ইমামের পশ্চাতে ক্বিরাআত
ইমাম
সশব্দে ক্বিরাআত করলে মুক্তাদীকে ক্বিরাআত করতে হয় না। বিশেষ করে সশব্দে
কোন সূরা পাঠ করা মুক্তাদীর জন্য বৈধ নয়। বরং ইমামের ক্বিরাআত চুপ করে
শুনতে হয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
(وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهُ وَأَنْصِتُوْا)
অর্থাৎ, যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে শো ন এবং চুপ থাক। (কুরআন মাজীদ ৭/২০৪)
সাহাবাগণ নামাযে সশব্দে ক্বিরাআত পড়তেন।
একদা কোন জেহরী নামায থেকে সালাম ফিরে আল্লাহর নবী (সাঃ) বললেন, “তোমাদের
মধ্যে কেউ কি আমার সাথে (সশব্দে) কুরআন পড়েছে?” এক ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ, হে
আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, “তাতেই আমি ভাবছি যে, আমার ক্বিরাআতে ব্যাঘাত
সৃষ্টি হ্চ্ছে কেন।” আবূ হুরায়রা বলেন,
এই কথা আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর কাছ
থেকে শোনার পর লোকেরা তাঁর সাথে জেহরী নামাযে ক্বিরাআত করা থেকে বিরত হয়ে
গেল। (মালেক, মুঅত্তা, আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ৮৫৫নং)
মহানবী (সাঃ) বলেন, “যার ইমাম আছে, তার ইমামের ক্বিরাআত তার ক্বিরাআত।” (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে মাজাহ্, সুনান, জামে ৬৪৮৭নং)
তিনি বলেন, “ইমাম তো এই জন্য বানানো হয় যে,
তার অনুসরণ করা হবে। অতএব সে যখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলে, তখন তোমরা ‘আল্লাহু
আকবার’ বল এবং যখন ক্বিরাআত করে তখন চুপ থাক।” (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে আবী শাইবা, ইবনে মাজাহ্, সুনান, বায়হাকী, জামে ২৩৫৮-২৩৫৯নং)
এ হল সাধারণ হুকুম। জেহরী নামাযে সশব্দে
মুক্তাদী কোন ক্বিরাআত করতে পারবে না। কিন্তু নিঃশব্দে কেবল সূরা ফাতিহা
পড়ার ব্যাপারটা ব্যতিক্রম। কারণ, সূরা ফাতিহার রয়েছে পৃথক বৈশিষ্ট্য।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “সেই ব্যক্তির নামায হয় না, যে ব্যক্তি তাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করে না।” (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩০২নং)
“সেই ব্যক্তির নামায যথেষ্ট নয়, যে তাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করে না।” (দারাক্বুত্বনী, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩০২নং)
“যে ব্যক্তি এমন কোনও নামায পড়ে, যাতে সে
সূরা ফাতিহা পাঠ করে না, তার ঐ নামায (গর্ভচ্যুত ভ্রুণের ন্যায়) অসম্পূর্ণ,
অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ।” (মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৮২৩নং)
“আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি নামায (সূরা
ফাতিহা) কে আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ করে নিয়েছি; অর্ধেক আমার
জন্য এবং অর্ধেক আমার বান্দার জন্য। আর আমার বান্দা তাই পায়, যা সে
প্রার্থনা করে।’ (মুসলিম, সহীহ ৩৯৫, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, প্রমুখ, মিশকাত ৮২৩নং)
“উম্মুল কুরআন (কুরআনের জননী সূরা ফাতিহা)
এর মত আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ তাওরাতে এবং ইঞ্জিলে কোন কিছুই অবতীর্ণ করেন
