নারীদের বিভাগ, মাসজিদ ও জুম’আ
ঢাকা শহরে মেয়েদের নামায পড়ার স্থান গুলোর একটা তালিকা
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

ঢাকা শহরে মহিলাদের নামায পড়ার স্থানগুলো কোথায় তা আমাদের অনেক বোনই জানেন না। তাদের জন্য আজ আমারা একটি তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছি ইনশাহআল্লাহ এই লিস্ট আপডেট হতে থাকবে। নিচে
দেয়া স্থানগুলি ব্যাতিত অন্য কোন স্থান যদি আপনাদের জানা থাকে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানান। ইনশাহআল্লাহ তা আমাদের বোনদের উপকারে আসবে।ঢাকা শাহরের যে সকল স্থানে মেয়েদের নামায পড়ার ব্যাবস্থা রয়েছেঃ
১. ঢাকা নিউ মার্কেট মসজিদ
২. রাইফেলস স্কয়ার (জিগাতলা)
৩. ইস্টার্ন মল্লিকার ছাদে
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ
৫. রাপা প্লাজার ৫ম তলায় জয়ীতার শো-রুম ও মার্কেটের ছাদ (ধানমন্ডি ২৭)
৬. সোবহানবাগ জামে মসজিদ (ধানমন্ডি ২৭)
৭. গাউছিয়া মার্কেটের নিচ তলায় (ধানমন্ডি হকারস এর উল্টোদিকে)
৮. চাঁদনি চকের ৩য় তলায় (নিউমার্কেটের উল্টোদিকে)
৯. তাকওয়া মসজিদ (ধানমন্ডি ১২/এ লেকের সাথে)
১০. বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, পান্থপথ (৪র্থ তলায়)
১১. বায়তুল মামুর মসজিদ, সায়েন্সল্যাব (২য় তলা)
১২. ফেরদৌসি মসজিদ, মিরপুর-১
১৩. মৌচাক মার্কেট (৪র্থ তলা)
১৪. জেনেটিক প্লাজা ১ম তলা (ধানমন্ডি ২৭)
১৫. বায়তুল আমান মসজিদ (ধানমন্ডি ৮)
১৬. উত্তরা ৪ নং, ৬ নং, ৭ নং সেক্টর মসজিদ
১৭. স্কয়ার হসপিটাল
১৮. ডিসিসি সুপার মার্কেট (গুলশান ১)
১৯. উত্তরা হাউস বিল্ডিং, নর্থ টাওয়ার (মার্কেট) ৯বম তলা
২০.রমনা থানা জামে মসজিদ
২১. ইউনাইটেড হসপিটাল (৩য় তলা)
২২. এপলো হসপিটাল (৫ম তলা)
২৩. পিঙ্ক সিটি (বেইজমেন্ট)
২৪. মোহাম্মদপুর এ স্যার সৈয়দ রোড এর আল আমিন মসজিদ
২৫. আযাদ মসজিদ (গুলশান ২)
২৬. নায়েম ভবন মসজিদ (ঢাকা কলেজের পেছনে)
২৭. ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক হসপিটাল (১.৫ তলা)
২৮. টুইন টাওয়ার শপিং সেন্টার (৪র্থ তলা)
২৯. ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ধানমণ্ডি (বেইজমেন্ট)
৩০. বাড়ীধারা এর লেকের পারের মাসজিদ।
অনুগ্রহ করে আপনার জানা তথ্য শেয়ার করুন। ধন্যবাদ
Source: Sister Ishrat Jahan Inu
Edited By: Mainuddin Ahmed Shuvo
মাসজিদে নারীদের সালাত আদায় করা বৈধ না অবৈধ?
মাসজিদে নারীদের সালাত আদায় করা বৈধ না অবৈধ?
হাদীস-১; আব্দুল্লাহ ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণীত রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে(নারীদের) মাসজিদে যেতে নিষেধ করো না। আব্দুল্লাহ ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) অন্য সনদে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করো না। [সহীহ মুসলিম, মুয়াত্তা ইমাম মালিক,আবু দাউদ, মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩২৭,খণ্ড-২]
হাদীস-২; আবু হুরাইরা(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে মাসজিদে যাওয়া থেকে বাধা দিও না, তারা যেন সুগন্ধীবিহীন বের হয়। [আবু দাউদ, দারেমী, বাইহাকী, ইবন খুযাইমা, মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩২৮,খণ্ড-২]
হাদীস-৩; আব্দুল্লাহ ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণীত রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা তোমাদের নারীদেরকে রাত্রিবেলা মাসজিদে যাওয়া থেকে বাধা প্রদান করবে না। [মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩৩২,খণ্ড-২]
হাদীস-৪; আয়িশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নারীরা রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করতো, অতঃপর তাদের চাদর মুড়ি দিয়ে বের হয়ে যেত (তখন) তাদেরকে চেনা যেত না। [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবন মাজাহ, মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩৪৪,খণ্ড-২]
হাদীস-৫; আব্দুল্লাহ ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা তোমাদের নারীদেরকে তাদের মাসজিদে যাওয়ার অধিকার থেকে বাধা দিও না। যখন তারা তোমাদের কাছে অনুমতি চাইবে। [সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, তাবারানী, মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩৩৪,খণ্ড-২]
হাদীস-৬; আব্দুল্লাহ ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কারো স্ত্রী তার নিকট থেকে মাসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায় তখন সে তাকে বাধা দিবে না। রাবী বলেন, উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর স্ত্রী মাসজিদে সালাত আদায় করতেন। উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাকে বললেন, তুমি তো জান আমি কি পছন্দ করি? তখন তিনি(স্ত্রী) জবাবে বললেন, আল্লাহর কসম! আমাকে তুমি নিষেধ না করা পর্যন্ত আমি এ কাজ(মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা) থেকে বিরত হব না। রাবী বলেন- উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে যখন আঘাত(শহীদ) করা হয় তখনও তিনি (তার স্ত্রী) মাসজিদে। [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩৩৬,খণ্ড-২]
হাদীস-৭; আবু হুরাইরা(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে মহিলা সুগন্ধ জাতীয় দ্রব্য (শরীরে) লাগিয়েছে সে যেন ইশার সালাতে হাযির না হয়। [সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাই, ইবন মাজাহ, মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩৪০,খণ্ড-২]
হাদীস-৮; আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ এর স্ত্রী জয়নব আছ ছাকাফিয়া থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ইশার জামা’আতে আসবে তখন যেন সে সুগন্ধি স্পর্শ না করে। [সহীহ মুসলিম, মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস- ১৩৪৩,খণ্ড-২]
হাদীস-৯; আব্দুল্লাহ ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণীত,রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা তোমাদের নারীদেরকে মাসজিদে যাওয়াকে বাধা দিও না। অবশ্য (সালাতের জন্য) তাদের গৃহই তাদের জন্য উত্তম। [আবু দাউদ, বায়হাকী, তাবারানী, মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩৩৩,খণ্ড-২]
এই মর্মে আরো হাদীস রয়েছে যে নারীরা মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে পারবে। ইমাম মালিক, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল এরও এই অভিমত পাওয়া যায়।
ইমাম আবু হানিফা এর অনুসারীরা এই বিষয়ে দু’ভাগে বিভক্ত। তাদের একদল বলে যে নারীরা মাসজিদে সালাত আদায় করতে পারবে আরেকদল বলে যে নারীরা মাসজিদে সালাত আদায় করতে পারবে না।
উপরক্ত ৯টি হাদীস থেকে এটি প্রমানিত যে নারীরা মাসজিদে সালাত আদায় করতে পারবে, আর কেউ যদি নারীদের মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে বাধা দেয় তাহলে সে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরুদ্ধাচারন করলো, কেননা রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে(নারীদের) মাসজিদে যেতে নিষেধ করো না”।
নারীরা মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে পারবে কিন্তু একটি নিয়ম তাদের মেনে চলতে হবে, তা হল তারা সুগন্ধি লাগিয়ে মাসজিদে যেতে পারবে না, কেননা রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে মাসজিদে যাওয়া থেকে বাধা দিও না, তারা যেন সুগন্ধীবিহীন বের হয়”
উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় যে সুগন্ধীবিহীন অবস্থায় মাসজিদে যাওয়া একটি সর্ত। অর্থাৎ নারীদের সুগন্ধীবিহীন অবস্থায় মাসজিদে যেতে হবে।
নারীদের জন্য কোথায় সালাত আদায় করা উত্তম?
নারীদের জন্য তাদের নিজেদের গৃহে সালাত আদায় করা উত্তম। কেননা,
উম্মু সালামা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নারীদের সর্বোত্তম মাসজিদ হচ্ছে, তাদের গৃহের কুঠরি। [তাবারানী, ইবন খুজাইমা, মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩৩৮,খণ্ড-২]
অর্থাৎ, নারীদের জন্য মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা বৈধ কিন্তু তাদের জন্য উত্তম হল তাদের গৃহে সালাত আদায় করা।
যারা বলে নারীদের মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা বৈধ নয়, তাদের জবাবঃ
যারা বলে নারীদের মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা বৈধ নয় তারা দলীল হিসাবে পেশ করে যে,
মা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, যদি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজকের দিনের নারীদেরকে দেখতেন তাহলে তাদের মাসজিদে যেতে বারন করতেন। [মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩৪১,১৩৪২,খণ্ড-২]
উক্ত হাদীর ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত হানাফী ফাকিহ আবুল হাই লাখনোভী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “উক্ত হাদীস দ্বারা নারীদের মাসজিদে যাওয়ার বৈধতা প্রমানিত হয়, কেননা উক্ত হাদিসে আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেছেন যদি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজকের দিনের নারীদেরকে দেখতেন তাহলে তাদের মাসজিদে যেতে বারন করতেন, কিন্তু যেহেতু নিষেধ করেননি সেহেতু একে নিষেধ করার মত কেউ নেই”
প্রকৃত পক্ষেই উক্ত হাদীস নারীদের মাসজিদে যাওয়ার বৈধতা প্রমান করে, কেননা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেছেন যদি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজকের দিনের নারীদেরকে দেখতেন তাহলে তাদের মাসজিদে যেতে বারন করতেন, কিন্তু যেহেতু রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই নারীদেরকে দেখেননি এবং নিষেধও করেননি সেহেতু নারীদের মাসজিদে যাওয়া এখনও বৈধ।
যারা বলে নারীদের মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা বৈধ নয় তারা একটি মিথ্যা দলীল পেশ করে, তারা বলে যে, উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) নারীদের মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করাকে হারাম করেছেন।(নাউযুবিল্লাহ) এত বড় অপবাদ একজন সাহাবীর নামে দিতে তাদের কি বুক কাঁপে না???
কোন হাদীসে এই কথা নেই যে উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) নারীদের মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করাকে হারাম করেছেন। বরং সহীহ হাদীসে আমরা তার উল্টোটা পাই, তা হল-
উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে যখন আঘাত(শহীদ) করা হয় তখনও তিনি (তার স্ত্রী) মাসজিদে। [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩৩৬,খণ্ড-২]
যদি উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) নারীদের মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করাকে হারাম করে থাকেন তাহলে যখন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে যখন আঘাত(শহীদ) করা হয় তখন তার স্ত্রী মাসজিদে কাভাবে থাকে? তার মানে কি উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর স্ত্রী হারাম [যদি উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) নারীদের মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করাকে হারাম করে থাকেন] কাজ করেছেন? না, কখনই না, উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) কখনই নারীদের মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করাকে হারাম করেন নি।
এছাড়াও আমরা জানি যে, মা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) সারা জীবন মাসজিদে সালাত আদায় করতেন।
অর্থাৎ, যারা বলে নারীদের মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা বৈধ নয়, তারা মূলত ভুল কথা বলছেন।
আর মা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) কেন বললেন যে, যদি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজকের দিনের নারীদেরকে দেখতেন তাহলে তাদের মাসজিদে যেতে বারন করতেন?
