ইমাম ও ইমামতি- ১ম পর্ব
লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী)
সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী
লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী)
সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী
আল্ হাল হামদুলিল্লাহ, ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ্, আম্মা বাদ:
ইমাম ও ইমামতি ইসলাম ধর্মের এবং মুসলিম সমাজের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল প্রয়োজনীয় বিষয়। একটি দেশ থেকে নিয়ে একটি গ্রাম পর্যন্ত এমনকি একটি পরিবারেও এই পদের প্রয়োজনীয়তা লক্ষণীয়। তাই এই বিষয়টির সম্পর্কে আমাদের সমাজের প্রত্যেক ইমামকে বিশেষ ভাবে এবং অন্যান্য মুসলিমদের সাধারণ ভাবে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। উক্ত কারণে বিষয়টির অবতারণা। আল্লাহ যেন সঠিক লেখার এবং তার প্রতি আমল করার তাওফীক দেন। আমীন।
ইমাম শব্দের আভিধানিক অর্থ:
ইমাম ও ইমামতি ইসলাম ধর্মের এবং মুসলিম সমাজের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল প্রয়োজনীয় বিষয়। একটি দেশ থেকে নিয়ে একটি গ্রাম পর্যন্ত এমনকি একটি পরিবারেও এই পদের প্রয়োজনীয়তা লক্ষণীয়। তাই এই বিষয়টির সম্পর্কে আমাদের সমাজের প্রত্যেক ইমামকে বিশেষ ভাবে এবং অন্যান্য মুসলিমদের সাধারণ ভাবে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। উক্ত কারণে বিষয়টির অবতারণা। আল্লাহ যেন সঠিক লেখার এবং তার প্রতি আমল করার তাওফীক দেন। আমীন।
ইমাম শব্দের আভিধানিক অর্থ:
আরবী ভাষার বিশিষ্ট অভিধান ‘লিসানুল আরবে’ উল্লেখ হয়েছে, ‘মানুষ যার অনুসরণ করে, তাকে ইমাম বলে’।
ইবনু সীদাহ বলেন: ‘প্রধান ব্যক্তি কিংবা মানুষের অনুকরণীয় ব্যক্তিকেই ইমাম বলা হয়। এর বহুবচন হচ্ছে, ‘আইম্মাহ’-ইমামগণ। [লিসানুল আরব, ইবনে মনজুর,১২/২৪]
ফিকাহ বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, ইমাম তাকেই বলা হয় কোন সম্প্রদায় যার অনুসরণ করে। সেই সম্প্রদায় সঠিক পথের অধিকারী হোক অথবা পথ ভ্রষ্ট হোক হোক।
ফিকাহ বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, ইমাম তাকেই বলা হয় কোন সম্প্রদায় যার অনুসরণ করে। সেই সম্প্রদায় সঠিক পথের অধিকারী হোক অথবা পথ ভ্রষ্ট হোক হোক।
সঠিক পথের অধিকারী অর্থে আল্লাহ বলেছেন: “আর তাদের বানিয়েছিলাম ইমাম (নেতা) তারা আমার নির্দেশে মানুষকে সঠিক পথ দেখাত।” [আম্বিয়া/৭৩]
পথ ভ্রষ্ট অর্থে: আল্লাহ বলেন: “আমি তাদের ইমাম (নেতা) করেছিলাম। তারা জাহান্নামের দিকে আহ্বান করত, কিয়ামতের দিন তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।” [কাসাস/৪১] [ ফিকহ্ বিশ্বকোষ,৬/২১৬-২১৭]
আর ইমামাহ্-প্রচলিত ভাষায় যাকে আমরা ইমামতি বলি- তা আরবী আম্মা-ইয়াউম্মু শব্দের মাসদার বা উৎস, যার আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা। শব্দটি অগ্রবর্তী হওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়। আরবী ভাষায় বলা হয়, আম্মাহুম এবং আম্মা বিহিমঃ অর্থাৎ যখন সে অগ্রবর্তী হয়। [ঐ, ৬/২০১]
ইমামতির পারিভাষিক অর্থ:
ফকীহ তথা ইসলামী বিদ্বানগণের পরিভাষায় ইমামত দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যথা:
আর ইমামাহ্-প্রচলিত ভাষায় যাকে আমরা ইমামতি বলি- তা আরবী আম্মা-ইয়াউম্মু শব্দের মাসদার বা উৎস, যার আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা। শব্দটি অগ্রবর্তী হওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়। আরবী ভাষায় বলা হয়, আম্মাহুম এবং আম্মা বিহিমঃ অর্থাৎ যখন সে অগ্রবর্তী হয়। [ঐ, ৬/২০১]
ইমামতির পারিভাষিক অর্থ:
ফকীহ তথা ইসলামী বিদ্বানগণের পরিভাষায় ইমামত দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যথা:
ইমামা কুবরা (বড় ইমামত)
ইমামা সুগরা (ছোট ইমামত)।
ইসলামী পরিভাষায় বড় ইমামত হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতিনিধি হিসাবে দ্বীন ও দুনিয়ার সাধারণ নেতৃত্ব প্রদানকরা। [প্রাগুক্ত,৬/২১৬] যাকে খলীফা, রাষ্ট্রপ্রধান বা দেশের প্রধান নেতা বলা যেতে পারে।
আর ছোট ইমামত হচ্ছে নামাযের ইমামত। যে ব্যক্তি নামাযের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয় আর নামাযীরা তাঁর অনুকরণ করে থাকে। যেহেতু তিনি অনুকরণীয় এবং অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী সেহেতু তাঁকে ইমাম বলা হয়।
অবশ্য ইমাম শব্দটি আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। শব্দটির আভিধানিক অর্থকে কেন্দ্র করে এমন ব্যক্তিকেও ইমাম বলা হয়, যে বিশেষ জ্ঞানে পারদর্শী এবং সেই জ্ঞানে সে অনুকরণীয় । তাই হাদীস শাস্ত্রে বুখারী (রহ) কে ইমাম বুখারী বলা হয়। ফিকাহ শাস্ত্রে আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ইত্যাদি উলামাগণের নামের শুরুতে ইমাম লেখা হয়। এ সবই এই শব্দের ব্যাপক ব্যবহারের উদাহরণ। তবে আলোচ্য বিষয়ে আমরা ছোট ইমামত তথা নামাযের ইমামতের আলোচনা করব। ইনশাআল্লাহ।
নামাযের ইমামতের গুরুত্ব ও ফযীলতঃ
১- ইমামতি করা দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা স্বয়ং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সারা জীবন করে গেছেন। অতঃপর তাঁর মৃত্যুর পর চার খলীফা তা সম্পাদন করেছেন এবং এখনও মুসলিম সমাজের উত্তম ব্যক্তিরাই সাধারণত: সেই উত্তম কাজটি পালন করে থাকেন।
২- পাঁচ ওয়াক্ত নামায সম্পাদন করা ইসলামের দ্বিতীয় রোকন এবং ইসলামের স্পষ্ট প্রতীক যা মহান আল্লাহ জামাআতবদ্ধ ভাবে আদায় করার আদেশ করেছেন। আর সেই আদেশ ইমাম ব্যতীত বাস্তবায়িত হয় না।
৩- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমাম ও মুয়াযযিনের জন্য এই বলে দুয়া করেন:
ইমামা সুগরা (ছোট ইমামত)।
