Thursday, October 19, 2017

গুনাহ্’র বিভিন্ন অপকারঃ পর্ব-১১, বয়স, রিযিক, জ্ঞান, আমল ও আনুগত্যের বরকত কমিয়ে দেয়

বয়স, রিযিক, জ্ঞান, আমল ও আনুগত্যের বরকত কমিয়ে দেয়


৪২. গুনাহ্ বয়স, রিযিক, জ্ঞান, আমল ও আনুগত্যের বরকত কমিয়ে দেয়। তথা দীন-দুনিয়ার সকল বরকতে ঘাটতি আসে। কারণ, সকল বরকত তো আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ»
‘‘জনপদবাসীরা যদি ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো তা হলে আমি তাদের জন্য আকাশ ও জমিনের বরকতের দ্বার খুলে দিতাম’’। (আ’রাফ : ৯৬)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«وَأَنْ لَّوِ اسْتَقَامُوْا عَلَى الطَّرِيْقَةِ لَأَسْقَيْنَاهُمْ مَّآءً غَدَقًا»
‘‘তারা যদি সত্যপথে প্রতিষ্ঠিত থাকতো তা হলে আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে প্রচুর বারি বর্ষণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতাম’’। (জিন : ১৬)
জাবির বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ ও আবূ উমা’মাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِنَّ رُوْحَ الْقُدُسِ نَفَثَ فِيْ رُوْعِيْ أَنَّهُ لَنْ تَمُوْتَ نَفْسٌ حَتَّى تَسْتَكْمِلَ رِزْقَهَا، فَاتَّقُوْا اللهَ وَأَجْمِلُوْا فِيْ الطَّلَبِ، فَإِنَّهُ لَنْ يُّنَالُ مَا عِنْدَ اللهِ إِلاَّ بِطَاعَتِهِ، وَإِنَّ اللهَ جَعَلَ الرَّوْحَ وَالْفَرَحَ فِيْ الرِّضَى وَالْيَقِيْنِ،وَجَعَلَ الْـهَمَّ وَالْـحُزْنَ فِيْ الشَّكِّ وَالسُّخْطِ.
‘‘নিশ্চয়ই জিব্রীল (আঃ) আমার অন্তরে এ মর্মে ভাবোদয় করলেন যে, কোন প্রাণী মৃত্যু বরণ করবে না যতক্ষণ না সে নিজ রিযিক সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো এবং শরীয়ত সম্মত উপায়ে ভালোভাবে উপার্জন করো। কারণ, এ কথা সবারই জানতে হবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট থেকে কিছু পেতে হলে তাঁর আনুগত্য অবশ্যই করতে হবে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা একমাত্র তাঁর উপর সন্তুষ্টি ও দৃঢ় বিশ্বাসের মধ্যেই মানুষের জন্য রেখেছেন সুখ ও শান্তি এবং তাঁর উপর অসন্তুষ্টি ও সন্দেহের মধ্যেই রেখেছেন ভয় ও আশঙ্কা’’।
(ইব্নু মাজাহ্ ২১৪৪ বায়হাক্বী ৫/২৬৫ আবূ নু‘আঈম/’হিল্ইয়াহ্ ১০/২৭)


গুনাহ্গার উঁচু স্থান থেকে নিচু স্থানে নেমে আসে


৪৩. গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গার উঁচু স্থান থেকে নিচু স্থানে নেমে আসে। এমনকি পরিশেষে সে জাহান্নামীদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তবে তাওবা করার পর সে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতেও পারে। আবার নাও আসতে পারে। আবার কখনো সে আরো উঁচু পর্যায়েও যেতে পারে। আর তা নির্ণীত হবে একমাত্র তার তাওবার ধরনের উপরই।

গুনাহ্গারের ক্ষতি করতে এমন ব্যক্তিও সাহসী হবে যে ইতিপূর্বে তা করতে সাহস পায়নি


৪৪. গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গারের ক্ষতি করতে এমন ব্যক্তিও সাহসী হবে যে ইতিপূর্বে তা করতে সাহস পায়নি। তখন শয়তান তাকে ভয়ার্ত ও চিন্তিত করতে সাহস পাবে। তাকে পথভ্রষ্ট করতে ও ওয়াস্ওয়াসা দিতে সে উৎসাহী হবে। এমনকি মানবরূপী শয়তানও তাকে কষ্ট দিতে সক্ষম হবে। তার পরিবার, সন্তান, কাজের লোক, প্রতিবেশী এমনকি তার পালিত পশুও তার কথার মূল্যায়ন বা তার আনুগত্য করবে না। প্রশাসকরাও তার উপর যুলুম করবে। এমনকি তার অন্তরও তার আনুগত্য করবে না। ভালো কাজে তার সহযোগী হবে না। বরং খারাপের দিকেই তাকে টেনে নিয়ে যাবে।
জনৈক বুযুর্গ বলেন: আমি আল্লাহ্ তা‘আলার নাফরমানি করলেই তার পরিণাম আমার স্ত্রী ও বাহনের মধ্যে অনুভব করতে পারি।

