Wednesday, December 6, 2017

মুসলিম কি নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের অনুসরণ করতে বাধ্য?

মুসলিম কি নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের অনুসরণ করতে বাধ্য?


নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, রাসূল () মানুষদেরকে নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের অনুসরণ করতে বাধ্য করেন নি। বরং তিনি তাঁর আনুগত্য করা আবশ্যক করে দিয়েছেন। কেননা রাসূল () যা নিয়ে এসেছেন, হক্ব তারই মধ্যে সীমাবদ্ধ। সুতরাং কোন একনিষ্ঠ ব্যক্তি যদি একটু ভেবে দেখেন, তাহলে তার কাছে বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে যে, দলীল ছাড়া নির্দিষ্ট কোন ইমামের মাযহাবের তাক্বলীদ করা বড় অজ্ঞতা ও ভয়াবহ বিপদের নামান্তর। বরং তা নিছক প্রবৃত্তির অনুসরণ ও স্বজনপ্রীতি বৈ কিছু নয়। মুজতাহিদ ইমামগণও এর বিরোধিতা করেছেন। যেমনটি তাদের উক্তিতে আমরা দেখেছি।
অতএব যে ব্যক্তি দলীলের অনুসরণ করবে সে স্বীয় ইমামসহ সকল ইমামেরই অনুসরণ করবে এবং

মুকাল্লিদরা (দলীলবিহীন অনুসরণকারী) দু’টি বিষয়ে প্রতারিত হয়:[1]

মুকাল্লিদরা (দলীলবিহীন অনুসরণকারী) দু’টি বিষয়ে প্রতারিত হয়:[1]


জেনে রাখা ভাল যে, মুকাল্লিদরা দু‘টি ক্ষেত্রে প্রতারিত হয়ে থাকেন। তারা মনে করে যে, তাদের এ ধারণা সত্য। অথচ তা সত্য থেকে অনেক দূরে। এ ধারণা দু’টি আল্লাহ্‌র নিন্মোক্ত সাধারণ বাণীর  অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্‌ বলেন:
                             ﴿ إِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا
নিশ্চয় সত্যের বিপরীতে ধারণা কোন কার্যকারিতা রাখে না (ইউনূস-৩৬)
রাসূল (সাঃ) বলেন:

সংশয়: মুজতাহিদ ছাড়া সাধারণ ভাবে কুরআন ও সুন্নাহর প্রতি আমল করা নিষিদ্ধ:[1]

সংশয়: মুজতাহিদ ছাড়া সাধারণ ভাবে কুরআন ও সুন্নাহর প্রতি আমল করা নিষিদ্ধ:[1]


জেনে রাখুন যে, পরবর্তী উসূলবিদগণের মতে, মুজতাহিদ ছাড়া সাধারণভাবে কুরআন ও সুন্নাহ’র প্রতি আমল করা নিষিদ্ধ। তারা বলেন ইজতিহাদের শর্ত হলো:
  1. মুজতাহিদকে বালেগ হতে হবে।
  2. জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।
  3. সৃষ্টিগতভাবে তীক্ষ্ম বুঝের অধিকারী হতে হবে।
  4. আক্বলী দলীল (প্রমাণ বিহীন বুদ্ধিজাত মতামত) সম্বন্ধে জানতে হবে। মূলতঃ এ আক্বলী দলীলটা অস্তিত্বহীনতারই নামান্তর। আর আক্বলী দলীল এ জন্যই জানতে হবে যে,

সংশয়: আল্লাহ্‌র বাণী ﴾ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ﴿ ‘‘সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জেনে থাক’’ (সূরা নাহল-৪৩) এর বাস্তবায়ন

সংশয়: আল্লাহ্‌র বাণী ﴾ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ﴿ ‘‘সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জেনে থাক’’ (সূরা নাহল-৪৩) এর বাস্তবায়ন


জেনে রাখুন! যে, মুকাল্লিদগণ আল্লাহ্‌র বাণী বাস্তবায়নের দাবীতে- ﴿فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
‘‘সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জেনে থাক’’ (সূরা নাহল-৪৩)- দ্বারা দলীল পেশ করে থাকে। তারা বলে, অত্র আয়াতে আল্লাহ্‌ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি জানেন না তিনি যেন তার চেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে নেন। আর তারা বলেন যে, আমাদের একথার পেছনে অত্র আয়াতটি দলীল।
মহানাবী () এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জানেন না, তিনি যেন জানা ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে তা জেনে নেন। জনৈক ব্যক্তির মাথায় আঘাত লাগা মর্মে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন:

মুকাল্লিদদের তর্ক-বিতর্ক

মুকাল্লিদদের তর্ক-বিতর্ক


ইমাম ইবনে আব্দিল বার আসারের মাধ্যমে দলীল উল্লেখ করার পর তাক্বলীদকে নিন্দনীয় ও নিষেধ উল্লেখ করে বলেন, ফক্বীহ ও আহলে নাযরদের একটি দল নাযরিয়া (চিন্তাগত) ও আকলিয়া (বুদ্ধিজাত) দলীল দ্বারা তাক্বলীদকে বৈধ মনে করেন। অতঃপর তিনি বলেন:[1]
‘‘এ ব্যাপারে আমি মাযিনী (রাহ.) এর চেয়ে উত্তম কথা আর কাউকে বলতে দেখি নি। আর তা হলো, যে তাক্বলীদ দিয়ে বিধান বাস্তবায়ন করতে চায়, তাকে যদি বলা হয়,

তাক্বলীদ (দলীলবিহীন অনুসরণ) ও ইত্তেবার (দলীলভিত্তিক অনুসরণ) মধ্যে পার্থক্য

তাক্বলীদ (দলীলবিহীন অনুসরণ) ও ইত্তেবার (দলীলভিত্তিক অনুসরণ) মধ্যে পার্থক্য


শানকীত্বী (রাহি.) বলেন,[1] জেনে রাখুন যে, তাক্বলীদ ও ইত্তেবার মধ্যে পার্থক্য জানা জরুরী। ইত্তেবার স্থলে কোন অবস্থাতেই তাক্বলীদ করা বৈধ নয়। এর বিস্তারিত আলোচনা এই যে, যে সব বিধানের ব্যাপারে কুরআন, হাদীস অথবা মুসলমানদের প্রকাশ্য ইজমার দলীল পাওয়া যায় সে সব ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই তাক্বলীদ বৈধ নয়। কেননা যে ইজতিহাদ দলীল বিরোধী তা বাতিল হিসেবে গণ্য। আর ইজতিহাদের ক্ষেত্রে ছাড়া তাক্বলীদ করা যাবে না। কেননা কুরআন ও হাদীসের দলীলসমূহ প্রত্যেক মুজতাহিদের উপর কর্তৃত্ব দান করে । সুতরাং

