একটি ভুল মাসআলা : যে মহিলাকে দিনে চল্লিশ জন বেগানা পুরুষ দেখল সে পুরুষের হুকুমে
কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায়, ‘যে মহিলাকে দিনে চল্লিশজন বেগানা পুরুষ দেখল সে পুরুষের হুকুমে’। কথাটি হয়তো এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয় যে এ ধরণের ফাসেক নারীদের থেকে অন্য নারীদের দূরে থাকা উচিত-এ ধারণা ঠিক। তাই বলে ঢালাওভাবে এ কথা বলে দেয়া যে এ ধরণের নারী পুরুষের হুকুমে- তা ঠিক নয়। নারী তো নারীই, তার বেলায় নারীর সকল বিধানই প্রযোজ্য। তবে অসৎ সঙ্গ থেকে বেঁচে থাকার জন্য কাফের, ফাসেক ও বেদ্বীন নারীদের থেকে দূরে থাকবে।
তাছাড়া এক্ষেত্রে চল্লিশ সংখ্যারই বা যৌক্তিকতা কোথায়?
উল্লেখ্য, পর্দা লঙ্ঘন করা কবীরা গুনাহ। আর অবিরত এ গুনাহ করতে থাকা অনেক বড় অন্যায়। এ পাপ শুধু নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ নয় বরং অন্যকেও পাপ করতে সহায়তা করা হয়, ফলে তার পাপের দায়ও নিজের কাঁধে চলে আসে। পাপের বোঝা ভারী হয়। সুতরাং প্রতিটি নারী পুরুষেরই এ পাপ থেকে বেঁচে থাকা ফরয।
একটি ভুল আমল : কুনুতের জন্য তাকবীর বলার সময় কি প্রথমে হাত ছেড়ে তারপর বাঁধতে হয়?
অনেককে দেখা যায় বেতের নামাযে দুআয়ে কুনুতের জন্য তাকবীর বলার সময় প্রথমে নিচের দিকে হাত ছেড়ে দেয় তারপর হাত উঠিয়ে বাঁধে। এটি ঠিক নয়। তাকবীর বলে হাত বাঁধার জন্য নিচের দিকে হাত ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই।
ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীরের ক্ষেত্রেও অনেককে এমনটি করতে দেখা যায়।
নামের বিকৃত উচ্চারণ : মেহবুব, রেহমান, মেহমুদ
অনেকেই এ নামগুলোকে এভাবে উচ্চারণ করে বা লেখে। এভাবে বলা বা লেখা দুটোই ভুল। এগুলোর সঠিক উচ্চারণ যথাক্রমে ‘মাহবুব’, ‘রহমান’, ‘মাহমুদ’। এগুলো আরবী নাম। প্রতিটি নামের প্রথম অক্ষরে যবর। ওভাবে উচ্চারণ করলে যবরের স্থলে যের হয়ে যায় যা সম্পূর্ণ ভুল। আর ‘রহমান’ নামটি আল্লাহর নাম। এটি নামের দ্বিতীয় অংশ হিসেবে ব্যবহার হয় যেমন মাহবুবুর রহমান। বিশেষত এটা আল্লাহর নাম হওয়ার কারণে এ নামটির বিকৃত উচ্চারণ বড় ধরনের অন্যায়। ষ
একটি ভুল ধারণা : সন্ধ্যার বাতি
অনেকের ধারণা, মাগরীবের আযান দিলে দোকান পাট বা গাড়িতে বাতি জ্বালাতে হয় নইলে ব্যবসায় ক্ষতি হয়। এটাকে ‘সন্ধ্যার বাতি’ বলে। এ ধরণা ঠিক নয়। সন্ধ্যা হলে প্রয়োজনের খাতিরে এমনিতেই দোকান পাট বা গাড়িতে বাতি জ্বালাতে হয় এর সাথে লাভ ক্ষতির কী সম্পর্ক? লাভ ক্ষতি তো হয় আল্লাহর পক্ষ হতে বাতি; জ্বালা না জ্বালার এখানে কোনো দখল নেই। প্রয়োজন হলে বাতি জ্বালাবে না হলে জ্বালাবে না।
এটি হাদীস নয় : জিবরীলের চার প্রশ্ন … আপনি বড় না দ্বীন বড়?
