Monday, January 29, 2018

জুমুআর নামাজ, খুতবা, আদব ও বিদআত সমুহের বিস্তারিত মাসআলা মাসায়েল

জুমুআর নামাজ, খুতবা, আদব ও বিদআত সমুহের বিস্তারিত মাসআলা মাসায়েল


জুমু‘আর দিনের বিধান ভূমিকা জুমু‘আর দিন একটি বরকত পূর্ণ দিন। আল্লাহ তা‘আলা এ দিনটিকে সমস্ত দিনের উপর ফযিলত দিয়েছেন এবং উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এ দিনটিকে নেয়ামত স্বরূপ নির্বাচন করেছেন। ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের এ দিবসটি থেকে আল্লাহ তা‘আলা দূরে সরিয়ে রেখেছেন। ফলে তারা এ দিবসটি সম্পর্কে ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত। শনিবার ও রবিবারের তুলনায় জুমু’আর দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা অসংখ্য ঘটনা রাজির জন্ম দিয়েছেন এবং পৃথিবীতে অনেক কিছুই এ দিবসটিতে সংঘটিত হয়েছে। অত:পর আল্লাহ তা‘আলা আমাদের- উম্মতে মুহাম্মদী-কে পাঠান এবং আমাদেরকে জুমু’আর দিনের প্রতি পথ দেখান। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয় সাহাবী হতে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﺃﺿﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻋﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻗﺒﻠﻨﺎ؛ ﻓﻜﺎﻥ ﻟﻠﻴﻬﻮﺩ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺴﺒﺖ، ﻭﻛﺎﻥ ﻟﻠﻨﺼﺎﺭﻯ ﻳﻮﻡ ﺍﻷﺣﺪ، ﻓﺠﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﺑﻨﺎ ﻓﻬﺪﺍﻧﺎ ﻟﻴﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻓﺠﻌﻞ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﺍﻟﺴﺒﺖ ﻭﺍﻷﺣﺪ، ﻭﻛﺬﻟﻚ ﻫُﻢ ﻟﻨﺎ ﺗﺒﻊ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ، ﻭﻧﺤﻦ ﺍﻵﺧِﺮﻭﻥ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ، ﻭﺍﻷﻭﻟﻮﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ، ﺍﻟﻤﻘﻀﻲ ﻟﻬﻢ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺨﻼﺋﻖ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ]. “আল্লাহ তা‘আলা আমাদের পূর্ববর্তীদেরকে জুমু‘আ থেকে বঞ্চিত করেন। ইয়াহুদীদের জন্য শনিবার এবং খৃষ্টানদের জন্য রবিবারকে নির্ধারণ করেন। অত:পর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পাঠান এবং আমাদেরকে জুমু‘আর দিবসটির প্রতি পথ দেখান। জুমু‘আর পর শনিবার এবং তারপর রবিবার নির্ধারণ করেন। যেভাবে দিবসের দিক দিয়ে তারা আমাদের পিছনে আছে, কিয়ামতের দিনও তারা আমাদের পিছনে থাকবে। দুনিয়াতে আমাদের আগমন পরে হলেও কিয়ামতের দিন আমরাই প্রথম হব। সমস্ত মাখলুকের পূর্বে আমাদের ফায়সালা করা হবে”।[1] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺧﻴﺮ ﻳﻮﻡ ﻃﻠﻌﺖ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ؛ ﻓﻴﻪ ﺧﻠﻖ ﺁﺩﻡ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ، ﻭﻓﻴﻪ ﺃﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ، ﻭﻓﻴﻪ ﺃﺧﺮﺝ ﻣﻨﻬﺎ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ]. “সূর্য উদয় হয়েছে এমন দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন জুমু‘আর দিন। এ দিন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এ দিনে তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়”।[2] জুমু‘আর দিনের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব অনেক বেশি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত হাদিসে এর বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। মুসলিম জ্ঞানীরা এ দিবসের বিভিন্ন ধরনের ফযিলত ও গুরুত্ব তার স্বীয় লিখনি ও কিতাব সমূহে আলোচনা করেছেন। এ দিবসের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, জুমু‘আর সালাত। জুমু‘আর সালাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয এবং মুসলিম ঐক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় জুমু‘আর সালাতের সাথে সম্পৃক্ত। বর্তমানে আমরা মানুষের মধ্যে জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হতে শিথিলতা এবং জুমু‘আর দিন সম্পর্কে উদাসীনতা লক্ষ্য করি। মানুষ জুমু‘আর দিন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে, জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হতে দেরী করে, জুমু‘আর দিনের করনীয় ও বর্জনীয় কি তার প্রতি গুরুত্ব দেয় না এবং জুমু‘আর দিনের আদব গুলো যথাযথ পালন করে না। জুমু‘আর দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করা এবং তা উম্মতে মুসলিমাকে জানিয়ে দেয়া খুবই জরুরি মনে করি। বিশেষ করে বাংলা ভাষায় জুমু‘আর দিন সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বই খুব কম পাওয়া যায়। যার কারণে বাংলা ভাষীদের মধ্যে জুমু‘আর দিন সম্পর্কে সচেতনা খুব বেশি লক্ষ্য করা যায় না। কুরআন ও হাদিসের আলোকে জুমু‘আ সম্পর্কে একটি বই থাকা খুবই জরুরি। এ জন্য আমি জুমু‘আ সম্পর্কে একটি সংকলনের চেষ্টা করি। বইটির প্রতিটি বিষয় কুরআন ও সূন্নাহের অকাট্য প্রমাণাদি থেকে সংগৃহীত। এ বইটিতে সংক্ষেপে জুমু‘আর দিনের ফযিলত, জুমু‘আর সালাতের ফযিলত, জুমু‘আর দিনের করনীয়, বর্জনীয়, জুমু‘আর সালাতের বিধান এবং আদব সমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। এ বইটির নাম রাখা হয়েছে ‘জুমু‘আর দিনের বিধান’ করে। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা এই যে, তিনি যেন এ বইটি দ্বারা মানুষের উপকার সাধন করেন এবং আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করেন এবং তা যেন কেবল আল্লাহর জন্য করার তাওফীক দেন। বইটির মধ্যে ভূল ত্রুটি থাকা একেবারেই স্বাভাবিক। যদি কোন পাঠকের নিকট কোন প্রকার ভূল ধরা পড়ে বা কোন বিষয় সংযোজন বা বিয়োজন করার প্রয়োজন পড়ে তাহলে আমাকে সে বিষয়ে জানালে তা ধন্যবাদান্তে গ্রহণ করা হবে। আল্লাহর নিকট তাওফীক কামনা আল্লাহ যেন আমাকে আমার উদ্দেশ্যে সফল করেন। আল্লাহর উপরই ভরসা করি এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। সংকলক জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের . জুমু‘আর দিনের ফযিলত নাম করণ করার কারণ: হাফেয ইবনে কাসীর রহ. বলেন, জুমু’আকে জুমু‘আ করে নাম করণ করা হয়েছে। কারণ হল, জুমু‘আ শব্দটি ﺍﻟﺠﻤﻊ ‘একত্র হওয়া’ শব্দ হতে নির্গত। মুসলিমরা প্রতি সপ্তাহে এ দিনে আল্লাহর মহান আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে মসজিদে একত্র হয়ে থাকেন। তাই এ দিনকে জুমু’আ বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে এ দিন একত্র হওয়ার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮٓﺍْ ﺇِﺫَﺍ ﻧُﻮﺩِﻱَ ﻟِﻠﺼَّﻠَﻮٰﺓِ ﻣِﻦ ﻳَﻮۡﻡِ ﭐﻟۡﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓَﭑﺳۡﻌَﻮۡﺍْ ﺇِﻟَﻰٰ ﺫِﻛۡﺮِ ﭐﻟﻠَّﻪِ … ٩ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ : ٩ ] “হে মুমিনগণ, যখন জুমু‘আর দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও”।[3] আয়াতে ﺍﻟﺴﻌﻲ দ্বারা উদ্দেশ্য দৌড়ে আসা নয়। বরং, এ দ্বারা উদ্দ্যেশ্য হল, তোমরা জু মু‘আর সালাতের দিকে গুরুত্বের সাথে অগ্রসর হও। কারণ, সালাতে দৌড়ে আসতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। হাসান রহ. বলেন, “এখানে ﺍﻟﺴﻌﻲ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, অন্তরের দৌড়। অন্যথায় সালাতে শান্তশিষ্টভাবে ও গাম্ভীর্যের সাথে আসতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং দৌড়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে”।[4] আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম রহ. বলেন, “জুমু‘আর দিনটি ইবাদতের দিন। মাসের মধ্যে রমাদান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, দিবস সমূহের মধ্যে জুমু‘আও অনুরূপ গুরুত্বপূর্ণ। জুমু‘আর দিনে একটি মুহুর্ত এমন আছে, সে মহুর্তে দু‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা দু্’আ কবুল করেন। জুমু‘আর দিনে সে মহুর্তটুকু রমাদান মাসের ক্বাদর রাত্রির মত গুরুত্বপূর্ণ”।[5] এক- জুমু‘আর দিন সর্বোত্তম দিন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনকে সর্বোত্তম দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « ﺧﻴﺮ ﻳﻮﻡ ﻃﻠﻌﺖ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻓﻴﻪ ﺧﻠﻖ ﺁﺩﻡ، ﻭﻓﻴﻪ ﺃﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ، ﻭﻓﻴﻪ ﺃﺧﺮﺝ ﻣﻨﻬﺎ، ﻭﻻ ﺗﻘﻮﻡ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﺇﻻ ﻓﻲ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ‏» ‏[ ﻣﺴﻠﻢ ]. “সূর্য উদয় হয়েছে এমন দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন জুমু‘আর দিন। এ দিন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এ দিনে তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়। আর কিয়ামত জুমু‘আর দিনেই সংঘটিত হবে”।[6] দুই- এ দিনটির মধ্যে জুমু‘আর সালাত রয়েছে যা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং মুসলিমদের মহান মিলন মেলা। যে ব্যক্তি কোন কারণ ছাড়া জুমু‘আর সালাত ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেবে।[7] তিন- এ দিনটি দু‘আ কবুল হওয়ার দিন: জুমু‘আর দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে মুহূর্তে দু‘আ করলে, আল্লাহ তা‘আলা দু‘আ কবুল করেন। তবে মুহূর্তটি অজ্ঞাত রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ পুরো জুমু’আর দিনটিকে গুরুত্ব দেয় এবং মুহূর্তটি অনুসন্ধান করতে থাকে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺇﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺳﺎﻋﺔ ﻻ ﻳﻮﺍﻓﻘﻬﺎ ﻋﺒﺪ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﻫﻮ ﻗﺎﺋﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﻳﺴﺄﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺷﻴﺌﺎ ﺇﻻ ﺃﻋﻄﺎﻩ ﺇﻳﺎﻩ – ﻭﻗﺎﻝ ﺑﻴﺪﻩ ﻳﻘﻠﻠﻬﺎ ‏» ‏[ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ]. “জুম‘আর দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যদি কোন মুসলিম বান্দা ঐ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় রত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করেন আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা অবশ্যই দেবেন”।[8] আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. জুমু‘আর দিন দু‘আ কবুলের সময়টির ব্যাপারে আলেমদের বিভিন্ন মতামত তুলে ধরার পর বলেন, সবচেয়ে গ্রহণ যোগ্য মতামত হল, দুটি মত যে দুটি মতামত হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত ও প্রমাণিত: ১- ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত মুহূর্তটি। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻫﻲ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺃﻥ ﻳﺠﻠﺲ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺇﻟﻰ ﺃﻥ ﺗﻘﻀﻰ ﺍﻟﺼﻼﺓ ‏» ‏[ ﻣﺴﻠﻢ ]. “ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত”।[9] ২- মুহুর্তটি হল, জুমু‘আর দিন আছরের সালাত আদায়ের পর। এটি উল্লেখিত দুটি মতের মধ্যে সর্বাধিক গ্রহণ যোগ্য মতামত।