Wednesday, November 8, 2017

কবিরা গুনাহঃ ৩২. আল্লাহ্ তা‘আলার দেয়া কল্যাণময় বিধানকে লঙ্ঘন করে মানব রচিত যে কোন বিধানের আলোকে বিচার কার্য পরিচালনা বা তা গ্রহণ করা

৩২. আল্লাহ্ তা‘আলার দেয়া কল্যাণময় বিধানকে লঙ্ঘন করে মানব রচিত যে কোন বিধানের আলোকে বিচার কার্য পরিচালনা বা তা গ্রহণ করা


আল্লাহ্ তা‘আলার দেয়া কল্যাণময় বিধানকে লঙ্ঘন করে মানব রচিত যে কোন বিধানের আলোকে বিচার কার্য পরিচালনা বা গ্রহণ করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَآ أَنْزَلَ اللهُ فَأُوْلَآئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ»
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার দেয়া বিধানানুযায়ী বিচার করে না সে তো কাফির’’। (মা’য়িদাহ্ : ৪৪)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

কবিরা গুনাহঃ ৩১. কারোর বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা

৩১. কারোর বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা


কারোর বংশ মর্যাদা হানি করাও কবীরা গুনাহ্সমূহের অন্যতম। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষায় কুফরি বলে আখ্যায়িত।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

কেউ অবৈধভাবে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে তা জেনেশুনেও অন্য কেউ এ ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে।

কেউ অবৈধভাবে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে তা জেনেশুনেও অন্য কেউ এ ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে।


‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

নিজেই ভুলের উপর তা জেনেশুনেও কেউ অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে।

নিজেই ভুলের উপর তা জেনেশুনেও কেউ অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে।


‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

কোন ধনী ব্যক্তি অন্যের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে টালবাহানা করলে অথবা কেউ কাউকে কোন ব্যাপারে অপবাদ দিলে এবং লোকটিও সে ব্যাপারে সন্দেহভাজন হলে তাকে জেলে আটকে রাখা হবে যতক্ষণ না সে উক্ত ব্যাপারে সুস্পষ্ট উক্তি করে।

কোন ধনী ব্যক্তি অন্যের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে টালবাহানা করলে অথবা কেউ কাউকে কোন ব্যাপারে অপবাদ দিলে এবং লোকটিও সে ব্যাপারে সন্দেহভাজন হলে তাকে জেলে আটকে রাখা হবে যতক্ষণ না সে উক্ত ব্যাপারে সুস্পষ্ট উক্তি করে।


শারীদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَيُّ الْوَاجِدِ يُحِلَّ عِرْضَهُ وَعُقُوْبَتَهُ.
‘‘ধনী লোকের টালবাহানা তার ইয্যত বিনষ্ট করা এবং তাকে শাস্তির সম্মুখীন করাকে জায়িয করে দেয়’’। (আবূ দাউদ ৩৬২৮)
মু‘আবিয়া বিন্ ’হাইদাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন:

আপনার স্বেচ্ছাচারিতা যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়

আপনার স্বেচ্ছাচারিতা যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়


আপনার মালিকানাধীন জায়গায় আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না যাতে অন্য জন কষ্ট পায়। বরং এমনভাবেই আপনি আপনার জমিন ব্যবহার করবেন যাতে আপনার পাশের ব্যক্তি কোনভাবেই কষ্ট না পায়।
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ ও ’উবাদাহ্ বিন্ স্বামিত্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

বিচারকের বিচার কোন অবৈধ বস্ত্তকে বৈধ করে দেয় না। সুতরাং কেউ বিচারের মাধ্যমে কোন কিছু পেয়ে গেলে যা তার নয় সে যেন অতিসত্বর তা মালিককে পৌঁছিয়ে দেয়। সে যেন অবৈধভাবে তা ভোগ বা ভক্ষণ না করে।

বিচারকের বিচার কোন অবৈধ বস্ত্তকে বৈধ করে দেয় না। সুতরাং কেউ বিচারের মাধ্যমে কোন কিছু পেয়ে গেলে যা তার নয় সে যেন অতিসত্বর তা মালিককে পৌঁছিয়ে দেয়। সে যেন অবৈধভাবে তা ভোগ বা ভক্ষণ না করে।


উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ، وَإِنَّكُمْ تَخْتَصِمُوْنَ إِلَيَّ، وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أَنْ يَكُوْنَ أَلْـحَنَ بِحُجَّتِهِ مِنْ بَعْضٍ، وَأَقْضِيْ لَهُ عَلَى نَحْوِ مَا أَسْمَعُ، فَمَنْ قَضَيْتُ لَهُ مِنْ حَقِّ أَخِيْهِ شَيْئًا فَلَا يَأْخُذْ، فَإِنَّمَا أَقْطَعُ لَهُ قِطْعَةً مِنَ النَّارِ.
‘‘আমি তো মানুষ মাত্র। আর তোমরা আমার কাছে মাঝে মাঝে বিচার নিয়ে আসো। হয়তো বা তোমাদের কেউ কেউ নিজ প্রমাণ উপস্থাপনে অন্যের চাইতে অধিক পারঙ্গম। অতএব

অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের অধিকার সংরক্ষণের খাতিরে একজন সাক্ষী এবং বাদীর কসমের ভিত্তিতেও বিচার করা যেতে পারে।

অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের অধিকার সংরক্ষণের খাতিরে একজন সাক্ষী এবং বাদীর কসমের ভিত্তিতেও বিচার করা যেতে পারে।


আবূ হুরাইরাহ্, জাবির ও ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:
قَضَى رَسُوْلُ اللهِ بِالْيَمِيْنِ مَعَ الشَّاهِدِ.
‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাক্ষী ও বাদীর কসমের ভিত্তিতে ফায়সালা করেন। (আবূ দাউদ ৩৬০৮, ৩৬১০; ইব্নু মাজাহ্ ২৩৯৭, ২৩৯৮, ২৩৯৯)

বিচারের ক্ষেত্রে কোন কারণে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভবপর না হলে অন্ততপক্ষে পরস্পরের ছাড়ের ভিত্তিতে একান্ত বুঝাপড়ার মাধ্যমে কোন এক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াও জায়িয।

বিচারের ক্ষেত্রে কোন কারণে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভবপর না হলে অন্ততপক্ষে পরস্পরের ছাড়ের ভিত্তিতে একান্ত বুঝাপড়ার মাধ্যমে কোন এক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াও জায়িয।


আবূ হুরাইরাহ্ ও ‘আমর বিন্ ‘আউফ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

বিচারের ক্ষেত্রে যাদের সাক্ষ্য গহণযোগ্য নয়।কোন ধরনের সুযোগ পেয়ে নিজের নয় এমন জিনিস দাবি করলে সে মুসলিম থাকে না। বরং তার ঠিকানা হয় তখন জাহান্নাম।

যাদের সাক্ষ্য গহণযোগ্য নয়


আত্মসাৎকারী পুরুষ ও মহিলার সাক্ষ্য, কারোর বিপক্ষে তার শত্রুর সাক্ষ্য, ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর সাক্ষ্য, কাউকে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়ে তার বিরুদ্ধে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারার দরুন দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য, কোন পরিবারের পক্ষে তাদের কাজের লোকের সাক্ষ্য এবং শরীয়তের বিধি-বিধানের ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ লোকের সাক্ষ্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

কেউ কারোর কাছ থেকে কোন ব্যাপারে কসম গ্রহণ করতে চাইলে সে ব্যক্তি কসমের শব্দ থেকে যাই বুঝবে উহার ভিত্তিতেই কসমের সত্যতা কিংবা অসত্যতা নিরূপিত হবে। কসমকারীর নিয়তের ভিত্তিতে নয়। তবে যদি কসম গ্রহণকারী যালিম হয়ে থাকে এবং কসমকারীর কথার ভিত্তিতেই সে ব্যক্তি যুলুম করার সুযোগ পাবে তখন কসমকারীর নিয়তই গ্রহণযোগ্য হবে।

কেউ কারোর কাছ থেকে কোন ব্যাপারে কসম গ্রহণ করতে চাইলে সে ব্যক্তি কসমের শব্দ থেকে যাই বুঝবে উহার ভিত্তিতেই কসমের সত্যতা কিংবা অসত্যতা নিরূপিত হবে। কসমকারীর নিয়তের ভিত্তিতে নয়। তবে যদি কসম গ্রহণকারী যালিম হয়ে থাকে এবং কসমকারীর কথার ভিত্তিতেই সে ব্যক্তি যুলুম করার সুযোগ পাবে তখন কসমকারীর নিয়তই গ্রহণযোগ্য হবে।


আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষী-প্রমাণ উপস্থাপনের দায়িত্ব একমাত্র বাদীর উপর এবং কসম হচ্ছে বিবাদীর উপর

বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষী-প্রমাণ উপস্থাপনের দায়িত্ব একমাত্র বাদীর উপর এবং কসম হচ্ছে বিবাদীর উপর


শু‘আইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তাঁর খুৎবায় বলেন:
الْبَيِّنَةُ عَلَى الْمُدَّعِيْ وَالْيَمِيْنُ عَلَى الْـمُدَّعَى عَلَيْهِ.
‘‘বাদীর উপর সাক্ষী-প্রমাণ এবং বিবাদীর উপর কসম’’। (তিরমিযী ১৩৪১)

