যাদের ইমামতি শুদ্ধ নয়
১। পুরুষের জন্য মহিলা :
পুরুষের জন্য মহিলার ইমামতি বৈধ ও শুদ্ধ
নয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “সে জাতি কোন দিন সফল হবে না, যে জাতি তাদের
কর্মভার একজন মহিলাকে সমর্পণ করবে।” (বুখারী, তিরমিযী, সুনান, বায়হাকী)
বলা বাহুল্য, মহিলা যত বড়ই যোগ্য হোক,
মুক্তাদী নিজের ছেলে হোক অথবা অন্য কেউ হোক, স্বামী জাহেল এবং স্ত্রী
কুরআনের হাফেয হোক তবুও কোন ক্ষেত্রেই মহিলা পুরুষের ইমামতি করতে পারে না।
এটি পুরুষের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৮২)
২। মুশরিক ও বিদআতী :
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন ইবাদতে অন্য
কোন সৃষ্টিকে শরীক করে, যেমন
মাযার পূজা করে, মাযারে গিয়ে সিজদা, নযর-নিয়ায, মানত, কুরবানী, তওয়াফ প্রভৃতি নিবেদন করে, সেখানে সুখণ্ডসমৃদ্ধি বা সন্তান চায়, সাহায্য প্রার্থনা করে, যে ব্যক্তি গায়বী (অদৃশ্যের খবর জানার) দাবী করে ও লোকেরহাত বা ভাগ্য-ভবিষ্যৎ বলে দেয়, যে (কোন পশু বা পাখীর চামড়া, হাড়, লোম বা পালক দিয়ে, কোন গাছপালার শিকড় বা ফুল-পাতা দিয়ে, কারো কাপড়ের কোন অংশ দিয়ে, ফিরিশ্তা , জিন, নবী, সাহাবী, ওলী বা শয়তানের নাম লিখে অথবা বিভিন্ন সংখ্যার নকশা বানিয়ে, অথবা তেলেসমাতি বিভিন্ন কারসাজি করে, নোংরা ও নাপাক কোন জিনিস দিয়ে) শির্কী তাবীয লিখে, যে ব্যক্তি দুই জনের মাঝে (বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে) প্রেম বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করার জন্য তাবীয করে, যোগ বা যাদু করে, এ শ্রেণীর ইমামের নামায শুদ্ধ নয়, ইমামতি শুদ্ধ নয় এবং তার পশ্চাতে নামাযও শুদ্ধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৯/১৫৯, ২২/৮২, ২৪/৭৮, ৮৯, ২৬/৯৭, ২৮/৫৫)
মাযার পূজা করে, মাযারে গিয়ে সিজদা, নযর-নিয়ায, মানত, কুরবানী, তওয়াফ প্রভৃতি নিবেদন করে, সেখানে সুখণ্ডসমৃদ্ধি বা সন্তান চায়, সাহায্য প্রার্থনা করে, যে ব্যক্তি গায়বী (অদৃশ্যের খবর জানার) দাবী করে ও লোকেরহাত বা ভাগ্য-ভবিষ্যৎ বলে দেয়, যে (কোন পশু বা পাখীর চামড়া, হাড়, লোম বা পালক দিয়ে, কোন গাছপালার শিকড় বা ফুল-পাতা দিয়ে, কারো কাপড়ের কোন অংশ দিয়ে, ফিরিশ্তা , জিন, নবী, সাহাবী, ওলী বা শয়তানের নাম লিখে অথবা বিভিন্ন সংখ্যার নকশা বানিয়ে, অথবা তেলেসমাতি বিভিন্ন কারসাজি করে, নোংরা ও নাপাক কোন জিনিস দিয়ে) শির্কী তাবীয লিখে, যে ব্যক্তি দুই জনের মাঝে (বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে) প্রেম বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করার জন্য তাবীয করে, যোগ বা যাদু করে, এ শ্রেণীর ইমামের নামায শুদ্ধ নয়, ইমামতি শুদ্ধ নয় এবং তার পশ্চাতে নামাযও শুদ্ধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৯/১৫৯, ২২/৮২, ২৪/৭৮, ৮৯, ২৬/৯৭, ২৮/৫৫)