ইমামদের তাক্বলীদকারীদের ব্যাপারে সতর্কতা

ইমামদের তাক্বলীদকারীদের ব্যাপারে সতর্কতা


জেনে রাখুন! যে ব্যক্তি মনে করে প্রত্যেক বিষয়ে ইমামের তাক্বলীদ করা ছাড়া তার কোন উপায় নেই। কেননা সে কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবা ও তাবেঈদের মতামত এবং এ ইমাম ছাড়া অন্য কারও মতামত দ্বারা দলীল দিতে সক্ষম নয়।
তার জন্য পরিপূর্ণভাবে সতর্ক থাকা ওয়াজিব হবে, যেন সে সত্য থেকে দূরে অবস্থিত ইমামের বক্তব্য থেকে এবং সে ইমামের পরবর্তীতে তার মাযহাবের নীতির ভিত্তিতে যা সংযোজিত হয়েছে সে ক্ষেত্রেও যেন সে পার্থক্য করতে পারে  এবং

দলীলের অনুসরণ করার মানে এ নয় যে, এর দ্বারা ইমামের মতামতের বিরোধিতা করা হলো

দলীলের অনুসরণ করার মানে এ নয় যে, এর দ্বারা ইমামের মতামতের বিরোধিতা করা হলো


মাযহাবপন্থি কতিপয় মুকাল্লিদ ধারণা করে যে, কুরআন-সুন্নাহ’র দলীলের ইত্তেবার দিকে দাওয়াত দেয়া এবং ইমামদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী মতামতগুলোকে বর্জন করা হলে সাধারণভাবে ইমামদের সকল কথাকে পরিত্যাগ করা হলো ও তাদের ইজতিহাদের উপকারিতাকে বর্জন করা হলো।

আল্লামা আলবানী (রাহি.) বলেন:[1]

মতানৈক্যের মধ্যে কি কোন প্রশস্ততা ও রহমত রয়েছে? এবং হক্ব কি বিভিন্ন প্রকার হয়?

সর্বশেষ হলো: মতানৈক্যের মধ্যে কি কোন প্রশস্ততা ও রহমত রয়েছে? এবং হক্ব কি বিভিন্ন প্রকার হয়?


অনেক মানুষ এমন রয়েছে যারা নিজেদেরকে ফিক্বহী মাযহাবের দলভুক্ত বলে সম্বোধন করে। বিশেষ করে বর্তমান যুগে এটা বেশি পরিলক্ষিত হয়। মূলতঃ এরা এমন অস্বীকারকারী যারা স্ব-স্ব মাযহাবকে ধরে রাখতে চায় এবং তা থেকে সরে যেতে চায় না। তারা মনে করে যে, এ সব মাযহাবের যে কোন একটি গ্রহণ করা দরকার। ফলে তারা ঐ সব পছন্দনীয় বিষয়কে বৈধ করে যা তাদের মুগ্ধ করে এবং যা তাদের প্রবৃত্তির অনুযায়ী হয়। আর তারা এ সব মাযহাবের মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায়, যদিও এ দাবীগুলো দলীলের বিপক্ষে যায়। তারা তাদের দাবীর পক্ষে এ দলীল উপস্থাপন করে যে, ‘‘এ ব্যাপারে কোন একজন বিদ্বান বলেছেন। আর ( اختلاف أمتي رحمة ) ‘‘আমার উম্মতের মতভেদ রহমত স্বরূপ’’-এ হাদীস দ্বারা যুক্তি পেশ করে বলে যে, উম্মতের মধ্যে প্রশস্ততা রয়েছে।

এ সংশয়টির জবাব দিয়ে আল্লামা আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:[1] এর উত্তর, দুভাবে হবে:
প্রথম উত্তর:
হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়, বরং তা বাত্বিল, তার কোন ভিত্তি নেই। আল্লামা সুবকী বলেন: আমিও এ হাদীসের সূত্র পাই নি । না  সহীহ, না যঈফ, না জাল হাদীস।
আমার মতে: বরং এ শব্দে বর্ণনা করা হয়েছে: ( . . . اختلاف أصحابي لكم رحمة ) অর্থ: ......... আমার সাহাবাদের মতভেদ তোমাদের জন্যে রহমত।  ( أصحابي كالنجوم فبأيهم اقتديتم اهتديتم ) অর্থ: ‘‘আমার সাহাবাগণ তারকারাজির ন্যায়, তাদের যাকেই তোমরা অনুসরণ করবে হিদায়াত পেয়ে যাবে।’’
এ উভয় বাক্যই বিশুদ্ধ নয়, প্রথমটি মারাত্মক দুর্বল, আর দ্বিতীয়টি জাল। আমি সবক’টিকে
 ( سلسلة الأحاديث الضعيفة والموضوعة )  গ্রন্থের ৫৮-৫৯, ৬১ নম্বরে যাচাই করে দেখেছি।