ইসলামী পরিভাষায় বড় ইমামত হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতিনিধি হিসাবে দ্বীন ও দুনিয়ার সাধারণ নেতৃত্ব প্রদানকরা। [প্রাগুক্ত,৬/২১৬] যাকে খলীফা, রাষ্ট্রপ্রধান বা দেশের প্রধান নেতা বলা যেতে পারে।
আর ছোট ইমামত হচ্ছে নামাযের ইমামত। যে ব্যক্তি নামাযের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয় আর নামাযীরা তাঁর অনুকরণ করে থাকে। যেহেতু তিনি অনুকরণীয় এবং অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী সেহেতু তাঁকে ইমাম বলা হয়।
অবশ্য ইমাম শব্দটি আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। শব্দটির আভিধানিক অর্থকে কেন্দ্র করে এমন ব্যক্তিকেও ইমাম বলা হয়, যে বিশেষ জ্ঞানে পারদর্শী এবং সেই জ্ঞানে সে অনুকরণীয় । তাই হাদীস শাস্ত্রে বুখারী (রহ) কে ইমাম বুখারী বলা হয়। ফিকাহ শাস্ত্রে আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ইত্যাদি উলামাগণের নামের শুরুতে ইমাম লেখা হয়। এ সবই এই শব্দের ব্যাপক ব্যবহারের উদাহরণ। তবে আলোচ্য বিষয়ে আমরা ছোট ইমামত তথা নামাযের ইমামতের আলোচনা করব। ইনশাআল্লাহ।
নামাযের ইমামতের গুরুত্ব ও ফযীলতঃ
১- ইমামতি করা দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা স্বয়ং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সারা জীবন করে গেছেন। অতঃপর তাঁর মৃত্যুর পর চার খলীফা তা সম্পাদন করেছেন এবং এখনও মুসলিম সমাজের উত্তম ব্যক্তিরাই সাধারণত: সেই উত্তম কাজটি পালন করে থাকেন।
২- পাঁচ ওয়াক্ত নামায সম্পাদন করা ইসলামের দ্বিতীয় রোকন এবং ইসলামের স্পষ্ট প্রতীক যা মহান আল্লাহ জামাআতবদ্ধ ভাবে আদায় করার আদেশ করেছেন। আর সেই আদেশ ইমাম ব্যতীত বাস্তবায়িত হয় না।
৩- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমাম ও মুয়াযযিনের জন্য এই বলে দুয়া করেন:
“الإمام ضامن والمؤذن مؤتمن، اللهم أرشد الأئمة واغفر للمؤذنين” أخرجه أبوداود والترمذي
“ইমাম হচ্ছে জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন আমানতদার, হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সঠিক পথ দেখাও কর এবং মুয়াজ্জিনদেরকে ক্ষমা কর”। [আবু দাউদ, নং৫১৭ / তিরিমিযী, নং ২০৭/ সহীহ সুনান আবুদাঊদ, ১/১০৫]
ইমামতীর অধিক হকদার কে?
এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
ইমামতীর অধিক হকদার কে?
এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
يَؤمُّ القومَ أقرئهم لكتابِ اللهِ، فإن كانوا في القراءةِ سواء فأعلمهم بالسنة فإن كانو في السنة سواء فأقدمهم هجرة، فإن كانوا في الهجرة سواء فأقدمهم سلما، ولا يؤَمَّنَّ الرجلُ الرجلَ في سلطانه، و لا يقعد في بيته على تكرمته إلا بإذنه” [رواه مسلم]
“লোকদের ইমামতি করবে ঐ ব্যক্তি যে তাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব সব চেয়ে বেশী পাঠ করতে পারে। যদি তারা পাঠ করার ক্ষেত্রে সমমানের হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে সুন্নতের অধিক জ্ঞানী হবে সে ইমামতি করবে। যদি সুন্নতের জ্ঞানে সকলে বরাবর হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে সর্বপ্রথম হিজরতকারী সে ইমামতি করবে। যদি তারা সকলে হিজরতের ক্ষেত্রেও বরাবর হয় তবে তাদের মধ্যে আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে সে তাদের ইমাতি করবে। কোন ব্যক্তি যেন কোন ব্যক্তির অধীনস্থ স্থানে তার অনুমতি ব্যতীত ইমামতী না করে এবং কোন ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত আসনে যেন তার অনুমতি ব্যতীত না বসে”। [মুসলিম, অধ্যায়, মাসাজিদ এবং নামাযের স্থান সমূহ, হাদীস নং ৬৭৩]
সহীহ মুসলিমে এই বর্ণনার ঠিক পরের বর্ণনায় আগে ’ইসলাম গ্রহণের স্থানে বয়সে বড় শব্দটি এসেছে।
উপরের বর্ণনানুযায়ী ইমামতির বেশী হকদার ব্যক্তিবর্গের ধারাবাহিকতা এইরূপ:
সহীহ মুসলিমে এই বর্ণনার ঠিক পরের বর্ণনায় আগে ’ইসলাম গ্রহণের স্থানে বয়সে বড় শব্দটি এসেছে।
উপরের বর্ণনানুযায়ী ইমামতির বেশী হকদার ব্যক্তিবর্গের ধারাবাহিকতা এইরূপ:
১- কুরআন সব চেয়ে বেশী পাঠকারী। এখানে সব চেয়ে বেশী পাঠকারী বলতে যার কুরআন সব চাইতে বেশী মুখস্থ আছে তাকে বুঝানো হয়েছে। কারণ আমর বিন সালমার হাদীসে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদেশ এই ভাবে উল্লেখ হয়েছে, “যখন নামাযের সময় হবে, তখন তোমাদের মধ্যে কেউ আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যার অধিক কুরআন মুখস্থ আছে সে ইমামতি করবে’’। [বুখারী, অধ্যায়, মাগাযী, হাদীস নং ৪৩০২]
২- সকলে কুরআন মুখস্থের ক্ষেত্রে সমান হলে সুন্নতের ব্যাপারে অধিক জ্ঞানী।
৩- সুন্নতের জ্ঞানেও সকলে বরাবর হলে যে ব্যক্তি কুফরের দেশ হতে ইসলামের দেশে আগে হিজরতকারী।
৪- হিজরতের ক্ষেত্রে সকলে বরাবর হলে, যে ইসলাম গ্রহণে অগ্রবর্তী।
৫- আর ইসলাম গ্রহণে সবাই বরাবর হলে, যে বয়সে বড়। যেমন সহীহ মুসলিমের পরের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
উপরে বর্ণিত পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের তরতীব নির্ণয়ে বিভিন্ন উলামা ও মাজহাবের কিছু মতভেদ থাকলেও হাদীসে বর্ণিত ধারাবাহিকতা প্রাধান্য পাবে। তবে চতুর্থের স্থানে পঞ্চম হওয়ার সম্ভাবনা হাদীস দ্বারা স্বীকৃত। অর্থাৎ হিজরতের দিক দিয়ে সকলে বরাবর হলে বয়সে বড় বেশী হকদার না ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী হকদার? এ বিষয়ে হাদীসের শব্দের ধারাবাহিকতায় পার্থক্য দেখা যায়। তাই কেউ বয়সে বড়কে প্রাধান্য দিয়েছে আর কেউ ইসলাম আগে গ্রহণকে প্রাধান্য দিয়েছে। [শারহু মুসলিম,৫ম খণ্ড, ১৭৫-১৭৭/ আর রাওযা আন নাদিয়্যাহ, মুহাম্মদ সিদ্দীক হাসান খান, ১/৩২০/ মুগনী, ইবনু কুদামাহ, ৩/১১১৬]
উপরোক্ত বিষয়ে আরো কিছু তথ্য:
