Thursday, October 19, 2017

গুনাহ্’র বিভিন্ন অপকারঃ পর্ব-৮, গুনাহ্গারের অন্তর থেকে লজ্জাবোধ একেবারেই নি:শেষ হয়ে যায়

গুনাহ্গারের অন্তর থেকে লজ্জাবোধ একেবারেই নি:শেষ হয়ে যায়


২৬. গুনাহ্ করতে করতে গুনাহ্গারের অন্তর থেকে লজ্জাবোধ একেবারেই নি:শেষ হয়ে যায়। আর লজ্জাশীলতা তো কল্যাণই কল্যাণ।
’ইমরান বিন্ ’হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
 الْـحَيَاءُ كُلُّهُ خَيْرٌ.
‘‘লজ্জা বলতে সবটাই ভালো’’। (মুসলিম ৩৭)
লজ্জাবোধ চলে গেলে মানুষ যা ইচ্ছে তাই করতে পারে।
আবূ মাস্’ঊদ্ বাদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلَامِ النُبُوَّةِ : إِذَا لَمْ تَسْتَحْيِ فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ.
‘‘নবীদের যে কথাটি মানুষ আজো স্মরণ রেখেছে তা হচ্ছে, যখন তুমি লজ্জাই পাচ্ছো না তখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারো’’।(বুখারী ৩৪৮৩, ৩৪৮৪)
লজ্জা হারিয়ে কখনো মানুষ এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে, সে একাকী কোন খারাপ কাজ করার পরও জনসম্মুখে তা জানিয়ে দেয় এবং তা করতে পেরেছে বলে সে নিজ মনে খুব আনন্দ বোধ করে। এমন পর্যায়ে কোন ব্যক্তি উপনীত হলে তখন সে ব্যক্তির সঠিক পথে ফিরে আসার আর তেমন কোন সম্ভাবনা থাকে না।


আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাহ্কে পরিত্যাগ করেন


২৮. গুনাহ্’র কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাহ্কে পরিত্যাগ করেন। তাকে আর কোন ব্যাপারে সহযোগিতা করেন না। বরং তাকে প্রবৃত্তি ও শয়তানের হাতে ছেড়ে দেন। তখন তার ধ্বংস অনিবার্য।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا الله وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ، وَاتَّقُوْا اللهَ، إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ، وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ نَسُوْا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ، أُوْلَآئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ»
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো এবং প্রত্যেকেরই এ কথা ভেবে দেখা দরকার যে, সে কিয়ামত দিবসের জন্য কি পুঁজি তৈরি করেছে। অতএব তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকেই ভয় করো। তোমাদের কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা নিশ্চয়ই অবগত এবং তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভুলে গিয়েছে। যার ফলে আল্লাহ্ তা‘আলা (শুধু তাদেরকেই ভুলে যান নি) বরং তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছেন। এরাই তো সত্যিকার পাপাচারী’’। (হাশর : ১৮-১৯)
এর চাইতেও বেশি ক্ষতি কারোর জন্য আর কি হতে পারে যে, সে নিজের পরিণতির কথা ভাবে না। নিজের সুবিধা অসুবিধার কথা চিন্তা করে না। নিজের পূর্ণ শান্তি ও তৃপ্তির আকাঙ্খা তথা তা অর্জনের কোন প্রচেষ্টাই তার নেই।

গুনাহ্গারকে ইহ্সানের পর্যায় থেকে বঞ্চিত করে


২৯. গুনাহ্ গুনাহ্গারকে ইহ্সানের পর্যায় থেকে বঞ্চিত করে। ইহ্সানের পর্যায় হলো সর্বোচ্চ পর্যায়। আর তা হচ্ছে, আল্লাহ্ তা‘আলার ইবাদাত এমনভাবে করা যে, যেন আপনি আল্লাহ্ তা‘আলাকে দেখতে পাচ্ছেন। আর তা না হলে এমন যেন হয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে দেখতে পাচ্ছেন। ফলে সে মুহসিনীনদের জন্য নির্ধারিত সুযোগ-সুবিধা ও বিশেষ সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়। কখনো কখনো এমনো হয় যে, সে ঈমানের পর্যায় থেকেও বঞ্চিত হয়। ফলে ঈমানের সকল কল্যাণও তার হাতছাড়া হয়ে যায়। ঈমানের প্রায় একশতটি কল্যাণ রয়েছে। তম্মধ্যে মু’মিনদের জন্য মহা পুণ্য, দুনিয়া ও আখিরাতের সকল বালা-মুসীবত থেকে উদ্ধার, তাদের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট আর্শবাহী ফিরিশ্তাদের মাগফিরাত কামনা, আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ বন্ধুত্ব, তাদেরকে ফিরিশ্তাদের মাধ্যমে শরীয়তের উপর দৃঢ়পদ করণ, তাদের জন্য স্পেশাল সম্মান, তাদের জন্য সর্বদা আল্লাহ্ তা‘আলার সহযোগিতা, দুনিয়া ও আখিরাতের সুউচ্চ সম্মান, গুনাহ্ মাফ ও সম্মান জনক উপজীবিকা, পরকালে আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ রহমত ও দীর্ঘ অন্ধকার পথ পাড়ি দেয়ার জন্য নূরের সুব্যবস্থা, ফিরিশ্তা, নবী ও নেক্কারদের ভালোবাসা, আখিরাতের নিরাপত্তা এবং তারাই পরকালে আল্লাহ্ তা‘আলার একমাত্র নি’য়ামতপ্রাপ্ত ও তাদের জন্যই কুর‘আনের হিদায়াত ও সুচিকিৎসা ইত্যাদি অন্যতম। কখনো কখনো এমন হয় যে, বার বার গুনাহ্’র কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা তার অন্তরের উপর কুফরির মোহর মেরে দেন এবং সে ব্যক্তি ইসলামের গন্ডি থেকেই সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যায়। তারপরও আল্লাহ্ চায় তো তাওবা’র দরোজা সর্বদা তার জন্য খোলা রয়েছে।

লেখক/সংকলকঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