দ্বিতীয় উত্তর: হাদীসটি যঈফ হওয়ার সাথে সাথে তা কুরআন বিরোধীও বটে। কেননা মতবিরোধ থেকে বিরত ও ঐকমত্য থাকার ব্যাপারে আদেশ সংক্রান্ত আয়াত এত বেশি প্রসিদ্ধ যে, তা উলেস্নখের অপেক্ষা রাখে না। তবে দৃষ্টান্ত স্বরূপ কিছু উল্লেখ করা যায়।
আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন:
وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ﴿
আর তোমরা পরস্পরে বিবাদ কর না, তাহলে অকর্মণ্য হয়ে পড়বে এবং তোমাদের শক্তি হারিয়ে যাবে (সূরা: আনফাল-৪৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ * مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ
আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা তাদের দ্বীনে বিভেদ সৃষ্টি করেছে আর নিজেরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত (সূরা: রূম-৩১,৩২)
তিনি আরও বলেন:
وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ * إِلَّا مَنْ رَحِمَ رَبُّكَ ﴿
তোমার পালনকর্তা যাদেরকে অনুগ্রহ করেন তারা ব্যতীত অন্যান্যরা সর্বদা মতভেদ করতেই থাকবে (সূরা: হুদ-১১৮,১১৯)
তোমার প্রতিপালক তাদেরকে অনুগ্রহ করেন যারা মতভেদ করে না, সুতরাং বুঝা গেল যারা বাত্বিলপন্থি তারাই মতভেদ করে। তবে কোন বিবেক বলবে যে, মতভেদ করা রহমত?
অতএব, সাব্যাস্ত হলো যে, এ হাদীস বিশুদ্ধ নয়, না সনদের (সূত্রের) দিক দিয়ে আর না মতনের (শব্দের) দিক দিয়ে। এখনি পরিষ্কার হয়ে গেল যে, কুরআন হাদীসের উপর আমল বন্ধ রাখার জন্য এ হাদীসকে সংশয়ের উৎস বানানো বৈধ নয়, যে ব্যাপারে ইমামগণও আদেশ দিয়েছেন।
যখন দ্বীনের ব্যাপারে মতভেদ নিষিদ্ধ হলো তবে সাহাবা ও তাদের পরবর্তী ইমামগণের মতভেদ সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কী? আর তাদের মতবিরোধ ও পরবর্তীদের মতপার্থক্যের মধ্যে কি কোন তফাৎ রয়েছে?
উত্তর: হ্যাঁ, উভয় মতানৈক্যের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে যা দু’টি বিষয়ের ভিতর দিয়ে প্রকাশ পায়।
এক- মত পার্থক্যের কারণ।
দুই- তার প্রতিক্রিয়া।
সাহাবাদের মধ্যকার মতভেদ ছিল অনিবার্য কারণ সাপেক্ষ, যা তাদের বুঝের বেলায় স্বভাবগতভাবেই সংঘটিত হয়েছিল, ইচ্ছাকৃতভাবে মতপার্থক্য তৈরির জন্য নয়। এর সাথে আরও কিছু বিষয় যোগ হবে যা তাদের যুগে মতবিরোধকে অপরিহার্য করেছে যা তৎপরর্তীকালে দূর হয়ে যায়। আর এটি এমন মতানৈক্য যা থেকে সম্পূর্ণ উদ্ধার পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। উপরোক্ত আয়াত বা তার সমার্থবোধক আয়াতসমূহের নিন্দাও তাদেরকে স্পর্শ করবে না। কেননা এক্ষেত্রে জবাবদিহিতার শর্ত বিদ্যমান নেই। আর তা হচ্ছে ইচ্ছা বা পীড়াপীড়ি করে অটল থাকা।
কিন্তু বর্তমান যুগের অন্ধ অনুসরণকারীদের (মুকাল্লিদদের) মধ্যকার মতভেদ এমন পর্যায়ের যাতে সাধারণত কোন ওযর নেই। কেননা তাদের কারও নিকট কখনও কুরআন হাদীসের এমন দলীল প্রকাশিত হয় যা সাধারণত তিনি যে মাযহাবের অনুসরণ করেন না তার সমর্থন করে, তখন তিনি শুধু এজন্যই তা পরিত্যাগ করেন যে এটি তার মাযহাবের বিপরীত, আর অন্য কোন কারণে নয়। যার পরিণতি এই দাঁড়ায় যে, মাযহাবটাই তার কাছে যেন আসল অথবা এটাই সেই দ্বীন যা নিয়ে মুহাম্মাদ () আগমন করেছেন, আর অন্য মাযহাব হচ্ছে ভিন্ন আরেক দ্বীন যা রহিত হয়ে গেছে।
অপর আরেক দল এদের বিপরীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। তারা এই বিসত্মর মতানৈক্যপূর্ণ মাযহাবগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন শরীয়াত মনে করেন। যেমন স্পষ্ট ভাষায় তাদের পরবর্তীদের কেউ কেউ একথা বলেছেন:
لا حرج على المسلم أن يأخذ من أيها ما شاء ويدع ما شاء إذ الكل شرع
অর্থ: মুসলিম ব্যক্তির বেলায় এ সব মাযহাব থেকে ইচ্ছা মাফিক গ্রহণ ও বর্জনে কোন আপত্তি নেই যেহেতু এগুলো প্রত্যেকটি (স্বতন্ত্র) শরীয়ত।
আর উভয় প্রকারের লোকজনই কখনও কখনও সেই বাত্বিল হাদীস اختلاف أمتي رحمة ) ) ‘‘আমার উম্মতের মতভেদ রহমত স্বরূপ’’ দ্বারা প্রমাণ পেশ করে থাকে। তাদেরকেও উক্ত হাদীস দ্বারা অনেক ক্ষেত্রে দলীল গ্রহণ করতে শুনেছি। তাদের কেউ কেউ আবার এ হাদীসের কারণও দর্শায় এ বলে যে, মতভেদটা এজন্যই রহমত যে, এতে জাতির উপর উদারতা প্রদর্শন করা হয়। এ ব্যাখ্যাটি পূর্বোক্ত আয়াতসমূহের স্পষ্ট বিরোধী ও ইমামগণের পূর্বোলেস্নখিত বক্তব্যসমূহের মর্মবিরোধী হওয়া ছাড়াও তাদের কারও কারও স্পষ্ট প্রতিবাদও এর বিরুদ্ধে এসেছে।
ইবনু কাসিম বলেন: আমি মালিক এবং লাইসকে বলতে শুনেছি রাসূল () এর সাহাবাদের মতবিরোধ সম্পর্কে লোকজন যে রকম বলে যে, এতে উদারতা রয়েছে তা সঠিক নয় বরং তা হচ্ছে ভুল অথবা শুদ্ধের ব্যাপার মাত্র।
আশহাব বলেন: ইমাম মালিককে জিজ্ঞাসা করা হলো ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে রাসূল () এর বিশ্বসত্ম কোন সাহাবীর বর্ণনাকৃত হাদীসের কোন একটি হাদীস অবলম্বন করল আপনি কি তাকে এ ব্যাপারে স্বাধীন মনে করেন? তিনি বললেন: ‘‘আল্লাহ্‌র শপথ, না, যতক্ষণ হক্ব পর্যন্ত না পৌঁছে, হক্বতো একটাই, বিপরীতমুখী দু’টি কথাকি একই সাথে সঠিক হয়? সত্য ও সঠিক একটাই হয়’’।
ইমাম শাফেঈর সাথী মাযিনী বলেন: রাসূল () এর সাহাবাগণ মতবিরোধ করেছেন, তাদের একজন অপরজনের ভুল ধরেছেন এবং তাদের একজন অপরজনের মতামত বিবেচনা করে দেখেছেন এবং তার উপর মন্তব্য করেছেন। যদি তাদের সব কয়টি কথা সঠিকই হত, তবে তারা এমনটি করতেন না।
আর উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একদা উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) এবং ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে একটিমাত্র কাপড় পরিধান করে সালাত (বিশুদ্ধ হওয়া না হওয়া) এর ব্যাপারে মতানৈক্য করতে দেখে তাদের উপর রাগান্বিত হন। যখন উবাই বললেন: একটি কাপড়ে সালাত আদায় করা সুন্দর ও চমৎকার কাজ। আর ইবনু মাসউদ বললেন, এটা তো কেবল ঐ সময়কার কথা যখন কাপড় কম ছিল। তখন উমার (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন রাসূল () এর এমন দু’জন সাহাবী মতভেদ করছেন যাদের অনুকরণ করা হয় এবং যাদের কথা গ্রহণীয়। তবে উবাই সঠিক বলেছেন আর ইবনু মাসউদ চেষ্টায় ত্রুটি করেন নি। কিন্তু আমার আজকের এই বক্তব্য শুনার পর যে কাউকে এ বিষয়ে মতভেদ করতে শুনব তাকেই এ এ (শাস্তি) প্রদান করব।
ইমাম মাযানি আরও বলেন: যে ব্যক্তি মতভেদকে জায়েয রাখে এবং এ ধারণা পোষণ করে যে, কোন একটি বিষয়ে যদি দু’জন আলিম মতবিরোধ করেন এবং একজন বলেন: এটা হালাল আর অপরজন বলেন: এটা হারাম? তবে তাদের উভয়জনই তাদের গবেষণায় হক্বের উপর আছেন, তাকে জিজ্ঞেস করা হবে- তুমি এ কথা দলীল ভিত্তিক বলেছ, নাকি ক্বিয়াস (অনুমান) ভিত্তিক? যদি বলে: দলীল ভিত্তিক, তবে তাকে বলা হবে কিভাবে দলীল ভিত্তিক হয় অথচ কুরআন (এর বিপক্ষে) মতানৈক্যকে নিষেধ করছে? যদি সে বলে যে, আমি কিয়াস দ্বারা করেছি। তাহলে বলা হবে কিভাবে করতে পার? যেখানে আসল (কুরআন ও সুন্নাহ) বলছে মতভেদ করা যাবে না। আর তুমি কিভাবে মতভেদকে বৈধ করার জন্য এর উপর কিয়াস করছ? এটা কোন আলিমতো দূরের কথা কোন বিবেকবান ব্যক্তি বৈধ বলতে পারে না।