২- সকলে কুরআন মুখস্থের ক্ষেত্রে সমান হলে সুন্নতের ব্যাপারে অধিক জ্ঞানী।
৩- সুন্নতের জ্ঞানেও সকলে বরাবর হলে যে ব্যক্তি কুফরের দেশ হতে ইসলামের দেশে আগে হিজরতকারী।
৪- হিজরতের ক্ষেত্রে সকলে বরাবর হলে, যে ইসলাম গ্রহণে অগ্রবর্তী।
৫- আর ইসলাম গ্রহণে সবাই বরাবর হলে, যে বয়সে বড়। যেমন সহীহ মুসলিমের পরের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
উপরে বর্ণিত পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের তরতীব নির্ণয়ে বিভিন্ন উলামা ও মাজহাবের কিছু মতভেদ থাকলেও হাদীসে বর্ণিত ধারাবাহিকতা প্রাধান্য পাবে। তবে চতুর্থের স্থানে পঞ্চম হওয়ার সম্ভাবনা হাদীস দ্বারা স্বীকৃত। অর্থাৎ হিজরতের দিক দিয়ে সকলে বরাবর হলে বয়সে বড় বেশী হকদার না ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী হকদার? এ বিষয়ে হাদীসের শব্দের ধারাবাহিকতায় পার্থক্য দেখা যায়। তাই কেউ বয়সে বড়কে প্রাধান্য দিয়েছে আর কেউ ইসলাম আগে গ্রহণকে প্রাধান্য দিয়েছে। [শারহু মুসলিম,৫ম খণ্ড, ১৭৫-১৭৭/ আর রাওযা আন নাদিয়্যাহ, মুহাম্মদ সিদ্দীক হাসান খান, ১/৩২০/ মুগনী, ইবনু কুদামাহ, ৩/১১১৬]
উপরোক্ত বিষয়ে আরো কিছু তথ্য:
ক- উপরোক্ত ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আদেশ মোস্তাহাব আদেশ, শর্ত নয় আর না ওয়াজিব। তাই অগ্রাধিকার প্রাপ্তের উপস্থিতিতে অনগ্রাধিকার প্রাপ্তের ইমমতি ফুকাহাদের সর্বসম্মতিক্রমে বৈধ। [আল্ মাওসূআহ আল ফিকহিয়্যাহ, ৬/২০৯]
খ- এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা তখন প্রযোজ্য হবে, যখন মসজিদে নির্ধারিত ইমাম থাকবে না। আর যদি মসজিদে ইমাম নির্ধারিত থাকে তাহলে সেই ইমামতি করার বেশী অধিকার রাখে; যদিও তার থেকে বেশী কুরআন পাঠকারী ও সুন্নত তথা অন্যান্য গুণের লোক উপস্থিত থাকে। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ‘‘কোন ব্যক্তি যেন কোন ব্যক্তির অধীনস্থ স্থানে কখনো ইমামতি না করে।” [শারহু মুসলিম,৫/১৭৭]
গ- হ্যাঁ, তবে সেই স্থানে যদি বড় ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) উপস্থিত হন, তাহলে নির্ধারিত ইমামও আর ইমামতি করার বেশী হোকদার হবে না; বরং সেই বড় ইমাম তখন ইমামতি করার বেশী হকদার হবেন। কারণ তাঁর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ব্যাপক। [নায়লুল আউতার,৩/২০২/ শারহু মুসলিম,৫/১৭৭]
ঘ- হাদীসে বর্ণিত উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যে যদি সকলে সমান হয়, তাহলে কী করতে হবে? এ বিষয়ে সেই হাদীসে আরো কিছু বলা হয় নি। তবে অন্যান্য দলীলের আলোকে ইসলামী পণ্ডিতদের অনেকে মনে করেন, তাহলে তাদের মধ্যে অধিক পরহেজগার ব্যক্তি অগ্রাধিকার পাবে। কারণ আল্লাহ বলেন: “অবশ্যই আল্লাহ নিকট তোমাদের মধ্যে অধিক আল্লাহ ভীরুই বেশী সম্মানীয়।” [আল হুজুরাত/১৩] এর পরেও সকলে বরাবর হলে তাদের মাঝে লটারি করতে হবে। সাহাবী সাআ’দ বিন অক্কাস (রাযিঃ) একদা আযানের ব্যাপারে লটারি করেন। তাই আযানের ক্ষেত্রে এমন করা বৈধ হলে ইমামতির ক্ষেত্রে বেশী বৈধ হবে। [মুগনী,৩/১৬]
উল্লেখ্য যে, হানাফী মাজহাবের বিভিন্ন ফিকহের বইতে উপরে বর্ণিত হাদীসের ৪-৫ টি পদ্ধতির শুধু ধারাবাহিকতাই রক্ষা করা হয় নি; বরং তারা রায় ও কিয়াসের আশ্রয় নিয়ে ২০টিরও অধিক পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, যাতে এমন কিছু বিষয় লিখেছেন যা রহস্যময়, লজ্জা জনক এবং অযৌক্তিক। যেমন দররে মুখতারের লেখক সেই সকল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে চেহারা-ছবি সুন্দর হওয়া, স্ত্রী সুন্দরী হওয়া এমন কি মাথা বড় হওয়া এবং যৌনাঙ্গ ছোট হওয়ার মত অযৌক্তিক ও লজ্জা জনক গুণাগুণকেও ইমামতির অগ্রাধিকারের কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। [দুররে মুখতার,২য় খণ্ড, পৃঃ ৯৫, যাকারিয়া বুক ডিপো দেওবন্দের ছাপা/ ত্বরীকে মুহাম্মদী, মুহাম্মদ জুনাগড়ী,১৬২-১৬৮/ সালাফিয়্যাত কা তাআ’রুফ, ড.রোযাউল্লাহ,২৭২-২৭৭]
ইমামের বেতন-ভাতা:
ইমামের অবস্থা হিসাবে এ বিষয়ের বিধান প্রযোজ্য হবে। একজন ইমামের সাথে মোটামুটি নিন্মের অবস্থাগুলি সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে।
১- যদি ইমাম কেবল পার্থিব উদ্দেশ্যেই ইমামতি করে, তাহলে তা হারাম ও বড় গুনাহ। মনে রাখা উচিৎ যে, ইমামতি করা এবং আযান দেওয়া, উভয় শারয়ী কাজ এবং তা নিঃসন্দেহে ইবাদত। আর ইবাদত কবুলের প্রথম শর্তই হচ্ছে, ইখলাস। অর্থাৎ যে কোন ইবাদত তা যেন কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়, অর্থ পাবার উদ্দেশ্যে কিংবা পদ লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা নিজের সুন্দর কণ্ঠের মাধ্যমে লোকের প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্য থাকলে, তাতে আর ইখলাস থাকে না। যার ফলে ইবাদতটি কবুল হয় না এবং তা ছোট শিরকে পরিণত হয় । কারণ ইবাদত, যা কেবল আল্লাহর জন্যই খাঁটি ভাবে হওয়া কাম্য, তাতে সে পার্থিব উদ্দেশ্য অংশী করেছে। তাই আক্বীদার পণ্ডিতগণ বলেন: মূল ইবাদতের মাধ্যমে কেবল দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্য, যেমন হজ্জ করা পয়সার জন্য, জিহাদ করা গনিমতের সম্পদ পাওয়ার জন্য, অনুরূপ [ইমামতি করা বেতনের জন্য], যাতে আল্লাহর কোন সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য থাকে না। এই প্রকারের আমল বাতিল, হারাম, বড় গুনাহ এবং ছোট শিরক। [দেখুন, তাসহীলুল আক্বীদা,ড.জিবরীন, পৃঃ৩৭৬]
আল্লাহ বলেন:
খ- এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা তখন প্রযোজ্য হবে, যখন মসজিদে নির্ধারিত ইমাম থাকবে না। আর যদি মসজিদে ইমাম নির্ধারিত থাকে তাহলে সেই ইমামতি করার বেশী অধিকার রাখে; যদিও তার থেকে বেশী কুরআন পাঠকারী ও সুন্নত তথা অন্যান্য গুণের লোক উপস্থিত থাকে। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ‘‘কোন ব্যক্তি যেন কোন ব্যক্তির অধীনস্থ স্থানে কখনো ইমামতি না করে।” [শারহু মুসলিম,৫/১৭৭]
