঊদ হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, ৭২ দল জাহান্নামী হবে ও একটি দল জান্নাতী হবে। আর তারা হ’ল- আল-জামা‘আত। আর আমার উম্মতের মধ্যে সত্বর এমন একদল লোক বের হবে, যাদের মধ্যে প্রবৃত্তি পরায়ণতা এমনভাবে প্রবহমাণ হবে, যেভাবে কুকুরের বিষ আক্রান্ত ব্যক্তির সারা দেহে সঞ্চারিত হয়। কোন একটি শিরা বা জোড়া বাকী থাকে না যেখানে উক্ত বিষ প্রবেশ করে না।[1] সনদ : আলবানী ‘হাসান’ বলেছেন। তিরমিযী ‘হাসান’ বলেছেন বিভিন্ন ‘শাওয়াহেদ’-এর কারণে। হাকেম বিভিন্ন বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন, ﻫﺬﻩ ﺃﺳﺎﻧﻴﺪ ﺗﻘﺎﻡ ﺑﻬﺎ ﺍﻟﺤﺠﺔ ﻓﻲ ﺗﺼﺤﻴﺢ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ‘এই সকল সনদ হাদীছটি ছহীহ হওয়ার পক্ষে দলীল হিসাবে দন্ডায়মান’।[2] ছাহেবে মির‘আত উক্ত মর্মের ১০টি হাদীছ উল্লেখ করেছেন ‘শাওয়াহেদ’ হিসাবে। অতঃপর তিনি বলেন, এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীছ সমূহের কোনটি ‘ছহীহ’ কোনটি ‘হাসান’ ও কোনটি ‘যঈফ’। অতএব ﺍﻓﺔﺭﺍﻕ ﺍﻷﻣﺔ -এর হাদীছ নিঃসন্দেহে ‘ছহীহ’ ‏( ﺻﺤﻴﺢ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺷﻚ‏) । [3] সারমর্ম : মুসলিম উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে একটি মাত্র দল শুরুতেই জান্নাতী হবে। হাদীছের ব্যাখ্যা : হাদীছটি ﺍﻓﺔﺭﺍﻕ ﺍﻷﻣﺔ নামে প্রসিদ্ধ। এর মধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী লুকিয়ে রয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে মুসলিম উম্মাহর আক্বীদাগত বিভক্তি ও সামাজিক ভাঙনচিত্র যেমন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তেমনি তা থেকে নিষ্কৃতির পথও বাৎলে দেওয়া হয়েছে। এটাও বলে দেওয়া হয়েছে যে, যত দলই সৃষ্টি হউক না কেন, একটি দলই মাত্র শুরু থেকেই জান্নাতী হবে, যারা রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের আক্বীদা ও আমলের যথার্থ অনুসারী হবে। ‏( ﻟَﻴَﺄْﺗِﻴَﻦَّ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻣَّﺘِﻲْ ﻣَﺎ ﺃَﺗَﻰْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻨِﻲْ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴْﻞَ ﺣَﺬْﻭَ ﺍﻟﻨَّﻌْﻞِ ﺑِﺎﻟﻨَّﻌْﻞِ‏) ‘নিশ্চয়ই আমার উম্মতের উপরে তেমন অবস্থা আসবে, যেমন অবস্থা এসেছিল বনু ইস্রাঈলের উপরে এক জোড়া জুতার পরস্পরে সমান হওয়ার ন্যায়’। ﻟَﻴَﺄْﺗِﻴَﻦَّ‘অবশ্যই আসবে’ অর্থ ‘আপতিত হবে’। এখানে ﺍﺗﻲ ক্রিয়াটির পরে ﻋﻠﻰ অব্যয়টি এসে তাকে ‘সকর্মক’ করেছে। যার সঠিক তাৎপর্য দাঁড়াবে ﺍﻟﻐﻠﺒﺔ ﺍﻟﻤﺆﺩﺓ ﺇﻟﻲ ﺍﻟﻬﻼﻙ ‘ঐরূপ বিজয় যা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়’। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻭَﻓِﻲْ ﻋَﺎﺩٍ ﺇِﺫْ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟﺮِّﻳْﺢَ ﺍﻟْﻌَﻘِﻴْﻢَ – ﻣَﺎ ﺗَﺬَﺭُ ﻣِﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ ﺃَﺗَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺇِﻻَّ ﺟَﻌَﻠَﺘْﻪُ ﻛَﺎﻟﺮَّﻣِﻴْﻢِ ‘এবং নিদর্শন রয়েছে ‘আদ-এর কাহিনীতে, যখন আমরা তাদের উপরে প্রেরণ করেছিলাম অশুভ বায়ু’। এই বায়ু যার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল, তাকেই চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিল’ (যারিয়াত ৫১/৪১-৪২) । একই ক্রিয়াপদ অত্র হাদীছে ব্যবহার করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বনু ইস্রাঈলের উপরে দলাদলির যে গযব আপতিত হয়েছিল, একই ধরনের গযব আমার উম্মতের উপরে আপতিত হবে। ‘এক জোড়া জুতার পরস্পরে সমান হওয়ার ন্যায়’ বাক্যটি আনা হয়েছে দুই উম্মতের অবস্থার সামঞ্জস্য বুঝাবার জন্য। রাসূল (ছাঃ)-এর এই ভবিষ্যদ্বাণী হযরত ওছমান (রাঃ)-এর মর্মান্তিক শাহাদাতের প্রাক্কাল থেকেই শুরু হয়েছে এবং পরবর্তীতে আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর রাজনৈতিক দলাদলিকে যুক্তিসিদ্ধ করতে গিয়ে সৃষ্টি হয় উছূলী বিভক্তি। এভাবে দলাদলির শিকার হয়ে জীবন দিতে হয়েছে হযরত আলীকে এবং তৎপুত্র হযরত হোসায়েন, আশারায়ে মুবাশশারাহর সদস্য হযরত যোবায়ের, হযরত তালহা, পরে হযরত আব্দুল্লাহ বিন যোবায়ের প্রমুখ খ্যাতনামা ছাহাবীগণকে। এরপর উমাইয়া শাসনামলে তাদের বিরোধী গণ্য করে খ্যাতনামা তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব, মুহাম্মাদ ‘নফসে যাকিইয়াহ’ (পবিত্রাত্মা) সহ শত শত বিদ্বান সরকারী নির্যাতন ও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। বনু ইস্রাঈল তাদের হাযার হাযার নবীকে হত্যা করেছে। মুসলমানরা উম্মতের উপরোক্ত সেরা ব্যক্তিবর্গকে হত্যা করেছে, যারা ছিলেন উম্মতের নক্ষত্রতুল্য। এরপর হিজরী দ্বিতীয় শতক থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন বিদ‘আতী ও ভ্রান্ত দলের পন্ডিতবর্গ প্রাণান্ত কোশেশ করে যাচ্ছেন কুরআন-হাদীছের পরিবর্তন কিংবা সেখানে কিছু যোগ-বিয়োগ করার জন্য। যদিও তারা সর্ব যুগে ব্যর্থ হয়েছেন, এখনও হচ্ছেন এবং সেটা হ’তেই হবে। কেননা আল্লাহ স্বয়ং কুরআন ও হাদীছের হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন (হিজর ১৫/৯; ক্বিয়ামাহ ৭৫/১৬-১৯) । তথাপি তাদের এই অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং যা ইহুদী- নাছারাদের তাওরাত-ইঞ্জীল বিকৃতির চেষ্টার সাথে অনেকটা তুলনীয়। বর্তমান যুগে মুসলিম দেশগুলিতে ইহুদী-নাছারা পন্ডিত ও রাজনৈতিক নেতাদের আবিষ্কৃত ও চালুকৃত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ, সমাজবাদ প্রভৃতি মতবাদ সমূহ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার বদলে বিভক্ত করেছে ও পরস্পরে দলাদলি ও হানাহানি-কাটাকাটিতে সমাজে ব্যাপক অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে চলেছে। হাদীছটি পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতদ্বয়ের ব্যাখ্যা বলা যায়। যেখানে আল্লাহ বলেন, ﻭَﻻَ ﺗَﻜُﻮْﻧُﻮْﺍ ﻛَﺎﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺗَﻔَﺮَّﻗُﻮْﺍ ﻭَﺍﺧْﺘَﻠَﻔُﻮْﺍ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِ ﻣَﺎ ﺟَﺎﺀﻫُﻢُ ﺍﻟْﺒَﻴِّﻨَﺎﺕُ ﻭَﺃُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻋَﻈِﻴْﻢٌ – ‘আর তোমরা তাদের মত হয়ো না (অর্থাৎ ইহুদী-নাছারাদের মত হয়ো না), যারা তাদের নিকটে (আল্লাহর) স্পষ্ট প্রমাণাদি এসে যাওয়ার পরেও নিজেরা ফের্কায় ফের্কায় বিভক্ত হয়ে গেছে এবং পরস্পরে মতবিরোধ করেছে। বস্ত্ততঃ তাদের জন্য রয়েছে ভয়ংকর আযাব’ (আলে ইমরান ৩/১০৩) । অন্যত্র আল্লাহ দলাদলিকে দুনিয়াবী শাস্তির স্বাদ আস্বাদন হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, ﻕْﻝُ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﻘَﺎﺩِﺭُ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥ ﻳَّﺒْﻌَﺚَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺑﺎً ﻣِّﻦْ ﻓَﻮْﻗِﻜُﻢْ ﺃَﻭْ ﻣِﻦْ ﺗَﺤْﺖِ ﺃَﺭْﺟُﻠِﻜُﻢْ ﺃَﻭْ ﻳَﻠْﺒِﺴَﻜُﻢْ ﺷِﻴَﻌﺎً ﻭَﻳُﺬِﻳْﻖَ ﺑَﻌْﻀَﻜُﻢْ ﺑَﺄْﺱَ ﺑَﻌْﺾٍ – ‘(হে নবী!) আপনি বলে দিন যে, তিনি এ ব্যাপারে ক্ষমতাবান যে, তিনি তোমাদের উপরে কোন আযাব উপর থেকে বা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে ও উপদলে বিভক্ত করে সবাইকে মুখোমুখি করে দিবেন এবং পরস্পরকে আক্রমণের স্বাদ আস্বাদন করাবেন’ (আন‘আম ৬/৬৫) । ‏(ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻣَﻦْ ﺃَﺗَﻰ ﺃُﻣَّﻪُ ﻋَﻼَﻧِﻴَﺔً ﻟَﻜَﺎﻥَ ﻓِﻲْ ﺃُﻣَّﺘِﻲْ ﻣَﻦْ ﻳَﺼْﻨَﻊُ ﺫَﻟِﻚَ‏) ‘এমনকি তাদের মধ্যে যদি এমন কেউ থাকে, যে তার মায়ের সাথে প্রকাশ্যে যেনা করেছে, তাহ’লে আমার উম্মতের মধ্যে তেমন লোকও পাওয়া যাবে, যে এমন কাজ করবে’। একথার মাধ্যমে একটি চূড়ান্ত অসম্ভব বিষয়কে উদাহরণ হিসাবে পেশ করা হয়েছে বিগত অভিশপ্ত উম্মত বনু ইস্রাঈলের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করার জন্য। এখানে ‘মা’ বলতে ‘পিতার স্ত্রী’ বুঝানো হয়েছে, নিজের গর্ভধারিণী মা নয়। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, অভিশপ্ত ইহুদী ও পথভ্রষ্ট খ্রিষ্টানদের ন্যায় অবস্থা মুসলমানদেরও হবে। ‏( ﻭَﺇِﻥَّ ﺑَﻨِﻲْ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴْﻞَ ﺗَﻔَﺮَّﻗَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺛِﻨْﺘَﻴْﻦِ ﻭَﺳَﺒْﻌِﻴْﻦَ ﻣِﻠَّﺔً‏) ‘আর বনু ইস্রাঈল ৭২টি ফের্কায় বিভক্ত হয়েছিল’। আনাস (রাঃ) হ’তে ইবনু মাজাহ ও আবু ইয়া‘লা বর্ণিত অপর হাদীছে এসেছে, ইহুদীরা ৭১টি ফের্কায় বিভক্ত হয়েছিল। সবাই জাহান্নামী ছিল এবং একটি ফের্কা মাত্র জানণাতী ছিল। নাছারাগণ ৭২টি ফের্কায় বিভক্ত হয়েছিল। সবাই জাহান্নামী ছিল, একটি ফের্কা মাত্র জান্নাতী ছিল’।[4] একই মর্মে হাদীছ এসেছে ত্বাবারাণীতে আবু উমামাহ, আবুদ্দারদা, ওয়াছেলা ইবনুল আসক্বা‘ ও আনাস (রাঃ) হ’তে এবং ইবনু মাজাহতে ‘আওফ ইবনে মালেক (রাঃ) হ’তে। তিরমিযীতে আবু হুরায়রা ও অন্যান্য ছাহাবী হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, ইহুদীগণ ৭১ অথবা ৭২ ফের্কায় (রাবীর সন্দেহ) বিভক্ত হয়েছিল। নাছারাগণও অনুরূপ’।[5] ‏(ﻣِﻠَّﺔٌ‏) ‘মিল্লাত’ অর্থ তরীকা বা পথ-পন্থা। কিন্তু প্রায়োগিক অর্থ হ’ল ‘আহলে মিল্লাত’ বা তরীকার অনুসারী একটি দল। অর্থাৎ ﻛﻞ ﻓﻌﻞ ﻭﻗﻮﻝ ﺍﺟﺘﻤﻊ ﻋﻠﻴﻪ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﺣﻘﺎ ﻛﺎﻥ ﺃﻭ ﺑﺎﻃﻼ ‘হক হৌক বা বাতিল হৌক, মিল্লাত বলা হয়, ঐসব কাজ ও কথাকে যার উপরে একদল লোক একত্রিত হয়’। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) এখানে ইহুদী-নাছারাদের আবিষ্কৃত বিভিন্ন তরীকা ও রীতি- পদ্ধতিকে ‘মিল্লাত’ বলে অভিহিত করেছেন বিস্তৃত অর্থে’। কেননা তাদের এইসব তরীকার অনুসারী বিরাট বিরাট দল মওজুদ ছিল। যেমন এখনকার খ্রিষ্টান বিশ্ব রোমান ক্যাথলিক, প্রটেষ্ট্যান্ট ও অর্থডক্স নামে বিরাট তিনটি দলে বিভক্ত। ‘মিল্লাত’-এর পারিভাষিক অর্থ হ’ল : ﻣَﺎ ﺷَﺮَﻉَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟِﻌِﺒَﺎﺩِﻩِ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻟْﺴِﻨَﺔِ ﺃَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِﻩِ ﻟِﻴَﺘَﻮَﺻَّﻠُﻮْﺍ ﺑِﻪِ ﺇِﻟﻰَ ﻗُﺮْﺑَﺘِﻪِ‘ঐ সকল বিধি-বিধান, যা আল্লাহ স্বীয় নবীগণের যবানে স্বীয় বান্দাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। যার মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিলে সমর্থ হয়’। এর দ্বারা পূর্ববর্তী ও বর্তমান সকল এলাহী শরী‘আতকে বুঝানো হয়। পরবর্তীতে এই শব্দটি বিস্তৃত অর্থে ভাল ও মন্দ সকল দলকে বুঝানো হয়েছে। যেমন বলা হয়ে থাকে, ﺍﻟْﻜُﻔْﺮُ ﻣِﻠَّﺔٌ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓٌ ‘কাফের সবাই এক দলভুক্ত’। অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্যতার মূল প্রশ্নে কাফের সবাই এক দলভুক্ত। অনুরূপভাবে ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের বুঝের বাইরে আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে মুসলমানদের মধ্যকার ভ্রান্ত ও বিদ‘আতী ফের্কাগুলি সবাই মূলতঃ এক দলভুক্ত। যেমন বলা হয়, ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟْﺒِﺪْﻉِ ﻣِﻠَّﺔٌ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓٌ ‘বিদ‘আতী সবাই এক দলভুক্ত’। ‏( ﻭَﺗَﻔْﺘَﺮِﻕُ ﺃُﻣَّﺘِﻲْ ﻋَﻠَﻰ ﺛَﻼَﺙٍ ﻭَّﺳَﺒْﻌِﻴْﻦَ ﻣِﻠَّﺔً‏) ‘আর আমার উম্মত ৭৩ ফের্কায় বিভক্ত হবে’। এখানে ‘উম্মত’ বলতে ﺃﻣﺔ ﺍﻹﺟﺎﺑﺔ অর্থাৎ ইসলাম কবুলকারী উম্মত বুঝানো হয়েছে। অতএব একই ক্বিবলার অনুসারী ৭৩ ফের্কাভুক্ত সকল মুসলমান একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। যদিও এমন কিছু কিছু বিদ‘আত রয়েছে, যা তার অনুসারীকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। ফের্কাবন্দীর অর্থ : এখানে ﺍﻓﺔﺭﺍﻕ ﺍﻷﻣﺔ বা উম্মতের ফের্কাবন্দী বলতে ছাহাবা, তাবেঈন ও আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীনের সুধারণা প্রসূত ব্যাখ্যাগত মতপার্থক্য কিংবা শরী‘আতের ব্যবহারিক শাখা- প্রশাখাগত বিষয়ে পার্থক্যকে বুঝানো হয়নি। অথবা দুনিয়াবী কোন বিষয়ে দলাদলিকে বুঝানো হয়নি। বরং বিভিন্ন শিরকী ও বিদ‘আতী আক্বীদা ও আমলের উদ্ভব ঘটিয়ে তার ভিত্তিতে সৃষ্ট দলসমূহকে বুঝানো হয়েছে। যারা প্রত্যেকে নিজেকে সঠিক বলে দাবী করে ও অন্যকে কাফির-ফাসিক ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করে। যাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কহীনতা, শত্রুতা এমনকি হানাহানির অবস্থা বিরাজ করে। ৩৭ হিজরীর পর থেকে যার উদ্ভব ঘটে খারেজী ও শী‘আ নামে এবং প্রথম শতাব্দী হিজরীর শেষ দিকে উদ্ভব হয় ক্বাদারিয়া, জাবরিয়া, মুরজিয়া, অতঃপর মু‘তাযিলা প্রভৃতি ভ্রান্ত দলসমূহের। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। উল্লেখ্য যে, দুনিয়াবী বিষয়ে পারস্পরিক মতপার্থক্য ও বিভক্তি তখনই গোনাহের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হবে, যখন তা আক্বীদাগত ও দ্বীনী বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। যেমন হযরত আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর মধ্যকার পারস্পরিক রাজনৈতিক মতবিরোধ ও পরিণামে যুদ্ধ-বিগ্রহ-কে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে সৃষ্টি হয় খারেজী ও শী‘আ মতবাদ, যা একেবারেই ভ্রান্ত। ইহুদী-নাছারাগণ বিশ্বাসগতভাবে তাদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলেছিল। সে বিষয়ে সাবধান করে আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻓَﺮَّﻗُﻮْﺍ ﺩِﻳْﻨَﻬُﻢْ ﻭَﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﺷِﻴَﻌﺎً ﻟَّﺴْﺖَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻓِﻲْ ﺷَﻲْﺀٍ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻣْﺮُﻫُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﺛُﻢَّ ﻳُﻨَﺒِّﺌُﻬُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﻳَﻔْﻌَﻠُﻮْﻥَ – ‘নিশ্চয়ই যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গিয়েছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত। অতঃপর তিনি জানিয়ে দিবেন যা কিছু তারা করে থাকে’ (আন‘আম ৬/১৫৯) । অনুরূপভাবে ব্যবহারিক শাখা-প্রশাখাগত বিষয়ে বিভিন্ন মাযহাবী পার্থক্য মূলতঃ দোষণীয় নয়। কিন্তু এটা কবীরা গোনাহের পর্যায়ে পেঁŠছে যায় তখনই, যখন তার কারণে তাক্বলীদ[6] সৃষ্টি হয় এবং তার ভিত্তিতে উম্মত বিভক্ত হয় ও পারস্পরিক দলাদলি ও হানাহানিতে লিপ্ত হয়। নিঃসন্দেহে এটাও ফের্কাবন্দী, যা থেকে আল্লাহ নিষেধ করে বলেন, ﻭَﻻَ ﺗَﻜُﻮْﻧُﻮْﺍ ﻛَﺎﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺗَﻔَﺮَّﻗُﻮْﺍ ﻭَﺍﺧْﺘَﻠَﻔُﻮْﺍ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِ ﻣَﺎ ﺟَﺎﺀَﻫُﻢُ ﺍﻟْﺒَﻴِّﻨَﺎﺕُ ﻭَﺃُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻋَﻈِﻴْﻢٌ – ‘তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা ফের্কাবন্দী করেছে এবং পরস্পরে বিরোধ করেছে স্পষ্ট বিধান সমূহ এসে যাওয়ার পরেও। তাদের জন্য রয়েছে ভয়ংকর আযাব’ (আলে ইমরান ৩/১০৫) । ‏(ﺛَﻼَﺙٍ ﻭَّﺳَﺒْﻌِﻴْﻦَ ﻣِﻠَّﺔً‏) ‘৭৩ ফের্কা’। এর তাৎপর্য বিষয়ে বিদ্বানগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এর সংখ্যা কি ৭৩-য়ে সীমায়িত, না কি এর অর্থ অগণিত? কেউ বলেছেন, এর অর্থ অগণিত। কেননা বিদ‘আতী দল ও উপদলের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার সংখ্যা গণনা করাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে। কেউ বলেছেন যে, সংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাক, তার সংখ্যা ৭৩-এর মধ্যেই সীমায়িত হ’তে হবে। এ বিষয়ে বিদ্বানগণ বিদ‘আতী ফের্কা সমূহের সংখ্যা গণনা করেছেন। যেমন কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, উছূল বা মূলনীতির দিক দিয়ে সকল বিদ‘আতী ও ভ্রান্ত ফের্কা ৪টি মূল দলে বিভক্ত: খারেজী, শী‘আ, ক্বাদারিয়া ও মুর্জিয়া। প্রত্যেকটি দল ১৮টি করে উপদলে বিভক্ত হয়ে মোট ৭২টি দল হয়েছে। বাকী ১টি দল হ’ল নাজী ফের্কা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’। আব্দুল করীম শাহরাস্তানীও অনুরূপ চারটি মূল দলে বিভক্ত করেছেন। কোন কোন বিদ্বান উপরোক্ত চারটি দলের সাথে আরও চারটি যোগ করে মোট ৮টি মূল দলে বিভক্ত করেছেন। বাকী ৪টি হ’ল মু‘তাযিলা, মুশাবিবহা, জাবরিয়া ও নাজ্জারিয়া। কেউ বলেছেন, মূল দল হ’ল ৬টি: হারূরিয়া (খারেজী), ক্বাদারিয়া, জাহমিয়া, মুর্জিয়া, রাফেযাহ (শী‘আ), জাবরিয়া। তবে শেষের ৮টি ও ৬টি প্রথম ৪টির মতই। তাই উত্তম হবে ভ্রান্ত দল সমূহের সংখ্যা নির্দিষ্ট না করা। যার সবগুলি নাজী ফের্কার আক্বীদা ও আমলের বিরোধী। ভ্রান্ত ফের্কাগুলির বিস্তৃত আক্বীদা জানার জন্য ইবনু হযমের আল- ফিছাল, শাহরাস্তানীর আল-মিলাল, আব্দুল ক্বাহের বাগদাদীর উছূলুদ্দীন এবং আল-ফারকু বায়নাল ফিরাক্ব, আব্দুল কাদের জীলানীর কিতাবুল গুনিয়াহ, শাত্বেবীর আল-ই‘তিছাম প্রভৃতি গ্রন্থ দ্রষ্টব্য। তবে আবু ইসহাক শাত্বেবী, আবুবকর তারতূশী, ছাহেবে মির‘আত ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী প্রমুখের চিন্তাধারা এই যে, ফির্কায়ে নাজিয়াহর বিপরীতে ভ্রান্ত দল সমূহের এই সংখ্যাকে ৭২-এর মধ্যে সীমায়িত করা যুক্তিযুক্ত নয়। কেননা ক্বিয়ামত পর্যন্ত ভ্রান্ত দল ও উপদলের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। শাত্বেবী বলেন, ভ্রান্ত দলসমূহকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এক- যাদের সম্পর্কে হাদীছে সাবধান করা হয়েছে। যেমন- খারেজী, মুর্জিয়া, ক্বাদারিয়া প্রভৃতি। দুই- যাদের সম্পর্কে হাদীছে নাম করে কিছু বলা হয়নি। অথচ এরাই হ’ল মানবরূপী শয়তান। যারা বিভিন্ন যুক্তি ও জৌলুসের মাধ্যমে সরল-সিধা মুমিনকে পথভ্রষ্ট করে। এদের কতগুলি নিদর্শন ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যে বৈশিষ্ট্য ও নিদর্শনগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। সংক্ষিপ্ত ‏( ﺇﺟﻤﺎﻟﻲ‏) ও বিস্তারিত ‏(ﺗﻔﺼﻴﻠﻲ‏) । প্রথমটির মৌলিক নিদর্শন হ’ল তিনটি। যথা- (ক) বিভেদ সৃষ্টি করা ‏( ﺍﻟﻔُﺮﻗﺔ‏) । যার মাধ্যমে তারা পরস্পরে বিদ্বেষ, শত্রুতা ও ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত করে, যা ধর্মীয় ও সামাজিক ঐক্য ধ্বংসের কারণ হয়। (খ) মুহকাম আয়াত সমূহ বাদ দিয়ে কুরআনের মুতাশাবিহ আয়াত সমূহের পিছে পড়ে থাকা। (গ) প্রবৃত্তির অনুসরণ করা এবং নিজস্ব রায়কে শারঈ দলীল সমূহের উপরে অগ্রাধিকার দেয়া ‏(ﺗﺤﻜﻴﻢ ﺍﻟﻌﻘﻞ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻨﺼﻮﺹ‏) । অতঃপর প্রত্যেক ভ্রান্ত ব্যক্তি বা দলের বিস্তারিত নিদর্শন সমূহ ‏(ﻋﻼﻣﺎﺓ ﺓﻓﺼﻴﻠﻴﺔ‏) কুরআন ও সুন্নাহর দলীল সমূহের প্রতি দৃকপাত করলে যেকোন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন আলেম তাদেরকে সহজে চিহ্নিত করতে পারবেন’।[7] আমরা মনে করি যে, ৭১, ৭২ ও ৭৩ বলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরবীয় বাকরীতি অনুযায়ী ‘আধিক্য এবং আধিক্যের পরিমাণ’ বুঝাতে চেয়েছেন। তিনি এ বিষয়টি পরিষ্কার করতে চেয়েছেন যে, ক্বিয়ামত যতই ঘনিয়ে আসবে, উম্মতের ভাঙন, পদস্খলন ও ফের্কাবন্দী ততই বৃদ্ধি পাবে। অতএব অগ্রগামী উম্মত হিসাবে ইহুদীরা ৭১ দলে, পরবর্তী উম্মত হিসাবে নাছারাগণ ৭২ দলে এবং তার পরবর্তী ও সর্বশেষ উম্মত হিসাবে মুসলিম উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। অর্থাৎ তাদের ভাঙন ও অধঃপতন বিগত সকল উম্মতের চাইতে বেশী হবে। এভাবে সারা পৃথিবীতে যখন একজন তাওহীদপন্থী মুমিনও অবশিষ্ট থাকবে না, তখনই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।