মহিলাদের ব্যবহার করা অতিরিক্ত পানি দিয়ে পুরুষদের গোসল করা বৈধ কি না
মহিলাদের ওযূ বা গোসলের অতিরিক্ত পানি দ্বারা পুরুষের পবিত্রতা অর্জনের বিধানের ব্যাপারে আলিমগণের মাঝে দু’টি অভিমত লক্ষ্য করা যায়:
১ম মতামত: মহিলাদের
ব্যবহৃত অতিরিক্ত পানি দ্বারা পুরুষের পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ নয়। এটা ইবনে
উমার, আবদুল্লাহ ইবনে সারজাস, উম্মুল মুমিনীন জুয়ায়রিয়্যাহ বিনতে হারেস,
হাসান, আহমাদ ইবনে হাম্বল, ইসহাক্ব, শাবী ও দাউদ জাহেরী এর মতামত।[1]
তাদের দলীল হলো:
عَنِ الْحَكَمِ بْنِ عَمْرٍو وَهُوَ الْأَقْرَعُ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ نَهَى أَنْ يَتَوَضَّأَ الرَّجُلُ بِفَضْلِ طَهُورِ الْمَرْأَةِ
(১) হাকাম হতে বর্ণিত: নাবী কারীম (ﷺ) মহিলাদের ব্যবহারের অতিরিক্ত পানি দ্বারা পুরুষদের ওযূ করতে নিষেধ করেছেন।[2]
عَنْ حُمَيْدٍ الْحِمْيَرِيِّ، قَالَ: لَقِيتُ رَجُلًا صَحِبَ النَّبِيَّ ﷺ أَرْبَعَ سِنِينَ، كَمَا صَحِبَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ، قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تَغْتَسِلَ الْمَرْأَةُ بِفَضْلِ الرَّجُلِ، أَوْ يَغْتَسِلَ الرَّجُلُ بِفَضْلِ الْمَرْأَةِ ، زَادَ مُسَدَّدٌ: «وَلْيَغْتَرِفَا جَمِيعًا»
(২) হুমায়েদ আল-হিময়ারী হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: আমি এমন এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করি, যিনি চার বছর যাবৎ রাসূলুলাহ (ﷺ) এর খেদমতে ছিলেন- যে ভাবে আবূ হুরাইরা রাসূলের খেদমত করতেন। তিনি বলেন: রাসূল (ﷺ)
মহিলাদেরকে পুরুষদের অতিরিক্ত পানি দ্বারা গোসল করতে নিষেধ করেছেন এবং
একইভাবে পুরুষদেরকে মহিলাদের ব্যবহারের অতিরিক্ত পানি দ্বারা গোসল করতে
নিষেধ করেছেন। মুসাদ্দাদ এর সঙ্গে যোগ করেছেন যে, নারী-পুরুষ একসাথে একই
পাত্র হতে হাত দিয়ে পানি উঠানো নিষেধ।[3]
عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ وَأَهْلُهُ يَغْتَسِلُونَ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ، وَلَا يَغْتَسِلُ أَحَدُهُمَا بِفَضْلِ صَاحِبِهِ
(৩) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূল (ﷺ) এবং তার পরিজন একই পাত্রে গোসল করতেন। তবে তাদের একজন অপরজনের উদ্বৃত্ত পানি দিয়ে গোসল করতেন না।[4]
২য় অভিমত: মহিলাদের
ব্যবহৃত, অতিরিক্ত পানি দ্বারা পুরুষের পবিত্রতা অর্জন বৈধ। এটা উমার, আবূ
হুরাইরা, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, ইবনে উমার, সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাহসহ
সালফে সালেহীনের একটি দলের অভিমত। আবূ ওবাইদ ও ইবনুল মুনযিরও এ মতামত
ব্যক্ত করেছেন। এটা ইমাম আবূ হানীফা, মালিক ও শাফেঈ (রাহি.) এর মাযহাব।
একটি বর্ণনা মতে আহমাদও এ মতামত ব্যক্ত করেছেন।[5] তাদের দলীল হলো:
عنابْنَ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ يَغْتَسِلُ بِفَضْلِ مَيْمُونَةَ
(১) আবদুলাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূল (ﷺ) তার স্ত্রী মাইমূনাহ এর গোসলের পর অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করতেন।[6]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: اغْتَسَلَ بَعْضُ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ ﷺ فِي جَفْنَةٍ، فَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيَتَوَضَّأَ مِنْهَا أَوْ يَغْتَسِلَ، فَقَالَتْ: لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي كُنْتُ جُنُبًا؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الْمَاءَ لَا يُجْنِبُ
(২) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: একদা নাবী কারীম (ﷺ) এর কোন এক স্ত্রী বড় একটি পাত্রের পানি দ্বারা গোসল করছিলেন। এমতাবস্থায় নাবী করীম (ﷺ) সেখানে ওযূ অথবা গোসল করার জন্য আগমন করলেন। তখন তিনি (পত্নী) বললেন: ইয়া রাসূলুলাহ! আমি অপবিত্র ছিলাম। জবাবে রাসূল (ﷺ) বললেন: নিশ্চয়ই পানি অপবিত্র হয় না।[7]
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: «كُنْتُ أَغْتَسِلُ أَنَا وَالنَّبِيُّ ﷺ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ كِلاَنَا جُنُبٌ وفى رواية نَغْتَرِفُ مِنْهُ جَمِيعًا
(৩) আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
আমি ও নাবী জানাবাত অবস্থায় একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোসল করতাম । অপর এক
বর্ণনায় রয়েছে, আমরা অঞ্জলিপূর্ণ করে তা থেকে একই সাথে পানি নিতাম।[8]
বিশুদ্ধ মতামত:
যারা ১ম মতামত অনুযায়ী মহানাবী (ﷺ)
এর সাথে চার বছর অবস্থান করা ব্যক্তির হাদীসকে সঠিক মনে করেন, তাদের সে
হাদীসের ব্যাপারে ইমাম বাইহাক্কী নেতি বাচক দৃষ্টি ভঙ্গি প্রকাশ করেছেন এবং
২য় অভিমতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। দু’ভাবে এ দলীলগুলোর মাঝে সমতা আনয়ন করা
সম্ভব:[9]
(১) নিষেধাজ্ঞার হাদীসগুলোকে
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে ঝড়ে পড়া পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে করবে। আর জায়েযের
হাদীসগুলোকে পাত্রে অবশিষ্ট থাকা পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে করবে। ইমাম
খাত্ত্বাবী এ ভাবেই সমাধান দিয়েছেন।
(২) দু’টি বৈধ হওয়া সত্ত্বেও সতর্কতার জন্য নিষেধাজ্ঞার বিধান দেয়া হয়েছে।
আমার বক্তব্য: সম্ভবতঃ ২য় অভিমতটিই উত্তম। আল্লাহ্ই সর্বাধিক অবগত।
No comments:
Post a Comment