বড় শির্ক
শির্ক এ লিপ্ত যে কোন ব্যক্তিকে ইসলামের গন্ডী থেকেই বের করে দেয়। আল্লাহ্ তা‘আলা তাওবা ছাড়া এ ধরনের শির্ক কখনো ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেন:
«إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُّشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُ»
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা কখনো ক্ষমা করবেন না। তবে তিনি এ ছাড়া অন্যান্য সকল গুনাহ্ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করে দিবেন’’। (নিসা: ৪৮)
এ ধরনের শির্কে লিপ্ত ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম। জাহান্নামই হবে তার চিরস্থায়ী ঠিকানা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
«إِنَّهُ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ، وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ»
‘‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং জাহান্নামকে করেন তার চিরস্থায়ী ঠিকানা। আর এরূপ অত্যাচারীদের তখন আর কোন সাহায্যকারী থাকবে না’’। (মায়িদাহ: ৭২)
বড় শির্কগুলো সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নরূপ:
১. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে আহবান করার শির্ক।
২. বিপদের সময় একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর নিকট ফরিয়াদ করার শির্ক।
৩. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর নিকট আশ্রয় প্রার্থনার শির্ক।
৪. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর নিকট আশা ও বাসনার শির্ক।
৫. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর নিকট সাহায্য প্রার্থনার শির্ক।
৬. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য রুকু, সিজ্দাহ্, তার সামনে বিনম্রভাবে দাঁড়ানো, নামায ইত্যাদির শির্ক।
৭. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার ঘর কা’বাহ্ শরীফ ছাড়া অন্য কোন ঘর বা মাযারের তাওয়াফ করার শির্ক।
৮. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর নিকট তাওবাহ্ করার শির্ক।
৯. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য কোন পশু জবাইয়ের শির্ক।
১০. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য কোন কিছু মানত করার শির্ক।
১১. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর একচ্ছত্র আনুগত্য করার শির্ক।
১২. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে এককভাবে ভালোবাসার শির্ক।
১৩. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে এককভাবে ভয় করার শির্ক।
১৪. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরতা বা তাওয়াক্কুলের শির্ক।
১৫. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ কারোর জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
১৬. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কেউ কাউকে হিদায়াত দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
১৭. কবর পূজার শির্ক।
১৮. আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ সত্তা সহ সর্বস্থানে রয়েছেন এমন মনে করার শির্ক।
১৯. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও বিশ্ব পরিচালনায় অন্য কারোর হাত রয়েছে এমন মনে করার শির্ক।
২০. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কোন ব্যক্তি বা দল শরীয়তের বিশুদ্ধ কোন প্রমাণ ছাড়া নিজ মেধা ও বুদ্ধির আলোকে কোন জাতি বা সম্প্রদায়ের জন্য জীবন বিধান রচনা করতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
২১. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও কেউ কাউকে ধনী বা গরিব বানাতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
২২. কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার কাছ থেকে কেউ কারোর গুনাহ্সমূহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারবে এমন মনে করার শির্ক।
২৩. কিয়ামতের দিন কেউ কাউকে আল্লাহ্ তা‘আলার কঠিন আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে এমন মনে করার শির্ক।
২৪. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কোন গাউস-ক্বুতুব দুনিয়া, আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, লাওহ্, ক্বলম, ‘আর্শ, কুর্সী তথা সর্ব স্থানের সর্ব কিছু দেখে বা শুনে এমন মনে করার শির্ক।
২৫. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কেউ গায়েব জানে বা কখনো কখনো তার কাশ্ফ হয় এমন মনে করার শির্ক।
২৬. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কেউ কারোর অন্তরের লুক্কায়িত কথা বলে দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
২৭. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কেউ কাউকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
২৮. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কেউ কারোর অন্তরের সামান্যটুকু পরিবর্তন ঘটাতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