[10] চার- সদকা করার জন্য উত্তম দিন: জুম‘আর দিন সদকা করা অন্যান্য দিনের তুলনায় অধিক উত্তম। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম রহ. বলেন, সপ্তাহের অন্যান্য দিনে সদকা করার তুলনায় এ দিনে সদকা করা এমন উত্তম যেমন বছরের অন্যান্য মাসের সদকার তুলনায় রমাদান মাসে সদকা করা উত্তম। কা’আব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বিশুদ্ধ সনদে মওকুফ হাদিস যা মারফু হাদিস বলে বিবেচিত এমন একটি হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন, «… ﻭﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﻓﻴﻪ ﺃﻋﻈﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﻓﻲ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻷﻳﺎﻡ ‏» ‏[ ﻣﻮﻗﻮﻑ ﺻﺤﻴﺢ ﻭﻟﻪ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﺮﻓﻊ ]. “জুমু‘আর দিন সদকা করা অন্যান্য দিন সদকা করার তুলনায় অধিক সাওয়াব ও গুরুত্বপূর্ণ”।[11] পাঁচ-জান্নাতীদের আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন: জুমু‘আ এমন একটি দিন, যে দিন আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে মুমিন বন্ধুদের সাথে সাক্ষাত করবেন। আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহ তা‘আলার বাণীর – ﻭَﻟَﺪَﻳْﻨَﺎ ﻣَﺰِﻳﺪٌ তাফসীরে বলেন, ﻳﺘﺠﻠﻰ ﻟﻬﻢ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺟﻤﻌﺔ . “আল্লাহ তা‘আলা প্রতি জুমু‘আর দিন জান্নাতীদের জন্য প্রকাশ্যে আসবেন”। ছয়- জুমু‘আর দিন মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন: জুমু‘আর দিন মুসলিমদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺇﻥ ﻫﺬﺍ ﻳﻮﻡ ﻋﻴﺪ ﺟﻌﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻓﻤﻦ ﺟﺎﺀ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻠﻴﻐﺘﺴﻞ …‏» ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ .‏[ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﻭﻫﻮ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ 1/298 ]. “এটি ঈদের দিন আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হয় সে যেন ওজু করে উপস্থিত হয়”।[12] সাত- গুনাহ মাফের দিন: এ দিন আল্লাহ তা‘আলা বান্দার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেন। সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻻ ﻳﻐﺘﺴﻞ ﺭﺟﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻭﻳﺘﻄﻬﺮ ﻣﺎ ﺍﺳﺘﻄﺎﻉ ﻣﻦ ﻃﻬﺮ ﻭﻳﺪﻫﻦ ﻣﻦ ﺩﻫﻨﻪ، ﺃﻭ ﻳﻤﺲ ﻣﻦ ﻃﻴﺐ ﺑﻴﺘﻪ، ﺛﻢ ﻳﺨﺮﺝ ﻓﻼ ﻳﻔﺮﻕ ﺑﻴﻦ ﺍﺛﻨﻴﻦ، ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﻣﺎ ﻛﺘﺐ ﻟﻪ، ﺛﻢ ﻳﻨﺼﺖ ﺇﺫﺍ ﺗﻜﻠﻢ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺇﻻ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺑﻴﻨﻪ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺍﻷﺧﺮﻯ‏» ‏[ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ]. “যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করল, যথাসাধ্য পবিত্রতা অর্জন করল, তেল লাগালো এবং ঘর থেকে আতর খোশবু লাগিয়ে ঘর থেকে বের হল, দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক করে সামনে গেল না, অতঃপর তার তাকদীরে যত সালাত পড়া নির্ধারিত ছিল তা আদায় করল এবং ইমামের খুতবার সময় সে চুপ থাকল, তাহলে তার এ জুমু‘আ থেকে পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত সংঘটিত গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে”।[13] আট-এক বছর কিয়ামুল লাইল ও এক বছর রোজা রাখার সাওয়াব: জুমু‘আর দিন পায়ে হেঁটে জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হওয়া এক বছর রোজা রাখা ও এক বছর কিয়ামুল লাইল করার সম পরিমাণ সাওয়াব সমতুল্য। আউস ইবনে আওস আস- সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, « ﻣﻦ ﻏﺴﻞ ﻭﺍﻏﺘﺴﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻭﺑﻜﺮ ﻭﺍﺑﺘﻜﺮ، ﻭﺩﻧﺎ ﻣﻦ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻓﺄﻧﺼﺖ، ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺑﻜﻞ ﺧﻄﻮﺓ ﻳﺨﻄﻮﻫﺎ ﺻﻴﺎﻡ ﺳﻨﺔ، ﻭﻗﻴﺎﻣﻬﺎ، ﻭﺫﻟﻚ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﺴﻴﺮ ‏» ‏[ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ]. “যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন নিজে গোসল করল, অপরকে উদ্বুদ্ধ করল, সকাল সকাল মসজিদে গমন করল, অপরকে উৎসাহ দিল এবং আরোহণ না করে পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসল, কোন অনর্থক কর্ম করল না, সে প্রতিটি কদমে এক বছর রোজা রাখা এবং এক বছর কিয়ামুল লাইল করার সাওয়াব পাবে”।[14] নয়- এ দিন জাহান্নামকে প্রজ্বলিত করা বন্ধ থাকে: সপ্তাহের প্রতি দিন জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়, কেবল জুমু‘আর দিন ছাড়া। জুমু‘আর দিনের সম্মানে এ দিনে জাহান্নামকে প্রজ্বলিত করা ও উত্তপ্ত করাকে বন্ধ করে রাখা হয়।[15] দশ- জুমু‘আর দিন বা জুমু‘আর রাত্রিতে মৃত্যু বরণ করা শুভ লক্ষণ: জুমু‘আর দিন বা জুমু‘আর রাত্রিতে মৃত্যু বরণ করা, উত্তম পরিণতির লক্ষণ। কারণ, জুমু‘আর দিন বা জুমু‘আর রাত্রিতে যে ব্যক্তি মারা যায় সে ব্যক্তি কবরের আযাব ও মুনকার নকীরের প্রশ্ন হতে বেঁচে যায়। আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « ﻣﺎ ﻣﻦ ﻣﺴﻠﻢ ﻳﻤﻮﺕ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺃﻭ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﺇﻻ ﻭﻗﺎﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﺘﻨﺔ ﺍﻟﻘﺒﺮ ‏» ‏[ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ]. “যে কোন মুসলিম জুমু‘আর দিন বা জুমু‘আর রাতে মারা গেল আল্লাহ তা‘আলা তাকে অবশ্যই কবরের আযাব থেকে রেহাই দেবেন”।[16] জুমু‘আর সালাতের ফযিলত এক- গুনাহ মাফ হয়: জুমু‘আর দিন জুমু‘আর সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে ভালোভাবে ওজু করে মসজিদে গমন করলে আল্লাহ তা‘আলা গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻣﻦ ﺗﻮﺿﺄ ﻓﺄﺣﺴﻦ ﺍﻟﻮﺿﻮﺀ، ﺛﻢ ﺃﺗﻰ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﺎﺳﺘﻤﻊ ﻭﺃﻧﺼﺖ، ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺑﻴﻨﻪ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺍﻷﺧﺮﻯ ﻭﺯﻳﺎﺩﺓ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﻳﺎﻡ، ﻭﻣﻦ ﻣﺲَّ ﺍﻟﺤﺼﻰ ﻓﻘﺪ ﻟﻐﺎ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ]. “যে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযু করল, অতঃপর জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হয়ে মনোযোগ দিয়ে জুমু‘আর খুতবা শুনল এবং চুপ থাকলো, তার জন্য এ জুমু‘আ থেকে পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর স্পর্শ করল সে অনর্থক কর্ম করল”।[17] দুই- জুমু‘আর সালাত কবিরা গুনাহ ছাড়া অন্যান্য গুনাহের জন্য কাফফারা: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﺨﻤﺲ، ﻭﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻭﺭﻣﻀﺎﻥ ﺇﻟﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻣﻜﻔﺮﺍﺕ ﻟﻤﺎ ﺑﻴﻨﻬﻦ ﺇﺫﺍ ﺍﺟﺘﻨﺒﺖ ﺍﻟﻜﺒﺎﺋﺮ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﻏﻴﺮﻩ ]. “পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, জুমু‘আ এবং রামাদানের মধ্যবর্তী সময়ে যে সব গুনাহ হয়ে থাকে, পরবর্তী সালাত, জুমু‘আ ও রমাদান সে সব মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের জন্য কাফফারা। যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে”।[18] অপর একটি হাদিস- আবু আইয়ুব আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি- তিনি বলেন, « ﻣﻦ ﺍﻏﺘﺴﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻭﻣﺲ ﻣﻦ ﻃﻴﺐ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻋﻨﺪﻩ، ﻭﻟﺒﺲ ﻣﻦ ﺃﺣﺴﻦ ﺛﻴﺎﺑﻪ، ﺛﻢ ﺧﺮﺝ ﺣﺘﻰ ﻳﺄﺗﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ، ﻓﻴﺮﻛﻊ ﻣﺎ ﺑﺪﺍ ﻟﻪ، ﻭﻟﻢ ﻳﺆﺫ ﺃﺣﺪًﺍ، ﺛﻢ ﺃﻧﺼﺖ ﺣﺘﻰ ﻳﺼﻠﻲ، ﻛﺎﻥ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻟﻤﺎ ﺑﻴﻨﻬﺎ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺍﻷﺧﺮﻯ ‏» ‏[ﺻﺤﻴﺢ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ، ﻭﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ]. “যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে, আতর-খোশবু লাগায়, যদি তার কাছে থাকে এবং সুন্দর জামা-কাপড় পরে, মসজিদে এসে সালাত আদায় করে এবং কাউকে সে কষ্ট না দেয়, তারপর সে জুমু‘আর সালাত আদায় করা পর্যন্ত চুপ থাকে, তাহলে তা তার এ জুমু‘আ থেকে পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত সংঘটিত গুনাহ সমূহের কাফফারা হবে”।[19] তিন- আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করা হবে: আবু মালেক আল-আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻟﻤﺎ ﺑﻴﻨﻬﺎ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﺗﻠﻴﻬﺎ ﻭﺯﻳﺎﺩﺓ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﻳﺎﻡ، ﻭﺫﻟﻚ ﺑﺄﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻗﺎﻝ : ﴿ﻣَﻦْ ﺟَﺎﺀَ ﺑِﺎﻟْﺤَﺴَﻨَﺔِ ﻓَﻠَﻪُ ﻋَﺸْﺮُ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ«﴾ ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ، ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ ﺭﻗﻢ 682 ]. “জুমু‘আর সালাত তার পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহের জন্য কাফফারা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ ﻣَﻦْ ﺟَﺎﺀَ ﺑِﺎﻟْﺤَﺴَﻨَﺔِ ﻓَﻠَﻪُ ﻋَﺸْﺮُ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ ﴾» যে কোন নেক আমল করে আল্লাহ তা‘আলা তার সাওয়াবকে দশ গুণ বাড়িয়ে দেন”।[20] চার- জুমু‘আর সালাত জান্নাত লাভের বিশেষ আমল: জুমু‘আর সালাত আদায় দ্বারা জান্নাত লাভ করা যায়। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন , তিনি বলেন, « ﺧﻤﺲ ﻣﻦ ﻋﻤﻠﻬﻦ ﻓﻲ ﻳﻮﻡ ﻛﺘﺒﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ : ﻣﻦ ﻋﺎﺩ ﻣﺮﻳﻀﺎ، ﻭﺷﻬﺪ ﺟﻨﺎﺯﺓ، ﻭﺻﺎﻡ ﻳﻮﻣﺎ، ﻭﺭﺍﺡ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻭﺃﻋﺘﻖ ﺭﻗﺒﺔ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ﻭﻫﻮ ﺣﺴﻦ، 2771 ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ ﺭﻗﻢ 683 ]. “যে ব্যক্তি কোন দিন পাঁচটি আমল করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার নাম জান্নাতীদের খাতায় লিপিবদ্ধ করবেন: রোগী দেখতে যাবে, কারও জানাযায় উপস্থিত হবে, রোযা রাখবে, জুমু‘আর সালাতে গমন করবে এবং দাস মুক্ত করবে”।