Friday, October 6, 2017

কাফেররা উন্নত, আর মুসলিমরা অনুন্নত কেন?

কাফেররা উন্নত, আর মুসলিমরা অনুন্নত কেন?


কাফেররা দুনিয়াতে উন্নত, যেহেতু তাদের জন্য দুনিয়া এবং মুসলিমদের জন্য আখেরাত। কাফেররা দুনিয়ার উন্নতি নিয়ে চিন্তা গবেষণা করে। আর মুসলিমরা আখেরাত নিয়ে চিন্তা গবেষণা করে। মুসলিমদের দুনিয়া উন্নত না হলেও তাদের আখেরাত উন্নত। কাফেরদের অবস্থা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
“ওরা পার্থিব জীবনের বাহ্য দিক সম্বন্ধে অবগত, অথচ পরলৌকিক জীবন সম্বন্ধে ওরা উদাসীন।” (রুমঃ ৭)
একদা দুই জাহানের বাদশাহ নবী (সঃ) চাটাই এর উপর হেলান দিয়ে শুয়ে ছিলেন। তার

বাড়িতে যে সব অবাঞ্ছিত ও ক্ষতিকর প্রাণী, যেমন পিপড়া, আরশোলা, ছারপোকা ইত্যাদি থাকে, তা হত্যা করা বৈধ কি?

বাড়িতে যে সব অবাঞ্ছিত ও ক্ষতিকর প্রাণী, যেমন পিপড়া, আরশোলা, ছারপোকা ইত্যাদি থাকে, তা হত্যা করা বৈধ কি?


যে প্রাণী মানুষের জন্য ক্ষতিকর, তা মেরে ফেলা বৈধ। তবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নয়। যেহেতু “আগুনের মালিক (আল্লাহ) ছাড়া আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়া আর কারও জন্য সঙ্গত নয়।” (আবু দাউদ)

অমুসলিমদেরকে সালাম দেওয়া যায় কি?

অমুসলিমদেরকে সালাম দেওয়া যায় কি?


অমুসলিমদের প্রথমে সালাম দেওয়া হারাম, বৈধ নয়। যেহেতু ‘সালাম’ কেবল ইসলাম ওয়ালাদের অভিবাদন। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “ইয়াহুদি ও নাসাদেরকে প্রথমে সালাম দিও না। ওদের সাথে পথে দেখা হলে সংকীর্ণতার প্রতি বাধ্য কর।” কিন্তু

কোন ব্যথা-বেদনা বা জালা-জন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার মানসে ঝাড়ফুঁক করা বা করানো কি বৈধ?

কোন ব্যথা-বেদনা বা জালা-জন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার মানসে ঝাড়ফুঁক করা বা করানো কি বৈধ?


ঝাড়ফুঁক করা অ করানো বৈধ। তবে তা কুরআনের আয়াত অথবা সহিহ হাদিসের দুয়া দ্বারা হতে হবে। সেই সাথে এ বিশ্বাস দৃঢ় রাখতে হবে যে, আরোগ্যদাতা  কেবল মহান আল্লাহ।
নবী (সঃ) আপন পরিবারের কোন রোগী দর্শন করার সময় নিজের ডান হাত তার ব্যথার  স্থানে ফিরাতেন এবং এ দুয়াটি পরতেন,

ঘুমের ঘোরে যে সব স্বপ্ন দেখা যায়, তা কি সত্যি হতে পারে?

ঘুমের ঘোরে যে সব স্বপ্ন দেখা যায়, তা কি সত্যি হতে পারে?


ঘুমের ঘোরে যে সব স্বপ্ন দেখা যায়, তা তিন প্রকার হতে পারে। যথাঃ (ক) আল্লাহর পক্ষ থেকে দেখানো স্বপ্ন যার অর্থ সত্যি হয়। (খ) শয়তান এর পক্ষ থেকে দেখানো স্বপ্ন, যা দেখে মানুষ মানসিক কষ্ট পেয়ে থাকে। (গ) মানুষ যা বেশি ভালবাসে অথবা ভয় করে অথবা কল্পনা করে তারই প্রতিচ্ছায়া মানসপটে ঘুমের মধ্যে সময় অঙ্কিত হয়। শেষোক্ত দুই প্রকার স্বপ্ন অর্থহীন।
খারাপ স্বপ্ন দেখলে পাশ ফিরে শয়ন করতে হয়। শয়তানের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাইতে হয়। বাম দিকে তিনবার থুথু মারতে হয়। আর (জ্ঞানী) প্রিয়জন ছাড়া ষে স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে হয় না। ( বুখারি ৭০৪৪, মুসলিম ২২৬১ নং)

আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা না করলে কি কোন মুসলিম শাসককে ‘কাফের’ বলা যাবে?

আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা না করলে কি কোন মুসলিম শাসককে ‘কাফের’ বলা যাবে?


আল্লাহর বিধানকে যারা নিজেদের জীবন সংবিধান বলে মেনে নেয় না, তাদের মনে মগজে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। সেই কারণ অনুসারে নির্ণীত হবে তাদের মন।
যে ধারনা করে যে, ইসলামী বিধান এ যুগে অচল এবং মানব রচিত বিধানই বর্তমান মানব সভ্যতার জন্য অধিক উপযোগী ও উত্তম, এর ফলে সে ইসলামী বিধান উপেক্ষা করে ইসলাম পরিপন্থী আইন প্রণয়ন করে, সে কাফের।
যে ধারনা করে যে,

শতধা বিচ্ছিন্ন দলে দলে বিভক্ত মুসলিম সমাজে নব আলোকপ্রাপ্ত মুসলিম বা নও মুসলিমরা কোন দলে সামিল হবে?

শতধা বিচ্ছিন্ন দলে দলে বিভক্ত মুসলিম সমাজে নব আলোকপ্রাপ্ত মুসলিম বা নও মুসলিমরা কোন দলে সামিল হবে?


মহানবী (সঃ) বলেছেন, “ইয়াহুদি একাত্তর দলে এবং খ্রিস্টান বাহাত্তর দলে দ্বিধা বিভক্ত হয়েছে। আর এই উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। যার মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সব কটি জাহান্নামে যাবে।” অতঃপর ওই একটি দল প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেন, “তারা হল জামাআত, যে জামাআত আমি ও আমার সাহাবা যে মতাদর্শের উপর আছি তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” (সুনান আরবাআহ, মিশকাত ১৭১-১৭২। সিলসিলাহ সহিহাহ ২০৩, ১৪৯২ নং)
সুতরাং নব আলোকপ্রাপ্ত মুসলিম বা নও মুসলিমরা সেই দলে বা জামাআতে শামিল হবে, যে দলে নবী (সঃ) ও তার সাহাবাদের মতাদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে। সব দলের দাবি একই হলে, জ্ঞান ও বিবেককে কাজে লাগিয়ে সঠিক দল অনুসন্ধান করা ওয়াজেব। যে দল সবার কথার উপর নবী (সঃ) এর কথাকে প্রাধান্য দেয়, যে দল কোন মাজহাবী তাকলিদে ফাঁসে না, কোন বুজুর্গের তাজিম ও তাকলিদে বাড়াবাড়ি করে না, সে দল কোন বিদআত ও বিদআতিকে প্রশ্রয় দেয় না, যে দল কোন শিরকের মৌন সমর্থনও করে না, যে দল গদির লোভে পাশ্চাত্য রাজনীতির গড্ডালিকা স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয় না, যে দল কিতাব ও সহিহ সুন্নাহর উপর আমল করে, কোন জাল জইফ হাদিসকে ভিত্তি করে  আমল করে না ইত্যাদি। আর নিদর্শন আছে সেই হক পন্থি দলের, জ্ঞানী ও উদার মানুষের তা চিনতে ভুল হয় না। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“ যারা তাগুতের পূজা হতে দুরে থাকে এবং আল্লাহর অনুরাগী হয়, তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। অতএব সুসংবাদ দাও আমার দাসদেরকে--- যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে এবং যা উত্তম তারই অনুসরণ করে। ওরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং ওরাই বুদ্ধিমান।” (সূরা জুমার ১৭-১৮ আয়াত)

দাওয়াতের কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার বৈধ কি ?

দাওয়াতের কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার বৈধ কি ?


যে কোন বৈধ অসিলার মাধ্যমে ইসলামী দাওয়াত পৌঁছানো সম্ভব হয়, সেই  অসিলায় ব্যবহার করা বৈধ। রেডিও, টিভি, ইন্টারনেটে শরিয়ত বিরোধী কর্মকাণ্ড থাকলেও তা সম্পূর্ণ বিধর্মী ও পাপাচারীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয়। যে অস্ত্র দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা হচ্ছে, সেই অস্ত্র দিয়েই মোকাবেলা করা আমাদের উচিৎ। (ইবনে জিবরিন)

বড়দেরকে গীবত ইত্যাদি আপত্তিকর কর্মে লিপ্ত দেখে বাধা দিলে তাঁরা রেগে ওঠেন। বিশেষ করে পিতামাতা হলে তাঁদের রাগ কি আমার জন্য ক্ষতিকর হবে?

বড়দেরকে গীবত ইত্যাদি আপত্তিকর কর্মে লিপ্ত দেখে বাধা দিলে তাঁরা রেগে ওঠেন। বিশেষ করে পিতামাতা হলে তাঁদের রাগ কি আমার জন্য ক্ষতিকর হবে?


অবশ্যই না। তবে বড়দের সঙ্গে আদব বজায় রেখে হিকমতের সাথে অসৎ কর্মে বাধা দিতে হবে। আর কেউ রাগলে তাঁর রাগের উপর ধৈর্য ধারণ করতে হবে। লুকমান হাকিম তাঁর ছেলেকে বলেছিলেন, ‘হে বৎস ! যথারীতি নামায পড়, সৎ কাজের নির্দেশ দাও, অসৎ কাজে বাধা দান কর এবং আপদে বিপদে ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই এটিই দৃঢ় সংকল্প কাজ। (লুকমানঃ ১৭)

কোন কোন ভাউচারে লেখা থাকে, ‘বিক্রিত পণ্য পরিবর্তন যোগ্য ও ফেরত যোগ্য নয়।’ শরীয়তের বিধানে এটা কি ঠিক?

কোন কোন ভাউচারে লেখা থাকে, ‘বিক্রিত পণ্য পরিবর্তন যোগ্য ও ফেরত যোগ্য নয়।’ শরীয়তের বিধানে এটা কি ঠিক?


উক্ত শর্ত লাগিয়ে বিক্রেতার পণ্য বিক্রয়  করা অথবা বিক্রয়ের সময় ক্রেতার উপর উক্ত শর্ত আরোপ করা সঠিক নয়। যেহেতু এতে ক্রেতা ধোঁকা খেতে পারে। এর ফলে ত্রুটিপূর্ণ পণ্য গ্রহণ করতে সে বাধ্য হয়, ফলে সে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ক্রেতা পূর্ণ মূল্য দিয়ে একটি ত্রুটিমুক্ত পণ্য পেতে চায়। কিন্তু পরবর্তিতে দেখা যায় তা ত্রুটিপূর্ণ। সুতরাং তার অধিকার আছে, সে তার পরিবর্তে অন্য পণ্য গ্রহণ করবে অথবা মূল্য ফিরিয়ে নেবে। (লাজনাহ দায়েমাহ)

বিড়ি সিগারেট হারাম হওয়ার স্পষ্ট দলীল শরীয়তে আছে কি? না থাকলে তা হারাম হয় কিভাবে?