যদি কেউ বলেন: আপনি ইমাম মালিক থেকে যা উল্লেখ করলেন যে হক্ব একটাই হয় একাধিক হয় না, তাতো অধ্যাপক যুরক্বা তার আলমাদখালুল ফিক্বহী ( المدخل الفقهي ) গ্রন্থে  (১/৮৯) যা লিখেছেন তার বিপরীত হয়ে যাচ্ছে। তিনি লিখেছেন: খলীফা আবূ জা’ফর আল মানসূর এবং তার পরে খলীফা হারুনুর রশীদ স্থির করেন যে, ইমাম মালিক এর মাযহাব ও তার কিতাব ( الموطأ ) কে আব্বাসীয় রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সংবিধান হিসেবে পরিগণিত করবেন তাতে মালিক উভয়কে বাধা দেন এবং বলেন: ‘‘রাসূল () এর সাহাবাগণ (ফিক্বহের) শাখা-প্রশাখার মাসআলায় মতভেদ করেছেন এবং দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছেন আর তাদের প্রত্যেকেই সঠিক’’।
আমি বলছি: এ ঘটনাটি ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ, কিন্তু শেষের কথাটি ‘‘প্রত্যেকেই সঠিক’’ তার কোন ভিত্তি আমি জানতে পারি নি- ঐ সকল বর্ণনা ও গ্রন্থাদির মাধ্যমে আমি যেগুলো অবগত হয়েছি। তবে আবূ নুআইম তার ‘আল হিলইয়াহ্’ ( الحلية ) গ্রন্থে (পৃ.৬/৩৩২) একটি মাত্র বর্ণনা নিয়ে এসেছেন যাতে মিক্বদাম ইবনু দাউদ রয়েছেন, একে যাহাবী দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাছাড়া এর শব্দ হচ্ছে: ( وكل عند نفسه مصيب ) অর্থ: প্রত্যেকেই নিজের বিচারে সঠিক।
তার কথা عند نفسه প্রমাণ বহন করে যে, ( المدخل ) গ্রন্থে আংশিক বর্ণনা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনটি কেনই বা হবে না যেখানে এটা ইমাম মালিক থেকে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের বর্ণনার বিরোধিতা করছে যা হচ্ছে এই যে, হক্ব এক, তা একাধিক হয় না, যেমন এর আলোচনা অতিবাহিত হয়ে গেল। এর উপরে সাহাবা, তাবিঈন এবং মুজতাহিদ ইমাম চতুষ্টয় ও অন্যান্য ইমামগণ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ইমাম ইবনু আব্দিল বার বলেন: (পৃ.২/৮৮) সংঘাতপূর্ণ দুই পক্ষের উভয় বক্তব্যই যদি সঠিক হত তবে সালাফদের একজন অপরজনের গবেষণা, বিচার এবং ফাৎওয়াতে ভুল ধরতেন না। বিবেকও একথা অস্বীকার করে যে, কোন বস্ত্ত আর তার বিপরীতমুখী বস্ত্ত উভয়টাই সঠিক হবে। কি সুন্দরইনা বলেছেন যিনি এ কবিতা আবৃত্তি করেছেন:
إثبات ضدين معا في حال         أقبح ما يأتي من المحال
অর্থ: দু’টি বিপরীত বস্ত্তকে একই অবস্থায় এক সাথে সাব্যাস্ত করা অশোভনীয় এবং অসম্ভবও বটে।
যদি বলা হয়: এই বর্ণনা যদি ইমাম থেকে ভুল সাব্যাস্তই হয়, তবে মানসূর যখন মানুষকে তাঁর কিতাব الموطأ )) এর উপর ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন তখন তিনি কেন তা গ্রহণ না করে অস্বীকৃতি জানেই?
আমি বলছি: সর্বাধিক সুন্দরতম যে বর্ণনা সম্পর্কে আমি অবহিত হয়েছি তা হচ্ছে ঐটি যেটি হাফিয ইবনু কাসীর তার শারহ ইখতিসারি উলূমিল হাদীস গ্রন্থে (পৃ.৩১) উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম মালিক বলেন: ‘‘লোকজন এমন সব বিষয় একত্রিত করেছে ও জেনেছে যা আমি (হয়ত) জানতে পারি নি’’। একথা তার (ইমাম মালিকের) জ্ঞান ও ইনসাফের পূর্ণতার প্রমাণ। যেমন ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন।
সুতরাং সাব্যাস্ত হলো যে, সব মতভেদই মন্দ এবং তা রহমত নয়। তবে কোন কোন মতভেদ এমন রয়েছে যার উপর মানুষকে পাকড়াও করা হবে যেমন গোঁড়া মাযহাবপন্থিদের মতভেদ। আর কোনটি এমন যে, তার উপর পাকড়াও করা হবে না। যেমন সাহাবা ও তাদের অনুসারী ইমামগণের মতভেদ। আল্লাহ্‌ তাদের দলে আমাদের একত্রিত করুন এবং আমাদেরকে তাদের অনুসরণ করার তাওফীক্ব দান করুন। এখন প্রকাশ পেল যে, সাহাবাগণের মতভেদ ছিল মুকাল্লিদদের মতভেদ থেকে আলাদা।
সারকথা: সাহাবাগণ নিরুপায় অবস্থায় মতভেদ করেছেন। কিন্ত তারা মতভেদের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন এবং যতদূর সম্ভব এ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতেন। পক্ষান্তরে, মুকাল্লিদগণ মতভেদপূর্ণ বিষয়ের বিরাট এক অংশে এ মতবিরোধ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হওয়া সত্ত্বেও তারা একমত হয় না এবং এর জন্য চেষ্টাও করে না, বরং তারা একে সাব্যাস্ত করে। তাই উভয় মতবিরোধের মধ্যে বিরাট দূরত্ব রয়েছে। এ পার্থক্য ছিল কারণের দিক থেকে।
আর প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে উভয় মতভেদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে আরও স্পষ্ট, আর তা এই যে, সাহাবাগণ অমৌলিক বা খুঁটিনাটি বিষয়ে মতবিরোধ করা সত্ত্বেও- তারা ঐক্যের ভাবমূর্তিকে কঠিনভাবে সংরক্ষণ করতেন। যে সব বিষয় ঐক্যবাক্যের মধ্যে বিক্ষিপ্ততা সৃষ্টি করে তা থেকে তারা সম্পূর্ণ বিরত থাকতেন। যেমন তাদের মধ্যে কেউ সশব্দে বিসমিল্লাহ বলার পক্ষে মত ব্যক্ত করতেন আবার কেউ এটি ঠিক মনে করতেন না। তাদের কেউ রাফউল ইয়াদাইন করা মুস্তাহাব মনে করতেন আবার কেউ তা মনে করতেন না। এমনিভাবে কেউবা মহিলা স্পর্শ করলে ওযূ ভঙ্গ হওয়ার পক্ষে ছিলেন আবার অন্যরা ছিলেন এর বিপক্ষে। তা সত্ত্বেও তারা সবাই এক ইমামের পিছনে সালাত পড়তেন এবং মাযহাবী মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে তাদের কেউ ইমামের সাথে সালাত পড়া থেকে বিরত থাকেন নি।
পক্ষান্তরে, মুকাল্লিদগণের (অন্ধ অনুসারীদের) মতবিরোধ হচ্ছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত। যার পরিণতি এই দাঁড়িয়েছে যে, মুসলিমগণ দুই সাক্ষ্যবাণী তথা আল্লাহ্‌ ও রাসূলের সাক্ষ্য প্রদানের পর পরই সর্বপ্রধান ভিত্তি সালাতের ব্যাপারে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তারা সবাই একত্রে এক ইমামের পিছনে সালাত পড়তে অস্বীকৃতি জানায় এই বলে যে, ভিন্ন মাযহাবের ইমামের সালাত বাত্বিল, আর না হয় অন্ততপক্ষে মাকরূহ। আমরা একথা শুনেছি এবং দেখেছি যেমন অন্যরাও দেখেছে। কেনইবা তা হবে না যেখানে আজকের দিনে প্রসিদ্ধ কিছু মাযহাবের কিতাবে স্পষ্টাক্ষরে সালাত মাকরূহ বা বাত্বিল হওয়ার কথা বিদ্যমান রয়েছে? যার পরিণতি হিসেবে আপনি কোন কোন দেশে একই জামে মাসজিদে চারটা মেহরাব দেখতে পাবেন যাতে পর পর চারজন ইমাম সালাত পড়ান। লোকজনকে দেখতে পাবেন তাদের ইমামের জন্য অপেক্ষা করছে অথচ অপর আরেকজন ইমাম দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছেন।
বরং মুকালিস্নদদের কারও কারও নিকট মতানৈক্য এ পর্যন্ত গড়িয়েছে যে, তারা হানাফী বর এবং শাফেঈ কন্যার মধ্যে বিয়ে নিষেধ করেছে। পরবর্তীতে হানাফীদের নিকট প্রসিদ্ধ এক লোক যাকে ( مفتي الثقلين ) জ্বিন ইনসান উভয় জাতির মুফতী উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি হানাফী পুরুষের সাথে শাফেঈ কন্যার বিবাহ বৈধ বলে ঘোষণা দেন এ কারণ দর্শিয়ে যে, সেই মহিলাকে আহলুল কিতাব (ইহুদী ও খৃষ্টানদের) পর্যায়ভুক্ত ধরে নেয়া হবে। যার অর্থ এই যে, এর বিপরীত বৈধ নয় অর্থাৎ শাফেঈ বরের সাথে হানাফী কন্যার বিয়ে বৈধ নয়। যেমন কিতাবী (ইহুদী-খৃষ্টান) বরের সাথে মুসলিম কন্যার বিবাহ বৈধ নয়।
অনেক দৃষ্টান্ত থেকে এ দু’টি দৃষ্টান্ত পেশ করা হলো যা জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য ঐ অশুভ পরিণতির কথা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরছে যা পরবর্তীদের মতবিরোধ এবং এর উপর জড়বদ্ধ থাকার ফলশ্রুতিতে ঘটেছে। এটা পূর্বসূরীদের মতভেদের চেয়ে ভিন্ন। কেননা তাদের মতপার্থক্যের কোন অশুভ পরিণতি জাতির উপর পতিত হয় নি। এজন্যই তারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উপর নিষেধাজ্ঞা বহনকারী আয়াতগুলোর আওতার বাইরে। কিন্তু পরবর্তীদের কথা এর চেয়ে ভিন্ন। আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে তাঁর সঠিক পথের সন্ধান দিন।
ফুটনোটঃ