[21] পাঁচ- প্রতিটি কদমে কদমে এক বছর রোজা রাখা ও কিয়ামুল লাইল করার সাওয়াব: পায়ে হেঁটে জুম‘আর সালাতে গমন করলে, প্রতি কদমে এক বছর রোজা রাখা এবং এক বছর কিয়ামুল লাইল করার সাওয়াব পাবে। আউস ইবনে আওস আস-সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, « ﻣﻦ ﻏﺴﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﺍﻏﺘﺴﻞ، ﻭﺑﻜﺮ ﻭﺍﺑﺘﻜﺮ، ﻭﻣﺸﻰ ﻭﻟﻢ ﻳﺮﻛﺐ، ﻭﺩﻧﺎ ﻣﻦ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻓﺎﺳﺘﻤﻊ ﻭﻟﻢ ﻳﻠﻎ، ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺑﻜﻞ ﺧﻄﻮﺓ ﻋﻤﻞ ﺳﻨﺔ؛ ﺃﺟﺮ ﺻﻴﺎﻣﻬﺎ ﻭﻗﻴﺎﻣﻬﺎ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ، ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ” ﻭﻗﺎﻝ : ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ، ﻭﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ” ﻭﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻴﻬﻤﺎ، ﻭﺍﻟﺤﺎﻛﻢ، ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ]. “যে জুমু‘আর দিন গোসল করাল ও করল, সকাল সকাল নিজে মসজিদে গমন করল, অপরকে উৎসাহ দিল এবং আরোহণ না করে পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসল, অতঃপর শুনল এবং কোন অনর্থক কর্ম করল না, সে প্রতিটি কদমে এক বছর রোজা রাখা এবং এক বছর কিয়ামুল লাইল করার সাওয়াব পাবে”।[22] ছয়- জন্তু কুরবানি করার সাওয়াব: জুমু‘আর দিন যে ব্যক্তি যত আগে জুমু‘আর সালাতে আসবে, সে তত বেশি সাওয়াব লাভ করবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻣﻦ ﺍﻏﺘﺴﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻏﺴﻞ ﺍﻟﺠﻨﺎﺑﺔ ﺛﻢ ﺭﺍﺡ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﺍﻷﻭﻟﻰ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﻗﺮﺏ ﺑﺪﻧﻪ، ﻭﻣﻦ ﺭﺍﺡ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﻗﺮﺏ ﺑﻘﺮﺓ، ﻭﻣﻦ ﺭﺍﺡ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﺍﻟﺜﺎﻟﺜﺔ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﻗﺮﺏ ﻛﺒﺸﺎ ﺃﻗﺮﻥ، ﻭﻣﻦ ﺭﺍﺡ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﺍﻟﺮﺍﺑﻌﺔ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﻗﺮﺏ ﺩﺟﺎﺟﺔ، ﻭﻣﻦ ﺭﺍﺡ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﺍﻟﺨﺎﻣﺴﺔ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﻗﺮﺏ ﺑﻴﻀﺔ، ﻓﺈﺫﺍ ﺧﺮﺝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻳﺴﺘﻤﻌﻮﻥ ﺍﻟﺬﻛﺮ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺎﻟﻚ ﻓﻲ “ﺍﻟﻤﻮﻃﺄ ” ﻭﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ، ﻭﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ]. “যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন ফরয গোসলের মত গোসল করে, তারপর প্রথম সময়ে মসজিদে গমন করে, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি উট কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি গরু কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি ভেড়া কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি মুরগী আল্লাহর রাস্তায় দান করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করল। অত:পর যখন ইমাম উপস্থিত হয়, তখন ফেরেশতারাও উপস্থিত হয় এবং তার খুতবা শ্রবণ করে”।[23] জুমু‘আর সালাতের হুকুম প্রিয় মুসলিম ভাই! আপনি অবশ্যই মনে রাখবেন, জুমু‘আর সালাত প্রত্যেক বালেগ মুসলিমের উপর ফরযে আইন। জুমু‘আর সালাত ফরয হওয়া কুরআন হাদিস এবং উম্মতের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। এক- কুরআন দ্বারা প্রমাণ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮٓﺍْ ﺇِﺫَﺍ ﻧُﻮﺩِﻱَ ﻟِﻠﺼَّﻠَﻮٰﺓِ ﻣِﻦ ﻳَﻮۡﻡِ ﭐﻟۡﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓَﭑﺳۡﻌَﻮۡﺍْ ﺇِﻟَﻰٰ ﺫِﻛۡﺮِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺫَﺭُﻭﺍْ ﭐﻟۡﺒَﻴۡﻊَۚ ٩ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ : ٩ ] আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে জুমু‘আর দিন আযানের পর আল্লাহর জিকিরের দিক ছুটার নির্দেশ দেন। আল্লাহর নির্দেশ পালন করা ওয়াজিব। সুতরাং, জুমু‘আর দিন আযানের পর জুমুম‘আর সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন অবশ্যই ফরয। আল্লাহ তা‘আলা জুমুম‘আর দিন আযানের পর বেচা-কেনা করতে নিষেধ করেছেন যাতে জুমু‘আর সালাত ছুটে না যায়। যদি জুমু‘আর সালাত ফরয না হত, তাহলে তিনি বেচা- কেনা করতে নিষেধ করতেন না। দুই- হাদিস দ্বারা প্রমাণ: প্রথম হাদিস- ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ – ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻟﻘﻮﻡ ﻳﺘﺨﻠﻔﻮﻥ ﻋﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ : ‏«ﻟﻘﺪ ﻫﻤﻤﺖ ﺃﻥ ﺁﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﺛﻢ ﺃﺣﺮﻕ ﻋﻠﻰ ﺭﺟﺎﻝ ﻳﺘﺨﻠﻔﻮﻥ ﻋﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺑﻴﻮﺗﻬﻢ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ، ﻭﻣﺴﻠﻢ ]. অর্থ, আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা জুম‘আর সালাত থেকে বিরত থাকে, তাদের সম্পর্কে বলেন, “আমার ইচ্ছে হয়, একজনকে সালাতের দায়িত্ব দেই যাতে সে মুসল্লিদের নিয়ে সালাত আদায় করে। অত:পর আমি যারা জুমু‘আর সালাত থেকে বিরত থাকে তাদের বাড়ি ঘর জালিয়ে দেই”।[24] দ্বিতীয় হাদিস- ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ – ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ – ﺃﻧﻬﻤﺎ ﺳﻤﻌﺎ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﻋﻠﻰ ﺃﻋﻮﺍﺩ ﻣﻨﺒﺮﻩ : ‏« ﻟﻴﻨﺘﻬﻴﻦ ﺃﻗﻮﺍﻡ ﻋﻦ ﻭﺩﻋﻬﻢ ﺍﻟﺠﻤﻌﺎﺕ ﺃﻭ ﻟﻴﺨﺘﻤﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻗﻠﻮﺑﻬﻢ ﺛﻢ ﻟﻴﻜﻮﻧﻦ ﻣﻦ ﺍﻟﻐﺎﻓﻠﻴﻦ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ]. অর্থ, আবু হুরাইরা ও আব্দুল্লাহ ওমর উভয় সাহাবী থেকে বর্ণিত, তারা দুই জন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাঠের মিম্বারের উপর আরোহণ করে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, “লোকেরা হয়ত জুমু‘আর সালাত পড়া থেকে বিরত থাকবে, অথবা আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। ফলে তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে”।[25] তৃতীয় হাদিস- ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺠﻌﺪ ﺍﻟﻀﻤﺮﻱ – ﻭﻟﻪ ﺻﺤﺒﻪ – ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ‏« ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﺛﻼﺙ ﺟﻤﻊ ﺗﻬﺎﻭﻧًﺎ ﻃﺒﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﻠﺒﻪ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺨﻤﺴﺔ، ﻭﻷﺣﻤﺪ ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ، ﻭﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺟﺎﺑﺮ ﻧﺤﻮﻩ ]. অর্থ, আবুল জাআদ আদ-দামরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে অলসতা বসত তিনটি জুমু‘আ ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরের উপর মোহর মেরে দেয়”।[26] চতুর্থ হাদিস- ﻋﻦ ﺣﻔﺼﺔ ﺯﻭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : ‏« ﺭﻭﺍﺡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﺍﺟﺐ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﻣﺤﺘﻠﻢ ‏» ‏[ﺻﺤﻴﺢ. ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ]. অর্থ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হওয়া প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক বালেগ ব্যক্তির উপর ফরয”।[27] তিন-উম্মতের ইজমা দ্বারা প্রমাণ: সমস্ত উম্মত এ ব্যাপারে একমত যে জুমু‘আর সালাত প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক বালেগ ব্যক্তির উপর ফরয। আল্লামা ইবনুল মুনযির রহ. বর্ণনা করেন যে, সমস্ত উলামা এ বিষয়ে একমত যে, জুমু‘আর সালাত আদায় করা ফরযে আইন। আল্লামা ইবনুল আরাবী আল-মালেকী রহ. বলেন, “সমস্ত উম্মতের ঐকমত্যে জুমু‘আর সালাত ফরয”। আল্লামা ইবনু কুদামাহ মুগনীতে লিখেন, “সমস্ত মুসলিম জুমু‘আর সালাত ওয়াজিব হওয়ার বিষয়ে একমত”। আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত উম্মত জুমু‘আর সালাত ফরয হওয়ার ব্যাপারে একমত, কেউ এ বিষয়ে কোন ভিন্ন মত পোষণ করেননি এবং জুমু‘আর সালাতের ফরয হওয়াকে অস্বীকার করেননি”। ইমাম নববী রহ. বলেন, “ইমাম শাফেয়ীর রহ. এর মতে জুমু‘আর সালাত ফরযে আইন”।[28] জুমু‘আর সালাতের নিয়ম এক- জুমু‘আর সালাত দুই রাকআত। উভয় রাকআতে কিরাত বড় আওয়াজে তিলাওয়াত করবে। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺭﻛﻌﺘﺎﻥ، ﻭﺻﻼﺓ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﺭﻛﻌﺘﺎﻥ، ﻭﺻﻼﺓ ﺍﻷﺿﺤﻰ ﺭﻛﻌﺘﺎﻥ، ﻭﺻﻼﺓ ﺍﻟﺴﻔﺮ ﺭﻛﻌﺘﺎﻥ ﺗﻤﺎﻡ ﻏﻴﺮ ﻗﺼﺮ ﻋﻠﻰ ﻟﺴﺎﻥ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ. ‏[ﺻﺤﻴﺢ. ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ . ‏[ ﺣﻜﻢ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ‏] ﺻﺤﻴﺢ “মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জবানে জুমু‘আর সালাত দুই রাকআত, ঈদুল ফিতরের সালাত দুই রাকআত, ঈদুল আযহার সালাত দুই রাকআত, সফর অবস্থায় সালাত দুই রাকআত, পূর্ণ, তাতে কোন কছর নাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য দ্বারা এটা সাব্যস্ত হয়েছে”।[29] দুই- জুমু‘আর সালাতের প্রতি রাকআতে সূরা আল- ফাতেহা পড়বে এবং তারপর যে কোন একটি সূরা পাঠ করবে। তবে সুন্নত হল, প্রথম রাকআতে সূরা আল- ফাতেহার পর সূরাতুল জুমু‘আ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরাতুল মুনাফিকুন পড়া অথবা প্রথম রাকআতে সূরাতুল আ’লা এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা আল- গাশিয়াহ পড়া। প্রমাণ- ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﺮﺃ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻲ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺼﺒﺢ ‏(ﺍﻟﻢ . ﺗﻨﺰﻳﻞ ‏) ﻭ ‏(ﻫﻞ ﺃﺗﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ‏) ، ﻭﻓﻲ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺑﺴﻮﺭﺗﻲ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻘﻴﻦ. ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ]. অর্থ, আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে ‘আলিফ মিম তানযীল’ এবং সুরা ‘আদ-দাহার’ পড়তেন এবং জুমু‘আর সালাতে সূরাতুল জুমু‘আ এবং সূরাতুল মুনাফিকুন পড়তেন।[30] অপর একটি হাদিস সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﻓﻲ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺑـ ‏( ﺳﺒﺢ ﺍﺳﻢ ﺭﺑﻚ ﺍﻷﻋﻠﻰ ‏) ﻭ ‏(ﻫﻞ ﺃﺗﺎﻙ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻟﻐﺎﺷﻴﺔ ‏) . ‏[ﺻﺤﻴﺢ. ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ]. “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর সালাতে ( ﺳﺒﺢ ﺍﺳﻢ ﺭﺑﻚ ﺍﻷﻋﻠﻰ ) এবং ( ﻫﻞ ﺃﺗﺎﻙ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻟﻐﺎﺷﻴﺔ ) পড়তেন”।[31] তিন-জুমু‘আর সালাতের পূর্বে কোন সুন্নত সালাত নাই। তবে নফল সালাত যত চায় পড়তে পারবে। আর জুমু‘আর সালাতে পর সুন্নত সালাত দুই রাকআত বা চার রাকআত। প্রমাণ- ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ – ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ :: ‏«ﺇﺫﺍ ﺻﻠﻰ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻠﻴﺼﻞ ﺑﻌﺪﻫﺎ ﺃﺭﺑﻌًﺎ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ]. অর্থ, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন তোমাদের কেউ জুমু‘আর সালাত আদায় করে, সে যেন তারপর চার রাকআত সালাত আদায় করে”।