খুবই মূল্যবান ৪০টি ছোট হাদিস,

📚খুবই মূল্যবান ৪০টি ছোট হাদিস,
📚নিজে পড়ুন, অন্যকে পড়ার সুযোগ 📚করে দিন।
👉১। রাসূল (সা:)বলেছেন আমার কথা (অন্যদের কাছে) পৌছিয়ে দাও, তা যদি একটি আয়াতও হয়।
(সহীহ বুখারীঃ ৩২১৫)
👉২। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটকুই যথেষ্ঠ যে, সে যা শোনে (যাচাই ব্যতীত) তাই বলে বেড়ায়।
(সহীহ মুসলিম, মুকাদ্দামা, অনুচ্ছেদ -৩)
👉৩।রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ

বিচারক বিচারের সময় কোন ব্যাপারেই রাগান্বিত হতে পারবেন না

বিচারকের নিকট যে কোন ব্যক্তির অভিযোগ পৌঁছানো যেন কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় উহার প্রতি বিচারককে অবশ্যই যত্নবান হতে হবে


‘আমর বিন্ মুর্রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَا مِنْ إِمَامٍ يُغْلِقُ بَابَهُ دُوْنَ ذَوِيْ الْـحَاجَةِ وَالْـخَلَّةِ وَالْـمَسْكَنَةِ ؛ إِلاَّ أَغْلَقَ اللهُ أَبْوَابَ السَّمَاءِ دُوْنَ خَلَّتِهِ وَحَاجَتِهِ وَمَسْكَنَتِهِ.
‘‘কোন সমস্যায় জর্জরিত ব্যক্তি কোন রাষ্ট্রপতি অথবা বিচারকের নিকট তার অভিযোগ উত্থাপন করতে বাধাগ্রস্ত হলে সেও আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট নিজ সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে বাধাগ্রস্ত হবে’’। (তিরমিযী ১৩৩২)

বিচারক বিচারের সময় কোন ব্যাপারেই রাগান্বিত হতে পারবেন না


আবূ বাক্রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

কবিরা গুনাহঃ ৩০. অবিচার এবং বিচার সংক্রান্ত কিছু কথা

৩০. অবিচার


কুর‘আন ও হাদীসের সুস্পষ্ট জ্ঞান ও তা যথাস্থানে প্রয়োগ করার যথেষ্ট প্রজ্ঞা ছাড়া বিচারকার্য পরিচালনা করা অথবা কোন ব্যাপারে সত্য উদ্ভাসিত হয়ে যাওয়ার পরও তা পাশ কাটিয়ে গিয়ে অন্যায়মূলক বিচার করা একটি মারাত্মক অপরাধ।
বুরাইদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
الْقُضَاةُ ثَلَاثَةٌ: وَاحِـدٌ فِيْ الْـجَنَّةِ، وَاثْنَانِ فِيْ النَّارِ، فَأَمَّا الَّذِيْ فِيْ الْـجَنَّةِ ؛ فَرَجُلٌ عَرَفَ الْـحَقَّ فَقَضَى بِهِ، وَرَجُلٌ عَرَفَ الْـحَقَّ فَجَارَ فِيْ الْـحُكْمِ ؛ فَهُوَ فِيْ النَّارِ، وَرَجُلٌ قَضَى لِلنَّاسِ عَلَى جَهْلٍ ؛ فَهُوَ فِيْالنَّارِ.
‘‘বিচারক তিন প্রকারের। তম্মধ্যে একজন জান্নাতী আর অপর দু’জন জাহান্নামী। যিনি জান্নাতী তিনি হচ্ছেন এমন বিচারক যে সত্য উদ্ঘাটন করে উহার আলোকেই বিচার করেন। আরেকজন এমন যে,

কবিরা গুনাহঃ ২৯. আত্মহত্যা

২৯. আত্মহত্যা


আত্মহত্যা একটি মহাপাপ। যেভাবেই সে আত্মহত্যা করুক না কেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَلَا تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ، إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا»
‘‘এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু’’। (নিসা’ : ২৯)
জুন্দাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

কবিরা গুনাহঃ ২৮. হারাম ভক্ষণ ও হারামের উপর জীবন যাপন

২৮. হারাম ভক্ষণ ও হারামের উপর জীবন যাপন


হারাম ভক্ষণ ও হারামের উপর জীবন যাপন কবীরা গুনাহ্গুলোর অন্যতম। তা যে কোন উপায়েই হোক না কেন।
বর্তমান যুগের দর্শন তো খাও, দাও, ফুর্তি করো। এ দর্শন বাস্তবায়নের জন্য সকলেই উঠে-পড়ে লাগছে। সবার মধ্যে শুধু সম্পদ সঞ্চয়েরই নেশা। চাই তা চুরি করে হোক অথবা ডাকাতি। সুদ-ঘুষ খেয়ে হোক অথবা ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করে। কোন অবৈধ বস্ত্তর ব্যবসা করে হোক অথবা সমকাম, ব্যভিচার, গান-বাদ্য, অভিনয়, যাদু ও গণন বিদ্যা চর্চা করে। জাতীয় বা কারোর ব্যক্তিগত সম্পদ লুট করেই হোক অথবা কাউকে বিপদে ফেলে। শরীয়তে এ জাতীয় দর্শনের কোন স্থান নেই।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