[1] ‘সিফাতু সালাতিন্নাবী’ (পৃ:৫৯-৬৬)

নিম্নোক্ত প্রাণীগুলো মৃত হওয়া সত্ত্বেও নাপাক নয়

নিম্নোক্ত প্রাণীগুলো মৃত হওয়া সত্ত্বেও নাপাক নয়


(ক) মাছ ও পঙ্গপালের মৃত দেহ:
এগুলো পাক। কেননা মহানাবী () বলেন:
»أحلت لنا ميتتان ودمان : الميتتان : الحوت والجراد والدمان : الكبد والطحال »
‘‘দুই প্রকারের মৃত ও দুই প্রকারের রক্ত আমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। সেই মৃত দু’টি হলো- মাছ ও পঙ্গপাল বা টিড্ডি। আর দু‘প্রকারের রক্ত হলো, যকৃত ও পস্নীহা’’।[1]  
(খ) এমন প্রাণীর মৃত দেহ যে সব প্রাণীর রক্ত প্রবহমান নয় । যেমন: মাছি, মৌমাছি, পিঁপড়ে ও ছারপোকা ইত্যাদি। মহানাবী () বলেন:

ত্বহারাতের পরিচয় ও গুরুত্ব

ত্বহারাতের পরিচয় ও গুরুত্ব


طهارة এর আভিধানিক অর্থ:
পবিত্রতা বা পরিচ্ছন্নতা, বাহ্যিক তথা অনুভূতিসূচক নাপাকী বা ময়লা আবর্জনা থেকে মুক্তি লাভ করা। যেমন- পেশাব ইত্যাদির নাপাকী এবং অভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা। যেমন- দোষ ত্রুটি ও পাপ পঙ্কিলতা থেকে পবিত্রতা অর্জন।
এর আরেকটি অর্থ হলো পরিচ্ছন্নণ করণ। আর এটা স্থান পরিচ্ছন্নণ করাকে বলা হয়।[1] 
ত্বহারাতের পারিভাষিক সংজ্ঞা:

ত্বহারাতের প্রকারভেদ

ত্বহারাতের প্রকারভেদ


আলিমগণ শারঈ ত্বহারাতকে দু‘ভাগে ভাগ করেছেন। যথা:
১।  طهارة حقيقية বা প্রকৃত পবিত্রতা:
এ প্রকার ত্বহারাত হলো: ময়লা বা নাপাকী হতে পবিত্রতা অর্জন করা। আর এ ত্বহারাত শরীর, কাপড় ও স্থানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
২। طهارة حكمية বিধানগত পবিত্রতা:

নাপাকীর (নাজাসাত) প্রকারভেদ

নাপাকীর (নাজাসাত) প্রকারভেদ


শরীয়াত যে সব বস্ত্তকে নাপাক বলে প্রমাণ করেছে তা হলো :
(১) মানুষের পায়খানা ও (২) মানুষের পেশাব :  
আলিমদের ঐকমত্যে, এ দু’টি নাজাসাত বা নাপাকীর অন্তর্ভুক্ত। পায়খানা অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে মহানাবীর উক্তি হলো: «إِذَا وَطِئَ أَحَدُكُمْ بِنَعْلِهِ الْأَذَى، فَإِنَّ التُّرَابَ لَهُ طَهُورٌ » যদি তোমাদের কারও জুতার তলায় নাপাক বস্ত্ত (মল-মূত্র) লাগে, তাহলে মাটি তা পবিত্র করার জন্য যথেষ্ট হবে।[1] এ হাদীস পায়খানা অপবিত্র হওয়ার প্রমাণ বহন করে। এরূপ অনেক হাদীস রয়েছে যেগুলো দ্বারা পায়খানা থেকে ইসতিনজা করার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ হাদীসগুলো সামনে আলোচনা করা হবে। আর পেশাব অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে :

জীবিত প্রাণীর দেহ থেকে কর্তিত অংশ নাপাক

জীবিত প্রাণীর দেহ থেকে কর্তিত অংশ নাপাক


জীবিত প্রাণীর দেহ থেকে কর্তিত অংশের বিধান মৃত প্রাণীর ন্যায়। কেননা রাসূল () বলেন:
«مَا قُطِعَ مِنَ الْبَهِيمَةِ وَهِيَ حَيَّةٌ فَهِيَ مَيْتَةٌ»
জীবিত পশুর দেহ থেকে যে গোশত কেটে নেয়া হয় , তা

এমন হিংস্র প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর উচ্ছিষ্ট যাদের গোশত খাওয়া জায়েয নয়

এমন হিংস্র প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর উচ্ছিষ্ট যাদের গোশত খাওয়া জায়েয নয়


سؤر এর পরিচয়:
পান করার পর পাত্রে যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তাকে سؤر  (উচ্ছিষ্ট) বলে। মহানাবী () এর বাণীর মাধ্যমে এটি নাপাক হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
একদা রাসুলুল্লাহ () কে এমন পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যা বিরান ভূমিতে থাকে এবং যেখানে চতুষ্পদ জন্তু ও হিংস্র প্রাণী তা পান করার জন্য পুনঃপুন আগমন করে এবং তা যথেচ্ছা ব্যবহার করে। সে পানির হুকুম কি? তিনি বলেন:

যে প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম তার গোশত

যে প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম তার গোশত


এ ব্যাপারে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: لَمَّا فَتَحَ رَسُولُ اللهِخَيْبَرَ، أَصَبْنَا حُمُرًا خَارِجًا مِنَ الْقَرْيَةِ، فَطَبَخْنَا مِنْهَا، فَنَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا إِنَّ اللهَ وَرَسُولَهُ يَنْهَيَانِكُمْ عَنْهَا، فَإِنَّهَا رِجْسٌ»
আনাস (রাঃ) বলেন, খায়বার যুদ্ধে আমরা (গনীমত হিসেবে) গাধার গোশত লাভ করেছিলাম  (আর তা পাকানো হচ্ছিল)। এমন সময়ে  নাবী () এর পক্ষ থেকে  জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা করলেন, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল () তোমাদিগকে গাধার গোশত খেতে  নিষেধ করেছেন । কেননা

মনি পবিত্র, না অপবিত্র?

মনি পবিত্র, না অপবিত্র?


মনি পবিত্র, না অপবিত্র এ নিয়ে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। এ ব্যাপারে দু’টি অভিমত পাওয়া যায়।
১ম অভিমত:
মনি নাপাক। এটা ইমাম আবূ হানীফা, মালিক এবং আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর দুইটি অভিমতের একটি অভিমত। এ ব্যাপারে তাদের দলীল হলো, আয়িশা (রা.) এর বর্ণিত হাদীস। তাঁকে কাপড়ে মনি লাগা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
كُنْتُ أَغْسِلُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللَّهِ، فَيَخْرُجُ إِلَى الصَّلاَةِ، وَأَثَرُ الغَسْلِ فِي ثَوْبِهِ بُقَعُ المَاءِ
আমি এটা রাসূল () এর কাপড় থেকে ধৌত করতাম। অতঃপর তিনি সালাতে বের হতেন, এমতাবস্থায় তার কাপড়ে ধৌত করার চিহ্ন লেগে থাকত।[1] আর কাপড় নাপাক না হলে তো ধৌত করার প্রশ্নই আসে না। 
২য় অভিমত:

মদ কি নাপাক?

মদ কি নাপাক?


আলিমগণ এ ব্যাপারে দু’টি ভিন্ন ভিন্ন অভিমত পেশ করেছেন।
১ম অভিমত:
মদ নাপাক। এটা জমহুর ওলামার অভিমত। চার ইমামও এমতামত ব্যক্ত করেছেন। শাইখুল ইসলাম এ মতটিকে পছন্দ করেছেন। তাদের দলীল হলো আল্লাহ্‌র বাণী-
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মু‘মিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আল-মায়েদা-৯০)
তারা বলেন: এখানে  رِجْسٌ  শব্দের অর্থ نجس বা নাপাকী। তারা স্বয়ং মদকেই অনুভূতি সূচক নাপাক  বলে আখ্যা দিয়েছেন।

রক্ত কি নাপাকীর অন্তর্ভুক্ত?

রক্ত কি নাপাকীর অন্তর্ভুক্ত?


