আরেকটি ভুল ধারণা : আগের উম্মত কি নবীর মাধ্যম ছাড়া দুআ করতে পারত না?
কিছু মানুষের ধারণা আগের উম্মতগণ নবীর মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহর কাছে দুআ করতে পারত না। এটি একটি অমূলক ধারণা। কুরআন হাদীসে এর কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না। বরং এর উল্টোটা পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) আমার বান্দাগণ যখন আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তখন (আপনি তাদেরকে বলুন যে,) আমি এত নিকটবর্তী যে, কেউ যখন আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি (তার ডাকে সাড়া দিই)- সূরা বাকারা ২:১৮৬
এ আয়াতে বর্তমান উম্মত ও পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। এছাড়া পূর্ববর্তী উম্মতের সরাসরি দুআ করার নযীর কুরআনেই বিদ্যমান। এখানে কয়েকটি পেশ করা হল-
১. মূসা আলাইহিস সালাম-এর উম্মত ফিরাউনের স্ত্রীর দুআ:
(তরজমা) আল্লাহ মুমিনদের জন্য ফিরাউনের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, যে দুআ করেছিল: ‘হে আমার প্রতিপালক! তোমার সন্নিধানে জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং আমাকে উদ্ধার কর ফিরাউন ও তার দুষ্কৃতি থেকে এবং আমাকে উদ্ধার কর জালিম সম্প্রদায় হতে।’-সূরা তাহরীম ৬৬ : ১১
২. আসহাবে কাহফ তথা তৎকালীন নবীর উম্মতের দুআ :
(তরজমা) যখন যুবক দলটি (আসহাবে কাহ্ফ) গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল এবং (আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করে) বলেছিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের প্রতি আপনার নিকট থেকে বিশেষ রহমত নাযিল করুন এবং এ পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য কল্যাণকর পথের ব্যবস্থা করে দিন।’-সূরা কাহ্ফ ১৮ : ১০
৩. ইমরানের স্ত্রীর দুআ :
(তরজমা) যখন ইমরানের স্ত্রী (আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করে) বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত তোমার জন্য উৎসর্গ করলাম। সুতরাং তুমি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’-সূরা আলে ইমরান ৩ : ৩৫
একটি ভুল ধারণা : মুহাররম মাসে বিবাহ করা কি অশুভ
এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তাআলা কতক মাস, দিন ও রাতকে অন্যান্য মাস, দিন ও রাতের চেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ বানিয়েছেন এবং তাতে ভাল কাজের অধিক বরকত রেখেছেন। কিন্তু কোনো মাস, দিন ও রাত বা কোনো সময়কে অকল্যাণকর বা অশুভ বানাননি। সময় মাত্রই আল্লাহ তাআলার নেয়ামত ও করুণা। উত্তম ও সঠিক কাজের মাধ্যমে মানুষ যে কোনো সময়কেই ফলপ্রসূ ও বরকতময় করতে সক্ষম।
কোনো মাস, দিন বা রাতকে অশুভ মনে করা বিশেষ কোনো সময়কে বিশেষ কাজের জন্য অশুভ ও অলক্ষুণে মনে করা-সবই জাহেলিয়াতের কুসংস্কার। যেমন ইসলামপূর্ব যুগের কোনো কোনো লোকের এই ধারণা ছিল যে, শাওয়াল মাসে বিবাহ-শাদির অনুষ্ঠান অশুভ ও অকল্যাণকর। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. এই ভিত্তিহীন ধারণাকে এই বলে খন্ডন করেছেন যে- ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শাওয়াল মাসেই বিবাহ করেছেন এবং শাওয়াল মাসেই বিবাহ-রজনী উদযাপন করেছেন। অথচ তাঁর অনুগ্রহ লাভে আমার চেয়ে অধিক সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আর কে আছে? – সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪২৩
বর্তমানে কিছু লোক মুহাররম মাসের ব্যাপারে এজাতীয় ধারণা পোষণ করে। সম্ভবত তাদের এই ভ্রান্ত ধারণার পেছনে এ মাসে হযরত হোসাইন রা.-এর শাহাদাত বরণের ঘটনা কার্যকর। অথচ সময় কখনো অশুভ হয় না। বিশেষ করে মুহাররম মাস তো ‘আশহুরে হুরুম’ তথা মর্যাদাপূর্ণ মাস-চারটির অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। রমযান মাসের পর এ মাসের গুরুত্ব ও ফযীলতই সবচেয়ে বেশি। হযরত হোসাইন রা.-এর শাহাদাত বরণের মাধ্যমে এ মাস কীভাবে অশুভ হতে পারে? অশুভ ও অকল্যাণ তো ওই সব লোকের বদআমলের মধ্যে নিহিত, যারা তাঁকে অন্যায়ভাবে শহীদ করেছে। বছরের কোন্ মাসটি এমন আছে, যাতে কোনো মহান ব্যক্তির শাহাদাতের ঘটনা ঘটেনি? তবে কি বছরের সকল মাসই অশুভ ও অকল্যাণকর হয়ে যাবে?
সফর মাসের ব্যাপারেও জাহেলি যুগে এই ভ্রান্ত বিশ্বাস ছিল যে, এ মাসটি অশুভ। নাউযুবিল্লাহ! এজাতীয় শুভাশুভের ধারণা একটি কুসংস্কার, যাকে ইসলাম বাতিল সাব্যস্ত করেছে এবং এভাবে বান্দাদেরকে এক বিরাট মুসীবত থেকে মুক্তি দিয়ে আরাম ও স্বস্তির জীবন-যাপনের পথ সুগম করেছে।
No comments:
Post a Comment