[32] অপর একটি হাদিসে আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻻ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺣﺘﻰ ﻳﻨﺼﺮﻑ ﻓﻴﺼﻠﻲ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ. ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ، ﻭﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ]. “রাসূল রাদিয়াল্লাহু আনহু জুম‘আর সালাত আদায় করার পর কোন সালাত আদায় করতেন না। তিনি চলে যেতেন এবং তারপর দুই রাকআত সালাত আদায় করতেন”। অপর একটি হাদিসে আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ . ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ، ﻭﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ]. “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর সালাত আদায় করার পর স্বীয় ঘরে দুই রাকআত সালাত আদায় করতেন”। [33] সুন্নাত হল, ফরয সালাত শেষ করার সাথে সাথে কোন প্রকার কথা- বার্তা বলা ও স্থান পরিবর্তন করা ছাড়া সুন্নাত সালাত আদায়ের জন্য না দাঁড়ানো। ফরয ও সুন্নাতের মাঝখানে স্থান পরিবর্তন বা কথা- বার্তা বলে বিরত নেয়া সুন্নাত। প্রমাণ- ﻓﻌﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﻋﻄﺎﺀ ﺃﻥ ﻧﺎﻓﻊ ﺑﻦ ﺟﺒﻴﺮ ﺃﺭﺳﻠﻪ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺍﺑﻦ ﺃﺧﺖ ﻧﻤﺮ ﻳﺴﺄﻟﻪ ﻋﻦ ﺷﻲﺀ ﺭﺁﻩ ﻣﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻓﻘﺎﻝ : ﻧﻌﻢ ﺻﻠﻴﺖ ﻣﻌﻪ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻘﺼﻮﺭﺓ، ﻓﻠﻤﺎ ﺳﻠﻢ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻗﻤﺖ ﻓﻲ ﻣﻘﺎﻣﻲ ﻓﺼﻠﻴﺖ، ﻓﻠﻤﺎ ﺩﺧﻞ ﺃﺭﺳﻞ ﺇﻟﻲ ﻓﻘﺎﻝ : ﻻ ﺗﻌﺪ ﻟﻤﺎ ﻓﻌﻠﺖ، ﺇﺫﺍ ﺻﻠﻴﺖ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻼ ﺗﺼﻠﻬﺎ ﺑﺼﻼﺓ ﺣﺘﻰ ﺗﻜﻠﻢ ﺃﻭ ﺗﺨﺮﺝ، ﻓﺈﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﺑﺬﻟﻚ ﺃﻥ ﻻ ﻧﻮﺍﺻﻞ ﺻﻼﺓ ﺑﺼﻼﺓ ﺣﺘﻰ ﻧﺘﻜﻠﻢ ﺃﻭ ﻧﺨﺮﺝ . ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ]. অর্থ, ওমর বিন আতা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাফে বিন জুবাইর তাকে সায়েব এর নিকট পাঠালেন, যাতে সে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে সালাতে যা করতে দেখছেন সে সম্পর্কে সংবাদ দেন। তখন তিনি বললেন, আমি তার সাথে মাকসুরা- মসজিদে নির্মিত ছোট কামরা- তে জুমু‘আর সালাত আদায় করি। ইমাম সালাম ফেরানোর পর আমি আমার স্বীয় স্থানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করি। তারপর যখন তিনি সালাত শেষ করেন, তখন স্বীয় ঘরে প্রবেশ করে আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, এমন কাজ তুমি দ্বিতীয় বার করবে না। যখন তুমি জুমু‘আর সালাত আদায় কর, তখন তুমি কথা- বার্তা বলা ছাড়া অথবা মসজিদ থেকে বের হওয়া ছাড়া কোন সালাত আদায় করবে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এ বিষয়ে নির্দেশ দেন যে, আমরা যেন কোন কথা-বার্তা বলা বা মসজিদ থেকে বের হওয়া ছাড়া ফরযের সাথে মিলিয়ে কোন সালাত আদায় না করি”।[34] জুমু‘আর খুতবা এক- জুমু‘আর সালাতের পূর্বে খতিব দুটি খুতবা দিবে। উভয় খুতবাতে খতিব ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো আলোচনা করবেন। আল্লাহর প্রতি ঈমান, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, নবী, রাসূল ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমানের বিষয়গুলো আলোচনা করবেন। জান্নাত- জাহান্নাম সম্পর্কে আলোচনা করবেন। আল্লাহ তা‘আলা তার প্রিয় বান্দাদের জন্য যে সব নেয়ামতের কথা বলেছেন এবং দুশমনদের জন্য যে সব শাস্তির কথা বলেছেন তা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আল্লাহর দিকে মানুষকে ডাকবেন। যে সব আয়াতে আল্লাহর জিকির এবং শুকরিয়া আদায় করার নির্দেশ রয়েছে, সে সব আয়াত স্মরণ করিয়ে দিবেন। যে সব আয়াত আল্লাহকে মানুষের নিকট প্রিয় করে তুলে সে সব আয়াত সম্পর্কে আলোচনা করবেন। যাতে মানুষের অন্তর ঈমান ও তাওহীদের আলোতে ভরে যায় এবং শ্রোতারা এমনভাবে বাড়ীতে ফিরে, যেন তারা আল্লাহকে ভালো বাসছেন এবং আল্লাহও তাদের ভালো বাসছেন। দুই- খুতবা এমন দীর্ঘ না হয় যাতে মানুষ বিরক্ত হয়ে যায় আবার এত বেশি সংক্ষিপ্ত না হয় যাতে বুঝতে কষ্ট হয়। খুতবার লক্ষ্য উদ্দেশ্য যাতে হাসিল হয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্য হল, মানুষকে নছিহত করা, আযাব ও গজব সম্পর্কে ভয় দেখানো এবং সতর্ক করা। খতীব যিনি হবেন তাকে অবশ্যই সমাজের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে হবে। খুতবায় সমাজের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের উপর খুতবা দিতে চেষ্টা করবে। সমাজে যে বিষয়টি খুব প্রয়োজন সে বিষয়ের উপর খুতবা দিবে। সময়ের প্রতিও যত্নবান হতে হবে এবং মুসল্লিদের প্রয়োজনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আম্মার ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, « ﺇﻥ ﻃﻮﻝ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻭﻗﺼﺮ ﺧﻄﺒﺘﻪ ﻣﺌﻨﺔ ﻣﻦ ﻓﻘﻬﻪ، ﻓﺄﻃﻴﻠﻮﺍ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻗﺼﺮﻭﺍ ﺍﻟﺨﻄﺒﺔ، ﻭﺇﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻴﺎﻥ ﻟﺴﺤﺮًﺍ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ]. “সালাতকে দীর্ঘ করা এবং খুতবাকে সংক্ষিপ্ত করা একজন মানুষের জ্ঞানী হওয়ার সুফল। সুতরাং তোমরা সালাতকে দীর্ঘ কর এবং খুতবাকে সংক্ষেপ কর। অনেক বক্তৃতা যাদুর সমতুল্য”।[35] অপর একটি হাদিসে বর্ণিত- ﻭﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﺳﻤﺮﺓ – ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﻗﺎﻝ : ﻛﻨﺖ ﺃﺻﻠﻲ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻓﻜﺎﻧﺖ ﺻﻼﺗﻪ ﻗﺼﺪًﺍ ﻭﺧﻄﺒﺘﻪ ﻗﺼﺪًﺍ. ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ]. অর্থ, জাবের বিন সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করি, তার সালাত ছিল মধ্য পন্থার এবং তার খুতবা ছিল মধ্য পন্থার।[36] তিন- খতিব জুমু‘আর দিন জুমু‘আর খুতবা দেয়ার জন্য ওয়াক্ত হওয়ার পর সাথে সাথে কাল ক্ষেপণ না করে মসজিদে চলে আসবে। খতীব জায়গায় পৌছার পর মিম্বারকে সামনে নিয়ে আসবে। খতীব তাহিইয়্যাতুল মসজিদ পড়বে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি মিম্বারের উপর আরোহণ করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে এসে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়েছেন এমন কোন প্রমাণ নাই। খতীব প্রথমে মুসল্লিদের সালাম দেবেন, তারপর আযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত মিম্বারে বসবেন। মুয়াজ্জিন যখন আযান শেষ করবে তখন খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়াবে এবং খুতবা আরম্ভ করবেন। ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ – ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﻗﺎﻝ : ﺇﻥ ﺍﻷﺫﺍﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻛﺎﻥ ﺃﻭﻟﻪ ﺣﻴﻦ ﻳﺠﻠﺲ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻨﺒﺮ ﻓﻲ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺃﺑﻲ ﺑﻜﺮ ﻭﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ، ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺧﻼﻓﺔ ﻋﺜﻤﺎﻥ – ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﻭﻛَﺜُﺮُﻭﺍ ﺃﻣﺮ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺑﺎﻷﺫﺍﻥ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﻓﺄﺫﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺰﻭﺭﺍﺀ، ﻓﺜﺒﺖ ﺍﻷﻣﺮ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ. ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ]. সায়েব বিন ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগ, আবু বকর ও ওমরের যুগে জুমু‘আর দিন ইমাম যখন মিম্বারে বসত তখন প্রথম আযান দেয়া হত। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে যখন মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেল, তখন তিনি অপর একটি আযানের নির্দেশ দিলেন। তারপর আরেকটি আযানের প্রচলন। এখন সমস্ত মুসলিম দেশে দুই আযান একটি একামত দ্বারা জুম‘আর সালাত আদায় করা হয়।[37] চার- খুতবা মিম্বারের উপর উঠে দাঁড়িয়ে দেবে। যদি মিম্বার না থাকে তাহলে উঁচা জায়গায় দাঁড়িয়ে খুতবা দিবে। যাতে সব মুসল্লি খতিবের আওয়াজ শুনতে পায়। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺨﻄﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻨﺒﺮ. ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ]. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপর উঠে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন।[38] মিম্বারটি এমনভাবে স্থাপন করবে, যাতে ইমাম যখন মেহরাবে কিবলামুখি হয়ে দাড়ায়, তখন মিম্বারটি তার হাতের ডানে থাকে।[39] পাঁচ- দাড়িয়ে খুতবা দেয়া সুন্নত। প্রথম খুতবা দেয়ার পর কিছু সময় বসবে। তারপর আবার দাঁড়াবে এবং দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় খুতবা দিবে। প্রমাণ- ﻓﻌﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﺳﻤﺮﺓ – ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﺨﻄﺐ ﻗﺎﺋﻤﺎ ﺛﻢ ﻳﺠﻠﺲ، ﺛﻢ ﻳﻘﻮﻡ ﻓﻴﺨﻄﺐ ﻗﺎﺋﻤﺎ، ﻓﻤﻦ ﺃﻧﺒﺄﻙ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺨﻄﺐ ﺟﺎﻟﺴًﺎ ﻓﻘﺪ ﻛﺬﺏ، ﻓﻘﺪ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻴﺖ ﻣﻌﻪ ﺃﻛﺜﺮ ﻣﻦ ﺃﻟﻔﻲ ﺻﻼﺓ. ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ]. অর্থ, জাবের ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন তারপর তিনি কিছু সময় বসতেন। তারপর তিনি আবার দাঁড়াতেন এবং দ্বিতীয় খুতবা দিতেন। যে বলে, তিনি বসে খুতবা দিতেন সে মিথ্যা বলল। আল্লাহর শপথ আমি তার সাথে দুই হাজারের অধিক সালাত আদায় করছি”।[40] ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ – ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺧﻄﺐ ﺍﺣﻤﺮَّﺕ ﻋﻴﻨﺎﻩ ﻭﻋﻼ ﺻﻮﺗﻪ ﻭﺍﺷﺘﺪ ﻏﻀﺒﻪ ﺣﺘﻰ ﻛﺄﻧﻪ ﻣﻨﺬﺭ ﺟﻴﺶ، ﻳﻘﻮﻝ : ‏«ﺻﺒﺤﻜﻢ ﻭﻣﺴﺎﻛﻢ ‏» ، ﻭﻳﻘﻮﻝ : ‏« ﺑُﻌﺜﺖ ﺃﻧﺎ ﻭﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﻛﻬﺎﺗﻴﻦ‏» ﻭﻳﻘﺮﻥ ﺑﻴﻦ ﺃﺻﺎﺑﻌﻪ ﺍﻟﺴﺒﺎﺑﺔ ﻭﺍﻟﻮﺳﻄﻰ، ﻭﻳﻘﻮﻝ : ‏« ﺃﻣﺎ ﺑﻌﺪ، ﻓﺎﻥ ﺧﻴﺮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺧﻴﺮ ﺍﻟﻬﺪﻱ ﻫﺪﻱ ﻣﺤﻤﺪ، ﻭﺷﺮ ﺍﻷﻣﻮﺭ ﻣﺤﺪﺛﺎﺗﻬﺎ، ﻭﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ ‏» ، ﺛﻢ ﻳﻘﻮﻝ : ‏«ﺃﻧﺎ ﺃﻭﻟﻰ ﺑﻜﻞ ﻣﺆﻣﻦ ﻣﻦ ﻧﻔﺴﻪ، ﻭﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﻣﺎﻻ ﻓﻸﻫﻠﻪ، ﻭﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﺩَﻳْﻨﺎ ﺃﻭ ﺿَﻴَﺎﻋﺎ ﻓﺈﻟﻲَّ ﻭﻋﻠﻲَّ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ]. অর্থ, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুতবা দিতেন তখন তার চেহারা লাল হয়ে যেত, আওয়াজ উঁচা হত এবং খুব ক্ষুব্ধ হতেন। যেন তিনি সৈন্য বাহিনীকে এ বলে ভয় দেখাচ্ছেন, সকাল বেলা তোমাদের উপর আক্রমণ হবে বা বিকালে তোমাদের উপর আক্রমণ হবে। তিনি দুটি আঙ্গুলকে একত্রে মিলিয়ে দেখাতেন এবং বলতেন, যে অবস্থায় কেয়ামত খুব কাছাকাছি। অত:পর, মনে রাখবে, উত্তম হাদিস হল, আল্লাহর কিতাব, আর সবোত্তম আদর্শ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বস্তু হল, নব আবিস্কৃত বিষয়, আর সমস্ত নতুন আবিস্কৃত বস্তু গোমরাহী। তারপর তিনি বলেন, আমি মুমিনের জন্য তার জীবন থেকেও অধিক উত্তম। যে ব্যক্তি সম্পদ রেখে গেল, তা তার পরিবারের জন্য, আর যে ব্যক্তি ঋণ রেখে যায় তার দায়িত্ব আমার উপর”।