Wednesday, November 29, 2017

নবম প্রকার যাদুঃ অপরাগকারী যাদুর চিকিৎসা

অপরাগকারী যাদুর চিকিৎসা


প্রথম পদ্ধতিঃ
ইতিপূর্বে উদ্ধৃত (ষষ্ঠ অধ্যায়ে) পন্থায় চিকিৎসা করবেন। জিনের সাথে কথা বলার পর যাদুস্থান সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে যে কোথায়; অতঃপর সেখান হতে বের করতে পারলে যাদু শেষ হয়ে যাবে। অতঃপর তাকে বের হতে বলবে এবং সে বের হয়ে গেলে বুঝতে হবে যে, যাদুর প্রভাব নিঃশেষ হয়ে গেছে। আর যদি জ্বিন রুগীর মাধ্যমে কথা না বলে তবে চিকিৎসার অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
নিম্নে উদ্ধৃত আয়াত কয়েকবার পড়ে পানিতে সাতবার ফু দিবে এরপর রোগীকে পান করাবে এবং কয়েক দিন সেই পানি দিয়ে গোসল করবে। আয়াতগুলো হলঃ

فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ  إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ، وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ


অর্থঃ "মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন তোমরা যেই যাদু দেখাচ্ছে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তা ধ্বংস করে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কর্মের সংশোধন করেন না এবং আল্লাহ সত্যকে তার নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত করবেন যদিও অপরাধীগণ তা অপছন্দ করে।" (সূরা ইউনুসঃ ৮১-৮২ এটিও বেশি বেশি পড়বে, বিশেষ করেঃ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ অংশটি বেশি বেশি পড়বে।

وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ

অর্থঃ “তখন আমি মূসা-এর নিকট এই প্রত্যাদেশ পাঠালামঃ তুমি তোমার লাঠিখানা নিক্ষেপ কর, মূসা (আলাইহিস সালাম) তা নিক্ষেপ করলে ওটা একটা বিরাট সাপ হয়ে সহসা ওদের অলীক (মিথ্যা) সৃষ্টিগুলোকে গিলে ফেলল। পরিশেষে যা হক ছিল তা সত্য প্রমাণিত হলো, আর যা কিছু বানানো হয়েছিল তা বাতিল প্রমাণিত হলো । আর ফিরাউন ও তার দলবলের লোকেরা মুকাবিলার ময়দানে পরাজিত হলো এবং লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে গেল। যাদুকরগণ তখন সিজদায় পড়ে গেল। তারা আনলাম। (জিজ্ঞেস করা হলো— কোন বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি? তারা উত্তরে বললে) মূসা ও হারূনের প্রতিপালকের প্রতি।” (সূরা আরাফঃ ১১৭-১২২)
তৃতীয় পদ্ধতিঃ
কুলের সাতটি সবুজ পাতা পাথর দিয়ে পিষে পানিতে ঢেলে নাড়তে থাকবে এবং নিম্নের আয়াতসমূহ পড়তে থাকবে আর ফুঁ দিতে থাকবে।
আয়াতগুলো হল এইঃ আয়াতুল কুরসী সাতবার এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস। আর সেই পানি রোগী পান করবে এবং গোসলও করবে কয়েক দিন পর্যন্ত ।
ইনশাআল্লাহ রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। সে পানিতে অন্য পানি মিশাবে না ও উক্ত পানি গরমও করবে না। যদি শীত থাকে তবে পানি রোদে গরম করতে পারে। আর লক্ষ্য রাখতে হবে যে, পানি যেন অপবিত্র স্থানে না পড়ে। তাতে ইনশাআল্লাহ যাদু প্রথমবার গোসলেই শেষ হয়ে যাবে।
চতুর্থ পদ্ধতিঃ
উল্লেখিত ঝাড়-ফুঁক রোগীর কানে পড়বে তার সাথে নিম্নের এই আয়াতটিও রোগীর কানে পড়বে।

وَقَدِمْنَا إِلَىٰ مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا

অর্থঃ “আমি তাদের কৃতকর্মগুলোর দিকে অগ্রসর হবো, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলি-কণায় পরিণত করবো।" (সূরা ফুরকানঃ ২৩)
এই আয়াত রোগীর কানে একশ’বার অথবা তার অধিক পড়বে। যে পর্যন্ত না রোগী বেহুশ হয়ে পড়ে। এই আমল কয়েক দিন করতে থাকবে যে পর্যন্ত না রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তাতে ইনশাআল্লাহ যাদু নিঃশেষ হয়ে যাবে।
পঞ্চম পদ্ধতিঃ
হাফেজ ইবনে হাজার (রহঃ) এই প্রকার ঝাড়-ফুঁকের উপর ইমাম শাবী হতে প্রমাণ বর্ণনা করেছেন। (বিস্তারিত দেখুনঃ ফতহুল বারী ২৩৩/১০)
তাহল বনের ভেতর থেকে কাঁটাযুক্ত গাছের পাতাসমূহ একত্রিত করে পাথর দিয়ে পিষে মিহি করবে এবং তার উপর কুরআনের আয়াত পড়ে ফু দিবে এরপর তা পানিতে মিশাবে এবং তা দিয়ে গোসল করবে। (আমি মনে করি পানিতে সূরা ফালাক নাস এবং আয়াতুল কুরসী পড়ে ফুঁ দিবে তবে তা উত্তম হবে।)