গ- হ্যাঁ, তবে সেই স্থানে যদি বড় ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) উপস্থিত হন, তাহলে নির্ধারিত ইমামও আর ইমামতি করার বেশী হোকদার হবে না; বরং সেই বড় ইমাম তখন ইমামতি করার বেশী হকদার হবেন। কারণ তাঁর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ব্যাপক। [নায়লুল আউতার,৩/২০২/ শারহু মুসলিম,৫/১৭৭]
ঘ- হাদীসে বর্ণিত উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যে যদি সকলে সমান হয়, তাহলে কী করতে হবে? এ বিষয়ে সেই হাদীসে আরো কিছু বলা হয় নি। তবে অন্যান্য দলীলের আলোকে ইসলামী পণ্ডিতদের অনেকে মনে করেন, তাহলে তাদের মধ্যে অধিক পরহেজগার ব্যক্তি অগ্রাধিকার পাবে। কারণ আল্লাহ বলেন: “অবশ্যই আল্লাহ নিকট তোমাদের মধ্যে অধিক আল্লাহ ভীরুই বেশী সম্মানীয়।” [আল হুজুরাত/১৩] এর পরেও সকলে বরাবর হলে তাদের মাঝে লটারি করতে হবে। সাহাবী সাআ’দ বিন অক্কাস (রাযিঃ) একদা আযানের ব্যাপারে লটারি করেন। তাই আযানের ক্ষেত্রে এমন করা বৈধ হলে ইমামতির ক্ষেত্রে বেশী বৈধ হবে। [মুগনী,৩/১৬]
উল্লেখ্য যে, হানাফী মাজহাবের বিভিন্ন ফিকহের বইতে উপরে বর্ণিত হাদীসের ৪-৫ টি পদ্ধতির শুধু ধারাবাহিকতাই রক্ষা করা হয় নি; বরং তারা রায় ও কিয়াসের আশ্রয় নিয়ে ২০টিরও অধিক পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, যাতে এমন কিছু বিষয় লিখেছেন যা রহস্যময়, লজ্জা জনক এবং অযৌক্তিক। যেমন দররে মুখতারের লেখক সেই সকল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে চেহারা-ছবি সুন্দর হওয়া, স্ত্রী সুন্দরী হওয়া এমন কি মাথা বড় হওয়া এবং যৌনাঙ্গ ছোট হওয়ার মত অযৌক্তিক ও লজ্জা জনক গুণাগুণকেও ইমামতির অগ্রাধিকারের কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। [দুররে মুখতার,২য় খণ্ড, পৃঃ ৯৫, যাকারিয়া বুক ডিপো দেওবন্দের ছাপা/ ত্বরীকে মুহাম্মদী, মুহাম্মদ জুনাগড়ী,১৬২-১৬৮/ সালাফিয়্যাত কা তাআ’রুফ, ড.রোযাউল্লাহ,২৭২-২৭৭]
ইমামের বেতন-ভাতা:
ইমামের অবস্থা হিসাবে এ বিষয়ের বিধান প্রযোজ্য হবে। একজন ইমামের সাথে মোটামুটি নিন্মের অবস্থাগুলি সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে।
১- যদি ইমাম কেবল পার্থিব উদ্দেশ্যেই ইমামতি করে, তাহলে তা হারাম ও বড় গুনাহ। মনে রাখা উচিৎ যে, ইমামতি করা এবং আযান দেওয়া, উভয় শারয়ী কাজ এবং তা নিঃসন্দেহে ইবাদত। আর ইবাদত কবুলের প্রথম শর্তই হচ্ছে, ইখলাস। অর্থাৎ যে কোন ইবাদত তা যেন কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়, অর্থ পাবার উদ্দেশ্যে কিংবা পদ লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা নিজের সুন্দর কণ্ঠের মাধ্যমে লোকের প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্য থাকলে, তাতে আর ইখলাস থাকে না। যার ফলে ইবাদতটি কবুল হয় না এবং তা ছোট শিরকে পরিণত হয় । কারণ ইবাদত, যা কেবল আল্লাহর জন্যই খাঁটি ভাবে হওয়া কাম্য, তাতে সে পার্থিব উদ্দেশ্য অংশী করেছে। তাই আক্বীদার পণ্ডিতগণ বলেন: মূল ইবাদতের মাধ্যমে কেবল দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্য, যেমন হজ্জ করা পয়সার জন্য, জিহাদ করা গনিমতের সম্পদ পাওয়ার জন্য, অনুরূপ [ইমামতি করা বেতনের জন্য], যাতে আল্লাহর কোন সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য থাকে না। এই প্রকারের আমল বাতিল, হারাম, বড় গুনাহ এবং ছোট শিরক। [দেখুন, তাসহীলুল আক্বীদা,ড.জিবরীন, পৃঃ৩৭৬]
আল্লাহ বলেন:
“যারা এ দুনিয়ার জীবন আর তার শোভা সৌন্দর্য কামনা করে, তাদেরকে এখানে তাদের কর্মের পুরোপুরি ফল আমি দিয়ে দেই, আর তাতে তাদের প্রতি কোন কমতি করা হয় না। কিন্তু আখেরাতে তাদের জন্য আগুন ছাড়া কিছুই নাই। এখানে যা কিছু তারা করেছে তা নিষ্ফল হয়ে গেছে, আর তাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম ব্যর্থ হয়ে গেছে।) [হূদ,১৫-১৬]
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “অবশ্যই আমল সমূহ নির্ভর করে নিয়তের উপরে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পায়, যার সে নিয়ত করে থাকে।”। [বুখারী, নং১, মুসলিম, নং১৯০৭]
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন: “ যে ইলম আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্জন করা হয় কেউ যদি তা কেবল পার্থিব উদ্দেশ্যে তা করে তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না”। [আহমদ,২/৩৩৮, আবু দাঊদ, নং (৩৬৬৪) ইবনু হিব্বান নং (৭৮)]
উপরোক্ত দলীল-প্রমাণের আলোকে একথা সুস্পষ্ট যে, ইমামতির উদ্দেশ্য যদি শুধু বেতন হয় কিংবা শুধু কোন পার্থিব লাভ হয়, তাহলে সেই ইমামতি বাতিল ও হারাম। তাই আমাদের ঐসকল ইমামদের চিন্তা করা প্রয়োজন যারা বেতন ছাড়া ইমামতি করেন না বা বেতনের চুক্তি করেই ইমামতি করেন; নচেৎ করেন না।
২- মূলত: ইমাম যদি সওয়াবের আশায় ইমামতি করে অতঃপর সরকার তাকে বায়তুল মাল থেকে ভাতা প্রদান করে, কিংবা কোন সংস্থা তাকে ভাতা দেয় কিংবা কোন ব্যক্তি তাকে এ কারণে সাহায্য দেয়, তাহলে তা গ্রহণে কোন অসুবিধা নেই বরং তা জায়েজ। [ইসলামের শুরু যুগে যাকে বায়তুল মাল বলা হত, বর্তমান যুগে তা অর্থ মন্ত্রণালয় বলা যেতে পারে।]
সউদী ইফতা বোর্ডকে ঐ ইমামের পিছনে নামায পড়া বৈধতা বা অবৈধতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, যে এর ফলে সরকারী মজুরি নেয়। উত্তরে বোর্ড তাদের পিছনে নামায পড়া বৈধ বলে ফাতওয়া দেন এবং সেই ইমামের বেতন গ্রহণকেও বৈধ বলেন। বোর্ডের উত্তরটি নিন্মে উল্লেখ করা হল:
ফাতওয়া নং (৩৫০২) সরকারি মজুরি পায় এমন ইমামের পিছনে নামায আদায় বৈধ কি?
