সুদ ও ভাড়া বা মজুরীর মাঝে পার্থক্য
আমরা
প্রথমেই একথা আলোচনা করেছি যে, সুদ অতিরিক্ত ও বাড়তি কিছুর নাম।
পক্ষান্তরে মজুরীর আভিধানিক অর্থ হল ‘সেবার বিনিময়ে দেয় পরিবর্ত বা অর্থ।’
আর ভাড়া বলে (সাময়িক ব্যবহারের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কালান্তরে দেয় অর্থ।
অর্থাৎ) সেই নির্দিষ্ট মুনাফার মূল্যকে ভাড়া বলা হয়, যার উপর উভয়পক্ষ
(ভাড়াদাতা ও গ্রহীতা) আপোসে চুক্তি করে নেয়। বুঝা গেল যে, মজুরী বা ভাড়া
এবং মুনাফা (উপকার লাভ) এর মাঝে রয়েছে ঘনিষ্ট সম্পর্ক। আল্লামা ইবনে কুদামা
(রাহিমাহুল্লাহু) বলেন, ‘ইজারাহ’ ‘আজ্র’ মূলধাতু থেকে উৎপত্তি। যার অর্থ
হল বিনিময় বা পরিবর্ত। এই অর্থেই সওয়াব বা নেকীকে ‘আজ্র’ বলা হয়। যেহেতু
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তাঁর আনুগত্যের বিনিময়ে বদলা বা মজুরী দান করেন।
এ থেকে পরিষ্কার হল যে,
মজুরী বা ভাড়া
সেই বিনিমেয় অর্থকে বলা হয়, যা বৈধ মুনাফা বা উপকার লাভের পরিবর্তে দেওয়া
হয়। অবশ্য সে মুনাফা বা উপকার কোন ব্যক্তির সেবা বা পরিশ্রমের মাধ্যমে লাভ
হবে অথবা এমন কোন ভোগ্য বা ব্যবহার্য জিনিসের মাধ্যমে লাভ হতে পারে যা
ব্যবহার করে উপকৃত হওয়া সম্ভব; পরন্তু ব্যবহারের পর এ জিনিসের আসল অবশ্যই
বাকী থেকে যায়। এই দ্বিতীয় অর্থ থেকেই গৃহীত হয়েছে সুদকে বৈধ করার মতবাদ।
এর সমর্থকরা এইভাবে প্রমাণ করে যে, সুদ হল ঋণগ্রহীতাকে দেওয়া টাকার ভাড়া,
যে টাকা দ্বারা সে মুনাফা বা উপকার লাভ করে থাকে।
(অতএব বাড়ি বা অন্য কিছু ভাড়া দিয়ে যেমন
তার ভাড়া বা কেরায়া খাওয়া বৈধ অনুরূপ টাকা খাটিয়ে তার সুদ গ্রহণও বৈধ।)
সুতরাং সুদ ও ভাড়ার মাঝে নীতিগত পার্থক্য জানা আবশ্যিক। নিম্নলিখিত
বিষয়সমূহে সুদ ভাড়া বা মজুরী থেকে যে স্বতন্ত্রতা স্পষ্ট হয়ে যায়।
১- মজুরী বা ভাড়া এবং সুদী ঋণের মধ্যে
পার্থক্য এই যে, প্রথমটির ক্ষেত্রে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার কোন সম্পর্ক থাকে
না বরং তাতে থাকে মজুর ও যে মজুর খাটায় এই উভয়েই সম্পর্ক। অনুরূপ মজুরী এবং
বাণিজ্যিক সুদের মাঝে পার্থক্য এটাও যে, মজুরীতে দু’টি মালের পরস্পর
বিনিময় হয় না; বরং তাতে মাল অর্থাৎ মজুরী ও কাজ তথা মুনাফা বা উপকার বিনিময়
হয়। (পক্ষান্তরে সুদে হয় মাল দিয়ে মালের বিনিময়।)
২- কোন জিনিস ব্যবহার করে উপকৃত হওয়া এবং
তার জন্য ভাড়া দেওয়ার শর্ত হল এই যে, ব্যবহার করার পর তার মূল ও আসল যেন
নষ্ট হয়ে না যায়। যেমন আলোর জন্য মোমবাতি ভাড়া দেওয়া এবং তার উপর ভাড়া
নেওয়া বৈধ নয়। আর দেওয়া টাকার মূল বা আসল (উপাদান) ঋণে অবশিষ্ট থাকে না।
অবশ্য তার মূল্য অবশিষ্ট থাকে কিন্তু তার আসল (উপাদান) নষ্ট হয়ে যায়।[1]
No comments:
Post a Comment