কবিরা গুনাহঃ ২৭. যুলুম, অত্যাচার ও কারোর উপর অন্যায় মূলক আক্রমণ

২৭. যুলুম, অত্যাচার ও কারোর উপর অন্যায় মূলক আক্রমণ


কারোর জন্য অন্যের উপর যে কোনভাবে যুলুম, অত্যাচার অথবা অন্যায় মূলক আক্রমণ হারাম ও কবীরা গুনাহ্। কাউকে মারা, হত্যা করা, আহত করা, গালি দেয়া, অভিসম্পাত করা, ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া, দুর্বলের উপর হাত উঠানো চাই সে হোক নিজের কাজের ছেলে কিংবা নিজের কাজের মেয়ে অথবা নিজ স্ত্রী-সন্তান; তেমনিভাবে জোর করে কারোর কোন অধিকার হরণ ইত্যাদি ইত্যাদি যুলুমেরই অন্তর্গত।
যুলুম পারস্পরিক বন্ধুত্ব বিনষ্ট করে। আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বৈরিতা সৃষ্টি করে। মানুষের মাঝে হিংসা ও বিদ্বেষের জন্ম দেয় এবং এরই কারণে ধনী ও গরীবের মাঝে ধীরে ধীরে ঘৃণা ও শত্রুতা জেগে উঠে। তখন উভয় পক্ষই দুনিয়ার বুকে অশান্তি নিয়েই জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমদের জন্য জাহান্নামে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। যা তাকে গ্রহণ করতেই হবে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

কবিরা গুনাহঃ ২৬. চাঁদাবাজি

২৬. চাঁদাবাজি


চাঁদাবাজি আরেকটি মারাত্মক অপরাধ। কোন প্রভাবশালী চক্র কর্তৃক জোর পূর্বক কাউকে কোথাও নিজ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য অথবা নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করা ইত্যাদির জন্য নির্দিষ্ট অথবা অনির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা দিতে বাধ্য করাকে সাধারণত চাঁদাবাজি বলা হয়। দস্যুতার সাথে এর খুবই মিল। চাঁদা উত্তোলনকারী, চাঁদা লেখক ও চাঁদা গ্রহণকারী সবাই উক্ত গুনাহ্’র সমান অংশীদার। এরা যালিমের সহযোগী অথবা সরাসরি যালিম।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

কবিরা গুনাহঃ ২৫. মিথ্যা কসম

২৫. মিথ্যা কসম


মিথ্যা কসম খাওয়াও একটি কবীরা গুনাহ্। চাই তা কোন বিপদ থেকে বাঁচার জন্যই হোক অথবা কারোর কোন সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করার জন্যই হোক।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

কবিরা গুনাহঃ ২৪. সন্ত্রাস, অপহরণ, দস্যুতা ও লুন্ঠন

২৪. সন্ত্রাস, অপহরণ, দস্যুতা ও লুন্ঠন


সন্ত্রাস, দস্যুতা, ছিনতাই, লুন্ঠন, অপহরণ, ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি কবীরা গুনাহ্গুলোর অন্যতম। চাই সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা হোক অথবা নাই হোক। কারণ, তারা যমীনে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। তবে সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা হলে অবশ্যই হত্যাকারীদেরকে হত্যা করতে হবে। আর সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা না হলে সে অঘটনগুলো সম্পাদনকারীদেরকে চারটি শাস্তির যে কোন একটি শাস্তি দিতে হবে। হত্যা করতে হবে অথবা ফাঁসী দিতে হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অপর দিকের পা কেটে ফেলতে হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দী করে রাখতে হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। এমনকি তারা শুধুমাত্র একজনকেই হত্যা করার ব্যাপারে কয়েকজন অংশ গ্রহণ করলেও তাদের সকলকেই হত্যা করা হবে। যদি তারা সরাসরি উক্ত হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

কবিরা গুনাহঃ ২২. জুয়া

২২. জুয়া


জুয়া বলতে সে সকল খেলাকে বুঝানো হয় যাতে বাজি কিংবা হারজিতের প্রশ্ন রয়েছে। জুয়া যে ধরনেরই হোক না কেন তা হারাম।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّمَا الْـخَمْرُ وَالْـمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ، فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ، إِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِيْ الْـخَمْرِ وَالْـمَيْسِرِ، وَيَصُدَّكُمْعَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ، فَهَلْ أَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ»
‘‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ (নেশাকর দ্রব্য), জুয়া, মূর্তি ও লটারীর তীর এ সব নাপাক ও গর্হিত বিষয়। শয়তানের কাজও বটে। সুতরাং এগুলো থেকে তোমরা সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকে। তা হলেই তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো এটিই চায় যে, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও নামায থেকে তোমরা বিরত থাকো। সুতরাং এখনো কি তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকবে না?’’ (মা’য়িদাহ্ : ৯০-৯১)
উক্ত আয়াতে জুয়াকে শির্কের পাশাপাশি উল্লেখ করা, উহাকে অপবিত্র ও শয়তানের কাজ বলে

বিপদ কেন আসে?