[41] সাত- যখন খতীব কোন বিষয়ে মুসল্লিদের সতর্ক করার প্রয়োজন মনে করবে, তখন সে মিম্বার থেকে তাদের সতর্ক করতে পারবে। তাদের কোন ভুল- ভ্রান্তি দেখলে তিনি তাদের সংশোধন করে দিবেন। প্রমাণ- ﻓﻌﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ : ﺑﻴﻨﻤﺎ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺨﻄﺐ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺇﺫ ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏« ﺻﻠﻴﺖ؟ ‏» ﻗﺎﻝ : ﻻ، ﻗﺎﻝ : ‏« ﻗﻢ ﻓﺎﺭﻛﻊ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ، ﻭﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ]. অর্থ, জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় একলোক মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়ল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি সালাত আদায় করছ? লোকটি বলল, না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি দাঁড়াও এবং সালাত আদায় কর”।[42] আট- জুম‘আর মসজিদে এসে কাউকে কষ্ট দেবে না। আব্দুল্লাহ বিন বছর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﻛﻨﺖ ﺟﺎﻟﺴًﺎ ﺇﻟﻰ ﺟﺎﻧﺒﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﻳﺘﺨﻄﻰ ﺭﻗﺎﺏ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏«ﺃﻱ ﺃﺟﻠﺲ ﻓﻘﺪ ﺁﺫﻳﺖ ‏» ‏[ﺻﺤﻴﺢ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ]. “একদিন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে বসা ছিলাম এমন সময় এক লোক এসে ঘাড়ে হাত দিয়ে মানুষদের ফাঁক করা আরম্ভ করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে লোক! তুমি বস, তুমি লোকদের কষ্ট দিচ্ছ”।[43] খতীবের জন্য উপদেশ ও খতীব হওয়ার যোগ্যতা এক- খুতবা দেয়া দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই যেন লক্ষ্য হয়। দুই- খতীবকে অবশ্যই আখলাকে হাসানা- সুন্দর চরিত্রের- অধিকারী হতে হবে এবং ইসলামী শরীয়তের অনুসারী হতে হবে। তিন- মানুষকে যে সব বিষয়ে ওয়াজ করবেন তার উপর নিজে আমল করার চেষ্টা করবে। চার- তাকে অবশ্যই সহীহ আকীদা সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে। যাতে আকীদা গত কোন বিষয়ে তার পদস্খলন না হয় এবং তার থেকে কোন খারাপ আকীদা মানুষের মধ্যে প্রসারিত না হয়। পাঁচ- হাদিস সম্পর্কে তার জ্ঞান থাকতে হবে। কোন হাদিসটি সহীহ এবং কোন হাদিসটি দুর্বল বা বানোয়াট সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা খুবই জরুরি। যাতে তার খুতবা দুর্বল ও বানোয়াট হাদিস প্রচারের মাধ্যম না হয়। ছয়- ইবাদত, মুয়ামালাত এবং আখলাকী বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে যে সব হাদিস প্রমাণিত সে সম্পর্কে অবশ্যই জ্ঞান থাকতে হবে। সাত- আরবী ভাষা সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। বিশুদ্ধভাবে আরবী ভাসা পড়তে, বুঝতে এবং লিখতে জানতে হবে। জুমু‘আর সালাতের আদবসমূহ এক- গোসল করা। জুমু‘আর দিন জুমু‘আর সালাতের উদ্দেশ্যে গোসল করা সুন্নাত। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « ﻏﺴﻞ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﺍﺟﺐ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﻣﺤﺘﻠﻢ، ﻭﺳﻮﺍﻙ، ﻭﻳﻤﺲ ﻣﻦ ﺍﻟﻄﻴﺐ ﻣﺎ ﻗﺪﺭ ﻋﻠﻴﻪ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﻏﻴﺮﻩ ]. “প্রত্যেক বালেগ প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের উপর জুম‘আর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা ওয়াজিব। যদি সম্ভব হয় খোশবু বা আতর ব্যবহার করবে”।[44] অপর একটি হাদিস আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺇﻥ ﻫﺬﺍ ﻳﻮﻡ ﻋﻴﺪ ﺟﻌﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ، ﻓﻤﻦ ﺟﺎﺀ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻠﻴﻐﺘﺴﻞ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻃﻴﺐ ﻓﻠﻴﻤﺲ ﻣﻨﻪ، ﻭﻋﻠﻴﻜﻢ ﺑﺎﻟﺴﻮﺍﻙ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺣﺴﻦ ]. “এটি ঈদের দিন। আল্লাহ তা‘আলা এটিকে মুসলিমদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হয়, সে যেন গোসল করে নেয়। আর যদি খোশবু থাকে তা থেকে শরীরে লাগাবে। আর অবশ্যই তোমরা মিসওয়াক করবে”।[45] দুই- শরীরকে ময়লা আবর্জনা থেকে পরিষ্কার এবং দুর্গন্ধ মুক্ত করবে। শরীরে তেল, আতর ও খোশবু লাগাবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﺎﻏﺘﺴﻞ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻭﻏﺴﻞ ﺭﺃﺳﻪ، ﺛﻢ ﺗﻄﻴﺐ ﻣﻦ ﺃﻃﻴﺐ ﻃﻴﺒﻪ، ﻭﻟﺒﺲ ﻣﻦ ﺻﺎﻟﺢ ﺛﻴﺎﺑﻪ، ﺛﻢ ﺧﺮﺝ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﻟﻢ ﻳﻔﺮﻕ ﺑﻴﻦ ﺍﺛﻨﻴﻦ، ﺛﻢ ﺍﺳﺘﻤﻊ ﺇﻟﻰ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﺯﻳﺎﺩﺓ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﻳﺎﻡ‏» ‏[ ﺣﺴﻦ . ﺭﻭﺍﻩ ﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ]. “যখন কোন ব্যক্তি জুমু‘আর দিন সুন্দর করে গোসল করে, ভালোভাবে মাথা ধোয়, উত্তম সু- গন্ধি ব্যবহার করে, সুন্দর কাপড় পরিধান করে, অত:পর সে সালাতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক করে সামনে যায় না এবং সে ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার এক জুমু‘আ হতে অপর জুমু‘আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেন”।[46] তিন- দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক অন্বেষণ করবে না: সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻣﻦ ﺍﻏﺘﺴﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻭﺗﻄﻬﺮ ﺑﻤﺎ ﺍﺳﺘﻄﺎﻉ ﻣﻦ ﻃﻬﺮ، ﺛﻢ ﺍﺩَّﻫﻦ ﺃﻭ ﻣﺲ ﻣﻦ ﻃﻴﺐ، ﺛﻢ ﺭﺍﺡ ﻓﻠﻢ ﻳﻔﺮﻕ ﺑﻴﻦ ﺍﺛﻨﻴﻦ، ﻓﺼﻠﻰ ﻣﺎ ﻛﺘﺐ ﻟﻪ، ﺛﻢ ﺇﺫﺍ ﺧﺮﺝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﻧﺼﺖ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺑﻴﻨﻪ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺍﻷﺧﺮﻯ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ]. “যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে এবং সাধ্য অনুযায়ী পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর তেল ও খোশবু ব্যবহার করে মসজিদে গমন করে- দুই লোকের মাঝখানে কোন প্রকার ফাঁক করে না, তাওফীক অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব সালাত আদায় করে অত:পর যখন ইমাম বের হয়, তার খুতবা শোনার প্রতি মনোযোগী হয়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে এক জুমু‘আ থেকে নিয়ে অপর জুমু‘আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন”।[47] চার- সুন্দর কাপড় পরিধান করা: আব্দুল্লাহ বিন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জুমু‘আর দিন মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, « ﻣﺎ ﻋﻠﻰ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻟﻮ ﺍﺷﺘﺮﻯ ﺛﻮﺑﻴﻦ ﻟﻴﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺳﻮﻯ ﺛﻮﺏ ﻣﻬﻨﺘﻪ ‏» ‏[ﺻﺤﻴﺢ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ]. “তোমাদের কেউ যদি কর্মস্থলের পোশাক বাদ দিয়ে জুমু‘আর দিনের জন্য দুটি কাপড় ক্রয় করে, তাতে কোন অসুবিধা নাই”।[48] পাঁচ- জায়গা থেকে উঠানো যাবে না: জুমু‘আর দিন একজনকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে সে জায়গায় বসবে না। এ ধরনের কর্ম থেকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﻧﻬﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺃﻥ ﻳﻘﻴﻢ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺃﺧﺎﻩ ﻣﻦ ﻣﻘﻌﺪﻩ ﻭﻳﺠﻠﺲ ﻓﻴﻪ. ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺮﺍﻭﻱ ﻋﻦ ﻧﺎﻓﻊ : ﻗﻠﺖ ﻟﻨﺎﻓﻊ : ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ؟ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﻏﻴﺮﻫﺎ . ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ]. “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে তার স্থান থেকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে বসা থেকে নিষেধ করেন। নাফে রহ. থেকে বর্ণনাকারী বলেন, আমি নাফে রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম, এটি কি জুমু‘আর দিন? তিনি বললেন, জুমু‘আ ও অন্য যে কোন দিন”।[49] ছয়- মসজিদে ঘুম আসলে স্থান পরিবর্তন করা: জুমু‘আর দিন তন্দ্রা আসলে স্থান পরিবর্তন করা। অনেককে দেখা যায় মসজিদে এসে ঘুমায়। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺇﺫﺍ ﻧﻌﺲ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻠﻴﺘﺤﻮﻝ ﻋﻦ ﻣﺤﻠﻪ ﺫﻟﻚ‏» ‏[ﺻﺤﻴﺢ. ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ، ﻭﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ]. “যখন তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয় সে যেন স্থান পরিবর্তন করে নেয়”।[50] সাত- মসজিদে তাড়াতাড়ি যাওয়া: জুম‘আর দিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে চলে যাওয়া। যে ব্যক্তি মসজিদে যত আগে যাবে সে তত বেশি সাওয়াব পাবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « ﻣﻦ ﺍﻏﺘﺴﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻏﺴﻞ ﺍﻟﺠﻨﺎﺑﺔ ﺛﻢ ﺭﺍﺡ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﺍﻷﻭﻟﻰ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﻗﺮﺏ ﺑﺪﻧﻪ، ﻭﻣﻦ ﺭﺍﺡ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﻗﺮﺏ ﺑﻘﺮﺓ، ﻭﻣﻦ ﺭﺍﺡ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﺍﻟﺜﺎﻟﺜﺔ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﻗﺮﺏ ﻛﺒﺸًﺎ ﺃﻗﺮﻥ، ﻭﻣﻦ ﺭﺍﺡ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﺍﻟﺮﺍﺑﻌﺔ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﻗﺮﺏ ﺩﺟﺎﺟﺔ، ﻭﻣﻦ ﺭﺍﺡ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﻋﺔ ﺍﻟﺨﺎﻣﺴﺔ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﻗﺮﺏ ﺑﻴﻀﺔ، ﻓﺈﺫﺍ ﺧﺮﺝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻳﺴﺘﻤﻌﻮﻥ ﺍﻟﺬﻛﺮ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺎﻟﻚ ﻓﻲ ” ﺍﻟﻤﻮﻃﺄ، ﻭﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ، ﻭﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ، ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ]. “যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন ফরয গোসলের মত গোসল করে, তারপর প্রথম সময়ে মসজিদে গমন করে, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি উট কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি গরু কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি ভেড়া কুরবানি করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি মুরগী আল্লাহর রাস্তায় দান করল। তারপর যে লোকটি মসজিদে গমন করল, সে যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করল। অত:পর যখন ইমাম উপস্থিত হয়, তখন ফেরেশতারাও উপস্থিত হয় এবং তার খুতবা শ্রবণ করে”।