কুরআন তিলাওয়াতের সময় কান্না
ইমাম নওবী বলেন, কুরআন
তিলাওয়াতের সময় কান্না করা ‘আরেফীন’ (আল্লাহ সম্বন্ধে সম্যক্ জ্ঞানের
অধিকারী) মানুষদের গুণ এবং নেক লোকদের প্রতীক। মহান আল্লাহ বলেন,
আপনিও কাঁদতে পারেন। আর তা ভালো লোকেরই আলামত। তবে লোকপ্রদর্শন থেকে দূরে থাকুন। ভেকের কান্না কাঁদা হতে বিরত থাকুন। যেহেতু তাতে লাভের জায়গায় ক্ষতিই পাবেন।
قُلْ آمِنُوا بِهِ أَوْ لَا تُؤْمِنُوا إِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ سُجَّدًا - وَيَقُولُونَ سُبْحَانَ رَبِّنَا إِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا - وَيَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُونَ وَيَزِيدُهُمْ خُشُوعًا
অর্থাৎ, এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া
হয়েছে তাদের নিকট যখন তা পাঠ করা হয়, তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারা
বলে, আমাদের প্রতিপালকই পবিত্রতম, আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি অবশ্যই
কার্যকরী হবে। তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে (সিজদায়) পড়ে এবং তাদের তা
তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।[1]
তিনি আরো বলেন,أُولَئِكَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ مِنْ ذُرِّيَّةِ آدَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِنْ ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْرَائِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَنِ خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا
অর্থাৎ, এরাই আদম-বংশের অন্তর্গত নবীগণ;
যাদেরকে আল্লাহ অনুগৃহীত করেছেন এবং যাদেরকে আমি নূহের সাথে কিশত্মীতে
আরোহণ করিয়েছিলাম এবং ইবরাহীম ও ইসরাঈল-বংশের অন্তর্গত এবং যাদেরকে আমি
সুপথগামী ও মনোনীত করেছিলাম; যখন তাদের নিকট পরম দয়াময়ের আয়াত পাঠ করা হত,
তখন তারা কাঁদতে কাঁদতে সিজদায় পতিত হত।[2]
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, একদা
আল্লাহর রসূল (সাঃ) আমাকে বললেন, ‘‘আমাকে কুরআন পড়ে শুনাও।’’ আমি বললাম,
‘আমি আপনাকে কুরআন শুনাব অথচ তা আপনার উপরেই অবতীর্ণ হয়েছে?!’ তিনি বললেন,
‘‘আমি অপরের নিকট তা শুনতে পছন্দ করি।’’ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, অতএব আমি
সূরা নিসা পড়তে শুরু করলাম। অতঃপর যখন এই আয়াতে পৌঁছলাম,
فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيْداً
অর্থাৎ, অনন্তর তখন কি দশা হবে যখন আমি
প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে তাদের উপর
সাক্ষীরূপে আনয়ন করব।[3] তখন তিনি বললেন, ‘‘যথেষ্ট।’’ আমি তাঁর প্রতি
তাকিয়ে দেখলাম, তাঁর চক্ষু দুটি থেকে অশ্রু ঝরছে।[4] আবূ হুরাইরা (রাঃ)
বলেন, যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হল,
أَفَمِنْ هَذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ، وَتَضْحَكُوْنَ وَلاَ تَبْكُوْنَ
অর্থাৎ, তবে কি তোমরা এ কথায় বিস্ময় বোধ করছ? হাসছ এবং কান্না করছ না?![5]
তখন আহলুস সুফ্ফার[6] সকলে ‘ইন্না
লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজেঊন’ বলে কাঁদতে লাগলেন এবং তাঁদের চোখের পানি
গাল বেয়ে বইতে লাগল। তাঁদের কান্নার শব্দ শুনে রসূল (সাঃ)-ও কাঁদতে লাগলেন।
তাঁর কান্না দেখে আমরাও লাগলাম কাঁদতে। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বললেন,
خَشْيَةِ اللهِ لَا يَلِجِ النَّارَ مَنْ بَكٰى مِنْ ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর
ভয়ে কাঁদে, সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’’[7]
একদা ইবনে উমার (রাঃ) সূরা মুত্বাফফিফীন পাঠ করলেন। তিনি যখন এই আয়াতে
পৌঁছলেন يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ (অর্থাৎ, যেদিন
সমস্ত মানুষ বিশ্ব-জাহানের প্রতিপালকের সম্মুখে দণ্ডায়মান হবে।) তখন কাঁদতে
লাগলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। অতঃপর অবশিষ্ট সূরা পড়া
হতে বিরত থাকলেন।[8]আপনিও কাঁদতে পারেন। আর তা ভালো লোকেরই আলামত। তবে লোকপ্রদর্শন থেকে দূরে থাকুন। ভেকের কান্না কাঁদা হতে বিরত থাকুন। যেহেতু তাতে লাভের জায়গায় ক্ষতিই পাবেন।
No comments:
Post a Comment