ধুমপানের কাল্পনিক উপকারসমূহ এবং ধূমপান সংক্রান্ত আরো কিছু কথা:

ধূমপানের কাল্পনিক উপকারসমূহ


ধূমপায়ীরা নিজেদের দোষকে ঢাকা দেয়ার জন্য অধূমপায়ীদেরকে ধূমপানের কিছু কাল্পনিক উপকার বুঝাতে চায় যা নিম্নরূপ:
ক. মনের অশান্তি দূর করার জন্যই ধূমপান করা হয়। তাদের এ কথা নিশ্চিতভাবেই জানা উচিৎ যে, একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার যিকিরের মাধ্যমেই মানুষের অন্তরে শান্তির সঞ্চার হয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ»
‘‘জেনে রাখো, আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণেই অন্তর শান্তি পায়’’। (রা’দ্ : ২৮)
খ. ধূমপান কোন ব্যাপারে গভীর চিন্তা করতে সহযোগিতা করে। মূলত ব্যাপারটা সম্পূর্ণ এর উল্টো। বরং ধূমপান শ্বাসকষ্ট ও গলা শুকিয়ে যাওয়ার দরুন মানুষের চিন্তাশক্তিকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়।
গ. ধূমপান মানুষের স্নায়ুগুলোকে সতেজ করে তোলে। মূলত ব্যাপারটা সম্পূর্ণ এর বিপরীত। বরং ধূমপান মানুষের স্নায়ুগুলোকে দুর্বল করে দেয় এবং এরই প্রভাবে দ্রুত হৃদকম্পন শুরু হয়ে যায়।
ঘ. ধূমপানে বন্ধু বাড়ে। এ কথা একাংশে ঠিক। তবে ধূমপানে ধূমপায়ী বন্ধু বাড়ে, ভালো বন্ধু নয়।
ঙ. ধূমপানে ক্লান্তি দূর হয়। এ কথা একেবারেই ঠিক নয়। বরং ধূমপানে ক্লান্তি আরো বেড়ে যায়। কারণ, ধূমপানে স্নায়ু দৌর্বল্য ও রক্ত চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে।
আবার কেউ কেউ তো অন্যের অনুকরণে ধূমপান করে থাকে। কাউকে ধূমপান করতে দেখে তার খুব ভালো লেগেছে তাই সেও ধূমপান করে। কিয়ামতের দিন তার এ অনুসরণ কোন কাজেই আসবে না।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَبَرَزُوْا لِلهِ جَمِيْعًا، فَقَالَ الضُّعَفَآءُ لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا، فَهَلْ أَنْتُمْ مُّغْنُوْنَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ شَيْءٍ، قَالُوْا لَوْ هَدَانَا اللهُ لَهَدَيْنَاكُمْ، سَوَآءٌ عَلَيْنَآ أَجَزِعْنَآ أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَّحِيْصٍ»
‘‘সবাই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট উপস্থিত হলে দুর্বলরা অহঙ্কারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদের অনুসারীই ছিলাম। অতএব তোমরা কি আমাদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলার শাস্তি থেকে এতটুকুও রক্ষা করতে পারবে? তারা বলবে: আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক পথ দেখালে অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে তা দেখাতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা ধৈর্যশীল হই তাতে কিছুই আসে যায় না। এখন আমাদের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার আযাব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার আর কোন পথ নেই’’। (ইব্রাহীম : ২১)
আবার কেউ কেউ তো দাম্ভিকতা দেখিয়ে বলেন: আমি বুঝে শুনেই ধূমপান করছি। এতে তোমাদের কি যায় আসে? এ জাতীয় ব্যক্তিদেরকে এখন থেকেই পরকালের পরিণতির কথা চিন্তা করা উচিৎ।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَخَابَ كُـلُّ جَبَّارٍ عَنِيْدٍ، مِنْ وَّرَآئِهِ جَهَنَّمُ، وَيُسْقَى مِنْ مَّآءٍ صَدِيْدٍ، يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيْغُهُ، وَيَأْتِيْهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ، وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ، وَمِنْ وَّرَآئِهِ عَذَابٌ غَلِيْظٌ»
‘‘প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থকাম হলো। পরিণামে তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদেরকে পান করানো হবে গলিত পুঁজ। অতি কষ্টেই তারা তা গলাধ:করণ করবে; সহজে নয়। সর্বদিক থেকে মৃত্যু তার দিকে ধেয়ে আসবে; অথচ সে মরবে না এবং এর পরেও তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি’’। (ইব্রাহীম : ১৫-১৭)
যেভাবে আপনি ধূমপান ছাড়বেন:
ধূমপানের উপরোক্ত ব্যক্তিগত ও সামাজিক অপকার জানার পর আশাতো আপনি এখনি ধূমপান থেকে তাওবা করতে প্রস্ত্তত। তবে এ ক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যাপার আপনাকে বিশেষ সহযোগিতা করবে যা নিম্নরূপ:
ক. আল্লাহ্ তা‘আলার উপর পূর্ণ ভরসা রেখে ধূমপান ত্যাগের ব্যাপারে কঠিন প্রতিজ্ঞা তথা তাওবা করতে হবে এবং এ ব্যাপারে পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ্ তা‘আলার সহযোগিতা চেয়ে তাঁর কাছে বিশেষভাবে ফরিয়াদ করতে হবে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعًا أَيُّهَا الْـمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ»
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট প্রত্যাবর্তন করো; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’’। (নূর : ৩১)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«أَمَّنْ يُّجِيْبُ الْـمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوْءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ الْأَرْضِ، أَإِلَهٌ مَّعَ اللهِ، قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ»
‘‘তিনিই তো উত্তম যিনি আর্তের আহবানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে, বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেন। আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি অন্য কোন মা’বূদ আছে কি? তোমরা তো অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো’’। (নাম্ল : ৬২)
খ. ধূমপানের অপকারগুলো দৈনিক নিজে ভাবুন এবং নিজ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও স্ত্রী-সন্তানদের সামনে এগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
গ. ধূমপায়ীদের সঙ্গ ছেড়ে দিন। অন্ততপক্ষে ধূমপানের মজলিস থেকে বহু দূরে এবং কল্যাণকর কাজে সর্বদা ব্যস্ত থাকুন।