বিড়ি সিগারেট হারাম হওয়ার স্পষ্ট দলীল শরীয়তে আছে কি? না থাকলে তা হারাম হয় কিভাবে?


শরীয়তের বিধানের সকল কিছুর স্পষ্ট দলীল নেই। আর না থাকলে কোন জিনিস যে হালাল, তা নয়। শরীয়তের স্পষ্ট উক্তিসমুহ থেকে ফকীহগন এমন কিছু নীতি নির্ণয় করেন, যার দ্বারা বলা যায় কোনটা হালাল, আর কোনটা হারাম। যে সকল নীতির মাধ্যমে বিড়ি-সিগারেটকে হারাম করা হয়, তার কিছু নিম্নরুপঃ-
(ক) এতে রয়েছে অনর্থক অর্থ অপচয়। আর ইসলামে অপচয় হারাম।
(খ) এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। আর যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ইসলামে তা হারাম।
(গ) বেশি পরিমাণ পান করলে, তাতে  জ্ঞানশূন্যতা আসতে পারে। আর যাতে নেশা, মাদকতা ও জ্ঞানশূন্যতা আসে, ইসলামে তা হারাম।
(ঘ) এতে দুর্গন্ধ আছে। এর দুর্গন্ধে অধূমপায়ীরা কষ্ট পায়। সুতরাং তা পবিত্র জিনিস নয়। আর ইসলাম পবিত্র জিনিস খাওয়াকে হালাল এবং অপবিত্র জিনিস খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করেছে।

বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার করা কসম ভঙ্গ করলে একবার কাফফারা দিলে হবে কি?

বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার করা কসম ভঙ্গ করলে একবার কাফফারা দিলে হবে কি?


একই কাজের জন্য একাধিকবার কসম খেয়ে তা ভঙ্গ করলে একবার কাফফারা দিলেই হবে। কিন্তু পৃথক পৃথক কাজের জন্য কসম খেয়ে ভঙ্গ করলে পৃথক পৃথক কাফফারা দিতে হবে। (ইবনে বাজ)
 
যেমনঃ কেউ রবিবারে বলল, ‘আল্লাহর কসম আমি মামার বাড়ী যাব না।’ সোমবার বলল, ‘আল্লাহর কসম আমি মামার বাড়ী যাব না।’ মঙ্গলবারেও বলল, ‘আল্লাহর কসম আমি মামার বাড়ী যাব না।’ অতঃপর বুধবারে কসম ভঙ্গ করে সে মামার বাড়ী গেল। তাকে একটি কাফফারা দিতে হবে।
কিন্তু রবিবারে বলল, ‘আল্লাহর কসম আমি মামার বাড়ী যাব না।’ সোমবারে বলল, ‘আল্লাহর কসম আমি চাচার বাড়ী যাব না।’ মঙ্গলবারে বলল, ‘আলাহর কসম আমি খালার বাড়ী যাব না।’ অতঃপর বুধবারে কসম ভঙ্গ করে সে সকলের বাড়ী চলে গেল। তবে প্রত্যেক কসমের বিনিময়ে পৃথক পৃথক কাফফারা আদায় করতে হবে।
অনুরূপ কেউ রবিবারে বলল, ‘আল্লাহর কসম আমি মামার বাড়ী যাব না।’ সোমবারে বলল, ‘আল্লাহর কসম আমি চাচার বাড়ী খাব না।’ মঙ্গলবারে বলল, ‘আল্লাহর কসম আমি খালার বাড়ী শোব না।’ অতঃপর বুধবারে সে কসম ভঙ্গ করে সেই সব কাজ করল। তাকে  প্রত্যেক কসমের বিনিময়ে পৃথক পৃথক কাফফারা আদায় করতে হবে।

মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখের আগে ‘স্বর্গীয়’, ‘বেহেশতী’, বা ‘জান্নাতী’ লেখা বা বলা বৈধ কি?

মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখের আগে ‘স্বর্গীয়’, ‘বেহেশতী’, বা ‘জান্নাতী’ লেখা বা বলা বৈধ কি?


নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির জন্য এমন সাক্ষ্য বা সার্টিফিকেট দিয়ে ওই কথা লেখা বা বলা বৈধ নয়। (ইবনে উসাইমিন) যেহেতু তা গায়েবী খবর, আর তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। অবশ্য যার শরীয়ত কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত, তাঁদের কথা স্বতন্ত্র।

সালামের পর কি শ্রদ্ধাভাজনের হাতে বা কপালে চুমু কি জায়েয?

সালামের পর কি শ্রদ্ধাভাজনের হাতে বা কপালে চুমু কি জায়েয?


দুই চোখের মাঝে কপাল চুম্বন দেওয়া বৈধ। জাফর হাবসা থেকে ফিরে এলে মহানবী (সঃ) তার সাথে মুয়ানাকা করে তার দুই চোখের মাঝে (কপালে) চুম্বন দিয়েছিলেন।( সিলসিলাহ সহিহাহ ৬/১/ ৩৩৮ )
কিছু শর্তের সাথে আলেম (পিতা মাতা বা গুরুজন) দের হাতে বুসা দেওয়া বৈধ।
(ক) শ্রদ্ধাস্পদ যেন গর্বভরে হাত প্রসারিত না করে।
(খ) শ্রদ্ধাকারির মনে যেন তাবাররুক বা বরকত নেওয়ার খেয়াল না থাকে।
(গ) বুসা দেওয়া ও নেওয়াটা যেন কোন প্রথা বা অভ্যাসে পরিণত না হয়।
(ঘ) ওর স্থলে যেন মুসাফাহ পরিত্যক্ত না হয়। ( সিলসিলাহ সহিহাহ ১/৩০২  )
(ঙ) বুসার সময় হাতকে নিয়ে কপালে যেন স্পর্শ না করা হয়।

স্কুলের ছবি অঙ্কন বিষয়ক ক্লাসে প্রাণীর ছবি আঁকতে আদেশ করা হয়। সে ক্ষেত্রে ছাত্র ছাত্রীরা কি করতে পারে?

স্কুলের ছবি অঙ্কন বিষয়ক ক্লাসে প্রাণীর ছবি আঁকতে আদেশ করা হয়। সে ক্ষেত্রে ছাত্র ছাত্রীরা কি করতে পারে?


বিচরণশীল প্রাণীর ছবি আঁকা বৈধ নয়। যদি কেউ আঁকতে একানই বাধ্য হয়, তাহলে প্রাণীর মাথাটা আঁকবে না।  ( ইবনে ঊষাইমীন ) 
ড্রেসের ডিজাইন আঁকতে মাথাহীন দেহের উপর ড্রেস আঁকতে পারা যায়। মাথাহীন স্ট্যাচুর দেহে পোশাক পরিয়ে  তা শো করা যায়। কোন ছবি বা মূর্তির মাথা না থাকলে ক্ষতির আওতায় পড়ে না। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “মূর্তি বা ছবি হল মাথাটাই। সুতরাং মাথা কেটে দেওয়া হলে সে ছবি বা মূর্তিতে সমস্যা নেই।” (সিঃ সহীহাহ ১৯২১ নং )   

গান-বাজনা শোনা বৈধ কি? সেই সমস্ত টি,ভি সিরিজ দেখা বৈধ কি? যাতে অর্ধনগ্না নারীদেহ প্রদর্শন হয়?

গান-বাজনা শোনা বৈধ কি? সেই সমস্ত টি,ভি সিরিজ দেখা বৈধ কি? যাতে অর্ধনগ্না নারীদেহ প্রদর্শন হয়?


গান-বাজনা শোনা হারাম। আর তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে লেশমাত্র সন্দেহ নেই। সলফে সালেহীন; সাহাবা ও তাবেঈন কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে যে, গান অন্তরে মুনাফিকী  (কপটতা) উদগত করে। উপরন্ত গান শোনা-অসার বাক্য শোনা এবং তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পর্যায়ভুক্ত। আর আল্লাহ তা’আলা বলেন,

বিনা অহংকারে পরিহিত বস্ত্র গাঁটের নিচে ঝুলানো হারাম কি না?

বিনা অহংকারে পরিহিত বস্ত্র গাঁটের নিচে ঝুলানো হারাম কি না?


পুরুষদের জন্য পরিহিত বস্ত্রপায়ের গাঁটের নিচে ঝুলান হারাম, তাতে অহংকারের উদ্দেশ্য হোক অথবা অহংকারের উদ্দেশ্যে না হোক। তবে যদি তা অহংকারের প্রকাশের উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তার শাস্তি অধিকতর কঠিন ও বড়। যেহেতু সহীহ মুসলিমের আবূ যার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে নবী (সঃ)বলেন, “তিন ব্যক্তির সাথে

রুমে কেবল স্বামী স্ত্রী থাকলে শরীরে কোন কাপড় না রেখে কি ঘুমানো যায়?

রুমে কেবল স্বামী স্ত্রী থাকলে শরীরে কোন কাপড় না রেখে কি ঘুমানো যায়?


লজ্জাস্থান অপ্রয়োজনে খুলে রাখা বৈধ নয়। পর্দার ভেতরে প্রয়োজনে তা খুলে রাখায় দোষ নেই। যেমন মিলনের সময়, গোসলের সময় বা প্রস্রাব পায়খানার করার সময়। অপ্রয়োজনের সময় লজ্জাস্থান আবৃত রাখা ওয়াজেব। নাবি (সঃ) বলেছেন,

কোন বিবাহিত মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ কি?

কোন বিবাহিত মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ কি?


কোন বিবাহিত স্বামী ওয়ালী সধবা মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ নয়, যতক্ষণ না তার তালাক হয়েছে অথবা তার স্বামী মারা গেছে এবং তার নির্ধারিত ইদ্দত কাল অতিবাহিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“নারীদের মধ্যে

কোন গায়র মাহরাম ড্রাইভারের সাথে মহিলার একাকিনী কোথাও যাওয়া বৈধ কি?

কোন গায়র মাহরাম ড্রাইভারের সাথে মহিলার একাকিনী কোথাও যাওয়া বৈধ কি?


না। গাড়ী, রিক্সা বা বাইকে এমন কোন পুরুষের সাথে মহিলার একাকিনী  যাওয়া বৈধ নয়, যার সাথে কোনও সময় তার বিবাহ বৈধ।
বৈধ নয় বাস, ট্রেন বা জলজাহাজের কোন সফরে একাকী যাওয়া, এমনকি

মৃতব্যাক্তির শোকে মাতাম করে কান্না করা বৈধ কি?

মৃতব্যাক্তির শোকে মাতাম করে কান্না করা বৈধ কি?


না। কেউ মারা গেলে ওয়াজেব হল বিধির বিধান মেনে নিয়ে শোক দমন করে ধৈর্যধারণ করা। স্বাভাবিকভাবে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে যাওয়াও দোষাবহ নয়। দোষাবহ হল মাতাম করে ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না করা।

রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন,

দু হাত তুলে মুনাজাত কি বিদআত?

দু হাত তুলে মুনাজাত কি বিদআত?