মা আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) এই কথা বলেছেন তার কারন হল, নারীরা সুগন্ধী লাগিয়ে মাসজিদে যাওয়া শুরু করেছিল। তার প্রমানঃ
আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মাসজিদে যেতে বাধা দিও না। আর তারা মাসজিদে যাবে সুগন্ধীমুক্ত(সুগন্ধী বিহীন) অবস্থায়। আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন- যদি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজকের দিনের নারীদেরকে দেখতেন তাহলে তাদের মাসজিদে যেতে বারন করতেন। [মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩৪১,খণ্ড-২]
উক্ত হাদীসে সুগন্ধী লাগানোর বিষয়টি এবং রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বারন করার বিষয়টি একই সাথে আসায় এটিই প্রমান হয় যে নারীদের সুগন্ধী লাগিয়ে মাসজিদে আসার অবস্থা দেখে মা আয়েশা এই কথা বলেছেন। এই কথার প্রমান বহন করে নীচের হাদিসটি,
আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আজকে আমরা নারী সমাজের যে অবস্থা দেখছি, তা যদি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখতেন তাহলে অবশ্যই তাদের মাসজিদে যেতে বারন করে দিতেন। [মুসনাদ ইমাম আহমাদ;হাদীস-১৩৪২,খণ্ড-২]
সুতরাং, নারীদের জন্য নিজ গৃহে সালাত আদায় করা উত্তম, মাসজিদে সালাত আদায় করা বৈধ তবে শর্ত হল যে সুগন্ধী ছাড়া মাসজিদে যেতে হবে।
ক্যারিয়ার হিসেবে মেয়েদের জন্য এয়ার হোস্টেস / কেবিন ক্রু ক্যারিয়ার বেছে নেয়া প্রসঙ্গে
ক্যারিয়ার হিসেবে মেয়েদের জন্য এয়ার হোস্টেস / কেবিন ক্রু ক্যারিয়ার বেছে নেয়া প্রসঙ্গেঃঅনেকের কাছে এটা স্বপ্নের ক্যারিয়ার।
অধিকাংশ লোকই মনে করে থাকে-
উন্নত জীবনের প্রত্যাশী তরুণীদের জন্যও কেবিন ক্রু একটি আদর্শ পেশা , আকাশে স্বপ্নের ঠিকানা। আকাশে উড়ার সাধ অনেকেরই থাকে। বিশেষ করে এয়ার হোস্টেস/কেবিন ক্রু হয়ে। এ পেশায় আকাশের বুকে উড়ার পাশাপাশি জানা যায়গোটা বিশ্বকেই।
উন্নত জীবনের প্রত্যাশী তরুণীদের জন্যও কেবিন ক্রু একটি আদর্শ পেশা , আকাশে স্বপ্নের ঠিকানা। আকাশে উড়ার সাধ অনেকেরই থাকে। বিশেষ করে এয়ার হোস্টেস/কেবিন ক্রু হয়ে। এ পেশায় আকাশের বুকে উড়ার পাশাপাশি জানা যায়গোটা বিশ্বকেই।
এই পেশার যে লাইফ স্টাইল এবং রোমাঞ্চকর অনুভূতি তা সহজেই তরুণ তরুণীদের আকর্ষণ করে। এছাড়া বেতন ও রোজগারও ভাল। মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন্সগুলো লক্ষাধিক, ব্রিটিশ সিঙ্গাপুর সহ অন্যান্য এয়ার লাইন্সে কেবিন ক্রু ১ লাখ টাকারও বেশি আয় করে থাকে। কেবিন ক্রু যখন যে দেশে যায় তার সে দেশে থাকা খাওয়ার খরচ ও ফ্লাইং আওয়ার ভিত্তিতে ভাতা পেয়ে থাকে। অন্যান্য পেশার চাকরির মত এই পেশায় রয়েছে প্রভিডেন্ট ফান্ড, মেডিকেল বেনিফিট, আবাসন সহ বিভিন্ন সুবিধাবলী।
কথাগুলো শুনে মনে হতে পারে এটি নারীদের জন্য অত্যান্ত সম্মানজনক পেশা।
কিন্তু আসুন দেখি এ ব্যাপারে ইসলামী শারিয়াহ কি বলেঃ
কিন্তু আসুন দেখি এ ব্যাপারে ইসলামী শারিয়াহ কি বলেঃ
বেশীরভাগ ফ্লাইটের এয়ার হোস্টেস হিসেবে নারীদের নিয়োগ দেয়া হয়। আর এয়ার হোস্টেস হিসেবে কোন কুৎসিত চেহারার নারী কখনোই আপনি দেখবেন না। এয়ার হোস্টেস হিসেবে শুধুমাত্র সুন্দরী রমনীদের-ই নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়াও এয়ার হোস্টেস হিসেবে কোন বিবাহিত নারীকে নিয়োগ দেয়া হয় না। কোন মেয়েকে নিয়োগ দেয়ার পর তাকে শর্ত দিয়ে দেয় যে- আপনি আগামী ৫ বছরের মধ্যে বিয়ে করতে পারবেন না। কোন নারীর বয়স ৩৫ ঊর্ধ্ব হয়ে গেলে তাকে আর রাখা হয় না। কোন নারী সন্তান প্রসব করার কারনে যদি তার ফিগার নষ্ট হয়ে যায় তবে তাকে আর রাখা হয় না। এটা আসলে কাস্টমারদের আকৃষ্ট করার একটা কৌশল। এভাবে তারা নারীকে পণ্য বানিয়ে গ্রাহক আকৃষ্ট করছে। এবার আপনারাই বলুন এই পেশাটা সম্মানজনক নাকি নারীর পণ্যায়ণ?
অনেক সময় অনেক পুরুষ যাত্রী টিজ করার উদ্দেশে নারী এয়ার হোস্টেসকে আদেশ করে- আমার সিট বেল্টটা বেঁধে দিন। তখন ঐ নারীর অন্য কোন উপায় থাকে না তাকে সিট বেল্ট বেঁধে দেয়া ছাড়া। ফলে ঐ নারীকে ঐ পুরুষের খুব কাছাকাছি আসতে হয় আর সুযোগে ঐ পুরুষ যাত্রী তাকে টিজ করে।
এবার আপনারাই বলুন এই পেশা কি সম্মানজনক?
আমিই পূর্বেই বলেছি-
এই পেশার যে লাইফ স্টাইল এবং রোমাঞ্চকর অনুভূতি তা সহজেই তরুণ তরুণীদের আকর্ষণ করে। এছাড়া বেতন ও রোজগারও ভাল। মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন্সগুলো লক্ষাধিক, ব্রিটিশ সিঙ্গাপুর সহ অন্যান্য এয়ার লাইন্সে কেবিন ক্রু ১ লাখ টাকারও বেশি আয় করে থাকে। কেবিন ক্রু যখন যে দেশে যায় তার সে দেশে থাকা খাওয়ার খরচ ও ফ্লাইং আওয়ার ভিত্তিতে ভাতা পেয়ে থাকে। অন্যান্য পেশার চাকরির মত এই পেশায় রয়েছে প্রভিডেন্ট ফান্ড, মেডিকেল বেনিফিট, আবাসন সহ বিভিন্ন সুবিধাবলী।
এই পেশার যে লাইফ স্টাইল এবং রোমাঞ্চকর অনুভূতি তা সহজেই তরুণ তরুণীদের আকর্ষণ করে। এছাড়া বেতন ও রোজগারও ভাল। মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন্সগুলো লক্ষাধিক, ব্রিটিশ সিঙ্গাপুর সহ অন্যান্য এয়ার লাইন্সে কেবিন ক্রু ১ লাখ টাকারও বেশি আয় করে থাকে। কেবিন ক্রু যখন যে দেশে যায় তার সে দেশে থাকা খাওয়ার খরচ ও ফ্লাইং আওয়ার ভিত্তিতে ভাতা পেয়ে থাকে। অন্যান্য পেশার চাকরির মত এই পেশায় রয়েছে প্রভিডেন্ট ফান্ড, মেডিকেল বেনিফিট, আবাসন সহ বিভিন্ন সুবিধাবলী।
বর্তমানে মুসলিম নারীরা পশ্চিমা বিশ্বের কাফের নারীদের খোলামেলা ও অবাধবিচরন দেখে এই ধরণের পেশার প্রতি আকৃষ্ট হয়।
কিন্তু আমাদের রব বলেছেনঃ দেশে-বিদেশে কাফেরদের অবাধচাল-চলন যেন তোমাদিগকে মোহে না ফেলে দেয়। এটা হলো সামান্য দিনেরপ্রাপ্তি। এরপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর সেটি হলো অতি নিকৃষ্ট স্থান। (সুরা আলেইমরানঃ ১৯৬-১৯৭)
মহান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ “পার্থিব জীবনের উপর কাফেরদিগকে উম্মত্ত করে দেয়া হয়েছে। আর তারা ঈমানদারদের প্রতি লক্ষ্য করে হাসাহাসি করে। পক্ষান্তরে যারা পরহেযগার তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চমর্যাদায় থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুযী দান করেন। (সুরা বাকারাঃ ২১২)
মুখমণ্ডল কি হিজাবের অংশ নয়?
মুখমণ্ডল কি হিজাবের অংশ নয়?