ঘ. ধূমপানকে ঘৃণা করতে চেষ্টা করুন এবং সর্বদা এ কথা ভাবুন যে, কেউ একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কোন হারাম বস্ত্ত পরিত্যাগ করলে আল্লাহ্ তা‘আলা এর প্রতিদান হিসেবে তাকে এর চাইতে আরো উন্নত ও কল্যাণকর বস্ত্ত দান করবেন।
আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কেউ কোন হারাম বস্ত্ত পরিত্যাগ করলে তা সহজেই পরিত্যাগ করা সম্ভব। তবে আল্লাহ্ তা‘আলা সর্ব প্রথম আপনাকে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখবেন যে, আপনি উক্ত হারাম বস্ত্ত পরিত্যাগে কতটুকু সত্যবাদী। তখন আপনি এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে পারলে তা পরিশেষে সত্যিই মজায় রূপান্তরিত হবে।
ধূমপান পরিত্যাগ করলে প্রথমত: আপনার গভীর ঘুম নাও আসতে পারে। রক্তে ঘাটতি দেখা দিবে। দীর্ঘ সময় কোন কিছু নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে পারবেন না। রাগ ও অস্থিরতা বেড়ে যাবে। নাড়ির সাধারণ গতি কমে যাবে। ব্রেইন কেমন যেন হালকা ও নিস্তেজ হয়ে পড়বে। ধূমপানের জন্য অন্তর কিলবিল করতে থাকবে। তবে তা কিছু দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
ঙ. কখনো মনের ভেতর ধূমপানের ইচ্ছে জন্মালে সাথে সাথে মিস্ওয়াক করুন অথবা চুইঙ্গাম খেতে থাকুন।
চ. চা ও কপি খুব কমই পান করুন। বরং এরই পরিবর্তে সাধ্যমত ফল-মূলাদি খেতে চেষ্টা করুন।
ছ. প্রতিদিন নাস্তার পর এক গ্লাস লেবু বা আঙ্গুরের জুস পান করুন। তা হলে ধূমপানের চাহিদা একটু করে হলেও হ্রাস পাবে।
জ. যত্ন সহকারে নিয়মিত ফরয নামাযগুলো আদায় করুন।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَأَقِمِ الصَّلَاةَ، إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْـمُنْكَرِ، وَلَذِكْرُ اللهِ أَكْبَرُ، وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُوْنَ»
‘‘নামায কায়েম করো। কারণ, নামাযই তো তোমাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যাই করছো আল্লাহ্ তা‘আলা তা সবই জানেন’’। (‘আন্কাবূত : ৪৫)
ঝ. বেশি বেশি রোযা রাখার চেষ্টা করুন। কারণ, তা মনোবলকে শক্তিশালী করায় ও কুপ্রবৃত্তি মোকাবিলায় বিশেষ সহযোগিতা করবে।
ঞ. বেশি বেশি কুর‘আন তেলাওয়াত করুন।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ أَقْوَمُ»
‘‘নিশ্চয়ই এ কুর‘আন সঠিক পথ প্রদর্শন করে’’। (ইস্রা’/বানী ইস্রাঈল : ৯)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«يَآ أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَبِّكُمْ، وَشِفَآءٌ لِّمَا فِيْ الصُّدُوْرِ، وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ»
‘‘হে মানব সকল! তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট উপদেশ, অন্তরের চিকিৎসা এবং মু’মিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত এসেছে’’। (ইউনুস : ৫৭)
চ. বেশি বেশি যিকির করুন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ»
‘‘জেনে রাখো, একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার যিকির বা স্মরণেই মানব অন্তর প্রশান্তি লাভ করে’’। (রা’দ্ : ২৮)
ছ. সর্বদা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করুন। কারণ, শয়তানই তো গুনাহ্সমূহকে মানব সম্মুখে সুশোভিত করে দেখায়।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«تَاللهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَآ إِلَى أُمَمٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَـهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَـهُمْ، فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ»
‘‘আল্লাহ্’র কসম! আমি তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; কিন্তু শয়তান তাদের (অশোভনীয়) কর্মকান্ডকে তাদের নিকট সুশোভিত করে দেখিয়েছে। সুতরাং শয়তান তো আজ তাদের বন্ধু অভিভাবক এবং তাদেরই জন্য (কিয়ামতের দিন) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে’’। (নাহ্ল : ৬৩)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ، إِنَّهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ»
’’শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে তা হলে তুমি আল্লাহ্ তা‘আলার আশ্রয় কামনা করো। তিনিই তো সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’’।
(আ’রাফ : ২০০)
জ. নেককার লোকদের সাথে চলুন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهُ، وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيْدُ زِيْنَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا، وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ، وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا»
‘‘তুমি সর্বদা নিজকে ওদের সংস্রবেই রাখবে যারা সকাল-সন্ধ্যায় নিজ প্রভুকে ডাকে একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। কখনো তাদের থেকে নিজ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায়। তবে ওদের অনুসরণ কখনোই করো না যাদের অন্তর আমি আমার স্মরণ থেকে গাফিল করে দিয়েছি এবং যারা নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে নিজ কর্মকান্ডে সীমাতিক্রম করে’’। (কাহ্ফ : ২৮)
একবার দু’বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও কখনো নিরাশ হবেন না। কারণ, নিরাশ হওয়া কাফিরের পরিচয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَلَا تَيْأَسُوْا مِنْ رَّوْحِ اللهِ، إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَّوْحِ اللهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْكَافِرُوْنَ»
‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে তোমরা কখনো নিরাশ হয়ো না। কারণ, একমাত্র কাফিররাই তো আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে নিরাশ হয়ে থাকে’’। (ইউসুফ : ৮৭)
আপনি দ্রুত ধূমপান ছাড়তে না পারলেও অন্ততপক্ষে তা কমাতে চেষ্টা করুন এবং তা প্রকাশ্য পান করবেন না তা হলে কোন এক দিন আপনি তা সম্পূর্ণরূপে ছাড়তে পারবেন।