রক্ত কয়েক প্রকার যথা-
। হায়েযের রক্ত: এটা সর্বসম্মতিক্রমে নাপাক। এটা নাপাক হওয়ার দলীল পূর্বে আলোচিত হয়েছে।
২। মানুষের রক্ত:[1] এটা পাক বা নাপাক হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ফিক্বহী মাযহাবের অনুসারীদের নিকট এ কথাই প্রসিদ্ধ যে, রক্ত অপবিত্র। এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোন দলীল নেই। তবে কুরআনের আয়াত দ্বারা এটা (রক্ত) হারাম করা হয়েছে।
আল্লাহ্‌র বাণী:

মানুষের বমি কি নাপাক?

মানুষের বমি কি নাপাক?


ইতিপূর্বে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে যে, প্রত্যেক বস্ত্ত মূলত পবিত্র। আর এ মৌলিকতা থেকে পরিবর্তন করা যাবে না যতক্ষণ না এ ব্যাপারে দলীলের উপযোগী কোন সহীহ প্রমাণ পাওয়া যায়, যেটি প্রাধান্য পাওয়ার ফলে বিতর্কমুক্ত হয় অথবা সমতা বজায় থাকে। যদি তার দলীল পাওয়া যায়, তাহলে ভাল কথা; আর যদি দলীল না পাওয়া যায় তাহলে, নাপাক হওয়ার দাবী বাতিল করাই আমাদের জন্য আবশ্যক হবে।
কেননা এ দাবীর ফলে এ কথা বুঝানো হচ্ছে যে,

মহিলাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত তরল জাতীয় পদার্থের বিধান কি? এবং তাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত ভিজা তরল পদার্থের নাম কি রাখা যেতে পারে?

মহিলাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত তরল জাতীয় পদার্থের বিধান কি? এবং তাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত ভিজা তরল পদার্থের নাম কি রাখা যেতে পারে?


এ ব্যাপারে বিদ্বানগণের দু’টি মাযহাব পরিলক্ষিত হয়:[1]
১ম: এটা অপবিত্র:
কেননা এর দ্বারা সন্তান জন্মগ্রহণ করে না। এটা মযির সাদৃশ্য রাখে। তাদের দলীল হলো: যায়েদ বিন খালিদ উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করে বলেন:
أَرَأَيْتَ إِذَا جَامَعَ فَلَمْ يُمْنِ، قَالَ عُثْمَانُ «يَتَوَضَّأُ كَمَا يَتَوَضَّأُ لِلصَّلاَةِ وَيَغْسِلُ ذَكَرَهُ» قَالَ عُثْمَانُ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ
অর্থাৎ: স্বামী স্ত্রীর সাথে সহবাসের পর যদি তার বীর্যপাত না ঘটে তাহলে সে ব্যাপারে আপনার মতামত কি? উত্তরে উসমান (রাঃ) বলেন: সে সালাতের ন্যায় ওযূ করবে এবং তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি এটা রাসূল () এর কাছ থেকে শুনেছি।[2]
উবাই বিন কা‘ব এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি রাসূল () কে বলেন:

যে সমস্ত বস্ত্ত নাপাক হওয়ার ব্যাপারে শারঈ দলীল বর্ণিত হয়েছে, তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি

যে সমস্ত বস্ত্ত নাপাক হওয়ার ব্যাপারে শারঈ দলীল বর্ণিত হয়েছে, তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি


(১) হায়েযেব রক্ত থেকে কাপড় পাক করার উপায়:
এমতবস্থায় তা রগ্ড়িয়ে বা উঠিয়ে ফেলতে হবে। অতঃপর আঙ্গুলের কিনারা দিয়ে তা ঘর্ষণ করতে হবে, যাতে তা বিলীন হয়ে যায় এবং নাপাক দূর হয়ে যায়। এরপর তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে।
عَنْ أَسْمَاءَ قَالَتْ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ، فَقَالَتْ: إِحْدَانَا يُصِيبُ ثَوْبَهَا مِنْ دَمِ الْحَيْضَةِ، كَيْفَ تَصْنَعُ بِهِ، قَالَ: تَحُتُّهُ، ثُمَّ تَقْرُصُهُ بِالْمَاءِ، ثُمَّ تَنْضَحُهُ، ثُمَّ تُصَلِّي فِيهِ
আসমা বিনতে আবূ বকর (রা.) বলেন:

নাপাক দূর করার জন্য কি পানি জরুরী? না পানি ব্যতীত অন্য কোন তরল পদার্থ দ্বারা নাপাকী দূর করা জায়েয আছে?

নাপাক দূর করার জন্য কি পানি জরুরী? না পানি ব্যতীত অন্য কোন তরল পদার্থ দ্বারা নাপাকী দূর করা জায়েয আছে?


এ মাসআলার ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন, এর মধ্যে প্রসিদ্ধ দু’টি মতামত হলো:
১ম মতামত:
নাপাকী দূর হওয়ার জন্য পানি শর্ত। সঠিক দলীল প্রমাণাদী ছাড়া পানি ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা নাপাক দূর করা বিশুদ্ধ নয়।
আর এটা ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর প্রসিদ্ধ দু’টি মাযহাব এবং ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) এর নতুন মতামত। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং তার অনুসারীগণ এ মতামত গ্রহণ করেছেন।[1] তাদের দলীল  হলো:

الإستنجاء(ইসতিনজা) এর পরিচয় এবং তার হুকুম

الإستنجاء(ইসতিনজা) এর পরিচয় এবং তার হুকুম


إستنجاء শব্দটি বাবে إستفعال এর মাসদার। এর আভিধানিক অর্থ: পরিত্রাণ পাওয়া বা কর্তন করা। যেমন বলা হয় نجوت الشجرة  অর্থাৎ: আমি গাছ কর্তন করেছি। একে إستنجاء এজন্যই বলা হয় যে, এর মাধ্যমে কষ্ট কর্তন বা দূরিভূত করা হয়।
পরিভাষায়: পানি, পাথর, কাগজ বা অনুরূপ কিছু দ্বারা দু’রাস্তা (অগ্র ও পশ্চাদ) দিয়ে নির্গত নাপাক দূর করাকে ইসতিনজা বলে। ইসতিনজাকে  ইসতিজমার নামেও অবহিত করা হয়। কেননা অনেক সময় ইসতিনজা করার ক্ষেত্রে ছোট পাথর ব্যবহার করা হয়। অনুরূপভাবে

যে সব বস্ত্ত দ্বারা ইসতিনজা করা বৈধ


যে সব বস্ত্ত দ্বারা ইসতিনজা করা বৈধ


নিম্নে উল্লেখিত দুটি বস্ত্ত দ্বারা ইসতিনজা করা বৈধ। যথা:
১। পাথর এবং অনুরূপ জমাটবদ্ধ পদার্থ, যেগুলো দ্বারা নাপাক দূর করা যায় ও যা  ব্যবহার হারাম নয়। যেমন: কাগজ, নেকড়া, শুকনো কাঠ এবং যা দ্বারা নাপাকমুক্ত করা  যায় এমন বস্ত্ত।
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল () বলেন:

হাড্ডি ও গোবর দ্বারা ইসতিনজা করা বৈধ কি ?