বর্তমান বিশ্বে হিজাব পশ্চিমা রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাথাব্যথার বিষয়। তারা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হিসেবে চিহ্নিত করে হিজাবের প্রসারকে বাধাগ্রস্থ করতে নানা কৌশল ও প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। এর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক ও নিকোলা সারকোজি, সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জ্যাক স্ট্র, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টসহ বহু রাজনীতি ও শিক্ষাবিদসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পেশার লোক।
২০০২ সালে সাবিনা নামক এক স্কুলছাত্রী উত্তর লন্ডনের ডেনবিগ হাইস্কুল থেকে বহিস্কৃত হন; জার্মানিতে স্কুল শিক্ষিকা ফিরিশতা লুদিন চাকুরি হারান হিজাবের সপক্ষে কথা বলায়। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হিজাব নিষিদ্ধ করে আইন পাশ করে ফ্রান্স। সুইডেনে হিজাব সম্মত পোশাক পরার অপরাধে চাকরি হারাতে হয় অনেক নারীকে। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে সুইডিশ টিভি হিজাব পরা এক মুসলিম উপস্থাপিকার উপস্থাপনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তেমনি অনেক দেশেই হিজাবকে ‘আইনী লড়াই’ এবং নানা রকম বাধা ও প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে পাশ্চাত্য ধারার শিক্ষা ও চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত কিছু কিছু ইসলামিক স্কলার বা মুসলিম রাজনীতিক হিজাবের প্রতি গুরুত্ব প্রদান সত্ত্বেও নিকাবকে অস্বীকার কিংবা অপ্রয়োজনীয় বলে দাবী করছেন। হোসনী মোবারকের আমলে মিশরের ঐতিহ্যবাহী আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শায়খ তানতাবী তো নিকাবকে অস্বীকার করেই বসেছিলেন। তখন এ ঘটনা পুরো মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল। এর আগে এবং পরে বর্তমানকাল পর্যন্ত মেয়েদের নিকাব তথা মুখবন্ধনী হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত কি-না বিষয়টি নিয়ে মাঝে মধ্যে অনেকে কবরে দাফন হয়ে যাওয়া বিতর্ক নতুন করে চাঙ্গা করতে সচেষ্ট হয়েছেন। সর্বশেষ বাংলাদেশে গত ১৪ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) দৈনিক যুগান্তরের ‘ইসলাম ও জীবন’ পাতায় একটি লেখা প্রকাশিত হয় ‘কোরআনের পর্দাকে বোরকায় ঢাকল কারা’ শিরোনামে। লেখাটিতে ইসলামের পর্দা বিধানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ-‘বোরকা’ ও ‘পরপুরুষের সামনে নারীর চেহারা আবৃত রাখা’র বিষয়ে কিছু অশালীন ও অমার্জিত বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। অস্বীকার করা হয়েছে মুখ ঢাকার আবশ্যকীয়তাকে।
মূলত বিষয়টি এক পর্যায়ে ইষৎ বিরোধপূর্ণ ছিল। চেহারা পর্দার অংশ নয় মর্মে কিছু বক্তব্য আছে ঠিকই। কিন্তু নানা মত ও যুক্তি পর্যালোচনার পর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মত ও তাবৎ শরীয়তবিদের সিদ্ধান্ত হলো, হিজাব যেমন অপরিহার্য, ঠিক তেমনি নিকাব তথা মুখ ঢাকাও অত্যাবশ্যক। দু’টিকে পৃথক ভাবার কারণ নেই। কারণ শরীয়তে দু’টো পৃথক কোনো বিষয় নয়। যখন হিজাব শব্দটি আসে তখন তার শর‘ঈ অর্থ এটাই বুঝা যায়, নারী মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখবে। কুরআনে কারীমের সূরা আল-আহযাবে মুসলিম নারীদেরকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, ঘর থেকে বাইরে বেরুবার সময় যেন তারা নিজেদের শরীরে জিলবাব ঝুলিয়ে নেয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩ ﴾ [الاحزاب: ٥٩]
‘হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মু’মিনদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৫৯}
পর্দা বিষয়ে এ আয়াত অত্যন্ত পরিস্কার ও স্পষ্ট। কারণ, এ আয়াত থেকে জানা যায়, পর্দার নির্দেশের মধ্যে মুখমণ্ডলও অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া এ আয়াতে আযওয়াজে মুতাহহারাত (রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুতঃপবিত্র সহধর্মীনীগণ) ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাগণের সঙ্গে মুসলিম মহিলাদেরও সম্বোধন করা হয়েছে। এ আয়াতে ‘জালাবীব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। আরবী অভিধানের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লিসানুল ‘আরাব’ –এ লেখা হয়েছে, ‘জিলবাব’ ওই চাদরকে বলা হয় যা মহিলারা নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকার জন্য ব্যবহার করে। [১/২৭৩]
অভিধান থেকে সরে গিয়ে মুফাসসিরগণের বক্তব্য দেখলেও জানা যায়, ‘জিলবাব’ এমন কাপড়কে বলে যদ্বারা মহিলারা নিজেদের শরীর ঢাকেন। ‘জিলবাব’ অর্থ বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। [কুরতুবী, আল-জামে‘ লিআহকামিল কুরআন : ১৪/২৪৩]
আল্লামা আলূসী রহ. ‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বরাত দিয়ে লিখেন, ‘জিলবাব’ সেই চাদরকে বলে যা মহিলারা দেহের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত উড়িয়ে ছেড়ে দেয়। [রুহুল মা‘আনী : ২২/৮৮]
আল্লামা ইবন হাযম রহ. লিখেন, আরবী ভাষায় ‘জিলবাব’ এমন কাপড়কে বলা হয় যা সারা শরীর আচ্ছাদন করে। যে কাপড় সমস্ত শরীর ঢাকে না, সে কাপড়ের ক্ষেত্রে ‘জিলবাব’ শব্দটির প্রয়োগ সঠিক ও শুদ্ধ নয়। [আল-মুহাল্লা : ৩/২১৭]
তাই শত শত বছর যাবৎ মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র যে দীনদার নারীগণ নিকাব ও হিজাব পরিধান করে আসছেন তাঁরা এই জিলবাব ধারণের বিধানই পালন করছেন।
রূহুল মা‘আনী গ্রন্থের লেখক يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ এর তফসীরে লিখেছেন, শব্দটি অভিধানে কোনো জিনিস নিকটবর্তী করা অর্থে বলা হয়। এখানে শব্দটি ঝুলানো এবং ফেলে দেওয়া অর্থে এসেছে। কারণ, শব্দটিকে এখানে عَلَيۡ (‘আলা) অব্যয় দ্বারা কর্মবাচক ক্রিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে। [রুহুল মা‘আনী : ২২/৮৮]
আল্লামা যামাখশারী রহ. শব্দটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেন, এর অর্থ, মহিলারা নিজেদের মুখমণ্ডলের ওপর চাদর টেনে দেবে। যেমন : কোনো মহিলার মুখমণ্ডল থেকে নিকাব সরে যায় তখন তাকে আরবীতে বলা হয় : (ইউদ্নী ছাওবিকে আলা ওয়াজহিকে) তোমার মুখমণ্ডলের ওপর তোমার কাপড় ফেলে দাও। (প্রাগুক্ত) এ থেকে বুঝা গেল, কুরআন কারীমের এই আয়াতে মুখমণ্ডল ঢাকার স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।
কোনো কোনো সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তাঁরা পর্দা হিসেবে ‘জিলবাব’ ব্যবহারের নিয়ম-পদ্ধতিও বর্ণনা করেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মুখমণ্ডলের ওপর ‘জিলবাব’ ফেলার যে পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন তা হলো, ‘মুসলিম মহিলারা নিজেদের চাদর দ্বারা নিজ নিজ মাথা ও মুখমণ্ডল ঢেকে বের হবে। তারা কেবল একটি চোখ খোলা রাখতে পারে’। [শাওকানী, ফাতহুল কাদীর : ৭/৩০৭]
জনৈক ব্যক্তি ‘উবায়দা ইবন সুফইয়ান ইবন হারিছ হাযরামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে এর নিয়ম জানতে চান। তিনি নিজের চাদরটি উঠিয়ে এমনভাবে ছড়িয়ে দেন যে, তাঁর মাথা ও কপাল ভ্রূ পর্যন্ত ঢেকে যায়। তারপর চাদরের কিছু অংশ মুখমণ্ডলের ওপর এমনভাবে রাখেন যে, গোটা মুখমণ্ডল ঢেকে যায়, কেবল একটি চোখ খোলা থাকে। [তাফসীরে কুরতুবী : ৪/২৩৪]
সূরা আল-আহযাবের উল্লেখিত আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে সকল মুফাসসির মুখমণ্ডল ঢাকা হিজাবের অত্যাবশ্যক অংশ গণ্য করেছেন। আবূ বকর আর-রাযী ও আল-জাস্সাস আল-হানাফী রহ. বলেন, এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, যুবতী মহিলারা ঘর থেকে বাইরে বেরোনোর সময় বেগানা পুরুষের দৃষ্টি থেকে তাদের মুখমণ্ডল আবশ্যিকভাবে ঢেকে রাখবে, যাতে দুষ্ট প্রকৃতির লোক তাদেরকে বিরক্ত করতে না পারে। [আহকামুল কুরআন : ৩/৩৭১]
আল্লামা নাসাফী আল-হানাফী রহ. লিখেছেন, মহিলারা চাদর বা অন্য কিছু নিজেদের মাথার ওপর ছেড়ে দেবে এবং নিজেদের মুখমণ্ডল ও দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে নেবে। [মাদারিকুত- তানযীল : ৩/৭৯]
ইমাম নাববী রহ. স্বীয় গ্রন্থ ‘আল-মিনহাজ’-এ লিখেছেন, যদি ফিতনার আশংকা থাকে তাহলে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য কোনো প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর মুখমণ্ডল ও হাত দেখা জায়িয নেই। আল্লামা রামালী রহ. ‘আল-মিনহাজ’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় এই মতের ওপর আলিমগণের ইজমা’র কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি এও লিখেছেন, সঠিক মতানুযায়ী ফিতনার আশংকা না থাকলেও প্রাপ্ত বয়স্কা নারীকে দেখা হারাম। এর দ্বারা বুঝা যায়, মুখমণ্ডল খোলা অবস্থায় মহিলাদের বাইরে বের হওয়া জায়িয নেই। কারণ, সে অবস্থায় পুরুষ তাদেরকে দেখবে এবং দেখার মাধ্যমে ফিতনা ও কুপ্রবৃত্তির সৃষ্টি হবে। [নিহায়াতুল মিনহাজ ইলা শারহিল মিনহাজ : ৬/১৮৮]
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা রহ. বলেন, বেগানা পুরুষ দেখতে পারে এমনভাবে মহিলাদের মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়িয নেই। দায়িত্বশীল পুরুষদের (স্বামী, পিতা, ভাই প্রমুখের) উচিত ‘আমর বিল মা‘রুফ’ ও ‘নাহি ‘আনিল মুনকার’ তথা ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধে’র অংশ হিসেবে তাদেরকে এমন কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া। অধীনস্থ নারীদের পর্দাহীনতা থেকে বিরত না রাখাও দায়িত্বশীল পুরুষদের জবাবদিহিতামূলক অপরাধ। এজন্য তাদেরকে শাস্তিও দেয়া যেতে পারে। [মাজমূ‘ ফাতাওয়া : ২৪/৩৮২]
হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম রহ. লিখেন, স্বাধীন নারী মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি পর্যন্ত খোলা রেখে সালাত আদায় করতে পারে (এই শর্তে যে সেখানে কোনো বেগানা পুরুষ থাকবে না)।
তবে এ অবস্থায় সে বাজারে এবং পুরুষের ভীড়ের মধ্যে যেতে পারবে না। [ই‘লাম আল-মুওয়াককিঈন : ২/৮০]
আল্লামা সুয়ূতী আশ-শাফিঈ‘ রহ. উল্লেখিত আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে লিখেন, হিজাবের আয়াত সব নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মাথা ও মুখমণ্ডল ঢাকা যে ওয়াজিব তা এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়।[‘আওনুল মা’বুদ : ১১/১৫৪]
হাফিয ইবনুল কারবী মালেকী রহ.ও এই আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে লিখেন, ‘অভিজাত আরব মহিলারা দাসীদের মত মুখমণ্ডল খোলা অবস্থায় ঘোরাফেরা করতো। এতে পুরুষের দৃষ্টি আন্দোলিত হতো। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে নির্দেশ দেন, তারা যেন শরীরের ওপর জিলবাব পরে নেয়। তাহলে তাদের মুখমণ্ডল তাদের দৃষ্টির আড়ালে চলে যাবে। [আত-তাসহীল লি ‘উলুমি তানযীল : ৩/১৪৪]
আল্লামা বাহুতী হাম্বলী রহ. -এরও এই মত যে, সালাতের বাইরে স্বাধীন ও প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর দু’হাতের কবজি এবং মুখমণ্ডলও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতই পর্দার অন্তর্ভুক্ত। [কাশফুল কান্না‘ : ১/২৬৬]
হিজাবের আয়াত নাযিলের পর আযওয়াজে মুতাহ্হারাত ও অন্যান্য মহিলা সাহাবীদের যে কর্মপদ্ধতি ছিল তা দ্বারাও এটা প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের জন্য মুখমণ্ডল ঢাকা জরুরী। যখন এই আয়াত নাযিল হয় :
﴿ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١]
‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩১}
তখন মহিলা সাহাবীদের আমল কী ছিল তা আমরা জানতে পারি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়তমা পত্নী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার বর্ণনা থেকে। তিনি বলেন,
يَرْحَمُ اللَّهُ نِسَاءَ الْمُهَاجِرَاتِ الأُوَلَ لَمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ : {وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ} شَقَّقْنَ مُرُوطَهُنَّ فَاخْتَمَرْنَ بِهِ.
