জাহান্নাম থেকে বেচে থাকার আমল ও পদ্ধতি সমুহ!
বিসমিল্লাহ-অসসলাতু অসসালামু আ’লা রসুলিল্লাহ —————————————— মৃত্যুর পর মানুষের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম জাহান্নাম আর এই ভয়ানক বিপদ থেকে বাচার জন্য আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসুল (সাঃ) অনেকগুলো পদ্ধতি আমাদের জানিয়ে গেছেন যাতে করে আমরা সবচেয়ে বড় এই বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে পারি,তার (সাঃ) বর্ণিত অসংখ্য হাদিস থেকে এ বিষয়ক ১৫ টি হাদিস উল্লেখ করা হল, কেউ ১টা হাদিসও যদি অনুসরণ করে, তবেই লেখার উদ্দেশ্য সার্থক হবে। share, tag, copy-paste করে অন্যদেরকে জানিয়ে দিবেন কারণ আপনার থেকে জেনে কেউ এই আমল করলে আপনিও এ সওয়াব পেয়ে যাবেন (মুসলিম) ### ১
- যোহরের ফরয নামাজের পূর্বে ৪ এবং পড়ে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করা ### ১- উম্মে হাবীবা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি , “যে ব্যক্তি বরাবর যোহরের পূর্বে চার রাক’আত এবং যোহরের পরে চার রাক’আত ছালাত আদায় করবে আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের প্রতি হারাম করে দিবেন ” (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস সহীহ, আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত) [অর্থাৎ যোহরের ফরয নামাজের আগে ৪ রাকাত এবং পড়ে ২ রাকাত ২ রাকাত করে ৪ রাকাত এই মোট ৮ রাকাত যেটা আমরা পড়ে থাকি। বেশিরভাগ মানুষ যেহেতু সুন্নত নফল হিসাবে বুঝে থাকে তাদের সুবিধার জন্য বলছি-এই হাদিস অনুযায়ী যোহরের প্রথমে ৪ রাকাত সুন্নত তারপর ৪ রাকাত ফরয তারপর ২ রাকাত সুন্নত এবং শেষে ২ রাকাত নফল, সব মিলে হবে ১২ রাকাত] ### ২- প্রতিদিন ৩৬০ বার তাসবিহ, তাহলিল, তাকবীর, তাহমিদ আদায় করা ### ২- “আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আদম সন্তানের মধ্যে প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০ গ্রন্থির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় সাদকা রয়েছে।) সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষ চলার রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড় সরাল, কিম্বা ভাল কাজের আদেশ করল অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল, (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল), সে ঐদিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা করল যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে নিল।’’(মুসলিম) আপনারা যদি রাসূল (সাঃ) এর নিম্নে বর্ণিত হাদিসটি লক্ষ্য করেন– রাসূল (সাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যদি প্রত্যেক ফরয স্বলাতের পর- “সুবহা-নাল্লাহ” (আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান)”« ﺱَﻥﺎَﺤْﺑُ ﺍﻟﻠَّﻪ ((৩৩ বার “আলহামদুলিল্লাহ” (সকল প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য) ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ، (৩৩ বার) “আল্লা-হু আকবার” (আল্লাহ সবচেয়ে বড়)” ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ (৩৩ বার) তারপর ১ বার নিম্নোক্ত দোয়া বলে « ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻَ ﺷَﺮِﻳﻚَ ﻟَﻪُ، ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ ﻭَﻟَﻪُ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ ». (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর)। “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।” তাহলে ঐ ব্যক্তির সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমতুল্যও হয়। ( মুসলিম) আর এ দোয়া না পারলে আর ১ বার “আল্লা-হু আকবার” বলে ১০০ পূর্ণ করবে। ***** তাহলে দেখা যাচ্ছে, কোন ব্যক্তি ৫ ওয়াক্ত সলাত আদায় করলেই তার ৩৬০ বার নয় ৫০০ বার উপরোক্ত তাসবিহ, তাহলিল, তাকবীর, তাহমিদ আদায় এমনিতেই হয়ে যাচ্ছে তাছাড়া ৫ ওয়াক্ত সলাত আদায়ে আরোও ১টা বিরাট ফযিলত রয়েছে, যেটা আগেই বলা হয়েছে আর সেটা হোল— “আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতবাসী হবে। (নাসায়ী, হাদীসটি