ইসলামের নারী সংক্রান্ত বিধান কি? সেকেলে বিধান/তালেবানি বিধান/ মধ্যযুগীয় বিধান ????
বেশ কয়েকদিন আগে একটি টক শো তে একটা তথাকথিত আধুনিক মেয়ে ফোন করে বাংলা ইংরেজী মিলিয়ে বিব্রত করল। আপনাদের ইসলাম কি বাংলাদেশকে তালেবানি দেশ বানাতে চান কিনা। যারা এরসমর্থন করে তারা কি এই সেকেলে ধর্ম এদেশে বাস্তবায়িত করে দেশটাকে মধ্যযুগীয় অবস্থানে পিছিয়ে নিতে চায়। ঐ স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন মহিলার মতে
ইসলামের বাস্তবায়ন হলে দেশ পিছিয়ে যাবে। আমরা জানি, ইসলামি আইনের বাস্তবায়ন হলে ন্যায় বিচার কায়েম হলেও, অনেক ধরনের মানুষের সমস্যা হবে।আসুন দেখা যাক এই ধরনের তথাকথিত আধুনিক, কু-রুচিপূর্ণ, অশ্লীল, ইয়াবা প্রজন্মের মেয়েদের কি কি সমস্যা হবেঃ
১) তারা তাদের বিভিন্ন কসমেটিক দিয়ে ঘষে মেজে সাদা করা চামড়া জনসম্মুক্ষে প্রদর্শন করতে পারবেনা।
২) বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চামড়া প্রদর্শন করে যে ইনকাম হত তা একদম বন্ধ হয়ে যাবে।
৩) চামড়া দেখিয়ে হাজারো যুবককে জাহান্নামের পথে টানতে পারবেনা।
৪) বিভিন্ন নাইট ক্লাবে ড্যান্স করতে পারবেনা।
৫) রেড ওয়াইন সহ বিভিন্ন কালারের পানি পান করতে পারবেনা।
৬) বয় ফ্রেন্ড এর নামে বিয়ের আগে হাজার ছেলের সাথে লীলা খেলা করতে পারবেনা।
৭) পার্ট টাইম এবং ফুল টাইম আবাসিক হোটেলে গিয়ে পতিতাবৃত্তি করতে পারবেনা।
৮) বিভিন্ন পার্কে শুধু ফুল আর পাখি দেখা যাবে, কিন্তু তাদের ডলাডলি করতে করতে শুয়ে যাওয়ার কঠিন দৃশ্য বন্ধ হয়ে যাবে।
৯) বিয়ের পর কপালে লাল টিপ দিয়ে ফুটপাতে দাড়িয়ে নারী অধিকার আন্দোলনের নামে ভন্ডামী করতে পারবেনা।
১০) বিয়ের পর স্বামী এবং সন্তানের প্রতি কঠিন কর্তব্য পালন করতে হবে।
যে সমস্ত নারীরা উপরে উল্লেখিত কাজ সমুহকে সহজেই মেনে নিয়ে উল্লাসের সাথে করতে চান তাদের রুচিবোধ প্রশ্নবিদ্ধ রয়েছে। যাদের মধ্যে উপরে উল্লেখিত গুনাবলি রয়েছে তাদেরকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করায় একজন রুচিশীল পুরুষের প্রবল আপত্তি রয়েছে। ঐ সমস্ত দুশ্চরিত্রানারীদেরকে কোন দুশ্চরিত্র পুরুষই কেবল জীবনসঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। কোন রুচিশীল পুরুষের পক্ষে এটা সম্ভবই নয়।
কেননা মহান আল্লাহ্ বলেনঃ “দুশ্চরিত্রা নারীদুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য, আর দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য, আর সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য, আর সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্যে, — তারা যা বলে এরা তা থেকে মুক্ত। তাদের জন্য রয়েছে পরিত্রাণ ও সম্মানজনক জীবিকা” [সূরা আন-নূর ২৬]
ঐ সমস্ত দুশ্চরিত্রানারীরা কেবল সমাজে বিশৃঙ্খলাই সৃষ্টি করতে থাকে। তারা উলঙ্গপণায় লিপ্ত হয়ে অপর পুরুষের চরিত্রকে হরণ করতে চায়।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ “ যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার পছন্দ করে, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সূরা আন-নূরঃ ১৯)
বর্তমানে নারীরা পশ্চিমা বিশ্বের কাফের নারীদের খোলামেলা ও অবাধবিচরন দেখে নিজেদেরকে পরাধীন ও অধিকারহীনা মনে করে । তারা মনে করে ইসলাম নারীদেরকে শোষণ করে। যদিও কোন মুসলিমের উচিৎ নয় কোন কাফিরদের অবাধ বিচরন ও উন্নতি দেখে বিভ্রান্ত হওয়া। তাদের উচিৎ সর্বদা আল্লাহ্র উপরে অটল থাকা।
আমাদের রব বলেছেনঃ দেশে-বিদেশে কাফেরদের অবাধচাল-চলন যেন তোমাদিগকে মোহে না ফেলে দেয়। এটা হলো সামান্য দিনেরপ্রাপ্তি। এরপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর সেটি হলো অতি নিকৃষ্ট স্থান। (সুরা আলেইমরানঃ ১৯৬-১৯৭)
এখন যদি মেনে নেই মুসলিম নারীদের অধিকারও ঠিক সেই রকম হওয়া উচিৎ যে রকম পশ্চিমা মিডিয়াবলে তবে মনে হবে মহান আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবন ব্যাবস্থায় নারীর অধিকারটা সেকেলে ।কিন্তু সত্যি কথা বলতে পশ্চিমা মিডিয়া নারীদের যে অধিকারের কথা বলে তা আসলে আড়ালেনারীর শরীর শোষণ করে, সম্মানের অবমাননা করে আর তাদের আত্মাকে প্রবঞ্চিত করে। তারা আসলে নারীদেরকে পরিণতকরেছে রক্ষিতাতে, ভোগের বস্তুতে, উপ-পত্নীতে, রংধনুর প্রজাপতিতে। এই নারীরা আসলেপণ্য সামগ্রী বিভিন্ন সেক্স মিডিয়াতে, আর ভোগ-বিলাসীদের কাছে, যারা লুকিয়ে থাকে আর্ট আর কালচারের রংচমক পর্দার পেছনে।
পক্ষান্তরে ইসলাম নারীদের দিয়েছে তাদের প্রাপ্যমান-সম্মান আর মর্যাদা আজ থেকে আরো ১৪০০ বছর আগে। ইসলাম ধর্মের উদ্দেশ সব সময়ই ছিল আমাদের চিন্তাধারাকে আধুনিক করা। আমাদের দেশের অধিকাংশ নারীরা ভাবে ইসলাম তাদেরকেপর্যাপ্ত অধিকার দেয়নি। তারা ভাবে ইসলাম ধর্মে নারীদের যেসব বিধি-বিধান সম্পর্কেবলা হয়েছে তা সেকেলে। তাই আসুন একটু বিশ্লেষণ করে দেখি নারীর অধিকারের ক্ষেত্রেইসলাম ধর্ম কি আধুনিক নাকি সেকেলে?
তারপূর্বে আমি আরেকটি বিষয়টি অবগত করতে চাই যে আপনি কি জানেন পশ্চিমা বিশ্বে যে সমস্ত খ্রিষ্টানরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে তাদের মধ্যে ৭০% -ই নারী। এর কারন যখন তারা পশ্চিমা কালচারের নারী স্বাধীনতার নামে তাদের শরীরের শোষণ এবং সম্মানের অবমাননা বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে উপলব্ধি করতে পারে। তাদের ভণ্ডামি ধরতে পারে তখন ঐ নারীরা তাদের ক্ষোভে, ঘৃণায়, লজ্জায় ঐ পশ্চিমা সংস্কৃতিকে ধিক্কার দেয়। এবং ইসলামে নারীর স্বাধীনতা ও সৌন্দর্য দেখেমুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
তাই এবার আসুন একটু বিশ্লেষণ করে দেখিনারীর অধিকারের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম কি আধুনিক নাকি সেকেলে?
# ইংল্যান্ডে ১৮৭০ সালে একটি আইন পাশ করে যার পর থেকে বিবাহিত মহিলারা সম্পদের মালিক হতে পারত। ইসলামে নারীর অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করেছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে। ইসলামে কোন মুসলিম মহিলা কোন পুরুষের অনুমতি ছাড়াই সম্পদ বিক্রি বা খরিদ করতে পারে। অতএব ইসলাম ধর্ম কি আধুনিক না সেকেলে?
# ইসলামে নারী যদি কোন কাজ করতে চাইলে তবে ইসলামে তাকে সেই কাজ করার অনুমতি দেয়। নারীকে ইসলাম কোন কাজেই করতে বাঁধা দেয় না যদি নাসে কাজটা ইসলামী শারিয়াহ বিরোধী হয়। যেমনঃ মডেলিং করা, ড্যান্সবারে কাজ করা ইত্যাদি। কিছু কাজ রয়েছে যা পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্যই হারাম। যেমনঃ মদের ব্যাবসাকরা, সুদের কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা। কোন ইসলামী সমাজে নারীরা যেসব পেশা বেছে নিতে পারে তা হলঃ ডাক্তারি, সেবিকা, শিক্ষকতা ইত্যাদি। তবে পেশাগত দিক দিয়ে তাদের অবশ্যই হিজাব পালন করতেহবে।
কেননা আমাদের মালিক বলেনঃ “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন,তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকেচেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরা আল আহজাবঃ ৫৯)
“তোমরা মূর্খতা যুগের মেয়েদের মতনিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। নামায কায়েম করবে,যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। (সুরা আল আহজাবঃ ৩৩)
ইসলামে নারীদের কোন অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতা নেই। তাদের যদি ইচ্ছা হয় তবে কোন অর্থনৈতিক পেশায় নিযুক্ত হতে পারবে। তাদেরকে কোন মতেই কোন পেশায় নিযুক্ত হতে বাধ্য করা যাবে না। ইসলামে পরিবার পরিচালনার দায়ভার সম্পূর্ণ পুরুষের উপর দেয়া হয়েছে। নারীরা এক্ষেত্রে একেবারেই স্বাধীন। একজন নারী যখন অবিবাহিত অবস্থায় থাকে তখন তার ভরন-পোষণের দায়িত্ব তারবাবা অথবা ভাইয়ের উপর। আবার যখন বিবাহিত অবস্থায় থাকে তখন তার ভরন-পোষণের দায়িত্ব তার স্বামী অথবা ছেলে-সন্তানের উপর। বর্তমানে পরিবারে অভাব-অনটনের কারনে যদি কোননারী অর্থ উপার্জন করতে চায় তবে সেটা তার একান্তই ইচ্ছা স্বাধীনতার উপর নির্ভরকরে। এক্ষেত্রে কেউ তাকে অর্থ উপার্জনে বাধ্য করতে পারবে না। এভাবে একজন নারীকে ইসলাম কতটা স্বাধীনতা দিয়েছে তা একটু চিন্তা করে দেখুন। তাই নারীরা কোন পেশায় জরিত হতে পারবেনা, কোন কাজ করতে পারবে না একথা সম্পূর্ণ ভুল। ইসলাম নারীকে গৃহবন্দি করে রাখেনি।
বরং একটি আধুনিক স্বনির্ভর ইসলামিক সমাজ গঠনে নারীদের কিছু পেশা বেঁছে নেয়াই উত্তম। যেমন প্রসূতি বিদ্যার ডাক্তারি, নার্স, শিক্ষিকা ইত্যাদি। এই সমস্ত পেশায় নারীদের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। কেননা কোন মহিলা কোন পুরুষ ডাক্তারের কাছে নিজের একান্ত কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে। তাই নারীরা যদি এই ধরণের পেশাবেঁছে নেয় তবে সমাজ আরো সুশৃঙ্খল হবে। মহিলা রোগীদের জন্য থাকবে মহিলা ডাক্তার,নারী শিক্ষার জন্য নারী শিক্ষিকা। এর মাধ্যমে তাদের আব্রু-সম্ভ্রমও সংরক্ষিত থাকবে। এথেকেই বোঝা যায় ইসলাম নারীদেরকে গৃহবন্দী করে রাখে না। বরং নারীকে পূর্ণস্বাধীনতা দেয় তাও আবার সম্মানের সাথে। পৃথিবীর এমন কোন জীবন ব্যাবস্থায় এই ধরনের ব্যাবস্থাপনা নেই যেখানে নারীকে স্বাধীনতা দেয়ার পাশাপাশি তাকে দিয়েছে সম্মান, রক্ষা করেছে তার আব্রু। এভাবে ইসলাম একটি সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে অগ্রণী ভুমিকা রাখে। ইসলাম ব্যাতিত এমন আর কোন সমাজ ব্যাবস্থা আছে যেখানে নারীরা নিজেদের সম্ভ্রম বজায় রেখে এতটা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে?
অতএবইসলাম কি আধুনিক না সেকেলে???
# ইসলাম নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষদের জন্য মোহর প্রদান করা ফরজ করেছে। স্ত্রীকে পর্যাপ্ত মোহর প্রদান ব্যাতিত কোন বিয়েই ইসলামে বৈধ নয়। ঐ মোহরের মালিক একমাত্র স্ত্রী। তার ঐ সম্পদ ব্যয়করার জন্য কারো অনুমতির প্রয়োজন নেই। সে চাইলে ঐ সম্পদ দিয়ে ব্যাবসা করতে পারে বা অন্যযে কিছু করতে পারে। আমি পূর্বেই বলেছি ইসলাম নারীকে পারিবারিক ব্যয়ভার বহন থেকে মুক্ত করেছে তাই তার এই মোহর পরিবারের পিছনে ব্যয় করার কোন প্রয়োজন নেই। তবে যদি সে চায় তাহলে করতে পারে। এক্ষেত্রে কখনোই তাকে জবরদস্তি করা যাবে না। তাই ইসলাম নারীকে দিয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা। এভাবে মোহর প্রদান করে স্ত্রীকে স্বাবলম্বী করার পদ্ধতি ইসলাম ব্যাতিত পৃথিবীর আর কোন সমাজ ব্যাবস্থায় আছে কি?
এভাবে ইসলাম নারীকে দিয়েছে উচ্চ আসন। তাহলে ইসলাম কি আধুনিক না সেকেলে?
আজকাল আমাদের সমাজে এই মোহরকে সংকুচিত করে দেয়া হয়েছে। তারা মোহর নির্ধারণ করে ৫০,০০০টাকা বা ৮০,০০০ টাকা। যদিও তারা মোহরের পরিমান অত্যন্ত কম নির্ধারণ করে তার পরে সেটুকুও প্রদান করে না। কিন্তু বিয়ে উপলক্ষে খরচ করে ২ থেকে ৪ লক্ষ টাকা। যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। বরং এত টাকা অপচয় না করে স্ত্রীকে মোহর হিসেবে দেয়াকেই ইসলাম উৎসাহিত করে। সম্পূর্ণ মোহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিয়ে বৈধ হবে না।
আজকাল আমাদের সমাজে এই প্রথার উল্টো প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা হল যৌতুক প্রথা। যেখানে মেয়ে উল্টো অর্থ-সম্পদ দিয়ে কোন ছেলেকে বিয়ে করবে। আর এই প্রথার অভিশাপ সম্পর্কেকারো অজানা নয়। এই প্রথার অভিশাপ কত যে মাসুম মেয়ের যে জীবন গেল! এই প্রথা হচ্ছে অমুসলিম হিন্দুদের প্রথা। পক্ষান্তরে ইসলামের বিধানে রয়েছে শাশ্বত কল্যাণ। তাহলে ইসলাম কি আধুনিক না সেকেলে?
# ইসলাম নারীদের জন্য শিক্ষা ব্যাবস্থা সুনিশ্চিত করেছে। অনেকেরই ধারনা ইসলাম নারীদেরকে শিক্ষা অর্জন করার অনুমতি দেয় না। ইসলাম নারীদেরকে ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করেছে।তাদের ধারনা নারীরা ঘরের গৃহস্থালি কাজ করবে, মায়ের সাথে রান্না-বান্নায় সাহায্যকরবে, তাদেরকে শিক্ষা গ্রহন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের এই ধারনাগুলো সম্পূর্ণ ভুল। সত্যি কথা বলতে ইসলামে “প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্যজ্ঞান অর্জন করা ফরজ। অর্থাৎ জ্ঞান অর্জন করা নারীদের জন্য বাধ্যতামুলক অর্থাৎ এটা আবশ্যিক। পৃথিবীর এমন আর কোন ধর্মে নারীদের জন্য জ্ঞান অর্জন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে? তাহলে কিভাবে ইসলাম নারীদেরকে গৃহবন্দী করে রাখল?
তাই ইসলামকি আধুনিক না সেকেলে???
ইসলামে সর্বপ্রথম যে আয়াত নাযিল হয় তা হলঃ “পাঠ কর তোমার পালনকর্তার নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিকরেছেন মানুষকে জমাটবাঁধা রক্ত থেকে। পাঠ কর, তোমার পালনকর্তামহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সুরা আলাকঃ ১-৫)
তাই আল্লাহ্ সুবানাহুতায়ালা আমাদেরকে সর্বপ্রথম যে আদেশ দিয়েছেনতা নামজ কায়েম করার জন্য নয়, রোজার জন্য নয়, হালাল-হারাম বেছে চলার জন্য নয় বরং তা হল পড়াশোনা করার, জ্ঞান অর্জনকরার। ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক নারীই রয়েছেন যাদের মধ্যে ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। যেমনঃআবু বকর (রা) এর মেয়ে আয়েশা (রাঃ)। তিনি তৎকালীন সময়ে খলীফাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্নদিক-নির্দেশনা দিতেন। চিন্তা করুন একজন নারী একজন প্রেসিডেন্টকে দিক-নির্দেশনাদিতেন। এই অধিকার ইসলাম নারীদেরকে দিয়েছে ১৪০০ বছর আগে। এছাড়া তিনি ছিলেন অত্যান্ততীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারিণী। তিনি একজন নারী হয়ে একাই ২২১০ টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। ইসলাম ধর্মের উপর ছিল তার অগাধ পাণ্ডিত্য। তিনি একাই ৮৮ জনেরও বেশি পণ্ডিতকে শিক্ষা দান করেছেন। অর্থাৎ তিনি ছিলেন পণ্ডিতদের পণ্ডিত। এছাড়াও সাফিয়া (রাঃ)।তিনি ছিলেন ফিকাহ এর উপর একজন বিশেষজ্ঞ। ইমাম শাফিইকে আমরা অনেকেই চিনি, যিনি একটি মাহজাবের প্রবর্তক, তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন একজন নারী থেকে যার নাম নাফিসা (রঃ),যিনি ছিলেন শিক্ষিকা। এছাড়াও এমন আরেক নারী হচ্ছেন উম্মে আরদাতা (রঃ), যিনি ছিলেন বিজ্ঞান শাস্ত্রের উপরে বিশেষজ্ঞ। এমন আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে।
এখন পর্যালোচনা করে দেখুন যখনকার সময় ইসলাম আসার পূর্বে মেয়েদেরকে জীবন্ত পুঁতে ফেলাহত সে সমাজে ইসলাম আসার পর নারীরাজ্ঞান-বিজ্ঞানে কতটা উন্নতি করেছে।
ইসলাম শুধু নারী-পুরুষ আবাধ মেলা-মেশার অনুমতি দেয় না। এখানে আমি একটি বাস্তব উদাহরণদেই- বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যেশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে সহ শিক্ষা ব্যাবস্থা নেই। যেমনঃ নটর ডেম, ভিকারুন্নিসা কলেজ। এর বৈজ্ঞানিক কারন হচ্ছে যখন তারা কোন সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহন করে তখন তাদের মনোযোগ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ফলে তাদের শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে মনোযোগ বিঘ্নিত হতে থাকে। পক্ষান্তরে যে প্রতিষ্ঠানে একক শিক্ষা ব্যাবস্থা সেই প্রতিষ্ঠানে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মনোযোগ বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ থাকে না তাই তারা পড়াশোনার মধ্যে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে। ফলে তাদের রেজাল্ট ভাল হয়। তাই ইসলামের পদ্ধতি অত্যান্ত বিজ্ঞানসম্মত এবং আধুনিক। ইসলাম মোটেও মধ্যযুগীয় জীবন ব্যবস্থানয়। ইসলাম মোটেও সেকেলে নয়।
# পশ্চিমাবিশ্বে আজ থেকে কয়েক শত বছর আগেও নারীকে উত্তরাধিকার সুত্রে কোন সম্পত্তির মালিকহিসেবে গণ্য করা হত না। সব সম্পত্তির মালিক পুরুষ একাই হত। পক্ষান্তরে ইসলামনারীকে উত্তরাধিকার সুত্রে সম্পত্তির অধিকারিণী করেছে ১৪০০ বছর আগে। তাহলে এখনবিবেচনা করুন কে আগে নারীদের উত্তরাধিকার সুত্রে সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতকরল?
যদিও অনেকের মতে ইসলামে নারীর উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সম্পত্তিতে অবিচার করা হয়েছে তাদের অধিকার খর্বিত করা হয়েছে। তাই আসুন এ বিষয়টি একটু বিশ্লেষণ করে দেখিঃ মনে করুন, ২ভাই বোন একসাথে বাবার সম্পত্তির ভাগ পেল। এতে করে ভাই পেল ১লক্ষ টাকা আর বোন পেল ৫০ হাজার টাকা। এই ভাইবোন ২জনই টাকাটি ব্যাংক এ রাখল। কিছুদিন পর ২জন বিয়ে করল। এর পর বোন মোহোর হিসাবে তার স্বামী থেকে পেল আরো ৫০হাজার টাকা, আরভাই বিয়ের পর তার স্ত্রীকে মোহোর হিসাবে দিল ৫০হাজার টাকা। এখন দেখুন বোনের ব্যাংক এ ১ লক্ষটাকা আর ভাইয়ের ব্যাংক এ ৫০ হাজার টাকা। এখনভাইয়ের ঐ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাবসা করে যা অন্য যে কিছু করেই হোক সংসার চালাতেহবে। কারন সংসার চালানোর ব্যয়ভার ইসলাম পুরুষকে দিয়েছে। তাই ঐ টাকা ব্যাবসায়বিনিয়োগ করার কারনে তার কাছে এর কোন টাকাই অবশিষ্ট রইল না। কিন্তু বোনের আ্যকাউন্টেপিতা থেকে প্রাপ্ত ৫০ হাজার এবং স্বামী থেকে মোহর হিসেবে প্রাপ্ত ৫০ হাজার মোট মিলিয়ে১ লক্ষ টাকা রয়েই গেল। উপরন্তু তার এই টাকা সংসারে ব্যয় করার কোন প্রয়োজনই নেই। কেননাসে এই দায়িত্ব থেকে স্বাধীন। এখন বলুন লাভ কার? তারপর কিবলবেন ইসলাম নারীকে স্বাধীনতা দেয় নি???
ভবিষ্যতেও বোনের এই টাকা একই থাকবে অথবা তার স্বামী যদি বিভিন্ন সময়ে তাকে টাকা দেয় তবে তার ব্যাংকএর টাকা বাড়তেই থাকবে আবার কারন স্ত্রীরকোন টাকা তার পরিবারে খরচ করার দায়িত্ব ইসলাম তাকে দায় নি। আরো আছে-যখন তার ছেলেবড় হয়ে তাকে টাকা দিবে তখনও তার ব্যাংক এর টাকা বাড়তেই থাকবে। অপর দিকে পরিবারে টাকা খরচ করতে করতে ভাইয়ের টাকা কমবেইবাড়বে না কারন তার দায়িত্ব পরিবারে টাকা খরচ করার। এবং তার স্ত্রীও তাকে টাকা দিবেনা। তাহলে এক পর্যায়ে বোনের ব্যাংক এ অনেক টাকা আর ভাইয়ের ব্যাংক খালি। আশাকরি বিষয়টা সুস্পষ্ট হয়েছে।
ইসলামে নারী ও পুরুষের উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সম্পত্তিকে আল্লাহ্ সুবানাহু তায়ালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এখানে এটা কোন পুরুষ নিজের সুবিধার জন্য এভাবে বন্টন ব্যবস্থা নির্ধারণ করেনি। এর এতেই কল্যাণ রয়েছে।
#সর্বপ্রথম ইসলামেই নারীদেরকে বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। ইসলামে মেয়েভ্রূণ হত্যা করা হারাম। একথা আছে সুরা তাকভিরে ৭ ও ৮ নং আয়াতে “যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধেতাকে হত্য করা হল?” এছাড়াও আল্লাহ্ আরো বলেনঃ “দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না।তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করামারাত্নক অপরাধ। (সুরা ইসরাঃ ৩১) কিন্তু বর্তমানে আল্ট্রাস্নোগ্রাফীর যুগে মেয়ে ভ্রূণ হত্যাকরার হার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মায়েরগর্ভে থাকা ভ্রূণটিকেহত্যা করা হয় যখন আল্ট্রাস্নোগ্রাফীর মাধ্যমে জানতে পারা যায় যে ভ্রূণটি মেয়ে। কিন্তুইসলামে এটা মহাপাপ। তাহলে কে বর্বর ইসলাম না এই আধুনিক যুগ ???
# এছারাও ইসলামে সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে সমান অধিকার দিয়েছে। বর্তমানে আমাদের এইআধুনিক যুগে কন্যা সন্তানদের লালন-পালন অবহেলার সাথে করা হয়। যখন কোন পিতাকে সংবাদদেয়া হয় যে তোমার কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করেছে তখন সে খুবই দুঃখিত হয়। সে তার স্ত্রীকে তিরস্কার করে। কিন্তু আধুনিকবিজ্ঞান আমাদের বলে মায়ের গর্ভে ছেলে ভ্রূণ অথবা মেয়ে ভ্রূণ গঠনের জন্য পিতাইদায়ী। তারপরেও তারা স্ত্রীকে ও কন্যা সন্তানকে অবহেলা করে। কিন্তু ইসালাম বলেছে- “যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়,তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতেথাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছথেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকেমাটির নীচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবইনিকৃষ্ট। (সুরা আননাহলঃ ৫৮-৫৯)
নবীজি (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে যে ২টি মেয়েকে সঠিকভাবে লালন-পালন করবে, স্নেহ-মমতা দিয়ে বড় করে তুলবে সেজান্নাতে যাবে।
অপর একটি হাদিসে আছে- একটানবীজির (সাঃ) সামনে এক লোক তার ছেলেকে চুমু দিয়ে কোলে বসালো কিন্তু মেয়ের সাথে এমনটি করল না। এই দৃশ্য দেখে নবীজি (সাঃ) ঐ লোকটিকে তিরস্কার করলেন। এবং বললেন তুমি অবিচার করছ। তোমার মেয়েকেও চুমু দিয়েঅন্য কলে বসাও।
তাই ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে- সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রেছেলে-মেয়ে উভয়েরই সমান অধিকার। কিন্তু বর্তমানে অনেক বড় বড় শিক্ষিত পরিবারেও মেয়েদেরসাথে সুবিচার করা হয় না। অতএব ইসলামের সুব্যাবস্থা-ই অত্যান্ত মানবতাবাদী মোটেও সেকেলে নয়।
# নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে আমাদের আধুনিক সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের ইচ্ছার কোনমূল্যায়ন করা হয় না। তার পছন্দ-অপছন্দের কোন মূল্যায়ন করা হয় না। মেয়েদের পিতারইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিতে হয়। কিন্তু ইসলামে নারীদের পছন্দ-অপছন্দের ইচ্ছাকেনিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলামে বাবা জোর করে কখনোই বিয়ে দিতে পারবে না। ইসলামে অবশ্যই মেয়ের মতামত নিতে হবে নইলে বিয়েই হবে না।
এপ্রসঙ্গে একটি হাদিস রয়েছে- একদা এক মহিলা সাহাবি রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে অভিযোগ করলেনঃ আমার বাবা যার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন তাকে আমার পছন্দ নয়। তখন রাসুল (সাঃ) সঙ্গে সঙ্গে সেই বিয়ে বাতিল করে দিলেন। (সহিহ বুখারি ৭ম খণ্ড, নিকাহ অধ্যায়) ইসলামে এটা আবশ্যিক যে ছেলে মেয়ে উভয়ের পছন্দ থাকতে হবে। নইলে বিয়ে হবেনা। কিন্তু বর্তমানে অনেক আধুনিক পরিবারেই মেয়ের বিয়ের জন্য তার পছন্দের কোন খেয়াল করা হয় না। কিন্তু ইসলামে তাকে এ ব্যাপারে পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। তাই এক্ষেত্রে ইসলাম কি আধুনিক না সেকেলে???
# হিন্দুদের মধ্যে একটা প্রথা আছে যেখানে স্ত্রী হচ্ছে স্বামীর দাসী। কিন্তু ইসলাম ধর্মে কোন মেয়ের বিয়ে হয় তার সমকক্ষ কোন ছেলের সাথে। ইসলাম ধর্মে অমুসলিম হিন্দুদের মত কোন দাসী প্রথা নেই। বরং ইসলাম ধর্মে স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ করার জোরদার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একটা হাদিস আছে- রাসুল (সাঃ) বলেছেন তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। তাই কেউ যদি আল্লাহ্র কাছে উত্তম ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হতে চায় তবে তাকে অবশ্যই তার স্ত্রীর সাথে সদাচরণ করতে হবে। তাই এক্ষেত্রে ইসলাম কি আধুনিক না সেকেলে???
এছাড়াও যদি ইসলামে একজন নারীর মা হিসেবে, কন্যা হিসেবে, বোন হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে কি কি মর্যাদা দেয়া হয়েছে তাহলে আরো অনেক কথাই বলা যাবে। এই সমস্ত মর্যাদা বিশ্লেষণ দেখাযাবে ইসলাম কখনোই নারীকে অসম্মানিত করেনি, গৃহেবন্দী করে রাখেনি। বরং অনেক সম্মানিত করেছে।
এবার আসুন দেখি ইসলামে নারীর ধর্মীয় অধিকার কি কি?
আল্লাহ্র কাছে নারী-পুরুষের কোন পার্থক্য নেই। যে বেশি উত্তমআল্লাহ্র কাছে সেই মানদণ্ড হচ্ছে তাকওয়া। যার অর্থ হচ্ছে আল্লাহভীতি। যার মধ্যেতাকওয়া যত বেশি সে আল্লাহ্র নিকট বেশি প্রিয় হোক সে নারী অথবা পুরুষ। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন: “আল্লাহ্ ভীতিই মানুষেরসর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়। অতএব হে বুদ্ধিমান মানুষেরা তোমরা আমাকেই ভয় করো” (সূরাবাক্বারাঃ ১৯৭)
আল্লাহ্ তা’আলা সফলতা অর্জনের মাধ্যমহিসেবে আল্লাহ্ ভীতি অবলম্বনের নির্দেশ দেন।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ নির্দেশ দেনঃ
“আর আমাকে ভয় করো, যাতেতোমরা সফলকাম হতে পারো” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৯)
এছাড়াও আরো অনেক আয়াতে মহান আল্লাহ্ মুসলিমদেরকে “আল্লাহ্ভীতির” নির্দেশ দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ “নিশ্চয়মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারীপুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহপ্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। (সুরা আল আহজাবঃ ৩১)। এই আয়াত থেকেই বোঝাযায় যে আল্লাহ্র কাছে নারী-পুরুষের কোন বৈষম্য নেই। যে কেউ উপরোক্ত গুণাবলী অর্জনকরতে পারবে সে মহাপুরষ্কার পাবে হোক সে নারী অথবা পুরুষ।
এছাড়া নারীদের যখন মাসিকস্রাব অবস্থায় থাকে তখন সিয়াম পালন করতে হবে না। পরে যখন সুস্থ হবে তখন আদায় করেদিবে। মাসিক স্রাব অবস্থায় তাদের সালাত মাফ। এছাড়াও যখন তারা সন্তান প্রসব করে তখনওনিফাস থাকা কালিন সময় পর্যন্ত তাদের সালাত নেই। পরে কখনোই এর তাকে সালাত আদায় করতেহবে না। আল্লাহ্ তায়ালা তাদের এটা মাফ করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে পুরুষদের জন্য এইধরনের কোন সুবিধা নেই।
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে নারীরা কেন হিজাব পরে বের হবেযেখানে পুরুষরা যে কোন কাপড় পরিধান করে বের হচ্ছে?
কারন আমরা সবাই জানি নারী শারীরিক দিক থেকে পুরুষ হতে ভিন্ন।তাদেরকে আকর্ষণীয় করে সৃষ্টি করা হয়েছে। আপনারা কি কখন শুনেছেন যে পুরুষকে কোননারী ধর্ষণ করেছে? তাহলে সতর্কতা কার প্রয়োজন? যার ধর্ষণ হয় তার নাকি যার ধর্ষণ হয়না তার? এইহিজাব নারীকে ধর্ষণ থেকে বাচায়। একটি পুরুষ তখনই একটি নারীকে ধর্ষণকরার চেষ্টা করে যখন সে সেই নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। আর সেই নারীর প্রতি আকর্ষিততখনই হয়ে যখন সে ঐ নারীর মুখ অথবা সুন্দর কোন স্থান দেখে নেয়। কিছুদিন আগে “টাইমস অব ইন্ডিয়ায়”একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল যার শিরোনাম-“নারীদের আবেদনময়ী দেখালেই পুরুষরাধর্ষণ করবে”। কিন্তু যখন কোন নারী হিজাবপরিধান করবে তখন সেই নারীর মুখ অথবা শরীর দেখা সম্ভব নয়। তাই তার প্রতি আকর্ষিতহওয়ার ও কথা নয়। এর প্রমানঃ আমেরিকার বেশীরভাগ নারী হিজাব পরিধান করে না তাই সেখানে১৯৯৬ সালের জরিপ অনুযায়ী প্রতি ৩২ সেকেন্ডে ১টি ধর্ষণ হয়, অর্থাৎ প্রায় ১ মিনিটে ২টি তাহলে চিন্তা করুন প্রতি বছরে কয়টি হয়।আর সৌদি আরবের প্রায় সব নারীরাই হিজাবপরিধান করে তাই সেখানে প্রতি বছর ১টি ধর্ষণও হয়না। এখন ইচ্ছা আপনার- আপনি ধর্ষিত হতে চান কি চান না।
এছাড়াও আমাদের সমাজে বেশ কিছু ভুল ধারনা রয়েছে। যেমনঃ স্ত্রীদেরদিয়ে স্বামীর পিতা-মাতার সেবা-যত্ন করানো হয়। এটি তাদের উপর জুলুম করা হয়। ইসলামে এইধরনের কোন বিধান নেই। স্ত্রী তার নিজের পিতা-মাতারসেবা-যত্ন করার অধিকার রাখে। আর স্বামীর পিতা-মাতার সেবা স্বামী নিজে যতটুকু পারবেকরবে। কিন্তু আমাদের সমাজে অনৈসলামিক পদ্ধতি চালু হয়েছে। কোন কোন পরিবারে দেখা যায়কোন লোক একটি মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসে তারপর তার বাবা-মা সহ ৫টি-৭টি ভাই বোন থাকেআর ঐ বউকে এদের সবাইকে রান্না-বান্না করে খাওয়ানো এগুলো ইসলামে নেই। স্ত্রীর শুধুস্বামীর সেবা করার বিধান হচ্ছে ইসলামের বিধান। স্বামী ব্যাতিত অন্য কেউ স্ত্রীর কাছ থেকে সেবা পাওয়ার অধিকার রাখে না। এগুলোআমাদের দেশে স্ত্রীর উপরে বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি সমাজে ইসলামে বিধান কায়েমথাকত তবে কোন স্ত্রীকে এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হত না। কিন্তু আমাদের প্রচলিত আইনেরকাছে তারা কোন ইনসাফ-ই পান না। এছাড়াও অনেক নারীদের মাঝেই এই ধারনা রয়েছে ইসলামেএকজন পুরুষকে চারটি বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে এটা কেমন হল? আমি তাদেরকে প্রশ্ন করতেচাই চারটি বিয়ে করেছে এমন কয়জন লোককে আপনি দেখাতে পারবেন? এই বিষয়টি যুক্তি দিয়েবোঝানোর জন্য আরো ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু আমি আমার এই লেখাটির ইতি টানতে চাচ্ছি। তাই কমেন্টে কেউ যে কোন প্রশ্ন করলে তাকে সবিস্তরে উত্তর দিয়ে দিবইনশাল্লালহ।
ইসলাম ধর্ম হচ্ছে আল্লাহ্ প্রদত্ত একটি ধর্ম। এটিকোন মানব রচিত ধর্ম নয়। এই বিধানে যা রয়েছে তা কল্যাণের জন্যই রয়েছে। আল্লাহ্ তারবান্দাদের সাথে বিন্দুমাত্রও জুলুম করেন না। কিন্তু আমাদের সমাজে ইসলাম সম্পর্কেঅজ্ঞতা আর কিছু ভুল ধারনা থাকার কারনে নারীরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তারানিজেদেরকে অন্ধকারে পতিত করছে। নারীরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারনে কিছুনারীদেহ লোভী লোকেরা তাদের ব্যবহার করছে। পক্ষান্তরে ইসালামে নারীরা সম্মানিত।এখানে তাদেরকে ভোগের বস্তু হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই।
মুলঃ Fazlay Rabby
No comments:
Post a Comment