তদনুরুপ বিদআতী যদি বিদআতে মুকাফফিরাহ্ বা এমন বিদআত করে যাতে মানুষ কাফের হয়ে যায়, তাহলে সে বিদআতীর পিছনে নামায শুদ্ধ নয়।
৩। ফাসেক :
ফাসেক হল সেই ব্যক্তি, যে অবৈধ, হারাম বা
নিষিদ্ধ কাজ করে এবং ফরয বা ওয়াজেব কাজ ত্যাগ করে; অর্থাৎ কাবীরা গুনাহ
করে। যেমন, ধূমপান করে, বিড়ি-সিগারেট, জর্দা-তামাক প্রভৃতি মাদকদ্রব্য
ব্যবহার করে, অথবা সূদ বা ঘুস খায়, অথবা মিথ্যা বলে, অথবা (অবৈধ প্রেম)
ব্যভিচার করে, অথবা দাড়ি চাঁছে বা (এক মুঠির কম) ছেঁটে ফেলে, অথবা
মুশরিকদের যবেহ্ (হালাল মনে না করে) খায়, (হালাল মনে করে খেলে তার পিছনে
নামায হবে না।) অথবা স্ত্রী-কন্যাকে বেপর্দা রেখে তাদের ব্যাপারে ঈর্ষাহীন
হয়, অথবা মা-বাপকে দেখে না বা তাদেরকে ভাত দেয় না ইত্যাদি।
উক্ত সকল ব্যক্তি এবং তাদের অনুরুপ
অন্যান্য ব্যক্তির পিছনে নামায মাকরুহ (অপছন্দনীয়)। বিধায় তাকে ইমামরুপে
নির্বাচন ও নিয়োগ করা বৈধ ও উচিৎ নয়।
কিন্তু যদি কোন কারণে বা চাপে পড়ে বাধ্য হয়েই তার পিছনে নামায পড়তেই হয়, তাহলে নামায হয়ে যাবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৫/২৯০, ৩০০, ৬/২৫১, ১৫/৮০, ১৮/৯০, ১১১, ১৯/১৫২, ২২/৭৫, ৭৭, ৯২, ২৪/৭৮)
সাহাবাগণের যামানায় সাহাবাগণ ফাসেকের
পিছনে নামায পড়েছেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) হাজ্জাজের পিছনে নামায
পড়েছেন। (বুখারী) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) মারওয়ানের পিছনে নামায পড়েছেন। (মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান)
হযরত ওসমান (রাঃ) ফিতনার সময় যখন স্বগৃহে
অবরুদ্ধ ছিলেন, তখন উবাইদুল্লাহ্ বিন আদী বিন খিয়ার তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে
বললেন, ‘আপনি জনসাধারণের ইমাম। আর আপনার উপর যে বিপদ এসেছে তা তো দেখতেই
পাচ্ছেন। ফিতনার ইমাম আমাদের নামাযের ইমামতি করছে; অথচ তার পশ্চাতে নামায
পড়তে আমরা দ্বিধাবোধ করি।’ তিনি বললেন, ‘নামায হল মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল।
সুতরাং লোকে ভালো ব্যবহার করলে তাদের সাথেও ভালো ব্যবহার কর। আর মন্দ
ব্যবহার করলে তাদের সাথে মন্দ ব্যবহার করা থেকে দূরে থাক।’ (বুখারী ৬৯৫, মিশকাত ৬২৩নং)
৪। ইমামতির বিনিময়ে অর্থগ্রহণকারী ব্যক্তি :
ইমামতিকে যে অর্থকরী পেশা মনে করে ইমামতি করে; অর্থাৎ, কেবল পয়সার ধান্দায় ইমামতি করে, এমন ইমামের পশ্চাতে নামায মাকরুহ।
আবূ দাঊদ বলেন, (ইমাম) আহমাদ এমন ইমামের
ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলেন, যে বলে, ‘আমি এত এত (টাকার) বিনিময়ে রমযানে
তোমাদের ইমামতি করব।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাই। কে এর
পেছনে নামায পড়বে?’ (মারা: ৯৯পৃ:)
প্রকাশ থাকে যে, ইমামতির জন্য সৌজন্য
সহকারে ইমামকে বেতন, ভাতা বা বিনিময় দেওয়া মুক্তাদীদের কর্তব্য। ইমামের
উচিৎ, কোন চুক্তি না করা; বরং মুক্তাদীদের বিবেকের উপর যা পায় তাতেই
সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে ইমামতির দায়িত্ব পালন করা। পক্ষান্তরে
জামাআতের উচিৎ, ইমামের এই দ্বীনদারীকে সস্তার সুযোগরুপে ব্যবহার না করা।
বরং বিবেক, ন্যায্য ও উচিৎ মত তাঁর কালাতিপাতের ব্যবস্থা করে দেওয়া। যেমন
উচিৎ নয় এবং আদৌ উচিৎ নয়, ইমাম সাহেবকে জামাআতের ‘কেনা গোলাম’ মনে করা।
৫। ক্বিরাআত ভুল যার :
যে কুরআন পড়তে এমন ভুল পড়ে, যাতে মানে বদলে যায়, তার ইমামতি ও তার পিছনে যে ভালো কুরআন পড়তে পারে তার নামায শুদ্ধ নয়। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৬৯, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২০/১৪৮)
বলা বাহুল্য, ভুল ক্বিরাআতকারীর পিছনে
ক্বারীর নামায শুদ্ধ নয়। তবে অক্বারীর নামায হয়ে যাবে। অবশ্য যদি কোন
ক্বারী ভুল ক্বিরাআতকারীর পিছনে অজান্তে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে নেয়, তাহলে তার
নামায হয়ে যাবে। (সালাতুল জামাআতি হুকমুহা অআহকামুহা, ডক্টর সালেহ সাদলান ১২১পৃ:)
সুতরাং যে সকল মসজিদে সস্তা দরে অক্বারী
ইমাম রাখা হয়, সে সকল গ্রাম শহরের ক্বারীদের (যারা ইমাম অপেক্ষা ভালো কুরআন
পড়তে পারে তাদের) নামাযের অবস্থা কি হবে তা মসজিদের মতওয়াল্লীদেরকে ভেবে
দেখা দরকার।
৬। যাকে মুক্তাদীরা অপছন্দ করে :
চরিত্রগত বা শিক্ষাগত কোন কারণে
মুক্তাদীরা ইমামকে অপছন্দ করলে ইমামের নামায আল্লাহর দরবারে কবুল নয়।
সুতরাং জেনেশুনে তার ইমামতি করা বৈধ নয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “তিন ব্যক্তির
নামায তাদের কান অতিক্রম করে না; পলাতক ক্রীতদাস, যতক্ষণ না সে ফিরে এসেছে,
এমন স্ত্রী যার স্বামী তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করেছে,
(যতক্ষণ না সে রাজী হয়েছে), (অথবা যে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্য চরণ করেছে,
সে তার বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত) এবং সেই সম্প্রদায়ের ইমাম, যাকে লোকে
অপছন্দ করে।” (তিরমিযী, সুনান, ত্বাবারানী,হাকেম, মুস্তাদরাক, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৮৮, ৬৫০নং)
অবশ্য ব্যক্তিগত কোন কারণে কেউ কেউ ইমামকে
অপছন্দ করলে, দোষ নেই অথচ তাকে খামাখা কেউ অপছন্দ করলে অথবা বেশী সংখ্যক
লোক পছন্দ এবং অল্প সংখ্যক লোক অপছন্দ করলে কারো কোন ক্ষতি হয় না। অবশ্য
ক্ষতি তার হয়, যে একজন নির্দোষ মানুষকে খামাখা অপছন্দ করে। তবুও জ্ঞানী
ইমামের উচিৎ, যে জামাআতের অধিকাংশ লোক তাকে অপছন্দ করে, সে জামাআতের ইমামতি
ত্যাগ করা এবং তার ইমামতিকে কেন্দ্র করে জামাআতের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও
ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি না করা।
৭। সুন্নাহ্ত্যাগী :
যে মানুষ সুন্নাহর পাবন্দ নয়; সুন্নত
নামায-রোযা ইত্যাদি ত্যাগ করে, নিশ্চয় সে মানুষ পরহেযগার ও ভালো লোক নয়।
তবে সে যে পাপী তা কেউবলতে পারে না। অতএব তার পিছনে নামায পড়তে কোন দোষ
নেই। তদনুরুপ কোন বিতর্ক থাকার ফলে বা কোন সন্দেহের কারণে কেউ কোন
সুন্নাহ্ ত্যাগ করলে; যেমন বুকের উপরহাত না বাঁধলে, রুকূর আগে-পরে রফ্য়ে
ইয়াদাইন না করলে বা জোরে আমীন না বললেও তার পিছনে নামায পড়তে কোন দোষ নেই। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২৫/৪৬)
৮। পেশাব-ঝরা রোগী :
যে ব্যক্তির সর্বদা পেশাব ঝরার রোগ আছে সে ব্যক্তির ইমামতি শুদ্ধ নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৯৭)
৯। বোবা :
বোবার পিছনে নামায পড়লে নামায শুদ্ধ। কিন্তু তাকে ইমাম করা যাবে না। যেহেতু সে তকবীর শুনাতে ও জেহরী নামাযে ক্বিরাআত করতে অক্ষম। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩২০)
১০। জলদিবাজ :
যে ব্যক্তি ঠকাঠক কাকের দানা খাওয়ার মত
নামায পড়ে এবং পশ্চাতে মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করতে সক্ষম হয় না, রুকূ ও
সিজদা থেকে উঠে পিঠ সোজা করে না, তার নামায এবং তার পশ্চাতে মুক্তাদীদেরও
নামায হয় না। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৭)
১১। বেওযূ ব্যক্তি :
কোন ইমাম নাপাক বা বেওযূ অবস্থায় নামায
পড়লে এবং সালাম ফিরার পর তা জানতে পারলে কেবল তার নামায বাতিল হবে এবং
মুক্তাদীদের নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। কেবল ইমামই ঐ নামায পুনরায় পড়বে,
মুক্তাদীরা নয়। (আহ্কামুল ইমামাতি অল-ই’তিমামি ফিস সালাত, আব্দুল মুহ্সিন আল-মুনীফ ১৪৭পৃ:) জেনেশুনে কোন বেওযূর পিছনে নামায হবে না।
১২। রেডিও-টিভির ইমাম :
কোন পুরুষ অথবা মহিলা, সুস্থ অথবা অসুস্থ,
ওজরে অথবা বিনা ওজরে রেডিও বা টিভির পিছনে দাঁড়িয়ে সম্প্রচারিত কোন
মসজিদের ফরয অথবা নফল, জুমুআহ অথবা অন্য যে কোন নামাযে তার ইমামের অনুসরণ
করা বৈধ নয়। যদিও তাদের বাসা উক্ত মসজিদের পাশে হোক অথবা সামনে, উপরে হোক
অথবা পিছনে। কোন অবস্থাতেই মসজিদে হাজির না হয়ে দূর থেকে কেবল শব্দ অথবা
শব্দ ও ছবির অনুকরণ করে জামাআত পাওয়া যায় না। (সালাতুল জামাআতি হুকমুহা অআহকামুহা, ডক্টর সালেহ সাদলান ১৭৩পৃ:)
No comments:
Post a Comment