৬ষ্ঠ পদ্ধতিঃ
হাফেজ ইবনে হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন আমি জাফর মুস্তাগফিরির কিতাবে (চিকিৎসা বিষয়ক পুস্তক) ঝাড়-ফুঁকের পদ্ধতি অধ্যায়ন করেছি যে, জাফর মুস্তাগফিরি বলেন আমি নাসুহ বিন ওয়াসেলের হাতে (কুতাইবা বিন আহমদ বুখারীর ব্যখ্যার এক অংশে) লেখা পেলাম যে, কাতাদাহ সাঈদ বিন মুসাইয়্যেবের কাছে জিজ্ঞেস করলেন যে, কোন পুরুষ যদি তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে ব্যর্থ হওয়ার রোগে আক্রান্ত হয় তবে কি তার জন্যে ঝাঁড়-ফুঁকের চিকিৎসা জায়েয? তিনি বললেন ঝাড়-ফুঁকের উদ্দেশ্য তো সুস্থ করা তাই এতে কোন সমস্যা নেই। শরীয়তে মানব কল্যাণে কোন কার্যকর বিষয় নিষেধ নেই।
নাসুহ বলেন যে, হাম্মাদ শাকির আমাকে চিকিৎসার পদ্ধতির বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে বলেন কিন্তু আমি বলতে পারিনি। এরপর তিনি আমাকে বললেন যে, যখন এমন ব্যক্তি যে, স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য সব কাজই করতে পারে, তবে এমন রোগী কিছু জ্বালানী/লাকড়ী একত্রিত করে তাতে আগুন লাগিয়ে দিবে। এবং সেই আগুনের মাঝখানে একটি কুড়াল রেখে দিবে। আর যখন কুড়াল গরম হয়ে যাবে তখন সেটাকে বের করে তাতে পেশাব করে দিবে ইনশাল্লাহ সে আরোগ্য লাভ করবে। (ফতহুল বারী খণ্ড ১০ পৃঃ ২২৩)
এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, রোগী কুড়ালের উপর এমন কোন বিশ্বাস রাখবে না বরং তার বুঝতে হবে যে, এটা একটা মাধ্যম। কুড়ালের গরম তাপ যখন পুরুষাঙ্গে পড়ে তখন জ্বিন প্রচণ্ড আঘাত পায় এবং সে বের হয়ে চলে যায়। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় সে সুস্থ হয়ে উঠে।
সপ্তম পদ্ধতিঃ
এক পাত্রে পানি নিয়ে তাতে সূরা ফালাক ও নাস পড়বে এবং নিম্নের দু'আ পড়ে পানিতে ফুঁ দিবে।

بسم الله أرقيق والله يشفيك من كل داء يؤذيك، ومن كل نفس أو عين حاسد الله يشفيك

অতঃপর সেই পানিতে সাতবার ফু দিবে এবং রোগী পর পর তিন দিন পান করবে এবং তা দিয়ে গোসল করবে। ইনশাআল্লাহ যাদু ধ্বংস হয়ে যাবে এবং রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। আর গোসল কোন অপবিত্র স্থানে করবে না ।
অষ্টম পদ্ধতিঃ
রোগীর কানে নিম্নের আয়াত ও সূরা পড়বেনঃ
১ । সূরা ফাতেহা ৭০ বারের অধিক।
২। আয়াতুল কুরসী ৭০ বারের অধিক।
৩। সূরা ফালাক ও নাস ৭০ বারের অধিক।
এগুলি পরপর তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত পড়বেন। ইনশাআল্লাহ যাদু নিক্রিয় হয়ে যাবে এবং রুগী সুস্থ হয়ে যাবে।
নবম পদ্ধতিঃ
পরিস্কার একটি পাত্রে পরিস্কার কালি দিয়ে নিম্নের আয়াতসমূহ লিখবেঃ

فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ  إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ، وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

অর্থঃ “মূসা বললেন তোমরা যেই যাদু দেখাচ্ছে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তা ধ্বংস করে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কর্মের সংশোধন করেন না এবং আল্লাহ সত্যকে তার নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত করবেন যদিও অপরাধীগণ তা অপছন্দ করে।" (সূরা ইউনুসঃ ৮১-৮২)
এই আয়াত লেখার পর সেই পাত্রে কালো জিরার তেল ঢেলে তা নাড়াচাড়া করবে। এরপর রোগী সেই তেল পান করবে এবং কপালে ও বুকে মালিশ করতে থাকবে। ইনশাআল্লাহ যাদু বিনষ্ট ও নিক্রিয় হয়ে যাবে এবং রোগী আরোগ্য লাভ করবে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এই বিষয়ে ফতোয়া দিয়েছেন যে, কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত যিকিরসমূহ লিখে পানিতে গুলিয়ে তা রোগীকে পান করানো জায়েয। (মাজমাউল ফাতোয়াঃ ১৯/৬৪)

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