দু হাত তুলে মুনাজাত কোথাও সুন্নত, কোথাও বিদআত। এমন ক্ষেত্রে দু হাত তুলে মুনাজাত জায়েয, যে ক্ষেত্রে মহানবী (সঃ) দুআ করেছেন বলে প্রমাণিত নয়। অর্থাৎ প্রয়োজনে

কুরবানীর ভাগের সাথে কি আকীকা দেওয়া যাবে?

কুরবানীর ভাগের সাথে কি আকীকা দেওয়া যাবে?


কুরবানীর সাথে একটি ভাগ আকীকার উদ্দেশ্যে দেওয়া যথেষ্ট নয়। যেমন যথেষ্ট নয় একটি পশু কুরবানী ও আকীকার নিয়তে যবেহ করা।  কুরবানী  আকীকার জন্য পৃথক পৃথক পশু হতে হবে। অবশ্য যদি কোন শিশুর আকীকার দিন কুরবানীর দিনেই পড়ে এবং আকীকা যবেহ করে, তাহলে

এক মহিলা উমরাহ আদায়ে একাকিনী যেতে চায়। তাঁর এগানা আত্মীয় রিয়াদ এয়ারপোর্টে প্লেনে উঠিয়ে দিয়ে আসে এবং অন্য এগানা আত্মীয় জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে তাকে উমরাহ করিয়ে অনুরূপ বাড়ী ফিরিয়ে দিলে তাতে কোন সমস্যা আছে কি?

এক মহিলা উমরাহ আদায়ে একাকিনী যেতে চায়। তাঁর এগানা আত্মীয় রিয়াদ এয়ারপোর্টে প্লেনে উঠিয়ে দিয়ে আসে এবং অন্য এগানা আত্মীয় জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে তাকে উমরাহ করিয়ে অনুরূপ বাড়ী ফিরিয়ে দিলে তাতে কোন সমস্যা আছে কি?


উমরাহ বা অন্য কোন ইবাদতের সফর হলেও কোন মহিলার একাকিনী সফর বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেছেন, “কোন পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর সঙ্গে তাঁর সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন না করে। আর মাহরাম ব্যতিরেকে কোন নারী যেন সফর না করে।” এক ব্যক্তি আবেদন করল, “হে রাসুন! আমার স্ত্রী হজ্জ পালন করতে বের হয়েছে। আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি।” তিনি বললেন, “যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।” ৩১৯ (বুখারী ও মুসলিম)

এখানে এ কথা বলা ঠিক নয় যে, প্লেনের সফর নিরাপদ। এক এয়ারপোর্টে চড়ে পরবর্তী এয়ারপোর্টে সহজেই নামতে পারবে। কারণ হাদীসে সে শর্ত আরোপ করা হয়নি যে, সফর বিপদজ্জনক হলে মহিলা এগানা পুরুষ ছাড়া সফর করতে পারবে না। ৩২০ (ইবনে উষাইমীন)

এগারো মাসে নামায পড়ে না। রমযান এলে রোযা রাখে ও নামায পড়ে। এমন লোকের রোযা কবুল হবে কি?

এগারো মাসে নামায পড়ে না। রমযান এলে রোযা রাখে ও নামায পড়ে। এমন লোকের রোযা কবুল হবে কি? রোযার উপর নামাযের প্রভাব আছে কি? তাঁরা রোযা রেখে (জান্নাতের) ‘রাইয়ান’ গেটে প্রবেশকারীদের সঙ্গে প্রবেশ করবে না কি? ‘এক রমযান থেকে ওপর রমযান মধ্যবর্তী সকল গোনাহকে মোচন করে দেয়।’---এ কথা ঠিক নয় কি?


বেনামাযীর রোযা কবুল হবে না। যেহেতু নামায ইসলামের খুঁটি, যা ব্যতিরেকে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। পরন্ত বেনামাযী কাফের ও ইসলামের মিল্লাত থেকে বহির্ভূত।
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “মানুষ ও কুফুরীর মধ্যে (পর্দা) হল, নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম)
তিনি আরো বলেছেন, “যে চুক্তি আমাদের ও তাঁদের (কাফেরদের) মধ্যে বিদ্যমান, তা হচ্ছে নামায (পড়া)। অতএব যে নামায ত্যাগ করবে, সে নিশ্চয় কাফের হয়ে যাবে।”  (তিরমিযী)
শাক্বীক ইবনে আব্দুল্লাহ তাঁবেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “মুহাম্মাদ (সঃ) এর সহচরবৃন্দ নামায ছাড়া অন্য কোন আমল ত্যাগ করাকে কুফরীমূলক কাজ বলে মনে করতেন না।”  (তিরমিযী) (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৬৮৭)      
আর কাফেরের নিকট থেকে আল্লাহ রোযা, সাদকা, হজ্জ এবং অন্যান্য কোনও নেক আমল কবুল করেন না। যেহেতু আল্লাহ পাক বলেন, “ওদের অর্থ সাহায্য গৃহীত হতে কোন বাধা ছিল না। তবে বাধা এই ছিল যে, ওরা আল্লাহ ও তাদীয় রাসুলকে অস্বীকার (কুফরী) করে এবং নামাযে আলস্যের সঙ্গে উপস্থিত হয়। আর অনিচ্ছাকৃতভাবে অর্থদান করে।” (সূরা তাওবা ৫৪ আয়াত)

সুতরাং যদি কেউ রোযা রাখে এবং নামায না পড়ে, তাহলে তাঁর রোযা বাতিল ও অশুদ্ধ। আল্লাহ্‌র নিকট তা কোন উপকারে আসবে না এবং তা তাকে আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য দান করেতেও পারবে না।
আর আর তাঁর অমূলক ধারনা যে, “এক রমযান থেকে অপর রমযান মধ্যবর্তী পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমআহ থেকে জুমআহ এবং রমযান থেকে রমযান; এর মধ্যবর্তী সকল গোনাহকে মোচন করে দেয়--- যতক্ষণ পর্যন্ত কাবীরা গোনাহসমূহ থেকে দূরে থাকা হয়।”  (মুসলিম, মিশকাত ৫৬৪ নং)
সুতরাং রমযান থেকে রমযানের মধ্যবর্তী পাপসমূহ মোচন হওয়ার জন্য মহানবী (সঃ) শর্তারোপ করেছেন যে, কাবীরা গোনাহসমূহ থেকে দূরে থাকতে হবে। কিন্তু সে তো নামাযই পড়ে না, আর রোযা রাখে। যাতে সে কাবীরা গোনাহ থেকে দূরে থাকতে পারে না। যেহেতু নামায ত্যাগ করার চেয়ে অধিক বড় কাবীরা গোনাহর কাজ আর কি আছে? বরং নামায ত্যাগ করা তো কুফরী। তাহলে কি করে সম্ভব যে, রোযা তাঁর পাপ মোচন করবে?
সুতরাং নিজ প্রভুর কাছে তাঁর জন্য তওবা (অনুশোচনার সাথে প্রত্যাবর্তন) করা ওয়াজেব। আল্লাহ যে তাঁর উপর নামায ফরয করেছেন, তা পালন করে তারপর রোযা রাখা উচিৎ। যেহেতু নবী (সঃ) মু'আয (রাঃ) কে ইয়ামান প্রেরণকালে বলেছিলেন, “ওদেরকে তোমার প্রথম দাওয়াত যেন ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর রাসুল’- এই সাক্ষ্যদানের প্রতি হয়। যদি ওরা তা তোমার নিকট থেকে গ্রহণ করে, তবে তাঁদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ ওদের উপর প্রত্যেক দিবা রাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন।” অতএব দুই সাক্ষ্যদানের পর নামায, অতঃপর যাকাত দিয়ে (দাওয়াত) শুরু করেছেন। (ইবনে উষাইমীন)

নিকৃষ্ট মানুষ সে, যে নিজ প্রভুকে কেবল রমযানে চেনে ও স্মরণ করে, বাকী এগারো মাস ভুলে থাকে! অথচ সে এক মাসের চেনা তাঁদের কোন কাজে লাগবে না।  (লাজনাহ দায়েমাহ)

কাউকে যাকাত দেওয়ার সময় সে যাকাতের হকদার কি না, তা জিজ্ঞাসা করা জরুরী কি?

কাউকে যাকাত দেওয়ার সময় সে যাকাতের হকদার কি না, তা জিজ্ঞাসা করা জরুরী কি?


দেওয়ার সময় সে যাকাতের হকদার কিনা জিজ্ঞাসা করা জরুরী নয়? তাতে মুসলিমের বেইজ্জত হয়। যদি আপনি আপনার প্রবল ধারণায় মনে করেন যে, অমুক যাকাতের হকদার, তাহলে তাকে দিয়ে ফেলুন। হাত পাতা ফকীর না হলেও সে মিসকীন হতে পারে। অতএব আপনার সাদকাহ আদায় ও কবুল হয়ে যাবে--ইনশাআল্লাহ।

এক কর্মচারী বেনামাযী ছিল। মালিক বলল, “তুমি নামায পড়লে তোমার বেতন ১০০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তখন থেকে সে নামায পড়া শুরু করল।” প্রশ্ন হল, তাঁর নামায কি আল্লাহ্‌র নিকট গ্রহণযোগ্য?

এক কর্মচারী বেনামাযী ছিল। মালিক বলল, “তুমি নামায পড়লে তোমার বেতন ১০০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তখন থেকে সে নামায পড়া শুরু করল।” প্রশ্ন হল, তাঁর নামায কি আল্লাহ্‌র নিকট গ্রহণযোগ্য?


আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদেশ্যে, অর্থ, গদি, সুনাম, সুবিধা ইত্যাদি উপার্জনের উদেশ্যে কোন ইবাদত করলে তা মহান আল্লাহ্‌র কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
রাসুল (সঃ) বলেছেন, “যাবতীয় কা কার্য নিয়ত বা সংকল্পের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাঁর প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত (স্বদেশত্যাগ) আল্লাহ্‌র (সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তাঁর রাসুলের জন্য হবে; তাঁর হিজরত তাঁর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত তাঁর পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদেশ্যেই হবে, তাঁর হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তাঁরই জন্য হবে।১৩৭ (বুখারী-মুসলিম)
আবূ মূসা আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স আশআরী (রঃ) বলেন, “আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, “যে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, অন্ধ পক্ষপাতিত্বের জন্য করে এবং লোক প্রদর্শনের জন্য (সুনাম নওয়ার উদ্দেশ্যে) যুদ্ধ করে, এর কোন যুদ্ধটি আলাহর পথে হবে? আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) বললেন, “যে ব্যক্তি আল্লহর কালামকে উঁচু করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, একমাত্র তারই যুদ্ধ আল্লহর পথে হয়।” ১৩৮
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি সমস্ত অংশীদারদের চাইতে অংশীদারি (শিরক) থেকে অধিক মুখাপেক্ষী। কেউ যদি এমন কাজ করে, যাতে সে আমার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করে, তাহলে আমি তাকে তাঁর অংশীদারি (শিরক) সহ বর্জন করি।” (অর্থাৎ তাঁর আমলই নষ্ট করে দিই।)” ১৩৯
সুতরাং সেই কর্মচারীর উচিৎ, নিয়ত পাল্টে নিয়ে কেবল আল্লাহ্‌র উদেশ্যে নামায পড়া। বেতন সে গ্রহণ করুক, কিন্তু নামায পড়ুক আল্লাহ্‌র ভয়ে। উল্লেখ্য যে, অভিভাবকের ভয়ে নামায পড়া, সমাজে দুর্নামের ভয়ে রোযা রাখা, অর্থ লোভে বদল হজ্জ করা, চাকরির আশায় দ্বীন ইলম অর্জন করা, বেতনের লোভে ইমামতি করা, খ্যাতির লোভে দান করা, নাম ও অর্থের লোভে দ্বীনী দাওয়াতের কাজ করা ইত্যাদি “রিয়া”র বিধান একই।
ফুটনোটঃ১৩৮ (বুখারী ও মুসলিম), ১৩৯ (মুসলিম)

অপবিত্র অবস্থায় কি কুরআন পড়া জায়েয?

