Saturday, March 31, 2018

আরবী ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা প্রদানের বিধান কি?

(৩২৪) আরবী ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা প্রদানের বিধান কি?


এই মাসআলায় বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, উপস্থিত মুছল্লীগণ যে ভাষা বুঝে না সে ভাষায় জুমআর খুতবা প্রদান করা জায়েয নয়। যদি উপস্থিত মুছল্লীগণ আনারব হন্ত তারা আরবী না বুঝেন, তবে তাদের ভাষাতেই খুতবা প্রদান করবে। কেননা তাদেরকে বুঝানোর জন্য এ ভাষাই হচ্ছে বক্তৃতা করার মাধ্যম। আর জুমআর খুতবার লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে আল্লাহ্‌র বিধি-বিধান বর্ণনা করা, তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করা। তবে কুরআনের আয়াত সমূহ অবশ্যই আরবী ভাষায় পাঠ করতে হবে। অতঃপর মাতৃভাষায় তার তাফসীর করে দিবে। আর মাতৃভাষায় খুতবা প্রদানের দলীল হচ্ছে, আল্লাহ্‌ বলেনঃ

জুমআর দিবসে গোসল করার বিধান কি নারী ও পুরুষের সকলের জন্য? এ দিনের এক বা দু’দিন পূর্বে গোসল করার হুকুম কি?

(৩২৫) জুমআর দিবসে গোসল করার বিধান কি নারী ও পুরুষের সকলের জন্য? এ দিনের এক বা দু’দিন পূর্বে গোসল করার হুকুম কি?


জুমআর দিবসে গোসল ও সাজ-সজ্জার বিধান শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যই। কেননা সেই জুমআর নামাযে উপস্থিত হবে। গোসল ও সৌন্দর্য গ্রহণ পুরুষকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে। নারীদের জন্য এটা শরীয়ত সম্মত নয়। তবে যে কোন মানুষ নিজের শরীরে বা অঙ্গে ময়লা-আবর্জনা দেখতে পেলেই তা পরিস্কার করবে। কেননা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামে প্রশংসিত বিষয়, এতে উদাসীনতা কারো জন্য উচিৎ নয়।

খুতবার জন্য দ্বিতীয় আযানের সময় মসজিদে প্রবেশ করলে করণীয় কি?

(৩২৬) খুতবার জন্য দ্বিতীয় আযানের সময় মসজিদে প্রবেশ করলে করণীয় কি?


বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন যে, কোন ব্যক্তি জুমআর দিবসে মসজিদে প্রবেশ করে যদি দেখে মুআয্‌যিন খুতবার জন্য দ্বিতীয় আযান প্রদান করছে। তখন সে তাহিয়্যাতুল মসজিদ শুরু করবে, মুআয্‌যিনের আযানের জবাব দিতে ব্যস্ত হবে না। যাতে করে খুতবা শোনার জন্য প্রস্ততি নিতে পারে। কেননা

জুমআর মসজিদে মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যাওয়ার বিধান কি?

(৩২৭) জুমআর মসজিদে মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যাওয়ার বিধান কি?


খুতবা চলা অবস্থায় যদি কেউ মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যেতে চায়, তবে কোন কথা না বলেই তাকে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। বসে যাওয়ার জন্য তাকে ইঙ্গিত করবে বা

ইমামের খুতবার সময় মসজিদে প্রবেশ কালে সালাম প্রদান এবং সালামের জবাব দেয়ার বিধান কি?

(৩২৮) ইমামের খুতবার সময় মসজিদে প্রবেশ কালে সালাম প্রদান এবং সালামের জবাব দেয়ার বিধান কি?


ইমামের খুতবা চলাবস্থায় কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে শুধুমাত্র দু’রাকাত নামায হালকা করে আদায় করবে। কাউকে সালাম দিবে না। কেননা এ অবস্থায় মানুষকে সালাম দেয়া হারাম। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

ঈদের দিন কি বলে একে অপরকে অভিনন্দন জানাবে?

(৩২৯) ঈদের দিন কি বলে একে অপরকে অভিনন্দন জানাবে?


ঈদের জন্য অভিনন্দন জানানো জায়েয। তবে এর জন্য বিশেষ কোন বাক্য নেই। মানুষের সাধারণ সমাজে প্রচলিত যে কোন শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা যেন কোন অশ্লীল শব্দ না

ঈদের নামাযের বিধান কি?