‘আল্লাহ হিজরতকারী অগ্রবর্তী নারীদের ওপর রহমত করুন। যখন তিনি নাযিল করলেন, ‘আর তারা যেন তাদের বক্ষের ওপর ওড়না টেনে দেয়’ তখন তারা তাদের নিম্নাংশের কাপড়ের প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলেন এবং তা দিয়ে ওড়না বানিয়ে নেন।’ [বুখারী : ৮৫৭৪]
আলোচ্য বর্ণনায় ‘ইখতামারনা’ শব্দটি এসেছে। সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকার হাফিয ইবন হাজার ‘আসকালানী রহ. ‘ইখতামারনা’ শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘গাত্তাইনা উজুহাহুন্না’।
অর্থাৎ তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতেন। [ফাতহুল বারী : ৮/৩৪৭]
শুধু পবিত্র কুরআনের তাফসীর নয় চেহারা আবৃত রাখার বিধান সহীহ হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত। আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« وَلاَ تَنْتَقِبِ المَرْأَةُ المُحْرِمَةُ، وَلاَ تَلْبَسِ القُفَّازَيْنِ»
‘আর ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নিকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে।’ [বুখারী : ১৮৩৮] এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও চেহারা ঢাকতেন। এ কারণে ইহরামের সময় নেকাব ও দস্তানা না পরার আদেশ করতে হয়েছে।
আয়েশা রাদিআল্লাহু ‘আনহা হজ অবস্থায় মহিলা সাহাবীদের পর্দার যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করা যায় পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা আন্তরিক ছিলেন। তাঁরা স্বাভাবিক অবস্থায় তো বটেই ইহরাম অবস্থায় যখন মুখ ঢাকতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানেও পরপুরুষের সামনে থেকে নিজেদের চেহারা আড়াল করেছেন। আয়েশা রাদিআল্লাহু ‘আনহা বলেন,
كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا إِلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ.
‘আমরা ইহরাম অবস্থায় সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি হন, আমাদের সঙ্গীনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি।’ [আবূ দাঊদ : ৫৩৮১; বাইহাকী : ৩৩৮৮]
ইফক-এর ঘটনা থেকেও আমরা মুখ ঢাকার প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারি। বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পথে এক স্থানে বিশ্রামের জন্য শিবির স্থাপন করেন। এই সফরে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে শিবির থেকে বাইরে যান। ফিরে এসে দেখেন শিবির গুটিয়ে কাফেলা চলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় তিনি লক্ষ্য করেন তাঁর গলার হারটি কোথাও হারিয়ে গেছে। যেখানে হারটি পড়ার সম্ভাবনা ছিল তিনি সেখানে গেলেন এবং তালাশ করলেন, কিন্তু পেলেন না। ফিরে এসে দেখলেন কাফেলা চলে গেছে। তিনি সেখানেই বসে পড়েন। এদিকে কাফেলার লোকেরা তাঁর পাল্কিটি উষ্ট্রীর পিঠে রেখে দেন। তারা ধারণা করেন, তিনি পাল্কির মধ্যে বসা থাকলেন। ‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তখন যথেষ্ট শীর্ণকায় ও হালকা-পাতলা ছিলেন। এ কারণে পাল্কিটি যারা উঠিয়ে ছিলেন তারা বুঝতেই পারেন নি তিনি ভেতরে আছেন কি-না। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি সেখানে বসে থাকতে থাকতে ঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। সাফওয়ান ইবন মুওয়াত্তাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন কাফেলার পশ্চাৎগামী ব্যক্তি। তিনি দেখেন এক ব্যক্তি শুয়ে আছে। নিকটে এসে দেখে আমাকে চিনতে পারেন। কারণ, হিজাবের পূর্বে তিনি আমাকে দিখেছিলেন। আমাকে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে তিনি জোরে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করেন। সাফওয়ানের শব্দ শুনে আমি উঠে বসি এবং খুব দ্রুত চাদর মুড়ি দিই। আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আমি আমার চাদর দ্বারা আমার মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলি। [বুখারী : ৪৪৭৩; মুসলিম : ২৭৭০]
আসমা’ বিনত আবী বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমরা পুরুষদের থেকে আমাদের চেহারা আবৃত রাখতাম। [মুস্তাদরাক হাকেম : ১৬৬৪]
ফাতিমা বিনতুল মুনযির রহ. বলেন, ‘আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম।’ [ইমাম মালেক, মুয়াত্তা : ১/৩২৮; হাকিম, মুসতাদরাক : ১/৪৫৪]
এই বিবরণ থেকে জানা গেল, মুখমণ্ডলের পর্দার বিষয়টি ইজমা’র ভিত্তিতে স্থিরকৃত হয়েছে। কোনো মাযহাবের কোনো একজন উল্লেখযোগ্য ‘আলিম এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন নি। শায়খ ইবনে বায রাহ., শায়খ ইবনে উছাইমীন ও শায়খ ইবনে জিবরীনও একই ফতোয়া দিয়েছেন। [দেখুন : রিসালাতুন ফিল-হিজাবি ওয়াস-সুফূর : ১৯; ফাতাওয়া উলামাইল বালাদিল হারাম : ১১৬৯]
মুফতী মুহাম্মদ শাফী ‘উছমানী রহ. লিখেছেন, ‘ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্য থেকে ইমাম মালিক, ইমাম শাফি’ঈ ও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. তিনজনই মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার মোটেই অনুমতি দেন নি- তা ফিতনার আশংকা থাকুক বা না থাকুক। ইমাম আবূ হানীফা রহ. ফিতনার আশংকা যদি না থাকে- এই শর্তে খোলা রাখার কথা বলেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এই শর্ত পূরণ হবার নয়, তাই হানাফী ফকীহগণ গায়র মাহরাম পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার অনুমতি দেন নি।’ [মা‘আরিফুল কুরআন : ৭/২১৪]
তেমনি এটাও সঙ্গত নয় যে, মহিলাদের সারা শরীর ঢাকা থাকবে আর মুখমণ্ডল থাকবে খোলা। অথচ মানুষের প্রথম দৃষ্টিটিই পড়ে মুখের ওপর। তারপর সেখান থেকেই অন্তরে খারাপ বাসনার সৃষ্টি হয়। পবিত্র কুরআনে নারীদের হিজাব এবং তদসংক্রান্ত প্রায় আটটি আয়াত আছে। সেগুলো থেকেও একথা জানা যায়, শরীয়তের দাবী কেবল শরীর ঢাকা নয়, বরং মুখমণ্ডল ঢাকাও জরুরী।
ওইসব আয়াতের সারকথা হলো, নারীরা অতি প্রয়োজন ছাড়া নিজেদের ঘর থেকে বাইরে বের হবে না। যদি তাদের নিতান্ত প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয় তাহলে বড় ও মোটা চাদর দিয়ে নিজেদের শরীর ঢেকে বের হবে। পুরুষ নারীকে দেখবে না এবং নারীও বিনা প্রয়োজনে পুরুষকে দেখবে না। নারীদের কাছে যদি পুরুষদের কোনো জিনিস চাইতে হয় তাহলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। মহিলাদের গায়র মাহরাম (বেগানা) পুরুষের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হলে পর্দার আড়াল থেকে বলবে, কণ্ঠস্বর কঠোর রাখবে, সুমিষ্ট মোলায়েম স্বরে নয়। সাধারণ অবস্থায় মাহরাম পুরুষের সামনেও মুখমণ্ডল হাত এবং পা ছাড়া নিজেদের দেহের অন্য কোনো অঙ্গ খোলা রাখবে না। [দেখুন, আল-আহযাবের আয়াতসমূহ-৩২, ৫৩, ৮৯; আন-নূর-২৪, ৩০, ৩১, ৫৮, ৬০]
আধুনিককালের প্রখ্যাত আলিম ও ফকীহগণও একই মত পোষণ করেন। পাক-হিন্দের আলিমদের কথা না হয় বাদ দিন। কারণ, তাদের অধিকাংশই হানাফী এবং তাদেরকে ফিকহ সংক্রান্ত মাসআলা ও বিষয়সমূহে কট্টরপন্থি মনে করা হয়। কিন্তু আরব বিশ্বের সমকালীন সকল আলিম ও মুফতীদের মতও এই যে, মহিলাদের জন্য মুখমণ্ডল ঢাকা একান্ত আবশ্যক। তাদের মধ্যে শায়খ আব্দুর রহমান ইবন সাদী, মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম আলে আশ-শায়খ, মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানকীতী, শায়খ ‘আবদুল্লাহ ইবনু বায, শায়খ আবু বাকর জাবির আল-জাযায়িরী, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু গুনায়মীন, শায়খ আবদুল্লাহ ইবনু জুবরীন, শায়খ সালিহ আল-ফাওযান, শায়খ বাকর ইবনু ‘আবদিল্লাহ আবূ যায়েদ, মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইসমা’ঈল আল-মাকদাম, আবূ, ইসহাক আল-হুওয়ায়তী, মুসতাফা আল-‘আদাবী, মুহাম্মাদ হাসসান ও আরো অনেকের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং ফকীহগণের চূড়ান্ত ফাতওয়াসমূহ থাকার পরও কোনো ‘আলিম নিকাবকে অস্বীকার করতে পারেন না। যারা মুখ না ঢাকার ব্যাপারটি জোর করে সপ্রমাণ করতে চান তারা খেয়াল করেন না যে, তাদের এহেন মত পশ্চিমা ও তাদের ভাব শিষ্যদের অতি পুলকিত করবে। তারা এই রায়কে ব্যবহার করবে হাতিয়ার হিসেবে।
পরপুরুষের সামনে নারীর মুখমণ্ডল প্রদর্শন বৈধতার পক্ষের প্রবক্তাগণ প্রমাণের জন্য পূর্বোক্ত সূরা নূরের ৩১ নং আয়াত তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্য, ‘সাধারণত প্রকাশমান সৌন্দর্য’ এর ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস ও আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করা হয় যে, এ দ্বারা করতল ও চেহারা উদ্দেশ্য। অথচ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ আলাদা। আর আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর উদ্ধৃত উক্তি আলোচ্য দাবীর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। কেননা একাধিক সহীহ সনদে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আয়াতের আলোচ্য অংশ ‘ইল্লা মা যাহারা মিনহা’-এর অর্থ ‘কাপড়’। [দেখুন, তাবারী, জামিউল বায়ান : ১৭/২৫৬-২৫৮; ইবন আবী শাইবা, আল-মুসান্নাফ : ৯/২৮০]
এ অংশের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত কুরআন ব্যাখ্যাতা ইবন কাছীর রহ. বলেন, ‘আয়াতের অর্থ, পরপুরুষের সামনে নারী তার কোনো ধরনের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না। তবে যা আবৃত রাখা সম্ভব নয় তার কথা আলাদা। এর দৃষ্টান্ত দিয়ে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন,
كَالرِّدَاءِ وَالثِّيَابِ يَعْنِي عَلَى مَا كان يتعاطاه نِسَاءُ الْعَرَبِ مِنَ الْمِقْنَعَةِ الَّتِي تُجَلِّلُ ثِيَابَهَا وَمَا يَبْدُو مِنْ أَسَافِلِ الثِّيَابِ. فَلَا حَرَجَ عليها فيه لأن هذا لا يمكنها إخفاؤه
‘চাদর ও কাপড়।’ অর্থাৎ আরবের নারীগণ যে বড় চাদরে তাদের পরনের কাপড় ঢেকে বের হতেন এবং কাপড়ের নীচের অংশ, যা চলার সময় চাদরের নীচ দিয়ে প্রকাশিত হয়ে যেত তা যেহেতু ঢেকে রাখা সম্ভব নয় তাই এতে কোনো দোষ নেই। [ইবন কাছীর : ৬/৪১]
‘হাসান বসরী, মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন, ইবনুল জাওযী, ইবরাহীম নাখায়ী প্রমুখ মনীষীও অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন।’ [তাফসীরুল কুরআনিল আযীম : ৩/৩১২]
পবিত্র কুরআনের শব্দ ও বাক্য, আলোচ্য বিষয়ের হাদীস ও আছার এবং উসূলে ফিকহের নীতি ও বিধান ইত্যাদি বিবেচনায় ইবন মাসউদ রারাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যাখ্যাই অগ্রগণ্য। কারণ সূরা আল-আহযাবের ৫৯ নম্বর আয়াতে জিলবাবের একাংশ চেহারার ওপর নামিয়ে মুখমণ্ডল আবৃত রাখার আদেশ করা হয়েছে। তা সূরা নূরের আলোচ্য আয়াতে ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যাখ্যাকেই প্রতিষ্ঠিত করে। তাছাড়া সহীহ হাদীসসমূহে নারীদের চেহারা ঢেকে রাখার যে নির্দেশ ও বিবরণ দেখা যায় তা-ও তাঁর ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে।
তদুপরি যারা মুখ খোলার পক্ষে বলেছেন প্রথমত তাদের মতটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মত নয় আর দ্বিতীয়ত তাঁরা সবাই এর জন্য নিরাপদ ও ফিতনামুক্ত হওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। আর বলাবাহুল্য যে বর্তমান যুগে ফিতনার বিস্তার সর্বত্র। মানুষের মধ্যে দীনদারী ও আল্লাহভীতি হ্রাস পেয়েছে। লজ্জা ও লজ্জাবনত মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। ফিতনার প্রতি আহ্বানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাজসজ্জার নানা উপায় ও উপকরণ আবিষ্কৃত হওয়ায় ফিতনার মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সব মুসলিম বোনকে যথাযথভাবে পর্দা করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
LIKE THIS:
আর নারীরও রয়েছে অধিকার
ইসলামের নারী সংক্রান্ত বিধান কি সেকেলে বিধান/তালেবানি বিধান/মধ্যযুগীয় বিধান ????