 

অপবিত্র অবস্থায় কি কুরআন পড়া জায়েয?


অপবিত্রতা দুই শ্রেণীরঃ ছোট অপবিত্রতা, যাতে উযূ জরুরী হয় এবং বড় অপবিত্রতা, যাতে গোসল জরুরী হয়। ছোট অপবিত্র অবস্থায় থাকলে কুরআন স্পর্শ না করে মুখস্থ পড়া জায়েয। আর বড় অপবিত্র অবস্থায় কুরআন পড়া জায়েয নয়। অবশ্য এ অবস্থায় কুরআনী আয়াতের যিকর যেমন, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিঊন” ইত্যাদি পড়া যায়। ১১৫ (ইবনে ঊষাইমীন)
হযরত আলী (রঃ) বলেন, “বড় নাপাকির অবস্থা ছাড়া অন্যান্য অবস্থায় আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন।” ১১৬ (আহমাদ ৬২৭, তিরমিযী ১৩১ নং, আলবাণীর নিকট হাদীসটি যয়ীফ)  

‘বিদআত’ কাকে বলে? কখন কোন কাজকে ‘বিদআত’ বলে আখ্যায়ন করা হবে?

‘বিদআত’ কাকে বলে? কখন কোন কাজকে ‘বিদআত’ বলে আখ্যায়ন করা হবে?


বিদআত বলা হয় দ্বীন ও ইবাদতে নব আবিষ্কৃত কাজকে। অর্থাৎ দ্বীন বা ইবাদত মনে করে করা এমন কাজকে বিদআত বলা হবে, যে কাজের কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর কোন দলীল নেই। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
“তোমরা (দ্বীন) নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।” ৮১ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)
“যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কিছু উদ্ভাবন করল--- যা তাঁর মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।” ৮২ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, “যে ব্যাক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যপারে আমাদের নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।”
বলা বাহুল্য, নব আবিষ্কৃত পার্থিব কোন বিষয়কে বিদআত বলা যাবে না। যেমন শরীয়াতে নিষিদ্ধ কোন কাজকে বিদআত বলা হয় না। বরং তাকে অবৈধ, হারাম বা মাকরূহ বলা হয়।

দ্বীনে মধ্যমপন্থা কী?

দ্বীনে মধ্যমপন্থা কী?


দ্বীন মানতে কিছু লোক চরমপন্থি আছে, কিছু আছে নরম ও ঢিলেপন্থী এবং কিছু আছে মধ্যমপন্থী। কেও দ্বীন ও ইবাদত এর ক্ষত্রে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করে, সহজটাকে কঠিন করে এবং কেও একেবারে ঢিলেমি করে, অবজ্ঞা ও অবহেলা করে এবং কঠিনটাকে সহজ মনে করে। অথচ প্রত্যেক জিনিসের মাঝামাঝিটাই ঠিক।
আমাদের দ্বীনই হল মধ্যমপন্থী। তাতে অতিরঞ্জন নেই। মহানবী (সঃ) ও তাঁর সাহাবাবর্গের পথই হল মধ্যমপন্থা। মহানবী (সঃ)-এর তরীকাই হল মাঝামাঝি আচরণ।
আনাস (রঃ) বলেন যে, তিন ব্যাক্তি নবী (সঃ)-এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী (সঃ)-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর যখন তাঁদেরকে এর সংবাদ দেওয়া হল তখন তাঁরা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, “তোমাদের সঙ্গে নবী (সঃ)-এর তুলনা কোথায়? তাঁর তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মোচন করে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু তোমাদের তাঁর চেয়ে বেশি ইবাদত করা প্রয়োজন)”। সুতরাং তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, “ আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব।” দ্বিতীয়জন বললেন, “আমি সারা জীবন রোযা রাখব, কখনো রোযা ছাড়ব না।” তৃতীয়জন বললেন, “আমি নারী থেকে দূরে থাকব, জীবনভর বিয়েই করব না।” অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা এই এই কথা বলেছ? শোনো! আল্লাহ্‌র কসম! আমি তোমাদের চেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করি, তাঁর ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশি রাখি। কিন্তু আমি (নফল) রোযা রাখি এবং রোযা ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।” ৭০ (বুখারী-মুসলিম)
সুতরাং তাঁর তরীকাতেই আছে মধ্যমপন্থী আচরণ। তিনি বলেছেন, “নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যাক্তি অহেতুক দ্বীনকে কঠিন বানাবে, তাঁর উপর দ্বীন জয়ী হয়ে যাবে। (অর্থাৎ মানুষ পরাজিত হয়ে আমল ছেড়ে দেবে।) সুতরাং তোমরা সোজা পথে থাক এবং (ইবাদতে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা সুসংবাদ নাও। আর সকাল-সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার মাধ্যমে সাহায্য নাও।” ৭৫ (বুখারী)
বুখারির অন্য এক বর্ণনায় আছে, “তোমরা সরল পথে থাকো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, সকাল-সন্ধায় চল (ইবাদত কর) এবং রাতের কিছু অংশে। আর তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তাহলেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবে।”
যারা ঢিলাপন্থী, তাঁরা সুন্নতের উপর আমল করে না, নফল আদায় করতে সচেষ্ট হয় না, বরং অনেক সময় ফরয আদায়েও শৈথিল্য করে।
উদাহারন স্বরূপঃ-
(ক) একটি লোক ফাসেক (পাপাচার), সে কবীরা গোনাহ করে, কিন্তু নামায পড়ে এবং শিরক করে না। চরমপন্থি বলে, “আমি তাঁকে সালাম করব না, তাঁর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব। তাঁর সাথে কথা বলব না।”
নরমপন্থী বলে, “পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়। আমি তাঁকে সালাম করব, তাঁর সাথে সুসম্পর্ক রাখব, তাঁর সাথে হেসে-খেলে উঠাবসা করব।”
আর মধ্যমপন্থী বলে, “আমি তাঁর পাপের জন্য তাঁকে ঘৃণা করব এবং ঈমানের জন্য ভালোবাসব। তাঁকে বর্জন করায় যদি কোন উপকার থাকে, তাহলে তাঁকে বর্জন করব।”
(খ) চরমপন্থী লোক স্ত্রীকে চরণের দাসী মনে করে। নরমপন্থী তাঁকে নিজের প্রভু মনে করে, বানরের মত তাঁর কোথায় উঠ-বস করে। আর মধ্যমপন্থী তাঁকে বন্ধু মনে করে। সে জানে, “ নারীদের তেমন ন্যায়-সঙ্গত অধিকার আছে যেমন আছে তাঁদের উপর পুরুষদের। কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের কিছুটা মর্যাদা আছে। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (বাকারাহঃ ২২৮)
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “কোন ইমানদার পুরুষ যেন কোন ইমানদার নারী (স্ত্রীকে) ঘৃনা না করে। যদি সে তাঁর একটি আচরণে অসন্তষ্ট হয়, তবে অন্য আচরণে সন্তষ্ট হবে।” ৭৬ (মুসলিম)

বিতর্কিত সমস্যায় কার সমাধান গ্রহণ করব?

বিতর্কিত সমস্যায় কার সমাধান গ্রহণ করব?


কোন বিষয়ে মতভেদ থাকলে অথবা একই সময়ে দুই আলেমের ভিন্নমুখী ফতোয়া হলে তাঁর ফতোয়া গ্রহণ করতে হবে যার ফতোয়া কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর বেশি নিকটবর্তী মনে করেন। যাকে ইলম ও তাকওয়া বেশি বড় মনে হয়। যেমন একই রোগের দুই ডাক্তারের দুই রকম চিকিৎসা পদ্ধতি ও রায় শোনেন, তাহলে যাকে আপনি বড় ও অভিজ্ঞ ডাক্তার মনে করেন, তাঁর চিকিৎসা ও পথ্য গ্রহণ করবেন।
যদি তুলনা করার উপায় না থাকে, তাহলে যার ফতোয়া মানার দিক থেকে সহজ, তাঁর ফতোয়া অনুযায়ী আমল করবেন। যেহেতু দ্বীন সহজ। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“আল্লাহ তোমাদের (জন্য যা) সহজ (তা) করতে চান, তিনি তোমাদের কষ্ট চান না। (বাকারাহঃ১৮৫)
“আল্লাহ তোমাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দিতে চান না।” ( মায়িদাহঃ ৬)
“তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠিনটা আরোপ করেননি।” (হাজ্জঃ ৭৮)
আর মহানবী (সঃ) বলেছেন, “সহজ কর, কঠিন করো না।”
আবারও বলি যে, এ হল সাধারণ মানুষের জন্য, যারা নিজে দলীল যাচাই-বাছাই করতে পারে না এবং দুই আলেমের মধ্যে পাথক্য নির্ণয়ও করতে পারে না। পক্ষান্তরে যাদের সে ক্ষমতা আছে [দলিল যাচায় বাছায় করা, পার্থক্য নির্ণয় করার], তাঁদের জন্য অনুসন্ধান চালিয়ে সঠিক সমাধান জেনে নেওয়া জরুরী।  (ইবনে উষাইমীন)

জীন জাতি আগুন থেকে সৃষ্টি। তাদের জান্নাত-জাহান্নাম হলে জাহান্নামের আগুনে আগুন বা শাস্তি পাবে কীভাবে?

জীন জাতি আগুন থেকে সৃষ্টি। তাদের জান্নাত-জাহান্নাম হলে জাহান্নামের আগুনে আগুন বা শাস্তি পাবে কীভাবে?


আল্লাহ্‌র দেওয়া শাস্তিতে অসম্ভব কিছু নেই। মহান আল্লাহ জীনদের কথা উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘অপরপক্ষে সিমালঙ্ঘনকারীরা তো জাহান্নামেরই ইন্ধন।’(জীনঃ ১৫) আর বিদিত যে, দুনিয়ার আগুনের চাইতে জাহান্নামের আগুনের তেজ সত্তর গুণ বেশি। অবশ্য এমনও হতে পারে যে, তাদেরকে আযাব দেওয়ার জন্য পৃথক আগুন প্রস্তুত আছে। যেহেতু পরকালের বিষয়াবলী ইহকালের বিষয়াবলী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ৬৮  মানুষ মাটি থেকে তৈরি হওয়া সত্ত্বেও যদি মাটির (ঢেলা ইত্যাদির) আঘাতে কষ্ট পায়, তাহলে জীন আগুন থেকে তৈরি হওয়া সত্বেও তাদের আগুন দ্বারা কষ্ট পাওয়া কোন বিচিত্র কথা নয়।
ফুটনোটঃ৬৮ (ইবনে জিবরীন)

সাহাবাগণের পরবর্তী যুগে কোনও মুসলিমের জন্য সাহাবার মর্তবা ও মর্যাদায় পৌছনো সম্ভবই

সাহাবাগণের পরবর্তী যুগে কোনও মুসলিমের জন্য সাহাবার মর্তবা ও মর্যাদায় পৌছনো সম্ভব?