(৩৩০) ঈদের নামাযের বিধান কি?


আমি মনে করি ঈদের নামায ফরযে আঈন তথা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয। কোন পুরুষের জন্য এ নামায পরিত্যাগ করা জায়েয নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশ প্রদান করেছেন। বরং কুমারী পর্দানশীন নারীদেরকেও এ নামাযে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন; এমনকি ঋতুবতী নারীদেরকেও অনুরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন। তবে ঋতুবতী ছালাত আদায় করবেনা। এ দ্বারা এ নামাযের অতিরিক্ত গুরুত্ব বুঝা যায়। এটাই প্রাধান্যযোগ্য মত এবং শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াও (রহঃ) অনুরূপ মত পোষণ করেছেন।

এক শহরে একাধিক ঈদের নামায অনুষ্ঠিত করার বিধান কি?

(৩৩১) এক শহরে একাধিক ঈদের নামায অনুষ্ঠিত করার বিধান কি?


যদি প্রয়োজন দেখা যায় তবে কোন অসুবিধা নেই। যেমন প্রয়োজন দেখা দিলে জুমআর নামায একাধিক স্থানে অনুষ্ঠিত করা যায়। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ “দ্বীনের মাঝে আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য কোন অসুবিধা রাখেন নি।” (সূরা হাজ্জঃ ৭৮) একাধিক স্থানে নামায অনুষ্ঠিত জায়েয না হলে নিশ্চিতভাবে অনেক মানুষ জুমআ ও ঈদের নামায থেকে বঞ্চিত হবে। ‘প্রয়োজন্তু বলতে উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেমন শহর অনেক বড়। শহরের সকল প্রান্ত থেকে লোকদের একস্থানে সমবেত হওয়া কষ্টকর, অথবা ঈদগাহে জায়গার সংকুলান না হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এধরণের কোন অসুবিধা না থাকলে একাধিক স্থানে জুমআ বা ঈদের নামায অনুষ্ঠিত করা যাবে না।

দু’ঈদের নামাযের পদ্ধতি কিরূপ?

(৩৩২) দু’ঈদের নামাযের পদ্ধতি কিরূপ?


দু’ঈদের নামাযের পদ্ধতি হচ্ছেঃ প্রথমে ইমাম উপস্থিত লোকদের নিয়ে দু’রাকাত নামায আদায় করবে। প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরিমা দেয়ার পর অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর দিবে। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে এবং সূরা ‘ক্বাফ’ পাঠ করবে। দ্বিতীয় রাকাতে তাকবীর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়বে এবং সূরা পাঠ শুরু করার পূর্বে অতিরিক্ত পাঁচটি তাকবীর প্রদান করবে। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে সূরা ‘ক্বামার’ পাঠ করবে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ঈদের নামাযে এ দু’টি সূরা পাঠ করতেন। অথবা ইচ্ছা করলে প্রথম রাকাতে ‘সূরা আ‘লা’ এবং দ্বিতীয় রাকাতে ‘সূরা গাশিয়া’ পাঠ করবে।

ঈদের নামাযের পূর্বে দলবদ্ধভাবে মাইক্রোফোনে তাকবীর প্রদান করার বিধান কি?

(৩৩৩) ঈদের নামাযের পূর্বে দলবদ্ধভাবে মাইক্রোফোনে তাকবীর প্রদান করার বিধান কি?


প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে তাকবীর পাঠ করা বৈধ নয়। কেননা এধরণের পদ্ধতি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত নয়। সুন্নাত হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে নিজে আলাদাভাবে তাকবীর পাঠ করবে।

রাসূল (সা:) এর ছায়া ছিল কি? কুরআন ও হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা

রাসূল (সা:) এর ছায়া ছিল কি? কুরআন ও হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা
===================================
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো ছায়া ছিল না বলে যে কথাটি আপনি বা আপনারা শুনেছেন তা সত্য নয়। বরং এ সংক্রান্ত যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় তার সবই জাল এবং পরিত্যাজ্য। শায়খ ইবনে উসাইমিন রহ. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো ছায়া ছিল না বলে যেসব কথা বলা হয় তার সবই মিথ্যা এবং বানোয়াট। আলকাউলুল মুফীদ ১/৬৮।
এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন, মারকাযুদ্দাওয়া আলইসলামিয়া এর শিক্ষাসচিব, হাদীস শাস্ত্রের প্রাণপুরুষ শায়খ আব্দুল মালেক দা.বা. এর নির্দেশনায় রচিত প্রচলিত জাল হাদীস (প্রথম প্রকাশনা) ১৮৮।
তাছাড়াও রাসূল (ছাঃ) এর ছায়া ছিল না মর্মে যে বক্তব্য দেয়া হয়, তা বিশুদ্ধ নয়। এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছও ছহীহ নয়। বরং জাল ও ভিত্তিহীন।
রাসূল (ছাঃ) আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন। তারও ছায়া ছিল। ছায়া ছিল না বলাটা রাসূল (ছাঃ) এর জীবনী ও সাহাবাদের বক্তব্য সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক।
রাসূল সাঃ এর ছায়া না থাকা সংক্রান্ত একটি জাল বর্ণনা
ﺍﺧﺮﺝ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﻋﺒﺪ ﺑﻦ ﻗﻴﺲ ﺍﻟﺰﻋﻔﺮﺍﻧﻰ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺍﻟﻮﻟﻴﺪ ﻋﻦ ﺫﻛﺮﺍﻥ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻳﺮﻯ ﻟﻪ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ، ﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﺴﻴﻮﻃﻰ ﻓﻰ “ ﺍﻟﺨﺼﺎﺋﻞ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ – 1/122 )
অনুবাদ-যাকওয়ান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-সূর্য ও চাঁদের আলোতে রাসূল সাঃ এর ছায়া দেখা যেতো না। {আল খাসায়েলুল কুবরা-১/১২২}
জবাব:
এ বর্ণনাটি জাল ও ভিত্তিহীন। কেননা, প্রথমত তার সূত্রে রয়েছে আব্দুর রহমান বিন কাইস যাফরানী, যার সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনদের কঠোর মন্তব্য রয়েছে।
বিজ্ঞ রিজাল শাস্ত্রবীদ আব্দুর রহমান বিন মাহদী এবং ইমাম আবু যরআ রহঃ তাকে মিথ্যুক বলেছেন।
আবু আলী সালেহ ইবনে মুহাম্মদ রহঃ বলেন-
ﻛﻠﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﻗﻴﺲ ﺍﻟﺰﻋﻔﺮﺍﻧﻰ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ
তথা আব্দুর রহমান বিন কাইস যাফরানী হাদীস জাল করতো।
এছাড়াও তার সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ, ইমাম বুখারী রহঃ, ইমাম মুসলিম রহঃ, ইমাম নাসায়ী রহঃ প্রমূখ প্রখ্যাত ইমামদের কঠোর উক্তি রয়েছে। [দ্রষ্টব্য- তারীখে বাগদাদ-১০/২৫১-২৫২, মীযানুল ই’তিদাল-২/৫৮৩, তাহযীবুত তাহযীব-৬/২৫৮]