বেশ কয়েকদিন আগে একটি টক শো তে একটা তথাকথিত আধুনিক মেয়ে ফোন করে বাংলা ইংরেজী মিলিয়ে বিব্রত করল। আপনাদের ইসলাম কি বাংলাদেশকে তালেবানি দেশ বানাতে চান কিনা। যারা এরসমর্থন করে তারা কি এই সেকেলে ধর্ম এদেশে বাস্তবায়িত করে দেশটাকে মধ্যযুগীয় অবস্থানে পিছিয়ে নিতে চায়। ঐ স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন মহিলার মতে ইসলামের বাস্তবায়ন হলে দেশ পিছিয়ে যাবে। আমরা জানি, ইসলামি আইনের বাস্তবায়ন হলে ন্যায় বিচার কায়েম হলেও, অনেক ধরনের মানুষের সমস্যা হবে।
আসুন দেখা যাক এই ধরনের তথাকথিত আধুনিক, কু-রুচিপূর্ণ, অশ্লীল, ইয়াবা প্রজন্মের মেয়েদের কি কি সমস্যা হবেঃ
আসুন দেখা যাক এই ধরনের তথাকথিত আধুনিক, কু-রুচিপূর্ণ, অশ্লীল, ইয়াবা প্রজন্মের মেয়েদের কি কি সমস্যা হবেঃ
১) তারা তাদের বিভিন্ন কসমেটিক দিয়ে ঘষে মেজে সাদা করা চামড়া জনসম্মুক্ষে প্রদর্শন করতে পারবেনা।
২) বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চামড়া প্রদর্শন করে যে ইনকাম হত তা একদম বন্ধ হয়ে যাবে।
৩) চামড়া দেখিয়ে হাজারো যুবককে জাহান্নামের পথে টানতে পারবেনা।
৪) বিভিন্ন নাইট ক্লাবে ড্যান্স করতে পারবেনা।
৫) রেড ওয়াইন সহ বিভিন্ন কালারের পানি পান করতে পারবেনা।
৬) বয় ফ্রেন্ড এর নামে বিয়ের আগে হাজার ছেলের সাথে লীলা খেলা করতে পারবেনা।
৭) পার্ট টাইম এবং ফুল টাইম আবাসিক হোটেলে গিয়ে পতিতাবৃত্তি করতে পারবেনা।
৮) বিভিন্ন পার্কে শুধু ফুল আর পাখি দেখা যাবে, কিন্তু তাদের ডলাডলি করতে করতে শুয়ে যাওয়ার কঠিন দৃশ্য বন্ধ হয়ে যাবে।
৯) বিয়ের পর কপালে লাল টিপ দিয়ে ফুটপাতে দাড়িয়ে নারী অধিকার আন্দোলনের নামে ভন্ডামী করতে পারবেনা।
১০) বিয়ের পর স্বামী এবং সন্তানের প্রতি কঠিন কর্তব্য পালন করতে হবে।
যে সমস্ত নারীরা উপরে উল্লেখিত কাজ সমুহকে সহজেই মেনে নিয়ে উল্লাসের সাথে করতে চান তাদের রুচিবোধ প্রশ্নবিদ্ধ রয়েছে। যাদের মধ্যে উপরে উল্লেখিত গুনাবলি রয়েছে তাদেরকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করায় একজন রুচিশীল পুরুষের প্রবল আপত্তি রয়েছে। ঐ সমস্ত দুশ্চরিত্রানারীদেরকে কোন দুশ্চরিত্র পুরুষই কেবল জীবনসঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। কোন রুচিশীল পুরুষের পক্ষে এটা সম্ভবই নয়।
কেননা মহান আল্লাহ্ বলেনঃ “দুশ্চরিত্রা নারীদুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য, আর দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য, আর সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য, আর সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্যে, — তারা যা বলে এরা তা থেকে মুক্ত। তাদের জন্য রয়েছে পরিত্রাণ ও সম্মানজনক জীবিকা” [সূরা আন-নূর ২৬]
ঐ সমস্ত দুশ্চরিত্রানারীরা কেবল সমাজে বিশৃঙ্খলাই সৃষ্টি করতে থাকে। তারা উলঙ্গপণায় লিপ্ত হয়ে অপর পুরুষের চরিত্রকে হরণ করতে চায়।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ “ যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার পছন্দ করে, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সূরা আন-নূরঃ ১৯)
বর্তমানে নারীরা পশ্চিমা বিশ্বের কাফের নারীদের খোলামেলা ও অবাধবিচরন দেখে নিজেদেরকে পরাধীন ও অধিকারহীনা মনে করে । তারা মনে করে ইসলাম নারীদেরকে শোষণ করে। যদিও কোন মুসলিমের উচিৎ নয় কোন কাফিরদের অবাধ বিচরন ও উন্নতি দেখে বিভ্রান্ত হওয়া। তাদের উচিৎ সর্বদা আল্লাহ্র উপরে অটল থাকা।
আমাদের রব বলেছেনঃ দেশে-বিদেশে কাফেরদের অবাধচাল-চলন যেন তোমাদিগকে মোহে না ফেলে দেয়। এটা হলো সামান্য দিনেরপ্রাপ্তি। এরপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর সেটি হলো অতি নিকৃষ্ট স্থান। (সুরা আলেইমরানঃ ১৯৬-১৯৭)
এখন যদি মেনে নেই মুসলিম নারীদের অধিকারও ঠিক সেই রকম হওয়া উচিৎ যে রকম পশ্চিমা মিডিয়াবলে তবে মনে হবে মহান আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবন ব্যাবস্থায় নারীর অধিকারটা সেকেলে ।কিন্তু সত্যি কথা বলতে পশ্চিমা মিডিয়া নারীদের যে অধিকারের কথা বলে তা আসলে আড়ালেনারীর শরীর শোষণ করে, সম্মানের অবমাননা করে আর তাদের আত্মাকে প্রবঞ্চিত করে। তারা আসলে নারীদেরকে পরিণতকরেছে রক্ষিতাতে, ভোগের বস্তুতে, উপ-পত্নীতে, রংধনুর প্রজাপতিতে। এই নারীরা আসলেপণ্য সামগ্রী বিভিন্ন সেক্স মিডিয়াতে, আর ভোগ-বিলাসীদের কাছে, যারা লুকিয়ে থাকে আর্ট আর কালচারের রংচমক পর্দার পেছনে।
পক্ষান্তরে ইসলাম নারীদের দিয়েছে তাদের প্রাপ্যমান-সম্মান আর মর্যাদা আজ থেকে আরো ১৪০০ বছর আগে। ইসলাম ধর্মের উদ্দেশ সব সময়ই ছিল আমাদের চিন্তাধারাকে আধুনিক করা। আমাদের দেশের অধিকাংশ নারীরা ভাবে ইসলাম তাদেরকেপর্যাপ্ত অধিকার দেয়নি। তারা ভাবে ইসলাম ধর্মে নারীদের যেসব বিধি-বিধান সম্পর্কেবলা হয়েছে তা সেকেলে। তাই আসুন একটু বিশ্লেষণ করে দেখি নারীর অধিকারের ক্ষেত্রেইসলাম ধর্ম কি আধুনিক নাকি সেকেলে?
তারপূর্বে আমি আরেকটি বিষয়টি অবগত করতে চাই যে আপনি কি জানেন পশ্চিমা বিশ্বে যে সমস্ত খ্রিষ্টানরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে তাদের মধ্যে ৭০% -ই নারী। এর কারন যখন তারা পশ্চিমা কালচারের নারী স্বাধীনতার নামে তাদের শরীরের শোষণ এবং সম্মানের অবমাননা বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে উপলব্ধি করতে পারে। তাদের ভণ্ডামি ধরতে পারে তখন ঐ নারীরা তাদের ক্ষোভে, ঘৃণায়, লজ্জায় ঐ পশ্চিমা সংস্কৃতিকে ধিক্কার দেয়। এবং ইসলামে নারীর স্বাধীনতা ও সৌন্দর্য দেখেমুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
তাই এবার আসুন একটু বিশ্লেষণ করে দেখিনারীর অধিকারের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম কি আধুনিক নাকি সেকেলে?
# ইংল্যান্ডে ১৮৭০ সালে একটি আইন পাশ করে যার পর থেকে বিবাহিত মহিলারা সম্পদের মালিক হতে পারত। ইসলামে নারীর অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করেছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে। ইসলামে কোন মুসলিম মহিলা কোন পুরুষের অনুমতি ছাড়াই সম্পদ বিক্রি বা খরিদ করতে পারে। অতএব ইসলাম ধর্ম কি আধুনিক না সেকেলে?