[51] আট- মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করা: তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকআত সালাত আদায় করা খুবই জরুরি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুই সালাত বিষয়ে খুব গুরুত্ব প্রদান করেছেন। আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﻼ ﻳﺠﻠﺲ ﺣﺘﻰ ﻳﺼﻠﻲ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ‏» ‏[ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ]. “যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন দুই রাক’আত সালাত আদায় করা ছাড়া না বসে”।[52] অপর একটি বর্ণনায় জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, ﻭﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ – ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﻗﺎﻝ : ﺃﺗﻴﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻫﻮ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﻘﺎﻝ : ‏« ﺻﻞ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ‏» ‏[ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ]. অর্থ, জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম যখন তিনি মসজিদে ছিলেন, তিনি বললেন, “দুই রাকআত সালাত আদায় কর”।[53] অনুরূপভাবে ইমাম যখন খুতবা দিচ্ছে তখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করছ, তাহলেও দুই রাকাত সালাত আদায় করে নিবে। প্রমাণ- ﻓﻌﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ : ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﻭﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺨﻄﺐ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻓﻘﺎﻝ : ‏« ﺃﺻﻠﻴﺖ ﻳﺎ ﻓﻼﻥ؟‏» ﻗﺎﻝ : ﻻ، ﻗﺎﻝ : ‏« ﻗﻢ ﻓﺄﺭﻛﻊ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ]. অর্থ, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুমু‘আর দিন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়ল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তাকে দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে অমুক, তুমি সালাত আদায় করছ? লোকটি বলল, না, আল্লাহর রাসূল বললেন, “তুমি দাঁড়াও এবং সালাত আদায় কর”।[54] নয়- শান্ত-সৃষ্ট ভাবে জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হওয়া: জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হতে তাড়াহুড়া করবে না। ভাব গাম্ভীর্যের সাথে সালাতে উপস্থিত হবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, « ﺇﺫﺍ ﺃﻗﻴﻤﺖ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻼ ﺗﺄﺗﻮﻫﺎ ﺗﺴﻌﻮﻥ، ﻭﺃﺗﻮﻫﺎ ﺗﻤﺸﻮﻥ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﺴﻜﻴﻨﺔ، ﻓﻤﺎ ﺃﺩﺭﻛﺘﻢ ﻓﺼﻠﻮﺍ، ﻭﻣﺎ ﻓﺎﺗﻜﻢ ﻓﺄﺗِﻤﻮﺍ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ]. “যখন সালাতের একামত হয়, তখন তোমরা সালাতে দৌড়ে এসো না। তোমরা পায়ে হেঁটে ধীরে ধীরে সালাতে উপস্থিত হও। সালাতের যতটুকু ইমামের সাথে পেলে, ততটুকু পড় আর যতটুকু ছুটে গেল তা পূর্ণ কর”।[55] দশ- জুমু‘আর সালাতের পূর্বে মসজিদে জড়ো-গোলাকার- হয়ে বসা নিষিদ্ধ: জুমু‘আর দিন জুমু‘আর মসজিদের সালাতের পূর্বে জুমু‘আর সালাতের বিঘ্ন ঘটায় এ ধরনের কোন হালাকা কায়েম করা নিষিদ্ধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। প্রমাণ- ﻋﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺷﻌﻴﺐ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﺟﺪﻩ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻧﻬﻰ ﺃﻥ ﻳﺤﻠﻖ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ . ‏[ ﺣﺴﻦ. ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ، ﻭﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ]. অর্থ, আমর ইবনে শুয়াইব, তার পিতা থেকে এবং তিনি তার দাদা থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন সালাতের পূর্বে মসজিদে গোল হয়ে বসা থেকে নিষেধ করেছেন”।[56] এগারো- উভয় খুতবা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা: জুমুম‘আর দিন দুটি খুতবাই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। অনেকেই মনে করে প্রথম খুতবা শোনা জরুরি দ্বিতীয় খুতবা শোনা জরুরী নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল। উভয় খুতবাই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। খুতবা চলা কালীন সময় কোন প্রকার কথা বলা যাবে না। এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখে ‘চুপ কর’ এ কথাও বলা যাবে না। কারণ, হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ এসেছে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺇﺫﺍ ﻗﻠﺖ ﻟﺼﺎﺣﺒﻚ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺃﻧﺼﺖ ﻭﺍﻹﻣﺎﻡ ﻳﺨﻄﺐ ﻓﻘﺪ ﻟﻐﻮﺕ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ ‏]. ﻭﺯﺍﺩ ﺃﺣﻤﺪ ﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺘﻪ : ‏« ﻭﻣﻦ ﻟﻐﺎ ﻓﻠﻴﺲ ﻟﻪ ﻓﻲ ﺟﻤﻌﺘﻪ ﺗﻠﻚ ﺷﻲﺀ ». “ইমামের খুতবা দেয়া অবস্থায় তুমি যদি তোমার সাথীকে বল, তুমি চুপ কর, তাহলে তুমি অনর্থক কথা বললে”।[57] ইমাম আহমদ তার বর্ণনাতে হাদিসে আরও বর্ধিত করেন, অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন অনর্থক কর্ম করল, তার জন্য ঐ জুমু’আতে আর কিছু রইল না। বার- দুই জনের মাঝে ফাঁকা করবে না: জুমু‘আর দিন অনেক লোককে দেখা যায়, মসজিদে দেরীতে আসে। কিন্তু সে সামনে গিয়ে বসার জন্য মানুষের মাঝে ফাঁক করে সামনে যায়। এতে মানুষের কষ্ট হয়। মানুষকে কষ্ট দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যে লোক পরে আসবে সে যেখানে যায়গা পাবে সেখানে বসে পড়বে। কাউকে কষ্ট দেবে না এবং সামনে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। প্রমাণ- আব্দুল্লাহ বিন বছর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﻳﺘﺨﻄﻰ ﺭﻗﺎﺏ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺨﻄﺐ، ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏« ﺍﺟﻠﺲ ﻓﻘﺪ ﺁﺫﻳﺖ ﻭﺁﻧﻴﺖ ‏» ‏[ﺻﺤﻴﺢ. ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ، ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ، ﻭﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ، ﻭﻟﻴﺲ ﻋﻨﺪ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭﺁﻧﻴﺖ، ﻭﻋﻨﺪ ﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ : ﻓﻘﺪ ﺁﺫﻳﺖ ﻭﺃﻭﺫﻳﺖ، ﻭﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ]. “জুমু‘আর দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিল এমন সময় এক লোক এসে মানুষদের ফাঁক করা আরম্ভ করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি বস, তুমি লোকদের কষ্ট দিচ্ছ ও নিজেও কষ্ট করছ”।[58] তের- সালাত আদায় কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে না: সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে কঠিন হুসিয়ারী উচ্চারণ করেন। আবু জাহাম আব্দুল্লাহ বিন হারেস বিন আস-সাম্মাতুল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻟﻮ ﻳﻌﻠﻢ ﺍﻟﻤﺎﺭ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻱ ﺍﻟﻤﺼﻠﻲ ﻣﺎﺫﺍ ﻋﻠﻴﻪ ﻟﻜﺎﻥ ﺃﻥ ﻳﻘﻒ ﺃﺭﺑﻌﻴﻦ ﺧﻴﺮًﺍ ﻟﻪ ﻣﻦ ﺃﻥ ﻳﻤﺮ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻪ‏» ‏(ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻨﻀﺮ : ﻻ ﺃﺩﺭﻱ ﻗﺎﻝ ﺃﺭﺑﻌﻴﻦ ﻳﻮﻣﺎ ﺃﻭ ﺷﻬﺮﺍ ﺃﻭ ﺳﻨﺔ ‏). ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ، ﻭﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ]. “সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যে কত বড় অপরাধ তা যদি অতিক্রমকারী জানতে পারত, তাহলে চল্লিশ (দিন) পর্যন্ত অপেক্ষা তার অতিক্রম করার চেয়ে উত্তম হত”।[59] চৌদ্দ- ইমাম মসজিদে প্রবেশের পর কোন নফল সালাত পড়বে না: ইমাম সাহেব মসজিদে প্রবেশ করার সাথে কোন প্রকার নফল সালাত, জিকির- আযকার করবে না। মুয়াজ্জিনের আযানের উত্তর দেয়ার পর ইমামের খুতবা শোনায় মনোযোগী হবে। আব্দুল্লাহ বিন আমর হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « ﻳﺤﻀﺮ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺛﻼﺛﺔ ﻧﻔﺮ؛ ﻓﺮﺟﻞ ﺣﻀﺮﻫﺎ ﻳﻠﻐﻮ، ﻓﺬﻟﻚ ﺣﻈﻪ ﻣﻨﻬﺎ، ﻭﺭﺟﻞ ﺣﻀﺮﻫﺎ ﺑﺪﻋﺎﺀ، ﻓﻬﻮ ﺭﺟﻞ ﺩﻋﺎ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻥ ﺷﺎﺀ ﺃﻋﻄﺎﻩ ﻭﺇﻥ ﺷﺎﺀ ﻣﻨﻌﻪ، ﻭﺭﺟﻞ ﺣﻀﺮﻫﺎ ﺑﺈﻧﺼﺎﺕ ﻭﺳﻜﻮﺕ، ﻭﻟﻢ ﻳﺘﺨﻂ ﺭﻗﺒﺔ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﻟﻢ ﻳﺆﺫ ﺃﺣﺪﺍ، ﻓﻬﻲ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻟﻪ ﺇﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﺗﻠﻴﻬﺎ ﻭﺯﻳﺎﺩﺓ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﻳﺎﻡ، ﻭﺫﻟﻚ ﺃﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻘﻮﻝ : ﴿ﻣَﻦْ ﺟَﺎﺀَ ﺑِﺎﻟْﺤَﺴَﻨَﺔِ ﻓَﻠَﻪُ ﻋَﺸْﺮُ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ «﴾ ‏[ ﺣﺴﻦ. ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ]. “তিন ধরনের মানুষ জুমু‘আর দিন মসজিদে উপস্থিত হয়ে থাকে। এক ধরনের মানুষ যারা জুমু‘আর দিন মসজিদে এসে কথাবার্তা বলে অনর্থক কাজ করে। তারা অবশ্যই তাদের কর্মের পরিণাম ভোগ করবে। আরেক ধরনের লোক যারা মসজিদে এসে দু‘আ মুনাজাতে লিপ্ত থাকে। আল্লাহ চাইলে লোকটির দু‘আ কবুল করবেন অথবা দু‘আ কবুল করবেন না। আরেক ধরনের লোক যারা চুপ-চাপ করে মসজিদে উপস্থিত হয়, দুই লোকের মাঝে ফাঁকা করে না এবং কাউকে কষ্ট দেয় না। এটা তার জন্য এ জুম‘আ থেকে নিয়ে পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহসমূহ এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহের জন্য কাফফারা হবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ ﻣَﻦْ ﺟَﺎﺀَ ﺑِﺎﻟْﺤَﺴَﻨَﺔِ ﻓَﻠَﻪُ ﻋَﺸْﺮُ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ ﴾» যে কোন নেক আমল করে আল্লাহ তা‘আলা তার সাওয়াবকে দশ গুণ বাড়িয়ে দেন”।[60] পনের- জুমু‘আর দিন জুমু‘আর সালাতের পূর্বে ইহতেবা করে বসা মাকরূহ: জুম‘আর দিন মসজিদে ইহতেবা করে বসা নিষিদ্ধ। ইহতেবা বলা হয়, নিতম্বের উপর বসে দুই হাঁটু খাড়া করে দেয়া এবং তার উপর কাপড় পরে দুই হাত দিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে হাঁটুর নিচে ধরে রাখা।