নি। এই (সূরাই) হল (নামাযে প্রত্যেক রাকআতে) পঠিত ৭টি আয়াত এবং মহা কুরআন,
যা আমাকে দান করা হয়েছে।” (নাসাঈ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ২১৪২ নং)
সাহাবী উবাদাহ্ বিন সামেত বলেন, একদা আমরা
আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর পশ্চাতে ফজরের নামায পড়ছিলাম। তিনি ক্বিরাআত পড়তে
লাগলে তাঁকে ক্বিরাআত ভারী লাগল। সালাম ফিরার পর তিনি বললেন, “সম্ভবত:
তোমরা ইমামের পিছনে ক্বিরাআত কর।” আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, আল্লাহর রসূল! (আমরা
তো তা করি।) তিনি বললেন, “না, ক্বিরাআত করো না। অবশ্য সূরা ফাতিহা পড়ো।
কারণ, যে তা পড়ে না তার নামায হয় না।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, দারাক্বুত্বনী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, মিশকাত ৮২৩নং)
পক্ষান্তরে ইমাম জেহরী নামাযের শেষ এক বা
দুই রাকআতে অথবা সির্রী নামাযে নিঃশব্দে ক্বিরাআত করলে অথবা তাঁর ক্বিরাআত
শুনতে না পাওয়া গেলেও মুক্তাদী সূরা ফাতিহা অবশ্যই পড়বে এবং সেই সাথে অন্য
সূরাও পড়তে পারে।
যে আবূ হুরাইরা বলেন, ‘এই কথা আল্লাহর রসূল
(সাঃ)-এর কাছ থেকে শোনার পর লোকেরা তাঁর সাথে জেহরী নামাযে ক্বিরাআত করা
থেকে বিরত হয়ে গেল।’ সেই (সূরা ফাতিহার গুরুত্ব নিয়ে হাদীস বর্ণনাকারী) আবূ
হুরাইরাকে প্রশ্ন করা হল যে, (সূরা ফাতিহার এত গুরুত্ব হলে) ইমামের
পশ্চাতে কিভাবে পড়া যাবে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘তুমি তোমার মনে মনে পড়ে নাও।
কারণ, আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি
নামায (সূরা ফাতিহা) কে আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ করে নিয়েছি ;
অর্ধেক আমার জন্য এবং অর্ধেক আমার বান্দার জন্য। আর আমার বান্দা তাই পায়,
যা সে প্রা র্থনা করে।’ (মুসলিম, সহীহ ৩৯৫, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, প্রমুখ, মিশকাত ৮২৩নং)
যদি বলেন, আদবের নিয়ম এই যে, জামাআতের মধ্যে
একজন কথা বলবে এবং বাকী সবাই চুপ থাকবে। সবাই কথা বললে শ্রোতা বুঝতে পারে
না এবং সম্মানিত শ্রোতার শানে বেআদবী হয়।
তাহলে আমরা বলব যে, তাই যদি হয়, তাহলে
ইস্তিফতাহ্, তাসবীহ্, তাশাহহুদ ইত্যাদি কেন সবাই বলে থাকে? তাতে কি
বেআদবী হয় না? তা কি বুঝতে আল্লাহর অসুবিধা হয় না? তাছাড়া একই সাথে বিশ্বের
কত শত মুসলমান একই সময়ে এক সাথে কত ইমাম, কত নফল নামাযী নামাযে সূরা
ফাতিহা পড়ে, তখন কি এই অসুবিধা হয় না? মানুষের সাথে আল্লাহর তুলনা? নাকি
আল্লাহর কুদরতে সন্দেহ্? আসলে যেখানে দলীল আছে সেখানে আকেল দ্বারা কাজ
নেওয়া আ ক্কে লের কাজ নয়।
প্রকাশ থাকে যে, যদি কোন কারণবশত: মুক্তাদী
ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়তে ভুলে যায়, তাহলে তাতে তার নামায হয়ে যাবে। ঐ
রাকআত তাকে কাযা করতে হবে না। কারণ, ভুলের আমল ধর্তব্য নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৬৪)
সির্রী নামাযে ইমামের পিছনে মুক্তাদী সিজদার
আয়াত পাঠ করলে তিলাওয়াতের সিজদা করতে পারে না। তিলাওয়াতের সিজদা সুন্নত।
আর ইমামের অনুসরণ ওয়াজেব। অতএব সুন্নত পালন করতে গিয়ে গুনাহ করতে কেউ পারে
না। আবার এ কথা জেনে শুনে কেউ সিজদা করলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। (ঐ ১/২৯০)
No comments:
Post a Comment