সহীহ) মানুষের আর কি চাওয়া বাকি থাকতে পারে?????? [রাসুল (সাঃ) সলাত শেষে একাকী বসে প্রায় ১৭ টি দোয়া ও জিকির আদায় করতেন কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নাহর জায়গায় সম্মিলিত মুনাজাতের বিদআত চালু করেছি যার হাদিসে কোন প্রমাণ নেই, আমি জানি আমার কথা অনেকের ভালো লাগবে না কিন্তু ভাই আপনি যে কাজটা করছেন সেই কাজটা শরীয়তে অনুমোদিত কিনা সেটা কি আপনার জানা উচিত নয়? ### ৩- ৪০ দিন তাকবীরে উলার সাথে সলাত আদায় করা ### ৩- রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ৪০ দিন জামাতে সলাত আদায় করবে এবং তাকবীরে তাহরিমা পাবে অর্থাৎ সলাত আরম্ভ হওয়ার সময় উপস্থিত থাকবে আল্লাহ তাকে ২টি জিনিষ হতে মুক্তি দিবেন। ১- জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন এবং ২- মুনাফিকি থেকে মুক্তি দিবেন। (সিলসিলাহ সহিহাহ) দেখুন সলফে-সলেহিন কিভাবে আমল করেছেন এ হাদিসের উপর- অকি বিন জাররাহ বলেন প্রায় ৭০ বছর ধরে আ’মাসের প্রথম তাকবীর ছুটে নি। ### ৪- অসুস্থ অবস্থায় দোয়া করা ### ৪- আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) এবং আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁরা উভয়েই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অল্লাহু আকবার’ [ ﻻَ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺍﻟﻠﻪُ ﺃﻛْﺒَﺮُ ] (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আল্লাহ সবচেয়ে বড়) বলে, আল্লাহ তার সত্যায়ন করে বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমি সবচেয়ে বড়।’ আর যখন সে বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহ’ [ ﻻَ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺣﺪَﻩُ ﻻَ ﺷَﺮِﻳﻚَ ﻟَﻪُ ] (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই), তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, আমি একক, আমার কোন অংশী নেই।’ আর যখন সে বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হাম্দ’ [ ﻻَ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻪُ ﺍﻟﻤُﻠْﻚُ ﻭَﻟَﻪُ ﺍﻟﺤَﻤْﺪُ ] (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, সার্বভৌম ক্ষমতা তাঁরই এবং তাঁরই যাবতীয় প্রশংসা), তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, সার্বভৌম ক্ষমতা আমারই এবং আমারই যাবতীয় প্রশংসা।’ আর যখন সে বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অলা হাওলা অলা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ [ ﻻَ ﺇﻟﻪ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﻻَ ﺣَﻮْﻝَ ﻭَﻻَ ﻗُﻮَّﺓَ ﺇِﻻَّ ﺑﺎﻟﻠﻪِ ] (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আল্লাহর প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার বা নড়া-চড়ার শক্তি নেই), তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমার প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার বা নড়া-চড়ার শক্তি নেই।’ নবী (সাঃ) বলতেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার অসুস্থ অবস্থায় এটি পড়ে মারা যাবে, জাহান্নামের আগুন তাকে খাবে না।’’ (অর্থাৎ সে জাহান্নামে যাবে না।) (সহিহ তিরমিযী) ### ৫- বেশি-বেশি দান করা ### ৫- আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন, “ তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো ; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়। আর যে ব্যাক্তি এরও সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ভাল কথা বলে বাঁচে।