উত্তর: ‘হ্যাঁ। এমন ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া বৈধ। কারণ সে মুসলিমদের সাধারণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাই মুসলিমদের বায়তুল মালে তার অধিকার রয়েছে, যা থেকে তার মজুরি প্রদান করা হবে। যেমন খুলাফা, আমীর, কাজী , শিক্ষক এবং এই রকম অন্যান্যদের তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য দেওয়া হয়। এই নিয়ম নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগ থেকে এখন পর্যন্ত চলে আসছে। অনুরূপ ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের তাদের দায়িত্ব পালনের কারণে আওকাফের পক্ষ থেকে দেওয়া শস্য গ্রহণও বৈধ।’ [সউদী স্থায়ী ফতোয়া কমিটি,৭/৪১৭]
ফিকাহ বিশ্বকোষে বর্ণিত হয়েছে, ‘এমন কাজে বায়তুল মাল থেকে অনুদান নেওয়া বৈধ, যার মাধ্যমে সকল মুসলিম উপকৃত হয়, যেমন বিচার বিভাগ, ফাতওয়া বিভাগ, আযান, ইমামত, কুরআন শিক্ষা এবং হাদীস ফিকাহ এর মত উপকারী বিদ্যা শিক্ষা ইত্যাদি। কারণ এ গুলো সাধারণ জনকল্যাণের অন্তর্ভুক্ত’। [মাওসূআ ফিকহিয়্যাহ,২২/২০২]
পূর্বসূরি উলামাগণ বায়তুল মালের অনুদানকে ‘বিনিময়’ (ইওয়ায) কিংবা ‘মজুরী’ (উজরাহ) বলেন নি বরং তাঁরা এটাকে ‘রায্ক’ অর্থাৎ জীবিকা বা দান বলেছেন।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন: “ যে ইলম আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্জন করা হয় কেউ যদি তা কেবল পার্থিব উদ্দেশ্যে তা করে তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না”। [আহমদ,২/৩৩৮, আবু দাঊদ, নং (৩৬৬৪) ইবনু হিব্বান নং (৭৮)]
উপরোক্ত দলীল-প্রমাণের আলোকে একথা সুস্পষ্ট যে, ইমামতির উদ্দেশ্য যদি শুধু বেতন হয় কিংবা শুধু কোন পার্থিব লাভ হয়, তাহলে সেই ইমামতি বাতিল ও হারাম। তাই আমাদের ঐসকল ইমামদের চিন্তা করা প্রয়োজন যারা বেতন ছাড়া ইমামতি করেন না বা বেতনের চুক্তি করেই ইমামতি করেন; নচেৎ করেন না।
২- মূলত: ইমাম যদি সওয়াবের আশায় ইমামতি করে অতঃপর সরকার তাকে বায়তুল মাল থেকে ভাতা প্রদান করে, কিংবা কোন সংস্থা তাকে ভাতা দেয় কিংবা কোন ব্যক্তি তাকে এ কারণে সাহায্য দেয়, তাহলে তা গ্রহণে কোন অসুবিধা নেই বরং তা জায়েজ। [ইসলামের শুরু যুগে যাকে বায়তুল মাল বলা হত, বর্তমান যুগে তা অর্থ মন্ত্রণালয় বলা যেতে পারে।]
সউদী ইফতা বোর্ডকে ঐ ইমামের পিছনে নামায পড়া বৈধতা বা অবৈধতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, যে এর ফলে সরকারী মজুরি নেয়। উত্তরে বোর্ড তাদের পিছনে নামায পড়া বৈধ বলে ফাতওয়া দেন এবং সেই ইমামের বেতন গ্রহণকেও বৈধ বলেন। বোর্ডের উত্তরটি নিন্মে উল্লেখ করা হল:
ফাতওয়া নং (৩৫০২) সরকারি মজুরি পায় এমন ইমামের পিছনে নামায আদায় বৈধ কি?
উত্তর: ‘হ্যাঁ। এমন ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া বৈধ। কারণ সে মুসলিমদের সাধারণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাই মুসলিমদের বায়তুল মালে তার অধিকার রয়েছে, যা থেকে তার মজুরি প্রদান করা হবে। যেমন খুলাফা, আমীর, কাজী , শিক্ষক এবং এই রকম অন্যান্যদের তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য দেওয়া হয়। এই নিয়ম নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগ থেকে এখন পর্যন্ত চলে আসছে। অনুরূপ ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের তাদের দায়িত্ব পালনের কারণে আওকাফের পক্ষ থেকে দেওয়া শস্য গ্রহণও বৈধ।’ [সউদী স্থায়ী ফতোয়া কমিটি,৭/৪১৭]
ফিকাহ বিশ্বকোষে বর্ণিত হয়েছে, ‘এমন কাজে বায়তুল মাল থেকে অনুদান নেওয়া বৈধ, যার মাধ্যমে সকল মুসলিম উপকৃত হয়, যেমন বিচার বিভাগ, ফাতওয়া বিভাগ, আযান, ইমামত, কুরআন শিক্ষা এবং হাদীস ফিকাহ এর মত উপকারী বিদ্যা শিক্ষা ইত্যাদি। কারণ এ গুলো সাধারণ জনকল্যাণের অন্তর্ভুক্ত’। [মাওসূআ ফিকহিয়্যাহ,২২/২০২]
পূর্বসূরি উলামাগণ বায়তুল মালের অনুদানকে ‘বিনিময়’ (ইওয়ায) কিংবা ‘মজুরী’ (উজরাহ) বলেন নি বরং তাঁরা এটাকে ‘রায্ক’ অর্থাৎ জীবিকা বা দান বলেছেন।
ইবনে তায়মিয়্যাহ (রহঃ) বলেন: ‘আর যা বায়তুল মাল থেকে নেওয়া হয়, তা বিনিময় ও মজুরি নয়; বরং তা আনুগত্যের কাজে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে অনুদান। আর সৎ কাজে অনুদান গ্রহণ কাজটিকে নৈকট্য থেকে বের করে না আর না ইখলাসে ব্যাঘাত ঘটায়; ব্যাঘাত ঘটলে গনিমতের হকদার হত না’। [প্রাগুক্ত,২২/২০২]
৩- বায়তুল মাল বা সরকারি ব্যবস্থাপনার অবর্তমানে যদি কোন সংস্থা বা মসজিদ কমিটি ইমামদের মাসিক সাহায্য বা অনুদান দেয়, তাহলে তা বায়তুল মালেরই স্থলাভিষিক্ত হিসাবে গণ্য হবে।
৪- ইমাম যদি অর্থশালী হয় তবে ইমামতির জন্য বেতন-ভাতা না নেওয়াই উত্তম। কিন্তু ইমাম যদি অভাবী হয় এবং ইমামতীর দায়িত্ব পালনের কারণে নিজস্ব প্রয়োজন ও তার সংসারের প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান দিতে অক্ষ হয় তবে তার জন্য এতখানি মাসিক বেতন বা সাহায্য নেওয়া বৈধ, যার মাধ্যমে তার ও তার সাংসারিক অভাব পূরণ হয়। আল্লাহ তাআ’লা ইয়াতীমের অভিভাবকদের আদেশ করেন:
৩- বায়তুল মাল বা সরকারি ব্যবস্থাপনার অবর্তমানে যদি কোন সংস্থা বা মসজিদ কমিটি ইমামদের মাসিক সাহায্য বা অনুদান দেয়, তাহলে তা বায়তুল মালেরই স্থলাভিষিক্ত হিসাবে গণ্য হবে।
৪- ইমাম যদি অর্থশালী হয় তবে ইমামতির জন্য বেতন-ভাতা না নেওয়াই উত্তম। কিন্তু ইমাম যদি অভাবী হয় এবং ইমামতীর দায়িত্ব পালনের কারণে নিজস্ব প্রয়োজন ও তার সংসারের প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান দিতে অক্ষ হয় তবে তার জন্য এতখানি মাসিক বেতন বা সাহায্য নেওয়া বৈধ, যার মাধ্যমে তার ও তার সাংসারিক অভাব পূরণ হয়। আল্লাহ তাআ’লা ইয়াতীমের অভিভাবকদের আদেশ করেন:
“আর যে অভাব মুক্ত সে যেন বিরত থাকে আর যে অভাবগ্রস্ত সে যেন ন্যায়সঙ্গত ভাবে ভোগ করে।” [আন্ নিসা/৬]
তাই অনেকে অভাবী ইমামদের সাহায্য নেওয়াকে এই আদেশের উপর কেয়াস করত: বৈধ বলেছেন। তাছাড়া অভাবীর অভাব দূরীকরণ ইসলামের একটি সুন্দর মৌলিক বিধান।
উল্লেখ থাকে যে, ইমাম, মুয়াজ্জিন, দ্বীনের দাঈ এবং মক্তবের শিক্ষক যারা তাদের সময়ের অধিকাংশ এই রকম দ্বীনই কাজে ব্যায় করে থাকেন তাদের বেতন-ভাতার ব্যবস্থা সরকারকে বায়তুল মাল থেকে করা উচিৎ। সরকারি ব্যবস্থা না থাকলে ইসলামী সংস্থাগুলো করা প্রয়োজন। যদি এমন সংস্থাও না থাকে তাহলে এসব কাজের কমিটি এমনকি ব্যক্তি বিশেষকেও করা দরকার। কারণ উপরোক্ত সৎ কাজ সমূহ দ্বীনের ও মুসলিম সমাজের মৌলিক ও সাধারণ জনকল্যাণের কাজ, যা শূণ্য হয়ে গেলে বা হ্রাস পেলে ইসলাম ও মুসলিম সমাজের অপুরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে।
৫- কোন অমুসলিম সরকার যদি ইমাম ভাতার ব্যবস্থা করে এবং এর বিনিময়ে সরকার যদি তাদের উপর কোন অবৈধ কাজের শর্তারোপ না করে, তাহলে সাধারণত: সেই ভাতা গ্রহণ বৈধ হবে। কারণ লেনদেনের মূলনীতি হচ্ছে, বৈধতা। তাছাড়া মজুরি গ্রহণের ক্ষেত্রে মজুরিদাতার মুসলিম হওয়া শর্ত নয়। [ওয়াল্লাহু আ’লাই]
ইমামতি ছাড়া ইমামের কিছু পছন্দনীয় কাজ:
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, একজন ইমামের মূল দায়িত্ব হচ্ছে ইমামতি করা। সে একজন আমানতদার হিসাবে নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু যেহেতু সে মুসাল্লীদের দৃষ্টিতে আদর্শ, সেহেতু তাকে এই দায়িত্বকে গনিমত ভেবে সুযোগের সদ্ব্যবহার করা দরকার এবং তাকে এমন কিছু দ্বীনী ও সামাজিক কাজ আঞ্জাম দেওয়া প্রয়োজন, যার মাধ্যমে সেই মসজিদের মুসল্লীবর্গ সহ সেই গ্রাম ও মহল্লার লোকেরা যেন সঠিক দ্বীন জানতে পারে, ইসলামি আদর্শে আদর্শবান হতে পারে এবং সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারে।
উল্লেখ থাকে যে, ইমাম, মুয়াজ্জিন, দ্বীনের দাঈ এবং মক্তবের শিক্ষক যারা তাদের সময়ের অধিকাংশ এই রকম দ্বীনই কাজে ব্যায় করে থাকেন তাদের বেতন-ভাতার ব্যবস্থা সরকারকে বায়তুল মাল থেকে করা উচিৎ। সরকারি ব্যবস্থা না থাকলে ইসলামী সংস্থাগুলো করা প্রয়োজন। যদি এমন সংস্থাও না থাকে তাহলে এসব কাজের কমিটি এমনকি ব্যক্তি বিশেষকেও করা দরকার। কারণ উপরোক্ত সৎ কাজ সমূহ দ্বীনের ও মুসলিম সমাজের মৌলিক ও সাধারণ জনকল্যাণের কাজ, যা শূণ্য হয়ে গেলে বা হ্রাস পেলে ইসলাম ও মুসলিম সমাজের অপুরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে।
৫- কোন অমুসলিম সরকার যদি ইমাম ভাতার ব্যবস্থা করে এবং এর বিনিময়ে সরকার যদি তাদের উপর কোন অবৈধ কাজের শর্তারোপ না করে, তাহলে সাধারণত: সেই ভাতা গ্রহণ বৈধ হবে। কারণ লেনদেনের মূলনীতি হচ্ছে, বৈধতা। তাছাড়া মজুরি গ্রহণের ক্ষেত্রে মজুরিদাতার মুসলিম হওয়া শর্ত নয়। [ওয়াল্লাহু আ’লাই]
ইমামতি ছাড়া ইমামের কিছু পছন্দনীয় কাজ:
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, একজন ইমামের মূল দায়িত্ব হচ্ছে ইমামতি করা। সে একজন আমানতদার হিসাবে নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু যেহেতু সে মুসাল্লীদের দৃষ্টিতে আদর্শ, সেহেতু তাকে এই দায়িত্বকে গনিমত ভেবে সুযোগের সদ্ব্যবহার করা দরকার এবং তাকে এমন কিছু দ্বীনী ও সামাজিক কাজ আঞ্জাম দেওয়া প্রয়োজন, যার মাধ্যমে সেই মসজিদের মুসল্লীবর্গ সহ সেই গ্রাম ও মহল্লার লোকেরা যেন সঠিক দ্বীন জানতে পারে, ইসলামি আদর্শে আদর্শবান হতে পারে এবং সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারে।
সম্মানিত ইমাগণের উদ্দেশ্যে নিন্মে কিছু ভাল কাজের সূচী প্রদত্ত হল:
১- মুসাল্লীদের সংখ্যা ও উপযুক্ত সময়ের দিকে খেয়াল রেখে দৈনন্দিন কোন নামায শেষে সংক্ষিপ্ত ৮-১০ মিনিট বিভিন্ন আলোচনার ব্যবস্থা করা। এই ক্ষেত্রে সুন্দর নিয়ম হল, কোন যোগ্য আলেমের বই ধারাবাহিক ভাবে পাঠ করা। আক্বীদা, পাক-পবিত্রতা, নামাযের নিয়ম-পদ্ধতি, ইসলামি শিষ্টাচার, হালাল-হারাম ও এই ধরনের বিষয়াদিকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার।
২- মৌসুম অনুযায়ী বিষয় পরিবর্তন করা এবং সে হিসাবে আলোচনা করা। যেমন রামাযান মাসে রোযার বিভিন্ন মাসায়েল, কুরবানী ও হজ্জের সময় সে সব মাসায়েল, ফসলাদি কাটার সময় উশর-যাকাতের মাসায়েল। বর্তমান সউদী আরবের বেশীর ভাগ মসজিদে এই নিয়ম লক্ষ্য করা যায়।
