যে সকল কাজে ওযূ নষ্ট হয় না
এ
কাজগুলো করলে ওযূ ভঙ্গ হবে কিনা এ ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। তবে
বাস্তবে এ কাজগুলো করলে ওযূ নষ্ট হয় না। আর সে কাজগুলো হলো:
১। কোন পর্দা ছাড়া পুরুষ মহিলাকে স্পর্শ করলে এ মাসআলাটির ব্যাপারে তিনটি অভিমত পরিলক্ষিত হয়:
১ম : অভিমত:
সাধারণ ভাবে পুরুষ মহিলাকে স্পর্শ করলে
ওযূ নষ্ট হবে। এটা ইমাম শাফেঈ (রাহি.) এর অভিমত । ইবনে হাযম এমতটি সমর্থন
করেছেন। ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও ইবনে উমার (রাঃ) এ মতেরই প্রবক্তা।[1]
২য় অভিমত :
সাধারণ ভাবে এ অবস্থায় ওযূ নষ্ট হবে না।
এটা ইমাম আবূ হানীফা। মুহাম্মাদ বিন হাসান শায়বানী (রাহি.) এর অভিমত। ইবনে
আব্বাস, ত্বউস, হাসান ও আত্বাও এমত পেশ করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবনে
তাইমিয়াহ এই মতটি পছন্দ করেছেন।[2] এটিই বিশুদ্ধ অভিমত।
৩য় মতামত:
কাম প্রবৃত্তিসহ যদি মহিলাকে স্পর্শ করা
হয়, তাহলে ওযূ নষ্ট হবে। এটা ইমাম মালিক এর মতামত। প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী
ইমাম আহমাদ (রাহি.) এ অভিমত পেশ করেছেন।[3]
আমার বক্তব্য: মূলতঃ মহিলাকে স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে মর্মে যারা মতামত দিয়েছেন, তাদের দলীল হলো: আল্লাহ্র বাণী:
﴿أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا ﴾
তোমরা স্ত্রী সম্ভোগ কর, তবে যদি পানি না পাও তাহলে তায়াম্মুম কর। (সূরা : আন-নিসা-৪৩)
ইবনে মাসউদ (রাঃ)ও ইবনে উমার (রাঃ) থেকে
সহীহ সনদে বর্ণিত আছে, "أن ألمس دون الجماع" অর্থাৎ: সহবাস ছাড়া শুধু
স্পর্শ করাকেই مس বলা হয়।[4]
হিবরুল উম্মাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাদের
মতের বিপক্ষে মত পেশ করে বলেন, لمس, مس ও مباشرة দ্বারা উদ্দেশ্যجماع বা
সহবাস। মহান আল্লাহ্ এ শব্দগুলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ হিসেবে ব্যবহার
করেছেন।[5] আর এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, তার তাফসীরটা অন্যান্য
মুফাসসিরদের উপর অগ্রগণ্য। উপরন্ত স্বয়ং আয়াত দ্বারাও এ কথা প্রমাণিত
হচ্ছে।
আল্লাহ্র বাণী-﴾ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا ﴿ হে মুমিনগণ, যখন
তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের ধৌত কর (সূরা : মায়েদা -৬)।
এর দ্বারা উদ্দেশ্য, ছোট নাপাকী হতে পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা।
অতঃপর আল্লাহ্ বলেন,﴾ وَإِنْ كُنْتُمْ
جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا ﴿ যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও
(সূরা : মায়েদা -৬)। এর দ্বারা উদ্দেশ্য, বড় নাপাকী হতে পানি দিয়ে পবিত্রতা
অর্জন করা। এরপর আল্লাহ্ বলেন:
﴿وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى
سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ
النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا﴾
আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি
তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর
অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর (সূরা : মায়েদা
-৬)। অত্র আয়াতে ‘فَتَيَمَّمُوا’ শব্দটি দু‘প্রকার ত্বহারাত (ছোট ত্বহারাত ও