[8] ‏( ﻛُﻠُّﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ‏) ‘তাদের সবাই জাহান্নামে যাবে’। অর্থাৎ ﻛﻠﻬﻢ ﻳﺴﺘﺤﻘﻮﻥ ﺍﻟﺪﺧﻮﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻣﻦ ﺃﺟﻞ ﺍﺧﺘﻼﻑ ﺍﻟﻌﻘﺎﺋﺪ ‘সবাই জাহান্নামের হকদার হবে ভ্রান্ত আক্বীদা সম্পন্ন হওয়ার কারণে’। অতঃপর যাদের আক্বীদা কুফরীর পর্যায়ভুক্ত ছিল, তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামী হবে। কারণ ‘যে ব্যক্তি শিরক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করেছেন’ (মায়েদাহ ৫/৭২) । পক্ষান্তরে যাদের আক্বীদা ঐ পর্যায়ভুক্ত ছিল না, তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা না করলে জাহান্নামে যাবে। আর ক্ষমা করলে মুক্তি পাবে। কেননা ‘আল্লাহ শিরক ব্যতীত অন্য সকল গোনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করতে পারেন’ (নিসা ৪/৪৮, ১১৬) । তবে শেষোক্ত পর্যায়ের জাহান্নামীরা তাদের খালেছ ঈমানের কারণে এবং রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আতের ফলে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে অবশেষে মুক্তি পাবে ও জান্নাতে যাবে।[9] ‏( ﺇِﻻَّ ﻣِﻠَّﺔً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً‏) ‘একটি দল ব্যতীত’। অর্থাৎ এরা শুরুতেই জান্নাতে যাবে। এখানে ﻣِﻞًﺓَّ-এর শেষ অক্ষরে দু’যবর হয়েছে দু’যের-এর স্থলে। যাকে ﻣﻨﺼﻮﺏ ﺑﻨﺰﻉ ﺧﺎﻓﺾ বলা হয়ে থাকে। কেননা এটি আসলে ছিল ﺇﻻ ﺃﻫﻞ ﻣﻠﺔ ﻭﺍﺣﺪﺓ ‘একটি তরীকার অনুসারী দল ব্যতীত’। অর্থাৎ এই দলের লোকেরা ছহীহ আক্বীদার অনুসারী হবে। কেননা জান্নাত লাভের জন্য বিশুদ্ধ আক্বীদাই হ’ল প্রধানতম শর্ত। শাত্বেবী বলেন, ﺇِﻻَّ ﻣِﻠَّﺔً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً বলার মাধ্যমে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে যে, ﺇﻥ ﺍﻟﺤﻖ ﻭﺍﺣﺪ ﻻ ﻳﺨﺘﻠﻒ ‘হক একটাই হয়। একাধিক হয় না’। হাদীছে জাহান্নামী দলসমূহের বিপরীতে একটি মাত্র জান্নাতী দলের উল্লেখ করার মধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হাযারো দাবী করলেও ভ্রান্ত দলগুলি কখনোই হকপন্থী নয়। হক মাত্র একটি দলের সাথেই রয়েছে। ﺇِﻻَّ ﻣِﻠَّﺔً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً বলার মাধ্যমে একথাও ফুটে উঠেছে যে, অন্যান্য দলের ভ্রান্ত আক্বীদা ও আমলের ফায়ছালাকারী হ’ল এই একটি দল। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓَﺮُﺩُّﻭﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮْﻝِ ‘যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিসংবাদ কর, তাহ’লে সে বিষয়টিকে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে’ (নিসা ৪/৫৯) । অতএব কুরআন ও সুন্নাহর (প্রকাশ্য অর্থের) অনুসারীদের জন্য কোনরূপ ফের্কা সৃষ্টির অবকাশ নেই’। ‏( ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﻭَﻣَﻦْ ﻫِﻲَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ؟‏) ‘তারা বললেন, সেই দল কোনটি হে আল্লাহর রাসূল?’ অর্থাৎ সেই মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোনটি? ‏( ﻗَﺎﻝَ ﻣَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻲْ‏) ‘তিনি বললেন, আমি ও আমার ছাহাবীগণ যে তরীকার উপরে আছি, তার উপরে যারা দৃঢ় থাকবে’। এর অর্থ, ﺃﻫﻞ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻤﻠﺔ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪﺓ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﺃﻧﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺃﺻﺤﺎﺑﻲ ﻣﻦ ﺍﻻﻋﺘﻘﺎﺩ ﻭﺍﻟﻘﻮﻝ ﻭﺍﻟﻌﻤﻞ – ‘উক্ত মুক্তিপ্রাপ্ত দলভুক্ত লোক তারাই হবে, যারা আমার ও আমার ছাহাবীগণের বিশ্বাস, কথা ও কর্মের উপরে দৃঢ় থাকবে’। এর দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুনণাত এবং ছাহাবায়ে কেরামের বুঝ অনুযায়ী কুরআন ও সুন্নাহর বুঝ হাছিল করা ও সেমতে জীবন পরিচালিত হওয়াটাই নাজী ফের্কার লোকদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। কেননা ছাহাবীগণ সরাসরি আল্লাহর রাসূলের নিকট থেকে দ্বীন শিখেছেন এবং দ্বীন সম্পর্কে তারাই স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় চাক্ষুস জ্ঞান লাভ করেছেন। হাদীছে দলের নাম করা হয়নি। বরং তাদের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। আর এটাই আরবদের বাকরীতি ছিল। কেননা আমলটাই বড় কথা, আমলকারী নয়। এক্ষণে যে সকল মুমিন নর-নারী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত তথা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সার্বিক জীবন পরিচালনায় ব্রতী হবেন, তারাই হবেন মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা আল্লাহর রহমতে শুরুতেই জান্নাতে যাবেন। কেননা কুরআন ও সুন্নাহ হ’ল সরল পথ। এতদ্ব্যতীত ইজমা-ক্বিয়াস ইত্যাদি সেখান থেকে নির্গত বিষয়’। তা কখনোই মূল নয় বা ভ্রান্তির আশংকামুক্ত নয়। আর ‘ইজমা’ বলতে কেবল ছাহাবায়ে কেরামের ইজমা-কে বুঝায়। কেননা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, ﻣَﻦِ ﺍﺩَّﻋَﻲ ﺍﻹِﺟْﻤَﺎﻉَ ‏(ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ‏) ﻓَﻬُﻮَ ﻛَﺎﺫِﺏٌ ‘(ছাহাবীগণের পরে) যে ব্যক্তি (উম্মতের) ইজমা-এর দাবী করে, সে মিথ্যাবাদী’।[10] নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (রহঃ) মাযহাবী আলেমদের যত্রতত্র ইজমা-র দাবী সম্পর্কে তীব্র মন্তব্য করে বলেন, ﻫﺬﻩ ﻣﻔﺴﺪﺓ ﻋﻈﻴﻤﺔ ‘এটি ভয়ংকর ফাসাদ সৃষ্টিকারী বিষয়’।[11] নাজী কারা? এর জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে তিনটি বক্তব্য এসেছে। এক- ﻣَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻲْ‘যার উপরে আমি ও আমার ছাহাবীগণ আছি’। হাকেম বর্ণিত ‘হাসান’ সনদে এসেছে, ﻣَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻲ ‘আজকের দিনে আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি’।[12] অর্থাৎ এখানে কেবল তরীকা ও বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। দুই- ﻭَﻫِﻲَ ﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻋَﺔُ ‘সেটি হ’ল জামা‘আত’।[13] যার অর্থ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ‘ছাহাবীগণের জামা‘আত’। প্রশস্ত অর্থে, ﺍﻟﻤﻮﺍﻓﻘﻮﻥ ﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺍﻵﺧﺬﻭﻥ ﺑﻌﻘﺎﺋﺪﻫﻢ، ﺍﻟﻤﺘﻤﺴﻜﻮﻥ ﺑﻄﺮﻳﻘﺘﻬﻢ ‘ছাহাবীগণের জামা‘আতের অনুগামী, তাঁদের আক্বীদাসমূহের ধারণকারী এবং তাঁদের তরীকার সনিষ্ঠ অনুসারী’। তিন- ﺇِﻻَّ ﺍﻟﺴَّﻮَﺍﺩُ ﺍﻷَﻋْﻈَﻢُ ‘বড় দল ব্যতীত’।[14] অর্থাৎ বড় দল ব্যতীত ছোট দল সব জাহান্নামী হবে। অথচ সংখ্যায় বড় দল হওয়ার কোন গুরুত্ব ইসলামে নেই। কেননা ‘অধিকাংশ লোক ধারণার অনুসরণ করে এবং তারা অলীক কল্পনার পিছনে ছোটে’ (আন‘আম ৬/১১৬) । সে কারণ ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন ﻣَﻦِ ﺍﻟﺴَّﻮَﺍﺩُ ﺍﻟْﺄَﻋْﻈَﻢُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ؟ ‘বড় দল কোনটি হে আল্লাহর রাসূল’? জবাবে তিনি বললেন, ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠﻰَ ﻣَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻲْ ‘যে ব্যক্তি আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি, তার অনুসারী থাকবে’।[15] ফলে দেখা যাচ্ছে যে, বর্ণিত তিনটি বক্তব্যের সারমর্ম একই। আর তা হচ্ছে যে দল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আক্বীদা ও আমলের এবং তাঁদের গৃহীত তরীকা ও রীতি-পদ্ধতির অনুসারী হবে, সে দল হ’ল ফের্কায়ে নাজিয়াহ বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল। খ্যাতনামা ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর কাছে রাসূল (ছাঃ) বর্ণিত ‘আল-জামা‘আত’ অর্থ কি- একথা জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, ﺍَﻟْﺠَﻢَﺍﻋَﺔُ ﻣَﺎ ﻭَﺍﻓَﻖَ ﺍﻟْﺤَﻖَّ ﻭَﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﻭَﺣْﺪَﻙَ ‘হক-এর অনুগামী দলই জামা‘আত, যদিও তুমি একাকী হও’।[16] নিঃসন্দেহে তারা হ’লেন ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’ অর্থাৎ যথার্থভাবেই নবীর সুন্নাত ও ছাহাবীগণের জামা‘আতের অনুসারী ব্যক্তি বা দল। এ বিষয়ে বিদ্বানগণের কিছু বক্তব্য নিম্নে উদ্ধৃত হ’ল : (১) ইবনু হাযম আন্দালুসী (৩৮৪-৪৫৬ হিঃ) বলেন, ﻭَﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔِ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻧَﺬْﻛُﺮُﻫُﻢْ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﻭَﻣَﻦْ ﻋَﺪَﺍﻫُﻢْ ﻓَﺄَﻫْﻞُ ﺍﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻢُ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔُ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﻭَ ﻛُﻞُّ ﻣَﻦْ ﺳَﻠَﻚَ ﻧَﻬْﺠَﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﺧِﻴَﺎﺭِ ﺍﻟﺘَّﺎﺑِﻌِﻴْﻦَ ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺛُﻢَّ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟْﺤِﺪِﻳْﺚِ ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﺒِﻌَﻬُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻔُﻘَﻬَﺎﺀِ ﺟَﻴْﻼً ﻓَﺠَﻴْﻼً ﺇِﻟﻰَ ﻳَﻮْﻣِﻨَﺎ ﻫﺬَﺍ ﻭَﻣَﻦِ ﺍﻗْﺘَﺪَﻯ ﺑِﻬِﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻮَﺍﻡِ ﻓِﻰْ ﺷَﺮْﻕِ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﻏَﺮْﺑِﻬَﺎ ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ – ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত- যাদেরকে আমরা হকপন্থী ও তাদের বিরোধী পক্ষকে বাতিলপন্থী বলেছি, তাঁরা হ’লেন (ক) ছাহাবায়ে কেরাম (খ) তাঁদের অনুসারী শ্রেষ্ঠ তাবেঈগণ (গ) আহলেহাদীছগণ (ঘ) ফক্বীহদের মধ্যে যারা তাঁদের অনুসারী হয়েছেন যুগে যুগে আজকের দিন পর্যন্ত (ঙ) এবং প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের ঐ সকল ‘আম জনসাধারণ, যারা তাঁদের অনুসারী হয়েছেন’।[17] (২) ‘বড় পীর’ বলে খ্যাত শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী (৪৯১-৫৬১ হিঃ) বলেন, ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟْﻔِﺮْﻗَﺔُ ﺍﻟﻨَّﺎﺟِﻴَﺔُ ﻓَﻬِﻲَ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔِ ﻭَﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻋَﺔِ ﻗَﺎﻝَ: ﻭَﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔِ ﻻَ ﺇِﺳْﻢٌ ﻟَﻬُﻢْ ﺇِﻻَّ ﺇِﺳْﻢٌ ﻭَّﺍﺣِﺪٌ ﻭَّﻫُﻮَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳْﺚِ– ‘অতঃপর ফির্কা নাজিয়া হ’ল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্য কোন নাম নেই একটি নাম ব্যতীত। সেটি হ’ল ‘আহলুল হাদীছ’।