সূদের ঘূর্ণাবর্ত থেকে বাঁচার উপায়
আমার
প্রিয় ভাই! এখন আপনাকে সেই উপায় ও পথের সন্ধান বলে দিই, যা অবলম্বন করলে
আপনি সূদের বিপদজনক ঘূর্ণাবর্ত থেকে উদ্ধার পেতে সক্ষম হবেন। আল্লাহ তাআলা
আমাদেরকে ও আপনাকে সেই তওফীকই দান করুন এবং তাঁর শরীয়ত অনুযায়ী আমল করাকে
আমাদের পক্ষে সহজ করে দিন। আমীন।
১- সূদ নেওয়া ও দেওয়ার মাঝে পার্থক্য
সূদ
নেওয়া এবং দেওয়ার মাঝে পার্থক্য আছে। উভয় কর্ম একই পর্যায়ভুক্ত নয়। কেননা
নিরুপায় অবস্থায় সূদভিত্তিক ঋণ নিতে বহু মানুষই বাধ্য হতে পারে। সুতরাং
যদি
এমন কোন বিপদ ও প্রয়োজন দেখা দেয় যার কারণে সূদের উপর ঋণ নেওয়া ছাড়া আর
কোন উপায় থাকে না অথবা জান বা ইজ্জতের পক্ষে এমন ক্ষতিকর অসুবিধা এসে দেখা
দেয়, যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঋণের প্রয়োজন হয় এবং সূদ ছাড়া ঋণই না পাওয়া
যায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে একজন গত্যন্তরহীন মুসলিমের জন্য সূদভিত্তিক ঋণ
নেওয়া বৈধ। পক্ষান্তরে সূদ খাওয়ার জন্য বাস্তবপক্ষে কোনই নিরুপায় অবস্থা
নেই। সূদ তো কেবল ধনী লোকই গ্রহণ করে থাকে। আর ধনী লোকেরা এমন কোন্
গত্যন্তরহীন অবস্থায় পড়তে পারে যে, যার ফলে তার জন্য সূদ হালাল হয়ে যাবে?২- প্রয়োজনের সীমা নির্ধারণ
সূদী
ঋণ নেওয়ার জন্য প্রত্যেক ‘প্রয়োজন নিরুপায়’ অবস্থার সংজ্ঞায় পড়ে না।
সুতরাং বিবাহ-শাদীতে ধুমধাম করার লক্ষ্যে অপব্যয় করা, আরাম-আয়েশ ও
বিলাস-সামগ্রী ক্রয় করা অথবা কোন ব্যবসা বা কারবারকে অপেক্ষাকৃত উন্নততর
করার মানসে অর্থ সংগ্রহ করা এবং এই ধরনের আরো অন্যান্য (অজরুরী) বিষয় যাকে
‘প্রয়োজনীয় ও নিরুপায় অবস্থা’ বলে আখ্যা দেওয়া হয় এবং যার জন্য হাজার হাজার
টাকা মহাজন (বা ব্যাংকের) নিকট ঋণ নেওয়া হয়, তা প্রকৃতপক্ষে কোন প্রয়োজনীয়
ও গত্যন্তরহীন কর্ম ও বিষয় নয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে ঐ শ্রেণীর ওজরের কোন
গুরুত্বই নেই। তাই এ সকল কাজের জন্য যারা ঋণ নিয়ে সূদ দিয়ে থাকেন, তারা
বিরাট গোনাহগার হবেন। শরীয়ত যদি কোন উপায়হীন অবস্থায় সূদ ভিত্তিক ঋণ
নেওয়াতে অনুমতি দেয়, তাহলে তা কেবল সেই নিরুপায় অবস্থায়, যখন হারাম ভক্ষণ
করা হালাল হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন:
﴿ِلاَّ مَا اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ﴾
অর্থাৎ, যে ব্যাপারে তোমরা নিরুপায় হয়ে যাও তার কথা স্বতন্ত্র। (তখন হারাম হারাম নয়।)[1]
এখানে সেই সকল সামর্থ্যবান মুসলমানরাও
গোনাহগার হবেন, যাঁরা বিপদকালে নিজেদের একজন ভাইকে (বিনা সূদে ঋণ দিয়ে)
সাহায্য না করে তাকে (সূদী ঋণ নিয়ে) হারাম কাজ করতে বাধ্য করে থাকেন। বরং
আমার মতে এই গোনাহর বোঝা সমগ্র মুসলিম জাতির ঘাড়েই চেপে বসবে; কারণ তারা
যাকাত, সদকাহ, ওয়াক্ফ প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক ফান্ডের ব্যাপারে বড় উদাসীন।
যার তিক্ত ফলস্বরূপ সেই জাতিরই সদস্যরা অসহায় অবলম্বনহীন হয়ে নিজেদের
অভাবের তাড়নায় সর্বগ্রাসী মহাজনদের সম্মুখে হাত পাতা ছাড়া আর কোন পথ দেখতে
পায় না।
ফুটনোটঃ[1] (সূরা আল-আনআম ১১৯ আয়াত)
৩- প্রয়োজনের তীব্রতা অনুপাতে প্রয়োজনের সীমা নির্ধারণ
অতিশয়
নিরুপায় অবস্থাতেও কেবল প্রয়োজনের পরিমাণ অনুপাতে সূদী ঋণ করা যেতে পারে।
(অর্থাৎ প্রয়োজনের অধিক টাকা ঋণ করা যাবে না।) পরন্তু সামর্থ্য আসার সাথে
সাথেই সর্বাগ্রে ঋণ পরিশোধ করে সূদ থেকে নিস্কৃতি লাভ করা জরুরী। কারণ
প্রয়োজন পূরণ হওয়ার পর সূদ হিসাবে একটি পয়সাও দেওয়া নিশ্চিত হারাম।
বাকী থাকল এই প্রশ্ন যে, ‘প্রয়োজন অতীব
কিনা? অতীব হলে তার পরিমাণ কতটা? কোন্ সময় সে প্রয়োজন দূরীভূত হবে?---’
সুতরাং এসবের উত্তর অভাবী ব্যক্তির বিবেক এবং দ্বীনদারী অনুভূতির উপর
নির্ভরশীল। মানুষ যত বেশী দ্বীনদার এবং তার ঈমান যত বেশী মজবুত হবে, তত
বেশী সে এ ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধান হবে।
৪- শুধুমাত্র নিজের ধনকে ধন মনে করুন
যারা
বাণিজ্যিক অসুবিধার কারণে অথবা নিজের ধন মালের হেফাযত ও সংরক্ষণার্থে
ব্যাংকে টাকা রাখতে বাধ্য হন তাঁদের জন্য আবশ্যক হল, কেবল মাত্র জমা করা
মূলধনকে নিজের ধন মনে করা এবং এ মূলধন থেকে বার্ষিক আড়াই শতাংশ হিসাবে
যাকাত আদায় করা। কারণ এ ছাড়া অবশিষ্ট বেজন্মা অর্থরাশি তাঁদের জন্য নাপাক।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُؤُوسُ أَمْوَالِكُمْ﴾
অর্থাৎ, যদি তোমরা (সূদ খাওয়া হতে) তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদের। [1]
No comments:
Post a Comment