বড় ত্বহারাত) এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত। সুতরাং, আল্লাহ্র বাণী- أَوْ
جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ দ্বারা ছোট ত্বহারাতের কারণ বর্ণনা
করা হয়েছে। আর أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ দ্বারা বড় ত্বহারাতের কারণ
বর্ণনা করা হয়েছে।[6]
আর ইমাম শাফেঈ অত্র আয়াতে المس এর অর্থ
স্পর্শ করা উদ্দেশ্য নিয়েছেন, মূলত তা তিনি অকাট্য ও সুদৃঢ় ভাবে এ অর্থ
গ্রহণ করেন নি বরং বাহ্যিক ভাবে তার কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, তিনি সতর্কতা
মূলক একথা বলেছেন।[7] যেমন তিনি الأم নামক গ্রন্থের (১/১২ পৃ.) এ আয়াতটি
উল্লেখ করার পর বলেন, পেশাব-পায়খানার কারণে ওযূ ওয়াজিব হওয়াটা সাদৃশ্য রাখে
স্পর্শ করার কারণে ওযূ ওয়াজিব হওয়ার সাথে। কেননা الملامسة শব্দটি جنابة
শব্দ উল্লেখ করার পর غائط শব্দের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং الملامسة
শব্দটি সহবাস ছাড়া হাত দ্বারা স্পর্শ করা ও চুমু খাওয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
এ মতের সমর্থনে ইবনে আব্দুল বার ইমাম শাফেঈ থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন,
ইমাম শাফেঈ বলেন, স্ত্রীকে চুমু খাওয়ার ব্যাপারে মা’বাদ বিন নাবাতহ থেকে
একটি হাদীস বর্ণিত আছে[8], তিনি বলেন: চুমু খাওয়া ও স্ত্রী স্পর্শ করার
কারণে ওযূ করতে হবে বলে আমি মনে করি না। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী তালখীস
গ্রন্থে (৪৪ পৃঃ) অনুরূপ হাদীস সংকলন করেছেন।
আমার বক্তব্য: স্ত্রীকে স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হবে না। এর সমর্থনে নিমেণর দলীলগুলো পেশ করা যায়:
(1) عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: فَقَدْتُ
رَسُولَ اللهِ ﷺ لَيْلَةً مِنَ الْفِرَاشِ فَالْتَمَسْتُهُ فَوَقَعَتْ
يَدِي عَلَى بَطْنِ قَدَمَيْهِ وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ وَهُمَا
مَنْصُوبَتَانِ وَهُوَ يَقُولُ: «اللهُمَّ أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ
سَخَطِكَ....
(১) অর্থাৎ, আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি এক রাতে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে বিছানায় পেলাম না। আমি তাঁকে
খোঁজ করতে লাগলাম। হঠাৎ আমার হাত তাঁর পায়ের তালুতে গিয়ে ঠেকল। তিনি সাজদায়
ছিলেন এবং তাঁর পা দুটো দাঁড় করানো ছিল। এ অবস্থায় তিনি বলছেন : ‘হে
আল্লাহ্! আমি তোমার অসন্তুষ্টি থেকে তোমার সন্তুষ্টির আশ্রয় চাই।....[9]
(2) عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ ﷺ ،
أَنَّهَا قَالَتْ: «كُنْتُ أَنَامُ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلاَيَ، فِي قِبْلَتِهِ فَإِذَا سَجَدَ
غَمَزَنِي، فَقَبَضْتُ رِجْلَيَّ، فَإِذَا قَامَ بَسَطْتُهُمَا» ، قَالَتْ:
وَالبُيُوتُ يَوْمَئِذٍ لَيْسَ فِيهَا مَصَابِيحُ
(২) অর্থাৎ, ‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন : আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দু’খানা তাঁর
কিবলার দিকে ছিল। তিনি সাজদায় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন, তখন আমি পা
দু’খানা সংকুচিত করতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা দু’খানা সম্প্রসারিত