[18] (৩) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ)-কে ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত হক-এর উপরে একটি দল টিকে থাকবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ﺇِﻥْ ﻟَّﻢْ ﻳَﻜُﻮْﻧُﻮْﺍ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳْﺚِ ﻓَﻼَ ﺃَﺩْﺭِﻯْ ﻣَﻦْ ﻫُﻢْ؟ ‘তারা যদি ‘আহলেহাদীছ’ না হয়। তাহ’লে আমি জানি না তারা কারা’?[19] ‘আহলুল হাদীছ’ অর্থ হাদীছের অনুসারী। পারিভাষিক অর্থে, ছহীহ হাদীছের অনুসারী’। তিনি মুহাদ্দিছ বিদ্বান হ’তে পারেন কিংবা ছহীহ হাদীছের অনুসারী সাধারণ ব্যক্তিও হ’তে পারেন। উক্ত দলের সাথে বিদ‘আতী দল সমূহের আক্বীদাগত পার্থক্য রয়েছে। যেমন আহলেসুন্নাত বা আহলেহাদীছের নিকট পারিভাষিক অর্থে ‘ঈমান’ হ’ল, ﺍَﻟْﺈِﻳْﻤَﺎﻥُ ﻫُﻮَ ﺍﻟﺘَّﺼْﺪِﻳْﻖُ ﺑِﺎﻟْﺠَﻨَﺎﻥِ ﻭَﺍﻟْﺈِﻗْﺮَﺍﺭُ ﺑِﺎﻟﻠِّﺴَﺎﻥِ ﻭَﺍﻟْﻌَﻤَﻞُ ﺑِﺎﻟْﺄَﺭْﻛَﺎﻥِ، ﻳَﺰِﻳْﺪُ ﺑِﺎﻟﻄَّﺎﻋَﺔِ ﻭَﻳَﻨْﻘُﺺُ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺼِﻴَّﺔِ، ﺍَﻟْﺈِﻳْﻤَﺎﻥُ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺄَﺻْﻞُ ﻭَﺍﻟْﻌَﻤَﻞُ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﻔَﺮْﻉُ – ‘হৃদয়ে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের সমন্বিত নাম। যা আনুগত্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ও গোনাহে হরাসপ্রাপ্ত হয়। বিশ্বাস ও স্বীকৃতি হ’ল মূল এবং কর্ম হ’ল শাখা।’ যা না থাকলে পূর্ণ মুমিন বা ইনসানে কামেল হওয়া যায় না। এর বিপরীতে প্রধান দু’টি বিদ‘আতী দল হ’ল খারেজী ও মুর্জিয়া। খারেজীগণ বিশ্বাস, স্বীকৃতি ও কর্ম তিনটিকেই ঈমানের মূল হিসাবে গণ্য করেন। ফলে তাদের মতে কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি কাফের ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং তাদের রক্ত হালাল’। যুগে যুগে সকল চরমপন্থী ভ্রান্ত মুসলমান এই মতের অনুসারী। এরাই হযরত আলী (রাঃ)- কে কাফের বলেছিল ও তাঁর রক্ত হালাল মনে করে তাঁকে হত্যা করেছিল। অপর দু’জন ছাহাবী হযরত আমর ইবনুল ‘আছ ও মু‘আবিয়া (রাঃ) এদের হত্যা তালিকায় ছিলেন। কিন্তু তাঁরা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। পক্ষান্তরে মুর্জিয়াগণ কেবল বিশ্বাস অথবা স্বীকৃতিকে ঈমানের মূল হিসাবে গণ্য করেন। যার কোন হরাস-বৃদ্ধি নেই। তাদের মতে আমল ঈমানের অংশ নয়। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এই মত পোষণ করেন। সে কারণ তাঁর অনুসারী ‘হানাফী’ দলকে শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী, শাহরাস্তানী ও অন্যান্য বিদ্বানগণ মুর্জিয়া ফের্কার ১২টি উপদলের অন্যতম হিসাবে গণ্য করেছেন।[20] তাদের নিকট কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন। আবুবকর (রাঃ)-এর ঈমান ও একজন ফাসেক-এর ঈমান সমান’। আমলের ব্যাপারে সকল যুগের শৈথিল্যবাদী ভ্রান্ত মুসলমানরা এই আক্বীদার অনুসারী। আর সকল যুগে এদের সংখ্যাই বেশী। খারেজী ও মুর্জিয়া দুই চরমপন্থী ও শৈথিল্যবাদী মতবাদের মধ্যবর্তী হ’ল আহলেহাদীছের ঈমান। যাদের নিকট বিশ্বাস ও স্বীকৃতি হল মূল এবং কর্ম হ’ল শাখা। অতএব কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি তাদের নিকট কাফের নয় কিংবা পূর্ণ মুমিন নয়, বরং ফাসেক অর্থাৎ গোনাহগার মুমিন। কবীরা গোনাহ থেকে খালেছ তওবা করলে সে পূর্ণ মুমিন হ’তে পারবে। এমনকি তওবা না করে মারা গেলেও সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। বস্ত্ততঃ এটাই হ’ল কুরআন ও সুন্নাহর অনুকূলে। মোটকথা ফের্কায়ে নাজিয়াহ তারাই যারা বিশ্বাস ও কর্মে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের অনুসারী হবে এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রকাশ্য অর্থের যথার্থ আমলকারী হবে। সাথে সাথে জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে সেই অনুযায়ী ঢেলে সাজাবার জন্য চূড়ান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আর এটার জন্য কোন রং, বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল বা গোত্র শর্ত নয়। বরং নিরপেক্ষভাবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সনিষ্ঠ অনুসারী হওয়াটাই শর্ত। তারা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে যেকোন সুন্নী দলের মধ্যে থাকতে পারেন। যেমন, (৪) শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী (১১১৪-১১৭৬ হিঃ/১৭০৩-১৭৬২ খৃঃ) বলেন, ﺍَﻟْﻔِﺮْﻗَﺔُ ﺍﻟﻨَّﺎﺟِﻴَﺔُ ﻫُﻢُ ﺍﻵﺧِﺬُﻭْﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌَﻘِﻴْﺪَﺓِ ﻭَﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ ﺟَﻤِﻴْﻌًﺎ ﺑِﻤَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻭَﺍﻟﺴُّﻨَّﺔِ ﻭَﺟَﺮَﻱ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺟُﻤْﻬُﻮْﺭُ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ ﻭَﺍﻟﺘَّﺎﺑِﻌِﻴْﻦَ – ‘ফের্কায়ে নাজিয়াহ তারাই যারা আক্বীদা ও আমলের সকল বিষয়ে কিতাব ও সুন্নাতের প্রকাশ্য অর্থের এবং যার উপরে জমহূর ছাহাবা ও তাবেঈনের আমল জারি আছে, তার অনুসারী হবে’। ফায়েদা : ছাহেবে মিরক্বাত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (মৃঃ ১০১৪ হিঃ) ﻡَﺍ ﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻲْ -এর ব্যাখ্যায় বলেন, ﻓَﻼَ ﺷَﻚَّ ﻭَﻻَ ﺭَﻳْﺐَ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻫُﻢْ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔِ ﻭَﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻋَﺔِ، ﻭَﻗِﻴﻞَ: ﻓَﺈِﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﻳُﻌْﺮَﻑُ ﺑِﺎﻟْﺈِﺟْﻤَﺎﻉِ، ﻓَﻤَﺎ ﺃَﺟْﻤَﻊَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋُﻠَﻤَﺎﺀُ ﺍﻟْﺈِﺳْﻼَﻡِ ﻓَﻬُﻮَ ﺣَﻖٌّ ﻭَﻣَﺎ ﻋَﺪَﺍﻩُ ﻓَﻬُﻮَ ﺑَﺎﻃِﻞٌ ‘নিঃসন্দেহে তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত। বলা হয়েছে যে, সেটা চেনা যাবে ইজমা-এর মাধ্যমে। অতএব যে বিষয়ের উপরে ওলামায়ে ইসলামের ইজমা বা ঐক্যমত হয়েছে, সেটাই হক। আর যা তার বাইরে তা বাতিল’। এই বক্তব্য অবশ্যই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কেননা বিদ‘আতী আলেমরাও নিজেদেরকে ওলামায়ে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবী করেন। বরং সকল যুগে তাদের সংখ্যাই বেশী। অতঃপর ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, ﻭَﺍﻟْﻔِﺮْﻗَﺔُ ﺍﻟﻨَّﺎﺟِﻴَﺔُ ﻫُﻢْ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔِ ﺍﻟْﺒَﻴْﻀَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤُﺤَﻤَّﺪِﻳَّﺔِ ﻭَﺍﻟﻄَّﺮِﻳﻘَﺔِ ﺍﻟﻨَّﻘِﻴَّﺔِ ﺍﻟْﺄَﺣْﻤَﺪِﻳَّﺔِ، ﻭَﻟَﻬَﺎ ﻇَﺎﻫِﺮٌ ﺳُﻤِّﻲَ ﺑِﺎﻟﺸَّﺮِﻳﻌَﺔِ ﺷِﺮْﻋَﺔً ﻟِﻠْﻌَﺎﻣَّﺔِ، ﻭَﺑَﺎﻃِﻦٌ ﺳُﻤِّﻲَ ﺑِﺎﻟﻄَّﺮِﻳﻘَﺔِ ﻣِﻨْﻬَﺎﺟًﺎ ﻟِﻠْﺨَﺎﺻَّﺔِ ﻭَﺧُﻼَﺻَﺔٌ ﺧُﺼَّﺖْ ﺑِﺎﺳْﻢِ ﺍﻟْﺤَﻘِﻴﻘَﺔِ ﻣِﻌْﺮَﺍﺟًﺎ ﻟِﺄَﺧَﺺِّ ﺍﻟْﺨَﺎﺻَّﺔِ، ﻓَﺎﻟْﺄَﻭَّﻝُ ﻧَﺼِﻴﺐُ ﺍﻟْﺄَﺑْﺪَﺍﻥِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨِﺪْﻣَﺔِ، ﻭَﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻲ ﻧَﺼِﻴﺐُ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻌْﺮِﻓَﺔِ، ﻭَﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺚُ ﻧَﺼِﻴﺐُ ﺍﻟْﺄَﺭْﻭَﺍﺡِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺸَﺎﻫَﺪَﺓِ ﻭَﺍﻟﺮُّﺅْﻳَﺔِ . ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﻘُﺸَﻴْﺮِﻱُّ: ﻭَﺍﻟﺸَّﺮِﻳﻌَﺔُ ﺃَﻣْﺮٌ ﺑِﺎﻟْﺘِﺰَﺍﻡِ ﺍﻟْﻌُﺒُﻮﺩِﻳَّﺔِ ﻭَﺍﻟْﺤَﻘِﻴﻘَﺔُ ﻣُﺸَﺎﻫَﺪَﺓُ ﺍﻟﺮُّﺑُﻮﺑِﻴَّﺔِ، ﻓَﻜُﻞُّ ﺷَﺮِﻳﻌَﺔٍ ﻏَﻴْﺮُ ﻣُﺆَﻳَّﺪَﺓٍ ﺑِﺎﻟْﺤَﻘِﻴﻘَﺔِ ﻓَﻐَﻴْﺮُ ﻣَﻘْﺒُﻮﻝٍ، ﻭَﻛُﻞُّ ﺣَﻘِﻴﻘَﺔٍ ﻏَﻴْﺮُ ﻣُﻘَﻴَّﺪَﺓٍ ﺑِﺎﻟﺸَّﺮِﻳﻌَﺔِ ﻓَﻐَﻴْﺮُ ﻣَﺤْﺼُﻮﻝٍ. ﻓَﺎﻟﺸَّﺮِﻳﻌَﺔُ ﻗِﻴَﺎﻡٌ ﺑِﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ ﻭَﺍﻟْﺤَﻘِﻴﻘَﺔُ ﺷُﻬُﻮﺩٌ ﻟِﻤَﺎ ﻗُﻀِﻲَ ﻭَﻗُﺪِّﺭَ ﻭَﺃُﺧْﻔِﻲَ ﻭَﺃُﻇْﻬِﺮَ – ‏(ﻣﺮﻗﺎﺓ ১/২৪৮‏) – ‘ফের্কায়ে নাজিয়াহ হ’ল আহলে সুন্নাত দল। যার একটি বাহ্যিক দিক আছে। যার নাম শরী‘আত। যা সাধারণ মানুষের জন্য প্রদত্ত বিধান। তার একটি বাতেনী দিক আছে, যার নাম তরীকত, যা খাছ লোকদের জন্য প্রদত্ত পন্থা। আর একটি সারবস্ত্ত রয়েছে যার নাম হাকীকত। যা হ’ল খাছ লোকদের মধ্যকার খাছ ব্যক্তিগণের জন্য মি‘রাজ সদৃশ। এক্ষণে প্রথমটি হ’ল দেহের অংশ, যা তার ক্রিয়াকর্মের দ্বারা অর্জিত হয়। দ্বিতীয়টি হ’ল কলবের অংশ, যা ইলম ও মা‘রেফত তথা জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে অর্জিত হয়। তৃতীয়টি হ’ল রূহের অংশ, যা মুশাহাদাহ বা চাক্ষুষ দর্শনের মাধ্যমে অর্জিত হয়। কুশায়রী বলেন, শরী‘আত হ’ল উবূদিয়াত অর্থাৎ আল্লাহর দাসত্বকে কবুল করে নেওয়ার বিষয়। হাকীকত হ’ল রবূবিয়াতকে দর্শনের বিষয়। এক্ষণে প্রত্যেক শরী‘আত যা হাকীকাত দ্বারা শক্তিকৃত নয়, তা গ্রহণযোগ্য নয়। অনুরূপভাবে প্রত্যেক হাকীকত যা শরী‘আতের বিধানযুক্ত নয়, তা ফলবলহীন। অতএব শরী‘আত হ’ল আদিষ্ট বিষয় পালন করার নাম এবং হাকীকত হ’ল ক্বাযা ও ক্বদর তথা তাকদীরে নির্ধারিত গোপন ও প্রকাশ্য বিষয় সমূহ চাক্ষুষ দর্শনের নাম’। উপরোক্ত বক্তব্যগুলি স্রেফ ধারণা নির্ভর ব্যাখ্যা মাত্র, যা কোন দলীলের উপর ভিত্তিশীল নয়। কেননা হাদীছে জিব্রীলে ইহসান-এর ব্যাখ্যায় অত্যন্ত সহজ ও সুন্দরভাবে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ﺃَﻥْ ﺗَﻌْﺒُﺪَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻛَﺄَﻧَّﻚَ ﺗَﺮَﺍﻩُ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ ﺗَﺮَﺍﻩُ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﺮَﺍﻙَ ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহলে এমনভাবে ইবাদত কর যেন তিনি তোমাকে দেখছেন’।