সাহাবাগণের মর্তবা ও মর্যাদায় পৌঁছানো কোনক্রমে সম্ভব নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম যুগ হল আমার (সাহাবীদের) যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়ীদের)যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবে-তাবেয়ীনদের) যুগ।’ ৫৭
তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সাহাবাগণের চাইতে বেশি সাওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। যেহেতু নাবী (সঃ) বলেছেন,
‘তোমাদের পরবর্তীতে আছে ধৈর্যের যুগ। সে (যুগে) ধৈর্যশীল হবে মুষ্টিতে আঙ্গার ধারণকারীর মত। সে যুগের আমলকারীর হবে পঞ্চাশ জন পুরুষের সমান সওয়াব।’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল! পঞ্চাশ জন পুরুষ আমাদের মধ্য হতে, নাকি তাদের মধ্য হতে?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমাদের মধ্য হতে!’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘ তোমাদের পঞ্চাশজন শহীদের সমান সওয়াব।’৫৮
সাহাবাগন ইসলামের প্রারাম্ভিককালে কত কষ্ট বরণ করেছেন, কাফেরদের অত্যাচারে কত ধৈর্য ধারণ করেছেন, কত শত বাঁধা-বিপত্তি উল্লংঘন করে ঈমান ও ইসলামকে  যথার্থরূপে পালন করে গেছেন। আর পূর্ববর্তী যুগের ধৈর্যশীল লোকেরাও নানা ফিতনার মাঝে, নানা ভ্রষ্টকারী দল ও মতের মাঝে, সর্বগ্রাসী ও সর্বনাশী ঈমান ও চরিত্র-বিধ্বংসী প্রচারমাধ্যমের মাঝে, অশ্লীনতা ও নোংরামির মাঝে ঈমান টিকিয়ে রাখে। সে সকল ফিতনা ও প্রচারমাধ্যম সাহাবাগনের যুগে ছিল না। তাই তো তাদের পঞ্চাশ গুণ সওয়াব বেশি!
ফুটনোটঃ৫৭ (বুখারী-মুসলিম)
৫৮ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ত্বাবারানী, সঃ জামে’ ২২৩৪ নং)

মহানবী (সঃ) কি আমাদের মতো মানুষ ছিলেন?

 

মহানবী (সঃ) কি আমাদের মতো মানুষ ছিলেন?


মহানবী (সঃ) আমাদের মত রক্ত, গোশত ও অস্তির গড়া মানুষ ছিলেন। আমাদের মত পিতার ঔরসে ও মাতার গর্ভে তাঁর জন্ম হয়েছিল। আমাদের মত তিনি খেতেন, পান করতেন। সুস্থ-অসুস্থ থাকতেন। বিস্মৃত হতেন, স্মরন করতেন। বিবাহ-শাদী করেছেন, তাঁর একাধিক স্ত্রী ছিল। তিনি সন্তানের জনক ছিলেন। ব্যবসা- বাণিজ্য করতেন। দুঃখণ্ডশোক, ব্যাথা ও যন্ত্রণা অনুভব করতেন। তাঁর প্রস্রাব- পায়খানা হত এবং তা অপবিত্র ছিল। তাঁর নাপাকীর উযু-গোসলের প্রয়োজন হতো। ১১  জীবিত ছিলেন, ইন্তিকাল করেছেন। মানুষের সকল প্রকৃতি ও প্রয়োজন তাঁর মাঝে ছিল।
মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সঃ)-কে বলেছেন,
তুমি বল, ‘আমি তো তোমাদেরই মতই একজন মানুষ; আমার প্রতি প্র্যত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য; সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকেও শরীক না করে।’(কাহফঃ ১১০, হা-মীম সাজদাহঃ৬)
পক্ষান্তরে কোন মানুষই তাঁর মত (সমান) নয়। আমরা তাঁর মতো মানুষ নই। অতিপ্রাকৃত বিষয়ে কেউই তাঁর মতো নয়। তিনি একটানা রোযা রাখতেন। সাহাবীগন তাঁর মতো রোযা রাখতে চাইলেন। তিনি বললেন, ‘এ বিষয়ে তোমরা আমার মতো নও। আমি তো রাত্রি অতিবাহিত করি, আর আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান।’১২
তাঁর দেহের ঘাম ছিল সুগন্ধি। একদা তিনি উম্মে সুলাইম (রঃ)'র ঘরে এসে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলেন। তিনি ঘর্মাক্ত হলে উম্মে সুলাইম সেই ঘাম জমা করতে লাগলেন। তিনি জেগে উঠে তা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী ব্যাপার উম্মে সুলাইম?’ বললেন ‘আপনার ঘাম। আমাদের সুগন্ধিতে মিশিয়ে দেব। আর তা হবে শ্রেষ্ঠ সুগন্ধি।’১৩
তিনি বিশেষ ক’রে নামাযে সামনে যেমন দেখতেন, তেমনি পিছনেও দেখতেন। একদা এক নামাযের সালাম ফিরে তিনি বললেন, “তোমরা তোমাদের রুকু ও সিজদাকে পরিপূর্ণভাবে আদায় কর। সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রান আছে, আমার নিকট তোমাদের রুকু, সিজদাহ ও বিনয়-নম্রতা অস্পষ্ট নয়। আমি আমার পিঠের পিছনে থেকে দেখতে পাই, যেমন সামনে দেখতে পাই। ১৪
তাঁর চক্ষু নিদ্রাভিভূত হতো, কিন্তু হৃদয় নিদ্রাভিভূত হতো না। ১৫
তাঁর দেহ ও দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন চুল, থুথু, তাঁর ব্যবহারিত জিনিস ইত্যাদি বরকতময় ছিল। ১৬
ফুটনোটঃ১১ (তিরমিযী ২৪৯১নং) । ১২ (মুসলিম ১১০৩, মিশকাত ১৯৮৬ নং) । ১৩ (মুসলিম ৬২০১নং)
১৪ (আহমাদ ৯৭৯৬, বুখারী ৪১৮, মুসলিম ৯৮৬, হাকেম ১/৩৬১, ইবনে খুজাইমা ৪৭৪, মিশকাত ৮৬৮ নং)
১৫ (বুখারী ৮৫৯, ১১৪৭, মুসলিম ১৭৫৭, ১৮২৬, আবূ-দাঊদ ২০২, তিরমিযী ৪৩৯, নাসাঈ ৬৯৭ নং)
১৬ (বুখারী, মুসলিম ৩২১৩ নং)

ছবি সম্পর্কিত ধারাবাহিক হাদীস

ছবি সম্পর্কিত ধারাবাহিক হাদীস…বিসমিল্লাহির’রহ্মানির’রহিম বর্তমানের নতুন ফিতনা হচ্ছে ছবি, অনেকেই মনে করেন ছবি বৈধ এবং এর জন্য হাদীসের দলীলও দিয়ে থাকেন। কিন্তু তা আদৌ কি
ছবি বৈধ হওয়ার দলীল? আমরা জানি রসূল (সাল্লাল্লাহু’আলাইহী’ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সর্বাধিক শাস্তি হবে যারা আল্লাহ্র সৃষ্টির অনুকরণ করতে চায় এবং বলা হবে তাদের মধ্যে এখন প্রাণ দাও, কিন্তু
মানুষ তা পারবে না। ছবি যদি পরবর্তীতে বৈধ হয়ে থাকে তবে আল্লাহ্র সৃষ্টির অনুকরণ
কি শুধু মাটি, পাথর, সিমেন্ট এবং মম দ্বারা
মূর্তি তৈরির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? কাগজে
বা কাপড়ে করলে তা কি শাস্তির যোগ্য নয়?
অর্থাৎ আমার বাবা-মায়ের ছবি কাগজে,
কাপড়ে এঁকে রাখলে কোন সমস্যা নেই।
আমার পীর বাবার ছবি আমার প্রত্যেক ঘরের
পর্দায় থাকবে, মসজিদের পর্দায় থাকবে।
কতই না ভাল লাগবে তাদের দেখে। ক্বাবা
ঘর যা কাল কাপড় দিয়ে ঘিরা তাতে রসূল
(সাল্লাল্লাহু’আলাইহী’ওয়াসাল্লাম) এর ছবি
আঁকিয়ে রাখা যাবে, ক্বাবা শরীফের মধ্যে
ইব্রাহীম (আলাইহিস’সালাম) এর ছবি, যা
ধ্বংস করে দেওয়া হয়ে ছিল তা পুনরায়
তৈরি করা যাবে, এখন তো মানুষ আর শির্ক
করবে না, তাই এর সবই করা যাবে। মক্কার
হেরেম শরীফের সকল দিকে নবী, রসূলদের
ছবি, ভাবুন কত সুন্দর সেই দৃশ্য। মনে হবে সকল
নবী, রসূল যেন মক্কাতেই আছে, আমাদের
মাঝেই আছে। আল্লাহ্র লানত যেন হয় সেই
সকল লোকদের উপর যারা ছবিকে কাপড়ে
এবং কাগজে বৈধ করতে চায়। যারা মক্কা,
মদিনা সহরের প্রতিটি প্রান্তে কাপড়ের
এবং কাগজের ছবির বিস্তার করতে চায়,
যেরূপ মূর্তিতে পরিপূর্ণ ছিল ক্বাবা ঘর,
সেরূপ ছবি দ্বারা পরিপূর্ণ করতে চায় ক্বাবা
ঘর …(আস্তাগফিরুল্লাহ্)। প্রথমত ছবি কোন
কালেই বৈধ ছিল না, এরূপ কোন নির্দেশ
আমরা পাই না। বরং আমরা পাই মূর্তি
ভাঙ্গার দলীল। কাগজে ছবি ধ্বংস করার
দলীল। সুন্দর, মনোরম দৃশ্য দুনিয়ার প্রতি
আমাদের মায়া বাড়িয়ে দেয়, ছবির বিধান
যখন নাযিল হয় নি তখন এই হাদীস আমরা পাই।
তাই ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন, এটি
ছবির বিধান নাযিল হওয়ার আগের হাদীস।
কিন্তু অনেকে এটিকে ছবির বৈধ হওয়ার
দলীল হিসেবে পেশ করার অপচেষ্টা করে
থাকে।
এখানে রসূল
(সাল্লাল্লাহু’আলাইহী’ওয়াসাল্লাম)
ছবিটিকে নষ্ট করতে বলেন নি, যেহেতু ছবির
বিধান এখনও নাযিল হয় নি। যা আমরা
নিম্নের হাদীস থেকে বুঝতে পারি।
হাদীস থেকে আমরা পরিষ্কার যে, পর্দায়
ছবি থাকলেও রহমতের ফেরেশতা ঘরে
প্রবেশ করে না।
পরবর্তী হাদীস গদী নিয়ে এবং তাতে
প্রাণীর ছবি থাকায় কিয়ামতের দিন এর
চিত্রকরকে বলা হবে তাতে প্রাণ দিতে।
অনেকের দাবি যে, কাপড়ের ওপর ছবি আঁকা
পরবর্তীতে বৈধ করা হয়। তাহলে এই শাস্তির
বিধানের কি হবে, সব থেকে কঠিন শাস্তির
বিধান কি রহিতো হয়ে গিয়েছে? না কখনোই
না, এই বিধান রহিতো করার ক্ষমতা কারো
নেই। কেননা এটি আল্লাহ্র সাথে সমকক্ষতা
করার অপরাধ, এটি একটি কবিরা গুনাহ্, এটি
একটি শির্কের গুনাহ্।
উপরোক্ত হাদীস থেকে এটি স্পষ্ট যে, আত্মা
সমৃদ্ধ ছবি পর্দায় আঁকা হারাম, আর মূর্তি
আঁকারে তো হারাম যা সর্বজন দ্বারা
স্বীকৃত। কিন্তু পর্দাতে আত্মা ছাড়া অন্য
ছবি আঁকতে কোন দোষ নেই। কেননা তাতে
কেউ আল্লাহ্র সাথে সমকক্ষতার জন্য আঁকায়
না। তাই ছবিকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করা
যায়।
১. আত্মা সমৃদ্ধ প্রাণীর মূর্তি বা ছবি, ২.
নক্সা, ৩. প্রকৃতি (গাছপালা)।
প্রথম প্রকার সর্ব ক্ষেত্রে হারাম, কিন্তু
জরুরী এবং বাদ্ধতা মূলক অবস্থায় অপারগতার
জন্য হালাল।
আল্লাহ্ কুরআনে বলছেন (অনুবাধ), যার উপর
জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে
অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী
হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং
কুফরীর জন্য মন উম্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর
আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের
জন্যে রয়েছে শাস্তি…[সূরা:নাহল, আয়াত:
১০৬]
অন্ত্র আল্লাহ্ বলছেন (অনুবাদ), কোন
কারণে তোমরা এমন জন্তু থেকে ভক্ষণ
করবে না, যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত
হয়, অথচ আল্লাহ ঐ সব জন্তুর বিশদ বিবরণ
দিয়েছেন, যেগুলোকে তোমাদের জন্যে
হারাম করেছেন; কিন্তু সেগুলোও
তোমাদের জন্যে হালাল, যখন তোমরা
নিরুপায় হয়ে যাও। অনেক লোক স্বীয়
ভ্রান্ত প্রবৃত্তি দ্বারা না জেনে বিপথগামী
করতে থাকে। আপনার প্রতিপালক
সীমাতিক্রম কারীদেরকে যথার্থই জানেন…
[সূরা:আন-আম, আয়াত: ১১৯]
যেহেতু পরিচয় পত্র বহন করতে আমরা বাধ্য
তাই ইনশাআল্লাহ্ এরূপ ছবির জন্য আমাদের
আল্লাহ্ পাকড়াও করবেন না।
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রকার ছবি হচ্ছে, নক্সা
এবং গাছপালা। আর এরূপ ছবি আঁকা বৈধ।
সাহাবীরা (রাদীয়াল্লাহু’আনহুমা) মনে করে
ছিলেন এরূপ নক্সা এবং গাছপাল আঁকাও
অবৈধ। তাই এর বৈধতা সম্পর্কে আমরা
হাদীস পাই।
একই রূপ অন্য হাদীসে আমরা পাই
আল্লাহ্ যেন আমাদের সফলতা দান করেন এই
দুনিয়াতে এবং আখেরাতে। সালাম এবং দরূদ
বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ এর
উপর, তার পরিবার এবং সাথীদের উপর।