২৯. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার ঘর মসজিদ ছাড়াও অন্য কোন মাজারের খাদিম হওয়া যায় এমন মনে করার শির্ক।
৩০. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছা ছাড়াও অন্য কারোর ইচ্ছা স্বকীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
৩১. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও কেউ কাউকে সন্তান-সন্ততি দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
৩২. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও কেউ কাউকে সুস্থতা দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
৩৩. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার তাওফীক ছাড়াও কেউ ইচ্ছে করলেই কোন নেক আমল করতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
৩৪. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছা ছাড়াও কেউ কারোর কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
৩৫. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও কেউ কাউকে জীবন বা মৃত্যু দিতে পারে এমন মনে করার শির্ক।
৩৬. একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়াও অন্য কোন ব্যক্তি সর্বদা জীবিত রয়েছে বা থাকবে এমন মনে করার শির্ক।
ছোট শির্ক
ছোট শির্ক বলতে এমন কাজ ও কথাকে বুঝানো হয় যা তাতে লিপ্ত ব্যক্তিকে ইসলামের গন্ডী থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দিবে না বটে। তবে তা কবীরা গুনাহ্ তথা মহা পাপ অপেক্ষা আরো জঘন্যতম।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«فَلَا تَجْعَلُوْا لِلهِ أَنْدَادًا وَّأَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ»
‘‘সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করো না। অথচ তোমরা এ সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছো’’। (বাক্বারাহ্ : ২২)
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:
الْأَنْدَادُ هُوَ الشِّرْكُ أَخْفَى مِنْ دَبِيْبِ النَّمْلِ عَلَى صَفَاةٍ سَوْدَاءَ فِيْ ظُلْمَةِ اللَّيْلِ، وَهُوَ أَنْ تَقُوْلَ: وَاللهِ وَحَيَاتِكِ يَا فُلَانَةَ! وَحَيَاتِيْ، وَتَقُوْلَ: لَوْلَا كَلْبَةٌ هَذِهِ لَأَتَانَا اللُّصُـوْصُ، وَلَوْلَا الْبَطُّ فِيْ الدَّارِ لَأَتَىاللُّصُوْصُ، وَقَوْلُ الرَّجُلِ لِصَاحِبِهِ: مَا شَاءَ اللهُ وَشِئْتَ، وَقَوْلُ الرَّجُلِ: لَوْلَا اللهُ وَفُلَانٌ، لَا تَجْعَلْ فِيْهَا فُلَانًا، هَذَا كُلُّهُ بِهِ شِرْكٌ.
‘‘‘আন্দাদ্’’ বলতে এমন শির্ককে বুঝানো হচ্ছে যা অন্ধকার রাতে কালো পাথরে পিঁপড়ার চলন চাইতেও সূক্ষ্ম। যা টের পাওয়া খুবই দুরূহ। যেমন: তোমার এ কথা বলা যে, হে অমুক! আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তোমার ও আমার জীবনের কসম! অথবা এ কথা বলা যে, যদি এ কুকুরটা না হতো তা হলে (আজ রাত) চোর অবশ্যই আসতো। যদি ঘরে হাঁসগুলো না থাকতো তা হলে (আজ রাত) চোর অবশ্যই ঢুকতো অথবা কারোর নিজ সাথীকে এ কথা বলা যে, আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তুমি না চাইলে কাজটা হতো না অথবা কারোর এ কথা বলা যে, আল্লাহ্ তা‘আলা এবং অমুক না থাকলে কাজটা হতো না। অমুক শব্দটি সাথে লাগাবে না। (বরং বলবে: আল্লাহ্ তা‘আলা যদি না চাইতেন কাজটা হতো না)। কারণ, এ সব কথা শির্কের অন্তর্গত’’।
ছোট শির্কগুলো সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নরূপ:
১. কোন বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য সুতা বা রিং পরার শির্ক।
২. শির্ক মিশ্রিত মন্ত্র দ্বারা ঝাড়-ফুঁকের শির্ক।
৩. তাবিজ-কবচের শির্ক।
৪. শরীয়ত অসম্মত বস্ত্ত বা ব্যক্তি কর্তৃক বরকত গ্রহণের শির্ক।
৫. যাদুর শির্ক।
৬. ভাগ্য গণনার শির্ক।
৭. জ্যোতিষীর শির্ক।
৮. চন্দ্র বা অন্য কোন গ্রহের অবস্থানক্ষেত্রের পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি হয় এমন মনে করার শির্ক।
৯. আল্লাহ্ তা‘আলার যে কোন নিয়ামত অস্বীকার করার শির্ক।
১০. কোন প্রাণীর বিশেষ কোন আচরণে অমঙ্গলের আশংকা রয়েছে এমন মনে করার শির্ক।
১১. শরীয়ত অসম্মত কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তির ওয়াসীলা ধরার শির্ক।
১২. নামায ত্যাগের শির্ক।
১৩. আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তুমি না চাইলে কাজটা হতো না এমন বলার শির্ক।
১৪. আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর নামে কসম খাওয়ার শির্ক।
১৫. যুগ বা বাতাসকে গালি দেয়ার শির্ক।
১৬. কোন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ‘‘যদি এমন করতাম তা হলে এমন হতো না’’ বলার শির্ক।
১৭. কোন নেক আমল দুনিয়া কামানোর নিয়্যাতে করার শির্ক।
১৮. কোন নেক আমল আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কারোর সন্তুষ্টির জন্য করার শির্ক।
১৯. কোন নেক আমল কাউকে দেখানো বা শুনানোর জন্য করার শির্ক।
লেখক/সংকলকঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী
No comments:
Post a Comment