তাওবা করা থেকে ফিরানোর হুমকি
আমি
তাওবা করতে চাই কিন্তু আমার পুরাতন বন্ধুরা আমাকে হুমকি দিচ্ছে, তারা
আমার কুকীর্তি মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিবে এবং আমার গোপনীয় কার্যক্রম
প্রকাশ করে দিবে। তাদের নিকট প্রমাণপত্র ও ছবি রয়েছে। আমি আমার মর্যাদার
ব্যাপারে ভীত, শংকিত।
আমি বলছি, আপনি শয়তানদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম
করুন। নিশ্চয় শয়তানদের চক্রান্ত খুবই দুর্বল। যারা আজ আপনার বিরুদ্ধে
ঐক্যবদ্ধ এসব শয়তান ও তার দোসরদের চাপ থেমে যাবে অতঃপর খুব শীঘ্রই তারা
পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং মুমিনের ধৈর্য ও দৃঢ়তার সামনে তারা পরাজিত
হবেই।
আপনি নিশ্চিত থাকুন যে, আপনি যদি তাদের
কথা মত চলেন, তাদের কাছে মাথা নত করেন তাহলে তারা আরো বেশী বেশী প্রমাণ
আপনার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চেষ্টা করবে। সুতরাং পূর্বে ও পরে সর্বাবস্থায়
আপনিই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অতএব তাদের অনুসরণ না করে আল্লাহর সাহায্য চান এবং
বলুন:
‘‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই
উত্তম অভিভাবক।’’ (সূরা আলে ইমরান: ১৭৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতির আশংকা করতেন তখন বলতেন:
(اللَّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُورِهِمْ وَنَعُوذُبِكَ مِنْ شُرُورِهِمْ) (مسند أحمد، أبو داود، صحيح الجامع)
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনাকে তাদের গলার উপর
ছেড়ে দিচ্ছি এবং আপনার নিকট পরিত্রাণ চাচ্ছি তাদের খারাপী থেকে।’’ (আহমাদ,
আবু দাউদ, জামে’ সহীহ ৪৫৮২)
একথা সত্য যে, অবস্থানটি খুবই কঠিন ঐ
বেচারার জন্য যে তাওবা করেছে, তার সাথে তার খারাপ বন্ধুরা যোগাযোগ করে তাকে
হুমকি দিয়ে বলে তোমার কথা আমরা রেকর্ড করে রেখেছি, তোমার ছবিও আমাদের নিকট
রয়েছে, তুমি যদি আমাদের সাথে বের না হও তাহলে তোমার পরিবারের নিকট সব ফাঁস
করে দিবো! একথা সঠিক যে, আপনার অবস্থান খুবই নাজুক।
দেখুন শয়তানের দোসরদের যুদ্ধ সেই সব গায়ক
গায়িকা, নায়িকাদের বিরুদ্ধে যারা তাওবা করেছে। তারা তাদের খারাপ
প্রোডাক্টগুলোকে বাজারজাত করে তাদের উপর চাপ দেয়ার জন্য এবং মানসিক
দ্বন্দ্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে। কিন্তু আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে রয়েছেন,
তাওবাকারীদের সাথে রয়েছেন এবং তিনি মুমিনদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত
করবেন না এবং তাদেরকে ছেড়ে দিবেন না। তাঁর নিকট কোন বান্দা আশ্রয় নেয়ার পর
কখনো অপমানিত হয়না। আপনি জেনে রাখুন, নিশ্চয় কঠিন অবস্থার সাথেই সহজ
অবস্থা আসে এবং সংকীর্ণতার পরেই প্রশস্ততা আসে।
হে তাওবাকারী ভাই!