হাড্ডি ও গোবর দ্বারা ইসতিনজা করা বৈধ নয়


عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ: لَا تَسْتَنْجُوا بِالرَّوْثِ، وَلَا بِالْعِظَامِ، فَإِنَّهُ زَادُ إِخْوَانِكُمْ مِنَ الْجِنِّ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল () বলেছেন: তোমরা গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ইসতিনজা করো না। কেননা তা তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।[1]
عن عَبْدَ اللَّه ابن مسعودِ قال: أَتَى النَّبِيُّالغَائِطَ فَأَمَرَنِي أَنْ آتِيَهُ بِثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ، فَوَجَدْتُ حَجَرَيْنِ، وَالتَمَسْتُ الثَّالِثَ فَلَمْ أَجِدْهُ، فَأَخَذْتُ رَوْثَةً فَأَتَيْتُهُ بِهَا، فَأَخَذَ الحَجَرَيْنِ وَأَلْقَى الرَّوْثَةَ وَقَالَ: هَذَا رِكْسٌ
আবদুল­াহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নাবী () একবার শৌচ কাজে যাবার সময় তিনটি পাথর কুড়িয়ে দিতে আমাকে আদেশ দিলেন।

পানি দ্বারা ইসতিনজা করার বিধান

পানি দ্বারা ইসতিনজা


عن أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ،قال: كَانَ رَسُولُ اللهِيَدْخُلُ الْخَلَاءَ فَأَحْمِلُ أَنَا، وَغُلَامٌ نَحْوِي، إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ، وَعَنَزَةً فَيَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ () পায়খানায় প্রবেশ করতেন, আর আমি ও আমার মত আরেকটি ছেলে তখন পানির পাত্র ও বর্শার ন্যায় লাঠিসহ তার পানি নিয়ে যেতাম। এই পানি দিয়ে তিনি শৌচকার্য করতেন।[1]
পাথর দ্বারা ইসতিনজা করার চাইতে পানি দ্বারা ইসতিনজা করাই উত্তম। মহান আল্লাহ্‌ পানি দ্বারা ইসতিনজা করার জন্য কুবা বাসীদের প্রশংসা করেছেন। যেমন: আবূ হুরাইরা হতে মারফূ সূত্রে বর্ণিত:

বায়ু নির্গত হলে ইসতিনজা করতে হবে না এবং ওযূর পূর্বে ইসতিনজা আবশ্যক নয়

বায়ু নির্গত হলে ইসতিনজা করতে হবে না এবং ওযূর পূর্বে ইসতিনজা আবশ্যক নয়


যার বায়ু নির্গত হবে অথবা ঘুম থেকে জাগ্রত হবে, তার উপর ইসতিনজা আবশ্যক নয়। ইবনে কুদামা বলেন: এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে বলে আমরা জানি না। আবূ আবদুল্লাহ বলেন: আল্লাহ্‌র কিতাবে এবং তাঁর রাসূলের সুন্নায় বায়ু নির্গত হলে ইসতিনজা করার বিধান নেই। এ ক্ষেত্রে শুধু ওযূ আবশ্যক।
যায়েদ ইবনে আসলামা থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহ্‌র নিম্নোক্ত বাণীর ব্যাপারে বলেন:

ইসতিনজা করার কিছু বিধিমালা রয়েছে যা পালন করা বাঞ্ছনীয়।


ইসতিনজার কতিপয় বিধিমালা


ইসতিনজা করার কিছু বিধিমালা রয়েছে যা পালন করা বাঞ্ছনীয়।
(১) ডান হাত দ্বারা ইসতিনজা করবে না:
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: لَا يُمْسِكَنَّ أَحَدُكُمْ ذَكَرَهُ بِيَمِينِهِ وَهُوَ يَبُولُ، وَلَا يَتَمَسَّحْ مِنَ الْخَلَاءِ بِيَمِينِهِ، وَلَا يَتَنَفَّسْ فِي الْإِنَاءِ
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ () বলেছেন: তোমাদের কেউ যেন পেশাব করার সময় ডান হাত দিয়ে পুরুষাঙ্গ না ধরে, পায়খানার পর ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে এবং পানি পান করার সময় পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে।[1]

যে ব্যক্তি পেশাব অথবা পায়খানা করার ইচ্ছা করবে তার জন্য নিম্নোক্ত বিধিমালা মেনে চলা বাঞ্ছনীয়:

মল-মূত্র ত্যাগের বিধি


যে ব্যক্তি পেশাব অথবা পায়খানা করার ইচ্ছা করবে তার জন্য নিম্নোক্ত বিধিমালা মেনে চলা বাঞ্ছনীয়:
(১) জনসাধারণের সান্নিধ্য থেকে দূরে এবং আড়ালে যেতে হবে, বিশেষত খোলা জায়গা হলে:
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِفِي سَفَرٍ، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَأْتِي الْبَرَازَ حَتَّى يَتَغَيَّبَ فَلَا يُرَى
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আমরা এক সফরে রাসূল () এর সাথে বের হলাম, রাসূল () মলমূত্র ত্যাগের জন্য এতদূর যেতেন যে, তাকে কেউ দেখতে পেত না।[1]  
(২) আল্লাহ্‌র যিকর বা নাম লিখিত আছে এমন কোন জিনিস মলমূত্র ত্যাগকারীর সাথে নিয়ে যাবে না:[2] যেমন- এমন আংটি যাতে আল্লাহ্‌র নাম লিখিত আছে অথবা অনুরূপ কিছু। কেননা ইসলামী শরীয়াতে আল্লাহ্‌র নামকে সম্মান করা জরুরী।
আল্লাহ্‌ বলেন:

কোন ব্যক্তির জন্য কি দাঁড়িয়ে পেশাব করা জায়েয?

কোন ব্যক্তির জন্য কি দাঁড়িয়ে পেশাব করা জায়েয?


এ ব্যাপারে আল্লাহ্‌র রাসূল () এর পক্ষ হতে ৫ টি হাদীস পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৩টি সহীহ। এর একটিতে হযরত আয়িশা (রা.) রাসূল () এর দাঁড়িয়ে পেশাব করাকে অস্বীকার করেছেন। ২য়টিতে রাসূল () এর দাঁড়িয়ে পেশাব করার ঘটনা বিবৃত হয়েছে। আর ৩য়টিতে বসে পেশাব করার ঘটনা বিবৃত হয়েছে। আর ২টি হাদীস যঈফ। তার একটিতে দাঁড়িয়ে পেশাব করার নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। অপরটিতে দাঁড়িয়ে পেশাব করাকে অহমিকার সাথে বিশেষিত করা হয়েছে।
হাদীসগুলো নিম্নে বর্ণিত হলো:

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