[61] প্রমাণ- ﻋﻦ ﺳﻬﻞ ﺑﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻧﻬﻰ ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺒﻮﺓ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﺍﻹﻣﺎﻡ ﻳﺨﻄﺐ. ‏[ ﺣﺴﻦ. ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ]. অর্থ, সাহাল ইবনে মুয়ায রহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম‘আর দিন ইমামের খুতবা দেয়ার সময় ইহতেবা করা থেকে নিষেধ করেছেন। [62] ষোল- জুমু‘আর সালাতে সূরাতুল জুমু‘আ ও আল-মুনাফিকুন অথবা সূরা আল-আ’লা ও আল-গাশিয়া পড়া: জুমু‘আর সালাতে ইমামের জন্য সূরাতুল জুম‘আ ও আল-মুনাফিকুন বা সূরা আল- আ’লা বা আল-গাশিয়া পড়া মোস্তাহাব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরা গুলো জুমু‘আ ও ঈদের সালাতে পড়তেন।[63] সতের- জুমু‘আর দিনকে রোযার জন্য খাস করা: জুমু‘আর দিনকে রোজার জন্য খাস করা যাবে না। তবে যদি রোযা রাখতে চায় তবে জুম‘আর দিনের আগে বা পরে রোযা রাখবে। কারণ, হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻻ ﻳﺼﻮﻣﻦ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﺼﻮﻡ ﻳﻮﻣﺎ ﻗﺒﻠﻪ ﺃﻭ ﻳﻮﻣﺎ ﺑﻌﺪﻩ ‏» ‏[ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍﻟﻠﻔﻆ ﻟﻠﺒﺨﺎﺭﻱ ]. “তোমাদের কেউ যেন শুধু জুমু‘আর দিন রোজা না রাখে। জুমু‘আর একদিন আগে বা পরে মিলিয়ে রোজা রাখবে”। [64] আঠারো- জুমু‘আর রাতে ইবাদত করা: শুধু জুমু‘আর দিন রোজা রাখা এবং জুমু‘আর রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মাকরুহ। আবু হুরাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻻ ﺗﺨﺼﻮﺍ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺑﻘﻴﺎﻡ، ﻭﻻ ﺗﺨﺼﻮﺍ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺑﺼﻴﺎﻡ ﻣﻦ ﺑﻴﻦ ﺍﻷﻳﺎﻡ، ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﺻﻮﻡ ﻳﺼﻮﻣﻪ ﺃﺣﺪﻛﻢ ‏» ‏[ ﻣﺴﻠﻢ ]. “তোমার জুমু‘আর রাতকে কিয়ামুল লাইলের জন্য খাস করো না এবং রোজার রাখার জন্য তোমরা জুমু‘আর দিনকে অন্যান্য দিন বাদ দিয়ে খাস করো না। তবে কারো যদি নির্ধারিত তারিখে রোজার রাখার অভ্যাস থাকে সে ঐ দিন রোজা রাখতে পারবে”।[65] উনিশ- জুমু‘আর দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা সুন্নত: জুমু‘আর দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা মোস্তাহাব। আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻣﻦ ﻗﺮﺃ ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻜﻬﻒ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺃﺿﺎﺀ ﻟﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﻮﺭ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺘﻴﻦ ]« ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻭﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ]. “যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তা‘আলা এ জুমু‘আ থেকে পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত তার জন্য নূরের আলো দ্বারা আলোকিত করে রাখবে”।[66] ২০- জুমু‘আর দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অধিক হারে দুরূদ পড়া: আউস বিন আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে, বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « ﺇﻥ ﻣﻦ ﺃﻓﻀﻞ ﺃﻳﺎﻣﻜﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻓﻴﻪ ﺧﻠﻖ ﺁﺩﻡ، ﻭﻓﻴﻪ ﻗﺒﺾ، ﻭﻓﻴﻪ ﺍﻟﻨﻔﺨﺔ، ﻭﻓﻴﻪ ﺍﻟﺼﻌﻘﺔ، ﻓﺄﻛﺜﺮﻭﺍ ﻋﻠﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻴﻪ، ﻓﺈﻥ ﺻﻼﺗﻜﻢ ﻣﻌﺮﻭﺿﺔ ﻋﻠﻲ ‏» ‏[ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻟﻨﻮﻭﻱ ﻭﺣﺴﻨﻪ ﺍﻟﻤﻨﺬﺭﻱ ]. “সবচেয়ে উত্তম দিন জুমু‘আর দিন। এ দিন আদম আ. কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তার রূহ কবজ করা হয়েছে। এ দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং এ দিনই পুনরুত্থান হবে। তোমরা এ দিন আমার উপর বেশি বেশি করে দুরূদ পড়। কারণ, তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়”। [67] বিনা ওজরে জুমু‘আর সালাত ছেড়ে দেয়ার পরিণতি কোন প্রকার ওজর আপত্তি ছাড়া জুমু‘আর সালাত ছেড়ে দেয়া কবিরা গুনাহ। আল্লাহর রাসূল যারা কোন প্রকার ওজর ছাড়া জুমু‘আর সালাত ছেড়ে দেয় তাদের ব্যাপারে খুব খারাপ পরিণতির কথার উম্মতকে জানিয়ে দেন। এক- আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হয় না তাদের বাড়ী- ঘর জালিয়ে দেয়ার কথা বলেন। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা জুমু‘আর সালাত থেকে বিরত থাকে, তাদের সম্পর্কে বলেন, « ﻟﻘﺪ ﻫﻤﻤﺖ ﺃﻥ ﺁﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﺛﻢ ﺃﺣﺮﻕ ﻋﻠﻰ ﺭﺟﺎﻝ ﻳﺘﺨﻠﻔﻮﻥ ﻋﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺑﻴﻮﺗﻬﻢ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﻣﺴﻠﻢ ]. “আমার ইচ্ছে হয়, একজনকে সালাতের দায়িত্ব দেই, যাতে সে মুসল্লিদের নিয়ে সালাত আদায় করে। অত:পর আমি যারা জুম‘আর সালাত থেকে বিরত থাকে তাদের বাড়ি ঘর জালিয়ে দেই”। [68] দুই- যারা জুমু‘আর সালাত আদায় করে না, আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেবেন। ফলে তারা হেদায়েতের আলো হতে বঞ্চিত হবে। আবু হুরাইরা ও আব্দুল্লাহ ওমর উভয় সাহাবী থেকে বর্ণিত তারা দুই জন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঠের মিম্বারের উপর আরোহণ করে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, « ﻟﻴﻨﺘﻬﻴﻦ ﺃﻗﻮﺍﻡ ﻋﻦ ﻭﺩﻋﻬﻢ ﺍﻟﺠﻤﻌﺎﺕ ﺃﻭ ﻟﻴﺨﺘﻤﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻗﻠﻮﺑﻬﻢ ﺛﻢ ﻟﻴﻜﻮﻧﻦ ﻣﻦ ﺍﻟﻐﺎﻓﻠﻴﻦ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ]. “লোকেরা হয়ত জুমু‘আর সালাত ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকবে, অথবা আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবে। ফলে তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে”।[69] অপর একটি হাদিস আবুল জা’আদ আদ- দামরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﺛﻼﺙ ﺟﻤﻊ ﺗﻬﺎﻭﻧًﺎ ﻃﺒﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﻠﺒﻪ ‏» ‏[ﻭﻷﺣﻤﺪ ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ، ﻭﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ، ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺣﺴﻨﻪ، ﻭﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ، ﻭﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ، ﻭﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺟﺎﺑﺮ ﻧﺤﻮﻩ]. “যে অলসতা বসত তিনটি জুমু‘আ ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরের উপর মোহর মেরে দেন”।[70] তিন- যারা জুমু‘আর সালাত ছেড়ে দেবেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদের গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত করে দেবেন। কা’আব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, « ﻟﻴﻨﺘﻬﻴﻦ ﺃﻗﻮﺍﻡ ﻳﺴﻤﻌﻮﻥ ﺍﻟﻨﺪﺍﺀ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻻ ﻳﺄﺗﻮﻧﻬﺎ ﺃﻭ ﻟﻴﻄﺒﻌﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻗﻠﻮﺑﻬﻢ ﺛﻢ ﻟﻴﻜﻮﻧﻦ ﻣﻦ ﺍﻟﻐﺎﻓﻠﻴﻦ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺣﺴﻦ ]. “জুমু‘আর দিন যারা আযান শোনে, তারা হয়ত জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত না হওয়া থেকে ফিরে আসবে অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবে- ফলে তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে”।[71] চার- যারা জুমু‘আর সাথে উপস্থিত হয়না আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরকে মুনাফেকের অন্তরে পরিণত করে দেন। যেমন- মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন যুরারাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻣﻦ ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻨﺪﺍﺀ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻠﻢ ﻳﺄﺗﻬﺎ، ﺛﻢ ﺳﻤﻌﻪ ﻓﻠﻢ ﻳﺄﺗﻬﺎ، ﺛﻢ ﺳﻤﻌﻪ ﻓﻠﻢ ﻳﺄﺗﻬﺎ، ﻃﺒﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻗﻠﺒﻪ، ﻭﺟﻌﻞ ﻗﻠﺒﻪ ﻗﻠﺐ ﻣﻨﺎﻓﻖ‏» ‏[ ﺣﺴﻦ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ]. “যে একদিন জুমু‘আর আযান শোনে মসজিদে আসে নাই, তারপর আবারও আযান শোনার পর মসজিদে আসল না, আবারও আযান শোনার পর মসজিদে আসল না। আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন এবং তার অন্তরকে মুনাফেকের অন্তরে রূপান্তর করবেন”।[72] জুমু‘আর দিনের বিদআত বিভিন্ন মুসলিম দেশে এবং বিভিন্ন এলাকায় মুসলিমদের মধ্যে জুমু‘আর দিন নানান ধরনের বিদআতের প্রচলন রয়েছে। এ ব্যাপারে বর্তমান ও পূর্বের আলেমগণ তাদের লিখনিতে বিভিন্নভাবে উম্মতকে সতর্ক করেছেন এবং বিদআত থেকে বেঁচে থাকার দাওয়াত দিয়েছেন। আমরা আমাদের এ বইয়ে কিছু বিদআত ও ভুল- ভ্রান্তি তুলে ধরবো যাতে মুসলিমরা এ সব বিদআত থেকে ফিরে আসে এবং সঠিক দ্বীনের উপর আমল করে। এক- শরীয়ত নিষিদ্ধ বিষয়গুলো দ্বারা সাজ-সজ্জা অবলম্বন করা: যেমন দাড়ি সেভ করা, স্বর্ণ- অলংকার পরিধান করা, রেশমি কাপড় পরিধান করা, কালো খেজাব ব্যবহার করা ইত্যাদি। দুই- জুম‘আর দিন মসজিদে যাওয়ার পূর্বে কাউকে দিয়ে স্থান দখল করার জন্য জায়নামায পাঠিয়ে দেয়া। তিন- খুতবার মাঝখানে অথবা দ্বিতীয় খুতবার সময় নফল সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া। চার- অনেক মানুষকে দেখা যায় ইমামের খুতবা দেয়ার সময় মসজিদে প্রবেশ করলে, তখন তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকআত সালাত আদায় না করে বসে পড়ে। এটি সম্পূর্ণ সুন্নাহ পরিপন্থী। সুন্নত হল, ইমামের খুতবা অবস্থায়ও দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করে নেবে। পাঁচ- দু‘আর সময় ইমামের হাত উঠানো এবং ইমামের দু’আর সময় মুক্তাদিদের হাত উঠানো। ছয়- জামা’আতে জুমু‘আর সালাত আদায়ের পর এককভাবে আবার জুমু‘আর সালাত আদায় করা। সাত- সালাতের সালাম ফিরানোর একে অপরের সাথে মুসাফাহা করা এবং কোলাকুলি করা। জুমু‘আর সালাতের বিধান জুমু‘আর সালাত ফরযে আইন। প্রত্যেক বালেগ, মুসলিম, স্বাধীন ও মুকীম ব্যক্তির উপর জুমু‘আর সালাত আদায় করা ফরয। আবু দাউদে হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﺣﻖ ﻭﺍﺟﺐ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﻣﺴﻠﻢ ﺇﻻ ﺃﺭﺑﻌﺔ : ﻋﺒﺪ ﻣﻤﻠﻮﻙ، ﺃﻭ ﺍﻣﺮﺃﺓ، ﺃﻭ ﺻﺒﻲ، ﺃﻭ ﻣﺮﻳﺾ‏» ‏[ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻹﺭﻭﺍﺀ ﺭﻗﻢ 592 ، ﺹ 54 ، ﺝ3 ]. “চার ব্যক্তি ছাড়া বাকী সব মুসলিমের জামা’আত ফরয। অসুস্থ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চা, মহিলা ও পরাধীন গোলামের উপর জামা’আতের সাথে নামায ফরয নয়”। আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইমাম আবু দাউদ আরও একটি হাদিস বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻨﺪﺍﺀ ‏» ‏[ ﺣﺴﻦ . ﺍﻹﺭﻭﺍﺀ ﺭﻗﻢ 593 ، ﺹ58 ، ﺝ3 ]. দুই- মুসাফিরের উপর জুমু‘আর সালাত ফরয নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীরা হজ ও অন্যান্য সময় সফর করেছেন, তবে তাদের কেউ জুমু‘আর সালাত আদায় করেননি। অথচ তাদের সাথে অনেক মানুষ ছিল। আল্লামা আলবানী রহ. এরওয়াউল গালীল কিতাবে লিখেন, অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে জুমু‘আর সালাত আদায় করেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হজের বর্ণনায় যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ﺣﺘﻰ ﺃﺗﻰ ﻋﺮﻓﻪ، ﻓﺼﻠﻰ ﺍﻟﻈﻬﺮ، ﺛﻢ ﺃﻗﺎﻡ ﻓﺼﻠﻰ ﺍﻟﻌﺼﺮ অত:পর তিনি আরাফায় গমন করলেন, তারপর যোহরের সালাত আদায় করলেন, তারপর আবার একামত দিলেন এবং আসরের সালাত আদায় করলেন। অথচ সেদিন জুমু‘আর দিন ছিল।