[21] এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, তোমরা গভীর অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে ইবাদতে রত হও যেন আল্লাহ তোমার সবকিছু দেখছেন। অতএব ভীত-সন্ত্রস্ত ও শ্রদ্ধাভরা আকুতি নিয়ে হে মুছল্লী! তুমি ছালাতে মনোনিবেশ কর। এই মনোনিবেশ সাধারণ-অসাধারণ মুছল্লী নির্বিশেষে সবার মধ্যে যাতে সমানভাবে সৃষ্টি হয়, সেদিকে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। যদিও সবার জন্য সর্বাবস্থায় তা সম্ভব হয় না। আর এর ফলেই আল্লাহর নিকটে মুছল্লীদের স্তরভেদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু ইহসান-এর এই স্তর হাছিল করার জন্য ছালাত ব্যতীত পৃথক কোন মা‘রেফতী তরীকা বা পদ্ধতি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) চালু করে যাননি। যা ছাহাবী ও তাবেঈগণের স্বর্ণ যুগের পর ভ্রষ্টতার যুগে কথিত ছূফী ও পীর- আউলিয়াদের মাধ্যমে চালু হয়েছে এবং যা বর্তমানে কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দীয়া ও মুজদ্দেদিয়া নামে প্রধান চারটি তরীকায় বিভক্ত। অতঃপর তা আরও বিভক্ত হয়ে উপমহাদেশে অন্যূন দু’শো তরীকার সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে মাযহাবের নামে, তরীকার নামে, দেহতত্ত্বের নামে উপমহাদেশের বিশেষ করে হানাফী সমাজ অসংখ্য ভাগে বিভক্ত ও ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। প্রত্যেক মুরীদ তার তরীকার পীর নিয়েই সন্তুষ্ট। আর এইসব তরীকার পীরের সংখ্যা শুধু বাংলাদেশেই ১৯৮১ সালের সরকারী হিসাব মতে ২,৯৮,০০০। যা বর্তমানে আরও বেড়েছে। এইসব পীরগণ আল্লাহ ও বান্দার মাঝে অসীলা হিসাবে পূজিত হচ্ছেন। এমনকি তদের নামে কুমীর, কচ্ছপ, কবুতর, গজাল মাছ ইত্যাদিও পূজিত হচ্ছে। মৃত্যুর পরে তাদের কবরের উপরে নির্মিত কারুকার্যখচিত সমাধিসৌধে কুরআনের আয়াত লিখে ভক্তদের ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে এভাবে যে, আউলিয়াগণ মরেন না। আয়াতটি হ’ল, ﺃَﻻَ ﺇِﻥَّ ﺃَﻭْﻟِﻴْﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪِ ﻻَ ﺧَﻮْﻑٌ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻻَ ﻫُﻢْ ﻳَﺤْﺰَﻧُﻮْﻥَ – ‘মনে রেখ যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’ (ইউনুস ১০/৬২) । বিগত যুগের কোন কোন ছূফী তো নিজেকেই ‘আল্লাহ’ বলেছেন। যেমন মেহমানের ডাকে ঘরে অবস্থানকারী আবু ইয়াযীদ বিসত্বামী ওরফে বায়েযীদ বোস্তামী (১৮৮-২৬১/৮০৪-৮৭৫ খৃঃ) বলেন, ﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ ﺃَﺣَﺪٌ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ‘ঘরের মধ্যে কেউ নেই আল্লাহ ব্যতীত’।[22] একই আক্বীদার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে চালু হয়েছে, ‘যত কল্লা তত আল্লাহ’। অর্থাৎ সৃষ্টি সবাই স্রষ্টার অংশ। এরা আহমাদ ও আহাদ-এর মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পান না একটা মীম-এর পর্দা ছাড়া। এসব পীরদের কবর মহাসমারোহে পূজিত হচ্ছে তাদের ভক্তদের মাধ্যমে। মৃত পীরকে খুশী করার জন্য এরা তাদের জানমাল উৎসর্গ করছে। তার অসীলাতেই তারা পরকালে মুক্তি কামনা করছে (ইউনুস ১০/১৮; যুমার ৩৯/৩) । ওদিকে আবার ছালাত-ছিয়াম-হজ্জ-ওমরাহ সবই পালন করছে। এটাই যদি হয় বাস্তবতা, তাহ’লে জাহেলী আরবের মূর্তিপূজারীদের সাথে উপমহাদেশের এইসব কবরপূজারীদের আক্বীদার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? যদি সুন্নী বিদ্বানগণ শরী‘আত, তরীকত, হাকীকত, মা‘রেফাত এভাবে ইসলামকে বিভক্ত করে জনগণের সামনে পেশ না করতেন, তাহ’লে ইবলীস এর সুযোগ নিয়ে পৃথক পৃথক তরীকা ও খানক্বাহ খুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারত না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা করেননি, তা থেকে সুধারণা বশেও কোন কাজ করলে শয়তান ঐ সুযোগে মুমিনের যে কতবড় সর্বনাশ করে, কবরপূজারী এইসব পথভ্রষ্ট কথিত সুন্নী মুসলমানেরা তার বড় প্রমাণ। অতএব ছাহেবে মিরক্বাত বর্ণিত ‘ওলামায়ে ইসলাম’-এর সঠিক অর্থ হবে- ﻋﻠﻤﺎﺀ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ‘ছহীহ সুন্নাহর অনুসারী আলেমগণ’। নিঃসন্দেহে তারা ‘আহলেহাদীছ ওলামায়ে কেরাম’ ব্যতীত আর কেউ নন। একইভাবে বঙ্গানুবাদ মেশকাত শরীফের সম্মানিত অনুবাদক ছাহাবীগণ এবং হাদীছ ও ফিক্বহের ইমামগণ আহলে সুন্নাতের আক্বীদার অনুসারী ছিলেন বলার পরে একই বাক্যে বলেছেন, ‘দুনিয়ার সমস্ত ছূফী ওলীগণও এই আকীদাই পোষণ করিয়া গিয়াছেন’।[23] অথচ ছূফী-ওলী এই পরিভাষাগুলি সৃষ্টি হয়েছে স্বর্ণযুগ গত হয়ে যাবার পরে ভ্রষ্টতার যুগে। যার মূল নিহিত রয়েছে ঈরানের অনৈসলামী যুগের অদ্বৈতবাদী কুফরী দর্শনের মধ্যে। যাদের দৃষ্টিতে স্রষ্টা ও সৃষ্টি এক ও অদ্বৈত সত্তা এবং সৃষ্টি স্রষ্টার অংশ মাত্র। ইসলাম এই দর্শনের ঘোর প্রতিবাদ করে বলেছে যে, ‘আল্লাহ এক। তিনি মুখাপেক্ষীহীন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তিনি কারু জন্মিত নন। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই’ (ইখলাছ ১১২/১-৪) । মাননীয় অনুবাদকের কথিত ছূফী- ওলীদের মর্যাদা নিঃসন্দেহে ছাহাবীগণের সম মানের কিংবা তাঁদের উপরে নয়। অথচ আহলেসুন্নাত ওয়াল জামা‘আত কেবল ছাহাবীগণের আক্বীদা ও আমলের অনুসারী, অন্যদের নয়। অতঃপর মাননীয় অনুবাদক লিখেছেন, হাদীছে ফেরকা বলিতে আকীদা ও বিশ্বাসগত দলকেই বুঝাইয়াছে। কারণ আকীদা বা বিশ্বাসই হইল ইছলামের মূল। সুতরাং হানাফী, শাফেঈ প্রভৃতি ইহার অন্তর্গত নহে। ইহাদের সকলের আকীদাই এক। ইহারা সকলেই আহলুছ ছুন্নাতে ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত। ইহাদের এখতেলাফ শুধু ওজু, নামাজ প্রভৃতি খুঁটিনাটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ’।[24] কথাটি যত হালকাভাবে বলা হয়েছে, বিষয়টি তত হালকা নয়। কেননা খুঁটিনাটি ইখতেলাফ অতক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য, যতক্ষণ সেখানে ছহীহ হাদীছের সমাধান না পাওয়া যায়। পেয়ে গেলে সেটাই মেনে নিতে হবে। আর তখন কোন ইখতেলাফ থাকবে না। কিন্তু সেটা পাওয়ার পরেও যদি যিদ করা হয়, তখন সেটা তাক্বলীদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রদত্ত বিধান বাদ দিয়ে অন্যের বিধান মান্য করা হবে। যা ‘শিরক ফির-রিসালাত’-এর পর্যায়ভুক্ত। যা নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ কাজের পরিণামেই মুসলিম উম্মাহ তাদের ‘খেলাফত’ হারিয়েছে। আজও সমাজে সর্বত্র হানাহানি কেবল এই তাক্বলীদী যিদ ও হঠকারিতার কারণে। অতএব মতবাদগত দিক দিয়ে উপরোক্ত বক্তব্য অনেকটা সঠিক হ’লেও বাস্তবতা বহুলাংশে ভিন্ন। কেননা (ক) উপমহাদেশের কবরপূজারী মুসলমানেরা অধিকাংশ হানাফী মাযহাবভুক্ত। অথচ কবরপূজা পরিষ্কার শিরক। এতদ্ব্যতীত আল্লাহ ও রাসূল সম্পর্কেও তাদের অনেকের আক্বীদা ত্রুটিপূর্ণ। যেমন (খ) অধিকাংশ হানাফী আলেম বলেন, ‘আল্লাহ নিরাকার। তিনি সর্বত্র বিরাজমান’। অথচ এগুলি আহলে সুন্নাতের আক্বীদা বহির্ভূত। কেননা সঠিক আক্বীদা হ’ল এই যে, আল্লাহর নিজস্ব আকার আছে, যা তাঁর জন্য শোভনীয় ও তাঁর উপযুক্ত এবং তা কারু সাথে তুলনীয় নয় (শূরা ৪২/১১) । তাঁর সত্তা সপ্তাকাশের উপরে আরশে সমুন্নীত (ত্বোয়াহা ২০/৫-৬) । তাঁর ইল্ম ও কুদরত তথা জ্ঞান ও শক্তি সর্বত্র বিরাজমান (বাক্বারাহ ২/২৫৫) । (গ) অনেক হানাফী ওলামা-মাশায়েখ বলেন, আল্লাহর নূরে মুহাম্মাদ পয়দা, মুহাম্মাদের নূরে সারা জাহান পয়দা’। অথচ মুহাম্মাদ (ছাঃ) নূরের তৈরী ছিলেন না। তিনি ছিলেন মাটির মানুষ (কাহফ ১৮/১১০) । (ঘ) অধিকাংশ হানাফী আলেমের নিকটে চার মাযহাব মান্য করা ফরয ও মাযহাবী তাক্বলীদ করা ফরয। আর চার ইমামের পরে ইজতিহাদের দুয়ার বন্ধ। (ঙ) অনেকের নিকটে পীর ধরা ফরয। যার কোন পীর নেই, শয়তান তার পীর’। অথচ এগুলি আহলে সুন্নাতের আক্বীদাভুক্ত নয়। অতএব ‘শুধু ওজু, নামাজ প্রভৃতি খুঁটিনাটি বিষয়ের মধ্যে ইখতেলাফ সীমাবদ্ধ’ বলে আত্মতুষ্টি লাভের কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া ওযূ ও ছালাত কখনোই খুঁটিনাটি বিষয় নয়। বরং ছালাত হ’ল সর্বপ্রধান ইবাদত এবং ক্বিয়ামতের দিন প্রথম হিসাব নেওয়া হবে ছালাতের। ছালাতের হিসাব সুষ্ঠু হ’লে বাকী সবকিছুর হিসাব সুষ্ঠু হবে। নইলে সব বরবাদ হবে।[25] অতএব আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিবাদীয় সকল বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে যেতে হবে। আর সুন্নাহ হ’তে হবে ছহীহ সুন্নাহ। কোন যঈফ বা জাল হাদীছ নয়। সুতরাং তারাই হবে সত্যিকারের আহলে সুন্নাত, যারা নিজেদের মনগড়া শিরকী ও বিদ‘আতী রসম-রেওয়াজ থেকে খালেছভাবে তওবা করে সর্বাবস্থায় ছহীহ হাদীছ মুখী হবে। নইলে মুখে ‘সুন্নী’ বলে কাজের বেলায় শিরক ও বিদ‘আতের বাজার গরম করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের নিদর্শন নয়। অতএব ﺍﻓﺔﺭﺍﻕ ﺍﻷﻣﺔ বা উম্মতের বিভক্তি রোধের একটাই পথ খোলা রয়েছে। আর তা হ’ল তাক্বলীদী গোঁড়ামী পরিহার করে নিরপেক্ষ ও খোলা মন নিয়ে সর্বাবস্থায় পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে যাওয়া এবং খোলাফায়ে রাশেদীন, ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী শরী‘আতের বুঝ হাছিল করা। কারু কোন বিষয় জানা না থাকলে বিজ্ঞ ও মুত্তাক্বী আলেমের নিকট থেকে তিনি জেনে নিবেন দলীলের ভিত্তিতে, রায়-এর ভিত্তিতে নয়। মনে রাখা আবশ্যক যে, দ্বীন সম্পূর্ণ হয়েছে রাসূল (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায়। অতএব সে যুগে যা দ্বীন ছিল না, এ যুগে তা দ্বীন নয়। যতই তার গায়ে দ্বীনের লেবাস পরানো হৌক না কেন। ‏(ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻷﺣﻤﺪ ﻭﺃﺑﻲ ﺩﺍﺅﺩ ﻋﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ …. ﻭَﻫِﻲَ ﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻋَﺔُ‏) ‘আহমাদ ও আবুদাঊদে হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘সেটি হ’ল জামা‘আত’ অর্থাৎ মুক্তিপ্রাপ্ত দল হ’ল ছাহাবীগণের জামা‘আত এবং তাঁদের আক্বীদা, আমল ও রীতি-পদ্ধতির সনিষ্ঠ অনুসারী ব্যক্তি বা দল’। ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, ﺃﻱ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻭﺍﻟﻔﻘﻪ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﺟﺘﻤﻌﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﺗﺒﺎﻉ ﺁﺛﺎﺭﻩ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﻘﻴﺮ ﻭﺍﻟﻘﻄﻤﻴﺮ ﻭﻟﻢ ﻳﺒﺘﺪﻋﻮﺍ ﺑﺎﻟﺘﺤﺮﻳﻒ ﻭﺍﻟﺘﻐﻴﻴﺮ ‘উক্ত জামা‘আত হ’ল, আলিম ও ফিক্বহবিদগণ, যারা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়েও রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ সমূহের অনুসরণের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এবং কোনরূপ (শাব্দিক বা মর্মগত) পরিবর্তনের বিদ‘আত সৃষ্টি করেননি’। এরপরে তিনি সুফিয়ান ছাওরীর বক্তব্য উদ্ধৃত করেন যে, ﻟﻮ ﺃﻥ ﻓﻘﻴﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺭﺃﺱ ﺟﺒﻞ ﻟﻜﺎﻥ ﻫﻮ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ‘যদি একজন ফক্বীহ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করেন, তাহ’লে তিনিই একটি জামা‘আত’। এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে পাঠকের দৃষ্টিকে ছাহাবায়ে কেরামের জামা‘আত থেকে ফক্বীহমুখী করা হয়েছে, যা উম্মতের ঐক্যের জন্য অতীব বিপজ্জনক। কেননা ফক্বীহদের মতভেদের শেষ নেই এবং ফক্বীহদের অনৈক্যের কারণেই উম্মতের ঐক্য অনেকাংশে বিনষ্ট হয়েছে। পক্ষান্তরে ছাহেবে মির‘আত বলেন, ﻭﻫﻢ ﺃﻫﻞُ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ، ﺃﻱ ﺃﺻﺤﺎﺏُ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﺟﺘﻤﻌﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﺗﺒﺎﻉ ﺁﺛﺎﺭﻩ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺟﻤﻴﻊ ﺍﻷﺣﻮﺍﻝ، ﻭﺍﺗﻔﻘﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺧﺬ ﺑﺘﻌﺎﻣﻞ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻭﺇﺟﻤﺎﻋﻬﻢ، ﻭﻟﻢ ﻳﺒﺘﺪﻋﻮﺍ ﺑﺎﻟﺘﺤﺮﻳﻒ ﻭﺍﻟﺘﻐﻴﻴﺮ، ﻭﻟﻢ ﻳﺒﺪﻟﻮﺍ ﺑﺎﻵﺭﺍﺀ ﺍﻟﻔﺎﺳﺪﺓ ‘তারা হ’ল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত অর্থাৎ আহলুল হাদীছ। যারা সর্বাবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছের অনুসরণ করে এবং যারা ছাহাবীগণের আচার-আচরণ ও ইজমা গ্রহণের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করে। যারা শব্দ বা মর্ম পরিবর্তনের বিদ‘আতে লিপ্ত হয় না কিংবা নিজেদের বাতিল রায়সমূহ দ্বারা তা পরিবর্তন করে না’।[26] ‏( ﻭَﺇِﻧَّﻪُ ﺳَﻴَﺨْﺮُﺝُ ﻓِﻲْ ﺃُﻣَّﺘِﻲْ ﺃَﻗْﻮَﺍﻡٌ ﺗَﺘَﺠَﺎﺭَﻯ ﺑِﻬِﻢْ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻟْﺄَﻫْﻮَﺍﺀُ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﺘَﺠَﺎﺭَﻯ ﺍﻟْﻜَﻠْﺐُ ﺑِﺼَﺎﺣِﺒِﻪِ ﻻَ ﻳَﺒْﻘَﻰ ﻣِﻨْﻪُ ﻋِﺮْﻕٌ ﻭَﻻَ ﻣَﻔْﺼِﻞٌ ﺇِﻻَّ ﺩَﺧَﻠَﻪُ‏) ‘আর আমার উম্মতের মধ্যে সত্বর এমন একদল লোক বের হবে, যাদের মধ্যে প্রবৃত্তি এমনভাবে প্রবহমাণ হবে, যেভাবে কুকুরের বিষ আক্রান্ত ব্যক্তির সারা দেহে সঞ্চারিত হয়। কোন একটি শিরা বা জোড়া বাকী থাকে না, যেখানে উক্ত বিষ প্রবেশ করে না’। এখানে ﺍﻓﺔﺭﺍﻕ ﺍﻷﻣﺔ বা উম্মতের বিভক্তির সর্বপ্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রবৃত্তি পরায়ণতাকে এবং তাকে কুকুরের বিষের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ﻷﻥ ﻫﻮﻯ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻫﻮ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﺤﻤﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺑﺘﺪﺍﻉ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﻭﺍﻟﻘﻮﻝ ﻭﺍﻟﻌﻤﻞ ‘কেননা প্রবৃত্তিই মানুষকে বিশ্বাস, কথা ও কাজের মধ্যে বিদ‘আত সৃষ্টিতে প্ররোচনা দিয়ে থাকে’। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, সত্বর একদল লোক বের হবে, যারা প্রবৃত্তি দ্বারা তাড়িত হবে এবং তারাই মানুষকে পথভ্রষ্ট করবে। এই লোকগুলি নিশ্চয়ই ধর্মনেতা বা সমাজনেতা হবেন। যাদের কথা মানুষ শোনে ও যাদেরকে মানুষ অনুসরণ করে। রাসূল (ছাঃ)-এর জীবদ্দশাতেই ভন্ডনবী এবং তাঁর মৃত্যুর কিছুকালের মধ্যেই যাকাত অস্বীকারকারীদের ফিৎনা শুরু হয় ধর্মনেতা ও সমাজনেতাদের মাধ্যমে। অতঃপর খারেজী, শী‘আ, মুরজিয়া, ক্বাদারিয়া, জাবরিয়া, মু‘তাযিলা প্রভৃতি বিদ‘আতী ও ভ্রান্ত দলসমূহের উদ্ভব ঘটে বড় বড় ধর্মনেতাদের মাধ্যমে। পরবর্তীতে মু‘তাযিলা মতবাদ আববাসীয় খলীফা মামূন-মু‘তাছিম বিল্লাহর স্কন্ধে সওয়ার হয়ে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল প্রমুখ আহলেহাদীছ বিদ্বানগণের উপরে অত্যাচারের বিভীষিকা চালায়। তবুও শুরু থেকেই ছাহাবা, তাবেঈন এবং আহলেহাদীছ বিদ্বানগণের দৃঢ় ভূমিকার ফলে ভ্রান্ত দলসমূহের অপতৎপরতায় ভাটা পড়ে যায়। যদিও তাদের মতবাদের বিষাক্ত ধারা এখনো অনেক মুসলিম ও সুন্নী বিদ্বানের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। যা সাধারণ মানুষকে অনেক সময় বিভ্রান্ত করে। কুরআন ও সুন্নাহর উপরে নিজের জ্ঞান ও যুক্তিবাদকে অগ্রাধিকার দেওয়াকেই বলা হয় প্রবৃত্তি পরায়ণতা। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, ﺃَﺭَﺃَﻳْﺖَ ﻣَﻦِ ﺍﺗَّﺨَﺬَ ﺇِﻟَﻬَﻪُ ﻫَﻮَﺍﻩُ ﺃَﻓَﺄَﻧْﺖَ ﺗَﻜُﻮْﻥُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻛِﻴْﻼً ‘আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে তার প্রবৃত্তিকে তার উপাস্য রূপে গ্রহণ করেছে? আপনি কি তার যিম্মাদার হবেন? (ফুরক্বান ২৫/৪৩; জাছিয়াহ ৪৫/২৩) । যখন তাদের সামনে কুরআন-হাদীছের বিধান শুনানো হয়, তখন তারা দর্পভরে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও নিজের প্রবৃত্তির উপরে যিদ করে। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺗُﺘْﻠَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺁﻳَﺎﺗُﻨَﺎ ﻭَﻟَّﻰ ﻣُﺴْﺘَﻜْﺒِﺮًﺍ ﻛَﺄَﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﻤَﻌْﻬَﺎ ﻛَﺄَﻥَّ ﻓِﻲ ﺃُﺫُﻧَﻴْﻪِ ﻭَﻗْﺮًﺍ ﻓَﺒَﺸِّﺮْﻩُ ﺑِﻌَﺬَﺍﺏٍ ﺃَﻟِﻴْﻢٍ ‘যখন তার সামনে আমাদের আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে দম্ভের সাথে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে তা শুনতেই পায়নি অথবা যেন ওর দু’কান বধির। অতএব ওকে মর্মান্তিক আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন’ (লোকমান ৩১/৭) । ধর্মীয় জীবনের ন্যায় মুসলমানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে প্রবৃত্তিপূজার পরিণামে সেখানে জেঁকে বসেছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মত অনৈসলামী ও কুফরী মতবাদ সমূহ। এসব কারণেও মুসলিম উম্মাহর সামাজিক জীবনে অনৈক্য, বিভক্তি ও দলাদলি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয়তাবাদের ধোঁকায় ফেলে ঐক্যবদ্ধ ‘ইসলামী খেলাফত’ ভেঙ্গে মুসলিম উম্মাহ আজ ৫৭টি দুর্বল রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়েছে। ধর্মনিরেপক্ষতাবাদের ধোঁকায় পড়ে রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং ইসলামী বিধানকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছে। অতঃপর গণতন্ত্রের ধোঁকায় ফেলে মানুষকে মানুষের দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ করা হয়েছে। সেই সাথে পুঁজিবাদী অর্থনীতি চালু করে দুর্বলের রক্ত শোষণের পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ধনী ও গরীবের পাহাড় প্রমাণ বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শোষিত মযলূম জনতার আজ নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। অতঃপর প্রবৃত্তিপরায়ণতার বিষ মানুষের আক্বীদা ও আমলে যে বিদ‘আত সমূহ সৃষ্টি করে, তাকে অত্র হাদীছে কুকুরের বিষের সঙ্গে তুলনা করার সম্ভাব্য কারণ সমূহ নিম্নরূপ : এক- কুকুরের বিষ দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তির সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তার কোন শিরা-উপশিরা বাকী থাকে না। অনুরূপভাবে বিদ‘আত মানুষকে এমনভাবে প্রলুব্ধ করে যে, মানুষ তার প্রতি দ্রুত আকৃষ্ট হয় এবং তা করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। কারণ বিদ‘আতের পিছনে শয়তান কাজ করে থাকে। এজন্যই দেখা যায়, অনেক নিরীহ গরীব মুসলমান ফরয ছালাত ও ছিয়াম পালন করে না। কিন্তু একমাত্র সম্বল গাছটি বিক্রি করে হ’লেও বছর শেষে বাড়ীতে একবার মৌলভী ডেকে এনে মীলাদ অনুষ্ঠান করবে। শা‘বান মাসে অন্য কোন ছিয়াম পালন না করলেও এমনকি রামাযানের ফরয ছিয়াম বাদ গেলেও শবেবরাতের ছিয়াম ও ছালাত আদায় করবে এবং হালুয়া- রুটি খাবে যেকোনভাবেই হৌক। দুই- কুকুরের বিষদুষ্ট ব্যক্তি জলাতংক রোগে আক্রান্ত হয়। সে পানি পান করতে গেলেই তাতে কুকুর দেখে ও গলায় কাটা বিঁধে। ফলে এক সময় সে পানি বিহনে মারা যায়। বিদ‘আতী ব্যক্তি তার বিদ‘আতের মধ্যেই জান্নাতের আশা করে। অথচ তার ফল হয় শূন্য। তাকে অবশেষে জাহান্নামী হতে হয়। তিন- কুকুরের বিষ আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনুরূপভাবে বিদ‘আতীর যুক্তিবাদ মানুষকে দ্রুত বিভ্রান্ত করে। কিছু না পারলেও তাকে অন্ততঃ সন্দেহের মধ্যে নিক্ষেপ করে। ফলে সে বিদ‘আতে লিপ্ত না হ’লেও অনেক সময় ফরয পালন করা থেকে পিছিয়ে আসে। যেমন বিদ‘আতী পন্ডিত বলেন, কল্ব ছাফ হওয়াটাই বড় কথা। অতএব যিকিরের মাধ্যমে কল্বকে তাযা রাখাটাই মূল কাজ। ছালাত-ছিয়াম এগুলি বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এই যুক্তিবাদের ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, মুসলমানের কাছে ছালাত ও ছিয়াম এখন ঐচ্ছিক বা লোক দেখানো বিষয়ে পরিণত হয়েছে। চাকুরী জীবনে তারা তাদের বসকে যত ভয় করে, আল্লাহকে তার দশ ভাগের একভাগও ভয় করে কি-না সন্দেহ। ফলে দেখা যায় অধিকাংশ নিয়মিত মুছল্লী অফিসে বা ডিউটিতে থাকাকালে বস-এর ভয়ে ছালাত আদায় করেন না। চার- কুকুর যেমন হেদায়াত হয় না। বিদ‘আতী তেমনি হেদায়াত পায় না। কেননা সে মনে করে যে, সে উত্তম কাজ করছে। আল্লাহ বলেন, ‘এরা পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (কাহফ ১৮/১০৩-১০৪) । অতএব চোর-গুন্ডাদের তওবা করে ভাল হবার সম্ভাবনা থাকলেও বিদ‘আতীর সে সুযোগ হয় না বললেই চলে নিতান্ত আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া। পাঁচ- আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বিদ‘আতকে অন্য কিছুর সাথে তুলনা না করে কুকুরের বিষের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে বিদ‘আতীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। সেকারণ সালাফে ছালেহীন বিদ্বানগণ বিদ‘আতীদের সাথে উঠা-বসা, সালাম- কালাম, খানা-পিনা ইত্যাদি হ’তে বিরত থাকতেন ও সকলকে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। কারণ এরা যেমন ইসলামকে বিকৃত করে, তেমনি মুসলিম ঐক্যকে ভেঙ্গে টুকরা-টুকরা করে। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন- আমীন! নাজী ফের্কার পরিচয় : ১. তারা হলেন ছাহাবী, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণের দল। আল্লাহ বলেন, ﻭَﺍﻟﺴَّﺎﺑِﻘُﻮﻥَ ﺍﻟْﺄَﻭَّﻟُﻮﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﻬَﺎﺟِﺮِﻳﻦَ ﻭَﺍﻟْﺄَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺗَّﺒَﻌُﻮﻫُﻢْ ﺑِﺈِﺣْﺴَﺎﻥٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﻭَﺭَﺿُﻮﺍ ﻋَﻨْﻪُ ‘ঈমান আনয়নে অগ্রবর্তী মুহাজির ও আনছারগণ এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসারী হয়েছে, আল্লাহ তাদের উপর খুশী হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর উপর খুশী হয়েছে’ (তওবা ৯/১০০) । ইমরান বিন হুছায়েন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ﺧَﻴْﺮُ ﺃُﻣَّﺘِﻰ ﻗَﺮْﻧِﻰ ﺛُﻢَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻠُﻮﻧَﻬُﻢْ ﺛُﻢَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻠُﻮﻧَﻬُﻢْ ‘আমার উম্মতের শ্রেষ্ঠ হ’ল আমার যুগের লোক (অর্থাৎ ছাহাবীগণের যুগ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক (অর্থাৎ তাবেঈগণের যুগ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক (অর্থাৎ তাবে তাবেঈগণের যুগ)’।[27] ২. তাঁরা সংস্কারক হবেন : ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ﺑَﺪَﺃَ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡُ ﻏَﺮِﻳﺒﺎً ﺛُﻢَّ ﻳَﻌُﻮﺩُ ﻏَﺮِﻳﺒﺎً ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺪَﺃَ ﻓَﻄُﻮﺑَﻰ ﻟِﻠْﻐُﺮَﺑَﺎﺀِ … ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺼْﻠِﺤُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﺃَﻓْﺴَﺪَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ‘ইসলাম নিঃসঙ্গভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। সত্বর সেই অবস্থায় উপনীত হবে। অতএব সুসংবাদ হ’ল সেই অল্পসংখ্যক লোকদের জন্য। যারা আমার পরে লোকেরা (ইসলামের) যে বিষয়গুলি ধ্বংস করেছে, সেগুলিকে পুনঃ সংস্কার করে’।[28] ৩. যারা জামা‘আতবদ্ধভাবে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করেন। আল্লাহ বলেন, ﺇَّﻥِ ﺍﻟﻠﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻠِﻪِ ﺻَﻔًّﺎ ﻛَﺄَﻧَّﻬُﻢْ ﺑُﻨْﻴَﺎﻥٌ ﻣَﺮْﺻُﻮﺹٌ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালবাসেন ঐসব লোকদের, যারা আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায়’ (ছফ ৬১/৪) । ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ﻣَﻦْ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺑُﺤْﺒُﻮﺣَﺔَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻓَﻠْﻴَﻠْﺰَﻡِ ﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻋَﺔَ ‘যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যস্থলে থাকতে চায়, সে যেন জামা‘আতকে অপরিহার্য করে নেয়’।[29] ৪. তাঁরা যেকোন মূল্যে সুন্নাতকে অাঁকড়ে থাকেন। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺋِﻜُﻢْ ﺯَﻣَﺎﻥَ ﺻَﺒْﺮٍ ﻟِﻠْﻤُﺘَﻤَﺴِّﻚِ ﻓِﻴْﻪِ ﺃَﺟْﺮُ ﺧَﻤْﺴِﻴْﻦَ ﺷَﻬِﻴْﺪًﺍ ﻣِّﻨْﻜُﻢْ – ‘তোমাদের পরে এমন একটা কঠিন সময় আসছে, যখন সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে ধারণকারী ব্যক্তি তোমাদের মধ্যকার পঞ্চাশ জন শহীদের সমান নেকী পাবে’।[30] ৫. তারা সর্বাবস্থায় সমবেতভাবে হাবলুল্লাহকে ধারণ করে থাকেন এবং কখনোই সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হন না। আল্লাহ বলেন, ﻭَﺍﻋْﺘَﺼِﻤُﻮﺍ ﺑِﺤَﺒْﻞِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﻭَّﻻَ ﺗَﻔَﺮَّﻗُﻮﺍ ‘তোমরা সকলে সমবেতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ করো এবং তোমরা বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান ৩/১০৩) । নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻋَﺔُ ﺭَﺣْﻤَﺔٌ ﻭَﺍﻟْﻔُﺮْﻗَﺔُ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ‘জামা‘আতবদ্ধ জীবন হ’ল রহমত এবং বিচ্ছিন্ন জীবন হ’ল আযাব’। [31] ‘হাবলুল্লাহ’ হ’ল কুরআন ও তার ব্যাখ্যা হাদীছ। যতক্ষণ কোন সংগঠনে এই দু’টির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে এবং তা যথার্থভাবে অনুসৃত হবে, ততক্ষণ উক্ত সংগঠনের সাথে জামা‘আতবদ্ধ থাকা ফরয। উম্মুল হুছায়েন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ﺇِﻥْ ﺃُﻣِّﺮَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻋَﺒْﺪٌ ﻣُﺠَﺪَّﻉٌ ﺃَﺳْﻮَﺩُ ﻳَﻘُﻮﺩُﻛُﻢْ ﺑِﻜِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻓَﺎﺳْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ‘যদি তোমাদের উপর একজন নাক-কান কাটা কৃষ্ণকায় গোলামকেও আমীর নিযুক্ত করা হয়, যদি তিনি তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী পরিচালিত করেন, তাহ’লে তোমরা তার কথা শোন ও তার আনুগত্য কর’।[32] ৬. লোকেরা ছেড়ে গেলেও এবং পরিস্থিতি বিরূপ হলেও যারা হাবলুল্লাহকে মযবুতভাবে ধারণ করে থাকেন। আল্লাহ বলেন, ﺇَّﻥِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺭَﺑُّﻨَﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﺛُﻢَّ ﺍﺳْﺘَﻘَﺎﻣُﻮﺍ ﺗَﺘَﻨَﺰَّﻝُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﺃَﻻَّ ﺗَﺨَﺎﻓُﻮﺍ ﻭَﻻَ ﺗَﺤْﺰَﻧُﻮﺍ ﻭَﺃَﺑْﺸِﺮُﻭﺍ ﺑِﺎﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗُﻮﻋَﺪُﻭﻥَ ‘যারা বলে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। অতঃপর উক্ত কথার উপর দৃঢ় থাকে, তাদের উপর ফেরেশতাগণ অবতীর্ণ হয় এই বলে যে, তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তান্বিত হয়ো না। তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৩০) । ছওবান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উক্ত হকপন্থী দল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ﻻَ ﺗَﺰَﺍﻝُ ﻃَﺎﺋِـﻔَﺔٌ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻰ ﻇَﺎﻫِﺮِﻳْﻦَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﻻَ ﻳَﻀُﺮُّﻫُﻢْ ﻣَﻦْ ﺧَﺬَﻟَﻬُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺄْﺗِﻰَ ﺃَﻣْﺮُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَ ﻫُﻢْ ﻛَﺬَﺍﻟِﻚَ – ‘চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হকের উপরে বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে’।[33] আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, তারা হলেন আহলুল হাদীছ’।[34] অন্য বর্ণনায় এসেছে ﻻَ ﻳَﻀُﺮُّﻫُﻢْ ﻣَﻦْ ﺧَﺎﻟَﻔَﻬُﻢْ ‘তাদের বিরোধিতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[35] ইমরান বিন হুছায়েন (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, ﻻَ ﺗَﺰَﺍﻝُ ﻃَﺎﺋِﻔَﺔٌ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻰ ﻳُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﻇَﺎﻫِﺮِﻳﻦَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﻧَﺎﻭَﺃَﻫُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻘَﺎﺗِﻞَ ﺁﺧِﺮُﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤَﺴِﻴﺢَ ﺍﻟﺪَّﺟَّﺎﻝَ ‘আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা হক-এর উপর লড়াই করবে। তারা তাদের শত্রুদের উপর বিজয়ী থাকবে। তাদের শেষ দলটি দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে’।[36] ৭. বিদ‘আতীদের বিপরীতে তারা সর্বদা ‘আহলুল হাদীছ’ নামে পরিচিত হবেন। ছাহাবায়ে কেরাম ‘আহলুল হাদীছ’ নামে পরিচিত ছিলেন। ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) মুসলিম যুবকদের ‘মারহাবা’ জানিয়ে বলতেন ﻓَﺈِﻧَّﻜُﻢْ ﺧُﻠُﻮْﻓُﻨَﺎ ﻭَﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳْﺚِ ﺑَﻌْﺪَﻧَﺎ ‘তোমরাই আমাদের পরবর্তী বংশধর ও তোমরাই আমাদের পরবর্তী আহলুল হাদীছ’।[37] খ্যাতনামা তাবেঈ ইমাম শা‘বী (২২-১০৪ হিঃ) ছাহাবায়ে কেরামের জামা‘আতকে ‘আহলুল হাদীছ’ বলতেন।[38] আব্দুল কাদের জীলানী বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্য কোন নাম নেই ‘আহলুল হাদীছ’ ব্যতীত’।[39] আহলেসুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সকল প্রসিদ্ধ ইমাম, বিশেষ করে চার ইমামের প্রত্যেকে ছহীহ হাদীছকে তাদের মাযহাব হিসাবে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ﺇِﺫَﺍ ﺻَﺢَّ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳْﺚُ ﻓَﻬُﻮَ ﻣَﺬْﻫﺒُﻨَﺎ ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনো সেটাই আমাদের মাযহাব’।[40] অতএব সর্বক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন, ছহীহ হাদীছ এবং ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী জীবন পরিচালনাকারী ব্যক্তিই মাত্র ‘আহলুল হাদীছ’ বলে অভিহিত হবেন। অন্য কেউ নয়। ৮. আক্বীদার ক্ষেত্রে তারা কখনোই চরমপন্থী বা শৈথিল্যবাদী হবেন না। বরং তারা সর্বদা মধ্যপন্থী উম্মত হবেন। নবীগণের তরীকা অনুযায়ী মানুষের আক্বীদা ও আমলের সংশোধনের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধন তাদের কাম্য হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধীদের তারা ভালবাসবেন না এবং আল্লাহর ভালোবাসার ঊর্ধ্বে তারা অন্য কারু ভালোবাসাকে স্থান দিবেন না (মুজাদালাহ ৫৮/২২) । তারা কেবল আল্লাহর জন্য মানুষকে ভালবাসেন ও আল্লাহর জন্যই মানুষের সাথে বিদ্বেষ করেন।