# ইসলামে নারী যদি কোন কাজ করতে চাইলে তবে ইসলামে তাকে সেই কাজ করার অনুমতি দেয়। নারীকে ইসলাম কোন কাজেই করতে বাঁধা দেয় না যদি নাসে কাজটা ইসলামী শারিয়াহ বিরোধী হয়। যেমনঃ মডেলিং করা, ড্যান্সবারে কাজ করা ইত্যাদি। কিছু কাজ রয়েছে যা পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্যই হারাম। যেমনঃ মদের ব্যাবসাকরা, সুদের কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা। কোন ইসলামী সমাজে নারীরা যেসব পেশা বেছে নিতে পারে তা হলঃ ডাক্তারি, সেবিকা, শিক্ষকতা ইত্যাদি। তবে পেশাগত দিক দিয়ে তাদের অবশ্যই হিজাব পালন করতেহবে।
কেননা আমাদের মালিক বলেনঃ “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন,তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকেচেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরা আল আহজাবঃ ৫৯)
“তোমরা মূর্খতা যুগের মেয়েদের মতনিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। নামায কায়েম করবে,যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। (সুরা আল আহজাবঃ ৩৩)
ইসলামে নারীদের কোন অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতা নেই। তাদের যদি ইচ্ছা হয় তবে কোন অর্থনৈতিক পেশায় নিযুক্ত হতে পারবে। তাদেরকে কোন মতেই কোন পেশায় নিযুক্ত হতে বাধ্য করা যাবে না। ইসলামে পরিবার পরিচালনার দায়ভার সম্পূর্ণ পুরুষের উপর দেয়া হয়েছে। নারীরা এক্ষেত্রে একেবারেই স্বাধীন। একজন নারী যখন অবিবাহিত অবস্থায় থাকে তখন তার ভরন-পোষণের দায়িত্ব তারবাবা অথবা ভাইয়ের উপর। আবার যখন বিবাহিত অবস্থায় থাকে তখন তার ভরন-পোষণের দায়িত্ব তার স্বামী অথবা ছেলে-সন্তানের উপর। বর্তমানে পরিবারে অভাব-অনটনের কারনে যদি কোননারী অর্থ উপার্জন করতে চায় তবে সেটা তার একান্তই ইচ্ছা স্বাধীনতার উপর নির্ভরকরে। এক্ষেত্রে কেউ তাকে অর্থ উপার্জনে বাধ্য করতে পারবে না। এভাবে একজন নারীকে ইসলাম কতটা স্বাধীনতা দিয়েছে তা একটু চিন্তা করে দেখুন। তাই নারীরা কোন পেশায় জরিত হতে পারবেনা, কোন কাজ করতে পারবে না একথা সম্পূর্ণ ভুল। ইসলাম নারীকে গৃহবন্দি করে রাখেনি।
বরং একটি আধুনিক স্বনির্ভর ইসলামিক সমাজ গঠনে নারীদের কিছু পেশা বেঁছে নেয়াই উত্তম। যেমন প্রসূতি বিদ্যার ডাক্তারি, নার্স, শিক্ষিকা ইত্যাদি। এই সমস্ত পেশায় নারীদের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। কেননা কোন মহিলা কোন পুরুষ ডাক্তারের কাছে নিজের একান্ত কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে। তাই নারীরা যদি এই ধরণের পেশাবেঁছে নেয় তবে সমাজ আরো সুশৃঙ্খল হবে। মহিলা রোগীদের জন্য থাকবে মহিলা ডাক্তার,নারী শিক্ষার জন্য নারী শিক্ষিকা। এর মাধ্যমে তাদের আব্রু-সম্ভ্রমও সংরক্ষিত থাকবে। এথেকেই বোঝা যায় ইসলাম নারীদেরকে গৃহবন্দী করে রাখে না। বরং নারীকে পূর্ণস্বাধীনতা দেয় তাও আবার সম্মানের সাথে। পৃথিবীর এমন কোন জীবন ব্যাবস্থায় এই ধরনের ব্যাবস্থাপনা নেই যেখানে নারীকে স্বাধীনতা দেয়ার পাশাপাশি তাকে দিয়েছে সম্মান, রক্ষা করেছে তার আব্রু। এভাবে ইসলাম একটি সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে অগ্রণী ভুমিকা রাখে। ইসলাম ব্যাতিত এমন আর কোন সমাজ ব্যাবস্থা আছে যেখানে নারীরা নিজেদের সম্ভ্রম বজায় রেখে এতটা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে?
অতএবইসলাম কি আধুনিক না সেকেলে???
# ইসলাম নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষদের জন্য মোহর প্রদান করা ফরজ করেছে। স্ত্রীকে পর্যাপ্ত মোহর প্রদান ব্যাতিত কোন বিয়েই ইসলামে বৈধ নয়। ঐ মোহরের মালিক একমাত্র স্ত্রী। তার ঐ সম্পদ ব্যয়করার জন্য কারো অনুমতির প্রয়োজন নেই। সে চাইলে ঐ সম্পদ দিয়ে ব্যাবসা করতে পারে বা অন্যযে কিছু করতে পারে। আমি পূর্বেই বলেছি ইসলাম নারীকে পারিবারিক ব্যয়ভার বহন থেকে মুক্ত করেছে তাই তার এই মোহর পরিবারের পিছনে ব্যয় করার কোন প্রয়োজন নেই। তবে যদি সে চায় তাহলে করতে পারে। এক্ষেত্রে কখনোই তাকে জবরদস্তি করা যাবে না। তাই ইসলাম নারীকে দিয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা। এভাবে মোহর প্রদান করে স্ত্রীকে স্বাবলম্বী করার পদ্ধতি ইসলাম ব্যাতিত পৃথিবীর আর কোন সমাজ ব্যাবস্থায় আছে কি?
এভাবে ইসলাম নারীকে দিয়েছে উচ্চ আসন। তাহলে ইসলাম কি আধুনিক না সেকেলে?
আজকাল আমাদের সমাজে এই মোহরকে সংকুচিত করে দেয়া হয়েছে। তারা মোহর নির্ধারণ করে ৫০,০০০টাকা বা ৮০,০০০ টাকা। যদিও তারা মোহরের পরিমান অত্যন্ত কম নির্ধারণ করে তার পরে সেটুকুও প্রদান করে না। কিন্তু বিয়ে উপলক্ষে খরচ করে ২ থেকে ৪ লক্ষ টাকা। যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। বরং এত টাকা অপচয় না করে স্ত্রীকে মোহর হিসেবে দেয়াকেই ইসলাম উৎসাহিত করে। সম্পূর্ণ মোহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিয়ে বৈধ হবে না।
আজকাল আমাদের সমাজে এই প্রথার উল্টো প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা হল যৌতুক প্রথা। যেখানে মেয়ে উল্টো অর্থ-সম্পদ দিয়ে কোন ছেলেকে বিয়ে করবে। আর এই প্রথার অভিশাপ সম্পর্কেকারো অজানা নয়। এই প্রথার অভিশাপ কত যে মাসুম মেয়ের যে জীবন গেল! এই প্রথা হচ্ছে অমুসলিম হিন্দুদের প্রথা। পক্ষান্তরে ইসলামের বিধানে রয়েছে শাশ্বত কল্যাণ। তাহলে ইসলাম কি আধুনিক না সেকেলে?
# ইসলাম নারীদের জন্য শিক্ষা ব্যাবস্থা সুনিশ্চিত করেছে। অনেকেরই ধারনা ইসলাম নারীদেরকে শিক্ষা অর্জন করার অনুমতি দেয় না। ইসলাম নারীদেরকে ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করেছে।তাদের ধারনা নারীরা ঘরের গৃহস্থালি কাজ করবে, মায়ের সাথে রান্না-বান্নায় সাহায্যকরবে, তাদেরকে শিক্ষা গ্রহন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের এই ধারনাগুলো সম্পূর্ণ ভুল। সত্যি কথা বলতে ইসলামে “প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্যজ্ঞান অর্জন করা ফরজ। অর্থাৎ জ্ঞান অর্জন করা নারীদের জন্য বাধ্যতামুলক অর্থাৎ এটা আবশ্যিক। পৃথিবীর এমন আর কোন ধর্মে নারীদের জন্য জ্ঞান অর্জন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে? তাহলে কিভাবে ইসলাম নারীদেরকে গৃহবন্দী করে রাখল?
তাই ইসলামকি আধুনিক না সেকেলে???
ইসলামে সর্বপ্রথম যে আয়াত নাযিল হয় তা হলঃ “পাঠ কর তোমার পালনকর্তার নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিকরেছেন মানুষকে জমাটবাঁধা রক্ত থেকে। পাঠ কর, তোমার পালনকর্তামহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সুরা আলাকঃ ১-৫)
তাই আল্লাহ্ সুবানাহুতায়ালা আমাদেরকে সর্বপ্রথম যে আদেশ দিয়েছেনতা নামজ কায়েম করার জন্য নয়, রোজার জন্য নয়, হালাল-হারাম বেছে চলার জন্য নয় বরং তা হল পড়াশোনা করার, জ্ঞান অর্জনকরার। ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক নারীই রয়েছেন যাদের মধ্যে ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। যেমনঃআবু বকর (রা) এর মেয়ে আয়েশা (রাঃ)। তিনি তৎকালীন সময়ে খলীফাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্নদিক-নির্দেশনা দিতেন। চিন্তা করুন একজন নারী একজন প্রেসিডেন্টকে দিক-নির্দেশনাদিতেন। এই অধিকার ইসলাম নারীদেরকে দিয়েছে ১৪০০ বছর আগে। এছাড়া তিনি ছিলেন অত্যান্ততীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারিণী। তিনি একজন নারী হয়ে একাই ২২১০ টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। ইসলাম ধর্মের উপর ছিল তার অগাধ পাণ্ডিত্য। তিনি একাই ৮৮ জনেরও বেশি পণ্ডিতকে শিক্ষা দান করেছেন। অর্থাৎ তিনি ছিলেন পণ্ডিতদের পণ্ডিত। এছাড়াও সাফিয়া (রাঃ)।তিনি ছিলেন ফিকাহ এর উপর একজন বিশেষজ্ঞ। ইমাম শাফিইকে আমরা অনেকেই চিনি, যিনি একটি মাহজাবের প্রবর্তক, তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন একজন নারী থেকে যার নাম নাফিসা (রঃ),যিনি ছিলেন শিক্ষিকা। এছাড়াও এমন আরেক নারী হচ্ছেন উম্মে আরদাতা (রঃ), যিনি ছিলেন বিজ্ঞান শাস্ত্রের উপরে বিশেষজ্ঞ। এমন আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে।
এখন পর্যালোচনা করে দেখুন যখনকার সময় ইসলাম আসার পূর্বে মেয়েদেরকে জীবন্ত পুঁতে ফেলাহত সে সমাজে ইসলাম আসার পর নারীরাজ্ঞান-বিজ্ঞানে কতটা উন্নতি করেছে।
ইসলাম শুধু নারী-পুরুষ আবাধ মেলা-মেশার অনুমতি দেয় না। এখানে আমি একটি বাস্তব উদাহরণদেই- বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যেশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে সহ শিক্ষা ব্যাবস্থা নেই। যেমনঃ নটর ডেম, ভিকারুন্নিসা কলেজ। এর বৈজ্ঞানিক কারন হচ্ছে যখন তারা কোন সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহন করে তখন তাদের মনোযোগ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ফলে তাদের শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে মনোযোগ বিঘ্নিত হতে থাকে। পক্ষান্তরে যে প্রতিষ্ঠানে একক শিক্ষা ব্যাবস্থা সেই প্রতিষ্ঠানে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মনোযোগ বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ থাকে না তাই তারা পড়াশোনার মধ্যে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে। ফলে তাদের রেজাল্ট ভাল হয়। তাই ইসলামের পদ্ধতি অত্যান্ত বিজ্ঞানসম্মত এবং আধুনিক। ইসলাম মোটেও মধ্যযুগীয় জীবন ব্যবস্থানয়। ইসলাম মোটেও সেকেলে নয়।
# পশ্চিমাবিশ্বে আজ থেকে কয়েক শত বছর আগেও নারীকে উত্তরাধিকার সুত্রে কোন সম্পত্তির মালিকহিসেবে গণ্য করা হত না। সব সম্পত্তির মালিক পুরুষ একাই হত। পক্ষান্তরে ইসলামনারীকে উত্তরাধিকার সুত্রে সম্পত্তির অধিকারিণী করেছে ১৪০০ বছর আগে। তাহলে এখনবিবেচনা করুন কে আগে নারীদের উত্তরাধিকার সুত্রে সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতকরল?