(বুখারী, মুসলিম) ### ৬- জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করা ### ৬- আনাস (রাঃ) বলেনঃ, “আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহ্র নিকট জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে : “হে আল্লাহ্! ঐ ব্যাক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যাক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে, জাহান্নাম বলে : ‘হে আল্লাহ্ ঐ ব্যাক্তিকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দাও ।” (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ- হাদীস সহীহ) @@@ জান্নাত চাওয়া ওঁ জাহান্নাম থেকে বাচার দোয়া@@@ « ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ». (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘উযু বিকা মিনান্নার)। “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই”। (সহীহ-আবু দাউদ)। ### ৭- গীবত থেকে দূরে থাকা ### ৭- হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ হতে বর্ণিত , নবী (সাঃ) বলেন : “ যে ব্যাক্তি তার (মুসলিম) ভায়ের অনুপস্থিতিতে (তার গীবত করা ও ইজ্জত লুটার সময় প্রতিবাদ করে) তার সম্ভ্রম রক্ষা করে সেই ব্যাক্তি আল্লাহ্র নিকট এই অধিকার পায় যে তিনি তাঁকে দোযখ থেকে মুক্ত করে দেন।”(আহমদ ত্বাবারানী, সহীহুল জামে) কিন্তু এখন অবস্থা তোঁ পুরোই উল্টা, কোথাও কারো নিন্দা করা হলে আমরা প্রতিবাদ না করে বরং নিজেরাই অংশগ্রহন করি তবে নবী (সাঃ)-এর এ হাদিস থেকে তারাই শিক্ষা নিবে যারা জান্নাত যেতে ইচ্ছুক। ### ৮- মানুষের সাথে সর্বোত্তম ব্যাবহার করা ### ৮- মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যাক্তি পছন্দ করে যে , তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক। তার মৃত্যু যেন আল্লাহ্ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখা অবস্থায় আসে এবং লোকেদের সঙ্গে সেই রকম ব্যাবহার করে, যে রকম ব্যবহার সে নিজের জন্য পছন্দ করে ।” (নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) ### ৯- চোখকে পাপ থেকে হিফাযত করা ### ৯- রাসুল (সাঃ) বলেন কিয়ামতের দিন জাহান্নাম দেখবে না। ১।এমন চক্ষু যে আল্লাহ্র ভয়ে কাঁদে ২।এমন চক্ষু যে আল্লাহ্র রাস্তায় জেগে থাকে ৩।এমন চক্ষু যে বেগানা মহিলাকে দেখে নিচু হয়ে যায় (সিলসিলাহ সহীহাহ) ### ১০- ফজর ও আসর সালাত যথাসময়ে আদায় করা ### ১০- আবু বাকর ইবনু ‘উমারাহ ইবনু রুওয়াইয়াহ হতে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি এমন ব্যাক্তি কখনোই জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে সালাত আদায় করে (অর্থাৎ ফজর ও আসর সালাত)। একথা শুনে বাসরার অধিবাসী একটি লোক তাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি নিজে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিকট একথা শুনেছ? সে বললো, হ্যাঁ! (সহীহ মুসলিম) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লার কাছে এই ২ ওয়াক্ত সলাতের রয়েছে আলাদা মর্যাদা আর এই ২ ওয়াক্ত সলাত যথার্থ মর্যাদা দিয়ে তারাই আদায় করতে পারবে যারা ৫ ওয়াক্ত সলাতের ব্যাপারে সচেতন কেননা এই ২ ওয়াক্ত সলাত সবচেয়ে বেশি কষ্টের সময়ে, যারা এই ২ ওয়াক্ত সলাত সঠিক ভাবে আদায় করতে পারে তাদের জন্য বাকি ৩ ওয়াক্ত আদায় করা খুবই সহজ। ### ১১- আন্তরিকভাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- এর স্বীকৃতি দেওয়া ### ১১- ইতবান বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “ যে ব্যাক্তি একমাত্র আল্লহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে , ক্বিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে।” (বুখারী, মুসলিম) বুখারী, মুসলিমের এ হাদিসের অর্থ এই নয় যে, শুধু আপনি ১ বার মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললেন আর জান্নাত চলে গেলেন বরং যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- এর স্বীকৃতি দিবে তখনই তার উপর ইসলামের ফরয বিধানগুলো পালন করা আবশ্যক হয়ে যাবে আর এজন্যই মক্কার মুশরিকরা এই স্বীকৃতি দিতো না কারণ তারা জানতো তাওহিদের এই স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থই হচ্ছে বহু দেবতার ইবাদত বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ্র-ই ইবাদত করতে হবে। ### ১২- কন্যাসন্তানদের ভালভাবে লালন-পালন করা ### ১২- হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার নিকট একটি মহিলা তার দুটি কন্যাকে সঙ্গে করে ভিক্ষা করতে (গৃহে) প্রবেশ করল। কিন্তু সে আমার নিকট খেজুর ছাড়া আর কিছু পেল না। আমি খেজুরটি তাকে দিলাম সে সেটিকে দুই খণ্ডে ভাগ করে তার দুটি মেয়েকে খেতে দিল। আর নিজে তা হতে