এছাড়া সত্যিই যদি রাসূল (ছাঃ) এর ছায়া না হতো, তাহলে এটি অতি আশ্চর্যজনক বিষয় হওয়ায় অনেক ছহীহ হাদীছ থাকার কথা। অথচ এমন কোন হাদীছ নেই।
তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) এর ছায়া আছে মর্মে একাধিক ছহীহ হাদীছ রয়েছে। তাই ছায়া নেই বলাটা অজ্ঞতাসূলভ মন্তব্য ছাড়া কিছু নয়।
রাসূর (ছাঃ) এর ছায়া ছিল মর্মে ছহীহ হাদীছ-
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল এক সফরে ছিলেন। সাথে ছিলেন সাফিয়্যাহ ও যায়নব। সাফিয়্যাহ নিজের উট হারিয়ে ফেলেন। যয়নব (রাঃ) এর কাছে ছিল অতিরিক্ত উট। তাই নবী (সাঃ) যয়নবকে বলেনঃ সাফিয়্যার উট নিখোঁজ হয়ে গেছে, যদি তুমি তাকে তোমার একটি উট দিয়ে সাহায্য করতে তো ভাল হত! উত্তরে যয়নব বলেনঃ হুঁ! আমি ঐ ইহুদির মেয়েকে উট দেব! (অর্থাৎ তিনি দিতে অস্বীকার করেন এবং সাফিয়্যাহ (রাঃ) কে ইহুদী সন্তান বলে কটূক্তি করেন। কারণ তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইহুদী ছিলেন।) এ কটূক্তির কারণে নবী (সাঃ) যয়নবের সাথে মেলামেশা বন্দ করে দেন। জিলহজ্জ এবং মুর্হারম দুই কিংবা তিন মাস ধরে তার সাথে সাক্ষাৎ করা থেকে বিরত থাকেন। যয়নব (রাঃ) বলেন, আমি নিরাশ হয়ে পড়ি এমনকি শয়নের খাটও সরিয়ে নেই। এমনি এক সময় দিনের শেষার্ধে, নিজেকে রাসূল (সাঃ) এর ছায়ার মধ্যে পাই। তিনি আমার দিকে এগিয়ে আসছিলেন। [মুসনাদে আহমদ, ৬/১৬৪-১৮২, আত্ ত্বাবাকাত আল্ কুবরা, ৮/১০০)
হিজরতের লম্বা হাদীসে বর্ণিত, রাবী বলেন: .. .. .. নবী (সাঃ) বানু আমর বিন আউফ গোত্রে রবীউল আউয়াল মাসের সোমবারে অবতরণ করেন। আবু বকর লোকেদের অভ্যর্থনার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে থাকেন। আর নবী (সাঃ) চুপ-চাপ বসে থাকেন। ইতোপূর্বে আনসারদের মধ্যে যারা নবী (সাঃ) কে দেখেনি তারা আবু বকর কে সালাম করতে থাকে (ভুলবশতঃ নবী মনে করে) তারপর যখন আল্লাহর রাসূলের উপর রোদ পড়ে, তখন আবু বকর এসে নিজের চাদর দিয়ে তাঁকে ছায়া করে দেন। এ কারণে মানুষেরা নবী (সাঃ)-কে চিনতে পারে। [বুখারী, কিতাবু মানাকিবিল আনসার, বাবু হিজরাতিন্নাবী.. হাদীস নং ৩৯০৬]
জাবির বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা আল্লাহর রাসূলের সংগী হয়ে নাজদে লড়াই করি। রাস্তার মাঝে নবী (সাঃ) এর “কায়লূলার” (দুপুর বিশ্রামের) প্রয়োজন হয়। জায়গাটিতে ছিল বহু কাঁটাওয়ালা গাছ। তিনি (সাঃ) একটি গাছের নিচে যান এবং সেই গাছের ছায়ার নিচে বিশ্রাম করেন। আর তরবারিটি ডালে টেঙ্গে রাখেন। [বুখারী, কিতাবুল মাগাযী, বাবু গাযওয়াতি বানিল মুস্তালিক হাদীস নং ৪১৩৯]
এবার দেখা যাক তাঁর ছায়া মুবারক ছিল কিনা? বিশ্বনবী (সাঃ) নিজেই নিজের ছায়া দেখেছিলেন বলে প্রমাণিত। এ হাদিস তার দলিল–
.