ধূমপান সংক্রান্ত আরো কিছু কথা:


# আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৮৩ সনের রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমান বিশ্বে সিগারেট কেনার পেছনে যে অর্থ ব্যয় করা হয় উহার দুই তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হলে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা অবশ্যই সম্ভবপর হবে।
# আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়, ধূমপানের অপকারিতায় বছরে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৩ লাখ ৪৬ হাজার ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করে। তেমনিভাবে চীনে ১ লাখ ৪০ হাজার, ব্রিটেনে ৫৫ হাজার, সুইডেনে আট হাজার এবং পুরো বিশ্বে ২৫ লাখ ব্যক্তি প্রতি বছর মৃত্যু বরণ করে।
# চীনের সাঙ্গাহাই শহরের এক মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়, সেখানকার ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৬০ জনের ৯০ ভাগই ধূমপায়ী।
# আরেক রিপোর্টে বলা হয়, ধূমপানের অপকারিতায় মৃত্যুর হার দুর্ঘটনা ও যুদ্ধ ক্ষেত্রের মৃত্যুর হারের চাইতেও অনেক বেশি।
# ৪৬ বছর ও ততোধিক বয়সের লোকদের মধ্যে ধূমপায়ীদের মৃত্যুর হার অধূমপায়ীদের তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি।
# ধূমপান হচ্ছে পদস্খলনের প্রথম কারণ।
# কেউ দৈনিক ২০ টি সিগারেট পান করলে তার শরীরে শতকরা পনেরো ভাগ হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয়।
# ধূমপানের অপকারিতায় ব্রিটেনে দৈনিক ৪৪ ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করে।
# বিড়ি ও সিগারেটের শেষাংশ প্রথমাংশের তুলনায় আরো বেশি ক্ষতিকর।
# লজ্জাজনক বিষয় হচ্ছে এই যে, চতুষ্পদ জন্তুর সামনে তামাক রাখা হলে ওরা তা খেতে চায় না; অথচ মানুষ খুব সহজভাবেই তা দৈনিক প্রচুর পরিমাণে গলাধ:করণ করে যাচ্ছে।

আল্লাহ যাদের জন্য জান্নাত বানিয়ে রেখেছে


ধুমপান কি হারাম ?