করতাম। তিনি বলেন : সে সময় ঘরগুলোতে বাতি ছিল না।[10]
অপর বর্ণনায় রয়েছে, حَتَّى إِذَا أَرَادَ
أَنْ يُوتِرَ مَسَّنِي بِرِجْلِهِ অর্থাৎ, এমনকি তিনি যখন সাজদা দিতেন, তখন
আমাকে তাঁর পা দ্বারা স্পর্শ করতেন।[11]
(৩) মুসলমানরা সর্বদা তাদের স্ত্রীদের
স্পর্শ করতেন। তাদের কেউ বর্ণনা করেন নি যে, এর কারণে মহানাবী (ﷺ) তাদের
ওযূ করার নির্দেশ দিয়েছন। সাহাবাদের থেকে কেউ এ কথাও বর্ণনা করেন নি যে,
মহানাবী (ﷺ) তাঁর জীবদ্দশায় এর কারণে ওযূ করেছেন। এমন কি রাসূল (ﷺ) এর
পক্ষ থেকেও এরূপ বর্ণিত হয় নি যে, তিনি এর জন্য ওযূ করেছেন। বরং মহানাবী
(ﷺ) এর পক্ষ থেকে এর বিপরীত এটাই বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘তিনি তার কোন স্ত্রীকে
চুম্বন করতেন। অথচ ওযূ করতেন না’’।[12] এ হাদীসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে
মতভেদ রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কোন মতভেদ নেই যে, স্পর্শ করার ফলে ওযূ করতে
হবে এমন বর্ণনা রাসূল (ﷺ) এর পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়নি।[13] আর ‘‘কাম
প্রবৃত্তির সাথে স্পর্শ করলে ওযূ ভঙ্গ হবে এবং কাম প্রবৃত্তির ছাড়া স্পর্শ
করলে ওযূ নষ্ট হবে না’’ এমন মতামতের কোন দলীল নেই। তবে এ কথা বলা হয়ে থাকে
যে, যদি সহবাস ব্যতীত কাম প্রবৃত্তিসহ স্পর্শ করার ফলে ওযূ করা হয় তাহলে
তা কামপ্রবৃত্তি মিটিয়ে দেয়ার জন্য উত্তম হবে। যেমনটি রাগ মিটানোর জন্য ওযূ
করা উত্তম। তবে তা ওয়াজিব নয়। আল্লাহ্ই সর্বাধিক অবগত।
২। অস্বাভাবিক রক্তপ্রবাহিত হওয়া, চাই তা যখমের কারণে হোক বা সিঙ্গা লাগানোর জন্যই হোক, কম হোক বা বেশি হোক:
বিদ্বানগণের বিশুদ্ধ মতে, এ কারণে ওযূ
নষ্ট হবে না। এটা ইমাম শাফেঈ, মালিক ও আবূ হানীফা (রাহি.) এর অভিমত। আর
হাম্বলী মাযহাবের মতে, রক্ত যখন বেশি প্রবাহিত হবে তখন ওযূ নষ্ট হবে।[14]
তবে প্রথম মতটি কয়েকটি কারণে বিশুদ্ধ:
(১) যে হাদীস গুলোতে এর কারণে ওযূ করাকে ওয়াজিব বলা হয়েছে , তার কোনটিও সহীহ নয়।
(২) মূলতঃ ওযূকারীর ওযূ ঠিক থাকবে। শরীয়াতের দলীল অথবা ইজমা ছাড়া ওযূ ভঙ্গ হবে বলে দাবী করা ঠিক হবে না।
(৩) যাতুর রিকা যুদ্ধের ঘটনায় বর্ণিত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) এর হাদীসে বলা হয়েছে,
اضْطَجَعَ الْمُهَاجِرِيُّ، وَقَامَ
الْأَنْصَارِيُّ يُصَلِّ، وَأَتَى الرَّجُلُ فَلَمَّا رَأَى شَخْصَهُ
عَرَفَ أَنَّهُ رَبِيئَةٌ لِلْقَوْمِ، فَرَمَاهُ بِسَهْمٍ فَوَضَعَهُ فِيهِ
فَنَزَعَهُ، حَتَّى رَمَاهُ بِثَلَاثَةِ أَسْهُمٍ، ثُمَّ رَكَعَ وَسَجَدَ،
ثُمَّ انْتَبَهَ صَاحِبُهُ، فَلَمَّا عَرَفَ أَنَّهُمْ قَدْ نَذِرُوا بِهِ
هَرَبَ، وَلَمَّا رَأَى الْمُهَاجِرِيُّ مَا بِالْأَنْصَارِيِّ مِنَ
الدَّمِ، قَالَ: سُبْحَانَ اللَّهِ أَلَا أَنْبَهْتَنِي أَوَّلَ مَا رَمَى،
قَالَ: كُنْتَ فِي سُورَةٍ أَقْرَؤُهَا فَلَمْ أُحِبَّ أَنْ أَقْطَعَهَا
অর্থাৎ, মুহাজির সাহাবী বিশ্রামের জন্য
শুয়ে পড়েন এবং আনসার সাহাবী সালাত রত হন। তখন শত্রম্ন পক্ষের ব্যক্তি
সেখানে আগমন করে এবং মুসলিম বাহিনীর একজন গোয়েন্দা মনে করে তাঁর প্রতি তীর
নিক্ষেপ করে এবং তা আনসার সাহাবীর শরীরে বিদ্ধ হয়। তিনি তা দেহ থেকে বের
করে ফেলেন। মুশরিক ব্যক্তি এভাবে পরপর তিনটি তীর নিক্ষেপ করে। অতঃপর তিনি