ﻋﻦ ﺍﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺭﺽ ﻗﺎﻝ ﺑﻴﻨﻤﺎ ﺻﻠﻌﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺫﺍﺕ ﻟﻴﻠﺔ ﺻﻠﻮﺓ ﺍﺫ ﻣﺪ ﻳﺪﻩ ﺛﻢ ﺍﺧﺮﻫﺎ ﻓﻘﻠﻨﺎ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﺃﻳﻨﺎﻙ ﺻﻨﻌﺖ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﺷﻴﺌﺎ ﻟﻢ ﺗﻜﻦ ﺗﺼﻨﻊ ﻓﻴﻤﺎ ﻗﺒﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﺟﻞ ﺍﻧﻪ ﻋﺮﺿﺖ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﺮﺃﻳﺖ ﻓﻴﻬﺎ ﺩﺍﻟﻴﺔ ﻗﻄﻮﻓﻬﺎ ﺩﺍﻧﺒﺔ ﻓﺎﺭﺩﺕ ﺍﻥ ﺍﺗﻨﺎﻭﻝ ﻣﻨﻬﺎ ﺷﻴﺌﺎ ﻧﺎﻭﺣﻲ ﺍﻟﻲ ﺍﻥ ﺍﺳﺘﺄﺧﺮ ﻓﺎﺳﺘﺄﺧﺮﺕ ﻋﺮﺿﺖ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺑﻴﻨﻲ ﻭ ﺑﻴﻨﻜﻢ ﺣﺘﻲ ﺭﺃﻳﺖ ﻇﻠﻲ ﻭ ﻇﻠﻜﻢ ﻓﻴﻬﺎ . ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻓﻲ ﻣﺴﺘﺪﺭﻛﻪ ﻭ ﻗﺎﻝ ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻻﺳﻨﺎﺩ ﻭ ﻟﻢ ﻳﺨﺮﺟﺎﻩ
.
অর্থ, হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন কোনো এক রাতে রাসূল (সাঃ) নামায পড়াচ্ছিলেন। তিনি সহসা সামনের দিকে হাত বাড়ান এরপর তা আবার পেছনের দিকে টেনে নেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ), এ নামাযে আপনাকে এমন কাজ করতে দেখেছি যা ইতিপূর্ব কখনো করেননি।
.
তিনি ইরশাদ করেন, হ্যাঁ। আমার কাছে জান্নাত উপস্থিত করা হয়েছিল। তাতে বিশাল বৃক্ষরাজি দেখতে পেলাম যেগুলোর ছড়া ঝুঁকানো ছিল। তা থেকে কিছু নিতে চাইলে আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হল আপনি পেছনে সরে দাঁড়ান। আমি সরে দাঁড়ালাম। তারপর আমার নিকট জাহান্নাম উপস্থিত করা হল, যার আলোতে আমি আমার এবং তোমাদের (সাহাবিদের) ছায়া পর্যন্ত দেখেছি।” (দলিল : মুসতাদরিকে হাকেম-৫/৬৪৮, সহিহ ইবনে খোজাইমাহ-২/৫০)।
ইমামুল আয়িম্মাহ আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে খোজায়মাহ আস-সালামী আন-নিসাপুরী আশ-শাফেয়ী (রহ) [জন্ম-মৃত্যু ২২৩-৩১১ হিজরী] তিনি তদ্বীয় সহীহ ইবনে খোজায়মাহ কিতাবে হযরত আনাস বিন মালেক (রা) হতে সুস্পষ্ট অর্থবোধক একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহপাকের হাবীব রাসূলেপাক (সা) -এর ছায়া মুবারক ছিল। হাদিসের ভাষ্য : …. ( ﺣﺘﻰ ﺭﺃﻳﺖ ﻇﻠﻲ ﻭﻇﻠﻜﻢ ) “আমি আমার এবং তোমাদের (ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাহাবীদের) ছায়া দেখেছি।”
কে যেন পাল্টা প্রশ্ন করেছিল যে, জাহান্নামের প্রতিচ্ছবি যখন পেশ করা হয় তখন তো তার সামনে জাহান্নামের আগুনের আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়েছিল। যেজন্য তখন নবী ও তাঁর সাহাবিদের ছায়া পেছন দিকেই সরে গিয়েছিল। আর তাই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, নবীজি (সাঃ) নামাযরত অবস্থায় সম্মুখ থেকে পেছনে ছায়া দেখেছিলেন কীভাবে ?
সহজ উত্তর :
রাসূল (সাঃ) নামাযরত অবস্থায় সম্মুখ থেকে পেছনে দেখারও ক্ষমতা রাখেন, ইহা তাঁর অন্যতম মুজিজা বা আলৌকিক বিষয় । এর পক্ষে সুস্পষ্ট দলিল-
১-
ﺍﻧﻲ ﺍﺭﻱ ﻣﺎ ﻻ ﺗﺮﻭﻥ ﻭ ﺍﺳﻤﻊ ﻣﺎ ﻻ ﺗﺴﻤﻌﻮﻥ . ﻣﺸﻜﻮﺓ
٤٥٧ .
.
অনুবাদ: নিশ্চয় আমি যা দেখি তোমরা তা দেখনা। আমি যা শুনতে পাই তোমরা তা শুনতে পাওনা । (সূত্র—মেশকাত-৪৫৭)।
২-
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻧﻲ ﻻﺭﻱ ﻣﻦ ﺧﻠﻔﻲ ﻛﻤﺎ ﺍﺭﻱ ﻣﻦ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻱ . ﻣﺸﻜﻮﺓ ٧٧ .
