Thursday, October 19, 2017

গুনাহ্’র বিভিন্ন অপকারঃ পর্ব-৯, আল্লাহ্ তা‘আলা ও আখিরাতমুখী পুণ্যময় পদযাত্রাকে শ্লথ করে দেয় এবং সে পথে বাধা তথা অন্তরায় সৃষ্টি করে !


আল্লাহ্ তা‘আলা ও আখিরাতমুখী পুণ্যময় পদযাত্রাকে শ্লথ করে দেয় এবং সে পথে বাধা তথা অন্তরায় সৃষ্টি করে


৩০. গুনাহ্ বান্দাহ্’র আল্লাহ্ তা‘আলা ও আখিরাতমুখী পুণ্যময় পদযাত্রাকে শ্লথ করে দেয় এবং সে পথে বাধা তথা অন্তরায় সৃষ্টি করে। কারণ, এ পদযাত্রা একান্ত আন্তরিক শক্তির উপরই নির্ভরশীল। আর একমাত্র গুনাহ্’র কারণেই উক্ত আন্তরিক শক্তি ধীরে ধীরে লোপ পায়। এমনকি তা কখনো কখনো সমূলেই বিনষ্ট হয়ে যায়। কারণ, গুনাহ্’র একান্ত বৈশিষ্ট্য এই যে, তা অন্তরকে নির্জীব, রোগাক্রান্ত অথবা দুর্বল করে দেয়। তখন সে ব্যক্তি আটটি সমস্যার সম্মুখীন হয় যেগুলো থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট একান্তভাবে আশ্রয় কামনা করেছিলেন। সেগুলো হচ্ছে চিন্তা, আশঙ্কা, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের চাপ ও মানুষের অপমান।

নি’য়ামতের পরিবর্তে আযাব নেমে আসে


৩১. গুনাহ্’র কারণে আল্লাহ্ তা‘আলার নি’য়ামতের পরিবর্তে আযাব নেমে আসে। কারণ, একমাত্র গুনাহ্’র কারণেই দুনিয়া থেকে আল্লাহ্ তা‘আলার নি’য়ামত উঠে যায় এবং সমূহ বিপদ নেমে আসে।
‘আলী (রাঃ) ইরশাদ করেন:
مَا نَزَلَ بَلَاءٌ إِلاَّ بِذَنْبٍ، وَلَا رُفِعَ إِلاَّ بِتَوْبَةٍ.
‘‘গুনাহ্’র কারণেই সমূহ বিপদ নেমে আসে এবং তাওবা’র কারণেই তা উঠিয়ে নেয়া হয়’’।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَمَآ أَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ»
‘‘তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে তা তো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো আল্লাহ্ তা‘আলা এমনিতেই ক্ষমা করে দেন’’। (শুরা’ : ৩০)


তা‘আলা গুনাহ্গারের অন্তরে ভীষণ ভয়-ভীতি ঢেলে দেন


৩২. গুনাহ্’র কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা গুনাহ্গারের অন্তরে ভীষণ ভয়-ভীতি ঢেলে দেন। সুতরাং গুনাহ্গার সর্বদা ভয়ার্ত থাকে। সামান্য বাতাস তার ঘরের দরোজা একটু করে নাড়া দিলেই অথবা সে কারোর পদধ্বনি শুনতে পেলেই বিপদের আশঙ্কা করে।


একাকীত্ব, ভয় ও ভয়ঙ্কর বিক্ষিপ্তভাব সৃষ্টি করে


৩৩. গুনাহ্ গুনাহ্গারের অন্তরে এক ধরনের একাকীত্ব, ভয় ও ভয়ঙ্কর বিক্ষিপ্তভাব সৃষ্টি করে। তখন তার মাঝে ও আল্লাহ্ তা‘আলার মাঝে এবং তার মাঝে ও অন্য মানুষের মাঝে ধীরে ধীরে এক ধরনের দূরত্ব জন্ম নেয়। তখন সে কারোর সান্নিধ্যে আগ্রহী হয় না। বরং তাদের সান্নিধ্যে সে সমূহ অকল্যাণের আশঙ্কা করে। গুনাহ্ যতই বাড়বে এ দূরত্বও ততই বৃদ্ধি পাবে।