গুনাহ্গারের অন্তরে গুনাহ্’র জংয়ের এক আস্তর পড়ে যায়


৪৫. গুনাহ্ করতে করতে গুনাহ্গারের অন্তরে গুনাহ্’র জংয়ের এক আস্তর পড়ে যায়। তখন বিপদের সময়ও তার অন্তর তা কাটিয়ে উঠতে তার সহযোগিতা করে না। আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ফরিয়াদ করতে চায় না। যিকিরে ব্যস্ত হয় না এবং একমাত্র তাঁরই উপর ভরসা করতে রাজি হয় না। বরং কখনো কখনো এমন হয় যে, তার ইন্তিকালের সময় তার যবানও তাকে ঈমান নিয়ে মরতে সহযোগিতা করে না।
জনৈক ব্যক্তিকে মৃত্যুর সময় বলা হলো: ‘‘লা’ ইলা’হা ইল্লাল্লাহু’’ পড়ো। তখন সে গান গাইতে শুরু করলো এবং এমতাবস্থায় সে মৃত্যু বরণ করলো। আরেক জন উত্তর দিলো: কালিমা এখন আর আমার কোন ফায়েদায় আসবে না। কারণ, দুনিয়াতে এমন কোন গুনাহ্ নেই যা আমি করতে ছাড়িনি এবং এমতাবস্থায়ই সে মারা গেলো। আরেক জন বললো: আমি এ কালিমায় বিশ্বাস করি না। অথচ ইতিপূর্বে সবাই তাকে মুসলিম হিসেবেই চিনতো। আরেক জন বললো: আমি তো কালিমা উচ্চারণ করতেই পারছিনে। আরেক জন বললো: আল্লাহ্’র জন্য আমাকে একটি টাকা দাও। আল্লাহ্’র জন্য আমাকে একটি টাকা দাও। আরেক জন বললো: এ কাপড়টি এতো। আর ও কাপড়টি অতো। আরো কত্তো কী?

গুনাহ্গারের অন্তর একেবারেই অন্ধ হয়ে যায়


৪৬. গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গারের অন্তর একেবারেই অন্ধ হয়ে যায়। পুরো অন্ধ না হলেও তার অন্তর্দৃষ্টি দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন সে আর হিদায়াতের দিশা পায় না। আর পেলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখে না।
মানব পরিপূর্ণতা তো দু’টি জিনিসেই সীমাবদ্ধ। আর তা হচ্ছে, সত্য জানা ও মিথ্যার উপর সত্যকে প্রাধান্য দেয়া। দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মানুষের সম্মানের তারতম্য এ দু’য়ের কারণেই হয়ে থাকে এবং এ দু’য়ের কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা নবীদের প্রশংসা করেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَاذْكُرْ عِبَادَنَا إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ أُوْلِيْ الْأَيْدِيْ وَالْأَبْصَارِ»
‘‘স্মরণ করো আমার বান্দাহ্ ইব্রাহীম, ইস্হাক, ইয়া’কূব এর কথা; তারা ছিলো শক্তিশালী ও সূক্ষ্মদর্শী’’। (স্বাদ্ : ৪৫)
এ ব্যাপারে মানুষ চার ভাগে বিভক্ত:
১. যাদের ধর্মীয় জ্ঞানে পান্ডিত্য রয়েছে এবং এরই পাশাপাশি সত্য বাস্তবায়নের ক্ষমতাও রয়েছে। এরাই হচ্ছেন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ। এরা সংখ্যায় খুবই কম এবং এরাই দ্বীন-দুনিয়ার সার্বিক নেতৃত্বের একমাত্র উপযুক্ত।
২. যাদের ধর্মীয় জ্ঞান নেই এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষমতাও নেই। এরা সংখ্যায় খুবই বেশি।
৩. যাদের ধর্মীয় জ্ঞান রয়েছে ঠিকই তবে তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা খুবই ক্ষীণ। না সে নিজে তা বাস্তবায়ন করছে, না সে অন্যকে এর প্রতি দা’ওয়াত দিচ্ছে।
৪. যাদের যে কোন বিষয় বাস্তবায়নের ক্ষমতা তো রয়েছে ঠিকই তবে তার ধর্মীয় কোন জ্ঞান নেই।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