যদিও অনেকের মতে ইসলামে নারীর উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সম্পত্তিতে অবিচার করা হয়েছে তাদের অধিকার খর্বিত করা হয়েছে। তাই আসুন এ বিষয়টি একটু বিশ্লেষণ করে দেখিঃ মনে করুন, ২ভাই বোন একসাথে বাবার সম্পত্তির ভাগ পেল। এতে করে ভাই পেল ১লক্ষ টাকা আর বোন পেল ৫০ হাজার টাকা। এই ভাইবোন ২জনই টাকাটি ব্যাংক এ রাখল। কিছুদিন পর ২জন বিয়ে করল। এর পর বোন মোহোর হিসাবে তার স্বামী থেকে পেল আরো ৫০হাজার টাকা, আরভাই বিয়ের পর তার স্ত্রীকে মোহোর হিসাবে দিল ৫০হাজার টাকা। এখন দেখুন বোনের ব্যাংক এ ১ লক্ষটাকা আর ভাইয়ের ব্যাংক এ ৫০ হাজার টাকা। এখনভাইয়ের ঐ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাবসা করে যা অন্য যে কিছু করেই হোক সংসার চালাতেহবে। কারন সংসার চালানোর ব্যয়ভার ইসলাম পুরুষকে দিয়েছে। তাই ঐ টাকা ব্যাবসায়বিনিয়োগ করার কারনে তার কাছে এর কোন টাকাই অবশিষ্ট রইল না। কিন্তু বোনের আ্যকাউন্টেপিতা থেকে প্রাপ্ত ৫০ হাজার এবং স্বামী থেকে মোহর হিসেবে প্রাপ্ত ৫০ হাজার মোট মিলিয়ে১ লক্ষ টাকা রয়েই গেল। উপরন্তু তার এই টাকা সংসারে ব্যয় করার কোন প্রয়োজনই নেই। কেননাসে এই দায়িত্ব থেকে স্বাধীন। এখন বলুন লাভ কার? তারপর কিবলবেন ইসলাম নারীকে স্বাধীনতা দেয় নি???
ভবিষ্যতেও বোনের এই টাকা একই থাকবে অথবা তার স্বামী যদি বিভিন্ন সময়ে তাকে টাকা দেয় তবে তার ব্যাংকএর টাকা বাড়তেই থাকবে আবার কারন স্ত্রীরকোন টাকা তার পরিবারে খরচ করার দায়িত্ব ইসলাম তাকে দায় নি। আরো আছে-যখন তার ছেলেবড় হয়ে তাকে টাকা দিবে তখনও তার ব্যাংক এর টাকা বাড়তেই থাকবে। অপর দিকে পরিবারে টাকা খরচ করতে করতে ভাইয়ের টাকা কমবেইবাড়বে না কারন তার দায়িত্ব পরিবারে টাকা খরচ করার। এবং তার স্ত্রীও তাকে টাকা দিবেনা। তাহলে এক পর্যায়ে বোনের ব্যাংক এ অনেক টাকা আর ভাইয়ের ব্যাংক খালি। আশাকরি বিষয়টা সুস্পষ্ট হয়েছে।
ইসলামে নারী ও পুরুষের উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সম্পত্তিকে আল্লাহ্ সুবানাহু তায়ালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এখানে এটা কোন পুরুষ নিজের সুবিধার জন্য এভাবে বন্টন ব্যবস্থা নির্ধারণ করেনি। এর এতেই কল্যাণ রয়েছে।
#সর্বপ্রথম ইসলামেই নারীদেরকে বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। ইসলামে মেয়েভ্রূণ হত্যা করা হারাম। একথা আছে সুরা তাকভিরে ৭ ও ৮ নং আয়াতে “যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধেতাকে হত্য করা হল?” এছাড়াও আল্লাহ্ আরো বলেনঃ “দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না।তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করামারাত্নক অপরাধ। (সুরা ইসরাঃ ৩১) কিন্তু বর্তমানে আল্ট্রাস্নোগ্রাফীর যুগে মেয়ে ভ্রূণ হত্যাকরার হার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মায়েরগর্ভে থাকা ভ্রূণটিকেহত্যা করা হয় যখন আল্ট্রাস্নোগ্রাফীর মাধ্যমে জানতে পারা যায় যে ভ্রূণটি মেয়ে। কিন্তুইসলামে এটা মহাপাপ। তাহলে কে বর্বর ইসলাম না এই আধুনিক যুগ ???
# এছারাও ইসলামে সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে সমান অধিকার দিয়েছে। বর্তমানে আমাদের এইআধুনিক যুগে কন্যা সন্তানদের লালন-পালন অবহেলার সাথে করা হয়। যখন কোন পিতাকে সংবাদদেয়া হয় যে তোমার কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করেছে তখন সে খুবই দুঃখিত হয়। সে তার স্ত্রীকে তিরস্কার করে। কিন্তু আধুনিকবিজ্ঞান আমাদের বলে মায়ের গর্ভে ছেলে ভ্রূণ অথবা মেয়ে ভ্রূণ গঠনের জন্য পিতাইদায়ী। তারপরেও তারা স্ত্রীকে ও কন্যা সন্তানকে অবহেলা করে। কিন্তু ইসালাম বলেছে- “যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়,তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতেথাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছথেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকেমাটির নীচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবইনিকৃষ্ট। (সুরা আননাহলঃ ৫৮-৫৯)
নবীজি (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে যে ২টি মেয়েকে সঠিকভাবে লালন-পালন করবে, স্নেহ-মমতা দিয়ে বড় করে তুলবে সেজান্নাতে যাবে।
অপর একটি হাদিসে আছে- একটানবীজির (সাঃ) সামনে এক লোক তার ছেলেকে চুমু দিয়ে কোলে বসালো কিন্তু মেয়ের সাথে এমনটি করল না। এই দৃশ্য দেখে নবীজি (সাঃ) ঐ লোকটিকে তিরস্কার করলেন। এবং বললেন তুমি অবিচার করছ। তোমার মেয়েকেও চুমু দিয়েঅন্য কলে বসাও।
তাই ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে- সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রেছেলে-মেয়ে উভয়েরই সমান অধিকার। কিন্তু বর্তমানে অনেক বড় বড় শিক্ষিত পরিবারেও মেয়েদেরসাথে সুবিচার করা হয় না। অতএব ইসলামের সুব্যাবস্থা-ই অত্যান্ত মানবতাবাদী মোটেও সেকেলে নয়।
# নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে আমাদের আধুনিক সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের ইচ্ছার কোনমূল্যায়ন করা হয় না। তার পছন্দ-অপছন্দের কোন মূল্যায়ন করা হয় না। মেয়েদের পিতারইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিতে হয়। কিন্তু ইসলামে নারীদের পছন্দ-অপছন্দের ইচ্ছাকেনিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলামে বাবা জোর করে কখনোই বিয়ে দিতে পারবে না। ইসলামে অবশ্যই মেয়ের মতামত নিতে হবে নইলে বিয়েই হবে না।
এপ্রসঙ্গে একটি হাদিস রয়েছে- একদা এক মহিলা সাহাবি রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে অভিযোগ করলেনঃ আমার বাবা যার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন তাকে আমার পছন্দ নয়। তখন রাসুল (সাঃ) সঙ্গে সঙ্গে সেই বিয়ে বাতিল করে দিলেন। (সহিহ বুখারি ৭ম খণ্ড, নিকাহ অধ্যায়) ইসলামে এটা আবশ্যিক যে ছেলে মেয়ে উভয়ের পছন্দ থাকতে হবে। নইলে বিয়ে হবেনা। কিন্তু বর্তমানে অনেক আধুনিক পরিবারেই মেয়ের বিয়ের জন্য তার পছন্দের কোন খেয়াল করা হয় না। কিন্তু ইসলামে তাকে এ ব্যাপারে পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। তাই এক্ষেত্রে ইসলাম কি আধুনিক না সেকেলে???
# হিন্দুদের মধ্যে একটা প্রথা আছে যেখানে স্ত্রী হচ্ছে স্বামীর দাসী। কিন্তু ইসলাম ধর্মে কোন মেয়ের বিয়ে হয় তার সমকক্ষ কোন ছেলের সাথে। ইসলাম ধর্মে অমুসলিম হিন্দুদের মত কোন দাসী প্রথা নেই। বরং ইসলাম ধর্মে স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ করার জোরদার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একটা হাদিস আছে- রাসুল (সাঃ) বলেছেন তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। তাই কেউ যদি আল্লাহ্র কাছে উত্তম ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হতে চায় তবে তাকে অবশ্যই তার স্ত্রীর সাথে সদাচরণ করতে হবে। তাই এক্ষেত্রে ইসলাম কি আধুনিক না সেকেলে???
এছাড়াও যদি ইসলামে একজন নারীর মা হিসেবে, কন্যা হিসেবে, বোন হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে কি কি মর্যাদা দেয়া হয়েছে তাহলে আরো অনেক কথাই বলা যাবে। এই সমস্ত মর্যাদা বিশ্লেষণ দেখাযাবে ইসলাম কখনোই নারীকে অসম্মানিত করেনি, গৃহেবন্দী করে রাখেনি। বরং অনেক সম্মানিত করেছে।
এবার আসুন দেখি ইসলামে নারীর ধর্মীয় অধিকার কি কি?
আল্লাহ্র কাছে নারী-পুরুষের কোন পার্থক্য নেই। যে বেশি উত্তমআল্লাহ্র কাছে সেই মানদণ্ড হচ্ছে তাকওয়া। যার অর্থ হচ্ছে আল্লাহভীতি। যার মধ্যেতাকওয়া যত বেশি সে আল্লাহ্র নিকট বেশি প্রিয় হোক সে নারী অথবা পুরুষ। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন: “আল্লাহ্ ভীতিই মানুষেরসর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়। অতএব হে বুদ্ধিমান মানুষেরা তোমরা আমাকেই ভয় করো” (সূরাবাক্বারাঃ ১৯৭)
আল্লাহ্ তা’আলা সফলতা অর্জনের মাধ্যমহিসেবে আল্লাহ্ ভীতি অবলম্বনের নির্দেশ দেন।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ নির্দেশ দেনঃ
“আর আমাকে ভয় করো, যাতেতোমরা সফলকাম হতে পারো” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৯)
এছাড়াও আরো অনেক আয়াতে মহান আল্লাহ্ মুসলিমদেরকে “আল্লাহ্ভীতির” নির্দেশ দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ “নিশ্চয়মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারীপুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহপ্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। (সুরা আল আহজাবঃ ৩১)। এই আয়াত থেকেই বোঝাযায় যে আল্লাহ্র কাছে নারী-পুরুষের কোন বৈষম্য নেই। যে কেউ উপরোক্ত গুণাবলী অর্জনকরতে পারবে সে মহাপুরষ্কার পাবে হোক সে নারী অথবা পুরুষ।
এছাড়া নারীদের যখন মাসিকস্রাব অবস্থায় থাকে তখন সিয়াম পালন করতে হবে না। পরে যখন সুস্থ হবে তখন আদায় করেদিবে। মাসিক স্রাব অবস্থায় তাদের সালাত মাফ। এছাড়াও যখন তারা সন্তান প্রসব করে তখনওনিফাস থাকা কালিন সময় পর্যন্ত তাদের সালাত নেই। পরে কখনোই এর তাকে সালাত আদায় করতেহবে না। আল্লাহ্ তায়ালা তাদের এটা মাফ করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে পুরুষদের জন্য এইধরনের কোন সুবিধা নেই।
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে নারীরা কেন হিজাব পরে বের হবেযেখানে পুরুষরা যে কোন কাপড় পরিধান করে বের হচ্ছে?