অন্তরের সুস্থতার পরিবর্তে অসুস্থতা এবং স্থিরতার পরিবর্তে স্খলন বাড়িয়ে দেয়


৩৪. গুনাহ্ গুনাহ্গারের অন্তরের সুস্থতার পরিবর্তে অসুস্থতা এবং স্থিরতার পরিবর্তে স্খলন বাড়িয়ে দেয়। বাহ্যিক রোগ যেমন শরীরকে অসুস্থ করে তেমনিভাবে গুনাহ্ও অন্তরকে অসুস্থ করে। আর এ রোগের চিকিৎসা একমাত্র গুনাহ্ পরিত্যাগ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ঠিক এরই বিপরীতে যে নিজ প্রবৃত্তিকে দমন করতে পেরেছে সে যেমন পরকালে আল্লাহ্ চায় তো জান্নাতে থাকবে তেমনিভাবে এ দুনিয়াতেও সে জান্নাতে। কবরের জীবনেও সে জান্নাতে। কোন শান্তিকেই এ শান্তির সাথে তুলনা করা যায় না। বরং অন্য শান্তির তুলনা এ শান্তির সাথে এমন যেমন দুনিয়ার শান্তির সাথে আখিরাতের শান্তির তুলনা। আর সবারই এ কথা জানা যে, এতদুভয়ের মাঝে কোন তুলনাই হয় না। এ ব্যাপার শুধু ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউই অনুভব করতে পারবে না।
যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে ভালোবাসে সে এ দুনিয়াতে তিন প্রকারের শাস্তি ভোগ করে। সে জিনিস পাওয়ার আগে তা পাচ্ছে না বলে মানসিক শাস্তি, তা পাওয়ার পর হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কাগত শাস্তি এবং তা হাতছাড়া হয়ে গেলে বিরহের শাস্তি। কবরের জীবনেও তার জন্য অনেকগুলো শাস্তি রয়েছে। দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে বঞ্চিত হওয়ার শাস্তি, তা আর কখনো ফিরে আসবে না বলে আপসোসের শাস্তি এবং আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার শাস্তি। সুতরাং চিন্তা, আশঙ্কা ও আফসোস তার অন্তরকে সেখানে এমনভাবে ক্লান্ত করে তুলবে যেমনিভাবে কিড়া-মাকড় তার শরীরকে খেয়ে নষ্ট করে ফেলবে। আর জাহান্নামে তো তার জন্য হরেক রকমের শাস্তি রয়েছেই। যার কোন ইয়ত্তা নেই।

অন্তর্দৃষ্টি ও উহার বিশেষ আলোকরশ্মি নষ্ট হয়ে যায়


৩৫. গুনাহ্’র কারণে অন্তর্দৃষ্টি ও উহার বিশেষ আলোকরশ্মি নষ্ট হয়ে যায়। তখন জ্ঞানের পথগুলো তার জন্য একেবারেই রুদ্ধ হয়ে যায়। কারণ, গুনাহ্’র অন্ধকার সে আলোকে ঢেকে ফেলে। কখনো এ অন্ধকার গুনাহ্গারের চেহারায়ও ফুটে উঠে। এমনকি পরিশেষে এ অন্ধকার তার কবরে গিয়েও প্রতিভাত হয়।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِنَّ هَذِهِ الْقُبُوْرَ مَمْلُوْءَةٌ ظُلْمَةً عَلَى أَهْلِهَا، وَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُنَوِّرُهَا لَـهُمْ بِصَلَاتِيْ عَلَيْهِمْ.
‘‘এ কবরগুলো অধিবাসীদেরকে নিয়ে অন্ধকারে পরিপূর্ণ। আর আল্লাহ্ তা‘আলা আমার দো‘আয় তাদের জন্য তা আলোকিত করে দেন’’। (মুসলিম ৯৫৬)
কিয়ামতের দিন এ অন্ধকার গুনাহ্গারের চেহারায় আরো সুস্পষ্টরূপে ধরা পড়বে। যা তখন সবাই দেখতে পাবে। দেখতে কয়লার মতো দেখাবে।

অন্তরকে হীন, লাঞ্ছিত ও কলুষিত করে দেয়


৩৬. গুনাহ্ গুনাহ্গারের অন্তরকে হীন, লাঞ্ছিত ও কলুষিত করে দেয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا، وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا.
‘‘সে ব্যক্তিই একমাত্র সফলকাম যে নিজ অন্তরাত্মাকে (আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যের মাধ্যমে) পবিত্র করেছে এবং একমাত্র সে ব্যক্তিই ব্যর্থ যে নিজ অন্তরাত্মাকে (আল্লাহ্ তা‘আলার অবাধ্যতার মাধ্যমে) কলুষিত করেছে’’। (শাম্স : ৯-১০)

লেখক/সংকলকঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