কুরআন তিলাওয়াত : ফযীলত ও আদব

কুরআন তিলাওয়াত : ফযীলত ও আদব

কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত

আজ আমরা এমন বিষয়ে আলোচনা করব যা আমাদের কল্যাণের গ্যারান্টি দেয়। যা আমাদেরকে রক্ষা করে যাবতীয় ফিতনা থেকে। এতে আছে অতীত-ভবিষ্যতের সংবাদ আর বর্তমানের জীবন-দিশা। এ কোনো হেলাখেলার বিষয় নয়; চূড়ান্ত ও অলঙ্ঘনীয় বিধান।

জাহান্নাম থেকে মুক্তির ১৫টি অসাধারন হাদিস-

জাহান্নাম থেকে মুক্তির ১৫টি অসাধারন হাদিস-
*১-গীবত থেকে দূরে থাকা- আসমা বিনতে ইয়াযীদ হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যাক্তি তার (মুসলিম) ভায়ের অনুপস্থিতিতে (তার গীবত করা ও ইজ্জত লুটার সময় প্রতিবাদ করে) তার সম্ভ্রম রক্ষা করে সেই ব্যাক্তি আল্লাহ্‌র নিকট এই অধিকার পায় যে তিনি তাঁকে দোযখ থেকে মুক্ত করে দেন।”(আহমদ, ত্বাবারানী, সহীহুল জামে- ৬২৪০)
#কিন্তু এখন অবস্থা তোঁ পুরোই উল্টা, কোথাও কারো নিন্দা করা হলে আমরা প্রতিবাদ না করে বরং নিজেরাই অংশগ্রহন করি তবে নবী (সাঃ)-এর এ হাদিস থেকে তারাই শিক্ষা নিবে যারা জান্নাত যেতে ইচ্ছুক।
*২- প্রতিদিন ৩৬০ বার তাসবিহ, তাহলিল, তাকবীর, তাহমিদ আদায় করা- “আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার

পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার
আব্দুল্লাহিল হাদী


بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين والصلاة و السلام على رسوله و على آله وصحبه أجمعين. أما بعد:
দীর্ঘ দিন সীমাহীন কষ্ট ও অবর্ণনীয় যাতনা সহ্য করে মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন। মায়ের পেটে সন্তান যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে তার কষ্টের মাত্রা ততই বাড়তে থাকে। মৃত্যু যন্ত্রনা পার হয়ে যখন সন্তান ভূমিষ্ট হয় তখন এ নবজাতককে ঘিরে মায়ের সব প্রত্যশা এবং সপ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে।
এই নবজাতকের ভিতর সে দেখতে পায় জীবনের সব রূপ এবং সৌন্দর্য। যার ফলে দুনিয়ার প্রতি তার আগ্রহ এবং সম্পর্ক আরো গভীরতর হয়। পরম আদর-যত্নে সে শিশুর প্রতিপালনে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। নিজের শরীরের নির্যাস দিয়ে তার খাবারের ব্যাবস্থা করে। নিজে কষ্ট করে তাকে সুখ দেয়। নিজে ক্ষুর্ধাত থেকে তাকে খাওয়ায়। নিজে নির্ঘূম রাত কাটায় সন্তানের ঘুমের জন্য। মা পরম আদর আর সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে সন্তানকে ঘিরে রাখে সর্বক্ষণ। সন্তান কোথাও গেলে আল্লাহর নিকট দুআ করে যেন তার সন্তান নিরাপদে ঘরে ফিরে আসে। সন্তানও যে কোন বিপদে ছুটে আসে মায়ের কোলে। পরম নির্ভরতায় ভরে থাকে তার বুক। যত বিপদই আসুক না কেন মা যদি বুকের সাথে চেপে ধরে কিংবা স্নেহ মাখা দৃষ্টিতে একবার তাকায় তাহলে সব কষ্ট যেন নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। এই হল মা।
আর পিতা? তাকে তো সন্তানের মুখে এক লোকমা আহার তুলে দেয়ার জন্য করতে হয় অক্লান্ত পরিশ্রম। মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। সহ্য করতে হয় কতধরণের কষ্ট এবং ক্লেশ। সন্তানের জন্যই তো তাকে কখনো কখনো কৃপনতা করতে হয়। কখনো বা ভীরুতার পরিচয় দিতে হয়। সন্তান কাছে গেলে হাঁসি মুখে তাকে বুকে টেনে নেয়। তার নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য সে যে কোন ধরণের বিপদের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। ইত্যাদি কারণে আমাদের অস্তিতের প্রতিটি কোণা পিতা-মাতার নিকট ঋণী। আর তাই তো আল কুরআনে আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের পরই পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণ করার কথা উচ্চারিত হয়েছে বার বার। ইরশাদ হচ্ছেঃ
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاهُمَا فَلا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلاً
তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলেও আদেরকে বিরক্তি সূচক কিছু বলো না। এবং তাদেরকে ভর্র্ৎসনা করো না; তাদের সাথে কথা বলো সম্মান সূচক নম্র কথা। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ২৩)
আল কুরআনের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার, প্রখ্যাত সাহাবী অবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আল কুরআনে এমন তিনটি আয়াত আছে যেখানে তিনটি জিনিস তিনটি জিনিসের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। একটি ছাড়া অন্যটি অগ্রহণযোগ্য। সে তিনটি আয়াত হলঃ
১) আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর তার রাসূলের। এবং (তাদের বিরুদ্ধাচারণ করে) নিজেদের আমল বিনষ্ট কর না। (সূরা মুহাম্মাদ 33)
কেউ যদি আল্লাহর আনুগত্য করে কিন্তু রাসূলের আনুগত্য না করে তাহলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ২) আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং তোমরা সালাত (নামায) আদায় কর এবং যাকাত দাও। (সূরা বাক্বারাঃ ৪৩)
কেউ যদি নামায পড়ে কিন্তু যাকাত দিতে রাজী নয় তাহলে তাও আল্লাহর দরবারে গ্রহণীয় নয়।
৩) আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ আমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় কর। (সূরা লোকমানঃ ১৪)
কেউ যদি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে কিন্তু পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় না করে তবে তা আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত।
সে কারণেই মহাগ্রন্থ আল কুরআনে একাধিকবার আল্লাহর আনুগত্যের নির্দেশের সাথে সাথে পিতা-মাতার আনুগত্য করার প্রতি নির্দেশ এসেছে। ধ্বনীত হয়েছে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করার প্রতি কঠিন হুশিয়ারী। তা যে কোন কারণেই হোক না কেন। ইরশাদ হচ্ছেঃ
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً
তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। এবং তার সাথে কাউকে শরীক কর না আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর । (সূরা নিসাঃ ৩৬)।
আল্লাহ ত।আলা আরো ইরশাদ করেনঃ
وَوَصَّيْنَا الْأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً
‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।” (সূরা আনকাবূতঃ ৮
তিনি আরও বলেনঃ
الْأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْناً عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ
“আর আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে (সন্তানকে) কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।” (সূরা লোকমানঃ ১৪)
উল্লেখিত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে পিতা-মাতার মর্যাদা এবং তাদের প্রতি সন্তানদের অধিকারের প্রমান বহন করছে।
প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীস থেকেঃ
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস থেকেও এ ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়ঃ
১) পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টিঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “পিতা-মাতার সন্তুষ্টির উপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতা-মাতার অসন্তষ্টির উপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি নির্ভর করছে।” (ত্ববারানী কাবীর-সহীহ)
২) ফিরে যাও, তাদের মুখে হাসি ফোটাওঃ আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক সাহাবী নবী করীম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, আমি আপনার কাছে এসেছি হিজরত করার জন্য শপথ করতে। আমি যখন আসি আমার পিতা-মাতা কাঁদছিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তাদের কাছে ফিরে যাও, এবং যেমন তাদেরকে কাঁদিয়েছিলে এখন তাদেরকে গিয়ে হাঁসাও।” (আবু দাউদ, নাসাঈ,ইবন মাজাহ-সহীহ)
৩) তার পা ধর, ওখানেই তোমার জান্নাতঃ মুয়া’বিয়া ইবন জাহাম সুহামী নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বললেন, “যাও, তোমার আম্মার সেবা কর।” কিন্তু তিনি জিহাদে যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ জানাতে থাকলে তিনি বললেন, “হায় আফসোস! তোমার মার পা ধরে থাক। ওখানেই তোমার জান্নাত।” (মুসনাদ আহমাদও ইবন মাজাহ্)
৪) পিতার তুলনায় মার অধিকার তিনগুণ বেশীঃ সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একলোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার উত্তম সংশ্রব পাওয়ার জন্য কে সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত? তিনি বললেন, তোমার মা।” লোকটি আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে? তিনি বললেন, “তোমার মা।” সে আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে? তিনি বললেন, “তোমার পিতা। (বুখারী-মুসলিম)
অত্র হাদীস প্রমাণ বহন করে, পিতার তুলনায় মা তিনগুণ সদাচারণ পাওয়ার অধিকারী। কারণ, গর্ভে ধারণ, ভুমিষ্ট ও দুগ্ধদানের ক্ষেত্রে কেবল মাকেই অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়। পিতা কেবল সন্তান প্রতিপালনে স্ত্রীর সাথে অংশ গ্রহণ করে। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ ত।আলা ইরশাদ করেনঃ
وَوَصَّيْنَا الْأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَاناً حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهاً وَوَضَعَتْهُ كُرْهاً وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلاثُونَ شَهْراً
অর্থঃ “আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে (সন্তানকে) গর্ভে ধারণ করেছে কষ্টের সাথে এবং প্রসব করেছে কষ্টের সাথে। তাকে গর্ভে ধারতে ও তার স্তন ছাড়াতে সময় লাগে ত্রিশ মাস। (আহক্বাফঃ ১৫)
৫) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের প্রতি আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তাকাবেন নাঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ তা’আলা তাকাবেন না। তাদের মধ্যে একজন হল, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান। (সহীহ-নাসঈ, আহমাদ, হাকেম)
৬) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে নাঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তাদের মধ্যে একজন হল, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান। (সহীহ-নাসঈ, আহমাদ, হাকেম)
৭) তবুও অবাধ্যতা নয়ঃ মু’য়ায (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দশটি বিষয়ে উপদেশ দিয়ে গেছেন। তা হলো, আল্লাহর সাথে শিরক করবে না যদিও তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে দেয়া হয় এবং আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়। এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না যদিও তারা তোমাকে তোমার পরিবার, এবং সম্পদ ছেড়ে চলে যেতে বলে…। (মুসনাদ আহমাদ)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর মাঃ
পিতা-মাতার সাথে কিরূপ আচরণ করতে হবে সে ব্যাপারে ইতোপূর্বে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একাধিক হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। এখন দেখব নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মা-জননীর প্রতি বাস্তব জীবনে আমাদের জন্য কী আদর্শ রেখে গেছেন।
সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, হুদায়বিয়া সন্ধির সময় প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাথে আছে এক হাযার ঘোড় সাওয়ার। মক্কা ও মদীনার মাঝে আবওয়া নামক স্থানে তাঁর প্রাণ প্রিয় মা-জননী চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি যাত্রা বিরতী করে তাঁর মা’র কবর যিয়ারত করতে গেলেন। কবরের কাছে গিয়ে তিনি কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তার চর্তুদিকে দাঁড়িয়ে থাকা সাহাবীগণও কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি আল্লাহর দরবারে আমার মা’র জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু তার কবর যিয়ারতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাতে অনুমতি দেন। সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারত কর। কারণ, কবর যিয়ারত করলে পরকালের কথা স্মরণ হয়।”
ইবরাহীম (আঃ) এবং তার পিতা-মাতাঃ
ইবরাহীম (আঃ) এর পিতা-মাতা কাফের ছিল। তারপরও তিনি তাদের সাথে অত্যন- বিনয় ও ভদ্রতা সুলোভ আচরণ করতেন। তিনি তার পিতাকে শির্ক পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আহবান জানাচ্ছেনঃ
يَا أَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لا يَسْمَعُ وَلا يُبْصِرُ وَلا يُغْنِي عَنْكَ شَيْئاً
“আব্বাজান, আপনি কেন এমন জিনিসের ইবাদত করছেন যা শুনে না, দেখে না এবং আপনার কোন উপকারও করতে পারে না?”
কিন্তু সে তা শুধু প্রত্যাখ্যানই করল না বরং তাকে মেরে-পিটে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিল। তখন তিনি শুধু এতটুকুই বলেছিলেনঃ
قَالَ سَلامٌ عَلَيْكَ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّي إِنَّهُ كَانَ بِي حَفِيّاً
“আপনাকে সালাম। আমি আপনার জন্য আল্লাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব।” (সূরা মারইয়ামঃ ৪৭
ইয়াহয়া (আঃ): আল্লাহ তা’আলা তার প্রশংসা করে বলেনঃ
সে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারী ছিল।” (সূরা মারইয়ামঃ ১৪)
এভাবে অনেক নবীর কথা আল কুরআনে উল্লেখ করে আল্লাহ তা’আলা বিশ্ববাসীর সামনে অনুকরণীয় আদর্শ উপস্থাপন করেছেন।
আমাদের পূর্ব পুরুষগণ পিতা-মাতার সাথে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। এসমস্ত মহামনিষীদের মধ্যে আবু হুরাইরা (রাঃ), আবদুল্লাহ্ ইবন্ মাসঊদ (রাঃ), ইবন্ হাসান তামীমী (রহঃ), ইবন আউন মুযানী (রহঃ) প্রমুখের নাম ইতিহাসখ্যাত।
পিতা-মাতার অবাধ্যতার বিভিন্ন রূপঃ পিতা-মাতার অবাধ্যতার বিভিন্ন রূপ হতে পারে যা হয়ত অনেক মানুষের কাছেই অজানা।
১) পিতা-মাতার উপর নিজেকে বড় মনে করা। অর্থ-সম্পদ, শিক্ষা-দীক্ষা, সম্মান-প্রতিপত্তিতে পিতা-মাতার চেয়ে বেশী অথবা অন্য যে কোন কারণেই হোক না কেন নিজেকে বড় বড় মনে করা।
২) পিতা-মাতাকে পিতা-মাতাকে সহায়-সম্বলহীন এবং নিঃস্ব অবস্থায় ফেলে রাখা এবং যার কারণে তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাততে বাধ্য হয়।
৩) বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-পুত্র বা অন্য কাউকে, এমনকি নিজের প্রয়োজনকেও পিতা-মাতার উপর অগ্রাধিকার দেয়া তাদের নাফরমানীর অন্তর্ভূক্ত।
৪) পিতা-মাতাকে শুধু নাম ধরে বা এমন শব্দ প্রয়োগে ডাকা যা তাদের অসম্মান ও মর্যাদাহানীর ইঙ্গিত দেয়।
৫) পিতা-মাতার সাথে চোখ রাঙ্গিয়ে ধমকের সাথে কথা বলা।
৬) তাদের সেবা-শশ্রুসা না করা এবং শারিরীক বা মানষিক দিকের প্রতি লক্ষ না রাখা। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে বা রোগ-ব্যধিতে তাদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা।
পরিশেষেঃ প্রতিটি জ্ঞানবান মানুষের আছে আহবান জানাবো, আসুন, পিতা-মাতার ব্যাপারে অবহেলা করার ব্যাপারে সাবধানত হই। তাদের প্রতি প্রর্দশন করি সর্বোচ্চ সম্মান জনক আচরণ। কারণ এর মাধ্যমেই আমাদের পার্থিব জীবন সুন্দর হবে। গুনাহ-খাতা মাফ হবে। পরকালে মিলবে চির সুখের নিবাস জান্নাত।
হে পরোওয়ারদেগার, তুমি তোমার রহমতের চাদরে আচ্ছাদিত করে আমাদেরকে আমাদের পিতা-মাতার সাথে চির শান্তির নীড় জান্নাতে একত্রিত করিও এটাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা। আমীন॥