৩- মক্তব-মাদ্রাসার ব্যবস্থা থাক কিংবা না থাক, কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এ ক্ষেত্রে শিশুদের সাথে সাথে বড়দের জন্যও আলাদা ভাবে ব্যবস্থা করা।
৪- মসজিদে মহিলাদের নামায পড়ার ব্যবস্থা না থাকলে, ব্যবস্থা করতে মুসাল্লীদের উদ্বুদ্ধ করা।
৪- পর্দার ব্যবস্থা করে মহিলাদের জন্য মাসিক বা পাক্ষিক দ্বীন শিক্ষা ও দাওয়াতের ব্যবস্থা করা।
৫- মাঝে মাঝে মসজিদে সকাল সন্ধ্যা ও নামায শেষে পঠনীয় দুয়া ও যিকির শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৬- নিজের সম্মান বজায় রেখে অন্যের পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসায় অংশ নেওয়া।
৭- ধীরে ধীরে মসজিদ লাইব্রেরী গঠন করা। মসজিদ লাইব্রেরী বলতে সেই গ্রন্থ সমাহারকে বুঝায় যা ইসলামের মৌলিক গ্রন্থ হিসাবে পরিচিত এবং যা মসজিদে পঠন-পাঠনের জন্যই নির্দিষ্ট। যেমন কুরআন, কুরআনের তাফসীর, বুখারী মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ এবং কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ফিকাহ গ্রন্থ। এর মাধ্যমে যেমন ইমাম স্বয়ং উপকৃত হয়, তেমন মুসাল্লীরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বচক্ষে দলীল-প্রমাণ দেখতে পায়।
৮- আগ্রহ ও ইখলাসের সহিত অসুস্থ মুসল্লীদের যিয়ারত করা এবং তাদের জানাযায় শরীক হওয়া; কারণ এটা যেমন নেকীর কাজ, তেমন এক মুসলিম ভাইর প্রতি অপর মুসলিম ভায়ের অধিকার ও ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির বিরাট বড় উপায়।
৯- মাঝে মাঝে ভাল আলেমকে নিয়ে এসে বিশেষ আলোচনার ব্যবস্থা করা।
১০- মাঝে মাঝে মসজিদের আয়োজনে ও তত্ত্বাবধানে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
যে সব কাজ থেকে ইমামকে বিরত থাকা উচিৎ:
যেহেতু ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনই পদ, সেহেতু ইমামকে যেমন এই কাজের যোগ্য হতে হবে, তেমন তাকে আরো কিছু মহৎ গুণের অধিকারী হওয়া উচিৎ যেমন, সততা, সত্যবাদিতা, চরিত্রবান এবং এই ধরনের অন্যান্য ভাল গুণ। এই সব আনুষঙ্গিক গুণ থাকলে তার কথার ও আদেশ-উপদেশের সমাজে সহজে প্রভাব পড়বে এবং তা গ্রহণীয় হবে। কিন্তু কারো মধ্যে উপরে বর্ণিত ইমামতির হকদারের গুণগুলি থাকলেও যদি এই আনুষঙ্গিক গুণগুলি না থাকে, তাহলে সেই ইমাম সাধারণত: তার সমাজে কামিয়াব ইমাম বিবেচিত হয় না। তাই প্রত্যেক ইমামকে তার সমাজে প্রচলিত কিছু এমন কাজ-কর্ম ও অভ্যাস থেকে বিরত থাকা উচিৎ, যা করলে স্বয়ং সে দ্বীনের দিক থেকে লাভবান হতে পারবে, তার কথা ও কাজ অধিক গৃহীত হবে এবং] সে আত্মমর্যাদার জীবন-যাপন করবে। ইনশাআল্লাহ।
২- মৌসুম অনুযায়ী বিষয় পরিবর্তন করা এবং সে হিসাবে আলোচনা করা। যেমন রামাযান মাসে রোযার বিভিন্ন মাসায়েল, কুরবানী ও হজ্জের সময় সে সব মাসায়েল, ফসলাদি কাটার সময় উশর-যাকাতের মাসায়েল। বর্তমান সউদী আরবের বেশীর ভাগ মসজিদে এই নিয়ম লক্ষ্য করা যায়।
৩- মক্তব-মাদ্রাসার ব্যবস্থা থাক কিংবা না থাক, কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এ ক্ষেত্রে শিশুদের সাথে সাথে বড়দের জন্যও আলাদা ভাবে ব্যবস্থা করা।
৪- মসজিদে মহিলাদের নামায পড়ার ব্যবস্থা না থাকলে, ব্যবস্থা করতে মুসাল্লীদের উদ্বুদ্ধ করা।
৪- পর্দার ব্যবস্থা করে মহিলাদের জন্য মাসিক বা পাক্ষিক দ্বীন শিক্ষা ও দাওয়াতের ব্যবস্থা করা।
৫- মাঝে মাঝে মসজিদে সকাল সন্ধ্যা ও নামায শেষে পঠনীয় দুয়া ও যিকির শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৬- নিজের সম্মান বজায় রেখে অন্যের পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসায় অংশ নেওয়া।
৭- ধীরে ধীরে মসজিদ লাইব্রেরী গঠন করা। মসজিদ লাইব্রেরী বলতে সেই গ্রন্থ সমাহারকে বুঝায় যা ইসলামের মৌলিক গ্রন্থ হিসাবে পরিচিত এবং যা মসজিদে পঠন-পাঠনের জন্যই নির্দিষ্ট। যেমন কুরআন, কুরআনের তাফসীর, বুখারী মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ এবং কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ফিকাহ গ্রন্থ। এর মাধ্যমে যেমন ইমাম স্বয়ং উপকৃত হয়, তেমন মুসাল্লীরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বচক্ষে দলীল-প্রমাণ দেখতে পায়।
৮- আগ্রহ ও ইখলাসের সহিত অসুস্থ মুসল্লীদের যিয়ারত করা এবং তাদের জানাযায় শরীক হওয়া; কারণ এটা যেমন নেকীর কাজ, তেমন এক মুসলিম ভাইর প্রতি অপর মুসলিম ভায়ের অধিকার ও ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির বিরাট বড় উপায়।
৯- মাঝে মাঝে ভাল আলেমকে নিয়ে এসে বিশেষ আলোচনার ব্যবস্থা করা।
১০- মাঝে মাঝে মসজিদের আয়োজনে ও তত্ত্বাবধানে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
যে সব কাজ থেকে ইমামকে বিরত থাকা উচিৎ:
যেহেতু ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনই পদ, সেহেতু ইমামকে যেমন এই কাজের যোগ্য হতে হবে, তেমন তাকে আরো কিছু মহৎ গুণের অধিকারী হওয়া উচিৎ যেমন, সততা, সত্যবাদিতা, চরিত্রবান এবং এই ধরনের অন্যান্য ভাল গুণ। এই সব আনুষঙ্গিক গুণ থাকলে তার কথার ও আদেশ-উপদেশের সমাজে সহজে প্রভাব পড়বে এবং তা গ্রহণীয় হবে। কিন্তু কারো মধ্যে উপরে বর্ণিত ইমামতির হকদারের গুণগুলি থাকলেও যদি এই আনুষঙ্গিক গুণগুলি না থাকে, তাহলে সেই ইমাম সাধারণত: তার সমাজে কামিয়াব ইমাম বিবেচিত হয় না। তাই প্রত্যেক ইমামকে তার সমাজে প্রচলিত কিছু এমন কাজ-কর্ম ও অভ্যাস থেকে বিরত থাকা উচিৎ, যা করলে স্বয়ং সে দ্বীনের দিক থেকে লাভবান হতে পারবে, তার কথা ও কাজ অধিক গৃহীত হবে এবং] সে আত্মমর্যাদার জীবন-যাপন করবে। ইনশাআল্লাহ।
১- গণতান্ত্রিক দেশে সাধারণত: কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত না থাকা। কারণ তিক্ত হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজের অধিকাংশ লোক কোন না কোন ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত কিংবা প্রভাবিত। যার ফলে তারা ইসলামের দৃষ্টিতে নয়; বরং রাজনীতির নীতিতে একে অপরকে ভাল-মন্দ বিবেচনা করে থাকে। তাই ইমাম কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত হলে প্রথমেই সে মুসাল্লীদের একটি বড় অংশের অন্তর থেকে বাদ পড়ে যাবে এবং তার মূল উদ্দেশ্য বিফল হয়ে যাবে। অতঃপর তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হবে। পরিশেষে হয়ত: ইমামতি হারাতে হবে, বেইজ্জত হতে হবে, সমাজ ভেঙ্গে যাবে আর অনেক সময় মসজিদ ভেঙ্গে আরো একটি মসজিদ নির্মাণ হবে, যা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।
২- আত্মমর্যাদার সবসময় খেয়াল রাখা। নিজের অভাব-অনটন ও মুখাপেক্ষিতা সবার কাছে পেশ না করা তার হাবভাবে প্রকাশ না করা। কারণ এর ফলে ইমাম তার মুসাল্লীদের ও গ্রামবাসীদের নজরে ছোট হয়ে যায়, মর্যাদা হারিয়ে ফেলে। ফলস্বরূপ তার আদেশ-উপদেশও তাদের কাছে হাল্কা হয়ে যায়। অনেক সময় লোক তাকে মর্যাদা দেয়া তো দূরের কথা তাকে দেখলেই উপহাসের ছলে কথা বলে।
৩- কুরআন ও দ্বীনই শিক্ষার দায়িত্ব থাকলে ছেলে ও মেয়েদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পড়ার ব্যবস্থা করা। সম্ভব না হলে ছেলেদের সাথে শুধু নাবালিকা মেয়েদের পড়ার দায়িত্ব ভার নেওয়া। কারণ এটা যেমন দ্বীনই বিধান তেমন অনেক শয়তানী চক্রান্ত ও বদনাম থেকে বাঁচার উপায়।
৪- কেবল প্রয়োজনে বৈধ ঝাড়-ফুঁক করা। কিন্তু এটাকে নিজের পেশা বা স্বভাবে পরিণত না করা। কারণ একাজ সাধারণত: বৈধ দিয়ে শুরু হয় এবং পরে বিভিন্ন কারণে হারামে পরিণত হয়। (যেমন, তাবিজ ব্যবসা)
৫- মহল্লা বা গ্রামের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাওয়া ছাড়া অংশ না নেওয়া এবং এ বিষয়ে ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য না করা। এসব অনুষ্ঠানের ফলে কিছু পাওয়ার লোভ না করা আর না কিছু চুক্তি করা। তবে না চাইতে কেউ কিছু দান করলে তা গ্রহণ করা অবৈধ নয়।
৬- বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্বন্ধে শারিয়ার বিধান স্পষ্ট করে বলে দেওয়া এবং নিজের জন্য এ সম্পর্কে সেই বিধান অনুযায়ী একটি সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা, যেন আপনার কোথাও অংশ নেওয়া বা না নেওয়া সেই শারঈ কারণে হয়। যার ফলে আপনি বলতে সক্ষম হবেন যে, আপনি কোন অনুষ্ঠানে কেন যান আর অন্য অনুষ্ঠানে কেন উপস্থিত হন না।
লেখক: শাইখ আব্দুর রাকীব মাদানী, দাঈ, খাফজী দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
২- আত্মমর্যাদার সবসময় খেয়াল রাখা। নিজের অভাব-অনটন ও মুখাপেক্ষিতা সবার কাছে পেশ না করা তার হাবভাবে প্রকাশ না করা। কারণ এর ফলে ইমাম তার মুসাল্লীদের ও গ্রামবাসীদের নজরে ছোট হয়ে যায়, মর্যাদা হারিয়ে ফেলে। ফলস্বরূপ তার আদেশ-উপদেশও তাদের কাছে হাল্কা হয়ে যায়। অনেক সময় লোক তাকে মর্যাদা দেয়া তো দূরের কথা তাকে দেখলেই উপহাসের ছলে কথা বলে।
৩- কুরআন ও দ্বীনই শিক্ষার দায়িত্ব থাকলে ছেলে ও মেয়েদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পড়ার ব্যবস্থা করা। সম্ভব না হলে ছেলেদের সাথে শুধু নাবালিকা মেয়েদের পড়ার দায়িত্ব ভার নেওয়া। কারণ এটা যেমন দ্বীনই বিধান তেমন অনেক শয়তানী চক্রান্ত ও বদনাম থেকে বাঁচার উপায়।
৪- কেবল প্রয়োজনে বৈধ ঝাড়-ফুঁক করা। কিন্তু এটাকে নিজের পেশা বা স্বভাবে পরিণত না করা। কারণ একাজ সাধারণত: বৈধ দিয়ে শুরু হয় এবং পরে বিভিন্ন কারণে হারামে পরিণত হয়। (যেমন, তাবিজ ব্যবসা)
৫- মহল্লা বা গ্রামের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাওয়া ছাড়া অংশ না নেওয়া এবং এ বিষয়ে ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য না করা। এসব অনুষ্ঠানের ফলে কিছু পাওয়ার লোভ না করা আর না কিছু চুক্তি করা। তবে না চাইতে কেউ কিছু দান করলে তা গ্রহণ করা অবৈধ নয়।
৬- বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্বন্ধে শারিয়ার বিধান স্পষ্ট করে বলে দেওয়া এবং নিজের জন্য এ সম্পর্কে সেই বিধান অনুযায়ী একটি সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা, যেন আপনার কোথাও অংশ নেওয়া বা না নেওয়া সেই শারঈ কারণে হয়। যার ফলে আপনি বলতে সক্ষম হবেন যে, আপনি কোন অনুষ্ঠানে কেন যান আর অন্য অনুষ্ঠানে কেন উপস্থিত হন না।
লেখক: শাইখ আব্দুর রাকীব মাদানী, দাঈ, খাফজী দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
No comments:
Post a Comment