আপনার জন্য এই ঘটনাটি উল্লেখ করছি যা
আমাদের কথার যথার্থতা প্রমাণ করবে। ঘটনাটি হলো, প্রখ্যাত ফেদায়ী (গেরিলা)
সাহাবী মারসাদ বিন আবিল মারসাদ আল গানাবীর, যিনি দুর্বল মুসলমানদেরকে মক্কা
থেকে গোপনে মদ্বীনায় নিয়ে আসতেন। তিনি মক্কা থেকে দুর্বল বন্দী লোকদের
গোপনে মদ্বীনায় পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করতেন।
মক্কায় একজন নষ্টা মহিলা ছিল যার নাম আনাক
এবং সে ছিল তার বান্ধবী। তিনি মক্কার একজন বন্দী লোককে ওয়াদা দিয়েছিলেন
মদ্বীনায় পৌছে দেয়ার। তিনি বলেন, এক চাঁদনী রাতে আমি মক্কার এক দেয়ালের পাশ
দিয়ে যাচ্ছিলাম। আনাক আমার ছায়া দেখে এগিয়ে আসে এবং বলে, মারসাদ? আমি
বললাম হাঁ, মারসাদ। সে বললো, মারহাবা, স্বাগতম, এস আমার কাছে রাত কাটাও।
আমি বললাম, হে আনাক! আল্লাহ ব্যভিচারকে হারাম করেছেন। সে তখন চিৎকার দিয়ে
বলে উঠলো, হে তাবুবাসীরা! এই লোকটি তোমাদের বন্দীদেরকে নিয়ে ভাগতে চায়।
তিনি বলেন, আটজন লোক আমার পিছু নেয় এবং
আমি তখন খান্দামা পাহাড়ে (মক্কার প্রবেশ পথের একটি পাহাড়) ঢুকে পড়ে এক
গুহায় লুকিয়ে যায়, এরা আমার সন্ধানে আমার কাছে এসে পড়ে, কিন্তু আল্লাহ
আমাকে এদের থেকে আড়াল করে রাখেন। তিনি বলেন, এরপর তারা ফিরে যায় এবং আমিও ঐ
লোকটির নিকট গিয়ে তাকে বহন করে নিয়ে আসি। লোকটি ছিল বেশ ভারী, আমার অনেক
কষ্ট হয়ে ছিল। তাকে কিছু দূরে বয়ে নিয়ে গিয়ে তার হাত পায়ের বাঁধন খুলে
ফেলি। আমি অনেক কষ্টে তাকে মদ্বীনায় নিয়ে আসি। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি
আনাককে বিয়ে করতে পারি? (কথাটি দুবার বললাম) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে থাকলেন কোন জবাব দিলেন না। তখন এ আয়াত নাযিল
হয়: ‘‘ব্যভিচারী পুরুষ ব্যভিচারিণী মহিলাকেই বিয়ে করে অথবা মুশরিকা
মহিলাকে এবং ব্যভিচারিণী মহিলা ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিক লোককেই বিয়ে
করে থাকে।’’ (সূরা আন্নূর: ৩)
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, হে মারসাদ! ব্যভিচারী পুরুষই কেবল ব্যভিচারিণীকে অথবা
মুশরিকা মহিলাকে বিয়ে করে থাকে এবং ব্যভিচারিণী মহিলাও একমাত্র ব্যভিচারী
পুরুষ অথবা মুশরিক লোককে বিয়ে করে থাকে, সুতরাং তুমি তাকে বিয়ে করো না।
(তিরমিযী ৩/৮০)
আপনি দেখলেন কিভাবে আল্লাহ তা’আলা
ঈমানদারের পক্ষে প্রতিরোধ গড়লেন এবং তিনি মুহসিনদের (সৎকর্ম পরায়ণদের অথবা
সৎকর্মশীল লোকদের) সাথে কি আচরণ করলেন? অবস্থা যদি খুবই খারাপ হয় যে, আপনি
যা আশংকা করছেন তাই ঘটে আর এর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলে আপনি আপনার
অবস্থান বর্ণনা করুন, স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন এবং বলুন, হ্যাঁ, আমি পাপ
করতাম। এখন আল্লাহর নিকট তাওবা (প্রত্যাবর্তন) করেছি? এখন তোমরা কি চাও?
আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, প্রকৃত
কেলেঙ্কারী তো হলো আল্লাহর সামনে কিয়ামতের দিনের কেলেঙ্কারী। সেই ভয়ানক
দিনে যেদিন একশ, দু’শ, হাজার, দু’হাজার লোকের সমানে নয় বিশ্বের মানুষের
সামনে, সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে, ফেরেশতা, জিন ও ইনসান সবার সামনে হযরত আদম
থেকে শুরু করে দুনিয়ার সর্বশেষ মানুষের সামনে।
আসুন আমরা হযরত ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’আ পাঠ করি: ‘‘যেদিন
সকলকে উত্থাপিত করা হবে সেদিন আমাকে লাঞ্ছিত করো না। যেদিন কোন ধন-সম্পদ ও
সন্তান-সন্ততি কাজে আসবে না। একমাত্র কাজে আসবে যে সঠিক অন্তঃকরণ নিয়ে
উপস্থিত হবে।’’ (সূরা আশশুয়ারা: ৮৭-৮৯)
সংকট মুহূর্তে নবীর শেখানো দু’আ পড়ে নিজেকে হেফাজত করুন:
(اللَّهُمَّ اسْتُرْ
عَوْرَاتِنَا وَآمِنْ رَوْعَاتِنَا، اللَّهُمَّ اِجْعَلْ ثَأْرَنَا عَلَى
مَنْ ظَلَمَنَا، وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ لاَ
تُشْمِتْ بِنَا الأَعْدَاءَ وَلاَ الْحَاسِدِيْنَ)
‘‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ইজ্জত রক্ষা
করুন এবং আমাদের নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিশোধ তাদের উপর ফেলুন
যারা আমাদের উপর জুলুম করেছে এবং আমাদেরকে সাহায্য করুন তাদের বিরুদ্ধে
যারা আমাদের উপর চড়াও করেছে। হে আল্লাহ! আমাদের শত্রুদেরকে ও হিংসুকদেরকে
আমাদের বিরুদ্ধে খুশি হতে দিয়েন না।’’
No comments:
Post a Comment