.
অনুবাদ: আল্লাহর শপথ নিশ্চয় আমি পেছনেও তেমন দেখতে পাই, যেমনি ভাবে আশে পাশে দেখতে পাই। (সূত্র—মেশকাত-৭৭)।
যাইহোক, এ হাদিসটি যদি সত্য হয় তাহলে রাসূলেপাকের (সাঃ) ছায়া মুবারক ছিল, একথাও সত্য। আর তাঁর ছায়া থাকা যদি মিথ্যা হয়, তাহলে রাসূল (সাঃ) কি জন্য এমন কথা বললেন; আগে তার জবাব দিন!
পরিশেষে বলা যায়, রাসূলের (সাঃ) ছায়া মুবারক থাকা সত্তেও তা মাঝে মধ্যে মাটিতে না পড়াই হল তাঁর জন্য অন্যতম মুজিজা বা আলৌকিক বিষয়। কিন্তু যদি বলা হয় যে, তাঁর ছায়াই ছিলনা, তাহলে এমতাবস্থায় তাঁর ছায়া মাটিতে না পড়াটাই স্বাভাবিক। যার ফলে তখন সেটি মাটিতে না পড়াকে কেউ অলৌকিক বিষয় মনে করবে না।
রাসূর (সাঃ) এর ছায়া ছিল মর্মে আরো সহীহ হাদীস:
ﻭﻳﺌﺴﺖ ﻣﻨﻪ ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﺷﻬﺮ ﺭﺑﻴﻊ ﺍﻷﻭﻝ ﺩﺧﻞ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻓﺮﺃﺕ ﻇﻠﻪ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﺇﻥ ﻫﺬﺍ ﻟﻈﻞ ﺭﺟﻞ ﻭﻣﺎ ﻳﺪﺧﻞ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻤﻦ ﻫﺬﺍ ﻓﺪﺧﻞ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
.
অনুবাদ : এমনকি হযরত যায়নব (রাঃ) রাসূল (সাঃ) এর আগমন থেকে নিরাশ হয়ে গেলেন। রবীউল আওয়ালে তার নিকট যান। ঘরে প্রবেশের প্রক্কালে যয়নব (রাঃ) তাঁর ছায়া দেখতে পান এবং বলেন, এতো কোন পুরুষ মানুষের ছায়া বলে মনে হয়। তিনি তো আমার কাছে আসেন না। তাহলে এ ব্যক্তি কে? ইত্যবসরে রাসূল (সাঃ) প্রবেশ করেন। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬৮৬৬}।
কতিপয় লোক এটা প্রচার করছে যে, রাসূল (সাঃ)-এর কোন ছায়া ছিল না। এর সমর্থনে দলিলও দিয়ে থাকে। জবাবে বলা হয় যে, রাসূল (সাঃ)-এর ছায়া ছিল না মর্মে যে দলিল দেয়া হয়, তা বিশুদ্ধ নয়। এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসও সহীহ নয়। বরং জাল ও ভিত্তিহীন।
রাসূল (সাঃ) একজন সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হওয়া সত্ত্বেও আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন। উনারও ঘাম হতো, ছায়াও ছিল। ছায়া ছিলনা বলাটা রাসূল (সাঃ)-এর জীবনী ও সাহাবাদের বক্তব্য সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। রাসূল (সাঃ)-এর ছায়া না থাকার পক্ষে রেওয়ায়েতটি নিম্নরূপ :
.
ﺍﺧﺮﺝ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﻋﺒﺪ ﺑﻦ ﻗﻴﺲ ﺍﻟﺰﻋﻔﺮﺍﻧﻰ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺍﻟﻮﻟﻴﺪ ﻋﻦ ﺫﻛﺮﺍﻥ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻳﺮﻯ ﻟﻪ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ، ﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﺴﻴﻮﻃﻰ ﻓﻰ “ ﺍﻟﺨﺼﺎﺋﻞ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ - 1/122 )
.
