Thursday, November 16, 2017

ইমাম ভুল করলে মুক্তাদীর কর্তব্য

ইমাম ভুল করলে মুক্তাদীর কর্তব্য


ইমাম কোন ভুল করলে মুক্তাদীর তা ধরিয়ে দেওয়া বা সংশোধন করে দেওয়া কর্তব্য। আর বড় মারাত্মক ভুলে (যেমন নামাযের কোন শর্ত বা রুক্‌ন ছাড়াতে) তাঁর অনুসরণ করা মোটেই উচিৎ নয়।
ইমাম ভুলে বিনা ওযূতে নামায পড়ালে এবং মুক্তাদীরাও তা জানতে না পারলে, অতঃপর নামায শেষ করার পর জানা গেলে মুক্তাদীদের নামায শুদ্ধ। অবশ্য ইমামকে সে নামায পুনরায় পড়তেই হবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৩৯, লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ৯৯পৃ:)
মহানবী (সাঃ) বলেন,
“লোকেরা তোমাদের ইমামতি করে; সুতরাং তারা যদি ঠিকভাবে পড়ায় তাহলে তা তোমাদের জন্য এবং তাদের জন্যও। (অর্থাৎ, তোমাদের নামায হয়ে যাবে এবং তাদেরও।) পক্ষান্তরে তারা যদি ভুল পড়ায় তাহলে তোমাদের (নামায শুদ্ধ) হয়ে যাবে এবং ওদের (নামায শুদ্ধ) হবে না।” (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, মিশকাত ১১৩৩নং)
একদা হযরত উমার (রাঃ) অপবিত্র অবস্থায় ভুলে লোকেদের ইমামতি করলেন। অতঃপর তিনি নিজে নামায ফিরিয়ে পড়লেন আর লোকেরা পড়ল না। (নাইলুল আউতার, শাওকানী ৩/১৪৭)
নামায পড়া অবস্থায় ইমাম যদি জানতে পারে যে, সে নাপাকে আছে অথবা তার ওযূ ভেঙ্গে গেছে, কিন্তু লজ্জায় সে নামায ত্যাগ না করে পড়ে শেষ করে তাহলেও মুক্তাদীদের নামায শুদ্ধ। অবশ্য ইমামের নামায বাতিল এবং তার জন্য জেনে  শুনে নাপাকে নামায পড়া হারাম।
পক্ষান্তরে মুক্তাদী যদি জানতে পারে যে, ইমাম নাপাক অবস্থায় নামায পড়াচ্ছেন, তাহলে তারও নামায বাতিল। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৪০)
বলা বাহুল্য, ইমাম হোক চাহে মুক্তাদী নামায পড়তে পড়তে কারো ওযূ নষ্ট হয়ে গেলে অথবা নাপাকে আছে মনে পড়লে সে নাক ধরে নামায ছেড়ে বের হয়ে আসবে।
নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) বলেন, “যখন তোমাদের কেউ নামাযে বেওযূ হয়ে যায়, তখন সে যেন নাক ধরে নামায ত্যাগ করে বেরিয়ে আসে।” (আবূদাঊদ, সুনান ১১১৪নং)
নাক ধরে বেরিয়ে আসার পশ্চাতে হিকমত এই যে, যাতে লোকেরা মনে করে, তার নাক দিয়ে হয়তো রক্ত আসছে। আর এটা মিথ্যা নয়; বরং এটি এক প্রকার ছদ¹কর্ম, যা তার জন্য বৈধ করা হয়েছে। যাতে সে লোকেদেরকে লজ্জা করলে শয়তান তাকে নামায ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধা না দেয়।
- ইমামের ইমামতি করায় কোন সমস্যf দেখা দিলে
ইমামতি করতে করতে ইমামের কোন প্রতিবন্ধক বা সমস্যা সৃষ্টি হলে; যেমন ওযূ নষ্ট হয়ে গেলে, অথবা ওযূ নেই বা ফরয গোসল বাকী আছে মনে পড়লে, অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে, অথবা গলার আওয়ায বন্ধ হয়ে গেলে, অথবা নাক থেকে রক্ত পড়লে, অথবা প্রস্রাব-পায়খানার বেগ বেসামাল হয়ে উঠলে, ইমাম তৎক্ষণাৎ একজন উপযুক্ত মুক্তাদীকে ইমাম বানিয়ে নাক ধরে মসজিদ ত্যাগ করবেন।
নামায পড়ার পড় ইমাম কাপড়ে নাপাকী দেখলে সকলের নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। নামায পড়তে পড়তে দেখলে যদি তা সেই অবস্থাতেই দূর করা সম্ভব হয় তো উত্তম। নচেৎ নামায ত্যাগ করে বেরিয়ে এসে কাপড় পবিত্র করা জরুরী। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৪৩)
নামায পড়তে দাঁড়িয়ে হযরত উমার (রাঃ)-কে খঞ্জরাঘাত করা হলে তিনি হযরত আব্দুর রহ্‌মান বিন আওফকে আগে বাড়িয়ে ইমামতি করতে ইঙ্গিত করলে তিনি হাল্কাভাবে নামায পড়িয়ে শেষ করলেন। (বুখারী ৩৭০০নং)
একদা নামায পড়তে পড়তে হযরত আলী (রাঃ)-এর নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হলে তিনি একজনকে তার হাত ধরে আগে বাড়িয়ে দিয়ে নিজে বেরিয়ে এলেন। (সুনান সাঈদ বিন মানসূর, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১৫৬পৃ:)
কোন মসবূক (যার দু-এক রাকআত ছুটে গেছে এমন মুক্তাদী)কে ও ইমামতি করতে আগে বাড়িয়ে দেওয়া ইমামের জন্য বৈধ।
সেই সময় কোন অমুক্তাদী (তখনও জামাআতে শামিল হয়নি এমন) লোককেও ইমাম করা যায়। এ ক্ষেত্রে সে ইমামের তরতীব অনুযায়ী নামায পড়বে। মুক্তাদীদের নামায শেষ হয়ে গেলে তারা বসে তার সালাম ফিরার অপেক্ষা করবে। (অর্থাৎ, তার অনুসরণে নির্ধারিত রাকআত অপেক্ষা বেশী পড়বে না।) অতঃপর সে তার বাকী নামায পূর্ণ করে সালাম ফিরলে মুক্তাদীরাও তার সাথে সালাম ফিরবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৭৩, আহ্‌কামুল ইমামাতি অল-ই’তিমামি ফিস সালাত, আব্দুল মুহ্‌সিন আল-মুনীফ ২৪৫-২৫১পৃ:)
ইমাম যদি কাউকে নায়েব করতে সুযোগ না পান, তাহলে উপযুক্ত একজন মুক্তাদীর অগ্রসর হয়ে ইমামতি করে নামায সম্পন্ন করা কর্তব্য। অবশ্য এও বৈধ যে, ইমাম নামায ত্যাগ করলে মুক্তাদীরা নিজে নিজে একাকী নামায সম্পন্ন করবে। যেমন হযরত মুআবিয়াকে ইমামতি করা অবস্থায় আক্রমণ করা হলে লোকেরা নিজে নিজে নামায শেষ করেছিল। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৪১, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১৫৬পৃ:)
- ইমামের শরমগাহ্‌ খোলা দেখলে
নামায পড়তে পড়তে মুক্তাদী ইমামের শরমগাহ্‌ খোলা দেখলে চুপ থেকে তাঁর ইক্তিদা করে যাওয়া বৈধ নয়। কারণ, সে জানে যে, শরমগাহ্‌ বের হয়ে গেলে নামায বাতিল হয়ে যায়। আর যার নামায বাতিল, তার ইক্তিদা করা বৈধ নয়। অতএব জরুরী হল, নামায ছেড়ে ইমামকে সে বিষয়ে সতর্ক করা। (ইবনে বায, মা-যা তাফআলু ফিলহা-লা-তিল আ-তিয়াহ্‌, মুহাম্মাদ সালেহ্‌ আল-মুনাজ্বিদ ২৬পৃ:)
- ইমাম সূরা ভুল পড়লে
ইমাম সূরা ভুল পড়লে সংশোধন করা, কোন আয়াত ভুলে ছেড়ে দিলে তা ধরিয়ে দেওয়া মুক্তাদীর কর্তব্য।
‘নামাযের মধ্যে যা করা বৈধ’ শিরোনামে এ বিষয়ে আলোচিত হয়েছে যে, ইমাম সূরা ফাতিহায় ভুল করলে তা ধরিয়ে বা সংশোধন করে দেওয়া মুক্তাদীর জন্য ওয়াজেব। এ ছাড়া অন্যান্য সূরা ভুল পড়লেও মনে করিয়ে দেওয়া বিধেয়।
ইমাম সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা পাঠ করার সময় কোন আয়াতে গিয়ে আটকে গেলে এবং মুক্তাদীদের কারো সে সূরা মুখস্থ না থাকলে বা কেউ ধরিয়ে না দিলে তিনি দুয়ের মধ্যে এক করতে পারেন; (কয়েক আয়াত পড়া হয়ে থাকলে) তিনি ইচ্ছা করলে তকবীর দিয়ে রুকূতে চলে যেতে পারেন। নতুবা (বিশেষ করে ক্বিরাআতের শুরুতে হলে) অন্য সূরা বা সূরার কতক আয়াত পাঠ করে রুকূতে যেতে পারেন। পক্ষান্তরে সূরা ফাতিহা পড়তে পড়তে আটকে গেলে তাকে যে কোন প্রকারে সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করতেই হবে। নচেৎ নামাযই হবে না। (মা-যা তাফআলু ফিলহা-লা-তিল আ-তিয়াহ্‌, মুহাম্মাদ সালেহ্‌ আল-মুনাজ্বিদ ২৬পৃ:)
মুক্তাদী কেউ হাফেয না থাকলে কোন লম্বা নামাযে হাফেয ইমামের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য কোন মুক্তাদীর মুসহাফ নিয়ে নামাযে দেখে যাওয়া প্রয়োজনে বৈধ। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৬৫)
ইমাম ভুল করে নামাযের কোন রুক্‌ন বা রাকআত ত্যাগ করলে মুক্তাদী ‘সুবহানাল্লাহ্‌’ বলে সতর্ক করবে। রাকআত বেশী করলে তাতে তাঁর অনুসরণ করবে না। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৫/৮৭) বরং তাসবীহ বলে তাঁকে বসে যেতে ইঙ্গিত করবে।
পক্ষান্তরে ইমাম প্রথম তাশাহহুদের বৈঠক ছেড়ে ভুলে উঠে পড়লে মুক্তাদীও তাঁর সাথে উঠে যাবে। এ ক্ষেত্রে বারবার তাসবীহ পড়ে তাঁকে বসতে বাধ্য করবে না এবং ইমামও বসতে বাধ্য হবেন না। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা ‘সহু সিজদার’ বর্ণনায় আসবে।)
সতর্কতার বিষয় যে, মুক্তাদীদের মাঝে ভুল বুঝার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেই ক্বারী ইমামের উচিৎ নয়, নামাযের ভিতরে প্রচলিত ক্বিরাআত ছাড়া অন্যান্য বিরল ক্বিরাআতে সূরা পড়া। কারণ, নামাযের ভিতরে একাধিক নিয়মে ক্বিরাআত পড়া বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ৩১৭পৃ:)

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