রুকু সাজদা করে (সালাত শেষ করার পর) তাঁর সাথীকে জাগ্রত করেন। অতঃপর সে
ব্যক্তি সেখানে অনেক লোক আছে এবং তারা সতর্ক হয়ে গেছে মনে করে পালিয়ে যায়।
পরে মুহাজির সাহাবী আনসার সাহাবীর রক্তাক্ত অবস্থা দেখে আশ্চর্যন্বিত হয়ে
বলেন, সুবহানালস্নাহ! শত্রম্ন পক্ষের প্রথম তীর নিক্ষপের সময় কেন আপনি
আমাকে সতর্ক করেননি? জবাবে তিনি বলেন, আমি সালাতের মধ্যে (তন্ময়তার সাথে)
এমন একটি সূরা পাঠ করছিলাম যা শেষ না করে পরিত্যাগ করা পছন্দ করিনি।[15]
অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, মহানাবী (ﷺ)
এ ব্যাপারে জানার পর এতো রক্ত প্রবাহিত হওয়ার পরও সালাতে অবিচল থাকতে
নিষেধ করেন নি। যদি রক্ত ওযূ ভঙ্গেঁর কারণ হ’ত তাহলে মহানাবী (ﷺ) সে
ব্যক্তিকে বা সে যুদ্ধে যারা ছিল তাদের কাছে এ বিষয়টি বর্ণনা করতেন। আর
প্রয়োজনীয় সময় ছাড়া পরে বর্ণনা করা বৈধ নয়।[16]
(৪) সহীহ সূত্রে বর্ণিত যে, - صَلَّى
وَجُرْحُهُ يَثْعَبُ دَمًا أن عُمَرَ بن الخطاب لما طعن -অর্থাৎ, উমার
ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) যখন যখম প্রাপ্ত তখন তিনি সালাত আদায় করলেন অথচ তাঁর
জখম হতে তখন রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।
(৫) মুতওয়াতির পর্যায়ের অনেক হাদীস রয়েছে
যে, আল্লাহ্র রাস্থায় জিহাদ কারী মোজাহিদ গণ তাদের যখমের কারণে প্রবাহিত
রক্ত বন্ধ করতে সক্ষম হতনা। এর ফলে তাদের কাপড় নোংরা হয়ে যেত। অথচ তারা
এমতাবস্থায় সালাত আদায় করতেন। রাসুল (ﷺ) এর পক্ষ থেকে কেউ এ কথা বর্ণনা
করেন নি যে, এমতাবস্থায় মহানাবী (ﷺ) তাদের সালাত বাতিল করতে বলেছেন বা
তাদেরকে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। এ জন্য হাসান বসরী (রাহি.) বলেন:
مَا زَالَ المُسْلِمُونَ يُصَلُّونَ فِي جِرَاحَاتِهِمْ
অর্থাৎ,‘‘মুসলমানেরা সবদায় তাদের শরীর ক্ষত-বিক্ষত বা জখম থাকা অবস্থায়
সালাত আদায় করতেন’’।[17]
৩। বমি বা অনুরূপ কিছু:
রক্ত প্রবাহিত হওয়ার ব্যাপারে বিদ্বানগণ
যে মতামত পেশ করেছেন, বমির ব্যাপারেও একই মতামত পেশ করেছেন। তবে বিশুদ্ধ মত
হলো বমির কারণে ওযূ ভঙ্গ হবে না। কেননা এ ক্ষেত্রে ওযূ করা ওয়াজিব বলে কোন
সহীহ প্রমাণ নেই। সুতরাং তা মূলের উপর বহাল থাকবে।
আর আবূ দারদা থেকে মিদান বিন আবূ তালহা বর্ণিত হাদীস-
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاءَ، فَأَفْطَرَ فَتَوَضَّأَ
অর্থাৎ, রাসূল (ﷺ) বমি করলেন। অতঃপর ইফতার করে ওযূ করলেন।[18]
এতে নিসন্দেহ বলা যায় যে, এর দ্বারা বমি
হওয়ার ফলে ওযূ করা ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেননা এটা শুধু
মহানাবী (ﷺ) এর কর্ম। সুতরাং তা মুস্তাহাব হওয়ার উপর প্রমাণ করছে।
আল্লাহ্ই সর্বাধিক অবগত।
৪। সালাতে বা সালাতের বাইরে অট্টহাসি হাসা:
বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, সালাতের
বাইরে হাসা হাসি করলে পবিত্রতা নষ্ট হয় না এবং ওযূকে ওয়াজিব করে না।
বিদ্বান গণ এ ব্যাপারেও একমত যে, সালাতের মাঝে হাসা-হাসি করলে সালাত বাতিল
হয়ে যাবে। তবে তার সালাতের মাঝে হাসা-হাসি করলে ওযূ ভঙ্গ হবে কিনা এ নিয়ে
মতভেদ করেছেন। আবূ হানীফা আসহাবে রা’য়, সাওরী, হাসান ও নাখঈ (রাহি.) এর
মতে, ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তারা একটি মুনকাতিঈ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে
থাকেন, যা দলীলের যোগ্য নয়। আর তা হল আবূল আলিয়ার হাদীস -
عن أبي العالية أن رجلا ضرير البصر دخل
المسجد والنبي ﷺ يصلي وأصحابه فتردى في بئر فضحك بعض أصحابه فأمر النبي صلى
الله عليه وسلم من ضحك أن يعيد الوضوء والصلاة
অর্থাৎ, আবূ আলিয়া থেকে বর্ণিত, মহানাবী
(ﷺ) একদা সাহাবাদের নিয়ে সালাত আদায় করানো অবস্থায় এক অন্ধ ব্যক্তি এসে
মাসজিদের এক গর্তে পড়ে গেলে কওমের একদল মানুষ হাসতে লাগল। ফলে রাসূল (ﷺ)
তাদের নির্দেশ দিয়ে বললেন, যে হেসেছে সে যেন পুনরায় ওযূ করে সালাত আদায়
করে।[19]
অপর পক্ষে, মারফূ সূত্রে জাবের (রাঃ)
বর্ণিত হাদীসে সাব্যাস্ত আছে যে, একদা তাকে (জাবির কে) জিজ্ঞেস করা হলো,
যদি কোন ব্যক্তি সালাতে হাসে তাহলে তার বিধান কি হবে? তখন তিনি উত্তরে
বললেন, يعيد الصلاة ولا يعيد الوضوء -অর্থাৎ, সে পুনরায় সালাত আদায়
করবে। তবে পুনরায় ওযূ করবে না ।[20] অত্র হাদীসে উল্লেখিত মতামতটিই
বিশুদ্ধ। এটা ইমাম শাফেঈ, মালিক, আহমাদ, ইসহাক ও আবূ ছাওর (রাহি.) এর অভিমত
।[21]
৫। মৃত ব্যক্তিকে গোসল করালে এবং তাকে বহন করলে :
বিশুদ্ধ মতে, যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে
গোসল করাবে অথবা তাকে বহন করবে, তার ওযূ নষ্ট হবে না। তবে কতিপয় বিদ্বান
বলেছেন মুস্তাহাব হলো যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে সে গোসল
করবে, আর তাকে বহন করলে ওযূ করবে।
যেমন আবূ হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: «مَنْ غَسَّلَ الْمَيِّتَ فَلْيَغْتَسِلْ، وَمَنْ حَمَلَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ»
অর্থাৎ, আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে সে গোসল করবে,
আর তাকে বহন করলে ওযূ করবে।[22] যদি হাদীসটি সহীহ হয়।
৬। বায়ু নির্গত হওয়ার ব্যাপারে ওযূকারীর সন্দেহ:
যে ব্যক্তি সঠিকভাবে ওযূ করার পর মনে মনে
সন্দেহ করে যে, তার কি বায়ু নির্গত হল না হল না? তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত
বায়ু নির্গত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে পবিত্রতার
মৌলিকতার উপরই অটল থাকবে। অর্থাৎ তার ওযূ নষ্ট হবে না। আর যদি সালাতের মাঝে
বায়ু নির্গত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করে তাহলে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত
সালাত ছাড়বে না। আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) বলেন:
شُكِيَ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ الرَّجُلُ
يَجِدُ الشَّيْءَ فِي الصَّلَاةِ حَتَّى يُخَيَّلَ إِلَيْهِ، فَقَالَ:্রلَا
يَنْفَتِلْ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا، أَوْ يَجِدَ رِيحًاগ্ধ
অর্থাৎ: এক ব্যক্তি নাবী করীম (ﷺ) এর
খিদমতে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ করেন যে, সে সালাতের মধ্যে অনুভব করে যে, তার
পিছনের রাস্তা হতে বায়ু নির্গত হয়েছে। জবাবে তিনি বলেন : যে পর্যন্ত কেউ
বায়ু নির্গমনের শব্দ বা দুর্গন্ধ না পাবে ততক্ষণ সালাত পরিত্যাগ করবে
না।[23]
আল্লামা বাগাভী (রাহি.) ‘‘শারহুস
সুন্নাহ’’ গ্রন্থে (১/৩৫৩পৃ;) বলেন, এর অর্থ হলো যতক্ষণ পর্যন্ত বায়ু
নির্গত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হবে। কেননা এ ক্ষেত্রে শব্দ শুনা ও বায়ুর
অস্তিত্ব পাওয়া শর্ত।
No comments:
Post a Comment