কারন আমরা সবাই জানি নারী শারীরিক দিক থেকে পুরুষ হতে ভিন্ন।তাদেরকে আকর্ষণীয় করে সৃষ্টি করা হয়েছে। আপনারা কি কখন শুনেছেন যে পুরুষকে কোননারী ধর্ষণ করেছে? তাহলে সতর্কতা কার প্রয়োজন? যার ধর্ষণ হয় তার নাকি যার ধর্ষণ হয়না তার? এইহিজাব নারীকে ধর্ষণ থেকে বাচায়। একটি পুরুষ তখনই একটি নারীকে ধর্ষণকরার চেষ্টা করে যখন সে সেই নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। আর সেই নারীর প্রতি আকর্ষিততখনই হয়ে যখন সে ঐ নারীর মুখ অথবা সুন্দর কোন স্থান দেখে নেয়। কিছুদিন আগে “টাইমস অব ইন্ডিয়ায়”একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল যার শিরোনাম-“নারীদের আবেদনময়ী দেখালেই পুরুষরাধর্ষণ করবে”। কিন্তু যখন কোন নারী হিজাবপরিধান করবে তখন সেই নারীর মুখ অথবা শরীর দেখা সম্ভব নয়। তাই তার প্রতি আকর্ষিতহওয়ার ও কথা নয়। এর প্রমানঃ আমেরিকার বেশীরভাগ নারী হিজাব পরিধান করে না তাই সেখানে১৯৯৬ সালের জরিপ অনুযায়ী প্রতি ৩২ সেকেন্ডে ১টি ধর্ষণ হয়, অর্থাৎ প্রায় ১ মিনিটে ২টি তাহলে চিন্তা করুন প্রতি বছরে কয়টি হয়।আর সৌদি আরবের প্রায় সব নারীরাই হিজাবপরিধান করে তাই সেখানে প্রতি বছর ১টি ধর্ষণও হয়না। এখন ইচ্ছা আপনার- আপনি ধর্ষিত হতে চান কি চান না।
এছাড়াও আমাদের সমাজে বেশ কিছু ভুল ধারনা রয়েছে। যেমনঃ স্ত্রীদেরদিয়ে স্বামীর পিতা-মাতার সেবা-যত্ন করানো হয়। এটি তাদের উপর জুলুম করা হয়। ইসলামে এইধরনের কোন বিধান নেই। স্ত্রী তার নিজের পিতা-মাতারসেবা-যত্ন করার অধিকার রাখে। আর স্বামীর পিতা-মাতার সেবা স্বামী নিজে যতটুকু পারবেকরবে। কিন্তু আমাদের সমাজে অনৈসলামিক পদ্ধতি চালু হয়েছে। কোন কোন পরিবারে দেখা যায়কোন লোক একটি মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসে তারপর তার বাবা-মা সহ ৫টি-৭টি ভাই বোন থাকেআর ঐ বউকে এদের সবাইকে রান্না-বান্না করে খাওয়ানো এগুলো ইসলামে নেই। স্ত্রীর শুধুস্বামীর সেবা করার বিধান হচ্ছে ইসলামের বিধান। স্বামী ব্যাতিত অন্য কেউ স্ত্রীর কাছ থেকে সেবা পাওয়ার অধিকার রাখে না। এগুলোআমাদের দেশে স্ত্রীর উপরে বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি সমাজে ইসলামে বিধান কায়েমথাকত তবে কোন স্ত্রীকে এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হত না। কিন্তু আমাদের প্রচলিত আইনেরকাছে তারা কোন ইনসাফ-ই পান না। এছাড়াও অনেক নারীদের মাঝেই এই ধারনা রয়েছে ইসলামেএকজন পুরুষকে চারটি বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে এটা কেমন হল? আমি তাদেরকে প্রশ্ন করতেচাই চারটি বিয়ে করেছে এমন কয়জন লোককে আপনি দেখাতে পারবেন? এই বিষয়টি যুক্তি দিয়েবোঝানোর জন্য আরো ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু আমি আমার এই লেখাটির ইতি টানতে চাচ্ছি। তাই কমেন্টে কেউ যে কোন প্রশ্ন করলে তাকে সবিস্তরে উত্তর দিয়ে দিবইনশাল্লালহ।
ইসলাম ধর্ম হচ্ছে আল্লাহ্ প্রদত্ত একটি ধর্ম। এটিকোন মানব রচিত ধর্ম নয়। এই বিধানে যা রয়েছে তা কল্যাণের জন্যই রয়েছে। আল্লাহ্ তারবান্দাদের সাথে বিন্দুমাত্রও জুলুম করেন না। কিন্তু আমাদের সমাজে ইসলাম সম্পর্কেঅজ্ঞতা আর কিছু ভুল ধারনা থাকার কারনে নারীরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তারানিজেদেরকে অন্ধকারে পতিত করছে। নারীরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারনে কিছুনারীদেহ লোভী লোকেরা তাদের ব্যবহার করছে। পক্ষান্তরে ইসালামে নারীরা সম্মানিত।এখানে তাদেরকে ভোগের বস্তু হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই।
মুলঃ Fazlay Rabby
LIKE THIS:
পুরুষের মাঝে কর্মরত নারীর প্রতি আহ্বান
শিরোনাম:পুরুষের মাঝে কর্মরত নারীর প্রতি আহ্বান
ভাষা:বাংলা
অনুবাদক:সানাউল্লাহ নজির আহমদ
প্রকাশনায়:ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:ইসলামি শরিয়ত নারীকে দিয়েছে মহান এক দায়িত্ব। আর তা হল ছেলে-সন্তান দীক্ষিত করা ও সৎ প্রজন্ম গড়ে তোলা, যারা সঠিক অর্থে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবে, আল্লাহর মর্জি মোতাবেক পৃথিবীকে নির্মাণ করবে। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে এ বিষয়টির উপরই আলোকপাত করা হয়েছে। সাথে সাথে পুরুষদের মাঝে কর্মরত নারীকে আহ্বান করা হয়েছে যাতে সে শরিয়ত-নির্ধারিত সীমানায় ফিরে আসে এবং ইসলামের দাবি অনুযায়ী তার যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যায়।
LIKE THIS:
প্রয়োজন সতী-সাধ্বী-সালেহা স্ত্রীর
শিরোনাম:প্রয়োজন সতী-সাধ্বী-সালেহা স্ত্রীর
ভাষা:বাংলা
লেখক:মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:সন্তান ইমান ও তাকওয়ায় বলিষ্ঠ হয়ে বড় হবে। নিজের, পরিবার পরিজনের, সমাজের ও রাষ্ট্রের কল্যাণে তার যোগ্যতা ব্যয় হবে, উপরন্তু পরকালের মুক্তি ও কল্যাণের উদ্দেশে সর্বশক্তি নিয়োজিত করে কাজ করে যাবে, এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি মুমিন পিতার থাকাটা স্বাভাবিক। তবে এ-প্রকৃতির সন্তান অর্জনের জন্য প্রয়োজন সালেহা বা সতী-সাধ্বী নারীর, যিনি তার সন্তানদের সুশিক্ষিত, আদর্শমান করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সকল যোগ্যতায় সিদ্ধ। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে এ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে।
LIKE THIS:
আদর্শ জননী রূপে একজন নারীt
শিরোনাম:আদর্শ জননী রূপে একজন নারী
ভাষা:বাংলা
লেখক:চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
প্রকাশনায়:ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে আদর্শ মা হিসেবে নারীর ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আদর্শ মা হতে হলে একজন নারীকে কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে।
LIKE THIS:
মহিলাদের ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ
চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ উভয়কে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের লক্ষ্যে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম দান করেছেন। তাদেরই মধ্য থেকে নির্বাচন করেছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে, যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নারী-পুরুষের নিজস্ব গণ্ডিতে পূর্ণ অধিকার। হাতে গোনা কয়েকটি স্বতন্ত্র ইবাদত ব্যতীত সব ইবাদতে পুরুষ ও নারীকে সমান মর্যাদায় রেখেছেন। ইসলাম চায় নারী জাতি যাতে কোন কল্যাণ থেকে বঞ্চিত না হয়। তাই-তো মুসলমানের উল্লেখযোগ্য ইবাদত আনন্দঘন পরিবেশ ও ইমামের দিক-নির্দেশনামূলক বক্তৃতা থেকে যাতে নারী-পুরুষ সমানভাবে উপকৃত হতে পারে সে মর্মে মানবতার মুক্তিদূত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদেরকেও আদেশ করেছেন ঈদগাহে উপস্থিত হতে।
উম্মে আতিয়্যা রা. বলেন :
عن أم عطية رضي الله عنها قالت : أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نخرجهن في الفطر والأضحى العواتق والحيّض وذوات الخدور . فأما الحيّض فيعتزلن الصلاة
وفي لفظ : المصلى . ويشهدن الخير ودعوة المسلمين] رواه الجماعة[
وفي لفظ : المصلى . ويشهدن الخير ودعوة المسلمين] رواه الجماعة[
وفي بعض ألفاظه : فقالت إحداهن : يا رسول الله لا تجد إحدانا جلباباً تخرج فيه، فقال صلى الله عليه وسلم : لتلبسها أختها من جلبابها.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৃদ্ধা, ঋতুবতী ও পর্দানশীল সকলের জন্য আদেশটি বহাল ছিল। তবে ঋতুবতী নারী ঈদের নামাজ থেকে বিরত থাকবে এবং কল্যাণ (নসিহত শ্রবণ) ও মুসলমানদের সাথে দুআয় শামিল থাকবে। তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল; আমাদের মধ্যে কারো বড় চাদর না থাকলে সে কী করবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তার কোন বোন তাকে নিজের চাদর পরিধান করতে দেবে। (মুসলিম)
অত্র হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, নারীদেরকেও ঈদের নামাজে শামিল হওয়া প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মহিলারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে জামাআতে অংশগ্রহণ করতেন। তবে নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সে ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, তাদরে জন্য মজজিদে এসে জামাআতে নামাজ পড়ার চেয়ে ঘরের কোনে নির্জন স্থানে নামাজ আদায় অতি উত্তম। তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে তাদের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটি বলেননি। বরং উম্মে আতিয়্যা রা. এর হাদীসে বুঝা যাচ্ছে আবাল, বৃদ্ধা, বণিতা সকলকেই নির্বিশেষে ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার আদেশ করা হয়েছিল। যেখানে ঋতুবতী নারীর উপর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দায়িত্ব রহিত করা হয়েছে, সেখানে তাকেও ঈদাগাহে উপস্থিত হয়ে মুসলমানদের কাতারে শামিল হওয়ার আদেশ করা হয়েছে। তাছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একাকীও আদায় ককরা সম্ভব। কিন্তু ঈদের নামাজ জামাআত ছাড়া আদায় করা সম্ভব না। সুতরাং নারীরা এত বড় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া কোন মতেই উচিৎ হবে না। তবে শর্তসাপেক্ষ যেমন, পূর্ণ পর্দার সাথে ঘর থেকে বের হতে হবে। ঈদগাহে তাদের জন্য আলাদা নিরাপদ ব্যবস্থা থাকতে হবে। এর জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। সৌদিআরবসহ আরব আমিরাতের অনেক মসজিদ ও ঈদগাহে মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে অজুখানা, টয়লেট ও নামাজের স্থানসহ সবকিছু, এমনকি প্রবেশ করারও পৃথক পৃথক গেই রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সে রকম উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেই। আর এ জন্য মহিলারা এসব কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। আমাদের মুসলিম দেশগুলোতে এ বিষয়ে আরো উদারতার পরিচয় দেয়ার জন্য এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুক।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment