হে আল্লাহ তুমি আমার পাপ সমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও
লেখক: ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ) অনুবাদঃইউসুফ ইয়াসীন Printহে আল্লাহ তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ওশিশির দ্বারা ধৌত করে দাও’প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা,আসুন আমাদের অন্তরকে ধুয়ে ফেলি দুঃখ ওভয়ের পরিষ্কার পানি দ্বারা। আল্লাহসুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণকে আমাদেরজন্য তাঁর মহান স্মরণের অংশ বানাই।“সুতরাং,তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিওতোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমারকৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না”।(বাকারাহ ১৫২) আমরা যখম আমাদের পরমকরুণাময় প্রভূর কথা স্মরণ করব তখন তিনিওআমাদের কথা স্মরণ করবেন। আমাদেরজীবনের প্রতিটি মুহুর্তেই প্রয়োজন সেইমহান সত্তাকে যিনি
আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টিকরেছেন এবং যিনি এ সমস্ত বিশ্ব জগতেরমালিক ও রক্ষণাবেক্ষণকারী, কত মহানতিনি ! যখন আমরা তাঁর কথা স্মরণ করছি তখনতিনিও আমাদেরকে স্মরণ করেন ! যদিওআমাদের মত পাপী, অকৃতজ্ঞ বান্দাদেরস্মরণ করার তাঁর কোনই প্রয়োজন নেই।আমাদের তিনি স্মরণ করার কারণে যে পরমপ্রশান্তি আমরা লাভ করব তা আমাদের হৃদয়েবিনয়, ভদ্রতা ও অনুতাপের জন্ম দিবে। “যারাবিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তরআল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে;জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়”।(সূরা র’দঃ২৮)আসুন ছুটে যাই আমাদের মহান রবের দিকেযিনি সদয় ও অনুগ্রহশীল,একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু সংখ্যক বন্দী হাযিরকরা হলো; তাদের মধ্যে জনৈক বন্দীনিঅস্থির হয়ে দৌড়াচ্ছিল আর বন্দীদের মধ্যেকোন একটি শিশু পেলেই সে তাকে কোলেনিয়ে পেটের সাথে মিশিয়ে দুধ পানকরাচ্ছিল। এ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃতোমরা কি মনে করো এ মেয়ে লোকটি তারসন্তানকে আগুনে ফেলতে পারে? আমরাবললাম, আল্লাহর কসম ! কখনো নয়। তিনিবললেন, এ মেয়েলোকটি তার সন্তানের প্রতিযেরূপ সদয়, মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরপ্রতি এর চাইতেও অনেক বেশি সদয় ওঅনুগ্রহশীল। (বুখারী,মুসলিম)কিন্তু এরপরেও কিছু মানুষ থাকবে যারাধোঁকার শিকার হয়েছে এই দুনিয়ার জীবনের,ধোঁকার শিকার হয়েছে নিজেদের প্রবৃত্তিরও শয়তানের। তারাই হল চরম ব্যর্থ মানুষ,হবেতারা জাহান্নামী। হযরত আবু সাঈদ খুদরীরাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনিবলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নামেরমধ্যে (একবার) তর্ক হল। জাহান্নাম বললঃঅহংকারী ও উদ্ধত যারা, তারাই আমার মধ্যেপ্রবেশ করবে। জান্নাত বললঃ আমার মধ্যেআসবে ঐ সব লোক, যারা মিসকিন ও অসহায়।আল্লাহ উভয়ের মাঝে ফায়সালা করেদিলেন। (এবং বললেন), জান্নাত, তুমি আমাররহমত। যে বান্দার প্রতি রহম করার ইচ্ছা হবে,তোমার সাহায্যে আমি তার প্রতি রহম করব।আর জাহান্নাম, তুমি হচ্ছো, আমার আযাব ওশাস্তি। যাকে ইচ্ছা করব, তোমার দ্বারাআমি তাকে শাস্তি দিব। বলাবাহুল্য,তোমাদের উভয়কে পূর্ণ করার দায়িত্ব আমার।(মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন)একটু চিন্তা করুন,সে জগতের মানুষের অবস্থাকেমন হতে পারে,যারা সর্বশেষ ও চূড়ান্তসিদ্ধান্ত হিসেবে মৃত্যু কামনা করবে। এরশাদহচ্ছে : “তারা (জাহান্নামের দায়িত্বেনিয়োজিত ফেরেশতাকে) ডেকে বলবে, হেমালেক,(বলুন) তোমার রব আমাদের কিস্সাখতম করে দিন।” ইবনে আব্বাস রা. বলেন : একহাজার বৎসর পর তাদের কথার উত্তর খুবকঠোর ও ঘৃণিত ভাষায় দেয়া হবে। এরশাদহচ্ছে : “সে বলবে : নিশ্চয় তোমরা চিরকালথাকবে।”(৪৪:৭৭)অতঃপর তারা আল্লাহর দরবারে স্বীয়আভিযোগ উত্থাপন করবে এবং বলবে : “হেআমাদের রব, আমাদের অনিষ্ট আমাদেরকেপরাভূত করেছে। আমরা ছিলাম বিভ্রান্তজাতি। হে আমাদের রব, এ থেকেআমাদেরকে উদ্ধার কর, আমরা যদি পুনরায়তা করি, তাবে আমরা নিশ্চিতঅত্যাচারী।”(২৩:১০৬-১০৭) দুনিয়ার দ্বিগুন বয়সপরিমাণ চুপ থাকার পর আল্লাহ তাআলাবলবেন : “আল্লাহ বলবেন, তোমরা ধিকৃতঅবস্থায় এখানেই পড়ে থাক, এবং আমারসাথে কোনো কথা বল না”। (সূরা মুমিনুন ১০৮)এ কথা শুনার পর নৈরাশ্য তাদের আচ্ছন্ন করেনিবে,তাদের হতাশা বেড়ে যাবে, রুদ্ধ হয়েযাবে তাদের গলার আওয়াজ। শুধু বুকের ঢেকুর,চিৎকার, আর্তনাথ আর কান্নার শব্দ সর্বত্রভেসে বেড়াবে, তারা সর্বনাশ বলে চিৎকারকরবে আর মৃত্যুকে আহবান করতে থাকবে।তাদের বলা হবে : “আজ তোমরা এক মৃত্যুকেডেক না, অনেক মৃত্যুকে ডাক।”(সূরা ফুরকান৩৪)কিন্তু হায়, মৃত্যু আর কখনো ঘটবে না।“কেয়ামতের দিন মৃত্যুকে কালো মেষআকৃতিতে জান্নাত-জাহান্নামের মাঝখানেহাজির করা হবে। অতঃপর বলা হবে, হেজান্নাতবাসী, তোমরা একে চিন? তারা উঁকিদিয়ে তাকাবে এবং বলবে, হ্যাঁ, এ হলো মৃত্যু।এরপর তাকে জবাই করার নির্দেশ দেওয়াহবে। অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসীগন,তোমরা চিরস্থায়ী, আর মুত্যু নেই। হেজাহান্নাম বাসীগণ, তোমরা চিরস্থায়ী, আরমৃত্যু নেই। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম তেলাওয়াত করলেন :“তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিবসসম্বন্ধে, যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে;তারাঅসাবধানতায় আছে, তারা ঈমান আনছেনা।” (বুখারী,মুসলিম)প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা,দুনিয়াতে আমাদের অবস্থান অতি সামান্যকিছু সময়ের জন্য। কিন্তু কতটুকু সামান্য তাআরও স্পষ্টভাবে অনুধাবন করা যাবে যদিআমরা আখিরাতের অনন্ত অসীম কালেরসাথে একটু তুলনা করি, আসুন দেখিজাহান্নামী লোকেরা কি বলছে, “আল্লাহবলবেনঃ তোমরা পৃথিবীতে কতদিন অবস্থানকরলে বছরের গণনায়? তারা বলবে,আমরাএকদিন অথবা দিনের কিছু অংশ অবস্থানকরেছি। অতএব আপনি গণনাকারীদেরকেজিজ্ঞেস করুন। আল্লাহ বলবেনঃ তোমরাতাতে অল্পদিনই অবস্থান করেছ, যদি তোমরাজানতে”? (সূরা মুমিনুন ১১১-১১৩)বস্তুতঃ দুনিয়ার জীবন শুধু সামান্য কিছুসময়ের জন্যেই নয় বরং তা অতি তুচ্ছ-নগণ্যওবটে। দেখুন এই দুনিয়ার ভোগ বিলাস যাকিনা আমাদের ভুলিয়ে রাখে সেই দুনিয়াকেকিসের সাথে তুলনা দিয়েছিলেন আল্লাহররাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ,একটি মৃত কান কাটা ছাগলের সাথে ! হযরতজাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো একটি বাজারের উপর দিয়েযাচ্ছিলেন, আর তাঁর দুপাশে ছিলেনসাহাবায়ে কিরাম(রাদিয়াল্লাহু আনহুম)।তিনি যখন একটি কানকাটা মরা ছাগল ছানারপাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি এর কানধরে তাঁদের জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদেরকেউ কি এক দিরহামের বিনিময়ে এটাকিনতে রাজি আছো? তাঁরা বললেন, আমরাকোনো কিছুর বিনিময়ে এটা কিনতে রাযিরাজি নয়; আর আমরা এটা দিয়ে করবই বাকি ?তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরাবিনামূল্যে এটা নিতে রাজি আছো?তাঁরা বললেন, আল্লাহর কসম ! এটা যদিজীবিতও থাকতো, তবু তো এটা ত্রুটিপূর্ণ;কেননা এটার কানকাটা। তবে মৃতটাকে দিয়েকি হবে?অতঃপর তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম করেবলছি !তোমাদের কাছে এ ছাগল ছানাটাযেরুপ নিকৃষ্ট দুনিয়াটা আল্লাহর কাছে এরচাইতেও বেশি নিকৃষ্ট। (মুসলিম)এই দুনিয়ার জীবনের তুচ্ছতা যার কাছে ধরাপড়ে সে পায় মহান আল্লাহর তরফ থেকেভালোবাসা,হযরত আবুল আব্বাস সাহল ইবন সা’দ সাঈদী(রা) থেকে বর্ণিত। তিন বলেন, একদা জনৈকব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, ইয়ারাসুলুল্লাহ ! আমাকে এমন কোনো আমলেরকথা বলে দিন, যখন আমি তা করবো,তখনআল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষওআমাকে ভালোবাসবে। উত্তরে তিনি বললেন,দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হও, আল্লাহতোমাকে ভালোবাসবেন; আর মানুষের কাছেযা কিছু আছে, সেদিকে লোভ করো না,মানুষও তোমাকে ভালোবাসবে। হাদীসটিহাসান, ইবন মাজাহ এটি বর্ণনা করেছেন।কাজেই একজন সুস্থ ও বিবেকমান মানুষহিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল, এইদুনিয়ার প্রতি ঠিক ততটুকু মনোযোগ দেয়া যাআমাদের পরকালের জীবনকে ব্যাহত না করেকরা যায়। আখেরাতের জীবনের সামান্যতমক্ষতিও এক বিশাল এবং অপূরণীয় ক্ষতি, যাদুনিয়ার জীবনের তুলনায় কিছুই নয়। পরকালেরসেই অনন্ত অসীম জীবনকে গড়ে তোলার সময়হল এখনই, কারণ এই দুনিয়াতে অবস্থান করেইআমাদেরকে আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহকরতে হবে। নেক কাজের দিকে সত্ত্বরঅগ্রসর হতে হবে,হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ৭টি জিনিসপ্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই তোমরা নেক কাজেরদিকে সত্ত্বর অগ্রসর হও। সেগুলো এইঃ১ তোমরা তো অপেক্ষমান শুধু এমনদারিদ্রেরই যা তোমাদের অমনোযোগীবানিয়ে দেবে২ বা এমন প্রাচুর্যের যা তোমাদেরসীমালংঘন করিয়ে দেবে৩ অথবা এরূপ রোগ ব্যধির যা তোমাদেরপাপাসক্ত করিয়ে ছাড়বে৪ এমন বৃদ্ধাবস্থার যা জ্ঞান-বুদ্ধিকেবিলোপ করে দেবে৫ এমন মৃত্যুর যা অচিরেই সংঘটিত হবে৬ কিংবা দাজ্জালের, যা কিনা নিকৃষ্টঅনুপস্থিত বস্তু, যার জন্যে অপেক্ষা করাহচ্ছে৭ অথবা কিয়ামতের যা অত্যন্ত বিভীষিকাময়ও কঠিন। (তিরমিযি, রিয়াদুস সালেহীন)ভালো মানুষ এবং জান্নাতী হওয়ার কিছুউপায় সম্পর্কে আসুন জেনে নিই,১ কোমল হৃদয়ের অধিকারী হওয়াঃ আবুহুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেবর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, “জান্নাতেএমন কিছু সম্প্রদায় প্রবেশ করবে, যাদেরঅন্তর পাখির অন্তরের মত হবে।” বর্ণনায় :মুসলিম. অন্তর হবে পাখিদের অন্তরের মত। এরঅর্থ হল, তারা পাখিদের মততাওয়াক্কুলকারী। বা তারা কোমল হৃদয়েরমানুষ।হযরত ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি কিজানাব না কোন লোক দোযখের আগুনের জন্যহারাম অথবা কার জন্য দোযখের আগুনহারাম? (তাহলে শোন) দোযখের আগুনপ্রত্যেক ব্যক্তির জন্য হারাম যে লোকদেরনিকটে বসে বা তাদের সাথে মিলেমিশেথাকে। যে কোমলমতি, নরম মেজাজ ও বিনম্রস্বভাব বিশিষ্ট”। (তিরমিযি)অপরদিকে, “যাকে কোমলতা থেকে বঞ্চিতকরা হয়েছে, তাকে সব ধরণের কল্যাণথেকেই বঞ্চিত করা হয়েছে”। (মুসলিম)এজন্যেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, “আমি কিতোমাদের দোযখীদের বিষয়ে জানাব না?তারা হলঃ প্রত্যেক অহংকারী,সীমালঙ্ঘনকারী, বদমেজাজী ও উদ্ধত লোক”।(বুখারী,মুসলিম)কাজেই আমাদেরকে হতে হবে মানুষের প্রতিসদয় আচরণকারী ও কোমল স্বভাব বিশিষ্ট।কারণ, হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাথেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,“যে জিনিসে কোমলতা থাকে, কোমলতাসেটিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে দেয়। আর যেজিনিস থেকে কোমলতা ছিনিয়ে নেয়া হলসেটাই দোষত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়”। (মুসলিম)অনুসরণ করতে হবে বিনয় ও নম্রতার নীতি, “যেলোক শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয় ওনম্রতার নীতি অবলম্বন করে, মহামহিমআল্লাহ তার মর্যাদা উন্নত করে দেন”।(মুসলিম)২. এমন কিছু কাজ যা করা সহজ কিন্তপুরষ্কার অনেক বেশিঃ রাস্তা থেকেকষ্টদায়ক কিছু সরিয়ে দেয়া, জন্তুজানোয়ারের প্রতি করুণা করা, উত্তমচরিত্র,কথা ও কাজে সততা, ক্রোধ সংবরণকরা এবং রাগ না করা, রোগী দেখতেযাওয়া ও সেবা করা, মুসলিম ভাইদের সাথেদেখা সাক্ষাৎ করা, বেচাকেনার ক্ষেত্রেউদার হওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিরমানদন্ডে কথা বলা।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেবলতে শুনেছি: ‘‘আমি একজন লোককেজান্নাতে এপাশ ওপাশ করতে দেখেছিরাস্তার উপর থেকে একটি গাছ কেটেফেলার কারণে যার দরূন মানুষের চলাফেরায়কষ্ট হতো’’। [মুসলিম]আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন: ‘‘এক ব্যক্তি একটিকুকুরকে পিপাসায় মাটি চাটতে দেখে।অতঃপর লোকটি নিজের মোজার সাহায্যেকুকুরটিকে পানি পান করালো। ফলে আল্লাহতাকে প্রতিদান দিলেন এবং জান্নাত দানকরলেন’’। [বুখারী]আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতযে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘আমি জান্নাতের আঙ্গিনায়এমন একটি ঘরের গ্যারান্টিদাতা, যে ঘরটি ঐব্যক্তির জন্য হবে, হকদার হওয়া সত্ত্বেও যেঝগড়া করে না। অনুরূপভাবে আমি জান্নাতেরমাঝে ঐ ঘরেরও গ্যারান্টিদাতা, যে ঘরটি ঐব্যক্তির জন্য, যে ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলেনা। তদুপরি জান্নাতের উপরিভাগের ঐঘরেরও আমি জামিনদার, যে ঘরটি হবে উত্তমচরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির জন্য’’। [আবুদাউদ এ হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন এবংআলবানী একে সহীহ বলেছেন]আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন, ‘‘নিঃসন্দেহে সততা পূণ্যের দিকেপথ দেখায়। আর পূণ্য জান্নাতের দিশা দেয়।একজন ব্যক্তি সত্য বলতে বলতে সত্যবাদীহয়ে যায়। পক্ষান্তরে মিথ্যা কথা খারাপ ওগুনাহের দিকে ঠেলে দেয়। আর গুনাহ ও পাপদোযখের দিকে নিয়ে যায়। একজন ব্যক্তিমিথ্যা বলতে থাকে। এভাবে সে আল্লাহরনিকট মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়ে যায়’’।[বুখারী ও মুসলিম]আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত যে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন: ‘‘আমাকেএমন একটি আমল শিক্ষা দিন যা আমাকেজান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,ক্রোধান্বিত হয়ো না, তাহলে জান্নাতেযাবে।’’ [তাবারানী এ হাদীস বর্ণনা করেছেনএবং আলবানী সহীহ বলেছেন]সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তিকোন রুগীকে দেখতে গেল, সে ফিরে নাআসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল কুড়ানো অবস্থায়থাকে’’। [মুসলিম]আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘যে ব্যক্তি কোনরুগীকে দেখতে গেল অথবা আল্লাহরসন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোন ভাইকে দেখতেগেল, তখন একজন আহবানকারী তাকে ডেকেবলে: তোমার ও তোমার চলার পথ কল্যাণময়হোক, সুন্দর হোক। তুমি জান্নাতে তোমারবাসস্থান করে নিয়েছ’’। [ইবনে মাজাহ,তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবংআলবানী অন্যান্য হাদীসের সমর্থনে একেসহীহ বলেছেন]উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘আল্লাহতা’লা এমন এক ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশকরাবেন, যে বেচাকেনায়, বিচার ফয়সালাকরায় এবং বিচার চাওয়ায় সরলতা অবলম্বনকরেছে’’। [ইমাম আহমাদ ও নাসায়ী হাদীসটিরেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী একেউত্তম বলেছেন। আর আহমাদ শাকির এরসনদকে সহীহ বলেছেন]আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘যে বান্দা আল্লাহরসন্তুষ্টির মানদন্ডে কথা বলে, এ ব্যাপারেকোন ভ্রূক্ষেপ করে না। একথার দরূন আল্লাহতার মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। অন্যদিকে যেব্যক্তি আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলেঅথচ এ ব্যাপারে ভ্রূক্ষেপও করে না, আল্লাহতাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন’’।[বুখারী]৩. জান্নাতের মধ্যে মুসলিম ব্যক্তির সবচেয়েমর্যাদাপূর্ণ ও সুন্দর স্থান হলো যে ব্যক্তিআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথী হবে। আর কন্যাদের সঠিকশিক্ষাদান ও লালন পালন করা এবংইয়াতীমের দায়িত্ব গ্রহণ করা জান্নাতেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরসান্নিধ্য পাওয়া ও তাঁর প্রতিবেশী হওয়ারসুনিশ্চিত কারণ।আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘যে ব্যক্তি দু’ কন্যাকে সাবালিকা হওয়াপর্যন্ত লালন পালন করে, কিয়ামতের দিনআমি ও সে একত্রে থাকব’’ , এই বলে তিনিতাঁর দু’ আঙ্গুলকে একত্র করে দেখালেন।[মুসলিম]সহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহররাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেন: ‘‘আমি এবং ইয়াতিমের অভিভাবকজান্নাতে এভাবে থাকব’’। এ কথা বলে তিনিশাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুল দু’টোকে একত্রেমিলিয়ে দু’টোর মাঝে একটু ফাঁক রাখলেন’’।[বুখারী]৪. পিতামাতা উভয়ের প্রতি অথবা যে কোনএকজনের প্রতি সদ্ব্যবহার করাও জান্নাতেযাওয়ার উপায়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমিআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‘‘ঐ ব্যক্তির নাকধুলো মলিন হোক (৩ বার) অর্থাৎ সে ধ্বংসহোক। প্রশ্ন করা হলো: হে আললাহর রাসূল!কোন ব্যক্তির? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) জবাব দিলেন: ‘‘যে ব্যক্তিপিতামাতাকে অথবা তাদের যে কোনএকজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল, তারপরওজান্নাতে যেতে পারলো না’’। [মুসলিম]আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি:‘‘পিতা হলো জান্নাতের মাঝের দরজা। তুমিচাইলে এ দরজার হেফাযত করতে পার অথবাহারাতে পার’’। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ওআহমাদ এটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানীএকে সহীহ বলেছেন]জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লামের নিকট এসে যুদ্ধে যাওয়ারইচ্ছা প্রকাশ করলো। নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে তার মা আছেকিনা জিজ্ঞাসা করলো। লোকটি বললো:জী, আমার মা আছেন। নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘তুমিসার্বক্ষণিক তার দেখাশুনা কর, কেননা তারপায়ের নিকটেই জান্নাত রয়েছে’’।[আহমাদ,নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ এ হাদীসরেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী একেউত্তম ও সহীহ বলেছেন]৫. মানুষের অন্যতম প্রধান কাজ হল তারজিহবা ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করা।সুতরাং যে ব্যক্তি এ দু’টো হেফাযতেরদায়িত্ব নিবে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম তার জান্নাতের ব্যাপারেদায়িত্ব নিবেন। সহল ইবন সা’দ রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালেরমাঝের বস্তু (জিহবা) এবং দু’ পায়েরমধ্যখানের (লজ্জাস্থান) হেফাযতেরগ্যারান্টি দিবে, আমি তার জান্নাতেরব্যাপারে গ্যারান্টি দেব’’। [বুখারী]“বস্তুত মহান আল্লাহ অশ্লীল ভাষী নিরর্থকবাক্য ব্যয়কারীর সাথে দুশমনীরাখেন” (তিরমিযি, রিয়াদুস সালেহীন)৬. মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর পক্ষ থেকেসাক্ষীস্বরূপ। সুতরাং মানুষ যার পক্ষে ভালসাক্ষ্য দেয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করে।আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত, তিনি বলেন: একদা একটি লাশেরপাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তার ভালপ্রশংসা করা হল। তখন নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘‘ওয়াজিবহলো, ওয়াজিব হলো, ওয়াজিব হলো’’।অনুরূপভাবে আরো একটি লাশের পাশ দিয়েঅতিক্রম করা হল। এটি সম্পর্কে খারাপবর্ণনা করা হলো।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম তখন বললেন, ‘‘ওয়াজিব হলো’’ (৩বার)। এরপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এরকারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরেবললেন: ‘‘তোমরা যার ভাল প্রশংসা কর, তারজন্য জান্নাত অপরিহার্য হয়ে যায়। আরতোমরা যার খারাপ বর্ণনা কর, তার জন্যজাহান্নাম অপরিহার্য হয়ে যায়। তোমরাপৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী’’ (৩ বার বললেন)।[বুখারী ও মুসলিম]৭. সবরকারীগণঃ আল্লাহ তা’লা এরশাদকরেন: ‘‘নিশ্চয় সবরকারীগণকে বেহিসাবীপ্রতিদান দেয়া হয়’’। [সূরা আযযুমার: ১০]তাই সবর হলো আল্লাহর প্রতি বান্দার ঈমানএবং তাঁর নৈকট্যের আলামতসমূহের একটিআলামত। সুতরাং যে ব্যক্তি তার প্রিয়জনযথা: সন্তান, ভাই-বেরাদার ইত্যাদির মৃত্যুতেধৈর্য্য ধারণ করে, সে জান্নাতী।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘আল্লাহতা’লা বলেন, আমার মু’মিন বান্দার নিকটথেকে যখন তার অতি প্রিয়জনের জান কবযকরা হয়, আর সে আল্লাহর নিকট সাওয়াবেরআশা করে ধৈর্য্যধারণ করে, তার প্রতিদানআমার নিকট জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়’’।[বুখারী]আবু মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যখন কোন বান্দারসন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তাঁরফেরেস্তাদের জিজ্ঞাসা করেন: তোমরাকি আমার বান্দার সন্তানের জান কবজকরেছো? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ বলেন,তোমরা কি তার কলিজার টুকরার জান কবজকরেছো? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ আবারবলেন, আমার বান্দা কি বললো?ফেরেস্তারা জবাব দেন, সে আল্লাহরপ্রশংসা করেছে এবং বলেছে: ( ﺇﻧﺎ ﻟﻠﻪ ﻭﺇﻧﺎ ﺇﻟﻴﻪﺭﺍﺟﻌﻮﻥ ) ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবংআল্লাহর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন করতেহবে’। আল্লাহ তখন বলেন: তোমরা আমারবান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করএবং এ ঘরটির নাম দাও ‘বায়তুল হামদ’ বাপ্রশংসার ঘর’’। [তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনাকরেছেন এবং আলবানী উত্তম বলেছেন]যে ব্যক্তি অন্ধ হয়েও ধৈর্য্যধারণ করে সেজান্নাতে যাবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আল্লাহররাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেবলতে শুনেছি: ‘‘আল্লাহ তা’লা বলেন, ‘আমারবান্দাকে তার দু’টি প্রিয় বস্তু (অর্থাৎ চোখ)কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করি। অতঃপর সেধৈর্য্যধারণ করে। আমি এ দু’টোর পরিবর্তেতাকে জান্নাত দান করি’’। [বুখারী]৮. যে মুসলিম নারী সৎ কাজে তার স্বামীরআনুগত্য করে এবং আল্লাহর হুকুম আহকামপালন করে,সে জান্নাতের যে দরজা দিয়েইচ্ছা প্রবেশ করবে।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘যদি কোনমহিলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে,রমযানের রোযা পালন করে, লজ্জাস্থানেরহেফাযত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, সেজান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশকরবে’’। [ইবনু হিববান এটি বর্ণনা করেছেনএবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]৯. মুসলিম মহিলা প্রসবের সময় মারা গেলেতার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে তারপ্রসব বেদনা তাকে জান্নাতের দিকে নিয়েযায়। রাশেদ ইবন হুবাইশ থেকে বর্ণিতযে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহর পথে নিহতব্যক্তি শহীদ, প্লেগরোগে মারা যাওয়াব্যক্তি শহীদ, ডুবে মরে যাওয়া ব্যক্তি শহীদ,পেটের পীড়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদ,আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদ, অসুস্থঅবস্থায় মৃত ব্যক্তি শহীদ এবং সন্তানপ্রসবের পর নেফাস অবস্থায় মৃত মহিলা, তারসন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার কারণে সে জান্নাতেচলে যায়’’। [আহমাদ হাদীসটি বর্ননাকরেছেন, আলবানী একে উত্তম বলেছেন]১০. যে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকলোআল্লাহর রাসূল তাকে জান্নাতে নেয়ারজামিন হলো। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের নিকট হাত নাপাতার দায়িত্ব নিবে, আমি তাকেজান্নাতে নেয়ার দায়িত্ব নেব’’। [আহমাদ,নাসায়ী, ইবনে মাজাহ ও আবু দাউদ হাদীসটিরেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী একেসহীহ বলেছেন]১১. যে ব্যক্তি নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতেগিয়ে নিহত হয়,সেও জান্নাতী। আবদুল্লাহইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতযে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি সম্পদরক্ষার নিমিত্তে নিপীড়িত হয়ে মারা যায়,তার জন্য রয়েছে জান্নাত’’। [নাসায়ী এটিবর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহবলেছেন]১২. প্রিয় পাঠক! আপনার জন্য রয়েছেজান্নাত, যদি আপনি সালাম প্রচার করেন,অন্যকে খাদ্য দান করেন, আত্মীয়তার সম্পর্কবজায় রাখেন এবং রাতের বেলা মানুষঘুমিয়ে গেলে সালাত আদায় করেন।আবদুল্লাহ ইবন সালাম থেকে বর্ণিত যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘হে মানব সকল! তোমরাসালামের প্রসার কর, খাদ্য প্রদান কর,আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ এবং মানুষঘুমিয়ে গেলে রাতের সালাত আদায় কর।তাহলে নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে’’।[তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ ও হাকেমহাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন এবংআলবানী সহীহ বলেছেন]শুরাইহ ইবন হানী তার পিতা থেকে বর্ণনাকরেন যে, তিনি বলেছেন: ‘‘হে আল্লাহররাসূল! আমাকে এমন বিষয়ে অবহিত করুন যাআমার জান্নাতে যাওয়াকে নিশ্চিত করবে।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউত্তরে বললেন:তুমি সর্বদা উত্তম কথা বলবেএবং খাদ্য দান করবে’’। [বুখারী আদাবুলমুফরাদে এবং হাকেম হাদীসটি বর্ণনাকরেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]১৩. যে ব্যক্তি অহংকার, ঋণ ও যুদ্ধে লব্ধগণীমতের মালের খেয়ানত থেকে মুক্তঅবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে।সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তিঅহংকার, গণীমতের সম্পদে খেয়ানত করাএবং ঋণ থেকে মুক্ত অবস্থায় মারা গেল, সেজান্নাতে প্রবেশ করলো’’। [তিরমিযী,নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ এটি রেওয়ায়েতকরেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]১৪. আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতকে অবলম্বনকরে যারা মুসলিম জামায়াতকে মজবুতভাবেআঁকড়ে ধরে থাকবে, তারা জান্নাতেরমধ্যবর্তী স্থানে প্রবেশ করবে। উমাররাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে,আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘তোমাদের জন্য ইসলামীজামায়াতকে আঁকড়ে ধরা অপরিহার্য। আরবিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে বেঁচে থাক। কেননাএকা একা থাকলে শয়তান তার সঙ্গী হয়। আরজামায়াতবদ্ধ দু’ ব্যক্তি থেকে শয়তান অনেকদূরে অবস্থান করে। যে ব্যক্তি জান্নাতেরমধ্যবর্তী স্থান পাওয়ার আশা করে, সে যেনঅবশ্যই ইসলামী জামায়াতকে আঁকড়ে ধরে’’।[তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবংআলবানী সহীহ বলেছেন]১৫. ন্যায়পরায়ণ শাসক,কোমল হৃদয়েরঅধিকারী দয়ালু ব্যক্তি এবং চরিত্রবান ওসুরুচিপূর্ণ পরিবার প্রধানজান্নাতবাসীদেরঅন্তর্গত। ইয়ায ইবন হিমার রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন: ‘‘তিনশ্রেণীর লোকেরাজান্নাতবাসী হবে। এক:ন্যায়পরায়ণ, দাতা ওআল্লাহর তাওফীকপ্রাপ্ত শাসক, দুই: দয়ালুব্যক্তি যার অন্তর প্রতিটি আত্মীয় ওমুসলিমের জন্য কোমল, এবং তিন: সুরুচিপূর্ণচরিত্রবান পরিবার প্রধান’’।[মুসলিম]১৬. যে বিচারক ন্যায় ও ইনসাফের সাথেমানুষের বিচার ফয়সালা করে, সেজান্নাতী। বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবীসাল্লাল্ল-াহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেবর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: ‘‘বিচারকগণতিন প্রকার। দুই শ্রেণীর বিচারক হবেজাহান্নামী আর এক শ্রেণীর বিচারক হবেজান্নাতী। যে ব্যক্তি সত্য জেনে সেঅনুযায়ী ফয়সালা করলো, সে জান্নাতী। অন্যদিকে যে ব্যক্তি না জেনে মূর্খতাবশতঃফয়সালা দেয়, সে জাহান্নামী। আর যেব্যক্তি সত্য জানার পরও যুল্ম করলো, সেজাহান্নামী’’।[আবু দাউদ, তিরমিযী,নাসায়ী,ইবনে মাজাহ ও হাকেম হাদীসটি রেওয়ায়েতকরেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]১৭. সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবেজান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা হল যারাকারো নিকট ঝাড়ফুঁক চায়নি, পাখি দ্বারাভাগ্য নির্ণয় করেনি এবং কারো নিকটবিশেষ চিকিৎসা চায়নি।ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘আমারউম্মাতের মধ্যে ৭০ হাজার হিসাব ছাড়াইজান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবাগণজিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল!তারা কারা? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তারা হলো যারা কারোনিকট ঝাড়ফুঁক চায়না, পাখির সাহায্যে ভাগ্যনির্ধারণ করে না, কারো নিকট বিশেষচিকিৎসার জন্য যায় না। বস্তুতঃ তারাতাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে’’।[বোখারী ও মুসলিম]লক্ষ্যণীয় যে, শরীয়তসম্মত ঝাড়ফুঁক এবংবিশেষ চিকিৎসা করা শরীয়তে নিষিদ্ধ নয়।কিন্তু আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা করাউত্তম।১৮. কতগুলো গুণ ও বৈশিষ্ট্য কোন মুসলিমব্যক্তির মধ্যে অর্জিত হলে এগুলোর কারণেসে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত হবে।উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘তোমরা তোমাদেরনিজেদের মধ্যে ৬টি গুণ অর্জনের জামিন হও,আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিনহবো।এক: কথা বলার সময় সত্য বলবে,দুই: ওয়াদা করে তা পূরণ করবে,তিন: তোমাদের নিকট আমানাত রাখা হলেসে আমানাত আদায় করবে,চার: লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে,পাঁচ: দৃষ্টিকে সংযত রাখবে,ছয়: তোমদের হাতকে অন্যায় করা থেকেবিরত রাখবে’’।[আহমাদ, ইবনু হিববান ও হাকিম হাদীসটিবর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহবলেছেন]আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে আজ কে রোযারেখেছো? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুবললেন, আমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বললেন: তোমাদের মধ্যে আজকে জানাযার অনুসরণ করেছো? আবু বকররাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি। নবীসাল্লাল্ল¬¬াহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবললেন: তোমাদের কে আজ মিসকীনকেখাদ্য দান করেছো? আবু বকর রাদিয়াল্লাহুআনহু বললেন, আমি। নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় বললেন:তোমাদের মধ্যে কে আজ রুগীর সেবাকরেছো? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন,আমি। অতঃপর রাসূল সাল্ল¬ল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লা¬ম বললেন: উপরোক্ত গুণাবলী যেব্যক্তির মধ্যে একত্রিত হবে সে অবশ্যইজান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [বুখারী ও মুসলিম]১৯. অপরদিকে আসুন আরো একবার জেনে নিইসে কত ব্যাকুলভাবে আল্লাহর রাসূলআমাদেরকে উপদেশ দিয়ে গেছেননিজেদেরকে সংশোধন করার জন্যে ,মসজিদে মিম্বরে দাঁড়িয়ে আল্লাহর রাসূলবলছেন, “আমি তোমাদেরকে জাহান্নামথেকে সতর্ক করছি। আমি তোমাদেরকেজাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। আমিতোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ককরছি।” সে দিন রাসূলের আওয়াজ পাশেঅবস্থিত বাজারের লোকজনও শুনতেপেয়েছিল।অস্থিরতার ধরুন কাঁধের চাদরপর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল। তিনি আরো বলতেছিলেন :ﻣﺎ ﺭﺃﻳﺖ ﻛﺎﺍﻟﻨﺎﺭ ﻧﺎﻡ ﻫﺎﺭﺑﻬﺎ , ﻭﻻ ﻛﺎﻟﺠﻨﺔ ﻧﺎﻡ ﻃﺎﻟﺒﻬﺎ .( ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ )“আমি জাহান্নামের মত ভয়ংকর কোন জিনিসদেখিনি, যার পলায়নকারীরা ঘুমন্ত।জান্নাতের মত লোভনীয় কোন জিনিসদেখিনি, যার সন্ধানকারীরাঘুমন্ত।” (তিরমিযি, সহীহ)কাজেই নেক আমল করার সাথে সাথেআমাদের জীবনকে গড়ে তুলতে হবে আল্লাহরপ্রতি ভয় ও আশার ভারসাম্যের মাধ্যমে।নিজেদেরকে সংশোধিত করে নিতে হবে।কত চমৎকারভাবে এই ভারসাম্যের কথাবলেছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম, “ঈমানদাররা যদিআল্লাহর আযাব সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিতথাকতো, তবে কেউ তাঁর জান্নাতের
No comments:
Post a Comment