ব্যাংকের শরয়ী নিয়ম-পদ্ধতি
ব্যাংকের
সম্বন্ধ থাকে দ্বিপাক্ষিক; এক পক্ষের সম্বন্ধ সেই লোকদের সাথে থাকে, যারা
নিজেদের টাকা তাতে জমা রাখে। আর দ্বিতীয় পক্ষের সম্বন্ধ সেই লোকেদের সহিত
থাকে, যাদের জন্য ব্যাংক পুঁজি সরবরাহ এবং অর্থসংস্থান করে থাকে। এই উভয়
প্রকার সম্বন্ধ নিয়ে পৃথক পৃথক আলোচনা করা আবশ্যকঃ
ব্যাংক এবং ডিপোজিটারের সম্বন্ধ
বর্তমান
অর্থ-ব্যবস্থায় ব্যাংকে যে অর্থ জমা রাখা হয় তাকে ব্যাংকের পরিভাষায়
‘আমানত’ বলা হয়। কিন্তু ইসলামী ফিকহী দৃষ্টিতে তা হল বাস্তবিক ঋণ। এবারে
যদি ব্যাংককে ইসলামী নীতি অনুসারে চালানো যায়, তাহলে আমানতকারীদের সাথে
ব্যাংকের সম্পর্ক হবে পার্টনারশিপ অথবা ‘মুযারাবাহ’র। এই নিয়মে জমা রাখা এ
অর্থ ঋণ গণ্য হবে না; বরং তার পজিশন এই দাঁড়াবে যে, টাকা জমাকর্তা
(আমানতকারী) হবে টাকার মালিক এবং
ব্যাংক হবে তার মুযারিব (ব্যবসাকারী)। আর
বিনিয়োজিত অর্থ মূলধন হবে; যার উপর ব্যাংক কোন নির্দিষ্ট হারে মুনাফা দিতে
বাধ্য থাকবে না। বরং ব্যবসায় যেটুকু পরিমাণেই লাভ অর্জিত হবে, সেইটুকু লাভই
পূর্বচুক্তি অনুসারে (যেমন, এক চতুর্থাংশ বা এক তৃতীয়াংশ) হার অনুপাতে
উভয়ের মধ্যে ভাগাভাগি হবে।
কারেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে আজকালের সূদী
ব্যাংকগুলোও আমানতকারীকে কোন সূদ আদায় করে না। ইসলামী ব্যাংকেও অনুরূপভাবে
এ একাউন্টে রাখা টাকার উপর কোন মুনাফা দেওয়া হবে না। আর আমানতকারীর
কারেন্ট একাউন্টে রাখা টাকা ব্যাংকের জন্য বিনা সূদের ঋণ বলে ধরা হবে। তবে
অন্যান্য কল্যাণকর আমানত ‘মুযারাবাহ’ অথবা ‘শির্কত’ (পার্টনারশিপ) কারবারে
পরিগণিত হবে।
ব্যাংকের পার্টনারশিপ ও মুযারাবাহ
কারবারে উপার্জিত মুনাফা ভাগবন্টনের পদ্ধতি এরূপ হবে যে, অংশীদারদিগকে
তাদের নিজ নিজ ইচ্ছামত বিশেষ নিয়ম-শৃঙ্খলার ভিত্তিতে ব্যাংকে টাকা রাখার
অথবা তা হতে টাকা তোলার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে। কিন্তু যখন শির্কতের
একটি নির্ধারিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে, তখন দেখতে হবে যে, সেই সময়ের মধ্যে কত
টাকা কত দিন যাবৎ ব্যাংকে ছিল এবং তার প্রত্যেক টাকায় দৈনিকহারে মুনাফার গড়
হিসাব কত? অতঃপর যে ব্যক্তির যত টাকা এ নির্ধারিত মেয়াদের যতদিন ব্যাংকে
থাকবে, ততদিন হিসাবে সেই ব্যক্তিকে তার লভ্যাংশ প্রদান করা হবে।
No comments:
Post a Comment