[73] তিন- ইমামের সাথে এক রাকআত সালাত পাওয়া দ্বারা জুমু‘আর সালাত পেয়েছে বলে গণ্য হবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﻣﻦ ﺃﺩﺭﻙ ﺭﻛﻌﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻣﻊ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻓﻘﺪ ﺃﺩﺭﻙ ﺍﻟﺼﻼﺓ‏» ‏[ ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ، ﻭﻟﻜﻦ ﺩﻭﻥ ﻗﻮﻟﻪ : ﻣﻊ ﺍﻹﻣﺎﻡ، ﻓﺈﻧﻬﺎ ﺯﻳﺎﺩﺓ ﺗﻔﺮَّﺩ ﺑﻬﺎ ﻣﺴﻠﻢ ]. যে ব্যক্তি ইমামের সাথে এক রাকআত সালাত পেল সে পুরো সালাতই পেল। বুখারি ও মুসলিম- তবে বুখারির বর্ণনায় ইমামের সাথে কথাটি নাই। এ অংশটুকু কেবল ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।[74] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত অপর একটি বর্ণনায় জুমু‘আর সালাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻣﺮﻓﻮﻋﺎ : ‏« ﻣﻦ ﺃﺩﺭﻙ ﺭﻛﻌﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻘﺪ ﺃﺩﺭﻙ ﺍﻟﺼﻼﺓ ‏» ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﻭﻟﻔﻈﻪ : ﻓﻠﻴﻀﻒ ﺇﻟﻴﻬﺎ ﺃﺧﺮﻯ، ﺻﺤﻴﺢ . ﺍﻹﺭﻭﺍﺀ ﺭﻗﻢ 622 ]. অর্থ, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি জুমু‘আর সালাতের এক রাকআত পেল সে পুরো সালাত পেল”।[75] আর যে ব্যক্তি এক রাকআতও পেল না সে জুমু‘আ পেল না। সে চার রাকআত পড়বে। চার- ইমাম মিম্বারের উপর থাকা অবস্থায় মুয়াজ্জিন আযান দিবে এবং ইমাম মুয়াজ্জিনের আযানের উত্তর দিবে। প্রমাণ- ﻓﻌﻦ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﺳﻬﻞ ﺑﻦ ﺣﻨﻴﻒ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﻭﻫﻮ ﺟﺎﻟﺲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻨﺒﺮ ﺃﺫﻥ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ، ﻓﻘﺎﻝ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ : ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ، ﻗﺎﻝ : ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ، ﻓﻘﺎﻝ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ : ﻭﺃﻧﺎ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﻓﻘﺎﻝ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ : ﻭﺃﻧﺎ، ﻓﻠﻤﺎ ﻗﻀﻰ ﺍﻟﺘﺄﺫﻳﻦ ﻗﺎﻝ : ﻳﺎ ﺃﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﺇﻧﻲ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﺠﻠﺲ ﺣﻴﻦ ﺃﺫﻥ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻳﻘﻮﻝ : ﻣﺎ ﺳﻤﻌﺘﻢ ﻣﻦ ﻣﻘﺎﻟﺘﻲ. ‏[ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ]. অর্থ, আবু উমামাহ সাহাল বিন হানিফ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মুয়াবিয়্যাহ বিন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু কে মুয়াজ্জিন যখন আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর বলে, তখন তিনিও মিম্বারে বসে আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর বলতে শুনেছি। মুয়াজ্জিন যখন ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ – আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই’-বলেন, তখন মুয়াবিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন আমিও সাক্ষী দিচ্ছি। তারপর মুয়াজ্জিন যখন বলেন, ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ‘ মজলিসে মুয়াজ্জিনের আযানের সাথে আমি যেভাবে বলেছি এভাবে বলতে শুনেছি।[76] তথ্য সূত্র কুরআনুল কারীম ফতহুল বারী বুখারি মুসলিম সূনানে আবু দাউদ সহীহ আত-তিরমিযি সহীহ আন-নাসায়ী সহীহ আত-তারগীব এরওয়াউল গালীল মানারুস সাবীল ইবনে কুদামাহ রহ. এর ‘ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যাহ’ ‘আল-আজবিবাতুন নাফিয়্যা’ লিল আলবানী ‘তুহাফাতুল ওয়ায়েজ’ লি আহমদ ফরিদ মুহাম্মাদ জামালুদ্দিন আল কাসেমীর ‘ইসলাহুল মাসাজিদ মিনার বিদয়ে ওয়াল আওয়ায়েদ’। আহমদ ইবনে হাজারের ‘কিতাবুল জুমু‘আ’ _________________________________________________ ______________________________________ [1] মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬; নাসায়ী, হাদিস: ১৩৬৮; ইবনু মাযা, হাদিস: ১০৮৩ [2] মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪; হাদিস: ৮৫৪,১৮; তিরমিযি, হাদিস: ৪৮৮; নাসায়ী, হাদিস: ৮৯/৩ [3] সূরা আল্-জুমু‘আ, আয়াত: ৯ [4] দেখুন, তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৩৮৫/৩৮৬/৪ [5] দেখুন, যাদুল মা’আদ: ৩৯৮/১ [6] মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪, ১৮; তিরমিযি, হাদিস: ৪৮৮; নাসায়ী, হাদিস: ৮৯/৩ [7] মুসলিম, হাদিস নং ৮৬৫ [8] বুখারি, হাদিস: ৯৩৫ মুসলিম, হাদিস: ৮৫২ [9] মুসলিম, হাদিস: ৮৫৩; সহীহ ইবনু খুজাইমা, ১৭৩৯; বাইহাকী, হাদিস: ৫৯৯৯ [10] দেখুন, যাদুল মা’আদ: ৩৯০, ৩৮৯/১ [11] মুসলিম, হাদিস: [12] ইবনু মাযা, হাদিস: ১০৯৮; সহীহ আত- তারগীব: ২৯৮/১; আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। [13] বুখারি, হাদিস: ৯১০, ৮৮৩ [14] আহমদ, হাদিস: ১৬১৭৩ [15] যাদুল মা’আদ: ৩৮৭/১ [16] বর্ণনায়, আহমদ ৬৫৮২; তিরমিযি, হাদিস: ১০৭৪ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। [17] মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭, ২৭; আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫০ তিরমিযি, হাদিস: ৪৯৮ ইবনু মাযা, হাদিস: ১০২৫, ১০৯০। [18] মুসলিম, হাদিস: ২৩৩ [19] আহমদ, হাদিস: ২৩৫৭১; ইবনু খুজাইম, হাদিস: ১৭৬২ [20] বর্ণনায় সহীহ তাবরানী কবীর গ্রন্থে; সহীহ আত-তারগীব, হাদিস: ৬৮২ [21] সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ২৭৭১; সহীহ আত-তারগীব, হাদিস: ৬৮৩ [22] আহমদ, হাদিস: ১৬১৭৬; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪৫; তিরমিযি, হাদিস: ৪৯৬; নাসায়ী, হাদিস: ৯৫/৩; ইবনু মাযা, হাদিস: ১০৮৭; ইবনু খুজাইমাহ, হাদিস: ১৭৬৭; ইবনু হিব্বান, হাদিস: ২৭৮১; আল্লামা আলবানী হাদিসটি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। [23] বর্ণনায় বুখারি, হাদিস: ৮৮১; মুসলিম, হাদিস: ৮৫০; তিরমিযি, হাদিস: ৪৯৯; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৫১। [24] মুসলিম, হাদিস: ৬৫২, ২৫৪; আহমদ, হাদিস: ৩৮১৬ [25] মুসলিম, হাদিস: ৮৬৫; আহমদ, হাদিস: ২২৯০; নাসায়ী, হাদিস: ১৩৭০ [26] বর্ণনায়- আহমদ, হাদিস: ১৫৪৯৮; ইবনু মাযা, হাদিস: ১১২৫; আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২; জাবের রা. হতেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়। [27] নাসায়ী, হাদিস: ১৩৭১; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪২; ইবনু খুজাইমাহ, হাদিস: ১৭২১ [28] বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, আহমদ ইবনে হাজার রহ. এর রিসালাতুল জুমআ। [29] নাসায়ী হাদিস: ১৪২০; ইবনু মাযা, হাদিস: ১০৬৪; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। [30] মুসলিম, হাদিস: ৩০৯৬; নাসায়ী হাদিস: ১৪২১; বাইহাকী: ৫৭২৭ [31] আবু দাউদ, হাদিস: ১১২২; নাসায়ী হাদিস: ১৮৪/৩; মুসলিম, হাদিস: ৮৭৮; তিরমিযি, হাদিস: ৫৩৩ আহমদ: 18388 [32] মুসলিম, হাদিস: ৮৮১ নাসায়ী, হাদিস: ১৪২৬; ইবনু মাযা, হাদিস: ১১৩২ [33] বুখারি, হাদিস: ৯৩৭; মুসলিম, হাদিস: ৮৮২; নাসায়ী, হাদিস: ১৪২৮; আবু দাউদ, হাদিস: ১১৩২; ইবনু মাযা, হাদিস: ১১৩১, তিরমিযি, হাদিস: ৫২১। [34][34] মুসলিম, হাদিস: ৮৮৩ [35][35] মুসলিম, হাদিস: ৮৬৯ [36] মুসলিম,হাদিস: ৮৬৬; নাসায়ী, হাদিস: ১৫৮২; তিরমিযি, হাদিস: ৫০৭ [37] বুখারি, হাদিস: ৯১৬ [38] বুখারি, হাদিস: ৯১৯ [40] মুসিলিম, হাদিস: ৮৬২, আবু দাউদ, হাদিস: ১০৯৩ [41] মুসিলিম, হাদিস: ৮৬৭, ইবনু মাযা, হাদিস: ৪৫ [42] বুখারি, হাদিস: ৯৩০; মুসলিম, হাদিস: ৮৭৫; নাসায়ী, হাদিস: ১৪০৯; তিরমিযি, ৫১০; ইবনু মাযা। [43] আবু দাউদ, হাদিস: ১১১৮; নাসায়ী, হাদিস: ১৩৯৯; ইবনু মাযা, হাদিস: ১১১৫ [44] মুসলিম, হাদিস: ৮৪৬; বুখারি, হাদিস: ৮৫৮ [45] ইবনে মাযা, হাদিস: ১০৯৮ [46] ইবনু খুজাইমাহ, হাদিস: ১৮০৩ [47] বর্ণনায় বুখারি, হাদিস: ৯১০ [48] আবু দাউদ, ইবনু মাযা, হাদিস: ১০৯৫ [49] বর্ণনায় বুখারি, হাদিস: ৯১১ [50] বর্ণনায় ইবনু খুজাইমাহ, হাদিস: ১৮১৯ তিরমিযি, হাদিস: ৫২৬ [51] মালেক স্বীয় মুয়াত্তা, হাদিস: ১০১/১; বুখারি, হাদিস: ৮৮১; মুসলিম, হাদিস: ৮৫০; তিরমিযি, হাদিস: ৪৯৯; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৫১ [52] বুখারি, হাদিস: ৪৪৪; মুসলিম, হাদিস: ৭১৪ [53] বুখারি, হাদিস: ৪৪৩; মুসলিম, হাদিস: ৭১৫। [54] বুখারি, হাদিস:৯৩০; মুসলিম, হাদিস: ৮৭৫; আবু দাউদ, হাদিস: ১১১৫ [55] বুখারি, হাদিস:৯০৮; মুসলিম, হাদিস: ৬০২ [56] আবু দাউদ, হাদিস: ১০৭৯; তিরমিযি, হাদিস: ৩২২; ইবনু খজাইমাহ, হাদিস: ১৩০৪; ইবনু মাযা, হাদিস: ১১৩৩ [57] বুখারি, হাদিস: ১৮০৪; মুসলিম, হাদিস: ৮৫১ [58] হাদিসটি সহীহ, বর্ণনায় আহমদ, আবু দাউদ, হাদিস: ১১১৮; নাসায়ী, হাদিস: ১৩৯৯; ও ইবনু খুজাইমা এবং ইবনু হিব্বান। তবে আবু দাউদ ও নাসায়ীতে ﻭﺁﻧﻴﺖ শব্দটি নাই। আর ইবনে খুজাইমার এ শব্দেﻓﻘﺪ ﺁﺫﻳﺖ ﻭﺃﻭﺫﻳﺖ ، হাদিসটি বর্ণনা করেন। ইবনে মাজা, হাদিস নং ১১১৫- হাদিসটি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেন। [59] বুখারি, হাদিস: ৫১০; মুসলিম, হাদিস: ৫০৭; আবু দাউদ, হাদিস: ৭০১; তিরমিযি, হাদিস: ৩৩৬; নাসায়ী, হাদিস: ৭৫। [60] আবু দাউদ, হাদিস: ১১১৩ ও ইবনু খুজাইমা, হাদিস: ১৮১৩ স্বীয় সহীহতে। [61] দেখুন, ফতহুল বারী। [62] আবু দাউদ, হাদিস: ১১১০; তিরমিযি, হাদিস: ৫১৪ [63] মুসলিম হাদিস: ১৫, ৮৯১ [64] বুখারি, হাদিস: ১৯৮৫ [65] মুসলিম, হাদিস: ১১১৪ [66] বাইহাকী, হাদিস: ৬০৬, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন। [67] আবুদ দাউদ, হাদিস:১০৪৭ নাসায়ী, হাদিস:১৩৪৫ ইবনু মাযা, হাদিস: ১০৮৫ [68] মুসলিম, হাদিস: ৬৫২, ২৫৪ আহমদ, হাদিস: ৩৮১৬ [69]মুসলিম, হাদিস: ৮৬৫; আহমদ, হাদিস: ২২৯০; নাসায়ী, হাদিস: ১৩৭০; ইবনু মাযা, হাদিস: ৭৯৪ [70] বর্ণনায়- আহমদ, হাদিস: ১৫৪৯৮; ইবনু মাযা, হাদিস: ১১২৫; আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২ নাসায়ী হাদিস: ১৩৬৯ [71] মুজামুল কবীর, হাদিস: ১৯৭ [72] আল বাইহাকী, হাদিস: ২৭৪৫ [73] বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন- বুখারি ও মুসলিম, হাদিস: ১২১৮। [74] মুসলিম, হাদিস: ৬০৭; বুখারি, হাদিস: ৫৮০ [75] নাসায়ী হাদিস: ৫৫৭ [76] বুখারি, হাদিস: ৯১৪ _________________________________________________ ______________________________________ সংকলন: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