কিছুও খেলনা। অতঃপর সে উঠে বের হয়ে গেল। তারপর নবী (সাঃ) আমাদের নিকট এলে আমি ঐ কথা তাঁকে জানালাম। ঘটনা শুনে তিনি বললেন, “ যে ব্যাক্তি একাধিক কন্যা নিয়ে সঙ্কটাপন্ন হবে, অতঃপর সে তাদের প্রতি যথার্থ সদ্ব্যবহার করবে, সেই ব্যাক্তির জন্য ঐ কন্যারা জাহান্নাম থেকে অন্তরাল (পর্দা) স্বরূপ হবে।” (বুখারী, মুসলিম) ### ১৩- ফরয সিয়ামের পাশাপাশি বেশি-বেশি নফল সিয়াম পালন করা ### ১৩- রাসুল (সাঃ) বলেন “রোযা (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য ) ঢালস্বরূপ ।” (বুখারী, মুসলিম) “ যে ব্যাক্তি আল্লাহর পথে ১ দিন রোযা রাখবে, আল্লাহ্ ঐ ১ দিন রোযার বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম হতে ৭০ বছর (পরিমাণ পথ) দূরে রাখবেন।” (বুখারী, মুসলিম) সহিহ হাদিসে বর্ণিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিয়াম/রোযা পালনের দিনসমূহ <<< শাওয়াল মাসের রোযা >>> আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোযা পালন করল অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা আদায় করল সে যেন সাড়া বছর রোযা পালন করল।’ (মুসলিম : ২৮১৫) <<< প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা >>> এ তিনটি রোযা আদায় করলে পূর্ণ বছর নফল রোযা আদায়ের সওয়াব লাভের কথা এসেছে। একটি নেক আমলের সওয়াব কমপক্ষে দশগুণ দেয়া হয়। তিন দিনের রোযার সওয়াব দশগুণ করলে ত্রিশ দিন হয়। যেমন আবু কাতাদা রা. হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে— ‘প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা ও এক রমজানের পর পরবর্তী রমজানে রোযা পালন পূর্ণ বছর রোযা পালনের সমান’। (মুসলিম : ২৮০৪) মাসের যে তিন দিন রোযা রাখা হবে সে তিন দিনকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয় ‘আইয়ামুল বিয’। এ তিন দিন হল চান্দ্র মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখ। বিয শব্দের অর্থ আলোকিত। এ তিন দিনের রাতগুলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাঁদের আলোতে আলোকিত থাকে। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এ রোযা গুরুত্বসহকারে আদায় করতেন। হাদিসে এসেছে— ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুসাফির ও মুকিম কোন অবস্থাতেই এ রোযা ত্যাগ করতেন না। (নাসায়ী : ২৩৪৫) <<< সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযা >>> আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই আমি পছন্দ করি যখন আমার আমল পেশ করা হবে তখন আমি রোযা অবস্থায় থাকব।’ (তিরমিযী : ৭২৫) ### ১৪- মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকা ### ১৪- ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, “ রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের জানাবো না, কোন ব্যাক্তি জাহান্নামের আগুনের জন্যে হারাম অথবা (বলেছেন) কার জন্যে জাহান্নামের আগুন হারাম? (তাহলে জেনে রাখ) জাহান্নামের আগুন এমন প্রতিটি লোকের জন্য হারাম, যে লোকদের কাছাকাছি বা তাদের সাথে মিলেমিশে থাকে; যে কোমলমতি নম্র প্রকৃতির ও মধুর স্বভাব বিশিষ্ট।” (তিরমিযী) ### ১৫- সন্তান বা আপনজনদের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করা ### ১৫- আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! কেবলমাত্র পুরুষেরাই আপনার হাদীস শোনার সৌভাগ্য লাভ করছে। সুতরাং আপনি আমাদের জন্যও একটি দিন নির্ধারিত করুন। আমরা সে দিন আপনার নিকট আসব, আপনি আমাদেরকে তা শিক্ষা দেবেন, যা আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা অমুক অমুক দিন একত্রিত হও।’’ অতঃপর নবী (সাঃ) তাদের নিকট এসে সে শিক্ষা দিলেন, যা আল্লাহ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। তারপর তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে কোন মহিলার তিনটি সন্তান মারা যাবে, তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড় হয়ে যাবে।’’ এক মহিলা বলল, ‘আর দু’টি সন্তান মারা গেলে?’ তিনি বললেন, ‘‘দু’টি মারা গেলেও (তাই হবে)।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
No comments:
Post a Comment