আল্লাহর জন্য হারাম ত্যাগ- বনাম ভালবাসার মানুষের জন্য হারাম ত্যাগঃ”

আল্লাহর জন্য হারাম ত্যাগ- বনাম ভালবাসার মানুষের জন্য হারাম ত্যাগঃ” : মানুষ এর প্রতিটি কাজ তার নিয়ত এর উপর নির্ভরশীল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, "অবশ্যই মানুষের কাজ তার নিয়ত এর উপর নির্ভর করে। মানুষ তাই পাবে যা সে নিয়ত করে।" (বুখারী, মুসলিম) . এই দুনিয়াবি জীবনে মানুষ আপনার নিয়ত বা চেষ্টা দেখে না, শুধু দেখে রেজাল্ট; আপনি কতটুকু সফল বা বিফল। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা অনেক মহান, যিনি আমাদের মনের নিয়ত দেখবেন, নিয়ত অনুসারে পুরষ্কার দিবেন। তাই আমাদের যেকোনো ভাল কাজের নিয়ত, যেকোনো হারাম ত্যাগ করার নিয়ত শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য হওয়া উচিত, কোনো প্রিয় বা ভালবাসার মানুষকে খুশি করার জন্য বা তার মন পাওয়ার জন্য নয়। . যে কাজ মানুষ আল্লাহকে খুশি করার নিয়ত ব্যতীত অন্য
কোনো মানুষকে খুশি করার উদ্দেশ্যে করে, তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কারণ একজন মানুষকে ফাঁকি দেয়া অনেক সহজ কিন্তু আল্লাহকে আমরা কোন অবস্থাতেই ফাঁকি দিতে পারব না। . চলুন আমাদের আশেপাশের কিছু বাস্তব উদাহরণ দেখে আসিঃ- . অনেক পরিবারে দেখা যায় বাবা-মা ইসলামের সঠিক ধারণা না দিয়েই জোর করে মেয়ের উপর বোরখা চাপিয়ে দেয়, পরবর্তিকালে যখন সে একটু বাবা-মা'র আয়ত্তের বাইরে চলে যায় বা কোন মোডারেট মুসলিম ছেলের সাথে বিয়ে হয়, তখন সেই জমে থাকা চাপ একেবারে বিস্ফারিত হয়। তারা বোরখা ছেড়ে একেবারে সাধারণ মেয়েদের মত চলে, কখনো বা অকেশনালি হিজাব পরে বা একেবারেই পরে না। কিন্তু সে যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কেন আমার জন্য পর্দা ফরয করেছেন, এটা বুঝে, এই ভালবাসা থেকে পর্দা শুরু করতো, তাহলে হয়ত এমনটা হত না। . অনেক ছেলেকেই দেখা যায় গার্লফ্রেন্ড বা বউ বা সন্তানাদি, কখনো বা শারিরীক অবস্থার অবনতির কারণে ডাক্তারের পরামর্শে সিগারেট ছাড়ে। কিন্তু তারাই আবার খুব সহজে বউ বা সন্তান এর আড়ালে সিগারেট ফুঁকে। কারণ মানুষকে ফাঁকি দেয়া কঠিন কিছু না। কিন্তু যে ছেলেটি শুধু এবং শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই সিগারেট ছেড়েছে, সে কিন্তু একা একটা বদ্ধ ঘরে থাকলেও সিগারেট খাবে না। . তাই আমাদের নিয়তটা অনেক বেশি জরুরি! মানুষকে খুশি করা জীবনের উদ্দেশ্য না, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিই সকল কাজ এর একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এতেই আমাদের ইহকালীন এবং পরকালীন মঙ্গল নিহিত। . আল্লাহ আমাদের খাওয়ার জন্য চারদিকে কতই না হালাল খাবার দিয়েছেন। তারপরও একটুখানি সাময়িক ভাল লাগার জন্য মানুষ হারাম খাবার খায়। কিই বা আসে যায় আল্লাহ তা'আলার খুশির জন্য হারাম না খেলে! . রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যদি তুমি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করো, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এর বিনিময়ে তোমাকে এমন কিছু দান করবেন, যা তোমার ছেড়ে দেয়া বস্তু থেকে অনেক উত্তম হবে।" (মুসনাদে আহমাদ, হাদিসের মানঃ সহীহ) . দুনিয়াটা একটা পরীক্ষা। কিন্তু সবার পরীক্ষা এক রকম নয়। যার পরীক্ষা যত বেশি, তার তো সেই পরীক্ষা পাশ করে পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। যে হারাম কাজ করতে মানুষ এর বেশি ইচ্ছা করে, অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র আল্লাহর খুশির জন্য সেটা ত্যাগ করে, তার জন্য পুরস্কারও ততটাই বেশি। . যে মানুষটা সব অমুসলিমদের সাথে কাজ করে, অফিসিয়াল ডিনারে যায় কলিগদের সাথে, যেখানে কিনা Buffet এর ২০/২৫ টা আইটেম এর মধ্যে মাত্র ১/২ টা হালাল আইটেম পায় আর তা দিয়েই ডিনার সারে, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কলিগদের মন রক্ষার্থে বা সামাজিকতা রক্ষার জন্য নয়-তার পুরস্কার তো তাদের চেয়ে বেশিই হবে, যারা এই পরীক্ষায় পাশ করতে পারে না বা যাদের জীবনে এমন কোনো পরীক্ষাই কোনো দিন আসেনি। তাই চলুন এমন পরীক্ষা গুলো জীবনে কাজে লাগাই। . চলুন নিয়ত শুদ্ধ করে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই সিগারেট ছাড়ি, বউ বা সন্তানের জন্য নয়। পর্দা ফরয-তাই শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই আল্লাহকে ভালোবেসে, আল্লাহর হুকুমকে ভালোবেসে পর্দা করি; বাবা-মা'র বকার ভয়ে নয়। শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই হালাল উপার্জন করি, সামাজিক চাপে বা স্ট্যাটাস রক্ষার্থে নয়। শুধুমাত্র রাসূলের (সাঃ) সুন্নাতকে আদর্শ মেনেই দাড়ি রাখি, লোক দেখানোর জন্য নয়! . কেননা মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ীই পুরস্কার পাবে। কোনো মানুষকে খুশি করা বা তাদের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়ার জন্য নয়; আল্লাহ তা'আলা যেন আমাদের অন্তর পরিষ্কার করে শুধুমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্যই সকল কাজ করার তাওফিক দেন। কপি পোষ্ট