(৫১৫) জনৈক নারী মুযদালিফা থেকে শেষ রাত্রে যাত্রা করেছে। এবং সামর্থ থাকা সত্বেও নিজের ছেলেকে তার পক্ষ থেকে কঙ্কর নিক্ষেপের দায়িত্ব প্রদান করেছে। এর বিধান কি?
হজ্জের
কার্যাদির মধ্যে অন্যতম কাজ হচ্ছে কঙ্কর নিক্ষেপ করা। কেননা নবী
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাজের নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজে কঙ্কর
নিক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেন,
إِنَّمَا جُعِلَ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْيُ الْجِمَارِ لِإِقَامَةِ ذِكْرِ اللَّهِ
“আল্লাহর ঘরের তওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সাঈ ও
জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ প্রভৃতির লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠা করা।”
এটি একটি ইবাদত। মানুষ এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করবে। তাঁর
যিকিরকে প্রতিষ্ঠিত করবে। যেহেতু
এটার ভিত্তি শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতের
উপর, তাই উচিৎ হচ্ছে, কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহর জন্য ভীত হবে ও বিনয়াবনত
হবে। তবে প্রথম সময়েই তাড়াহুড়া করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে যাবে না; বরং দেরী
করে শেষ সময়ে নিক্ষেপ করবে। অবস্থাভেদে সিদ্ধান্ত নিবে। শেষ সময়ে যদি
প্রশান্তি, ধীরস্থিরতা, বিনয় ও অন্তরের উপস্থিতির সাথে নিক্ষেপ করা যায়,
তবে দেরী করাই উত্তম। কেননা এটা এমন বৈশিষ্ট যা ইবাদতের বিশুদ্ধতার সাথে
সংশ্লিষ্ট। আর যে বৈশিষ্ট ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট তা ইবাদতের সময় ও স্থানের
উপর অগ্রগণ্য। এ কারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَا صَلاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ وَلا هُوَ يُدَافِعُهُ الأَخْبَثَانِ
“খাদ্য উপস্থিত হলে এবং দু’টি নাপাক বস্তর
(পেশাব-পায়খানার) চাপ থাকলে নামায নেই।” অর্থাৎ- প্রাকৃতিক প্রয়োজন
মেটানোর জন্য এবং মনের চাহিদা পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য মানুষ নামাযকে
প্রথম সময় থেকে বিলম্ব করে আদায় করবে। অতএব কঙ্কর মারার জন্য প্রথম সময়ে
যদি ভীড়ের কারণে বেশী কষ্ট হয়, কঙ্কর মারার চাইতে নিজের জান বাঁচানোর দায়
বেশী হয়, আর বিলম্বে কঙ্কর মারলে যদি প্রশান্তির সাথে অন্তর উপস্থিত রাখা
যায়, বিনয় ও নম্রতার সাথে এই ইবাদত করা যায়, তবে বিলম্বে কঙ্কর মারাই
উত্তম। এজন্য নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারের দুর্বল
লোকদেরকে শেষ রাতেই মুযদালিফা ছেড়ে চলে যেতে অনুমতি দিয়েছিলেন। যাতে করে
তারা ভীড়ের মধ্যে পড়ে কষ্ট না পায়।
অতএব একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, নারী হোক
বা পুরুষ হোক সামর্থবান হলে কাউকে কঙ্কর মারার দায়িত্ব দেয়া জায়েয নয়।
নিজেই কঙ্কর মারার ইবাদতটি পালন করা ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ বলেন, “তোমরা
আল্লাহর জন্য হজ্জ ও ওমরা পূর্ণ কর।” এতে নারী-পুরুষে কোন পার্থক্য নেই।
তবে কোন পুরুষ বা নারী অসুস্থ হয় বা নারী গর্ভবতী হয় এবং ভীড়ের মধ্যে গেলে
গর্ভের ক্ষতি হওয়ার আশংকা করে, তবে তারা যে কাউকে কঙ্কর মারার দায়িত্ব দিতে
পারে।
প্রশ্নে উল্লেখিত যে নারী সামর্থ থাকা
সত্বেও নিজের ছেলেকে দিয়ে কঙ্কর মারিয়েছে- আমি মনে করি ওয়াজিব পরিত্যাগ
করার কারণে সতর্কতা বশতঃ সে একটি কুরবানী করবে এবং তা মক্কার ফকীরদের মাঝে
বন্টন করে দিবে।
No comments:
Post a Comment