ধূমপান


ধূমপানও মাদকদ্রব্যের অধীন এবং তা প্রকাশ্য গুনাহ্গুলোর অন্যতম। ব্যাপারটি খুবই ভয়াবহ; তবে সে অনুযায়ী উহার প্রতি কোন গুরুত্বই দেয়া হচ্ছে না। বরং তা বিশেষ অবহেলায় পতিত। তাই ভিন্ন করে উহার অপকার ও হারাম হওয়ার কারণগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি। যা নিম্নরূপ:
১. ধূমপান খুবই নিকৃষ্ট কাজ এবং বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি অত্যন্ত নিকৃষ্ট বস্ত্ত। আর সকল নিকৃষ্ট বস্ত্তই তো শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

মদখোরের শাস্তি

মদখোরের শাস্তি


কারোর ব্যাপারে মদ অথবা মাদকদ্রব্য পান কিংবা সেবন করে নেশাগ্রস্ত হওয়া প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করা হবে। সে যতবারই পান করে ধরা পড়বে ততবারই তার উপর উক্ত দন্ডবিধি প্রয়োগ করা হবে। তবে তাকে এ জন্য কখনোই হত্যা করা হবে না। যা সকল গবেষক ’উলামাদের ঐকমত্যে প্রমাণিত।
মু‘আবিয়া ও আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদখোর সম্পর্কে বলেন:

মাদকদ্রব্য সেবনের অপকারসমূহ

মাদকদ্রব্য সেবনের অপকারসমূহ


ক. নিয়মিত প্রচুর মাদকদ্রব্য সেবনে মানব মেধা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায়।
খ. এরই মাধ্যমে সমাজে বহু প্রকারের খুন ও হত্যাকান্ড বিস্তার লাভ করে। তথা সামাজিক সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়।
গ. এরই মাধ্যমে অনেক সতী-সাধ্বী মহিলার ইয্যত বিনষ্ট হয়। এরই সুবাদে দিন দিন সকল প্রকারের অপকর্ম, ব্যভিচার ও সমকাম বেড়েই চলছে। এমনো শুনা যায় যে, অমুক মদ্যপায়ী নেশার তাড়নায় নিজ মেয়ে, মা অথবা বোনের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে। এমন অঘটন করতে তো মুসলিম দূরে থাক অনেক সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু এবং বৌদ্ধও লজ্জা পায়।

কবিরা গুনাহঃ ২১. মদ্য পান অথবা যে কোন মাদকদ্রব্য সেবন

২১. মদ্য পান অথবা যে কোন মাদকদ্রব্য সেবন


মদ্য পান অথবা যে কোন নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ তথা সেবন (চাই তা খেয়ে কিংবা পান করেই হোক অথবা ঘ্রাণ নেয়া কিংবা ইন্জেকশন গ্রহণের মাধ্যমেই হোক) একটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ্। যার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভিশাপ ও অভিসম্পাত রয়েছে।
আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদের মধ্যে মদ্যপান তথা যে কোন নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ অথবা সেবনকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। শয়তান চায় এরই মাধ্যমে মানুষে মানুষে শত্রুতা, হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহ্’র স্মরণ ও নামায থেকে মানুষকে গাফিল করতে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

কবিরা গুনাহঃ ২০. গর্ব, দাম্ভিকতা ও আত্মঅহঙ্কার

২০. গর্ব, দাম্ভিকতা ও আত্মঅহঙ্কার


গর্ব, দাম্ভিকতা, অহঙ্কার ও অহংবোধ একটি মারাত্মক অপরাধ। যা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খুবই অপছন্দনীয় এবং যা আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ অসন্তুষ্টি ও জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণও বটে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْـمُسْتَكْبِرِيْنَ»
‘‘নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ্ তা‘আলা) অহংকারীদেরকে ভালোবাসেন না’’। (না’হ্ল : ২৩)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

যেসকল নারীরা জান্নাতের খুশবুও পাবে না !!


যেসকল নারীরা জান্নাতের খুশবুও পাবে না !!

কিছু কিছু গোনাহ আছে আল্লাহ দুনিয়ায় দ্রুত গজব দেন?


সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