ওযু করার নিয়ম

ওযু করার নিয়ম


১- নামাযী প্রথমে মনে মনে ওযুর নিয়ত করবে। কারণ নিয়ত ছাড়া কোন কর্মই শুদ্ধ হয় না। (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ১নং)
২- ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলে ওযু শুরু করবে। কারণ শুরুতে তা না বললে ওযু হয় না। (আবূদাঊদ, সুনান ৯২নং)
৩- তিনবার দুইহাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেবে।হাতে ঘড়ি, চুড়ি, আংটি প্রভৃতি থাকলে তা হিলিয়ে তার তলে পানি পৌঁছাবে। আঙ্গুল দিয়ে আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল করবে। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ৪০৭নং) এরপর পানির পাত্রে হাত ডুবিয়ে পানি নিতে পারে। (বুখারী, মুসলিম, সহীহ ৩৯৪নং) প্রকাশ যে, নখে নখ পালিশ বা কোন প্রকার পুরু পেন্ট থাকলে তা তুলে না ফেলা পর্যন্ত ওযু হবে না। পক্ষান্তরে মেহেদী বা আলতা লেগে থাকা অবস্থায় ওযু-গোসল হয়ে যাবে।
৪- তারপর ডানহাতে পানি নিয়ে ৩ বার কুল্লি করবে।
৫-অতঃপর পানি নিয়ে নাকের গোড়ায় লাগিয়ে টেনে নিয়ে বামহাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। এরুপ ৩ বার করবে। তবে রোযা অবস্থায় থাকলে সাবধানে নাকে পানি টানবে, যাতে গলার নিচে পানি না চলে যায়। (তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান ৮৯, মিশকাত ৪০৫, ৪১০নং)
অবশ্য এক লোট পানিতেই একই সাথে অর্ধেক দিয়ে কুল্লি করে বাকি অর্ধেক দিয়ে নাক ঝাড়লেও চলে। (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ৩৯৪নং)
৬- অতঃপর মুখমন্ডল (এক কান থেকে অপর কানের মধ্যবর্তী এবং কপালের চুলের গোড়া থেকে দাড়ির নিচের অংশ পর্যন্ত অঙ্গ) ৩ বার পানি লাগিয়ে দুইহাত দ্বারা ধৌত করবে। (বুখারী ১৪০নং) এক লোট পানি দাড়ির মাঝে দিয়ে দাড়ির ফাঁকে ফাঁকে আঙ্গুল চালিয়ে তা খেলাল করবে। (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৪০৮নং) মহিলাদের কপালে টিপ (?) থাকলে ছাড়িয়ে ফেলে (কপাল) ধুতে হবে। নচেৎ ওযু হবে না।
৭- অতঃপর প্রথমে ডানহাত আঙ্গুলের ডগা থেকে কনুই পর্যন্ত এবং তদনুরুপ বামহাত ৩ বার (প্রত্যেক বারে পুরোহাতে পানি ফিরিয়ে রগড়ে) ধৌত করবে।
৮- অতঃপর একবার মাথা মাসাহ্‌ করবে; নতুন পানি দ্বারা দুই হাতকে ভিজিয়ে আঙ্গুল গুলিকে মুখোমুখি করে মাথার সামনের দিক (যেখান থেকে চুল গজানো শুরু হয়েছে সেখান) থেকে পিছন দিক (গর্দানের যেখানে চুল শেষ হয়েছে সেখান) পর্যন্ত স্পর্শ করে পুনরায় সামনের দিকে নিয়ে এসে শুরুর জায়গা পর্যন্ত পূর্ণ মাথা মাসাহ্‌ করবে। (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ৩৯৪নং) মাথায় পাগড়ি থাকলে তার উপরেও মাসাহ্‌ করবে। (মুসলিম,  মিশকাত ৩৯৯নং)
৯- অতঃপর আর নতুন পানি না নিয়ে ঐ হাতেই দুই কান মাসাহ্‌ করবে; শাহাদতের (তর্জনী) দুই আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের ভিতর দিক এবং দুই বুড়ো আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের পিঠ ও বাহির দিক মাসাহ্‌ করবে। (আবূদাঊদ, সুনান ৯৯, ১২৫নং)
প্রকাশ যে, গর্দান মাসাহ্‌ করা বিধেয় নয়। বরং এটা বিদআত।
১০- অতঃপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা গাঁট পর্যন্ত ৩ বার করে রগড়ে ধোবে। কড়ে আঙ্গুল দ্বারা পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল করে রগড়ে ধৌত করবে। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ৪০৭নং)
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “পূর্ণাঙ্গরুপে ওযু কর, আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল কর আর রোযা না থাকলে নাকে খুব ভালরুপে পানি চড়াও। (তারপর তা ঝেড়ে ফেলে উত্তমরুপে নাক সাফ কর।) (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৪০৫-৪০৬ নং)
১১- এরপর হাতে পানি নিয়ে কাপড়ের উপর থেকে শরমগাহে ছিটিয়ে দেবে। বিশেষ করে পেশাব করার পর ওযু করলে এই আমল অধিকরুপে ব্যবহার্য। যেহেতু পেশাব করে তাহারতের পর দু-এক কাতরা পেশাব বের হওয়ার অসঅসা থাকে। সুতরাং পানি ছিটিয়ে দিলে ঐ অসঅসা দূর হয়ে যায়। (আবূদাঊদ, সুনান ১৫২-১৫৪, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৩৭৪-৩৭৬নং) এই আমল খোদ জিবরাঈল (আঃ) মহানবী (সাঃ) কে শিক্ষা দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, দারেমী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী, আহমাদ, মুসনাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৮৪১নং)

ওযু নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ

ওযু নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ


১। পেশাব ও পায়খানা দ্বার হতে কিছু (পেশাব, পায়খানা, বীর্য, মযী, হাওয়া, রক্ত, কৃমি, পাথর প্রভৃতি) বের হলে ওযু ভেঙ্গে যায়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন /২২০)
তদনুরুপ দেহের অন্যান্য অঙ্গ থেকে (যেমন অপারেশন করে পেট থেকে পাইপের মাধ্যমে) অপবিত্র (বিশেষ করে পেশাব-পায়খানা) বের হলেও ওযু নষ্ট হয়ে যাবে। (ঐ১/২২১)
২। যাতে গোসল ওয়াজেব হয়, তাতে ওযুও নষ্ট হয়।
৩। কোন প্রকারে বেহুশ বা জ্ঞানশূন্য হলে ওযু নষ্ট হয়।
৪। গাঢ়ভাবে ঘুমিয়ে পড়লে ওযু ভাঙ্গে। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “ চোখ হল মলদ্বারের বাঁধন। সুতরাং যে ঘুমিয়ে যায়, সে যেন ওযু করে।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ৩১৬, জামে ৪১৪৯নং)
অবশ্য হাল্কা ঘুম বা ঢুল (তন্দ্রা) এলে ওযু ভাঙ্গে না। সাহাবায়ে কেরাম নবী (সাঃ) এর যুগে এশার নামাযের জন্য তাঁর অপেক্ষা করতে করতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ঢুলতেন। অতঃপর তিনি এলে তাঁরা নামায পড়তেন, কিন্তু নতুন করে আর ওযু করতেন না। (মুসলিম, সহীহ ৩৭৬নং, আবূদাঊদ, সুনান ১৯৯-২০১নং)
৫। পেশাব অথবা পায়খানা-দ্বার সরাসরি স্পর্শ করলে ওযু নষ্ট হয়। (কাপড়ের উপর থেকে হাত দিলে নষ্ট হয় না।) (জামে ৬৫৫৪, ৬৫৫৫নং) মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিনা পর্দায় ও অন্তরালে নিজের শরমগাহ্‌ স্পর্শ করে, তার উপর ওযু ওয়াজেব হয়ে যায়।” (জামে ৩৬২, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১২৩৫ নং)
হাতের কব্জির উপরের অংশ দ্বারা স্পর্শ হলে ওযু ভাঙ্গবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন /২২৯)
৬। উটের গোশত (কলিজা, ভূঁড়ি) খেলে ওযু ভেঙ্গে যায়। এক ব্যক্তি মহানবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, ‘উটের গোশত খেলে ওযু করব কি?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ, উটের গোশত খেলে ওযু করো।” (মুসলিম, সহীহ ৩৬০নং)
তিনি বলেন, “উটের গোশত  খেলে তোমরা ওযু করো।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, জামে ৩০০৬ নং)

জান্নাতে যাওয়ার সহজ ১৩ টি আমল!!

জান্নাতে যাওয়ার সহজ ১৩ টি আমল!!



জান্নাতে যাওয়ার সহজ মাধ্যমগুলো জেনে নিনঃ
★★★ প্রত্যেক ওযুর পর কালেমা শাহাদত পাঠ
করুণ(আশ্হাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-
শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া
রাসূলুহূ) এতে জান্নাতের ৮টি দরজার যে কোন
দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। ☞ (সহিহ
মুসলিম, হাদিস নং- ২৩৪)
★★★ প্রত্যেক ফরজ সলাত শেষে আয়াতুল
কুরসি পাঠ করুণ এতে মৃত্যুর সাথে সাথে জান্নাতে
যেতে পারবেন। ☞ (সহিহ নাসাই, সিলসিলাহ সহিহাহ,
হাদিস নং- ৯৭২)
★★★ প্রত্যেক ফরজ সলাত শেষে ৩৩ বার
সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ৩৩ বার আল্লাহু
আকবার এবং ১ বার (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা
শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা
কুল্লি শাই’ইন কাদীর) পাঠ করুণ এতে আপনার
অতীতের সব পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে। ☞ (সহিহ
মুসলিম, হাদিস নং- ১২২৮)
সেই সাথে জাহান্নাম থেকেও মুক্তি পেয়ে
যাবেন কেননা দিনে ৩৬০ বার এই তাসবিহগুলো
পড়লেই জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হয় আর
এভাবে ৫ ওয়াক্তে ৫০০ বার পড়া হচ্ছে। ☞ (সহিহ
মুসলিম, মিশকাত হাদিস নং- ১৮০৩)
★★★ প্রতিরাতে সূরা মুলক পাঠ করুণ এতে
কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। ☞
(সহিহ নাসাই, সহিহ তারগিব, হাকিম হাদিস নং- ৩৮৩৯,
সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস নং- ১১৪০)
★★★ রাসুল (সাঃ)-এর উপর সকালে ১০ বার ও
সন্ধ্যায় ১০ বার দরুদ পড়ুন এতে আপনি নিশ্চিত রাসুল
(সাঃ)-এর সুপারিশ পাবেন। ☞ (তবরানি, সহিহ তারগিব,
হাদিস নং- ৬৫৬)
★★★ সকালে ১০০ বার ও বিকালে ১০০ বার
সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি পরলে সৃষ্টিকুলের
সমস্ত মানুষ থেকে বেশী মর্যাদা দেওয়া
হবে। ☞ (সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং- ৫০৯১)
★★★ সকালে ১০০ বার ও সন্ধ্যায় ১০০ বার
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি পাঠ করলে কিয়ামতের দিন
তার চেয়ে বেশী সওয়াব আর কারো হবে না।
☞ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৬৯২)
★★★ সকালে ও বিকালে ১০০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০০
বার আলহামদুলিল্লাহ্, ১০০ বার আল্লাহু আকবার এবং ১০০
বার লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল
মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন
কাদীর পাঠ করলে অগণিত সওয়াব হবে। ☞ (নাসাই,
সহিহ তারগিব, হাদিস নং- ৬৫১)
★★★ বাজারে প্রবেশ করে- (লা ইলা-হা
ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল
হামদু য়্যুহয়ী ওয়া য়্যুমীতু ওয়া হুয়া হাইয়ুল লা য়্যামূত,
বিয়াদিহিল খাইরু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর)পাঠ
করুণ এতে ১০ লক্ষ পুণ্য হবে, ১০ লক্ষ পাপ
মোচন হবে, ১০ লক্ষ মর্যাদা বৃদ্ধি হবে এবং
জান্নাতে আপনার জন্য ১ টি গৃহ নির্মাণ করা হবে।
☞ (তিরমিজি, হাদিস নং- ৩৪২৮,৩৪২৯)
★★★ বাড়িতে সালাম দিয়ে প্রবেশ করুণ এতে
আল্লাহ তা’লা নিজ জিম্মাদারিতে আপনাকে জান্নাতে
প্রবেশ করাবেন। ☞ (ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ৪৯৯,
সহিহ তারগিব, হাদিস নং- ৩১৬)
★★★ প্রতিমাসের আয়ের একটা অংশ এতিমখানা বা
মসজিদ মাদ্রাসা বা গরিব-দুখি, বিধবা ও দুস্থদের মাঝে
দান করবেন হোক সেটা অতি অল্প এতে আপনি
আল্লাহ তা’লার কাছে জিহাদকারির সমতুল্য হবেন। ☞
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ৬০০৭)
★★★ মহিলারা ৪টি কাজ করবেন, ১- ৫ ওয়াক্ত সলাত
২- রমজানের সিয়াম, ৩- লযযাস্থানের হেফাজত,
৪- স্বামীর আনুগত্য করুণ এতে জান্নাতের যে
কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। ☞
(সহিহ ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ৪১৬৩ )
★★★ ফজরের সলাত আদায় করে
বসে দোয়া জিকির পাঠ করুণ এবং সূর্য উঠে
গেলে ২ রাকাত ইশরাকের সলাত আদায় করুণ এতে
প্রতিদিন নিশ্চিত কবুল ১ টি হজ্জ ও উমরার সওয়াব
পাবেন। ☞ ( তিরমিজি, তারগিব হাদিস নং- ৪৬১)
.
(বি দ্রঃ শির্ক, বিদআত ও হারাম ভক্ষণ থেকে দূরে
না থাকলে কোন দোয়াই কবুল হয় না)

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