[41] আহলেহাদীছের উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য সমূহের কারণে তাদের প্রশংসায় ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳْﺚِ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺯَﻣَﺎﻥٍ ﻛَﺎﻟﺴَّﺤَﺎﺑَﺔِ ﻓِﻲ ﺯَﻣَﺎﻧِﻬِﻢْ প্রত্যেক যামানায় আহলেহাদীছগণ হলেন সেই যামানার জন্য মেঘ সদৃশ।’ তিনি বলতেন, ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺻَﺎﺣِﺐَ ﺣَﺪِﻳْﺚٍ ﻓَﻜَﺄَﻧِّﻲْ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ‘আমি যখন কোন আহলুল হাদীছকে দেখি, তখন যেন আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কোন ছাহাবীকে দেখি’। [42] ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳْﺚِ ﻓِﻰْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻼَﻡِ ﻛَﺄَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻼَﻡِ ﻓِﻰْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻤِﻠَﻞِ ‘মুসলিম উম্মাহর মধ্যে আহলেহাদীছের মর্যাদা অনুরূপ, যেমন সকল জাতির মধ্যে মুসলমানদের মর্যাদা’।[43] সংশয় নিরসন : অনেকে ভাবেন, তার দল আদর্শচ্যুত হলেও কিংবা সেখানে আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধির কোন প্রচেষ্টা না থাকলেও ঐদল ছেড়ে কোন ছহীহ-শুদ্ধ দলে যাওয়া যাবে না কিংবা অনুরূপ কোন জামা‘আত গঠন করা যাবে না। আবার কেউ ছহীহ-শুদ্ধ আক্বীদা সম্পন্ন দল থেকে খোঁড়া অজুহাতে বেরিয়ে গিয়ে নতুন দল গড়েন ও ভাঙেন। সেই সাথে কুরআন-হাদীছের অপব্যাখ্যা করেন ও মানুষকে ধোঁকা দেন। অনেকে শিরক ও বিদ‘আতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকেও নিজেকে সুন্নী বা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত এমনকি আহলেহাদীছ দাবী করেন। কেউ কুরআনে বর্ণিত ‘মুসলেমীন’ ও হাদীছে বর্ণিত ‘জামা‘আতুল মুসলেমীন’-এর অর্থ না বুঝে নিজেদেরকেই মাত্র ইসলামী জামা‘আত বা মুসলিম জামা‘আত দাবী করেন ও অন্যদেরকে কাফের ধারণা করেন। কেউ আল্লাহর হুকুম ‘আক্বীমুদ্দীন’ (তোমরা তাওহীদ কায়েম কর)-এর অর্থ ‘হুকুমত কায়েম কর’ বলেছেন এবং রাষ্ট্র কায়েমের আন্দোলনে তাদের দলে যোগ না দিলে তাকে নবীযুগের ইহুদীদের ন্যায় কাফের গণ্য করেন। কেউ কুরআনে বর্ণিত ‘উখরিজাত লিন্নাস’ (যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য) ও ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ (আল্লাহর রাস্তায়)-এর কদর্থ করে মানুষকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন ও গাট্টি-বোচকা ঘাড়ে নিয়ে দিনের পর দিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাচ্ছেন। সেই সাথে শুনাচ্ছেন কোটি কোটি নেকী ও ফযীলতের মিথ্যা বয়ান। কেউ ভিত্তিহীন কাহিনী ও জাল-যঈফের প্রচারকেই তাবলীগ ভাবেন ও ছহীহ হাদীছের তাবলীগকে ফিৎনা মনে করেন। কেউ ‘জিহাদ’-এর অপব্যাখ্যা করে তাদের দৃষ্টিতে কবীরা গোনাহগার মুসলিম নেতাদের হত্যা করার মধ্যেই জান্নাত তালাশ করেন। অথচ বাস্তবতা এই যে, প্রায় সকলেই যেকোন মূল্যে নিজেদের ভুলের উপর টিকে থাকেন। সঠিক বিষয়ের দিকে ফিরে যেতে চান না। কেউ বলেন, ‘এটাও ঠিক ওটাও ঠিক’। কিন্তু সঠিক বিষয়টির দিকে নিজেরাও যান না, অন্যকেও যেতে দেন না। এভাবেই শয়তান সর্বদা মানুষকে ধোঁকায় ফেলে রাখে। যাতে সে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে না পারে। এই সব হঠকারী ও বিদ‘আতপন্থী দলসমূহের ব্যাপারে সাবধান করে আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, ﺇَّﻥِ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻓَﺮَّﻗُﻮْﺍ ﺩِﻳْﻨَﻬُﻢْ ﻭَﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﺷِﻴَﻌﺎً ﻟَّﺴْﺖَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻓِﻲْ ﺷَﻲْﺀٍ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻣْﺮُﻫُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﺛُﻢَّ ﻳُﻨَﺒِّﺌُﻬُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﻳَﻔْﻌَﻠُﻮْﻥَ – ‘নিশ্চয়ই যারা তাদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে ও উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি কেবল আল্লাহর উপরে ন্যস্ত। অতঃপর তিনিই তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন’ (আন‘আম ৬/১৫৯) । উপসংহার : এগুলি মূলতঃ ভুল চিন্তা ও অন্তরের রোগ হ’তে উদ্ভূত। কেননা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে কোন জনপদে কোন সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে সব ছেড়ে উক্ত আন্দোলনে যোগদান করাই হ’ল মানুষের দ্বীনী কর্তব্য। কিন্তু নিকৃষ্ট প্রবৃত্তিপরায়ণতা ও হীন দুনিয়াবী স্বার্থে, প্রচলিত প্রথা ও বাপ- দাদার দোহাই দিয়ে যুগে যুগে নবীদের বিরোধিতা করা হয়েছে। একইভাবে আজও পৃথিবীর যে প্রান্তে সঠিকভাবে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ চলছে, সেখানে বিরোধীরা সর্বশক্তি দিয়ে তাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিদ‘আতপন্থী ও হঠকারীরা চিরকাল এটি করবে। কিন্তু জান্নাতপিয়াসী মুমিনগণ ঠিকই ছুটে আসবেন এখানে আল্লাহর বিশেষ রহমতে। আল্লাহ আমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে ‘মুক্তিপ্রাপ্ত দলে’র অন্তর্ভুক্ত করুন- আমীন!! [1]. তিরমিযী হা/২৬৪১, ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯২; আবুদাঊদ হা/৪৫৯৬-৯৭; আহমাদ হা/১৬৯৭৯; মিশকাত হা/১৭১-১৭২; ছহীহাহ হা/১৩৪৮ । [2]. হাকেম ১/১২৮ । [3]. মির‘আত ১/২৭৬-৭৭ । [4]. ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯২ । [5]. তিরমিযী হা/২৬৪০ । [6]. শারঈ বিষয়ে বিনা দলীলে কারু কোন কথার অন্ধ অনুসরণকে তাক্বলীদ বলা হয়। পক্ষান্তরে দলীলের অনুসরণকে ইত্তেবা বলা হয়। ইসলামে তাক্বলীদ নিষিদ্ধ ও ইত্তেবা অপরিহার্য। [7]. মির‘আত ১/২৭৩ । [8]. মুসলিম হা/১৪৮; মিশকাত হা/৫৫১৬ ‘ফিতান’ অধ্যায়-২৭ অনুচ্ছেদ-৭ । [9]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৭২-৮৭ । [10]. মির‘আত ১/২৭৯-৮০ । [11]. ছহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যগ্রন্থ আস-সিরাজুল ওয়াহহাজ ১/৩ পৃঃ। [12]. হাকেম হা/৪৪৪, ১/১২৯ পৃঃ; ‘মতন নিরাপদ’ যঈফাহ হা/১০৩৫-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য ৩/১২৬ পৃঃ; তিরমিযী হা/২৬৪১; মিশকাত হা/১৭১ । [13]. আহমাদ আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৭২ । [14]. মুসনাদে আবী ইয়া‘লা হা/৩৯৪৪, আলবানী সনদ যঈফ । [15]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৭৬৫৯ সনদ যঈফ; সৈয়ূত্বী, জাম‘উল জাওয়ামে‘ হা/৫৬৯ । [16]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব, সনদ ছহীহ; হাশিয়া মিশকাত আলবানী, হা/১৭৩ । [17]. আলী ইবনু হাযম আন্দালুসী, কিতাবুল ফিছাল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহাল (বৈরূত : মাকতাবা খাইয়াত্ব ১৩২১/১৯০৩) শাহরাস্তানীর ‘মিলাল’ সহ ২/১১৩ পৃ; কিতাবুল ফিছাল (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ২য় সংস্করণ ১৪২০/১৯৯৯) ১/৩৭১ পৃঃ ‘ইসলামী ফের্কাসমূহ’ অধ্যায়। [18]. আব্দুল ক্বাদির জীলানী, কিতাবুল গুনিয়াহ ওরফে গুনিয়াতুত ত্বালেবীন (মিসর: ১৩৪৬ হিঃ) ১/৯০ পৃঃ। [19]. তিরমিযী হা/২১৯২; মিশকাত হা/৬২৮৩-এর ব্যাখ্যা; ফাৎহুল বারী ১৩/৩০৬ পৃঃ, হা/৭৩১১-এর ব্যাখ্যা; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০; শারফু আছহাবিল হাদীছ পৃঃ ১৫। [20]. কিতাবুল গুনিয়াহ (মিসর : ১৩৪৬ হিঃ) ১/৯০ পৃঃ; কিতাবুল মিলাল (বৈরূত : দারুল মা‘রিফাহ, তাবি) ১/১৪৬ পৃঃ। [21]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২ । [22]. আব্দুর রহমান, আন-নাক্বশাবান্দিায়া (রিয়ায : দার ত্বাইয়িবাহ, ১৪০৯/১৯৮৮), পৃঃ ৭৭। [23]. নূর মোহাম্মদ আ‘জমী, বঙ্গানুবাদ মেশকাত শরীফ (ঢাকা : এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ১৯৮৬), ১/১৮১ পৃঃ হা/১৬৩ (৩১)-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য । [24]. ঐ, ১/১৮২ পৃঃ। [25]. ত্বাবারাণী আওসাত্ব, ছহীহাহ হা/১৩৫৮; আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৩৩০ । [26]. মির‘আত ১/২৭৮ । [27]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬০০০-০১ ‘ছাহাবীগণের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ। [28]. আহমাদ হা/১৬৭৩৬; মিশকাত, হা/১৫৯, ১৭০; ছহীহাহ হা/১২৭৩ । [29]. তিরমিযী হা/২১৬৫ । [30]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১০২৪০; ছহীহুল জামে‘ হা/২২৩৪। [31]. আহমাদ হা/১৮৪৭২; ছহীহাহ হা/৬৬৭ । [32]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৬২ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায় । [33] . ছহীহ মুসলিম ‘ইমারত’ অধ্যায়-৩৩, অনুচ্ছেদ-৫৩, হা/১৯২০; অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ ঐ, দেউবন্দ ছাপা শরহ নববী ২/১৪৩ পৃঃ; বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৭১ ‘ইল্ম’ অধ্যায় ও হা/৭৩১১-এর ভাষ্য ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা’ অধ্যায়; আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০-এর ব্যাখ্যা। [34]. তিরমিযী হা/২১৯২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭০২; মিশকাত হা/৬২৮৩ । [35]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৭৬; আবুদাঊদ হা/৪২৫২ । [36]. আবুদাঊদ হা/২৪৮৪; মিশকাত হা/৩৮১৯ ‘জিহাদ’ অধ্যায়। [37]. খত্বীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ পৃঃ ১২; হাকেম ১/৮৮ পৃঃ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৮০। [38]. যাহাবী, তাযকেরাতুল হুফফায (বৈরূতঃ দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি) ১/৮৩ পৃঃ। [39]. কিতাবুল গুনিয়াহ ১/৯০ । [40]. শা‘রানী, কিতাবুল মীযান (দিল্লী : ১২৮৬ হিঃ) ১/৭৩ পৃঃ। [41]. ত্বাবারাণী, ছহীহাহ হা/৯৯৮ । [42]. কিতাবুল মীযান ১/৬৫-৬৬ । [43]. মিনহাজুস সুন্নাহ (বৈরূতঃ দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি) ২/১৭৯ পৃঃ।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