অনুবাদ: তাবেয়ী যাকওয়ান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- সূর্য ও চাঁদের আলোতে রাসূল (সাঃ)-এর ছায়া দেখা যেতো না। {আল খাসায়েসুল কুবরা-১/১২২}
যাকওয়ান নামক রাবীর উক্ত মন্তব্যের দাঁতভাঙা জবাব :
উল্লিখিত রেওয়ায়েত খানা আমারও জানা আছে। সেটির গ্রহনযোগ্যতা যাচাইবাচাই করে যা পেলাম তার সারকথা হল-
১- রেওয়ায়েতটির বিশুদ্ধ কোনো সনদ নেই। বিদ্যমান সনদের রাবীগুলো (বর্ণনাকারী) সমালোচিত এবং এর সূত্র মুরসাল।
২- এখানে রেওয়ায়েতটি সুস্পষ্টভাবে ছায়াকে অস্বীকার করছে না, বরং “চন্দ্র আর সূর্যের আলোতে দেখা যেত না”— এতটুকুই বুঝাচ্ছে। আমাদের বক্তব্যও পরিস্কার যে, কখনো কখনো উনার ছায়া মুবারক দেখা না যাওয়াই উনার মুজিযা স্বরূপ ছিল। মূলত ছায়া দেখা না যাওয়ার অর্থ কিন্তু ছায়া না থাকা বুঝায় না। যেমন, জ্বীন আর ফেরেশতাদের দেখা যায়না, তাই বলে কি তারা নেই?
৩- আসল কথা হল, বর্ণনাটি জাল ও ভিত্তিহীন। কেননা, প্রথমত তার সূত্রে রয়েছে আব্দুর রহমান বিন কাইস যাফরানী, যার সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনদের কঠোর মন্তব্য রয়েছে।
বিজ্ঞ রিজাল শাস্ত্রবীদ আব্দুর রহমান বিন মাহদী এবং ইমাম আবু জুরআ (রহঃ) তাকে মিথ্যুক বলেছেন।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আবু আলী সালেহ ইবনে মুহাম্মদ (রহঃ) বলেন-
ﻛﺎﻥ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﻗﻴﺲ ﺍﻟﺰﻋﻔﺮﺍﻧﻰ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ
.
তথা আব্দুর রহমান বিন কাইস যাফরানী হাদীস জাল করত।
এছাড়াও তার সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ), ইমাম বুখারী (রহঃ), ইমাম মুসলিম (রহঃ), ইমাম নাসায়ী (রহঃ) প্রমূখ প্রখ্যাত ইমামদের কঠোর উক্তি রয়েছে। [দ্রষ্টব্য- তারীখে বাগদাদ-১০/ ২৫১-২৫২, মীযানুল ই’তিদাল-২/৫৮৩, তাহযীবুত তাহযীব-৬/২৫৮]
এছাড়া সত্যিই যদি রাসূল (সাঃ) এর ছায়া না হতো, তাহলে এটি অতি আশ্চর্যজনক বিষয় হওয়ায় অনেক সহীহ হাদীস থাকার কথা। অথচ এমন কোন হাদীস নেই। তাছাড়া রাসূল (সাঃ) এর ছায়া আছে মর্মে একাধিক সহীহ হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। তাই ছায়া নেই বলাটা অজ্ঞতাসূলভ মন্তব্য ছাড়া কিছু নয়।
৪- যদি সহীহ ধরাও হয় তথাপি সেটি কয়েকটি কারণে বাতিল। কারণ রেওয়ায়েতটি মুরসাল এবং অস্পষ্ট। আর আমাদের প্রদত্ত হাদিসটি মর্মের দিক থেকে সুস্পষ্ট এবং মারফূ ও মুত্তাসিল। অথচ যাকওয়ান হতে বর্ণিত রেওয়ায়েতটি না নবীজির বক্তব্য, না বিশুদ্ধ সনদেপ্রাপ্ত কোনো সাহাবীর বক্তব্য ; কোনোটিই নয়। বরং সেটি একটি মুরসাল রেওয়ায়েত। যা কখনো মারফূ হাদিসের উপর প্রাধান্য পেতে পারেনা।
উপসংহার
অনলাইনের কল্যাণে বিদয়াতি রেজভিদের তাবৎ অসার আকিদা বিশ্বাস ধীরে ধীরে মানুষের সামনে প্রকাশ পাচ্ছে। এতকাল এসব সত্য কথাগুলো যাদের জানা ছিলনা, তারাও আজ অবলীলায় জানতে পেরে রেজভী আকিদা হতে ত্বওবাহ পড়ছেন? আল্লাহ তা’আলা আমাদের সঠিক পথের হিদায়ত দিন, আমীন।

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