লোকমুখে শোনা যায়, একবার জিবরীল আমীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেন, ১. আপনি বড় না আমি বড়? নবীজী বললেন, আমি বড়, কারণ আমার কাছে আপনাকে পাঠানো হয়। ২. আপনি বড় না কুরআন বড়? নবীজী বললেন, আমি বড়, কারণ কুরআন আমার উপর নাযিল হয়েছে। ৩. আপনি বড় না আরশ বড়? নবীজী বললেন, আমি বড়, কারণ আমাকে আরশে জুতা পায়ে দিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ৪. আপনি বড় না দ্বীন বড়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবার বললেন, দ্বীন বড়, কারণ দ্বীনের জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে।
এটি কোন হাদীসও নয় কোন হাদীসের ভাষ্যও নয়। জিবরীল, কুরআন, আরশ, দ্বীন-এর প্রতিটির মর্যাদা আপন স্থানে প্রতিষ্ঠিত। এর একটিকে আরেকটির সাথে তুলনা করা বা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এর কোনটির মর্যাদা তুলনা করা একেবারেই অনর্থক কাজ। যা কোন মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। না ঈমানের সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে না আমলের সাথে। তাছাড়া এই বর্ণনার মাঝে আরো জাল বর্ণনার সমাবেশ ঘটেছে যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে এটি একটি জাল বর্ণনা। যেমন এখানে জুতা পায়ে নবীজীর আরশ গমনের কথাটি এসেছে যা সর্বসম্মতিক্রমে জাল ও ভিত্তিহীন। (গত এপ্রিল-২০১৩ আলকাউসারের প্র.ভুল বিভাগে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে)
সুতরাং এ জাতীয় মূর্খচিত জাহেলী কথা বলা থেকে বিরত থাকা ফরজ।
একটি ভুল প্রচলন : সালামের জবাব না দিয়ে ‘কেমন আছেন’ বলা
অনেক মানুষকেই দেখা যায় সালামের জবাব না দিয়ে বলে, ‘কেমন আছেন?’ বা সালামের উত্তর কোন রকম দিয়ে কেমন আছেন বলতে ব্যস্ত হয়ে যায়। এ কাজটি ঠিক নয়। কেউ সালাম দিলে তার জবাব দেয়া ওয়াজিব। তাই আগে স্পষ্টভাবে শুনিয়ে সালামের জবাব দিতে হবে, তারপর কুশল বিনিময়ের সময় থাকলে তা করবে।
কিন্তু সালামের জবাব না দিয়ে বা কোন রকম সালামের উত্তর দিয়ে কেমন আছেন বলাটা একেবারেই অনুচিৎ
একটি ভুল মাসআলা : রোযার নিয়ত কি মুখে করা জরুরী?
রোযার নিয়ত নিয়ে অনেকের মধ্যে একটা ভুল ধারণা কাজ করে। অনেকেই মনে করেন, রোযার নিয়ত মুখে করতে হয়। সমাজে যে আরবী নিয়ত প্রচলিত আছে তা বলতে হয়, নইলে কমপক্ষে মুখে এতটুকু বলতে হয় যে, আমি আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করছি। অন্যথায় নাকি রোযা সহীহ হবে না।
তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। রোযার জন্য মৌখিক নিয়ত জরুরি নয়; বরং অন্তরে রোযার সংকল্প করাই যথেষ্ট। এমনকি রোযার উদ্দেশ্যে সাহরী খেলেই রোযার নিয়ত হয়ে যায়। সুতরাং এ কথা ভাবার কোন সুযোগ নেই যে, মুখে রোযার নিয়ত না করলে রোযা হবে না।
নামের ভুল উচ্চারণ : প্রসিদ্ধ দুইজন মুহাদ্দীসের নামের ভুল উচ্চারণ
হাদীসের প্রসিদ্ধ কয়েকজন ইমামের নাম উচ্চারণ করতে বা লিখতে অনেকেই ভুল করেন। তার মধ্য থেকে দুইটি নিম্নে তুলে ধরা হল-
১. ইমাম তবারানী রহ.
তাঁর পূর্ণ নাম সুলাইমান ইবনে আহমাদ ইবনে আইয়ূব আবুল কাসেম আত্তবারানী (২৬০-৩৬০ হি.) তিনি হাদীসের একজন বড় ইমাম ছিলেন। তাঁর সংকলিত কয়েকটি হাদীসের কিতাবের নাম আমরা সচারাচর শুনে থাকি। যেমন মুজামে কাবীর, মুজামে আওসাত, মুজামে ছগীর। কোন কোন সময় সরাসরি মুজামে তবারানী বা তবারানী শরীফ-ও বলা হয়। এক্ষেত্রে যে ভুলটা লক্ষ করা যায় তা হল, ইমাম তবারানী রহ. -এর নাম বলতে গিয়ে অনেকে ‘তিব্রানী’ বলে থাকে যা সম্পূর্ণ ভুল। শামের‘তবারিয়্যাহ্’-এর দিকে সম্পৃক্ত করে তাঁকে ‘তবারানী’ বলা হয়। সুতরাং তিব্রানী বলা একেবারেই ভুল।-মুজামুল বুলদান, খন্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ২৪৮ (তবারিয়্যাহ); আলআ’লা, যিরিকলী, খন্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১৮১
২. ইমাম দারাকুত্নী রহ.
তাঁর পূর্ণ নাম আলী ইবনে ওমর ইবনে আহমাদ ইবনে মাহদী আবুল হাসান আদ্দারাকুতনী (৩০৬-৩৮৫ হি.)। তিনি হাদীসের একজন বড় ইমাম ছিলেন। তাঁর সংকলিত হাদীসের কিতাব ‘সুনানে দারাকুতনী’-এর নাম আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। তিনি বাগদাদের ‘দারুল কুত্ন’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। এদিকে সম্পৃক্ত করেই তাঁকে ‘দারাকুত্নী’ বলা হয়। কিন্তু অনেকেই তাঁর নাম বলা বা লেখার ক্ষেত্রে ‘দারাকুত্নী’ -এর স্থলে ‘দার্কুতনী বা দারেকুত্নী’ বলে বা লিখে থাকেন যা একেবারেই ভুল। তাঁর নামের সঠিক উচ্চারণ হল, ‘দারাকুত্নী’।-মুজামুল বুলদান, খন্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২৭৬ (দারুল কুত্ন); আলআ’লাম, যিরিকলী, খন্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ১৩০
No comments:
Post a Comment